বগুড়ার চার উপজেলায় ১৩৯ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার ভাতা আটকে গেছে। তবে ভাতা বন্ধ হওয়ার বিষয়ে কোনো চিঠি পাননি তারা।
কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা জানিয়েছেন, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) সমন্বিত তালিকা তৈরি করছে। এতে ৩৩টি প্রমাণকসহ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জামুকার সুপারিশ প্রয়োজন। এসব জটিলতায় এই ভাতা বন্ধ থাকতে পারে।
সোনালী ব্যাংকের কয়েকটি শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফেব্রুয়ারি মাসের ভাতা গত ৯ মার্চ আসে। এতে বগুড়ার চার উপজেলার ১৩৯ জনের হিসাবে ফেব্রুয়ারির ভাতা জমা হয়নি। অথচ তারা জানুয়ারি মাসের ভাতা পেয়েছিলেন। অন্যরা টাকা পেয়েছেন। এই চার উপজেলা হলো বগুড়া সদর, দুপচাঁচিয়া, ধুনট ও নন্দীগ্রাম।
ব্যাংক জানিয়েছে, বগুড়ার সব উপজেলায় অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধার ভাতা বন্ধ হয়েছে। তবে ভাতা জমা না হওয়ার বিষয়ে তারা কোনো চিঠি পাননি।
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে ভাতা পাননি এমন দুজনকে পাওয়া যায়। তাদের একজন তোফাজ্জাল হোসেন তোতা। বগুড়া সদরের মালতীনগরের অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা তিনি।
কলেজজীবনে ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। ছিলেন সেই সময়ের আজিজুল হক কলেজের নেতা। যুদ্ধের ডাক পেয়ে যান ভারতে। সেখানে গেরিলা প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশকে মুক্ত করতে যুদ্ধে অংশ নেন।
তোফাজ্জল ভাতা নিয়মিত পেতেন। ফেব্রুয়ারিতে হঠাৎ সেটি বন্ধ হয়ে যায়। কেন বন্ধ হলো, সেই উত্তর নেই তার কাছে।
তিনি বলেন, ‘২০০৪ সালের যাচাইবাছাই তালিকা করে আমাদের নাম রেজ্যুলেশন করা হয়। আমরা ভারতীয় গেরিলা বাহিনীর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। সব কাগজ আমার আছে।’
তোফাজ্জল বলেন, ‘এতদিন নিয়মিত ভাতা পেয়ে এসেছি। ফেব্রুয়ারিতে কী হলো? টাকা ব্যাংকে আসেনি। কোনো চিঠি বা নোটিশও দেয়নি। শুনেছি অনেকের বিএনপি করার কারণে সম্মানী ভাতা আটকে গেছে। অথচ আমি তো কখনও বিএনপি করিনি।’
এমনি আরেকজন ভাতাবঞ্চিত নাট্যাভিনেতা আহসানুল হক মিনু। তিনি জানুয়ারি মাস পর্যন্ত পেয়েছেন। ফেব্রুয়ারিতে কোনো টাকা পাননি।
আহসানুল হক বলেন, ‘২০০৫-এ অনেকগুলো গেজেট হয়। এর মধ্যে লাল মুক্তিবার্তায় অনেকে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। যারা যুদ্ধ করেছেন তারাও হয়েছেন। যারা যুদ্ধ করেননি তারাও তালিকায় নাম দিয়েছিলেন। অনেক চোরবাটপারও এই সময় নিজের নাম বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় দেয়।
‘এটা সাময়িক সমস্যা বলে মনে করছি। বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকার যাচাইবাছাইয়ে জামুকার সুপারিশ লাগবে। তাদের প্রক্রিয়া শেষ হলে ভাতা বন্ধের এই সমস্যার সমাধান হবে।’
ভাতা বন্ধের বিষয়ে বগুড়া জেলার সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন বাবলু বলেন, ‘ভাতা বন্ধের কথা শুনেছি। তবে জেলায় কতজনের ভাতা বন্ধ হয়েছে তা বলতে পারব না। কারণ আমাদের কাছে এখন কোনো তথ্য থাকে না।’
সাবেক এ কমান্ডার আরও বলেন, ‘২০১৭ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম যাচাইবাছাই শুরু হয়। ওই সময় মামলা জটিলতায় বগুড়া সদর, শাজাহানপুর ও নন্দীগ্রাম এই তিনটি উপজেলা বাদ থাকে। তখন থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি বা যাবতীয় তথ্য রাখার বিষয় জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা দেখছেন। সব হিসাব তাদের হাতে দেয়া হয়েছে।’
আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার গৌর গোপাল গোস্বামী বলেন, ‘সম্প্রতি একটি যাচাইবাছাই হয়। এতে অনেকের নাম বাদ পড়েছে বলে শুনেছি।’
জেলার কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে যাচাইবাছাই কার্যক্রম শুরু করে জামুকা। ওই সময় বগুড়ায় যাচাইবাছাইয়ে সমস্যা হয়। পরে সেই কাজ স্থগিত করে জামুকা। সম্প্রতি পঞ্চম ধাপের যাচাইবাছাইয়ে সমন্বিত খসড়া তালিকা তৈরি করে জামুকা। এখানে যেমন নতুন করে বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম সংযোজন হয়েছে, তেমনি অনেকের নাম বাদ পড়েছে।
জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতাভোগীর পরিসংখ্যান সোনালী ব্যাংকে সংরক্ষণ করা হয়। ২০২১ সালের আগস্ট মাসে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা উপজেলা পর্যায়ের সোনালী ব্যাংকের শাখায় পাঠানো হয়। এর আগে সমাজসেবা অধিদপ্তর এই তথ্য সংরক্ষণ করত।
সোনালী ব্যাংকের ধুনট শাখার ব্যবস্থাপক মাহবুবুল আলম জানান, উপজেলায় ফেব্রুয়ারি মাসে ভাতা পাননি ২৯ জন। ধুনট শাখায় মোট বীর মুক্তিযোদ্ধা ভাতাভোগী ২১২ জন। আর ফেব্রুয়ারি মাসে ভাতা এসেছে ১৮১ জনের।
দুপচাঁচিয়া উপজেলা সোনালী ব্যাংক শাখার ব্যবস্থাপক এস এম মনোয়ার হোসেন জানান, ফেব্রুয়ারি মাসে ভাতা এসেছে ১৫৬ জনের। আর ২৯ জনের বন্ধ রয়েছে।
নন্দীগ্রাম উপজেলার সোনালী ব্যাংক শাখার ব্যবস্থাপক মতিউর রহমান জানান, দুজন ফেব্রুয়ারি মাসের মুক্তিযোদ্ধা ভাতা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। জানুয়ারি মাসে সোনালী ব্যাংক নন্দীগ্রাম শাখায় ভাতা জমা হয় ৪৮ জনের। ফেব্রুয়ারি মাসে আসে ৪৬ জনের।
সোনালী ব্যাংকের করপোরেট শাখার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল জানান, বগুড়া সদর উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধার ভাতাভোগীর সংখ্যা ৩৯৫ জন। গত জানুয়ারি মাসে এই ভাতা পেয়েছেন ৩৭৮ জন। আর ফেব্রুয়ারিতে ভাতা পান ৩২২ জন। তবে এর মধ্যে উত্তোলন করতে পারেন ৩১১ জন। ওয়ারিশ ও বিভিন্ন সমস্যার জন্য বাকি ১১ জনের ভাতা তোলা হয়নি। কাগজপত্রের কাজ শেষ হলেই তারা এই টাকা উত্তোলন করতে পারবেন।
তিনি জানান, ওই হিসাবে সদর উপজেলায় ৮৪ জন মুক্তিযোদ্ধা গত ফেব্রুয়ারি মাসে ভাতা পাননি।
মোস্তফা কামাল বলেন, ‘এখন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য এমআইএস পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের কাছে পে-রোল পাঠাই আমরা। মন্ত্রণালয় সেই পে-রোল সমন্বয় করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাংক হিসাবে টাকা পাঠায়।’
করপোরেট শাখার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার জেসমীন আক্তার বলেন, ‘জামুকার যাচাইবাছাই কাজের কারণে সব উপজেলায় কমবেশি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বন্ধ রয়েছে। এখানে আমাদের কোনো এখতিয়ার নেই। আমরা শুধু টাকাগুলো বিতরণ করি।’
কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২০ সালের ১৮ অক্টোবর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে সনদ যাচাইয়ের বিষয়ে একটি পরিপত্র ইস্যু করা হয়। পরে প্রমাণক সংক্রান্ত পরিপত্র মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, সেনা, নৌ, বিমানবাহিনীসহ সরকারের সব মন্ত্রণালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পাঠানোর প্রক্রিয়াও শুরু করে।
এ পরিপত্রে সাতটি শ্রেণিতে ৩৩টি প্রমাণক নির্ধারণ করা হয়েছে।
এগুলো হলো
ক. ভারতীয় তালিকা (পদ্মা, মেঘনা, সেক্টর, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী); খ. লাল মুক্তিবার্তা (চূড়ান্ত লাল বই) ও লাল মুক্তিবার্তায় স্মরণীয় যারা বরণীয় যারা; গ. গেজেট (বেসামরিক গেজেট, প্রবাসে বিশ্ব জনমত গেজেট, বিসিএস ধারণাগত জ্যেষ্ঠতাপ্রাপ্ত গেজেট, বিসিএস গেজেট, স্বাধীন বাংলা বেতার শব্দসৈনিক গেজেট, বীরাঙ্গনা, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল, ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি ছাত্র ইউনিয়ন বিশেষ গেরিলা বাহিনী, বিশ্রামগঞ্জ হাসপাতালে নিয়োজিত বা দায়িত্ব পালনকারী মুক্তিযোদ্ধা, মুজিবনগর গেজেট; ঘ. বাহিনী গেজেট (সেনা, নৌ, বিমান, বিজিবি, পুলিশ, আনসার ও নৌ-কমান্ডো); ঙ. শহীদ গেজেট (শহীদ বেসামরিক গেজেট, সশস্ত্র বাহিনী শহীদ গেজেট, শহীদ বিজিবি গেজেট, শহীদ পুলিশ গেজেট); চ. খেতাবপ্রাপ্ত গেজেট; এবং ছ. যুদ্ধাহত (যুদ্ধাহত গেজেট, যুদ্ধাহত পঙ্গু, যুদ্ধাহত বিজিবি গেজেট ও যুদ্ধাহত সেনা গেজেট)।
আরও পড়ুন:কুমিল্লা নাঙ্গলকোটে ইউপি সদস্য আলাউদ্দিনকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিকে ঢাকার হাতিরঝিল রেল মগবাজার রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শুক্রবার দিনগত রাতে অভিযানটি শেষ করে র্যাব।
গ্রেফতারকৃত আসামী শেখ ফরিদ (৪৫) নাঙ্গলকোট উপজেলার বক্সগঞ্জ আলীয়ারা গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে।
শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে কুমিল্লা অশোকতলা এলাকায় র্যাব অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন
র্যাব ১১ এর কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম।
মেজর সাদমান জানান, নাঙ্গলকোটের আলিয়ারা গ্রামে দুই পরিবারের মধ্যে বংশপরম্পরায় একটি বিরোধ চলে আসছিল। গেল গেল ২৫ জুলাই গরুর ঘাস খাওয়া কে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সেদিন দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়।
এ ঘটনার রেশ ধরে গেলো ৩ আগস্ট দুপুরে আলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন তার চাচাতো ভাইয়ের জানাজার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তাকে একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে।
পরে এ ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহতের ছেলে বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বিপদসীমা অতিক্রম করায় নির্ধারিত সময়ের আগেই খোলা হয়েছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব জলকপাট। সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টা ২ মিনিটে হঠাৎ পানি বাড়তে থাকায় জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়।
কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, রাতে লেকের পানির উচ্চতা ১০৮.০৫ ফুট ছুঁয়ে গেলে বিপদসীমা অতিক্রম করে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলি নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, “প্রথমে সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায় পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা পরের দিন মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জলকপাট খোলার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই সোমবার রাতেই জলকপাট খুলে দিতে হয়। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট বর্তমানে সচল রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি লেক থেকে কর্ণফুলিতে গিয়ে পড়ছে। সবমিলিয়ে পানি নিঃসরণের হার এখন প্রতি সেকেন্ডে ৪১ হাজার কিউসেক।
ভাটি এলাকার জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “পানি প্রবাহ বাড়লেও আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে, এবং প্রয়োজনে আমরা আগেভাগেই ব্যবস্থা নেব।”
স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয়ে আগেই অবহিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে শপথ গ্রহণ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী আয়োজিত ‘লাখো কণ্ঠে শপথ পাঠ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এক ভাবগম্ভীর পরিবেশে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই মাসে নিহত শহীদদের স্মরণে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করা হয়।
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই শপথ পাঠ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ। তিনি উপস্থিত সকলকে শপথ বাক্য পাঠ করান। দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, দুর্নীতি ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করার অঙ্গীকার করেন অংশগ্রহণকারীরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউএনও তনিমা আফ্রাদ বলেন, "জুলাই পুনর্জাগরণ কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের চেতনার বাতিঘর। সেই শহীদদের আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। আজকের এই সম্মিলিত শপথ হোক দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করার একটি নতুন অঙ্গীকার। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারে।"
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনিম উর্মি, কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা নেতৃবৃন্দ সহ উপজেলায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দ।
বক্তারা জুলাইয়ের শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন, তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করে দেশের উন্নয়নে একযোগে কাজ করতে হবে। উপজেলা প্রশাসনের এই সফল আয়োজনে সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিকে এক নতুন মাত্রা দেয়। এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি কালীগঞ্জের মানুষের মধ্যে দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে বলে আশা প্রকাশ করেন আয়োজকরা।
ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রজাতির সাপ। এখন ঘরে ফিরলেও সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এরই মধ্যে পরশুরামে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৫০) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গেলে সেখানে একটি অজ্ঞাত বিষধর সাপ রিনাকে কামড় দেয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রিনা রান্না ঘরে যায়। এ সময় রান্নাঘরের একটি গর্ত থেকে বিষধর একটি সাপ বের হয়ে তার পায়ে কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার রেদোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল।
টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে বেনাপোল বন্দর এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর অভ্যন্তরের অনেক স্থানে হাটু পানি জমায় মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। যানবাহন ও নিরাপত্তাকর্মীদের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বন্দরের ৯.১২.১৫.১৬ ও ১৮ নম্বর সেড থেকে লোড আনলোড বন্ধ হয়ে আছে।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরে হাটু পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে এ দূর্ভোগ হলেও নজর নাই বন্দর কর্তৃপক্ষের। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, রেলকর্তৃপক্ষ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাসনে বাধা গ্রুস্থ্য হচ্ছে।
তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরী হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যগারগুলো নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি নিষ্কাষনের অভাবে পণ্যগার ও ইয়াডে জলবদ্ধতা তৈরী হয়। এতে পানিতে ভিজে যেমন পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হয় তেমনি চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে। তবে আজ সকাল থেকে সেচ যন্ত্র চালিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, বন্দরের জলবদ্ধতা প্রতি বছরে তৈরী হয়। বিশেষ করে রেল বিভাগ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় সমস্যার সন্মুখিন হতে হচ্ছে। বন্দরের পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে দ্রুত এ অবস্থা কাটিয়ে তুলতে পাশ্ববর্তী হাওড়ের সাথে বন্দরের ড্রেন তৈরীর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রেরক: রাশেদুর রহমান রাশু, বেনাপোল যশোর ।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত রোববার (৬ জুলাই) মালুমঘাট বাজার থেকে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে এক যুবক পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া সে যুবক সাজ্জাদ হোসেন (২০) কে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ কলাতলীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটক করে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাত তিনটায় কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল (ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট) অভিযান পরিচালনা করে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ। রাত প্রায় তিনটায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়।
চকরিয়া থানা পুলিশের বিশেষ নজরদারি ও কক্সবাজারের গোয়েন্দা পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আসামি সাজ্জাদ হোসেন কে আটক করতে সক্ষম হয় কক্সবাজার ডিবি পুলিশ।
এবিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পলাতক আসামি সাজ্জাদ কে কক্সবাজার ডিবি পুলিশ আটক করেছে। প্রাথমিকভাবে সদর মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চকরিয়া থানায় নিয়ে আসা হবে। তার বিরুদ্ধে একটি পুলিশ এসল্ট মামলা করা হয়েছে।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে করতোয়া নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে যৌথবাহিনীর অভিযানে একজনকে দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত ৯টার দিকে শালডাঙ্গা ইউনিয়নের ধুলাঝাড়ি বাজারের করতোয়া নদীসংলগ্ন এলাকায় অভিযানটি চালানো হয়।
দেবীগঞ্জ সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার মেজর জুবায়ের হোসেন সিয়ামের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও দেবীগঞ্জ থানা পুলিশের সমন্বয়ে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানে বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত দুইটি ট্রাক্টরসহ চালক রাজু ইসলাম ও শান্ত আহমেদকে আটক করা হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান ঘটনাস্থলে এসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
আদালতের রায়ে রাজু ইসলামকে বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ধারা লঙ্ঘন করায় দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়, অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক। তবে রাজু ইসলাম অর্থদণ্ডের অর্থ পরিশোধ করায় ট্রাক্টর দুটি ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় প্রশাসন জানায়, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন রোধে যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান থাকবে।
মন্তব্য