চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের অনিয়ম ও অস্বচ্ছতার অভিযোগ আগে থেকেই। এবার চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে নিয়োগের বিনিময়ে মোটা অঙ্কের টাকা আদায়ের চেষ্টার কয়েকটি ফোনালাপের ক্লিপ ফাঁস হয়েছে।
ফোনালাপের তিনটি ক্লিপ নিউজবাংলার হাতে এসেছে। এতে একজন আবেদনকারীর কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকা দাবি করা হয়। বলা হয়, তৃতীয় শ্রেণির একটা চাকরির জন্য এখন ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা লাগে। মালি, প্রহরীর মতো চতুর্থ শ্রেণির চাকরির জন্য লাগে ৮ লাখ টাকা।
ফাঁস হওয়া ফোনালাপে উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের 'ম্যানেজ’ করতেই অর্থের প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করা হয়।
চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে যারা কথা বলেছেন, তাদের মধ্যে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য শিরীণ আখতারের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) মোকাররম হোসেন রবীন, অপরজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টস শাখার কর্মচারী আহমদ হোসেন এবং ফার্সি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী জসীম উদ্দিন বলে তথ্য মিলেছে।
তিনজনের ফোনালাপেই এই লেনদেনে উপাচার্য সম্পৃক্ত থাকবেন বলে দাবি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, উপাচার্য রাজি না থাকলে মন্ত্রী বা আরও বড় কেউ চাকরি দিতে পারবেন না।
তবে রবীন ও আহমদ হোসেন দাবি করেছেন, তারা কারও সঙ্গে এসব কথা বলেননি। এগুলো তাদেরকে বিপদে ফেলার জন্য বানানো হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে উপাচার্যের বক্তব্য পাওয়া যায়নি তিনি ফোন ধরেননি বলে।
তবে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মনিরুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, অডিও ক্লিপটির বিষয়ের পর তারা হাটহাজারী থানায় অভিযোগ করেছেন। উপাচার্যের পিএস পদ থেকে মোকাররম হোসেন রবীনকে প্রত্যাহার করে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আর আহমদ হোসেনকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।
এই নিয়োগ নিয়ে এর আগেও নানা অভিযোগ ছিল। এমনভাবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে, যাতে ১০ দিন সময় দেয়া হলেও নিয়োগপ্রার্থীরা কার্যত কেবল এক দিন সময় পেয়েছেন। অনলাইনে আবেদনপত্র ডাউনলোডের সুযোগও দেয়া হয়নি। পরে একজন প্রার্থী উচ্চ আদালতে গেলে তার আবেদনের বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে বলা হলেও বিশ্ববিদ্যালয় তা করেনি।
এখানেই শেষ নয়, মৌখিক পরীক্ষার জন্য সবাইকে ভাইভা কার্ড না পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। আবার কার্ড ছাড়াই পরীক্ষা দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।
আবার নিয়োগ বোর্ডে কোনো ফার্সি বিশেষজ্ঞকে রাখা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, পছন্দের কোনো প্রার্থীকে নিয়োগ দিতেই এতসব করা হচ্ছে।
প্রথম ফোনালাপ
একটি কল রেকর্ডে প্রভাষক পদের আবেদনকারী এক নিয়োগপ্রার্থীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পিএসকে অর্থ লেনদেনের বিষয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলতে শোনা যায়।
সেই ফোনালাপে উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী খালেদ মিছবাহুল মোকর রবীন পরিচয় দিয়ে নিয়োগপ্রার্থীকে বলেন, ‘আমি ম্যাডামের (উপাচার্য) সঙ্গে দেখা হলে তোমার কথা বলব। ম্যাডাম যেভাবে বলে সেভাবে হবে।’
সেই নিয়োগপ্রার্থী নিজেকে রবীনের (পিএস) শ্বশুরবাড়ির এলাকার বলে উল্লেখ করলে রবীন বলেন, 'আপনি চিটাইংগায়ের (চট্টগ্রামের) দেখেই তো আমি একটু টান দিলাম।’
আরও পড়ুন: চবির ফার্সি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে এতকিছু!
অর্থিক বিষয়ে ইঙ্গিত করে রবীন বলেন, ‘ঝামেলার বিষয়গুলোতে আমি আসলে যেতে চাই না। প্রেক্ষাপট ও বাস্তবতা হলো এগুলাই হচ্ছে। আমি তোমার ভাবির (রবীনের স্ত্রী) জন্যও চেষ্টা করেছি। কিন্তু গতবার আমি শুধু এটা (টাকা) দেই নাই বলেই হয় নাই (চাকরি)।
‘আমার স্ত্রী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছে। বর্তমানে সে (আমার স্ত্রী) সাউদার্ ইউনিভার্সিটিতে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে আছে। কিন্তু আমি সেই সুযোগটা পাইনি। আমি যদি এগ্রি (টাকার বিষয়ে সম্মত) করতাম তাহলে এতদিনে হয়ে যেত।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রবীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এগুলোর কিছু আমি জানি না। শুনে পরে কথা বলব এ বিষয়ে।’
‘অর্ধেক নিয়োগের আগে, অর্ধেক পরে’
আরেকটি কথোপকথনে শোনা যায়, একজন নিজেকে অ্যাকাউন্টস অফিসের কর্মচারী আহমদ হোসেন নামে পরিচয় দিয়ে এক চাকরিপ্রার্থীর সঙ্গে কথা বলছিলেন। তিনি অ্যাকাউন্টস শাখার প্রহরী হলেও পিয়নের কাজ করেন।
লবিং করেছেন কি না জানতে চেয়ে ওই নিয়োগপ্রার্থীকে বলা হয়, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে যেকোনো কিছুর মধ্যে লেনদেন ছাড়া কোনো কিছু হয় না। এ জন্য মন্ত্রীর সুপারিশ বলেন বা যার সুপারিশই বলেন, কোনো কিছুই কার্যকর হবে না।’
তিনি বলেন, ‘এখন কথা হলো, আপনাকে যদি ম্যাডামের (উপাচার্য) সঙ্গে বসিয়ে দিই, আর ম্যাডাম যদি রাজি হন- তাহলে আপনাকে অর্ধেক পেমেন্ট (টাকা) আগে দিয়ে ফেলতে হবে। আর বাকি অর্ধেক আপনি অ্যাপয়েনমেন্ট লেটার পাওয়ার পর দেবেন।’
নিয়োগপ্রার্থী ওই কর্মচারীর কাছে টাকার পরিমাণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অ্যামাউন্ট হলো ১৬ (লাখ)। তৃতীয় শ্রেণির একটা চাকরির জন্য এখন ১০-১২ লাখ টাকা লাগে। চতুর্থ শ্রেণির- যেমন মালি, প্রহরীর এসব চাকরির জন্য লাগে ৮ লাখ টাকা। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হলো সর্বোচ্চ সম্মানী পদ। কাজেই এখানে ১৬ লাখের কম দিলে হবে না।’
টাকা কীভাবে নেয়া হবে এই প্রশ্নের জবাবে অ্যাকাউন্টস বিভাগের কর্মচারী পরিচয় দেয়া ব্যক্তি বলেন, ‘ম্যাডাম(উপাচার্য) কি সরাসরি (টাকা) নেবেন নাকি? তাছাড়া ম্যাডাম আবার মন্ত্রণালয়ে লাইনঘাট সব ম্যানেজ করবেন। যাই হোক, এটা আমি জানি বলেই আপনাকে জানাচ্ছি। এখন আপনার যদি সম্মতি থাকে তাহলে আমি আলাপ করে দেখতে পারি।
‘ম্যাডাম যদি হ্যাঁ বলেন, তাহলে আপনি অর্ধেক পেমেন্ট করবেন এবং পেমেন্ট যে করছেন সেটার একটা চেক অথবা ডকুমেন্ট দিতে হবে। কিন্তু ম্যাডাম যদি না বলেন, তাহলে মন্ত্রীও যদি ব্যক্তিগতভাবে সুপারিশ করেন কোনো কাজ হবে না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আহমদ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এগুলোর বিষয়ে আমি জানিও না, শুনিও নাই। আমি একজন ছোট চাকরিজীবী।
‘আমার মোবাইল হারিয়ে গেছে অনেক দিন আগে। সেই মোবাইল আমি ব্যবহার করছি না সিমও ব্যবহার করছি না। আমার সিম থেকে কেউ যদি কিছু বলে থাকে সেটা শত্রুতামি করে আমাকে বিপদে ফেলার জন্য করেছে। এগুলা আমি জানি না।’
মোবাইল ফোন হারিয়ে যাওয়ার বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না জিডি করিনি। জিডি করা লাগে সেটাও আমি জানি না।’
তৃতীয় ফোনালাপে যা শোনা গেল
তৃতীয় অডিও ক্লিপটিতে জসিম উদ্দিন নামের ফার্সি বিভাগের এক প্রাক্তন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় ওই নিয়োগপ্রার্থীর।
সেখানে জসিম বলেন, ‘ওয়াক্কাস নামের এক নিয়োগপ্রার্থী রবিন স্যারের কাছে গেছেন। রবিন স্যার আমাকে বলছেন, ম্যাডাম নাকি বলেছেন চট্টগ্রামের দুই একটা ছেলে আছে না? ওরা তো যোগাযোগ করল না।..
‘আমি ওয়াক্কাসকে বলি, রবিন স্যার তোকে কনফার্ম করে দেবে। এখানে টাকা পয়সার একটা ব্যাপার আছে। ওয়াক্কাসকে রবিন স্যার নাকি বলেছে পাঁচ লাখ টাকা দিতে। তবে এখন না। নিয়োগপত্র পাওয়ার পর। এটা কারও সঙ্গে শেয়ার করবেন না।’
ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার যা বললেন
বিশ্ববিদ্যালের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা অনেক আগেই ব্যবস্থা নিয়েছি। হাটহাজারী থানায় এ বিষয়ে আমাদের অভিযোগ দেয়া আছে। এটা তদন্তের মধ্যে আছে।’
তদন্ত কমিটি হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তদন্ত কমিটি আমাদের পক্ষ থেকে এখনও হয় নাই, হচ্ছে।’
অভিযুক্তদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বিষয়টা নিয়ে তদন্ত চলছে। এরপর আমরা আমাদের মতো ব্যবস্থা নেব।’
আরও পড়ুন:কুমিল্লা নাঙ্গলকোটে ইউপি সদস্য আলাউদ্দিনকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিকে ঢাকার হাতিরঝিল রেল মগবাজার রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শুক্রবার দিনগত রাতে অভিযানটি শেষ করে র্যাব।
গ্রেফতারকৃত আসামী শেখ ফরিদ (৪৫) নাঙ্গলকোট উপজেলার বক্সগঞ্জ আলীয়ারা গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে।
শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে কুমিল্লা অশোকতলা এলাকায় র্যাব অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন
র্যাব ১১ এর কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম।
মেজর সাদমান জানান, নাঙ্গলকোটের আলিয়ারা গ্রামে দুই পরিবারের মধ্যে বংশপরম্পরায় একটি বিরোধ চলে আসছিল। গেল গেল ২৫ জুলাই গরুর ঘাস খাওয়া কে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সেদিন দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়।
এ ঘটনার রেশ ধরে গেলো ৩ আগস্ট দুপুরে আলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন তার চাচাতো ভাইয়ের জানাজার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তাকে একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে।
পরে এ ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহতের ছেলে বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বিপদসীমা অতিক্রম করায় নির্ধারিত সময়ের আগেই খোলা হয়েছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব জলকপাট। সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টা ২ মিনিটে হঠাৎ পানি বাড়তে থাকায় জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়।
কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, রাতে লেকের পানির উচ্চতা ১০৮.০৫ ফুট ছুঁয়ে গেলে বিপদসীমা অতিক্রম করে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলি নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, “প্রথমে সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায় পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা পরের দিন মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জলকপাট খোলার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই সোমবার রাতেই জলকপাট খুলে দিতে হয়। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট বর্তমানে সচল রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি লেক থেকে কর্ণফুলিতে গিয়ে পড়ছে। সবমিলিয়ে পানি নিঃসরণের হার এখন প্রতি সেকেন্ডে ৪১ হাজার কিউসেক।
ভাটি এলাকার জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “পানি প্রবাহ বাড়লেও আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে, এবং প্রয়োজনে আমরা আগেভাগেই ব্যবস্থা নেব।”
স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয়ে আগেই অবহিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে শপথ গ্রহণ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী আয়োজিত ‘লাখো কণ্ঠে শপথ পাঠ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এক ভাবগম্ভীর পরিবেশে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই মাসে নিহত শহীদদের স্মরণে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করা হয়।
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই শপথ পাঠ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ। তিনি উপস্থিত সকলকে শপথ বাক্য পাঠ করান। দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, দুর্নীতি ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করার অঙ্গীকার করেন অংশগ্রহণকারীরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউএনও তনিমা আফ্রাদ বলেন, "জুলাই পুনর্জাগরণ কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের চেতনার বাতিঘর। সেই শহীদদের আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। আজকের এই সম্মিলিত শপথ হোক দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করার একটি নতুন অঙ্গীকার। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারে।"
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনিম উর্মি, কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা নেতৃবৃন্দ সহ উপজেলায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দ।
বক্তারা জুলাইয়ের শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন, তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করে দেশের উন্নয়নে একযোগে কাজ করতে হবে। উপজেলা প্রশাসনের এই সফল আয়োজনে সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিকে এক নতুন মাত্রা দেয়। এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি কালীগঞ্জের মানুষের মধ্যে দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে বলে আশা প্রকাশ করেন আয়োজকরা।
ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রজাতির সাপ। এখন ঘরে ফিরলেও সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এরই মধ্যে পরশুরামে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৫০) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গেলে সেখানে একটি অজ্ঞাত বিষধর সাপ রিনাকে কামড় দেয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রিনা রান্না ঘরে যায়। এ সময় রান্নাঘরের একটি গর্ত থেকে বিষধর একটি সাপ বের হয়ে তার পায়ে কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার রেদোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল।
টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে বেনাপোল বন্দর এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর অভ্যন্তরের অনেক স্থানে হাটু পানি জমায় মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। যানবাহন ও নিরাপত্তাকর্মীদের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বন্দরের ৯.১২.১৫.১৬ ও ১৮ নম্বর সেড থেকে লোড আনলোড বন্ধ হয়ে আছে।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরে হাটু পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে এ দূর্ভোগ হলেও নজর নাই বন্দর কর্তৃপক্ষের। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, রেলকর্তৃপক্ষ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাসনে বাধা গ্রুস্থ্য হচ্ছে।
তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরী হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যগারগুলো নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি নিষ্কাষনের অভাবে পণ্যগার ও ইয়াডে জলবদ্ধতা তৈরী হয়। এতে পানিতে ভিজে যেমন পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হয় তেমনি চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে। তবে আজ সকাল থেকে সেচ যন্ত্র চালিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, বন্দরের জলবদ্ধতা প্রতি বছরে তৈরী হয়। বিশেষ করে রেল বিভাগ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় সমস্যার সন্মুখিন হতে হচ্ছে। বন্দরের পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে দ্রুত এ অবস্থা কাটিয়ে তুলতে পাশ্ববর্তী হাওড়ের সাথে বন্দরের ড্রেন তৈরীর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রেরক: রাশেদুর রহমান রাশু, বেনাপোল যশোর ।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত রোববার (৬ জুলাই) মালুমঘাট বাজার থেকে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে এক যুবক পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া সে যুবক সাজ্জাদ হোসেন (২০) কে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ কলাতলীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটক করে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাত তিনটায় কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল (ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট) অভিযান পরিচালনা করে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ। রাত প্রায় তিনটায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়।
চকরিয়া থানা পুলিশের বিশেষ নজরদারি ও কক্সবাজারের গোয়েন্দা পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আসামি সাজ্জাদ হোসেন কে আটক করতে সক্ষম হয় কক্সবাজার ডিবি পুলিশ।
এবিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পলাতক আসামি সাজ্জাদ কে কক্সবাজার ডিবি পুলিশ আটক করেছে। প্রাথমিকভাবে সদর মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চকরিয়া থানায় নিয়ে আসা হবে। তার বিরুদ্ধে একটি পুলিশ এসল্ট মামলা করা হয়েছে।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে করতোয়া নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে যৌথবাহিনীর অভিযানে একজনকে দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত ৯টার দিকে শালডাঙ্গা ইউনিয়নের ধুলাঝাড়ি বাজারের করতোয়া নদীসংলগ্ন এলাকায় অভিযানটি চালানো হয়।
দেবীগঞ্জ সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার মেজর জুবায়ের হোসেন সিয়ামের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও দেবীগঞ্জ থানা পুলিশের সমন্বয়ে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানে বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত দুইটি ট্রাক্টরসহ চালক রাজু ইসলাম ও শান্ত আহমেদকে আটক করা হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান ঘটনাস্থলে এসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
আদালতের রায়ে রাজু ইসলামকে বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ধারা লঙ্ঘন করায় দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়, অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক। তবে রাজু ইসলাম অর্থদণ্ডের অর্থ পরিশোধ করায় ট্রাক্টর দুটি ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় প্রশাসন জানায়, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন রোধে যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান থাকবে।
মন্তব্য