চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে অনিয়ম ও অস্বচ্ছতার অভিযোগ উঠেছে।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের জন্য ১০ দিন সময় দেয়া হলেও এর মধ্যে ৯ দিন অফিস ছিল বন্ধ। আবার অনলাইনে আবেদন ফরম পাওয়া যায়নি।
সময়মতো আবেদন করতে না পারার পর একজন প্রার্থী উচ্চ আদালতে রিট করেন। হাইকোর্ট তার আবেদনের শুনানি নিয়ে সেটি নিষ্পত্তি করতে বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশ দেয়। কিন্তু সেটির বাস্তবায়ন হয়নি।
শিক্ষক নিয়োগে যে বোর্ড করা হয়েছে, তাতে কোনো ফার্সি বিশেষজ্ঞকে রাখা হয়নি। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বিধিতে যে বিষয়ে নিয়োগ, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ রাখার বিষয়টি উল্লেখ আছে।
আবার অনেক চাকরি প্রার্থী অভিযোগ করেছেন, তারা ভাইভা কার্ড পাননি। বিশ্ববিদ্যালয় বলছে কার্ড ফেরত এসেছে, কিন্তু যাকে কার্ড পাঠানো হয়েছে বলা হচ্ছে, তার কাছে কোনো ফোনই যায়নি। আবার কার্ড না গেলেও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন একজন।
অভিযোগ উঠেছে, পছন্দের কোনো শিক্ষককে নিয়োগ দিতেই এত সব অনিয়ম করা হয়েছে।
তবে নিয়োগ প্রক্রিয়া এখনও চূড়ান্ত হয়নি আর একজন প্রার্থী বিষয়টি নিয়ে আবার উচ্চ আদালতে গেছেন।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
বিভাগের দুটি অস্থায়ী ও একটি স্থায়ী পদের বিপরীতে ২০১৯ সালের ১৬ মে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। সে সময় উপাচার্য ছিলেন ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। তার মেয়াদ শেষের ২৪ দিন আগে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ হয় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি।
এতে আবেদনের সময় হিসেবে উল্লেখ করা হয় ২৬ মে পর্যন্ত। ফলে আবেদনের জন্য প্রার্থীরা সময় পান ১০ দিন, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সময় ছিল এক দিনই।
১৭ ও ১৮ মে তারিখ ছিল শুক্র ও শনিবার, ১৯ থেকে ২৩ মে বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রীষ্মকালীন ছুটি এবং পরে আবার ২৪ ও ২৫ মে শুক্র ও শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটি ছিল। কেবল ২৬ মে এক দিন বিশ্ববিদ্যালয় খোলা ছিল।
আবেদনপত্র সংগ্রহের একমাত্র মাধ্যম বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ১৬ মে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকে অকার্যকর ছিল বলে অভিযোগ আবেদনকারীদের। সরাসরি উপস্থিত হয়ে ফরম সংগ্রহ করার কোনো নির্দেশনা বিজ্ঞপ্তিতে ছিল না।
এ কারণে একাধিক প্রার্থী আবেদন করতে ব্যর্থ হন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের ফার্সি ভাষার খণ্ডকালীন শিক্ষক কামাল হোসাইন সার্বিক অসুবিধার বিষয়টি উল্লেখ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর ২৬ মে আবেদনের সময় বাড়ানোর জন্য চিঠি দেন। তবে এতে কোনো সাড়া দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
পরে উচ্চ আদালতে রিট করেন কামাল হোসাইন। শুনানি নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এ বিজ্ঞপ্তি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না মর্মে রুল জারি করে। সেই সঙ্গে আবেদনকারীর দরখাস্ত নিষ্পত্তির করতে নির্দেশও দেয়া হয়।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে আবেদনকারীর আবেদন গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। এ রুলের পুরোপুরি নিষ্পত্তি না করেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখে।
কামাল হোসাইন এ বিষয় নিয়ে 'বিরক্ত’ উল্লেখ করে আর কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
রিট নিষ্পত্তির বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম মনিরুল হাসান বলেন, ‘উচ্চ আদালতের রিটের জবাব বিশ্ববিদ্যালয় দিয়েছে। এতে রিটকারীর আবেদন গ্রহণ না করার কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে।’
বিশেষজ্ঞ ছাড়াই নিয়োগ বোর্ড
ফার্সি বিভাগে নিয়োগ দেয়া হলেও নিয়োগ বোর্ডে রাখা হয়নি ফার্সি বিশেষজ্ঞকে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগ বোর্ডে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ সদস্য রাখতে হয়।
প্রথম দফায় যে নিয়োগ বোর্ড গঠন করা হয়, সেখানে সদস্য হিসেবে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্সি বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যান বাহাউদ্দিন ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্সি বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যান আবুল হাসেম।
আড়াই বছর আগে গঠিত নিয়োগ বোর্ডের মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ায় নতুন নিয়োগ বোর্ড গঠিত হয়। তিন সদস্যের এই বোর্ডে পদাধিকার বলে সদস্য হন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য শিরীণ আখতার। অন্য দুই সদস্য হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক শামিম বানু ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন এবং বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মহীবুল আজিজ। এদের কেউই সরাসরি ফার্সি ভাষা সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক বা বিশেষজ্ঞ নন।
গত বছরের ১৪ নভেম্বর ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের তিন সদস্যের বোর্ড বসে।
অভিযোগ এসেছে, ফার্সি বিভাগের প্ল্যানিং কমিটি থেকে সিলেকশন বোর্ডের সদস্যের জন্য যে চারজনকে সুপারিশ করা হয়েছিল, তাদের একজনকেও রাখা হয়নি নিয়োগ বোর্ডে।
নাম গোপন রেখে প্ল্যানিং কমিটির একজন সদস্য নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নিয়োগ বোর্ডে যাদের নাম ছিল তাদের কারও নাম আমরা প্রস্তাব করিনি। এদের কেউই ফার্সি বিশেষজ্ঞ নন।’
নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ফার্সি বিশেষজ্ঞ না রাখার বিষয়কে 'হাস্যকর’ বলেন ফার্সি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল হাসেম। এ ঘটনায় তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ফার্সি বিশেষজ্ঞ না রাখার বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম মনিরুল হাসান বলেন, শামিম বানু অধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক হলেও ফার্সি বিষয়ে তার ডিগ্রি আছে। তাকে ফার্সি বিশেষজ্ঞ হিসেবেই রাখা হয়েছে। মহীবুল আজিজকে ডিন হিসেবে রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘সবাইকে তো আর রাখা যায় না। একজন যাকে এক্সপার্ট মনে করা হয়, তাকেই রাখা হয়। যাকে বিশেষজ্ঞ বলে মনে করা হয়েছে, তাকে নিয়োগ বোর্ডে রাখা হয়েছে।
ভাইভা কার্ড না পৌঁছানোয় পরীক্ষাবঞ্চিত, কার্ড না পেয়েও অংশগ্রহণ
অভিযোগ মিলেছে, একাধিক প্রার্থীকে পাঠানো হয়নি ভাইভা কার্ড। ভাইভা কার্ড না পাওয়ায় পরীক্ষা দিতে পারেননি তারা। আবার ভাইভা কার্ড ছাড়াও পরীক্ষা দিয়েছেন অনেকজন। ভাইভা পরীক্ষা পুনরায় নেয়ার জন্য উচ্চ আদালতে রিট করেছেন আরও এক প্রার্থী।
নাজমুন নাহার নামে এক প্রার্থী জানান, ভাইভা কার্ড না পাওয়া নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা। সরাসরি এসে তিনি রেজিস্ট্রার বরারব একটি লিখিত আবেদনও করেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার আবেদন গ্রহণ করেনি, তার অভিযোগ উল্টো তার সঙ্গে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ’ করেছেন। সর্বশেষ তিনি উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন।
নাজমুন নাহার নিউজবাংলাকে বলেন, আমি ভাইভা কার্ড পাইনি। সে কারণে পরীক্ষাও দিতে পারিনি। আমাকে ফোন কিংবা এসএমএস করেও জানানো হয়নি। কোনোভাবে অবহিত করা হয়নি। পরীক্ষার জন্য আবেদন জানালে উল্টো আমার সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ করা হয়েছে। এ জন্য আমি হাইকোর্টে রিট করেছি।
তিনি বলেন, ‘যে বিষয়ে আমি বঞ্চিত হয়েছি, সে বিষয়ে আমি আবেদন জমা দিয়েছি। তারা (কর্তৃপক্ষ) আমার সঙ্গে সে বিষয়ে কথা বলবেন, সেটা না করে আমার ব্যক্তিগত ইস্যু নিয়ে আমাকে অপমান করেছেন। আমার সঙ্গে আক্রমণাত্মক ব্যবহার করেছেন। এতে যে কেউ আহত হবেন এবং অপমান বোধ করবেন।’
নাহার বলেন, ‘আমি যখন গিয়েছি আমাকে রেজিস্ট্রার স্যারের সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হয়নি। আমি অনেক্ষণ অপেক্ষা করেছি। এরপর তিন দিন সময় নিয়ে স্যার (রেজিস্ট্রার) আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। সে সময় তার উত্তরে আমি সন্তুষ্ট হতে পারিনি।‘
সাহিদা আক্তার সনি নামে আরেক প্রার্থীও জানান ভাইভা কার্ড না পাওয়ার কথা। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আসলে আমার রিজিকে নেই, এটা আমার ব্যাড লাক। পরে এগুলো নিয়ে আমি আর কোনো মাতামাতি করিনি।’
ভাইভা কার্ড না পেয়েও পরীক্ষা দেয়া এক প্রার্থীর সঙ্গে কথা হয়েছে নিউজবাংলার। তিনি বলেন, ‘আমি ভাইভা কার্ড পাইনি। আমরা একদিকে বঞ্চিত, অন্যদিকে লাঞ্ছিত। আমি কার্ড পাইনি, আমি একটা ফোন কলের মাধ্যমে ভাইভার বিষয়ে জানতে পারি, যে ফোনে আমার কাছে টাকাও চেয়েছিল। ভিসির পিএসও আমার কাছে টাকা চেয়েছে। কিন্তু আমি পড়ালেখা করা ছেলে, আমি টাকা দিতে আগ্রহী হইনি। আমি অনেক চেষ্টা করেছি, তারা আমাকে কার্ড দেয়নি। ওরা যদি বলে যে চিঠি পাঠিয়েছি ব্যাক করে চলে আসছে, তাহলে সেই চিঠিতে আমার এলাকার পোস্ট অফিসের সিল ও সিগনেচার থাকবে।’
ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মনিরুল হাসান এ বিষয়ে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভাইভা কার্ড সবাইকে পাঠানো হয়েছে। সেই প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। সব প্রার্থী ভাইভা কার্ড পেয়েছে।’
নাজমুন নাহারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তাকে কোন তারিখে চিঠি পাঠানো হয়েছে, কোন তারিখে চিঠি রিজেক্ট হয়েছে সব ডুকমেন্ট আমরা তাকে দেখিয়েছি। তিনি আদালতে গেছেন, তিনি যে অভিযোগ করেছেন সেটা আসলে টিকবে না। আমাদের কাছে প্রমাণ আছে আমরা চিঠি পাঠিয়েছি। আমাদের ডাকলে আমরা সেটি দেখাব।’
নোয়াখালীতে গ্রাম আদালত সম্পর্কে ব্যাপক সচরতা বৃদ্ধিতে স্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের অংশ গ্রহণের সমন্বিত পরিকল্পনা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বুধবার সকাল ১১ টার দিকে (২৫ জুন) জেলা প্রশাসকের কার্যালয় তৃতীয় তলায় মিনি কনফারেন্স হলরুমে কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন, নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক জালাল উদ্দিন,নোয়াখালী অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইয়াসিন, গ্রাম আদালত নোয়াখালী ম্যানেজার আহসানুল্লাহ চৌধুরী মামুনসহ এনজিও প্রতিনিধি, সাংবাদিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ,সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের একটি বিচারাধীন মামলার নথি থেকে এজাহারের কপি রহস্যজনকভাবে গায়েব হয়ে গেছে। আদালতের নথি থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই কাগজ হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়ে মামলার বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির ও আসামিপক্ষের আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুলকে শোকজ করেছেন বিচারক। তাদের তিন কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যাখা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ঘটনাটি ঘটে গত ২২ জুন যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে। ওই দিন মামলাটির (এসসি-১৬৬৯/২০১৮) সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য নির্ধারিত ছিল। আদালতে আসামি, রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ও আসামিপক্ষের আইনজীবী—সবাই উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে বিচারক মো. সালেহুজ্জামান মামলার নথি পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পান, নথিতে মামলার এজাহারের কপি নেই। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি আদালতের বেঞ্চ সহকারীকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি জানান, সাক্ষ্য গ্রহণের আগে আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল তার কাছ থেকে নথি নিয়ে গিয়েছিলেন এবং এজাহার দেখে প্রয়োজনীয় তথ্য লিখে নিয়েছিলেন। এরপর তিনি আবার নথি বিচারকের কাছে জমা দেন।
এরপর এজলাসেই বিচারক আইনজীবীর কাছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে মন্তব্য করেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারাসহ সিনিয়র আইনজীবীরা এজলাসে হাজির হন। একপর্যায় বিচারক ওই দুইজনকে শোকজ করে আগামী ১৩ আগস্ট মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিচারক এজলাসে ওঠার আগে আইনজীবী মামলার নথি নিয়েছিলেন। পরে ফেরত দেন। আমি নিজে নথিতে কোনো হেরফের করিনি। আইনজীবী কিংবা আইনজীবীর সহকারীর মাধ্যমে এই ঘটনা ঘটতে পারে।’
অন্যদিকে, আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল জানান, তিনি নথি নিয়েছিলেন ঠিকই, তবে বিচারক এজলাসে চলে আসায় তা যথাযথভাবে বেঞ্চ সহকারীর কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তিনি আসামির চালান কপি থেকে তথ্য নিয়েছেন। এজাহার সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলেও দাবি করেন।
যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ গফুর বলেন, ‘ঘটনাটি আমাদের নজরে এসেছে। একজন আইনজীবী এমন কাজ করতে পারেন না। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করছি।’
আদালত ও আইনজীবী সমিতি সূত্র আরও জানায়, আদালতে থাকা মামলার মুল কপি থেকে মামলার এজাহারের কপি সরিয়ে নিয়ে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার সুযোগ নেই। এ ছাড়া এজাহার কপি হারিয়ে গেলেও মামলার বিচারের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ ওই মামলার এজাহারের ফটোকপি রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলির কাছে সংরক্ষিত থাকে। এর বাইরেও অনেক মাধ্যমে মামলার এজাহারের কপি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
তবে, মুল নথিতে এজাহারের কপি না থাকাটা সমীচীন নয়। এ বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে জানায় সূত্র।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে মিজানুর রহমান রিপন (৪৮) নামের এক স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীকে মারধর ও লাঞ্চিতের ঘটনা ঘটেছে। মিজানুর রহমান রিপন ফিলিপনগর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের আজাহার আলীর ছেলে।
গত রবিবার সন্ধার দিকে দৌলতপুর উপজেলা পরিষদ বাজারে এই ঘটনা ঘটে। মিজানুর রহমান রিপন ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক আমর সংবাদ পত্রিকার দৌলতপুর উপজেলা প্রতিনিধি ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল ডেইলি নিউজ বাংলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে কাজ করে আসছেন। এঘটনায় ওই দিন রাতে ভূক্তভুগী নিজে বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় একটি লিখিত এজাহার দায়ের করেন।
এযাহার সূত্রে জানাযায়, গত ৮ জুন উপজেলার তারাগুনিয়া থানার মোড় এলাকার তারাগুনিয়া ক্লিনিকে আখি খাতুন (২২) নামের এক প্রশুতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় তিনি সহ উপজেলার বেশ কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মী সংবাদ প্রকাশ করে। তারি জের ধরে উপজেলা বাজারে থাকা সরকার নিষিদ্ধ ক্লিনিক বেবি নার্সিং হোম এর মালিক আহসান হাবিব কালুর ছোট ছেলে খালিদ হাসান আর্জু উপজেলা বাজারে তাকে মারধর করে।
এবিষয়ে মিজানুর রহমান নামের ওই গণমাধ্যম কর্মী বলেন, গতকাল বিকেলে আমি উপজেলা বাজারে বাড়ির দৈনন্দিন বাজার করছিলাম এসময় খালিদ হাসান আর্জু উপজেলা বাজারের বেবী ক্লিনিক মালিকের ছেলে আমার উপর হামলা চালায়। এসময় সে আমাকে বলে আমার হাসপাতালে যে ডাক্তার আসে সেই ডাক্তারের নামে তুরা নিউজ করেছিস বলে আমার উপর হামলা চালিয়ে বেদড়ক মারধর করে। এঘটনার পর আমি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
গণমাধ্যম কর্মীকে মারধরের বিষয়ে, দৌলতপুর উপজেলার একজন প্রবীন গণমাধ্যম কর্মী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যে ধরনের ঘটনা ঘটেছে এটি কখনই কাম্য নয়। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা নেওয়া উচিৎ।
এঘটনায় দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি নাজমুল হুদা জানান, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
অভিযুক্ত খালিদ হাসান আর্জু
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী কর্তৃক ফেনী এলাকায় গত '২৪ এর ভয়াবহ বন্যা পরবর্তী বিভিন্ন উন্নয়নমূলক, সংস্কার ও পুর্নগঠন কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে।
সোমবার (২৩ জুন) সকাল ১১ টায় ফেনী ছাগলনাইয়া উপজেলার ঘোপাল ইউনিয়নের দুর্গাপুরে হাবিব উল্যাহ খাঁন উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এ উপলক্ষে এক আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন, বিবিপি, ওএসপি, জিইউপি, এনএসডব্লিউসি, পিএসসি।
বিমান বাহিনী প্রধান ফেনী এলাকায় বন্যা পরবর্তী উন্নয়নমূলক সংস্কার ও পুর্নগঠন কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুদানের চেক হস্তান্তর করেন। হাবিব উল্যাহ খান উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে বৃক্ষরোপণ ও পরে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেন। উদ্বোধন উপলক্ষে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সহায়তায় ছাগলনাইয়া উপজেলার হাবিব উল্যাহ খান উচ্চ বিদ্যালয় এর নবনির্মিত শাহীন ভবন উদ্বোধন এবং দুর্গাপুর সিংহনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নুরুল কোরআন ইসলামিয়া মাদ্রাসার উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন করেন।
এ ছাড়া বিমান বাহিনী কর্তৃক ফেনী জেলার বন্যা দুর্গতদের সহায়তায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম, বন্যা দুর্গতদের জন্য মেডিকেল সেবা পরিচালনা ও চিকিৎসা সেবা সহায়তা প্রদান কার্যক্রম পরিদর্শন ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন বিমান বাহিনী প্রধান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিমান বাহিনী প্রধান ফেনী জেলায় ২০২৪ সালের আকস্মিক বন্যাকালীন ও বন্যা পরবর্তী সময়ে বিমান বাহিনীর ভুমিকার ভূয়সী প্রসংশা করেন এবং পাশাপাশি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে যে সকল প্রতিষ্ঠান আর্থিক, ত্রাণ ও বিভিন্নভাবে সার্বিক সহায়তা প্রদান করেছেন তাদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি বিমান বাহিনীর উন্নয়ন কার্যক্রমে স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকাবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যতেও বিমান বাহিনী দেশ ও জনগণের পাশে থাকবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন।
তিনি আরো বলেন, বন্যার সাথে তৎকালীন বৈরী আবহাওয়া ও বিছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী পেশাদারিত্বের সাথে বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসে, যা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং ছিল। এ পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা দিকনির্দেশনায় এবং বিমান বাহিনী প্রধানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ভয়াবহ এ বন্যাদুর্গত কুমিল্লা, নোয়াখালী এবং বিশেষ করে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ফেনী জেলায় হেলিকপ্টার ও ইউএভি এর মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে এরিয়াল রেকোনাইসেন্স মিশন পরিচালনা করে বন্যা দুর্গত মানুষের সহায়তায় প্রয়োজনীয় জরুরী উদ্ধার, ত্রাণ বিতরণ ও চিকিৎসা কার্যক্রমে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
বিমান বাহিনীর সূত্র জানায়, সামগ্রিকভাবে বিমান বাহিনী বন্যা পরবর্তী এ পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী উপজেলার বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এতিমখানা, ধর্মীয় উপাসনালয় ও রাস্তা-ঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ এবং সংস্কার কার্যক্রম ইতিমধ্যে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া, দূর্গাপুর, ছাগলনাইয়্যা-এ অবস্থিত হাবিব উল্যাহ্ খান উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্রমবর্ধমান ছাত্র-ছাত্রী ও স্থানীয় জনসাধারণের চাহিদা বিবেচনা করতঃ শাহীন ভবন নামে একটি চারতলা ভিত বিশিষ্ট দুইতলা ভবন আসবাবপত্রসহ নির্মাণ করা হয়েছে, যেটি দুর্যোগকালীন সময়ে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে। এ উন্নয়নমূলক কার্যক্রমগুলো মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করেছে ঢাকাস্থ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশার ও বিমান বাহিনী ঘাঁটি একে খন্দকার।
অনুষ্ঠানে সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (প্রশাসন), বিমান ঘাঁটি বাশারের এয়ার অধিনায়ক, বিমান বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকতাবৃন্দ, ফেনী জেলা প্রশাসক, সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফেরার পথে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে অপহরণ করে মুক্তিপন দাবি করে দুষ্কৃতিকারীরা।
পরে মুক্তিপণ না পেয়ে মোবাইল ফোন-মানিব্যাগ রেখে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে ছেড়ে দেয় অপহরণকারীরা।
সোমবার (২৩ জুন) বরিশাল থেকে গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ যাওয়ার পথে মাদারিপুরে সকাল ৮টার দিকে বাস থেকে নামলে অপহরণের শিকার হন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম মো. আসাদ, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায়।
আসাদের পরিবার ও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অপহৃত শিক্ষার্থীর বড় চাচা মারা যাওয়ায় আজ ভোরে ৬টায় বরিশাল থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে মাদারিপুর পর্যন্ত যান বাসে। বাস থেকে নেমে মাদারিপুর নেমে ঝিনাইদহে যাওয়ার জন্য গাড়ি খুঁজতেছিলেন এমন সময় মাইক্রোবাসটি তাকে ঝিনাইদহে পৌঁছে দিবে বলে উঠিয়ে নেয়। উঠিয়ে নেয়ার পর অপহরণকারীরা পরিবারের সঙ্গে ০১৫১৮৪৯৫৬০৯ নম্বর থেকে যোগাযোগ করে মুক্তিপণ দাবি করে। বিষয়টি পরিবারের মাধ্যমে জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুলিশের সহযোগিতা নেন, প্রশাসনের তৎপরতার খবর পেয়ে অপহরনকারীরা তার সব কিছু রেখে তাকে ছেড়ে দেন।
এ বিষয়ে আসাদের সহপাঠী রাফিদ হাসান জানান, আসাদের চাচা মারা যাওয়ায় ও আজ ভোরের দিকে বরিশাল থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন, পথিমধ্যে এই ঘটনার শিকার হন ।
এ বিষয়ে আসাদের বাবা বলেন, আসাদের বড় চাচা গতকাল রাতে মারা যাওয়ায় আজকে ভোরে বাড়ি আসার পথে মাদারিপুর থেকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণ না পেয়ে ওর মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। পরে অন্য একটি বাসে করে আসাদ বাড়ি ফিরছে বলে জানান।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সোনিয়া খান সনি বলেন, মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে বরিশাল থেকে ঝিনাইদাহ বাড়ি যাওয়ার পথে মাদারিপুরে আটকিয়ে মুক্তিপণ দাবি করা হচ্ছে, এমন ঘটনা জেনে সাথে সাথে মাদারিপুর পুলিশকে কল করি। শিক্ষার্থী এখন নিরাপদে আছে সে বাড়ি ফিরতেছে শিক্ষার্থী এবং পরিবারের সাথে কথা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হাসেম আলী (৩৫) নামে এক নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। রোববার (২২ জুন) সকাল ৯টার দিকে উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের হোসেনাবাদ গোড়ের পাড়া গ্রামে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত হাসেম আলী দৌলতপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের গোবরগাড়া গ্রামের মৃত আছান শেখের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্মাণাধীন একটি ভবনে ইট ভেজাতে গিয়ে বৈদ্যুতিক মোটরে কাজ করার সময় অসাবধানতাবশত বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন হাসেম আলী। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা বলেন, “বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) এক ছাত্রীকে অচেতন করে ধর্ষণের অভিযোগে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. মোখলেসুর রহমানকে প্রধান করে শনিবার এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো সাইফুল ইসলাম এবং ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং ও টি টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক বেলাল শিকদার।
এসব তথ্য জানিয়ে শাবি প্রক্টর মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। নির্ধারিত সময়ে রিপোর্ট দেবো। এর সাথে আরও কেউ জড়িত কি না তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হবে। যাদেরই সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এরআগে শুক্রবার বিকেলে ওই ছাত্রী বাদি হয়ে সিলেটের কতোয়ালি থানায় ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
মামলায় শান্ত তারা আদনান এবং স্বাগত দাস পার্থ’র নাম উল্লেখ করে অজ্ঞতনামা আরও তিনজনকে আসামি করা হয়েছে।
আদনান ও পার্থকে বৃহস্পতিবার রাতেই আটক করে পুলিশ। পরে মামলায় তদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তারা দু'জনই শাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার শান্ত তারা আদনান নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি শাবি ছাত্রলীগের সভাপতি খলিলুর রহমানের অনুসারী ছিলেন। আওয়ামী লীগ শাসনামলে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসীূচতে তাকে দেখা গেছে। আদনান বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যান্ড দল ‘নোঙর’-এরও সদস্য ছিলেন।
অপরদিকে, ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া আরেক শিক্ষার্থী স্বাগত দাস পার্থ গত বছরের জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে সক্রিয় ছিলেন বলে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষার্থী। তার ফেসবুকে প্রোফইলেও জুলাই আন্দোলনের সমর্থনে ছবি যুক্ত রয়েছে। তবে কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিযোগ, পার্থ ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন। তবে তিনি তেমন সক্রিয় ছিলেন না।
এদিকে, পার্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যসংগঠন ‘দৃক থিয়েটার’-এর কর্মী ছিলেন বলে জানা গেছে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে ভুক্তভোগী ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর ধর্ষণের লিখিত অভিযোগ করেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিযোগ এবং বিশ্ববিদ্যালের শৃঙ্খলা-বডি সূত্রে জানা যায়- গত ২ মে সন্ধ্যারাতে সহপাঠী শান্ত তারা আদনান এবং স্বাগত দাস পার্থের সঙ্গে শহরের কনসার্টে যাচ্ছিলেন ওই ছাত্রী। কনসার্টে যাওয়ার পূর্বে তারা ওই ছাত্রীকে সুরমা এলাকার একটি মেসে নিয়ে যান। এ সময় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে অচেতন করে ধর্ষণ করেন আদনান এবং পার্থ। একইসাথে এই ঘটনার ভিডিও এবং মেয়েটির নগ্ন ছবি ধারণ করেন। পরে ওইসকল ভিডিও ও নগ্ন ছবি দেখিয়ে আদনান এবং পার্থ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে নিয়মিত ব্ল্যাকমেইল করছিলেন এবং ঘটনা জানাজানি করলে ভিডিও ও ছবি অনলাইনে ছেড়ে দেওয়ার হুমকিও দেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী প্রক্টর বরাবর অভিযোগ করলে প্রক্টর অধ্যাপক মোখলেছুর রহমান তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে পুলিশকে জানান। পরে পুলিশ আদনান এবং পার্থকে আটক করে প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসেন। এরপর প্রক্টরের সঙ্গে আলোচনা শেষে তাদেরকে থানায় পুলিশ হেফাজতে নেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোখলেছুর রহমান বলেন, 'বৃহস্পতিবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থী শ্লীলতাহানির বিষয়ে অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনার সত্যতা পেয়েছি আমরা। বর্তমানে অপরাধীরা পুলিশ হেফাজতে আছে এবং মামলার বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া চলমান।'
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম বলেন, 'প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে যে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন তা নেওয়া হচ্ছে।'
মন্তব্য