রাজধানীর বিজয় সরণি ওভারব্রিজের নিচে দাঁড়িয়ে নানা বয়সী ও শ্রেণি-পেশার মানুষ। টিসিবির ট্রাক থেকে কিছুটা কম দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার জন্য অপেক্ষা করছেন তারা।
বুধবার বেলা ১টার দিকে ৩০-৩৫ জনের জটলা থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়ছিল। আবার অনেকে অধৈর্য হয়ে চলেও যাচ্ছিলেন। কেউবা টানা দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে পাশের গলি ও ফুটপাতে বসে পড়েন।
তাদের একজন রিকশাচালক শাফায়েত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাজারে জিনিসের যা দাম, ইনকামে আর কুলায় না বাপু। দোকান থেইকে কিনতে গেলে ডাবল টাকা খরচ অয়। ইনকামও আগের মতো নাই।
‘আগে বউটা গার্মেন্টসে চাকরি করত। দুই বছর ধরে চাকরি নাই। তাই বউ-পোলাপাইন বাড়িত পাঠাইয়া দিছি। আগে বাসায় ছিলাম, এখন গ্যারেজে থাকি। মাস শেষে বাড়িতে যামু। তাই তেল, চিনি, ডাইল কিইন্না রাকমু মনে করছিলাম। এর লাইগা ৩ ঘণ্টা ধইরা দাঁড়ায় আছি। আরও ঘণ্টাখানেক দেখমু, তার পরও ট্রাক না আইলে চাইলা যামু।’
দেশের গড় আয় বাড়লেও তা নিম্নবিত্ত মানুষের লাভ-লোকসানের হিসাবে ধরা দেয় না। একই অবস্থা মধ্যবিত্তেরও।
অপেক্ষারত আরেকজন পঞ্চাশোর্ধ্ব হাসিনা বেগম বলেন, ‘দুই পোলা, এক পোলার বউ, দুই নাতি আছে বাসায়। এক পোলা সিকিউরিটির চাকরি করে। আরেকটা কারখানায় পিয়নের কাম করে। কোম্পানি করোনায় বেতন কমায় দিছিল, আর বাড়ায় নাই। পোলাগো একটু সাহায্য করার লাইগা এহানতুন তেল-চিনি কিনি। এয়ানে তেল দুই লিটার নেয় ২২০ টাকা, ডাইল-চিনি নেয় ৬০ টাকা। বাজারে গেলে মাতা ঘুরায়। দোয়ানে তেল ১৭০ টাকা, চিনি ৮০ টাকা, ডাইল ১২০ টাকা লাগব।’
শাফায়েত ও হাসিনা বেগম যখন সংসার চালাতে গিয়ে নিজেদের ত্রাহি অবস্থার কথা জানাচ্ছিলেন, তার আগের দিনই সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জানিয়েছে যে গত এক বছরে মানুষের গড় আয় বেড়েছে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা। শুধু গতকালের হিসাবেই বেড়েছে প্রায় ৩ হাজার টাকা। একজন মানুষের গড় আয় এখন প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। আগের বছরও তা ছিল ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
এ নিয়ে কথা বললে হাসিনা বেগম বলেন, ‘আমারডা বাড়ে নাই? আর যদি বাড়েই তাহলে আমার ভাগেরটা গেল কোনে?’
বাস্তবতা হচ্ছে, দেশের গড় আয় বাড়লেও তা নিম্নবিত্ত মানুষের লাভ-লোকসানের হিসাবে ধরা দেয় না। একই অবস্থা মধ্যবিত্তেরও।
কথা হলো বাসযাত্রী চাঁদপুরের বাসিন্দা ফজলে রাব্বীর সঙ্গে। ঢাকার মোহাম্মদপুরে মা-বাবা ও স্ত্রী নিয়ে বসবাস করেন তিনি। মহাখালীর একটি প্রতিষ্ঠানে গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেন। রাব্বি জানালেন, ‘করোনার প্রায় এক বছর প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। চাকরি ছিল না, আয়ও ছিল না। এখন চাকরি মিললেও বেতন কমে গেছে প্রায় ৬ হাজার টাকা।
‘এক বছর আয়-রোজগার বন্ধ থাকলেও সংসার খরচ তো থেমে থাকেনি। পৈতৃক জমি বিক্রি করে এক বছরের সংসার খরচ চালাইতে হইছে।’
কোনো পণ্যের দাম এক বছরের ব্যবধানে বাড়ার হিসাবই মূল্যস্ফীতি। গত ডিসেম্বরে তা ৬ শতাংশ ছাড়িয়ে ৬.০৫ শতাংশ হয়েছে। নভেম্বরে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি
বিবিএসের হিসাবে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই বাড়ছে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক মূল্যস্ফীতি। কোনো পণ্যের দাম এক বছরের ব্যবধানে বাড়ার হিসাবই মূল্যস্ফীতি। গত ডিসেম্বরে তা ৬ শতাংশ ছাড়িয়ে ৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ হয়েছে। নভেম্বরে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
দাম বাড়ায় ক্ষেত্রেবিশেষে শহরকেও ছাড়িয়ে গেছে গ্রাম। ৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতির অর্থ হচ্ছে- গত বছরের ডিসেম্বরে যে পণ্য কিনতে ১০০ টাকা লাগত এখন তা কিনতে লাগছে ১০৬ টাকা। এ সময় খাবার ছাড়া অন্যান্য পণের দাম বেড়েছে ৭ শতাংশ। আর খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
গত এক বছরের গড় হিসাবে ডিসেম্বর শেষে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ। যদিও সরকার চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশে বেঁধে রাখার লক্ষ্য নিয়েছে।
জিনিসপত্রের দাম আসলে কেমন
বাজারে জিনিসপত্রের দামের হিসাব রাখে টিসিবি। তবে তাদের হিসাবটা নিত্যপ্রয়োজনীয় মোট পণ্যের একটি অংশমাত্র। তবে সংস্থাটি বিভিন্ন পণ্যের দাম বৃদ্ধির যে হিসাব দিয়েছে, তা মূল্যস্ফীতির হিসাবের সঙ্গে মেলে না। বেশির ভাগ পণ্যের দাম বৃদ্ধির হারই মূল্যস্ফীতির হিসাবের কয়েক গুণ।
চালের দাম বেশি বলে ভাত ছেড়ে আটা-ময়দায় ঝুঁকবেন তারও উপায় নেই। টিসিবির হিসাব বলছে- এক বছরে খোলা আটা ১১.২৯ শতাংশ বেড়ে সর্বোচ্চ ৩৬ টাকা, প্যাকেট আটা ২৬.৮৭ শতাংশ বেড়ে ৪৫ টাকা, খোলা ময়দা ৩৭.৬৮ শতাংশ বেড়ে ৫০ টাকা এবং প্যাকেট ময়দা ২৭.৩৮ শতাংশ বেড়ে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
টিসিবি তথা সরকারি হিসাব বলছে, মানুষকে সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে তেল, চাল ও মুরগির দাম। এক কেজি মোটা চাল কিনতেও এখন ৪৮ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। সরু চাল এক বছর আগে ছিল ৬০-৬২ টাকা কেজি। এখন তা ৬৮-৭০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। সে হিসাবে দাম বেড়েছে ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
চালের দাম বেশি বলে ভাত ছেড়ে আটা-ময়দায় ঝুঁকবেন তারও উপায় নেই। টিসিবির হিসাব বলছে- এক বছরে খোলা আটা ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ বেড়ে সর্বোচ্চ ৩৬ টাকা, প্যাকেট আটা ২৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেড়ে ৪৫ টাকা, খোলা ময়দা ৩৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেড়ে ৫০ টাকা এবং প্যাকেট ময়দা ২৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেড়ে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
২০২০ সালের নভেম্বরের শুরুতে খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ৯০ টাকার আশপাশেই ছিল। এর পর থেকেই বাড়তে থাকে দাম, যা এখন ১৫৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ১০৫ টাকার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়। এ সময়ে খোলা ও বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৭০ শতাংশের মতো।
টিসিবি বলছে, দাম বাড়ায় পিছিয়ে নেই ডালও। বড় দানার মসুর ডাল এক বছর আগে ছিল সর্বোচ্চ ৭০ টাকা। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। মাঝারি মানের ডাল ৯০ টাকা থেকে বেড়ে ১১০ এবং দেশি বা ছোট দানার মসুর ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সে হিসাবে বড় দানায় ৪৪ এবং মাঝারিতে ২৬ শতাংশ দাম বেড়েছে। অ্যাংকর বা বুট ডালের দামও ১৮ শতাংশ বেড়ে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গত বছরের এ সময় দেশি পিঁয়াজের দাম কিছুটা বেশি ছিল, কেজি ৩৫ থকে ৪০ টাকা। এবার বিক্রি হচ্ছে ২৪ থেকে ৩৫ টাকায়। তবে আমদানি করা যে পিঁয়াজ ওই সময় ২০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। দাম বেড়েছে দ্বিগুণ বা ১০০ শতাংশ।
জিনিসপত্রের দাম কিন্তু একদিনে বাড়েনি। গত বছরজুড়েই ধীরে ধীরে দাম বাড়ছে। মানুষ বাধ্য হয়ে বাড়তি দামে পণ্য কিনছে। কেউ ছয় মাস পর বাজারে এলে পণ্যের দাম দেখে ভিরমি খাবেন।
কলমিলতা বাজারের মুদি দোকানি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম কিন্তু একদিনে বাড়েনি। গত বছরজুড়েই ধীরে ধীরে দাম বাড়ছে। মানুষ বাধ্য হয়ে বাড়তি দামে পণ্য কিনছে। কেউ ছয় মাস পর বাজারে এলে পণ্যের দাম দেখে ভিরমি খাবেন। যেমন, ছয় মাস আগে হুইল পাউডারের কেজি ছিল ৭০ টাকার মতো; এখন তা ১১০ টাকা। এভাবে সব জিনিসেই দাম একটু একটু করে বেড়ে আকাশচুম্বী হয়ে গেছে।’
মুরগির দামের বর্তমান অবস্থা দেখে বোঝার উপায় নেই যে গত তিন মাস কী অবস্থায় ছিল। ব্রয়লার মুরগির দাম ২০০ টাকায় উঠেছিল। এখন তা ১৫০ টাকায় নেমেছে। যদিও স্বাভাবিক সময়ে ব্রয়লার মুরগির কেজি থাকে ১২০-১২৫ টাকার মধ্যে।
সব সময় ১৮০-১৯০ টাকা কেজিতে ঘোরাফেরা করা সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৬০-২৭০ টাকায়। কিছুদিন আগেই তা ছিল ৩০০ টাকার ওপর। মাংস ছেড়ে ডিম খাবেন সে উপায়ও নেই। ডিমের হালি ৩৮-৪০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করছে কয়েক মাস ধরেই।
সবজির বাজারের অবস্থাও সুবিধার নয়। শীত মৌসুমে সবজির দাম সব শ্রেণির ভোক্তার নাগালে থাকার কথা। অথচ বাজারে গ্রীষ্ম মৌসুমের চিত্র।
বাড্ডার সবজি বিক্রেতা মাসুদ হোসেন জানান, ‘শিম ৪৫-৫০ টাকা কেজি বেচতাছি। ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৩৫-৪০, শসা ও ক্ষীরা ৫০-৫৫, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০, মাঝারি আকারের লাউ প্রতিটি ৭০-৮০ টাকা।
‘এ ছাড়া করলা, বেগুন ও বরবটির কেজি ৮০ টাকা, গাজর ও মুলা ৩০-৪০ টাকা, কাঁচামরিচের কেজি ৫০ টাকা, লেবুর হালি ৩০ টাকা।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যবাজারের এই পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের কর্তাব্যক্তিদের বক্তব্যে কোনো উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বা পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস নেই।
পরিসংখ্যান ব্যুরো মূল্যস্ফীতির যে তথ্য প্রকাশ করে, তার সঙ্গে বাজারের পণ্যমূল্যের যথেষ্ট ফারাক থাকে। এ ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য বিবিএসকে বাস্তবভিত্তিক তথ্য প্রকাশে মনোযোগ দিতে হবে।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম মঙ্গলবার প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়ের হিসাব তুলে ধরা অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আছে। এ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।’
আগের দিন সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘চালের দাম কিছুটা হলেও কমেছে। ১০ টাকা কেজি দরে গরিবদের ওএমএসে চাল দেয়া হচ্ছে। এ কারণে খাবারের হাহাকার নেই। তবে দাম একটু বেশি, সেটা ঠিক। পিঁয়াজের দাম কম। কিছুটা মুদ্রাস্ফীতি আর আন্তর্জাতিক বাজারেই ভোজ্যতেলের দাম বেশি হওয়ায় দেশের বাজারে তার প্রভাব পড়েছে।’
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের পরিসংখ্যান ব্যুরো মূল্যস্ফীতির যে তথ্য প্রকাশ করে, তার সঙ্গে বাজারের পণ্যমূল্যের যথেষ্ট ফারাক থাকে। এ জন্য পণ্যমূল্য নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করেন। এ ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য বিবিএসকে বাস্তবভিত্তিক তথ্য প্রকাশের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।’
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) আগামীকাল বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।
আজ বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে সচিব সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ‘আমরা যে কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) করেছি, সে কর্মপরিকল্পনাটা আপনাদের জানাবো। আমি ঢাকার বাইরে থাকায় একটু পিছিয়ে পড়েছি। এটা আমার টেবিলে এখন আছে। আগামীকাল পর্যন্ত একটু অপেক্ষা করেন।’
এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব আজ এক বৈঠকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) অনুমোদন করেছে কমিশন।
এখন যেকোনো সময় নির্বাচনের এই রোডম্যাপ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হতে পারে বলে ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘কর্মপরিকল্পনার সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে গেছে। অনুমোদন হয়েছে, এখন শুধু টাইপিং চলছে।’
উল্লেখ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইসির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে দল নিবন্ধন, সীমানা নির্ধারণ, নির্বাচন পর্যবেক্ষক, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংস্কার, বিধিমালা ও নীতিমালা জারি, প্রবাসীদের জন্য আইটি সাপোর্টেড নিবন্ধন ও পোষ্টাল ব্যালট পদ্ধতি ও নির্বাচনী সরঞ্জাম কেনাকাটা বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে রোডম্যাপে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) অনুমোদন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
যে কোনো সময় এই নির্বাচনের রোডম্যাপ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করতে পারে ইসি।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন, চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব এ নিয়ে বৈঠকও করেছেন।
বৈঠকে কর্মপরিকল্পনার (রোডম্যাপ) অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। এখন, যে কোনো সময় নির্বাচনের এই রোডম্যাপ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হতে পারে বলে ইসি’র কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘কর্মপরিকল্পনার সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে গেছে। অনুমোদন হয়েছে, এখন শুধু টাইপিং চলছে।’
এদিকে সংসদীয় আসনের পুনঃনির্ধারিত সীমানার বিষয়ে ইসি’র শুনানি আজ বিকেলে শেষ হচ্ছে।
শুনানি শেষে বিকেলে সার্বিক বিষয় নিয়ে ইসি’র সিনিয়র সচিব আকতার আহমেদের ব্রিফিং করার কথা রয়েছে।
এ বিষয়ে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘আমরা ব্রিফিংয়ে আসব। তখন সীমানার শুনানির বিষয়টির পাশাপাশি এ বিষয়টিও (রোডম্যাপ) দেখা যাবে।’
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি কর্মকর্তা বৈঠক করেন।
ওই দিন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছিলেন, বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনার বিষয়ে ইসি সচিব ব্রিফ করবেন।
গত ১৮ আগস্ট ইসি’র সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানিয়ে ছিলেন, ‘একটা কর্মপরিকল্পনার (নির্বাচনী রোডম্যাপ) বিষয়ে বলেছিলাম, আমরা এই সপ্তাহে এটা করবো। কর্মপরিকল্পনার তো আমাদের আন্তঃঅনুবিভাগ সম্পর্কিত এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো নিয়ে। কর্মপরিকল্পনার ড্রাফ্ট করা হয়েছে। ড্রাফ্টটি এখন কমিশনে দিয়ে আমরা অ্যাপ্রুভ করবো।’
শ্রম আইন, ২০০৬ সংশোধনের লক্ষ্যে ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ (টিসিসি)-এর ৮৯তম সভায় শ্রমিক, মালিক ও সরকারের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গত এক বছরের পর্যালোচনা ও সকল পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে শ্রম আইন ২০০৬ সংশোধনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
আজ মঙ্গলবার ঢাকার এক হোটেলে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, "শ্রমিক ও মালিক পক্ষের পরামর্শের ভিত্তিতে শ্রম আইন যুগোপযোগী করা হবে। এটি বাংলাদেশের শ্রমখাতের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে এবং আন্তর্জাতিক মানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে।’
সভায় শ্রমিক ও মালিক পক্ষের প্রতিনিধিরা তাদের মতামত তুলে ধরেন। একটি সুসমন্বিত ও আন্তর্জাতিক মানের শ্রম আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা উপস্থিত সকলেই করেন। অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত এ সভায় সংশোধিত শ্রম আইন দ্রুত সম্পন্ন করার তাগিদ দেওয়া হয়।
সভায় বিশেষ পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন দূতাবাস, কানাডা হাই কমিশন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর প্রতিনিধিরা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত জনাব লুৎফে সিদ্দিকী।
এছাড়াও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) এর নির্বাহী পরিচালক এবং শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন (বিইএফ)-এর সভাপতি, টিসিসি সদস্যবৃন্দের মধ্যে তাসলিমা আক্তার, কোহিনুর মাহমুদ, বাবুল আকতার , নাজমা আক্তার, রাজেকুজ্জামান রতন, এডভোকেট আতিকুর রহমান, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং শ্রম অধিদপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সংশোধনী বাংলাদেশের শ্রমবাজারকে আরও গতিশীল ও আন্তর্জাতিক মানসম্মত করবে এবং শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সারাদেশে কুইক রেসপন্স টিম কাজ করছে।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে জাগো নারী উন্নয়ন সংস্থা আয়োজিত প্রযুক্তি সুবিধাপ্রাপ্ত লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা মোকাবেলায় নীতিগত সুপারিশ শীর্ষক জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা একথা বলেন।
সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা বলেন, সারাদেশে প্রযুক্তিগত সুবিধা নিয়ে বিভিন্ন স্থানে নারীদের সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। এ সকল অপকর্ম প্রতিরোধে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পরিচালিত কুইক রেসপন্স টিম কাজ করছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে বাল্য বিয়ের সংজ্ঞা পাল্টে গেছে। এর মূল কারণ হচ্ছে মোবাইল নামক যন্ত্রটি। মোবাইল প্রযুক্তির অপব্যবহারের ফলে ছোট ছোট মেয়েরা প্রেমের ফাঁদে পড়ে নারী নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
মেয়েরা অবুঝ এজন্য অভিভাবকদেরকে এ বিষয়ে আরো সচেতন হতে হবে। যাতে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েরা প্রেমের ফাঁদে পড়ে নারী সহিংসতা শিকার না হয়।
উপদেষ্টা বলেন, জাগো নারী উন্নয়ন সংস্থা, নারী পক্ষ, হিউম্যান রাইটস বাংলাদেশ, সাইবার টিনস ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), ব্র্যাকসহ বাইশটি সংগঠন আজ নারী নির্যাতন প্রতিরোধে একযোগে কাজ করছে। তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
উপদেষ্টা বলেন এই ২২ টি সংগঠনের প্ল্যাটফর্মে যে সমস্ত শিক্ষিত তরুন যুবক যুবতীরা আছেন তাদেরকে টেকনোলজির মাধ্যমে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন ব্যক্তিগত এবং সামাজিক ও পরিবারের সচেতনতাই পারে একটি মেয়েকে নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে। এজন্য সবাইকে আরো সচেতন হতে হবে।
ইলিশের উৎপাদন একদিকে কমছে, এতে প্রাকৃতিক কারণও রয়েছে। নদীর নাব্যতা কমে যাচ্ছে, মেঘনা নদীর অববাহিকায় দূষণের মাত্রা বেড়েছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টি না হলে ইলিশ মাছ ডিম পাড়তে পারে না। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকৃতিক কারণ ও তথাকথিত উন্নয়নের কারণে নদী ভরাট ও দখল হয়ে যাচ্ছে। এমন মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার। বরিশাল ক্লাব প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত উপকূলীয় এলাকার মহিষের চারণভূমি ও উন্নয়নের সমস্যা এবং সাধন শীর্ষক জাতীয় কর্মশালা-২০২৫-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ইলিশ একটি মাইগ্রেটরি মাছ এটি সমুদ্র থেকে নদীতে আসে এবং আবার ফিরে যেতে হয়। কিন্তু বর্তমানে তা হচ্ছে না। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ঝাটকা নিধন। কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী অভিযান চালালেও এটি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা যায়নি। এছাড়া অবৈধ জালের ব্যবহার ইলিশের প্রাপ্যতা কমাচ্ছে। তবে এসবের বিরুদ্ধে আমরা কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছি। আশা করছি খুব শীঘ্রই ইলিশের দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।
তিনি জানান,খুব শীঘ্রই ঢাকায় একটি মিটিং অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে নদী থেকে মাছ ধরে হাত বদলের সিন্ডিকেট বন্ধ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। এ উদ্যোগের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ সরাসরি বাজারে মাছ পাবে এবং সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে আসবে।
ফরিদা আক্তার বলেন, উপকূল এলাকায় মহিষের চারণভূমি সংকুচিত হয়ে গেছে। আমরা গবেষণায় দেখেছি এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে। বাড়িঘর তৈরি হচ্ছে, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও নির্মিত হচ্ছে। আমাদের দেশে গরু, ছাগল ও মহিষ পালন অন্তত মানুষের খাদ্য ও জীবন রক্ষার জন্য জরুরি। চারণভূমি বিষয়ে আমরা দেখছি যে অনেক কিছু পরিকল্পনা বিহীনভাবে তৈরি হচ্ছে। এতে মহিষের মতো গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তবে সঠিক নীতি ও ব্যবস্থা নিলে এটি দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন,পিকেএসএফ উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ফজলে রাব্বি সাদেক আহমেদ, বরিশাল বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, জিজেইউএস নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন মহিন। সভাপতিত্ব করেন প্রফেসর ড. ওমর ফারুক, প্রেসিডেন্ট।
বক্তারা বলেন, নদী ও সমুদ্রের টেকসই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। মৎস্যজীবী, প্রশাসন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান একত্রিতভাবে কাজ করলে মাছ চাষ ও সংরক্ষণ কার্যকর হবে।
এছাড়া তারা বলেন, উপকূলীয় এলাকায় মহিষ পালনের সম্ভাবনা অনেক, তবে জলবায়ু পরিবর্তন, চারণভূমির অভাব ও বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা খাতটির উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। গবেষণা ও আধুনিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মহিষ পালনকে লাভজনক ও টেকসই খাতে রূপান্তর করা সম্ভব।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান এর সভাপতিত্বে আজ রাজধানীর একটি হোটেলে আন্তর্জাতিক শ্রম মান বিষয়ক ত্রিপক্ষীয় কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় শ্রম সচিব বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ৩৬টি কনভেনশন ও একটি প্রটোকল অনুমোদন করেছে। আইএলও সংবিধান অনুযায়ী, অনুমোদিত ও অননুমোদিত উভয় ধরনের সনদের প্রয়োগ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা সকল সদস্য রাষ্ট্রের জন্য বাধ্যতামূলক। এই কমিটি আইএলও কনভেনশন ১৪৪-এর বাধ্যবাধকতার আলোকে বাংলাদেশ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত প্রতিবেদনে মালিকপক্ষ ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর মতামত, পরামর্শ ও সুপারিশ নিশ্চিত করবে।
সচিব আরও উল্লেখ করেন যে, আইএলও এর ১১টি কনভেনশন (C-01, C-14, C-19, C-81, C-89, C-100, C-106, C-111, C-118, C-138, MLC-2006) নিয়ে আলোচনা করা হয়। এগুলোর মধ্যে C-81 (শ্রম পরিদর্শন), C-100 (নারী ও পুরুষের সমান পারিশ্রমিক), C-111 (কর্মসংস্থান ও পেশায় বৈষম্য) এবং C-138 (ন্যূনতম কাজের বয়স) বিষয়ক চূড়ান্ত প্রতিবেদন আইএলও সংবিধানের ২২ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাধ্যতামূলকভাবে খুব দ্রুত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার জেনেভাস্থ প্রধান কার্যালয়ে প্রেরণ করা হবে।
সভায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার প্রতিনিধি নিরান রাজমুঠান, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের এবং শ্রম অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, ইমপ্লোয়ার্স ফেডারেশন এর প্রতিনিধি , ইন্ডাস্ট্রি অল বাংলাদেশ এর প্রতিনিধি , বেপজা প্রতিনিধি , NCCWE এর প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, গবাদিপশু পালন প্রোটিন ঘাটতি নিরসন, মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষা এবং জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য। অথচ অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে চারণভূমির হ্রাস হচ্ছে, ফলে মহিষের মতো মূল্যবান সম্পদ ক্ষতির মুখে পড়ছে।
আজ সকালে বরিশাল ক্লাবে অনুষ্ঠিত “উপকূলীয় এলাকার মহিষের চারণভূমি ও উন্নয়নের সমস্যা এবং সমাধান” শীর্ষক জাতীয় কর্মশালা ২০২৫-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কর্মশালার আয়োজন করে বাংলাদেশ বাফেলো এসোসিয়েশন, গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা (জিজিইউএস) এবং কোস্টাল ভেট সোসাইটি।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, সঠিক নীতি নির্ধারণ ও আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের মাধ্যমে এখনো অনেক চরাঞ্চল রক্ষা করা সম্ভব। মহিষ পালন বাড়াতে পারলে জাতীয়ভাবে মাংস ও দুধ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা যাবে।
প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মহিষের চারণভূমি দ্রুত কমে যাচ্ছে। অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণ এবং এমনকি সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুর উপজেলায় বৃহৎ গরুর বাথান ভরাট করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিও উঠছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি প্রশ্ন তোলেন, শুধু একটি ডিগ্রি অর্জনের উদ্দেশ্যে গরুর বাথান ধ্বংস করা দেশের সামগ্রিক কল্যাণে কতটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে? তিনি আরও বলেন, মহিষের স্বাস্থ্যসুরক্ষার বিষয় বিবেচনায় উপকূলীয় এলাকায় স্পিডবোটভিত্তিক ভেটেরিনারি ক্লিনিক স্থাপন করা প্রয়োজন।
কর্মশালায় বক্তারা বলেন, বর্তমানে গবাদিপশুর চারণভূমি কমে যাওয়া এবং খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মহিষসহ অন্যান্য গবাদিপশুর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্থানীয় পর্যায়ে কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ ও টেকসই চারণভূমি উন্নয়ন অপরিহার্য। পাশাপাশি মহিষের উৎপাদন বৃদ্ধি ও জাতীয়ভাবে মাংস ও দুধ উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানান তারা।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ বাফেলো এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. ওমর ফারুক।
সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) লুসিকান্ত হাজং, পিকেএসএফ-এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ফজলে রাব্বি সাদেক আহমেদ, জিজিইউএস-এর নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন মহিন। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, স্হানীয় খামারীরা কর্মশালায় অংশ গ্রহণ করেন।
মন্তব্য