রাজধানীর বিজয় সরণি ওভারব্রিজের নিচে দাঁড়িয়ে নানা বয়সী ও শ্রেণি-পেশার মানুষ। টিসিবির ট্রাক থেকে কিছুটা কম দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার জন্য অপেক্ষা করছেন তারা।
বুধবার বেলা ১টার দিকে ৩০-৩৫ জনের জটলা থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়ছিল। আবার অনেকে অধৈর্য হয়ে চলেও যাচ্ছিলেন। কেউবা টানা দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে পাশের গলি ও ফুটপাতে বসে পড়েন।
তাদের একজন রিকশাচালক শাফায়েত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাজারে জিনিসের যা দাম, ইনকামে আর কুলায় না বাপু। দোকান থেইকে কিনতে গেলে ডাবল টাকা খরচ অয়। ইনকামও আগের মতো নাই।
‘আগে বউটা গার্মেন্টসে চাকরি করত। দুই বছর ধরে চাকরি নাই। তাই বউ-পোলাপাইন বাড়িত পাঠাইয়া দিছি। আগে বাসায় ছিলাম, এখন গ্যারেজে থাকি। মাস শেষে বাড়িতে যামু। তাই তেল, চিনি, ডাইল কিইন্না রাকমু মনে করছিলাম। এর লাইগা ৩ ঘণ্টা ধইরা দাঁড়ায় আছি। আরও ঘণ্টাখানেক দেখমু, তার পরও ট্রাক না আইলে চাইলা যামু।’
দেশের গড় আয় বাড়লেও তা নিম্নবিত্ত মানুষের লাভ-লোকসানের হিসাবে ধরা দেয় না। একই অবস্থা মধ্যবিত্তেরও।
অপেক্ষারত আরেকজন পঞ্চাশোর্ধ্ব হাসিনা বেগম বলেন, ‘দুই পোলা, এক পোলার বউ, দুই নাতি আছে বাসায়। এক পোলা সিকিউরিটির চাকরি করে। আরেকটা কারখানায় পিয়নের কাম করে। কোম্পানি করোনায় বেতন কমায় দিছিল, আর বাড়ায় নাই। পোলাগো একটু সাহায্য করার লাইগা এহানতুন তেল-চিনি কিনি। এয়ানে তেল দুই লিটার নেয় ২২০ টাকা, ডাইল-চিনি নেয় ৬০ টাকা। বাজারে গেলে মাতা ঘুরায়। দোয়ানে তেল ১৭০ টাকা, চিনি ৮০ টাকা, ডাইল ১২০ টাকা লাগব।’
শাফায়েত ও হাসিনা বেগম যখন সংসার চালাতে গিয়ে নিজেদের ত্রাহি অবস্থার কথা জানাচ্ছিলেন, তার আগের দিনই সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জানিয়েছে যে গত এক বছরে মানুষের গড় আয় বেড়েছে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা। শুধু গতকালের হিসাবেই বেড়েছে প্রায় ৩ হাজার টাকা। একজন মানুষের গড় আয় এখন প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। আগের বছরও তা ছিল ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
এ নিয়ে কথা বললে হাসিনা বেগম বলেন, ‘আমারডা বাড়ে নাই? আর যদি বাড়েই তাহলে আমার ভাগেরটা গেল কোনে?’
বাস্তবতা হচ্ছে, দেশের গড় আয় বাড়লেও তা নিম্নবিত্ত মানুষের লাভ-লোকসানের হিসাবে ধরা দেয় না। একই অবস্থা মধ্যবিত্তেরও।
কথা হলো বাসযাত্রী চাঁদপুরের বাসিন্দা ফজলে রাব্বীর সঙ্গে। ঢাকার মোহাম্মদপুরে মা-বাবা ও স্ত্রী নিয়ে বসবাস করেন তিনি। মহাখালীর একটি প্রতিষ্ঠানে গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেন। রাব্বি জানালেন, ‘করোনার প্রায় এক বছর প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। চাকরি ছিল না, আয়ও ছিল না। এখন চাকরি মিললেও বেতন কমে গেছে প্রায় ৬ হাজার টাকা।
‘এক বছর আয়-রোজগার বন্ধ থাকলেও সংসার খরচ তো থেমে থাকেনি। পৈতৃক জমি বিক্রি করে এক বছরের সংসার খরচ চালাইতে হইছে।’
কোনো পণ্যের দাম এক বছরের ব্যবধানে বাড়ার হিসাবই মূল্যস্ফীতি। গত ডিসেম্বরে তা ৬ শতাংশ ছাড়িয়ে ৬.০৫ শতাংশ হয়েছে। নভেম্বরে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি
বিবিএসের হিসাবে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই বাড়ছে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক মূল্যস্ফীতি। কোনো পণ্যের দাম এক বছরের ব্যবধানে বাড়ার হিসাবই মূল্যস্ফীতি। গত ডিসেম্বরে তা ৬ শতাংশ ছাড়িয়ে ৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ হয়েছে। নভেম্বরে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
দাম বাড়ায় ক্ষেত্রেবিশেষে শহরকেও ছাড়িয়ে গেছে গ্রাম। ৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতির অর্থ হচ্ছে- গত বছরের ডিসেম্বরে যে পণ্য কিনতে ১০০ টাকা লাগত এখন তা কিনতে লাগছে ১০৬ টাকা। এ সময় খাবার ছাড়া অন্যান্য পণের দাম বেড়েছে ৭ শতাংশ। আর খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
গত এক বছরের গড় হিসাবে ডিসেম্বর শেষে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ। যদিও সরকার চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশে বেঁধে রাখার লক্ষ্য নিয়েছে।
জিনিসপত্রের দাম আসলে কেমন
বাজারে জিনিসপত্রের দামের হিসাব রাখে টিসিবি। তবে তাদের হিসাবটা নিত্যপ্রয়োজনীয় মোট পণ্যের একটি অংশমাত্র। তবে সংস্থাটি বিভিন্ন পণ্যের দাম বৃদ্ধির যে হিসাব দিয়েছে, তা মূল্যস্ফীতির হিসাবের সঙ্গে মেলে না। বেশির ভাগ পণ্যের দাম বৃদ্ধির হারই মূল্যস্ফীতির হিসাবের কয়েক গুণ।
চালের দাম বেশি বলে ভাত ছেড়ে আটা-ময়দায় ঝুঁকবেন তারও উপায় নেই। টিসিবির হিসাব বলছে- এক বছরে খোলা আটা ১১.২৯ শতাংশ বেড়ে সর্বোচ্চ ৩৬ টাকা, প্যাকেট আটা ২৬.৮৭ শতাংশ বেড়ে ৪৫ টাকা, খোলা ময়দা ৩৭.৬৮ শতাংশ বেড়ে ৫০ টাকা এবং প্যাকেট ময়দা ২৭.৩৮ শতাংশ বেড়ে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
টিসিবি তথা সরকারি হিসাব বলছে, মানুষকে সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে তেল, চাল ও মুরগির দাম। এক কেজি মোটা চাল কিনতেও এখন ৪৮ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। সরু চাল এক বছর আগে ছিল ৬০-৬২ টাকা কেজি। এখন তা ৬৮-৭০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। সে হিসাবে দাম বেড়েছে ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
চালের দাম বেশি বলে ভাত ছেড়ে আটা-ময়দায় ঝুঁকবেন তারও উপায় নেই। টিসিবির হিসাব বলছে- এক বছরে খোলা আটা ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ বেড়ে সর্বোচ্চ ৩৬ টাকা, প্যাকেট আটা ২৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেড়ে ৪৫ টাকা, খোলা ময়দা ৩৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেড়ে ৫০ টাকা এবং প্যাকেট ময়দা ২৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেড়ে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
২০২০ সালের নভেম্বরের শুরুতে খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ৯০ টাকার আশপাশেই ছিল। এর পর থেকেই বাড়তে থাকে দাম, যা এখন ১৫৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ১০৫ টাকার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়। এ সময়ে খোলা ও বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৭০ শতাংশের মতো।
টিসিবি বলছে, দাম বাড়ায় পিছিয়ে নেই ডালও। বড় দানার মসুর ডাল এক বছর আগে ছিল সর্বোচ্চ ৭০ টাকা। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। মাঝারি মানের ডাল ৯০ টাকা থেকে বেড়ে ১১০ এবং দেশি বা ছোট দানার মসুর ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সে হিসাবে বড় দানায় ৪৪ এবং মাঝারিতে ২৬ শতাংশ দাম বেড়েছে। অ্যাংকর বা বুট ডালের দামও ১৮ শতাংশ বেড়ে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গত বছরের এ সময় দেশি পিঁয়াজের দাম কিছুটা বেশি ছিল, কেজি ৩৫ থকে ৪০ টাকা। এবার বিক্রি হচ্ছে ২৪ থেকে ৩৫ টাকায়। তবে আমদানি করা যে পিঁয়াজ ওই সময় ২০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। দাম বেড়েছে দ্বিগুণ বা ১০০ শতাংশ।
জিনিসপত্রের দাম কিন্তু একদিনে বাড়েনি। গত বছরজুড়েই ধীরে ধীরে দাম বাড়ছে। মানুষ বাধ্য হয়ে বাড়তি দামে পণ্য কিনছে। কেউ ছয় মাস পর বাজারে এলে পণ্যের দাম দেখে ভিরমি খাবেন।
কলমিলতা বাজারের মুদি দোকানি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম কিন্তু একদিনে বাড়েনি। গত বছরজুড়েই ধীরে ধীরে দাম বাড়ছে। মানুষ বাধ্য হয়ে বাড়তি দামে পণ্য কিনছে। কেউ ছয় মাস পর বাজারে এলে পণ্যের দাম দেখে ভিরমি খাবেন। যেমন, ছয় মাস আগে হুইল পাউডারের কেজি ছিল ৭০ টাকার মতো; এখন তা ১১০ টাকা। এভাবে সব জিনিসেই দাম একটু একটু করে বেড়ে আকাশচুম্বী হয়ে গেছে।’
মুরগির দামের বর্তমান অবস্থা দেখে বোঝার উপায় নেই যে গত তিন মাস কী অবস্থায় ছিল। ব্রয়লার মুরগির দাম ২০০ টাকায় উঠেছিল। এখন তা ১৫০ টাকায় নেমেছে। যদিও স্বাভাবিক সময়ে ব্রয়লার মুরগির কেজি থাকে ১২০-১২৫ টাকার মধ্যে।
সব সময় ১৮০-১৯০ টাকা কেজিতে ঘোরাফেরা করা সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৬০-২৭০ টাকায়। কিছুদিন আগেই তা ছিল ৩০০ টাকার ওপর। মাংস ছেড়ে ডিম খাবেন সে উপায়ও নেই। ডিমের হালি ৩৮-৪০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করছে কয়েক মাস ধরেই।
সবজির বাজারের অবস্থাও সুবিধার নয়। শীত মৌসুমে সবজির দাম সব শ্রেণির ভোক্তার নাগালে থাকার কথা। অথচ বাজারে গ্রীষ্ম মৌসুমের চিত্র।
বাড্ডার সবজি বিক্রেতা মাসুদ হোসেন জানান, ‘শিম ৪৫-৫০ টাকা কেজি বেচতাছি। ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৩৫-৪০, শসা ও ক্ষীরা ৫০-৫৫, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০, মাঝারি আকারের লাউ প্রতিটি ৭০-৮০ টাকা।
‘এ ছাড়া করলা, বেগুন ও বরবটির কেজি ৮০ টাকা, গাজর ও মুলা ৩০-৪০ টাকা, কাঁচামরিচের কেজি ৫০ টাকা, লেবুর হালি ৩০ টাকা।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যবাজারের এই পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের কর্তাব্যক্তিদের বক্তব্যে কোনো উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বা পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস নেই।
পরিসংখ্যান ব্যুরো মূল্যস্ফীতির যে তথ্য প্রকাশ করে, তার সঙ্গে বাজারের পণ্যমূল্যের যথেষ্ট ফারাক থাকে। এ ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য বিবিএসকে বাস্তবভিত্তিক তথ্য প্রকাশে মনোযোগ দিতে হবে।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম মঙ্গলবার প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়ের হিসাব তুলে ধরা অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আছে। এ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।’
আগের দিন সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘চালের দাম কিছুটা হলেও কমেছে। ১০ টাকা কেজি দরে গরিবদের ওএমএসে চাল দেয়া হচ্ছে। এ কারণে খাবারের হাহাকার নেই। তবে দাম একটু বেশি, সেটা ঠিক। পিঁয়াজের দাম কম। কিছুটা মুদ্রাস্ফীতি আর আন্তর্জাতিক বাজারেই ভোজ্যতেলের দাম বেশি হওয়ায় দেশের বাজারে তার প্রভাব পড়েছে।’
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের পরিসংখ্যান ব্যুরো মূল্যস্ফীতির যে তথ্য প্রকাশ করে, তার সঙ্গে বাজারের পণ্যমূল্যের যথেষ্ট ফারাক থাকে। এ জন্য পণ্যমূল্য নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করেন। এ ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য বিবিএসকে বাস্তবভিত্তিক তথ্য প্রকাশের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, এসব নির্বাচন নিয়ে কোনো উদ্বেগ নেই, ভালোভাবেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করছি। এজন্য আপনাদের (সাংবাদিক) সাহায্য ও সহযোগিতা দরকার।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে রাকসু ও চাকসু নির্বাচন-২০২৫ উপলক্ষে সার্বিক প্রস্তুতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিষয়ক সভা শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি রাকসু ও চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আজ তাদের সঙ্গে আলাপ করেছি। তারা দেশের সবচেয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত, শুধু দেশেই না বিদেশেও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত । যারা ভোট দেবে তারাও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত।
তিনি বলেন, ‘তাদের অভিজ্ঞতা আজ শেয়ার করলাম। যেহেতু আমাদের একটা জাতীয় নির্বাচন আছে ফেব্রুয়ারিতে, এই নির্বাচনগুলো দেখে আমাদের কিছু অভিজ্ঞতা হচ্ছে। সেটা আমরা জাতীয় নির্বাচনে কীভাবে প্রয়োগ করতে পারবো সেজন্য আজকে বসেছিলাম।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তারা আজ ভালো ভালো সাজেশন দিয়ে গেছে। সেই সাজেশন আমরা ভবিষ্যতে কাজে লাগাবো। একইসঙ্গে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় তাদেরও উপকার হয়েছে। যেহেতু দুইটা নির্বাচন হয়েছে। সেখানে নির্বাচনে কী করতে হবে, ছোটখাটো ভুল-ত্রুটি থাকলে সেগুলো কীভাবে সমাধান করা হবে, এসব নিয়ে বিস্তারিত কথা হয়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সভায় তারা কোনো ধরনের শঙ্কার কথা জানায়নি।
আজকের সভায় কি ধরনের সাজেশন এসেছে-এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে তারা বলেছে- কতগুলো সেন্টার হওয়া দরকার, ভোট গণনা কীভাবে হবে, কালি কীভাবে ব্যবহার করতে হবে, এসব নিয়ে কথা হয়েছে। দ্রুত ফল ঘোষণার জন্যও কি ব্যবস্থা নেয়া যায়, আলোচনা হয়েছে। ভোটারদের ছবিযুক্ত আইডি কার্ড ও ভোটার তালিকা যেন স্বচ্ছ থাকে এসব বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে।
ব্রিফিংয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার বলেন, রাকসু ও চাকসু নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হয়, এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ডাকসু ও জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ দুটি নির্বাচন থেকে অনেক কিছু শনাক্ত হয়েছে। এসব নির্বাচনে কোন বিষয়গুলো কাজ করেছে বা কোন বিষয়গুলো কাজ করেনি, তার একটি ধারণা পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে আমরা এখানে এসেছি। আজকের সভায় ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। এ দুটি নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা আছে। ভালো নির্বাচন হবে বলে আশা করছি।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ৪৭ তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি পেশ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া নাহিদ ইসলাম।
বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আজ জবানবন্দি পেশ শেষ করেন নাহিদ। তিনি গতকাল জবানবন্দি পেশ শুরু করেন।
আজ বিকেলে তাকে জেরা করবেন এই মামলায় পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন।
এ মামলায় প্রসিকিউসন পক্ষে আজ চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এসএইচ তামিম শুনানি করেন। সেই সাথে অপর প্রসিকিউটররা শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন।
উক্ত মামলায় পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। এ মামলায় গ্রেফতার হয়ে পরে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
একপর্যায়ে এ মামলায় দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে (অ্যাপ্রোভার) রাজসাক্ষী হতে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের আবেদন মঞ্জুর করেন ট্র্যাইব্যুনাল। পরবর্তীকালে এ মামলার ৩৬ তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন রাজসাক্ষী পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
এ মামলাটি ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, এর দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব অপরাধের বিচার কাজ চলছে
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, পরিবারে পুরুষের সঙ্গে নারী জেলেদেরও কার্ড থাকতে হবে। তিনি বলেন, সরকারের দেওয়া জেলে কার্ডে পুরুষ জেলেদের নামই আসে, মাত্র ৪ শতাংশ সেখানে নারী। পরিবারে একজন চাকরি করলে তিনিই চাকরিজীবী হোন কিন্তু যারা মাছ ধরে তার পুরো পরিবার এ কাজে যুক্ত। এ প্রক্রিয়ায় বেশিরভাগ সময় নারীদের বেশি কাজ করতে হয়। তাই পুরুষ জেলেদের সঙ্গে নারীদেরও কার্ড দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
উপদেষ্টা আজ বুধবার সকালে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বেসরকারি গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডিজ (সিএনআরএস) আয়োজিত “টেকসই মৎস্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক জাতীয় নীতি সংলাপ”-এ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, এ সেমিনার এসে দায়িত্ব বেড়ে গেছে। আমাদের জেলেদের বিশেষ করে নারী জেলেদের নিয়ে আরো বেশি কাজ করতে হবে। এখন পর্যন্ত নারীদেরকে কৃষকের স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য লড়াই করতে হচ্ছে। আর নারী জেলেদের কথা তো বলাই বাহুল্য। অথচ নারী জেলেরা তার পরিবার পরিজনের জন্য নদীতে মাছ ধরে। স্বামীর অবর্তমানে সংসার চালায়।
মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, "এ পেশায় পুরো পরিবারকে নিয়ে কাজ করতে হয়। মান্তা সম্প্রদায়ের দুঃখ দুর্দশার কথা শুনে খুব কষ্ট পেলাম।" জেলে সম্প্রদায়ের আইনগত সমস্যা নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ঝড় তুফানে অনেক জেলে মারা যায়, কেউ হারিয়ে যায়, সেসব পুরুষের হদিস না থাকায় ব্যাংকের টাকাও তুলতে পারে না তাদের স্ত্রীরা। তা ছাড়া নারীকে বিধবা ভাতাও দেওয়া যায় না। এসব আইনি জটিলতা দূর করতে হবে।
তিনি বলেন, "আমাদের আইনগুলো পুরুষদের কথা চিন্তা করে করা। সেখানে নারীদের স্থান খুব কম। আর আগের মৎস্য আইনও একই ধরনের। তাই মৎস্য আইনের খসড়া ২০২৫ -এ আমরা এসকল সমস্যার সমাধানে দৃষ্টি দিয়েছি। আর নারীদের স্বীকৃতি দিলে হলে সংখ্যার স্বীকৃতি দিতে হবে। অথচ আমাদের তালিকায় নারীজেলের সংখ্যা খুবই নগন্য, মাত্র ৪ শতাংশ। কিন্তু সমাজে অসংখ্য নারী জেলে রয়েছে। এসব ঘাটতি পূরণে আমরা কাজ করছি। "
অমৎস্যজীবীরা মৎস্যজীবীর কার্ড নিয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আগের তালিকা অনুসন্ধান করে দেখেছি অমৎস্যজীবীরা মৎস্যজীবীর কার্ড নিয়ে গেছে। এখন সেগুলো বাতিল করা হয়েছে। আমরা চাই যেন প্রকৃত জেলেরা কার্ড পেতে পারে। সেইসঙ্গে যে পরিবারে পুরুষ জেলের কার্ড থাকবে সেখানে নারীদেরও থাকতে হবে।
কাঁকড়া ও ঝিনুক মানুষের খাদ্যের অংশ এটিকে বন অধিদপ্তরের সংজ্ঞা থেকে বের করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তা ছাড়া যারা কীটনাশক ব্যবহার করে মাছ ধরছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জলমহাল ইজারা সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, জলমহালের কাছের মানুষের নামে অন্যরা জলমহাল ইজারা নেয়। এক্ষেত্রে জৈবভিত্তিক ইজারা দিতে হবে, অর্থাৎ এ পেশার সঙ্গে জড়িত জেলেদের দিতে হবে। বাওড়ে ইজারা জেলেদের দেওয়ার কথা নিশ্চিত হচ্ছে, তবে হাওর নিয়েও ভূমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা চলছে। যাতে প্রকৃত জেলেরা তা পায়।
নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা সময়ে যতজনকে ভিজিএফ কার্ডের আওতায় সহযোগিতা দেওয়া দরকার তা দেওয়া সম্ভব হয় না। এর পরিমাণ ও সংখ্যা বাড়ানোর জন্য আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তুলতে চাই।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আব্দুর রউফ। তিনি বলেন, নারী শ্রমিকরা পুরুষের চেয়ে ৩০ শতাংশ কম মজুরি পায়। তা ছাড়া আমাদের জলমহাল ইজারা রাজস্বভিত্তিক দেওয়া হয়। এটি বাতিল করে জাল যার জলা তার নীতিতে নিতে হবে। জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি কার্ড নিশ্চিত করে জেলে কার্ড দেওয়া হবে। বর্তমানে আমাদের নিবন্ধনে ১৭ লাখ জেলের মধ্যে ৪৪ হাজার রয়েছে নারী। এ সংখ্যা আমরা বৃদ্ধি করতে হবে।
এসময় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিএনআরএস এর পরিচালক মি. এম. আনিসুল ইসলাম। এমপাওয়ারিং উমেন থ্রু সিভিল সোসাইটি অ্যাক্টর্স ইন বাংলাদেশ (ইডাব্লিউসিএসএ) প্রকল্পের পরিচিতি উপস্থাপন করেন অক্সফাম বাংলাদেশের প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর শাহজাদী বেগম।
সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিএনআরএস-এর পরিচালক ড. এম. আমিনুল ইসলাম এবং জাগো নারী টিম লিডার রিসার্চ আহমেদ আবিদুর রেজা খান।
সংলাপ শেষে মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে নারী মৎস্যজীবীদের ক্ষমতায়ন ও টেকসই মৎস্য ব্যবস্থাপনা জোরদারে বিভিন্ন সুপারিশ উপস্থাপিত হয়।
সংলাপে সরকারি কর্মকর্তা, গবেষক, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, সিভিল সোসাইটি, শিক্ষাবিদ এবং উপকূলীয় অঞ্চলের মৎস্যসম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, গত বছরের চেয়ে এবার পূজা শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে করতে সরকার বদ্ধপরিকর।
তিনি বলেন, পূজা উপলক্ষে হামলার কোনো হুমকি নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো থাকবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আজ বুধবার রমনা কালী মন্দির পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। এ সময় রমনা কালী মন্দির কমিটির সভাপতি অপর্ণা রায়সহ কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জাহাঙ্গীর বলেন, পূজা নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠানের জন্য ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং করা হবে। সে কারণে একটি নতুন অ্যাপ খোলা হয়েছে। কোথাও কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পূজা শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি পূজা উদযাপন কমিটিকে নজরদারি করার আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান, সে কারণে ধর্মীয় নিয়ম মেনে সবাই এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বিগত সরকারের সময় ২ কোটি টাকা পূজা উপলক্ষে বরাদ্দ দেওয়া হতো। বর্তমান সরকার তা থেকে বাড়িয়ে গত বছর এ লক্ষ্যে ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল; এবার সেটি থেকে বাড়িয়ে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। পূজা মণ্ডপের সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরো সহায়তা করা হবে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোঃ মাহফুজ আলম বলেছেন, যেসব শিশু জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ হয়েছে, তাদের লেখা ও স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে 'নবারুণ' পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করতে হবে। এ বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করতে উপদেষ্টা চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। বুধবার (১৭ই সেপ্টেম্বর) ঢাকার তথ্য ভবনে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর প্রকাশিত কিশোর মাসিক পত্রিক 'নবারুণ'-এর লেখকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এই আহ্বান জানান।
'নবারুণ' পত্রিকা নিয়ে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, এই পত্রিকায় শিশু-কিশোরদের আঁকা ছবি ও লেখা গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করতে হবে। 'নবারুণ' পত্রিকায় শিশু-কিশোরদের লেখা ও ছবি বেশি পরিমাণে প্রকাশিত হলে তারা অনুপ্রাণিত হবে। এতে তাদের সৃজনশীলতা বিকশিত হবে।
মাহফুজ আলম বলেন, "যে সরকারই দায়িত্বে আসুক না কেন, শিশু-কিশোরদের ব্যাপারে নিরপেক্ষ থাকা উচিত।" তিনি ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান-সহ আর্থসামাজিক বিভিন্ন বিষয়ের ওপর লেখালিখি করার জন্য লেখকদের প্রতি অনুরোধ জানান।
'নবারুণ' পত্রিকা ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, প্রকাশনার শুরু থেকে (১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দ) এ পর্যন্ত 'নবারুণ' পত্রিকার সকল সংখ্যা ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করতে হবে এবং তা জনগণের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। এতে পাঠক অনলাইনে পুরাতন সংখ্যা পড়ে সমৃদ্ধ হতে পারবেন।
'নবারুণ' পত্রিকার কলেবর বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, 'নবারুণ' পত্রিকায় নতুন লেখকদের জন্য আলাদা বিভাগ চালু করা উচিত। পত্রিকার প্রতি সংখ্যায় কমপক্ষে পাঁচ জন নতুন লেখকের লেখা প্রকাশের জন্য তিনি কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেন। তিনি শিশু-সাহিত্যিকদের নিয়ে দিনব্যাপী একটি কর্মশালা আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
সভায় তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বলেন, যেসব লেখক ৪০-৫০ বছর ধরে লিখছেন, তাঁদের লেখা 'নবারুণ' পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করতে হবে। এতে পত্রিকা আরও সমৃদ্ধ হবে। তিনি 'নবারুণ' পত্রিকার লেখক-সম্মানি বাড়াতে কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দেন।
সভায় 'নবারুণ' পত্রিকার লেখকরা তাঁদের মতামত তুলে ধরেন। তাঁরা 'নবারুণ'-কে একটি অসাধারণ ও সাহসী পত্রিকা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তাঁরা পত্রিকাটির মানোন্নয়নে বেশ কিছু প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদা বেগম। সভার শুরুতে 'নবারুণ' পত্রিকা বিষয়ে তথ্যচিত্র উপস্থাপনা করেন পত্রিকার সম্পাদক ইসরাত জাহান। মতবিনিময় সভাটি সঞ্চালন করেন চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের সিনিয়র সম্পাদক শাহিদা সুলতানা।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
আজ বুধবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য (এমইপি) মুনির সাতোরির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা প্রতিনিধিদলকে জানান, ‘আমরা ইতোমধ্যেই নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করেছি। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ফেব্রুয়ারির শুরুতে, রমজানের ঠিক আগে।’
তিনি উল্লেখ করেন, জনসাধারণ বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে নির্বাচনী উৎসাহ বাড়ছে, কারণ দীর্ঘদিন পর—কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন দশকেরও বেশি সময় পর—ছাত্র সংসদ নির্বাচন আবার শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন হবে শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর।’ তিনি যোগ করেন, কিছু শক্তি এখনো নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে, তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
প্রধান উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন, তরুণ ভোটাররা এবার রেকর্ড সংখ্যায় ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে, কারণ ১৫ বছরেরও বেশি সময় পর অনেকেই প্রথমবারের মতো ভোট দেবে।
তিনি বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য এক নতুন সূচনা বয়ে আনবে। এটি আমাদের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে—জাতির জন্য এক নতুন যাত্রা।’
এক ঘণ্টাব্যাপী আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা ও ইউরোপীয় আইনপ্রণেতারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার উদ্যোগ, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক রূপান্তরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অব্যাহত সমর্থন এবং চলমান রোহিঙ্গা মানবিক সংকট নিয়ে মতবিনিময় করেন।
আগামী নির্বাচন বাংলাদেশে এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে উঠতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন ইউরোপীয় আইনপ্রণেতারা। একজন আইনপ্রণেতা প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সরকারের গত ১৪ মাসের ‘অসাধারণ’ প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।
একজন ডাচ আইনপ্রণেতা মন্তব্য করেন, বাংলাদেশ কতিপয় দেশের মধ্যে অন্যতম, যেখানে ‘ঘটনাগুলো সঠিক পথে এগোচ্ছে।’
প্রধান উপদেষ্টা ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য বাড়তি তহবিল প্রদানের আহ্বান জানান।
বিশেষ করে সম্প্রতি অর্থাভাবের কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের স্কুলগুলো পুনরায় চালু করতে সহায়তা প্রদানের অনুরোধ জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ শ্রম সংস্কারগুলো তুলে ধরে বলেন, এসব পদক্ষেপ বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্ক আরও জোরদার করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে ওয়েস্টিন পারনাস হোটেলে আজ থেকে ০৩(তিন) দিনব্যাপী (১৬-১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫) গ্লোবাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার কো-অপারেশন কনফারেন্স (জিআইসিসি)-২০২৫ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আজ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সেতু বিভাগের সচিব ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক জনাব মোহাম্মদ আবদুর রউফ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন। সম্মেলনে সেতু সচিব সেতু বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্পের উপর প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। সেতু সচিব প্রেজেন্টেশনে উল্লেখ করেন সেতু বিভাগের কয়েকটি প্রকল্পে কোরিয়ান ইডিসিএফ/ইডিপিএফ (EDCF/EDPF) অর্থানয়ের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের পরিবহন খাতে দক্ষিণ কোরিয়ার কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে।
জিআইসিসি-২০২৫ সম্মেলনের লক্ষ্য কোরিয়ান নির্মাণ সংস্থাগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি করা এবং বিভিন্ন দেশের প্রকল্প বাস্থবায়নকারীদের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপন করা। এটি মূলত একটি বিজনেস-টু-বিজনেস প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে, যেখানে কোরিয়ান কোম্পানিগুলো বিদেশী সরকার, প্রজেক্ট ডেভেলপার এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারে। সম্মেলনে প্রায় ৫০০ জন অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন, যার মধ্যে ৩০টি দেশের মন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এবং কোরিয়ান শীর্ষস্থানীয় নির্মাণ সংস্থাগুলির কর্মকর্তারা রয়েছেন।
এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্যগুলো হলো: বিভিন্ন দেশের আসন্ন অবকাঠামো প্রজেক্ট সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও আদান-প্রদান, বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন, নতুন প্রজেক্টে অংশগ্রহণের জন্য চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এবং কোরিয়ান উন্নত প্রযুক্তি যেমন স্মার্ট সিটি, হাই-স্পিড রেল, এবং স্মার্ট পোর্ট সিস্টেমের সাথে পরিচিতি করা।
এছাড়াও সম্মেলনের বাকী অংশে বিভিন্ন দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের প্যানেল আলোচনা, বিভিন্ন দেশের প্রজেক্ট ব্রিফিং, ব্যক্তিগত বিজনেস মিটিং, কোরিয়ান শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলো তাদের নতুন প্রযুক্তি প্রদর্শন করবে।
মন্তব্য