সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান পরিস্থিতির জন্য সিন্ডিকেট নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদ নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বুধবার সকালে বলেন, ‘২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা হওয়ার কথা ছিল। তবে উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।’
উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছাচারিতা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি, ক্যাম্পাসে কোনো অনুষ্ঠান করতে বাধা দেয়া, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ, বিশ্ববিদ্যালয়ে কুমিল্লার লোকদের নিয়োগে প্রাধান্য, উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়মসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছেন।
এ বিষয়ে ফরিদ জানান, সরকার তদন্ত কমিটি করে কোনো সুপারিশ করলে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবেন।
আন্দোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন শিক্ষক প্রতিনিধিরা গালিগালাজ সহ্য করে আলোচনা করার প্রস্তাব করছেন, কিন্তু শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করছে। এ ছাড়া সমস্যা সমাধানের চূড়ান্ত সময়ে এসে কারা সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি তৈরি করে পুলিশকে চড়াও হতে বাধ্য করেছিল, তা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।’
শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নেয়ায় তাদের বিভ্রান্ত না হয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সহায়তার আহ্বান জানান উপাচার্য ফরিদ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন লিজার বিরুদ্ধে খাবারের খারাপ মান, অব্যবস্থাপনা ও দুর্ব্যবহারের অভিযোগ আনেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা। তারা প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে সরে যান। দাবি পূরণ না হওয়ায় শনিবার সন্ধ্যায় ফের বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়ক আটকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন।
এরপর মধ্যরাতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়ে সরে গেলেও রোববার সকাল থেকে ফের শুরু হয় তাদের বিক্ষোভ।
বিকেলে তারা উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদকে অবরুদ্ধ করলে পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে। শিক্ষার্থীরাও ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এরপর শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া।
শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে কয়েকটি রাবার বুলেট ছোড়া হয়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ গুলিবিদ্ধ হন। এরপর পুলিশ উপাচার্যকে বের করে তার বাসভবনে নিয়ে যায়।
পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষের পর রোববার অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। শিক্ষার্থীদের সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ।
জরুরি সিন্ডিকেট সভা শেষে রোববার রাতে উপাচার্য ফরিদ প্রাধ্যক্ষ জাফরিনের পদত্যাগের বিষয়টি জানান। এরপর থেকেই শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে নামেন।
এর মাঝে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অজ্ঞাতপরিচয় ২ থেকে ৩০০ শিক্ষার্থীকে আসামি করে সোমবার রাতে সিলেটের জালালাবাদ থানায় মামলা করে পুলিশ। মঙ্গলবার বিকেলে এই মামলা প্রত্যাহারের জন্য পুলিশকে সময় বেঁধে দেন শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে উপাচার্যের পদত্যাগের সময় বেঁধে দেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার দুপুর ১২টার মধ্যে এ দাবি মানা না হলে আমরণ অনশনে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এ আন্দোলন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও ছড়িয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ মিছিল করেন।
আরও পড়ুন:করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকতে পারছেন না মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন।
শুক্রবার বিকেল ৬টায় আব্দুল মোমেনের করোনা পরীক্ষার ফল পজিটিভ আসে।
সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যারা অংশ নেবেন তাদের সবার করোনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক হওয়ায় অনুষ্ঠানের ৪৮ ঘণ্টা আগে নমুনা পাঠান এসপি।
এসপি মোমেন বলেন, ‘সন্ধ্যা ৬টার দিকে জানতে পারি আমার করোনা পজিটিভ। তাই হোম আইসোলেশনে আছি। তবে যেহেতু জেলার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বে আছি তাই ঘরে থেকেও কাজ করছি।
‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন। এই অনুষ্ঠানে থাকতে পারলে পরিপূর্ণ পরিতৃপ্তি পেতাম।’
আর কিছু মুহূর্তের অপেক্ষা; উদ্বোধন হতে যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের পদ্মা সেতু। শনিবারের উদ্বোধনী জনসভায় যোগ দিতে শুক্রবার রাতে বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ রওনা হন তিনটি লঞ্চে করে।
শুক্রবার রাত ১১টার দিকে বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতে এসে পৌঁছায় লঞ্চগুলো। এরপর প্রতিটি লঞ্চ থেকে ফোটানো হয় আতশবাজি। এ সময় বরিশাল নদীবন্দরে নোঙর করা অন্যান্য লঞ্চ থেকেও আতশবাজি প্রদর্শন করা হয়; আলোকিত হয়ে ওঠে কীর্তনখোলা।
টানা ২০ মিনিট আতশবাজি ফোটানো হয়। এরপর এক এক করে সমাবেশস্থলের উদ্দেশে রওনা হয় লঞ্চগুলো।
প্রথমে সুরভী-৭ লঞ্চ বরিশালের কীর্তণনখোলা নদী অতিক্রম করে। চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা করা হয় লঞ্চটিতে। প্রতিটি লঞ্চেই এমন আলোকসজ্জার সঙ্গে নাচ-গানে মেতে ওঠেন মানুষ।
কেন্দ্রীয় লঞ্চ মালিক সমিতির সহসভাপতি ও বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বরিশাল বিভাগ থেকে ৬০টি লঞ্চ পদ্মা সেতু উদ্বোধনী সমাবেশস্থলে যাচ্ছে। এর মধ্যে অনেক লঞ্চ রওনা হয়েছে নেতা-কর্মীদের নিয়ে। আমরা ইতিহাসের সাক্ষী হতে উচ্ছ্বসিত হয়ে সমাবেশস্থলে যাচ্ছি।’
বরিশাল নদীবন্দরে রাতে গিয়ে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের ব্যাপক সমাগম দেখা গেছে। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পাস কার্ড ছাড়া বরিশাল নদীবন্দরে প্রবেশ করতে পারেনি কেউ। এই নদীবন্দর থেকে ৮টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে পদ্মা সেতু উদ্বোধনী সমাবেশস্থলের উদ্দেশে।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বরিশাল বিভাগ থেকে এক লাখ মানুষ যাচ্ছে পদ্মা সেতু উদ্বোধনী সমাবেশস্থলে। জনসমাবেশে যোগ দিতে আনন্দিত দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ লঞ্চে করে রওনা হয়েছেন। আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিতে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি।’
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সেজেছে নরসিংদী। শনিবার আত্মমর্যাদা ও প্রত্যয়ের পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে নানা আয়োজনের অংশ হিসেবে শুক্রবার গভীর রাতেই জেলার মোসলেহ উদ্দিন ভূইয়া স্টেডিয়ামে জ্বলে ওঠে আলো।
এদিকে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আনন্দ জেলায় দ্বিগুণ করতে জেলা প্রশাসন আয়োজন করছে ‘প্রত্যয়ের জয়গান’ নামের একটি কনসার্ট।
মোসলেহ উদ্দিন ভূইয়া স্টেডিয়ামে আজ বিকেল ৩টায় দেশের জনপ্রিয় ব্র্যান্ড দল ‘মাইলস’-এর শিল্পীদের মধ্যে গান পরিবেশন করবেন শাফিন আহমেদ। কনসার্টটি দর্শকের জন্য উন্মুক্ত থাকবে বলে জানা গেছে নরসিংদী জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে।
নরসিংদী বিভিন্ন উপজেলাসহ জেলা প্রশাসনের আয়োজনে রয়েছে দিনব্যাপী কর্মসূচি। এর মধ্যে শনিবার সকাল ৯টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে স্টেডিয়াম পর্যন্ত এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রারও আয়োজন করা হয়েছে।
এরপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান বড় পর্দায় উপভোগ করবেন নরসিংদীবাসী।
বর্ণিল এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নরসিংদী জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খানসহ স্থানীয় সম্মানিত ব্যক্তিরা ও জনপ্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।
আরও পড়ুন:আর ঘণ্টাদুয়েক পর পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধন ঘিরে বর্ণিল সাজে সেজেছে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাট। পদ্মা সেতুর আদলে প্রস্তুত করা হয়েছে জনসভা মঞ্চ। সেখানে বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী।
সমাবেশ সফল করতে শনিবার ভোর থেকেই জনসভাস্থলে আসতে শুরু করেছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে মিছিল নিয়ে ব্যানার, প্ল্যাকার্ডসহ সভায় যোগ দিচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ।
ভোর ৫টার দিকে প্রায় হাজারখানেক মানুষের জটলা দেখা যায় সেখানে। সবার মুখে মুখে স্লোগান, পুরো এলাকাজুড়ে উৎসব উৎসব রব। সকাল ৬টার পর খুলে দেয়া হয় জনসভার জমায়েতের স্থান। দীর্ঘ লাইনে সবাইকে চেক করে ঢুকতে দিতে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের।
পদ্মা সেতুর কাঁঠালবাড়ী সংযোগ সড়ক থেকে হেঁটে আসতে হচ্ছে তাদের। কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।
বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলা থেকে লঞ্চযোগে সাধারণ মানুষ আসছেন পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। সকল ৭টার মধ্যেই জনসভাস্থলের প্রায় অর্ধেক এলাকা পূর্ণ হয়ে যায়।
ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বাংলাবাজার ঘাট নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে। সতর্ক অবস্থানে পুলিশ, র্যাবসহ বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য। মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। পুরো ৮ কিলোমিটার এলাকার পুরোটাই আনা হয়েছে সিসিটিভির আওতায়। এ ছাড়া বসানো হয়েছে ২৬টি বড় পর্দার মনিটর।
বরিশাল থেকে আসা রমিজউদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাত ১টায় লঞ্চে উঠছি। সারা রাত নাচ-গান করে সকালে ঘাটে নামছি। এটা ঈদের আনন্দের চেয়ে কোনো অংশেই কম না, বরং আমাদের মুক্তির দিন আজ। অনেক কষ্ট আর ভোগান্তি থেকে বাঁচার দিন। যে কারণে আমাদের ফুর্তি কোনো অংশেই কম নয়। বরিশাল থেকে প্রায় এক লাখ মানুষ সভায় আসব।’
মাদারীপুর পৌর শহর থেকে এসেছেন নান্নু মুন্সি। তিনি বলেন, ‘সকালে আলো ফোটার আগেই চলে আসছি। প্রায় ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার হেঁটে আসতে হয়েছে। এখন মাঠে আসছি, এতেই খুশি আমরা।’
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মূল মঞ্চের সামনে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাবসহ অন্তত ছয় স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা আমরা করেছি। পুলিশের অন্তত ১৫ হাজার কর্মী সভায় নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে। এ ছাড়ার র্যাবের ২ হাজারসহ সব মিলিয়ে অন্তত ৪০ হাজার প্রশাসনের কর্মী মাঠে রয়েছে।’
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতুর আদলে এবার পুকুরের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে সেতু। বাঁশ ও কাঠ দিয়ে নির্মিত সেতুটির দেখা মেলে পটুয়াখালী শহরের সার্কিট হাউসের সামনের পুকুরে।
শনিবার পদ্মা সেতু উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জনমানুষের দৃষ্টি আকর্ষণে সেতুটি নির্মিত হয়েছে বলে জানা গেছে। সেতুটি দেখতে ভিড় করতে দেখা যায় স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে। সেতুতে উঠে অনেকে তুলছেন সেলফি, আবার গোটা সেতুকেও ক্যামেরাবন্দি করছেন অনেকে।
জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে জানা যায়, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে শনিবার সকালে পুকুরের এই সেতুতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও পৌরসভার যৌথ এই আয়োজনে অনেক মানুষ অংশ নেবেন বলে প্রত্যাশা করছেন সেতু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সেতু নির্মাণের দায়িত্বে থাকা গোবিন্দ ঘোষাল জানান, ২৪ জন মানুষের ছয় দিন সময় লেগেছে সেতুটি নির্মাণ করতে। শুক্রবার কাজ শেষ করে জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এরপর সেখানে আলোকসজ্জা করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, বাঁশ ও কাঠ দিয়ে ১৯টি স্প্যানের ওপরে নির্মাণ করা সেতুর দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০০ ফুট। পানি থেকে ছয় ফুট উপরে সেতুতে নির্মাণ করা হয়েছে নমুনা রেললাইন। উপরে দুই পাসে ২০টি ল্যাম্পপোস্ট বসানো হয়েছে। সেতুটি আলোকিত ও দৃষ্টিনন্দন করতে বিভিন্ন রঙের লাইটিং করা হয়েছে।
এটি নির্মাণে ৪৮৫টি বাঁশ, ৫০০ ঘনফুট কাঠ এবং ১৫০টি প্লাইউড ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানান সেতুর নির্মাতা গোবিন্দ।
সেতু দেখতে আসা শহরের মিঠাপুকুর পাড় এলাকার মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘সময় ও সক্ষমতার অভাবে সরাসরি পদ্মার পাড়ে গিয়ে পদ্মা সেতু দেখতে পারিনি। কিন্তু কাঠের এ সেতু, এর নিচের পিলার ও রেললাইনের অংশ দেখে মনে হয়, এ যেন হুবুহু পদ্মা সেতু।’
পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, ‘পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে জেলাবাসীর কাছে স্মরণীয় করে রাখতে ব্যতিক্রম এই আয়োজন করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় অংশ নিতে খুলনা থেকে দলে দলে নেতা-কর্মী ছুটছেন পদ্মার পারে।
খুলনার শিববাড়ী মোড়ে শুক্রবার রাত ১২টা থেকে জড়ো হতে থাকে শত শত পরিবহন। এতে করে রওনা দেন খুলনার বিভিন্ন এলাকার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী।
খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানা বলেন, ‘পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন খুলনা জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ৫০ হাজারের বেশি নেতা-কর্মী।
‘আমরা ৫০০-এর বেশি বাস ভাড়া করেছি। প্রত্যেক উপজেলায় গাড়ি পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শনিবার ভোর ৫টা পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে গাড়ি ছেড়েছে। তা ছাড়া অনেক নেতা-কর্মী নিজস্ব গাড়িতেও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাবেন।’
নগর যুবলীগের আহ্বায়ক শফিকুর রহমান পলাশ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশ সফল করতে আমরা কয়েক হাজার নেতা-কর্মী রাতেই রওনা দিয়েছি। আমাদের সঙ্গে চিকিৎসক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আছেন।
‘সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্স, পর্যাপ্ত শুকনা খাবার, স্যালাইন, পানি, ওষুধসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিস নেয়া হয়েছে।’
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে খুলনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধন অনুষ্ঠান সরাসরি বড় পর্দায় খুলনা জেলা স্টেডিয়াম, দৌলতপুর ও শিববাড়ি এলাকায় দেখানো হবে।
‘বিকেল ৪টায় জেলা স্টেডিয়ামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পটের গান আয়োজন করা হয়েছে। গান পরিবেশন করবে ব্যান্ড দল চিরকুট ও বাউল। সেই সঙ্গে আতশবাজি ও লেজার শো করা হবে।’
আরও পড়ুন:ছয় মাস আগে কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে শ্বশুরের দ্বারা ধর্ষিত এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ অভিযোগে শ্বশুরকে আটক করেছে মিঠামইন থানা পুলিশ।
শুক্রবার রাত ১১টায় উপজেলার ঢাকী ইউনিয়নের পাতারকান্দি এলাকা থেকে অভিযুক্ত ওই শ্বশুরকে আটক করা হয়।
মিঠামইন থানার ওসি কলিন্দ্র নাথ গোলদার নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ভুক্তভোগীর মা পরিস্কার বানু জানান, দুই বছর আগে উপজেলার ঢাকী ইউনিয়নের পাতারকান্দি গ্রামের একাব্বর মিয়ার ছেলে দিদারের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তার কন্যা শামসুন্নাহারের। বিয়ের কিছুদিন পর দিদার কাজ করতে চলে যান চট্টগ্রাম। ছুটি নিয়ে তিনি মাঝে মাঝে বাড়িতে আসতেন।
ফাঁকা বাড়িতে একাই থাকতেন শামসুন্নাহার। এই সুযোগে ৬ মাস আগে ঘরে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করেন শ্বশুর একাব্বর। পরে ভুক্তভোগী মোবাইল ফোনে বিষয়টি তার স্বামীকে জানালে তিনি বাড়িতে আসেন।
বাড়ি এসে বাবার সঙ্গে রাগারাগি করে শামসুন্নাহারকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে চলে যান দিদার। আর এ বিষয়ে কাউকে কিছু না বলতে নিষেধ করেন স্ত্রীকে এবং কিছুদিনের মধ্যেই আবারও চট্টগ্রাম চলে যান তিনি।
এরপর শামসুন্নাহারের সঙ্গে ধীরে ধীরে যোগাযোগ কমাতে থাকেন দিদার। এক পর্যায়ে তিনি শামসুন্নাহারকে বলেন, ‘তুমি আমার বাবার সঙ্গে খারাপ কাজ করেছো। এখন তোমার সঙ্গে কিভাবে যোগাযোগ রাখি। আর কীভাবেই বা আমার বাড়িতে নিই।’
এ অবস্থায় বেশ কিছুদিন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ ছিল। সম্প্রতি দিদার ফোন করে শামসুন্নাহারকে জানান, স্ত্রীকে আর ঘরে নেবেন না তিনি।
এই অপমান সহ্য করতে না পেরে শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে বাবার বাড়িতে গলায় উড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করেন শামসুন্নাহার।
শামসুন্নাহারের মা বলেন, ‘এখন থানায় আছি। মামলা করার জন্য এসেছি। এখানেও একাব্বরের লোকজন বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য চাপ দিচ্ছে।’
মিঠামইন থানার ওসি কলিন্দ্র নাথ গোলদার বলেন, ‘নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। এ ঘটনায় একাব্বরকে আটক করা হয়েছে। মরদেহ থানায় রয়েছে। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য