বিএনপির বর্জনের মধ্যেও চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলটির নেতাদের ফলাফলের চমক অব্যাহত রয়েছে।
তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৯৬ জন এবং চতুর্থ ধাপে ৯৮ জনের পর পঞ্চম ধাপের নির্বাচনেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় দলটির ৮৩ জন তৃণমূল নেতা চেয়ারম্যান হয়েছেন।
বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে এই নির্বাচন বর্জন করলেও দলটির তৃণমূলের নেতারা ভোট থেকে দূরে থাকতে চাইছেন না। স্বতন্ত্র প্রার্থীর পরিচয়ে ভোটের মাঠে তারা অবস্থান ধরে রাখতে চাইছেন।
চলতি বছর পৌরসভা নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ আনার পর বর্তমান সরকার আর নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো ভোটে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। ফলে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও তাদের কোনো প্রার্থী নেই।
তবে গত ২ নভেম্বর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটি বক্তব্যে স্পষ্ট হয়, বিএনপি আসলে এই নির্বাচন থেকে একেবারে দূরে নেই।
সেদিন ঠাকুরগাঁওয়ে নিজ বাসভবনে এক ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে করাটা সঠিক নয়। তাই বিএনপি এ নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নিচ্ছে না। তবে বিএনপি থেকে কেউ স্বতন্ত্র হয়ে অংশ নিলে সেখানে বাধা নেই।’
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পঞ্চম ধাপে ফলাফল ঘোষণা করা ৬৬২টি ইউনিয়নে নৌকার ৩০৮, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ১৯০, বিএনপি ৮৩ এবং অন্যান্য ৮১ জন চেয়ারম্যান হয়েছেন।
এরপর মোট তিনটি ধাপের নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে তৃতীয় ধাপের নির্বাচনের আগে ভোটে দাঁড়ানোয় বিএনপি বেশ কয়েকজন নেতাকে দলীয় পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে। কারণ উল্লেখ না করলেও এটি বিএনপির সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জের কারণে, সেটি নিশ্চিত করেছেন নেতারা।
পঞ্চম ধাপে ৫ জানুয়ারিতে ৭০৮টি ইউনিয়নে ভোটের তফসিল ঘোষণা হয়। তবে বেশ কিছু ইউনিয়নে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত ভোট হয় ৬৬৪টি ইউনিয়নে ভোট হয়। এর মধ্যে ২টি ইউনিয়নে ফলাফল স্থগিত হয়, বাকি ৬৬২টি ইউনিয়নে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩০৮টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান হয়েছেন নৌকা নিয়ে লড়াই করা আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া নেতারা জিতেছেন ১৯০ ইউনিয়নে।
এদিন চার জেলায় মোট ৪৬টি ইউনিয়নে ভোট হয়েছে দলীয় প্রতীক ছাড়া। এর মধ্যে ছিল কিশোরগঞ্জের ১৪টি, গোপালগঞ্জ ও শরীয়তপুরে ১৫টি করে এবং মাদারীপুরের দুটি।
বাকিদের মধ্যে বিএনপির রাজনীতি সম্পৃক্ত ৮৩ জন ছাড়া অন্যদের মধ্যে জামায়াতের রাজনীতিতে জড়িত ১৩ জন, জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে জড়িত ৪ জন আর ১৯ জন বিভিন্ন দলের রাজনীতি করেন, কেউ কেউ কোনো দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন।
বিএনপির রাজনীতিতে জড়িতরা সবচেয়ে ভালো করেছেন রাজশাহী বিভাগে। সেই বিভাগে দলটির সঙ্গে জড়িত ২০ জন পেয়েছেন জয়।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৭ ইউনিয়নে জয় এসেছে সিলেট বিভাগে, রংপুর বিভাগে জয় এসেছে ১৫টিতে, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৪ টিতে, ঢাকা বিভাগে ৭ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে জয়ী ৬ জন এবং খুলনা বিভাগে জয়ী ৪ জন বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত। বরিশাল বিভাগে বিএনপির কেউ জিততে পারেননি।
চতুর্থ ধাপের নির্বাচনেও বিএনপির নেতারা সবচেয়ে বেশি ভালো করেছিলেন উত্তরের দুই বিভাগ রাজশাহী ও রংপুরে। ওই ধাপে সিলেট বিভাগেও তারা দারুণ করেছিলেন।
জানতে চাইলে বিএনপির মুখপাত্র ও সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেখুন আমার জানা নেই মহাসচিব ঠিক কী বলেছেন। কিন্তু আমার মনে হয় তিনি এটা বলতে চেয়েছেন যে, দলীয় পরিচয়ের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী। এখন একজন তো দলের পদে থেকে হাঁস মার্কাতে নির্বাচন করতে পারবেন না। তিনি নির্বাচন করুক। সেটার ওয়েটাই তো এটা। যে দলীয় কার্যক্রম থেকে বেরিয়ে সেটা করতে হবে, স্বাধীনভাবে।’
রাজশাহী বিভাগে ২০ জয়
এই বিভাগে ভোট হয়েছে মোট ১২২টি ইউনিয়নে। এর মধ্যে ২টিতে ফল ঘোষণা স্থগিত আছে। বাকিগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক জয় পেয়েছে ৬১টিতে। দলের বিদ্রোহী নেতারা জিতেছেন ৩৫টিতে আর বিএনপির নেতারা ২০ ইউনিয়নে এবং ৪টি ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন জামায়াত নেতারা।
এর মধ্যে বগুড়ায় সবচেয়ে বেশি ৬টি ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্তরা। এরা হলেন: দুপচাঁচিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নে মোয়াজ্জেম হোসেন, চামরুল ইউনিয়নে শাহজাহান আলী, জিয়ানগরে আনোয়ার হোসেন এবং গাবতলী উপজেলার রামেশ্বরপুর ইউনিয়নে আব্দুল ওহাব মণ্ডল, মহিষাবান ইউনিয়নে আব্দুল মজিদ মণ্ডল ও নশিপুর ইউনিয়নে রাজ্জাকুল আমিন তালুকদার রোকন।
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত ৫ জন পেয়েছেন জয়। এরা হলেন: বড়বিহানলী ইউনিয়নে মাহমুদুর রহমান মিলন, আউচপাড়ায় ডিএম শাফি, শুভডাঙ্গায় মোশারফ হোসেন, গণিপুরে মনিরুজ্জামান রঞ্জু ও গোবিন্দপাড়া ইউনিয়নে হাবিবুর রহমান।
জয়পুরহাটের ৫টি ইউনিয়নের মধ্যে তিনটিতেই জয় পেয়েছেন বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এরা হলেন: আটাপুর ইউনিয়নে আবু চৌধুরী, বাগজানা ইউনিয়নে নাজমুল হক এবং ধরঞ্জী ইউপিতে আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের মধ্যেও তিনটিতে জয় পেয়েছেন বিএনপির রাজনীতিতে জড়িতরা। এরা হলেন: বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নে আতাউল হক কমল, রানিহাটি ইউনিয়নে রহমত আলী ও গোবরাতলা ইউনিয়নে রবিউল ইসলাম টিপু।
নওগাঁয় বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত ২ জন পেয়েছেন জয়। এরা হলেন: পত্নীতলা উপজেলার আমাইড়ে শহীদুল ইসলাম ও শিহাড়া ইউনিয়নে তোফাজ্জল হোসেন।
নাটোরের ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে নলডাঙ্গা উপজেলার বিপ্রবেলঘরিয়ায় জিতেছেন বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান আলী।
এই বিভাগের বাকি দুই জেলা পাবনা ও সিরাজগঞ্জে বিএনপি সংশ্লিষ্ট কেউ জয় পাননি।
সিলেটে জয় ১৭ ইউনিয়নে
এই ইউনিয়নে ভোট হয়েছে মোট ৭৫টি ইউনিয়নে। অন্যগুলোর মধ্যে নৌকা জিতেছে ২৯ টিতে। ২১ ইউনিয়নে জিতেছেন আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীরা। স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিএনপির ১৭ জন, জামায়াতের ৪ জন জয়ী হয়েছেন। এছাড়া জাতীয় পার্টির ১ জন, জমিয়ত উলামায়ে ইসলামের ২ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। আর নির্দলীয় ২ জন প্রার্থী এবার জয় পেয়েছেন।
এর মধ্যে হবিগঞ্জে সবচেয়ে বেশি ৭টি ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন বিএনপি নেতারা।
এরা হলেন মাধবপুরের নোয়াপাড়া ইউনিয়নে সৈয়দ মো. আতাউল মোস্তফা সোহেল, ছাতিয়াইন ইউনিয়নে মিনহাজ উদ্দিন চৌধুরী কাসেদ, আদাঐর ইউনিয়নে মীর খুরশেদ আলম, চৌমুহনী ইউনিয়নে মাহবুবুর রহমান সোহাগ ও শাহজাহানপুর ইউনিয়নে পারভেজ হোসেন চৌধুরী।
চুনারুঘাট উপজেলায় জিতেছেন গাজীপুর ইউনিয়নে মোহাম্মদ আলী ও উবাহাটা ইউনিয়নে এজাজ ঠাকুর চৌধুরী।
মৌলভীবাজারে বিএনপির রাজনীতিতে জয় পেয়েছেন ৬টি ইউনিয়নে। এরা হলেন শ্রীমঙ্গল ১নং মির্জাপুর ইউনিয়নে মিজলু আহমদ চৌধুরী, ৩নং শ্রীমঙ্গল ইউনিয়নে দুদু মিয়া, ৪নং সিন্দুরখান ইউনিয়নে ইয়াছিন আরাফাত রবিন, কমলগঞ্জ পতনঊষার ইউনিয়নে অলি আহমদ খান, মুন্সিবাজার ইউনিয়নে নাহিদ আহমদ তরফদার এবং আদমপুর ইউনিয়নে আবদাল হোসেন (ঘোড়া)।
সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার বড়চতুলে জয়ী আবদুল মালিক চৌধুরী এবং, ঝিঙ্গাবাড়িতে জয়ী মাস্টার আবু বকর বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত।
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনা বাজার ইউনিয়নের মাসুক মিয়া ও ভীমখালী ইউনিয়নের আক্তারুজ্জামান তালুকদার বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত।
রংপুর বিভাগে জয় ১৫ ইউনিয়নে
উত্তরের বিভাগ রংপুরে ফল ঘোষিত হয়েছে মোট ৬৮ ইউনিয়নে। এর মধ্যে নৌকা জয় পেয়েছে সর্বোচ্চ ৩৩ ইউনিয়নে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়া বিদ্রোহীরা জয় পেয়েছেন ১৪টিতে। বিএনপির রাজনীতিতে জড়িতরা জয় পেয়েছেন ১৫টিতে।
বাকিগুলোর মধ্যে জামায়াতের রাজনীতিতে জড়িতরা ২টিতে, জাতীয় পার্টির রাজনীতে জড়িতরা ৩টিতে এবং একটিতে জয় পেয়েছেন এমন একজন, যিনি রাজনীতিতে জড়িত নন।
এর মধ্যে বিএনপির তৃণমূলের নেতারা একক জেলা হিসেবে সর্বোচ্চ ৬টিতে জয় পেয়েছেন দিনাজপুরে।
এরা হলেন চিরিরবন্দর উপজেলার সাতনালা ইউনিয়নে এনামুল হক শাহ, আব্দুলপুর ইউনিয়নে ময়েনউদ্দিন শাহ, ভিয়াইল ইউনিয়নে আব্দুর রাজ্জাক শাহ, তেঁতুলিয়া ইউনিয়নে আজগার আলী মাষ্টার, পার্বতীপুর উপজেলার মমিনপুর ইউনিয়নে নজরুল সরকার এবং মোস্তফাপুর বিএনপি মতিয়ার রহমান।
নীলফামারী ও কুড়িগ্রামে তিনটি করে ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন বিএনপির তৃণমূল নেতারা।
এর মধ্যে নীলফামারীর ডোমার উপজেলার ভোগডাবুড়িতে উপজেলা বিএনপির সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম কালু, বামুনিয়া ইউনিয়নে উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি মমিনুর রহমান মোটর সাইকেল ও জোড়াবাড়ি ইউনিয়নে ইউনিয়ন ছাত্রদলের প্রাক্তন সভাপতি সাখাওয়াত হাবিব বাবু জয় পেয়েছেন।
কুড়িগ্রামে রৌমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নে আব্দুল রাজ্জাক, যাদুরচরে সরবেশ আলী এবং রাজিবপুর উপজেলায় সদর ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন মিরন মো. ইলিয়াস।
পঞ্চগড়ের দুটি ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন বিএনপির নেতারা। এরা হলেন: দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙ্গায় ফরিদুল ইসলাম এবং চিলাহাটিতে হারুন অর রশীদ।
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার সদর ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত মোকছেদুর রহমান মোকছেদ।
গাইবান্ধায় বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত কেউ জয় পাননি।
চট্টগ্রাম বিভাগের জয়ের অর্ধেকই চাঁদপুরে
চট্টগ্রাম বিভাগের ১৩৫টি ইউনিয়নে ভোট হয় সেদিন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৭০টিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের বিদ্রোহী নেতারা জয় পেয়েছে ৪০ ইউনিয়নে। বিএনপির নেতারা ১৫টিতে, একটিতে জামায়াত নেতা, ৬টিতে নির্দলীয় প্রার্থী এবং বিভিন্ন দলের সঙ্গে সম্পৃক্তরা জয় পেয়েছেন ৪টিতে।
এর মধ্যে বিএনপি সংশ্লিষ্টরা সবচেয়ে বেশি ৭টি ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন চাঁদপুরে।
এদের মধ্যে ৬ জনই ফরিদগঞ্জ উপজেলায়। এরা হলেন: ১নং বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নে জসিম উদ্দিন মিয়াজী স্বপন, ৩নং সুবিদপুর (পূর্ব) ইউনিয়নে বেলায়েত হোসেন, ৪নং সুবিদপুর ইউনিয়নে মহসীন হোসেন, ৫নং গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নে শাহজাহান পাটোয়ারী, ৭নং পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নে আবু তাহের এবং ১২নং চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়নে শাহজাহান মাষ্টার।
হাইমচর উপজেলার ৩নং আলগী দক্ষিণ ইউনিয়নে সাবেক উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব সরদার আব্দুল জলিল জয় পেয়েছেন।
কুমিল্লায় জয় পেয়েছেন দুই জন। এরা হলেন: চান্দিনা উপজেলার বাতাঘাসিতে সাদেকুর রহমান এবং বরকইটে নুরে আলম।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপিসংশ্লিষ্ট দুই জন জয় পেয়েছেন। এরা হলেন: সদর উপজেলার মজলিশপুরে কামরুল হাসান এবং আশুগঞ্জ উপজেলার চরচারতলা ইউনিয়নে ফাইজুর রহমান।
এছাড়া চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার আহলা করলডেঙ্গা ইউনিয়নে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হামিদুল হক মান্নান, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার জিরতলী ইউনিয়নে জিতেছেন বিএনপি সমর্থিত শামসুল আলম লাভলু এবং বান্দরবানের সুয়ালক ইউনিয়নে জিতেছেন উক্যনু মার্মা।
ঢাকা বিভাগে ৭ জন
ঢাকা বিভাগে সেদিন ভোট হয়েছে ১৪৪টি ইউনিয়নে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫৭টি ইউনিয়নে জয় পেয়েছে নৌকা। ৩৫ ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। ৭টি ইউনিয়নে বিএনপির নেতারা। আর চার জেলার ৪৬ ইউনিয়নে ভোট হয়েছে দলীয় প্রতীক ছাড়া।
এর মধ্যে তিনটিতেই জয় এসেছে মানিকগঞ্জে।
হরিরামপুরের গালা ইউনিয়নের উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শফিক বিশ্বাস, হরিরামপুরের দৌলতপুর খলশী ইউনিয়নের জিয়াউর রহমান এবং বাঘুটিয়া ইউনিয়নের যুবদলের সাবেক কর্মী আমজাদ হোসেন জয় পেয়েছেন।
টাঙ্গাইলে বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত দুই জন পেয়েছেন জয়। এরা হলেন: মির্জাপুর উপজেলার জামুর্কী ইউনিয়নে ডি এ মতিন, বানাইল ইউনিয়নে আব্দুল্লাহ আল মামুন।
কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার সদর ইউনিয়নে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফাইয়াজ হাসান এবং ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ১ নং কামারখালী ইউনিয়নে জিতেছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি রাকিব হোসেন চৌধুরী জয় পেয়েছেন।
ময়মনসিংহ বিভাগে ৬ জয়
এই বিভাগে ভোট হয়েছে মোট ৬১ ইউনিয়নে। এর মধ্যে নৌকা জয় পেয়েছে ৩১টিতে। দলের বিদ্রোহীরা জয় পেয়েছে ২৩টিতে। ৬ ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন বিএনপির রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা আর একটিতে নির্দলীয় প্রার্থী।
এই ৬টির মধ্যে তিনটি নেত্রকোণার এবং তিনটি শেরপুরের।
নেত্রকোনার মদন উপজেলার চানগাঁও ইউনিয়নে জয়ী নুরুর আলম তালুকদার, নায়েকপুর ইউনিয়নে জয়ী হাবিবুর রহমান ও ফতেপুর ইউনিয়নে জয়ী সামিউল হায়দার সফি বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত।
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার হাতিবান্ধা ইউনিয়নে জাহাঙ্গীর আলম, কাংশা ইউনিয়নে আতাউর রহমান ও নলকুড়া ইউনিয়নে জয়ী রুকুনুজ্জামান জামান বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত।
খুলনায় ৪ জয়
এই বিভাগে ভোট হয়েছে মোট ৫২ ইউনিয়নে। এই বিভাগে নৌকা মার্কা জয় পেয়েছে ২৪ ইউনিয়নে। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী নেতারা জয় পেয়েছেন ২১টিতে। বিএনপি জয় পেয়েছে ৪টিতে, দুটিতে জামায়াত এবং একটিতে অন্যান্য।
এই চার জনের মধ্যে তিন জনই কেশবপুর উপজেলার। এরা হলেন মজিদপুর ইউনিয়নের মুহাম্মদ পলাশ, সুফলকাঠি ইউনিয়নের মঞ্জুর রহমান এবং সাতবাড়িয়ায় রেজাউল করিম।
সাতক্ষীরায় আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া ইউনিয়নে বিজয়ী রুহুল কুদ্দুসও বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত।
এছাড়া ৬টি ইউনিয়নে ভোট হয়েছে বরিশাল বিভাগের পিরোজপুরে। এর মধ্যে ৩টি ইউনিয়নে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ, একটিতে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ও ২টিতে নির্দলীয় প্রার্থী।
** প্রতিবেদনটি তৈরিতে বিভিন্ন জেলায় নিউজবাংলার প্রতিনিধিদের সহায়তা রয়েছে।
আরও পড়ুন:
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) আগামীকাল বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।
আজ বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে সচিব সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ‘আমরা যে কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) করেছি, সে কর্মপরিকল্পনাটা আপনাদের জানাবো। আমি ঢাকার বাইরে থাকায় একটু পিছিয়ে পড়েছি। এটা আমার টেবিলে এখন আছে। আগামীকাল পর্যন্ত একটু অপেক্ষা করেন।’
এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব আজ এক বৈঠকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) অনুমোদন করেছে কমিশন।
এখন যেকোনো সময় নির্বাচনের এই রোডম্যাপ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হতে পারে বলে ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘কর্মপরিকল্পনার সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে গেছে। অনুমোদন হয়েছে, এখন শুধু টাইপিং চলছে।’
উল্লেখ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইসির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে দল নিবন্ধন, সীমানা নির্ধারণ, নির্বাচন পর্যবেক্ষক, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংস্কার, বিধিমালা ও নীতিমালা জারি, প্রবাসীদের জন্য আইটি সাপোর্টেড নিবন্ধন ও পোষ্টাল ব্যালট পদ্ধতি ও নির্বাচনী সরঞ্জাম কেনাকাটা বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে রোডম্যাপে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) অনুমোদন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
যে কোনো সময় এই নির্বাচনের রোডম্যাপ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করতে পারে ইসি।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন, চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব এ নিয়ে বৈঠকও করেছেন।
বৈঠকে কর্মপরিকল্পনার (রোডম্যাপ) অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। এখন, যে কোনো সময় নির্বাচনের এই রোডম্যাপ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হতে পারে বলে ইসি’র কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘কর্মপরিকল্পনার সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে গেছে। অনুমোদন হয়েছে, এখন শুধু টাইপিং চলছে।’
এদিকে সংসদীয় আসনের পুনঃনির্ধারিত সীমানার বিষয়ে ইসি’র শুনানি আজ বিকেলে শেষ হচ্ছে।
শুনানি শেষে বিকেলে সার্বিক বিষয় নিয়ে ইসি’র সিনিয়র সচিব আকতার আহমেদের ব্রিফিং করার কথা রয়েছে।
এ বিষয়ে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘আমরা ব্রিফিংয়ে আসব। তখন সীমানার শুনানির বিষয়টির পাশাপাশি এ বিষয়টিও (রোডম্যাপ) দেখা যাবে।’
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি কর্মকর্তা বৈঠক করেন।
ওই দিন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছিলেন, বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনার বিষয়ে ইসি সচিব ব্রিফ করবেন।
গত ১৮ আগস্ট ইসি’র সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানিয়ে ছিলেন, ‘একটা কর্মপরিকল্পনার (নির্বাচনী রোডম্যাপ) বিষয়ে বলেছিলাম, আমরা এই সপ্তাহে এটা করবো। কর্মপরিকল্পনার তো আমাদের আন্তঃঅনুবিভাগ সম্পর্কিত এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো নিয়ে। কর্মপরিকল্পনার ড্রাফ্ট করা হয়েছে। ড্রাফ্টটি এখন কমিশনে দিয়ে আমরা অ্যাপ্রুভ করবো।’
শ্রম আইন, ২০০৬ সংশোধনের লক্ষ্যে ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ (টিসিসি)-এর ৮৯তম সভায় শ্রমিক, মালিক ও সরকারের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গত এক বছরের পর্যালোচনা ও সকল পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে শ্রম আইন ২০০৬ সংশোধনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
আজ মঙ্গলবার ঢাকার এক হোটেলে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, "শ্রমিক ও মালিক পক্ষের পরামর্শের ভিত্তিতে শ্রম আইন যুগোপযোগী করা হবে। এটি বাংলাদেশের শ্রমখাতের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে এবং আন্তর্জাতিক মানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে।’
সভায় শ্রমিক ও মালিক পক্ষের প্রতিনিধিরা তাদের মতামত তুলে ধরেন। একটি সুসমন্বিত ও আন্তর্জাতিক মানের শ্রম আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা উপস্থিত সকলেই করেন। অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত এ সভায় সংশোধিত শ্রম আইন দ্রুত সম্পন্ন করার তাগিদ দেওয়া হয়।
সভায় বিশেষ পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন দূতাবাস, কানাডা হাই কমিশন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর প্রতিনিধিরা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত জনাব লুৎফে সিদ্দিকী।
এছাড়াও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) এর নির্বাহী পরিচালক এবং শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন (বিইএফ)-এর সভাপতি, টিসিসি সদস্যবৃন্দের মধ্যে তাসলিমা আক্তার, কোহিনুর মাহমুদ, বাবুল আকতার , নাজমা আক্তার, রাজেকুজ্জামান রতন, এডভোকেট আতিকুর রহমান, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং শ্রম অধিদপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সংশোধনী বাংলাদেশের শ্রমবাজারকে আরও গতিশীল ও আন্তর্জাতিক মানসম্মত করবে এবং শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সারাদেশে কুইক রেসপন্স টিম কাজ করছে।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে জাগো নারী উন্নয়ন সংস্থা আয়োজিত প্রযুক্তি সুবিধাপ্রাপ্ত লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা মোকাবেলায় নীতিগত সুপারিশ শীর্ষক জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা একথা বলেন।
সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা বলেন, সারাদেশে প্রযুক্তিগত সুবিধা নিয়ে বিভিন্ন স্থানে নারীদের সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। এ সকল অপকর্ম প্রতিরোধে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পরিচালিত কুইক রেসপন্স টিম কাজ করছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে বাল্য বিয়ের সংজ্ঞা পাল্টে গেছে। এর মূল কারণ হচ্ছে মোবাইল নামক যন্ত্রটি। মোবাইল প্রযুক্তির অপব্যবহারের ফলে ছোট ছোট মেয়েরা প্রেমের ফাঁদে পড়ে নারী নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
মেয়েরা অবুঝ এজন্য অভিভাবকদেরকে এ বিষয়ে আরো সচেতন হতে হবে। যাতে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েরা প্রেমের ফাঁদে পড়ে নারী সহিংসতা শিকার না হয়।
উপদেষ্টা বলেন, জাগো নারী উন্নয়ন সংস্থা, নারী পক্ষ, হিউম্যান রাইটস বাংলাদেশ, সাইবার টিনস ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), ব্র্যাকসহ বাইশটি সংগঠন আজ নারী নির্যাতন প্রতিরোধে একযোগে কাজ করছে। তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
উপদেষ্টা বলেন এই ২২ টি সংগঠনের প্ল্যাটফর্মে যে সমস্ত শিক্ষিত তরুন যুবক যুবতীরা আছেন তাদেরকে টেকনোলজির মাধ্যমে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন ব্যক্তিগত এবং সামাজিক ও পরিবারের সচেতনতাই পারে একটি মেয়েকে নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে। এজন্য সবাইকে আরো সচেতন হতে হবে।
ইলিশের উৎপাদন একদিকে কমছে, এতে প্রাকৃতিক কারণও রয়েছে। নদীর নাব্যতা কমে যাচ্ছে, মেঘনা নদীর অববাহিকায় দূষণের মাত্রা বেড়েছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টি না হলে ইলিশ মাছ ডিম পাড়তে পারে না। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকৃতিক কারণ ও তথাকথিত উন্নয়নের কারণে নদী ভরাট ও দখল হয়ে যাচ্ছে। এমন মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার। বরিশাল ক্লাব প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত উপকূলীয় এলাকার মহিষের চারণভূমি ও উন্নয়নের সমস্যা এবং সাধন শীর্ষক জাতীয় কর্মশালা-২০২৫-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ইলিশ একটি মাইগ্রেটরি মাছ এটি সমুদ্র থেকে নদীতে আসে এবং আবার ফিরে যেতে হয়। কিন্তু বর্তমানে তা হচ্ছে না। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ঝাটকা নিধন। কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী অভিযান চালালেও এটি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা যায়নি। এছাড়া অবৈধ জালের ব্যবহার ইলিশের প্রাপ্যতা কমাচ্ছে। তবে এসবের বিরুদ্ধে আমরা কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছি। আশা করছি খুব শীঘ্রই ইলিশের দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।
তিনি জানান,খুব শীঘ্রই ঢাকায় একটি মিটিং অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে নদী থেকে মাছ ধরে হাত বদলের সিন্ডিকেট বন্ধ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। এ উদ্যোগের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ সরাসরি বাজারে মাছ পাবে এবং সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে আসবে।
ফরিদা আক্তার বলেন, উপকূল এলাকায় মহিষের চারণভূমি সংকুচিত হয়ে গেছে। আমরা গবেষণায় দেখেছি এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে। বাড়িঘর তৈরি হচ্ছে, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও নির্মিত হচ্ছে। আমাদের দেশে গরু, ছাগল ও মহিষ পালন অন্তত মানুষের খাদ্য ও জীবন রক্ষার জন্য জরুরি। চারণভূমি বিষয়ে আমরা দেখছি যে অনেক কিছু পরিকল্পনা বিহীনভাবে তৈরি হচ্ছে। এতে মহিষের মতো গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তবে সঠিক নীতি ও ব্যবস্থা নিলে এটি দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন,পিকেএসএফ উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ফজলে রাব্বি সাদেক আহমেদ, বরিশাল বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, জিজেইউএস নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন মহিন। সভাপতিত্ব করেন প্রফেসর ড. ওমর ফারুক, প্রেসিডেন্ট।
বক্তারা বলেন, নদী ও সমুদ্রের টেকসই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। মৎস্যজীবী, প্রশাসন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান একত্রিতভাবে কাজ করলে মাছ চাষ ও সংরক্ষণ কার্যকর হবে।
এছাড়া তারা বলেন, উপকূলীয় এলাকায় মহিষ পালনের সম্ভাবনা অনেক, তবে জলবায়ু পরিবর্তন, চারণভূমির অভাব ও বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা খাতটির উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। গবেষণা ও আধুনিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মহিষ পালনকে লাভজনক ও টেকসই খাতে রূপান্তর করা সম্ভব।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান এর সভাপতিত্বে আজ রাজধানীর একটি হোটেলে আন্তর্জাতিক শ্রম মান বিষয়ক ত্রিপক্ষীয় কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় শ্রম সচিব বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ৩৬টি কনভেনশন ও একটি প্রটোকল অনুমোদন করেছে। আইএলও সংবিধান অনুযায়ী, অনুমোদিত ও অননুমোদিত উভয় ধরনের সনদের প্রয়োগ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা সকল সদস্য রাষ্ট্রের জন্য বাধ্যতামূলক। এই কমিটি আইএলও কনভেনশন ১৪৪-এর বাধ্যবাধকতার আলোকে বাংলাদেশ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত প্রতিবেদনে মালিকপক্ষ ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর মতামত, পরামর্শ ও সুপারিশ নিশ্চিত করবে।
সচিব আরও উল্লেখ করেন যে, আইএলও এর ১১টি কনভেনশন (C-01, C-14, C-19, C-81, C-89, C-100, C-106, C-111, C-118, C-138, MLC-2006) নিয়ে আলোচনা করা হয়। এগুলোর মধ্যে C-81 (শ্রম পরিদর্শন), C-100 (নারী ও পুরুষের সমান পারিশ্রমিক), C-111 (কর্মসংস্থান ও পেশায় বৈষম্য) এবং C-138 (ন্যূনতম কাজের বয়স) বিষয়ক চূড়ান্ত প্রতিবেদন আইএলও সংবিধানের ২২ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাধ্যতামূলকভাবে খুব দ্রুত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার জেনেভাস্থ প্রধান কার্যালয়ে প্রেরণ করা হবে।
সভায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার প্রতিনিধি নিরান রাজমুঠান, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের এবং শ্রম অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, ইমপ্লোয়ার্স ফেডারেশন এর প্রতিনিধি , ইন্ডাস্ট্রি অল বাংলাদেশ এর প্রতিনিধি , বেপজা প্রতিনিধি , NCCWE এর প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, গবাদিপশু পালন প্রোটিন ঘাটতি নিরসন, মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষা এবং জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য। অথচ অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে চারণভূমির হ্রাস হচ্ছে, ফলে মহিষের মতো মূল্যবান সম্পদ ক্ষতির মুখে পড়ছে।
আজ সকালে বরিশাল ক্লাবে অনুষ্ঠিত “উপকূলীয় এলাকার মহিষের চারণভূমি ও উন্নয়নের সমস্যা এবং সমাধান” শীর্ষক জাতীয় কর্মশালা ২০২৫-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কর্মশালার আয়োজন করে বাংলাদেশ বাফেলো এসোসিয়েশন, গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা (জিজিইউএস) এবং কোস্টাল ভেট সোসাইটি।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, সঠিক নীতি নির্ধারণ ও আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের মাধ্যমে এখনো অনেক চরাঞ্চল রক্ষা করা সম্ভব। মহিষ পালন বাড়াতে পারলে জাতীয়ভাবে মাংস ও দুধ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা যাবে।
প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মহিষের চারণভূমি দ্রুত কমে যাচ্ছে। অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণ এবং এমনকি সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুর উপজেলায় বৃহৎ গরুর বাথান ভরাট করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিও উঠছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি প্রশ্ন তোলেন, শুধু একটি ডিগ্রি অর্জনের উদ্দেশ্যে গরুর বাথান ধ্বংস করা দেশের সামগ্রিক কল্যাণে কতটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে? তিনি আরও বলেন, মহিষের স্বাস্থ্যসুরক্ষার বিষয় বিবেচনায় উপকূলীয় এলাকায় স্পিডবোটভিত্তিক ভেটেরিনারি ক্লিনিক স্থাপন করা প্রয়োজন।
কর্মশালায় বক্তারা বলেন, বর্তমানে গবাদিপশুর চারণভূমি কমে যাওয়া এবং খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মহিষসহ অন্যান্য গবাদিপশুর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্থানীয় পর্যায়ে কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ ও টেকসই চারণভূমি উন্নয়ন অপরিহার্য। পাশাপাশি মহিষের উৎপাদন বৃদ্ধি ও জাতীয়ভাবে মাংস ও দুধ উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানান তারা।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ বাফেলো এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. ওমর ফারুক।
সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) লুসিকান্ত হাজং, পিকেএসএফ-এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ফজলে রাব্বি সাদেক আহমেদ, জিজিইউএস-এর নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন মহিন। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, স্হানীয় খামারীরা কর্মশালায় অংশ গ্রহণ করেন।
মন্তব্য