আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলটি ভোট বর্জন করছে। তবে মাঠের চিত্র ভিন্ন। নতুন কৌশল নেয়ার পর তৃতীয় ধাপে ৯৬টি ইউনিয়ন পরিষদের পর চতুর্থ ধাপেও ৯৮টি ইউনিয়নে জিতেছেন বিএনপির নেতারা। তৃতীয় ধাপের তুলনায় চতুর্থ ধাপে ভোট হওয়া ইউনিয়নের সংখ্যা ছিল কম। সে হিসাবে বিএনপির নেতারা তৃতীয় ধাপের তুলনায় এবার আরও বেশি ভালো করেছেন।
এই বিজয়ী নেতারা ধানের শীষের বদলে ভোট করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। আবার সব ইউনিয়নে বিএনপির এই ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীরা’ ছিলও না। মোট কতগুলো ইউনিয়নে ছিল, সেটি জানাও সম্ভব নয় তাদের এই কৌশলের কারণে।
গত রোববার চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট শেষে যে ৭৮১টি ইউনিয়নের ফলাফল ঘোষণা করা হয়, তাতে দেখা যায়, বিএনপির এই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জেলা হিসেবে সবচেয়ে ভালো করেছেন নওগাঁয়। এমনকি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ফরিদপুরেও চমক দেখিয়েছেন তারা।
বিভাগওয়ারি হিসাব করলে দেখা যায় স্বতন্ত্র পরিচয়ে বিএনপির প্রার্থীরা সবচেয়ে বেশি ভালো করেছেন রাজশাহীতে। উত্তরের আরেক বিভাগ রংপুরেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নেতা ইউনিয়নে জিতে এসেছেন।
বিএনপির প্রার্থীরা তৃতীয় সর্বোচ্চ ইউনিয়নে জিতেছেন ঢাকা বিভাগে। সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগে সমানসংখ্যক ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন তারা।
তবে ময়মনসিংহ, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে সাফল্য তুলনামূলকভাবে কম।
গত কয়েক বছরে বিএনপি জাতীয় ও স্থানীয় যেসব নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ নিয়েছে, তাতে তারা ভালো ফল করতে পারেনি। দলটির পক্ষ থেকে অবশ্য ভোট সুষ্ঠু না হওয়ার অভিযোগ করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, তাদের সমর্থকদের ভোট দিতে দেয়া হয় না, প্রচারেও বাধা দেয়া হয়।
চলতি বছর পৌরসভা নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ আনার পর বর্তমান সরকার আর নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো ভোটে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। ফলে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও তাদের কোনো প্রার্থী নেই।
তবে গত ২ নভেম্বর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটি বক্তব্যে স্পষ্ট হয়, বিএনপি আসলে এই নির্বাচন থেকে একেবারে দূরে নেই।
সেদিন ঠাকুরগাঁওয়ে নিজ বাসভবনে এক ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে করাটা সঠিক নয়। তাই বিএনপি এ নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নিচ্ছে না। তবে বিএনপি থেকে কেউ স্বতন্ত্র হয়ে অংশ নিলে সেখানে বাধা নেই।’
বিএনপির স্বতন্ত্র পরিচয়ে ভোটে অংশ নেয়ার বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীকে চ্যালেঞ্জ করছেন বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকার।
২০১১ সালে প্রথম সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও তৈমূরকে সমর্থন জানিয়েছিল বিএনপি। দলীয় প্রতীক ছাড়া ওই নির্বাচনে ভোটের আগের দিন তিনি সরে দাঁড়ান দৃশ্যত কোনো জোরালো অভিযোগ ছাড়াই। ধারণা করা হয়, আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানকে হারাতে একই দলের নেতা আইভীকে সুবিধা করে দিতেই তিনি এই কাজ করেছিলেন।
১০ বছর পর এসে আইভীর নৌকা ডোবাতে তৈমূর নেমেছেন হাতি প্রতীক নিয়ে।
বিএনপি দলীয় প্রতীক না নিলেও একই জেলায় দলের সব প্রার্থী একই ধরনের প্রতীক নিয়ে লড়ার চেষ্টা করেছেন। যেমন- নওগাঁয় ২৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ২০টিতে বিএনপির নেতারা আনারস আর ৬টিতে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে ভোট করেছেন।
চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলাতে বিএনপির বিজয়ী তিন নেতাই লড়েছেন আনারস প্রতীক নিয়ে।
আরও একাধিক জেলায় বিএনপির বিজয়ী প্রার্থীদের অনেকেই জিতেছেন আনারস প্রতীক নিয়ে।
বিএনপির জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীরও আটজন নেতা চেয়ারম্যান হয়েছেন রোববারের ভোটে। এদের মধ্যে চারজনই সিলেটের। বাকিদের মধ্যে একজন করে আছেন পঞ্চগড়, গাইবান্ধা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও সাতক্ষীরার।
বিএনপি কেন দলীয় প্রতীকের বদলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে একেক এলাকায় একেক প্রতীকে লড়াই করছে- এমন প্রশ্ন রাখা হয় দলের বর্ষীয়ান নেতা নজরুল ইসলাম খানের কাছে।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আপনারা একটা কথা কেন ভুল করেন বারবার৷ আমরা স্রেফ জানিয়ে দিয়েছি যে এবার আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি না। আমাদের ওয়ে অফ ওয়্যার এখন ডিফ্রেন্ট। তাই কারা পাস করল আর কারা করল না- এই প্রশ্ন আমাদের জন্য না।’
যারা করছেন তারা তো বিএনপি নেতা। সে বিষয়ে কী বলবেন- এমন প্রশ্নে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘তারা ধানের শীষে ভোট করছেন? না, করেন নাই। বিএনপিকে যারা ভালোবাসেন তাদের সঙ্গে প্রতীক নিয়ে যারা জয়লাভ করবেন তাদের একটা নীতিগত পার্থক্য রয়েছে। দলের সমর্থক যারা স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়িয়েছেন তাদের কোনো সাপোর্ট দেয়া হয়নি। কারণ আমরা আগেও বলছি এখনও বলছি- আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি না।’
ফল সাজানো দাবি তৃণমূলের এক নেতার
রোববার নওগাঁয় ভোট হয়েছে মোট ২৬টি ইউনিয়নে। এর মধ্যে নৌকা নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জিতেছেন ১১টি ইউনিয়নে। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিএনপির নেতারা জিতেছেন ১০টিতে।
নওগাঁ বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও পৌরসভার মেয়র নজমুল হক সনিও এই ফলাফলে কিছুটা অবাক। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বেশ কিছু স্থানে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িতরা নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু এগুলো আওয়ামী লীগ সরকারের একটি রাজনৈতিক পলিসি। তারা বোঝাতে চাচ্ছে, নির্বাচন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হচ্ছে।’
জেলার ২৬টি ইউনিয়নেই বিএনপির এই কৌশলী প্রার্থী ছিল। স্বতন্ত্র পরিচয়ের বদলে যদি নেতারা ধানের শীষ নিয়ে অংশ নিতেন, তাহলে তৃণমূলের সমর্থকদের ভোট পেয়ে আরও বেশি ইউনিয়নে জিততে পারতেন কি না- এমন প্রশ্নে সনি বলেন, ‘আমি তো বললাম, বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হওয়াটা আওয়ামী লীগের আই ওয়াশ।’
তিনি বলেন, ‘যদি নিরপেক্ষ নির্বাচন হতো এবং ধানের শীষ প্রতীকে মনোনীত প্রার্থীরা দেশের সব ইউনিয়নে সক্রিয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করত, তবে বিএনপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ে অবশ্যই বেশি এগিয়ে থাকত।’
বিএনপির সবচেয়ে বেশি জয় রাজশাহী বিভাগে
এই বিভাগে ফলাফল ঘোষিত হয়েছে মোট ১১৯টি ইউনিয়নে। এর মধ্যে বিএনপি জয় পেয়েছে ২৬টিতে।
জেলাগুলোর মধ্যে বিএনপি নেতারা সবচেয়ে বেশি ১০টি ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন নওগাঁয়।
বিজয়ীরা হলেন আত্রাই উপজেলার আহসানগঞ্জ ইউনিয়নে শেখ মুনজুরুল আলম, মুনিয়ারীতে সম্রাট হোসেন, পাঁচুপুর ইউনিয়নে খবিরুল আলম এবং হাটকালুপাড়ায় আফজাল হোসেন।
ধামইরহাট উপজেলায় বিজয়ীরা হলেন আগ্রাদ্বিগুণে ইসমাইল হোসেন ও খেলনা ইউনিয়নে আল হিল মাহমুদ চৌধুরী।
মহাদেবপুর উপজেলার সফাপুরে সামসুল আলম বাচ্চু, হাতুড় ইউনিয়নে এনামুল হক, ভীমপুরে রাম প্রসাদ ভদ্র এবং উত্তরগ্রাম ইউনিয়নে হাসান আলী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বগুড়ায় ১৩ ইউনিয়নের মধ্যে ৭টিতে জয় পেয়েছেন দলটির নেতারা।
এর মধ্যে সদর উপজেলার এরুলিয়ায় ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক আতিকুর রহমান আতিক, কাহালু উপজেলার বীরকেদায় ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক সেলিম উদ্দিন, কালাই ইউনিয়নে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা জোবাইদুল ইসলাম সবুজ, মালঞ্চা ইউনিয়নে বিএনপি সমর্থক নেছার উদ্দিন জিতেছেন।
নন্দীগ্রাম উপজেলার সদর ইউনিয়নে রেজাউল করিম কামাল, থালতা মাঝগ্রাম ইউনিয়নে বিএনপির কর্মী আব্দুল মতিন এবং ভাটগ্রাম ইউনিয়নে যুবদল নেতা আবুল কালাম আজাদ নির্বাচিত হয়েছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে পাঁচটির মধ্যে চারটি ইউনিয়নে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান। এর মধ্যে নাচোলে চারটির মধ্যে তিনটিতেই জিতেছেন দলটির নেতারা।
তারা হলেন সদর ইউনিয়নে নাচোল উপজেলা বিএনপির সদস্য সফিকুল ইসলাম, ফতেপুরে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সাদির আহম্মেদ এবং কসবা ইউনিয়নে উপজেলা বিএনপির সদস্য জাকারিয়া আল মেহরাব।
ভোলাহাট উপজেলার জামবাড়িয়ায় জিতেছে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আফাজ উদ্দিন পানু মিঞা।
পাবনায় চতুর্থ ধাপের ভোটে জিতেছেন বিএনপির তিনজন নেতা। এরা হলেন সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়নে জেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ওমর ফারুক ও সাদুল্লাহপুরে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল আলীম মোল্লা।
আটঘরিয়া উপজেলার মাজপাড়া ইউনিয়নে জিতেছেন উপজেলা বিএনপির সদস্য ফারুক হোসেন।
এ ছাড়া রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নিমপাড়া ইউনিয়নে বিএনপি কর্মী মিজানুর রহমান এবং জয়পুরহাট সদর উপজেলার ধলাহার ইউনিয়নে বিএনপি নেতা তোজাম্মেল হক নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
দ্বিতীয় অবস্থানে রংপুর বিভাগ
এই বিভাগে ফল ঘোষণা হয়েছে মোট ১২৬টি ইউনিয়নে। এর মধ্যে ১৮টিতে জয় পেয়েছেন বিএনপি নেতারা। একক জেলা হিসেবে দিনাজপুরে সবচেয়ে বেশি ৬টি ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
এরা হলেন বীরগঞ্জ উপজেলার পাল্টাপুরে তহিদুল ইসলাম মাস্টার, খামারপাড়ায় আবু বক্কর সিদ্দিক চৌধুরী, ৫ নং ভাবকির রবিউল আলম তুহিন, গোয়ালডিহিতে সাখাওয়াত হোসেন লিটন, ভেড়ভেড়ী রিয়াজুল ইসলাম বাবুল ও মোহনপুরে শাহিনুর রহমান চৌধুরী শাহিন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ঠাকুরগাঁওয়ে জয় পেয়েছেন বিএনপির চার নেতা।
এরা হলেন সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নে জুলফিকার আলী ভুট্টো, জগন্নাথপুর ইউনিয়নে মোস্তাফিজুর রহমান লিটন, রহিমানপুরে আব্দুল হান্নান হান্নু এবং জামালপুরে মো. মুস্তাক।
গাইবান্ধাতেও বিএনপির চার নেতা জয় পেয়েছেন।
এরা হলেন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাখালবুরুজ ইউনিয়নে হাসানুর রহমান চৌধুরী ডিউক, রাজাহারে রফিকুল ইসলাম মাস্টার, কোচাশহরে জহুরুল হক জাহিদ ও হরিরামপুরে আজহারুল ইসলাম বিপ্লব।
রংপুরে তিনটি ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন বিএনপি নেতারা।
রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার কালুপাড়ায় শহিদুল হক মানিক, দামোদরপুরে শেখ আবু বকর সিদ্দিক ও গঙ্গাচড়ার উপজেলার আলমবিদিতরে মোকাররম হোসেন সুজন জিতেছেন।
রংপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রইচ উদ্দিন বলেন, ‘নির্দলীয় ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমরা ৬০ থেকে ৬৫ ভাগ এলাকায় বিশাল ব্যবধানে বিজয়ী হব। তার প্রমাণ এই নির্বাচনে। দলীয় প্রতীক ছাড়াও আমাদের প্রার্থীরা বিভিন্ন এলাকায় বিজয়ী হয়েছেন।’
এ ছাড়া কুড়িগ্রামে রাজারহাট উপজেলার উমর মজিদ ইউনিয়নে জিতেছেন বিএনপি সমর্থিত আহসানুল কবির।
সংখ্যায় তৃতীয় ঢাকা বিভাগ
এই বিভাগে রোববার ফল ঘোষণা হয়েছে মোট ১৫২ ইউনিয়নে। এর মধ্যে বিএনপির নেতারা জিতেছেন মোট ১৭টিতে।
এর মধ্যে বিএনপির সবচেয়ে বেশি নেতা জিতেছেন কিশোরগঞ্জ জেলায়। সেখানে ৬টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান হতে যাচ্ছেন বিরোধী দলটির নেতারা।
এই ৬ জনের মধ্যে ৫ জনই আবার কটিয়াদী উপজেলার। এরা হলেন: মুমুরদিয়া ইউনিয়নে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন সাবেরি, মসূয়ায় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক, লোহাজুড়ি ইউনিয়নে উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি হায়দার এম রাজ্জাক মারুয়া, জালালপুর ইউনিয়নে উপজেলা বিএনপির সদস্য রফিকুল আলম এবং বনগ্রাম ইউনিয়নে স্থানীয় নেতা জসিম উদ্দিন।
হোসেনপুর উপজেলার সাহেদল ইউনিয়নে জিতেছেন উপজেলা বিএনপির নেতা ফিরোজ উদ্দিন।
তিনজন করে বিএনপি নেতা জিতেছেন মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর ও রাজবাড়ীতে।
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরীতে জিতেছেন ইউনিয়নে বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস আর আনসারি বিল্টু, বালিয়াখোড়ায় জিতেছেন ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য আওয়াল খান এবং সাটুরিয়া উপজেলার ফকুরহাটি ইউনিয়নে জিতেছেন বিএনপি কর্মী জিয়াউর রহমান।
রাজবাড়ী জেলার সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নে কাজী শামসুদ্দিন, পাচুরিয়ায় মুজিবর রহমান রতন আর খানখানাপুরে জিতেছেন এ কে এম ইকবাল হোসেন।
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার গুনবহায় সিরাজুল ইসলাম, সাতৈরে রাফিউল আলম মিন্টু এবং রূপাপাতে মিজানুর রহমান মোল্যা ওরফে সোনা মিয়া জিতেছেন, যারা বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত।
টাঙ্গাইলের সদরের হুগরা ইউনিয়নে জিতেছেন নূর ই আলম তুহিন আর মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার বালুরচর ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন আওলাদ হোসেন।
সিলেট বিভাগেও ভালো করেছেন বিএনপি নেতারা
এই বিভাগের চার জেলায় ভোটের ফল প্রকাশ হয়েছে মোট ৮১টি ইউনিয়নে। এর মধ্যে বিএনপির প্রার্থীরা জিতেছেন মোট ১৩ টিতে।
এর মধ্যে সুনামগঞ্জে চারটি ইউনিয়নে জিতেছেন বিএনপির নেতরা। এরা হলেন: জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নে রফিক মিয়া ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়নে মো. ছবাব মিয়া।
দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নে আলী আহমদ ও সরমঙ্গল ইউনিয়নে মোয়াজ্জেম হোসেন বিজয়ী হয়েছেন যারা বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত।
মৌলভীবাজারেও বিএনপির চার নেতা জয় পেয়েছেন। এরা হলেন: সদর উপজেলার কনকপুরে রুবেল উদ্দিন, খলিলপুরে আবু মিয়া চৌধুরী ও নাজিরাবাদ ইউনিয়নে আশরাফ উদ্দিন।
রাজনগর উপজেলার রাজনগর সদর ইউনিয়নে জিতেছেন জুবায়ের আহমদ চৌধুরী।
সিলেটে বিএনপির তিন নেতা জয় পেয়েছেন। এরা হলেন: বিয়ানীবাজার উপজেলার তিলপাড়া ইউনিয়নে মাহবুবুর রহমান, মুল্লাপুর ইউনিয়নে আব্দুল মান্নান এবং ভাদেশ্বর ইউনিয়নে শামীম আহমদ।
হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার লাখাই ইউনিয়নের আরিফ আহমেদ রুপন ও বানিয়াচংয়ের পৈলারকান্দিতে নাসির উদ্দিন জয় পেয়েছেন।
সিলেটের সমান জয় চট্টগ্রাম বিভাগে
এই বিভাগে মোট ১৫৫টি ইউনিয়নের ফল ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপির ১৩ জন নেতা জয়ী হয়েছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কক্সবাজারে কোনো ইউনিয়নে জয় পাননি বিএনপির কোনো নেতা।
এক জেলায় সবচেয়ে বেশি বিএনপি নেতা জয় পেয়েছেন চাঁদপুরে। জেলায় ছয়জন নেতা চেয়ারম্যান হতে যাচ্ছেন।
এর মধ্যে শাহরাস্তি উপজেলার জয় পেয়েছেন তিনজন। এই উপজেলায় ভোট হয়েছে মোট ১০টিতে।
এর মধ্যে মেহের উত্তর ইউনিয়নে জিতেছেন জহিরুল ইসলাম, চিতোষী পূর্ব ইউনিয়নে জিতেছেন আলাম বেলাল, চিতোষী পশ্চিম ইউনিয়নে জিতেছেন জোবায়েদ কবির বাহাদুর।
হাজীগঞ্জ উপজেলার বিএনপির বিজয়ী তিন চেয়ারম্যান হলেন বাকিলা ইউনিয়নের মিজানুর রহমান, কালচোঁ দক্ষিণ গোলাম মোস্তফা ও পশ্চিম বড়কুল ইউনিয়নে নুরুল আমিন হেলাল।
কুমিল্লা ও লক্ষ্মীপুরে ২টি করে ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন বিএনপির নেতারা।
কুমিল্লা ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ৮ নং মালাপাড়ায় ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন ও ৫ নং দুলালপুর ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আনিছুর রহমান ভূইয়া রিপন।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পার্বতীনগর ইউনিয়নে জিতেছেন বিএনপির ওহিদুর রহমান আর কুশাখালীতে জিতেছেন কালা উদ্দিন মানিক।
চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও ফেনীতে একটি করে ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন বিএনপির নেতারা। এর মধ্যে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা ইউনিয়নে জিতেছেন বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর আলম।
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নে জিতেছেন বিএনপি নেতা জহিরুল আলম জহির।
নোয়াখালী সদর উপজেলার পূর্ব চরমটুয়া ইউনিয়নে জিতেছেন ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আলম।
ময়মনসিংহ বিভাগে জয় ৬টিতে
এই বিভাগে মোট ৫৩টি ইউনিয়নে ফলাফল ঘোষিত হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপির নেতারা জিতেছেন মোট ৬টিতে।
চারটি জেলার মধ্যে শেরপুরে সবচেয়ে বেশি তিন বিএনপি নেতা জিতেছেন ভোটে। এরা হলেন শ্রীবর্দী উপজেলার ৪ নম্বর তাতিঁহাটি ইউনিয়নে আব্দুর রউফ মিয়া, ৭ নম্বর ভেলুয়া ইউনিয়নে আব্দুল করিম ও ৯ নম্বর কুড়িকাহনিয়া ইউনিয়নে ফিরোজ খান নুন।
ময়মনসিংহ জেলায় জিতেছেন বিএনপির দুই নেতা। এরা হলেন: গৌরীপুর উপজেলার ১ নম্বর মইলাকান্দা ইউনিয়নের রিয়াদুজ্জামান রিয়াদ ও ৩ নম্বর অচিন্তপুর ইউনিয়নের জায়েদুর রহমান।
নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নে জিতেছেন আব্দুর রউফ স্বাধীন।
এই বিভাগের অন্য জেলা জামালপুরের যে ১২টি ইউনিয়নে রোববার ভোট হয়েছে, তাতে বিএনপির কেউ জিততে পারেননি।
খুলনা বিভাগের বিজয়ীরা
এই বিভাগে মোট ৭৮ ইউনিয়নে ফল ঘোষিত হয়েছে। এর মধ্যে মোট চারটি ইউনিয়নে বিএনপির নেতারা জিতেছেন।
এই চারজনের মধ্যে দুইজন আবার সাতক্ষীরা বিএনপির নেতা। এরা হলেন: শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নে মাসুদুল আলম ও পদ্মপুকুরে আমজাদুল ইসলাম।
বিজয়ী অন্য দুজন হলেন যশোরের অভয়নগর উপজেলার শুভরাড়া ইউনিয়নে জহুরুল হক এবং কুষ্টিয়ার কুমারখালীর পান্টি ইউনিয়নে হাফিজুর রহমান হাফিজ।
বরিশাল বিভাগে শুধু একজন
এই বিভাগে রোববার ভোট হয়েছে মোট ১৭টি ইউনিয়নে। এর মধ্যে বরিশাল ও ভোলা জেলায় বিজয়ীদের কেউ বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত নন। পটুয়াখালীতে জিতেছেন একজন। তিনি হলেন কলাপাড়া উপজেলার চাকামইয়া ইউনিয়নের মো. মজিবর রহমান।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন নিউজবাংলার বিভাগীয় ও জেলা প্রতিনিধিরা।
চলমান তাপপ্রবাহে চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রধান অর্থকরী ফসল আমের গুটি ঝরে পড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন আম বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। এমনিতেই এ বছর মুকুল এসেছিল কম, গাছে যে কয়টা আমের গুটি টিকে আছে, তাপদাহের প্রভাবে সেগুলোর বৃদ্ধিও ঠিকমত হচ্ছে না বলে দাবি বাগান মালিকদের। এরই মধ্যে রোদের তাপে শুকিয়ে সেগুলো ঝরে পড়তে শুরু করেছে।
আমের গুটি যাতে শুকিয়ে না যায়, তার জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে, তাপদাহ থেকে আমের গুটি বাঁচাতে গাছের গোড়ায় নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে; প্রয়োজনে গাছে পানি স্প্রে করার পরামর্শও তাদের।
‘আমের রাজধানী’ খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার কিছুটা দেরিতেই এসেছিল মুকুল। পরিমাণেও ছিল অন্য বছরের তুলনায় বেশ কম। তারপরও শুরু থেকেই বাড়তি যত্নে বাগানগুলোতে মুকুল থেকে আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে আম। তবে কয়েক দিনের তীব্র তাপপ্রবাহ ভীষণ শঙ্কায় ফেলেছে বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীদের। গাছে থাকা আমের গুটির বৃদ্ধি ও টিকে থাকা নিয়ে তারা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।
জেলার মহারাজপুর এলাকার আম বাগান মালিক রাজন ইসলাম বলেন, ‘খরার কারণে আমের গুটির বড় হচ্ছে না, বোটা শুকিয়ে ঝরে পড়ছে। আকাশের পানি না হলে হয়? সেচ দিয়াও খুব বেশি কাজ হচ্ছে না, শ্যালো (সেচ পাম্প) যতক্ষণ চলছে ততক্ষন পানি থাকছে। বন্ধ করলেই সব তিলিকে (দ্রুত) শুষে লিছে (নিচ্ছে)।’
আম সংগঠনের নেতারাও বলছেন একই কথা। এ বছরের শুরু থেকেই বৈরী আবহাওয়ার কারণে তারা আমের কাঙ্ক্ষিত ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। চলমান তাপপ্রবাহ তাদের সেই দুশ্চিন্তাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের আম ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব আহসান হাবিব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর শীতের কারণে মুকুল আসতে দেরি হয়েছে, তার ওপর মার্চ মাসে অসময়ের বৃষ্টিতে একবার মুকুল ঝরে যায়।
‘তখন বৃষ্টির দরকার ছিলো না, তাই বৃষ্টির কারণে মুকুলের ক্ষতি হয়েছিল, আর এখন বৃষ্টির অভাবে গাছে যে কয়টা আমের গুটি ছিল, তাও ঝরে যাচ্ছে। তাপপ্রবাহ আরও কিছুদিন চললে ব্যবসায়ীদের আরও ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর আম উৎপাদনের খরচ সব ক্ষেত্রেই বেড়ে গেছে। আবার এখন সেচ দেয়ার জন্য অনেকের খরচ আরও বাড়ছে। সবমিলিয়ে এ বছর খুব বেশি স্বস্তিতে নেই আম বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। অনেকেই আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন।’
তবে এখনই আশাহত না হয়ে বাগানের সঠিক পরিচর্যা চালিয়ে যাওয়া ও তাপপ্রবাহ যতদিন চলবে ততদিন পর্যন্ত বাগানে সেচ দেয়া, তাপমাত্রা আরও বাড়লে সকালে বা বিকেলে গাছে সরাসারি পানি স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মোখলেসুর রহমান।
বাগান মালিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জের বড় গাছগুলোতে এবার মুকুল কম এসেছে, তবে ছোট গাছে ভালো মুকুল আছে। সঠিকভাবে পরিচর্যা করা গেলে কৃষি বিভাগ যে সাড়ে চার লাখ টন আমের উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছে, তার কাছাকাছি অন্তত যাওয়া যাবে বলে আশা করছি আমরা।’
আরও পড়ুন:দেশের উষ্ণতম মাস এপ্রিল। এ মাসে সাধারণত অন্য সময়ের চেয়ে বেশি থাকে গরম। চলতি বছরের এপ্রিলে তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ বইছে বিভিন্ন জেলায়, যার ফলে প্রচণ্ড অস্বস্তিতে ভুগছেন বিভিন্ন বয়সীরা।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানায়, দেশের ছয়টি জেলার ওপর দিয়ে বইছে তীব্র দাবদাহ।
এমন বাস্তবতায় অধিদপ্তরের এক আবহাওয়াবিদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, এ সময়ে এমন গরম অস্বাভাবিক কি না। জবাবে খন্দকার হাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অ্যাবনরমাল (অস্বাভাবিক) কোন সেন্সে বলবেন? আমাদের দেশে ৪৫ ডিগ্রি তাপমাত্রারও রেকর্ড আছে কিন্তু। এখন তো গ্রীষ্মকাল। মার্চ, এপ্রিল, মে এই তিন মাস গ্রীষ্মকাল। এ সময়ে বৃষ্টিপাত হলে তাপমাত্রাটা কম হবে।
‘বৃষ্টিপাত যখনই বন্ধ হবে, তাপমাত্রাটা বাড়বে, তবে এখন তাপমাত্রা যেটা স্বাভাবিক কথার কথা, তার চাইতে বেশি আছে। দিন এবং রাতের তাপমাত্রা দুইটাই বেশি আছে স্বাভাবিকের চাইতে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় তিন থেকে চার ডিগ্রি বেশি আছে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় এক থেকে দুই ডিগ্রি বেশি আছে।’
দুপুর দুইটার দিকে এ প্রতিবেদন লেখার সময় অ্যাকুওয়েদার ডটকম নামের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৫১ শতাংশ।
একই সময়ে তীব্র দাবদাহ বয়ে যাওয়া অঞ্চল চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যেখানে বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ১৭ শতাংশ।
তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত বেশি হওয়ার বিষয়ে আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘জলবায়ুগতভাবে কিন্তু এপ্রিল মাসটা আমাদের উষ্ণতম মাস। এ সময়ে দিনের স্থায়িত্বটা বড় (বেশি)। সূর্য মাথার ওপর। তা ছাড়া বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। বৃষ্টিপাত যে এলাকাগুলোতে, সেখানে তাপমাত্রা কিছুটা কমছে।
‘আর যে জায়গাগুলোতে বৃষ্টিপাত নাই, সেই জায়গাগুলোতে কিন্তু আপনার তাপমাত্রার ইয়েটা বেশি হচ্ছে। গরমটা বেশি হচ্ছে।’
গরম বাড়ার পেছনে মনুষ্যসৃষ্ট কিছু কারণ তুলে ধরে এ আবহাওয়াবিদ বলেন, ‘জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে আমাদের জলাশয়গুলো ভরাট হচ্ছে; গাছগাছড়া কমে যাচ্ছে। মানুষের এসি (এয়ার কন্ডিশনার), ফ্রিজ ব্যবহার বেশি হয়ে যাচ্ছে।’
তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের কোনো সম্পর্ক আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মানুষ ক্লাইমেট চেঞ্জে (জলবায়ু পরিবর্তন) অবদান রাখছে। ক্লাইমেট চেঞ্জ তো আছেই।’
আরও পড়ুন:আবারও আগুনে পুড়লো সিলেটের কুমারগাঁওয়ে অবস্থিত বিদ্যুতের ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্র। সোমবার সকালে লাগা এই আগুনে সিলেট নগর ও আশপাশের এলাকার লক্ষাধিক গ্রাহককে প্রায় ছয় ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকতে হয়েছে।
এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে এ নিয়ে গত চার বছরে তিনবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো। কেপিআইভুক্ত দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই স্থাপনায় কেন বার বার আগুনের ঘটনা ঘটছে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও।
২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডে এই উপকেন্দ্রে ব্যাপক ক্ষতি হয়। ওই সময় সিলেট নগরীসহ আশপাশের এলাকায় টানা ৩১ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। তারও আগে ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে।
প্রথমবারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের নেপথ্য কারণ অনুসন্ধানে উচ্চপর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়। ২০২১ সালের ১১ জানুয়ারি ওই কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে ১৯৬৭ সালে স্থাপিত উপকেন্দ্রটির প্রয়োজনীয় উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন না করা এবং কর্তৃপক্ষের সঠিক পরিকল্পনা ও যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাবকে দায়ী করা হয়। একইসঙ্গে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে বেশকিছু সুপারিশ করা হয়। সেই সুপারিশগুলো আজও বাস্তবায়ন হয়নি।
বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রহমত উল্লাহ্ মো. দস্তগীরকে আহ্বায়ক করে গঠিত সেই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে সুপারিশে বলা হয়, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অফ বাংলাদেশের (পিজিসিবি) নিয়ন্ত্রণাধীন ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্রের ইকুইপমেন্টসের কন্ট্রোল ও প্রটেকশনের জন্য ডিসি সিস্টেম (ডিসি সোর্স ব্যাটারি, চার্জার ও ডিস্ট্রিবিউশন প্যানেল) এবং বিউবোর নিয়ন্ত্রণাধীন ৩৩ কেভি বাস ও ইকুইপমেন্টসের কন্ট্রোল ও প্রটেকশনের জন্য ডিসি সিস্টেম জরুরিভিত্তিতে সম্পূর্ণ পৃথক করা প্রয়োজন।
এছাড়া ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন, জরুরিভিত্তিতে গ্রাউন্ডিং সিস্টেম বৃদ্ধিপূর্বক যথাযথ মানে উন্নয়ন/সম্প্রসারণ করা, ভূগর্ভস্থ কন্ট্রোল ক্যাবলিং সিস্টেম জরুরিভিত্তিতে সংস্কার করা, ফল্ট লেভেল নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ১৩২ কেভি ও ৩৩ কেভিতে প্যারালালে সংযুক্ত পাওয়ার ট্রান্সফরমারগুলো জরুরিভিত্তিতে পৃথক করা এবং পাওয়ার ট্রান্সফরমার, কারেন্ট ট্রান্সফরমার, পটেনশিয়াল ট্রান্সফরমার, সার্কিট ব্রেকার ইত্যাদি অতি গুরুত্বপূর্ণ ইকুইপমেন্টগুলো উচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন হওয়া প্রয়োজন।
ওই কমিটি আরও সুপারিশ করে- তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে দক্ষ কারিগরি জনবল দ্বারা দেশের সব গ্রিড উপকেন্দ্র ইন্সপেকশনের ব্যবস্থা করা, উপকেন্দ্রের সংরক্ষণ কাজগুলো যথাযথভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে তদারকি আরও জোরদার করা, উপকেন্দ্রের পরিচালন ও সংরক্ষণ কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য পিজিসিবি ও বিউবোর আলাদাভাবে জনবল পদায়ন করা এবং প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ জনবল সৃষ্টির ব্যবস্থা করা দরকার।
এছাড়া গ্রিড উপকেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ ইকুইপমেন্টগুলো নিয়মিত পরীক্ষা ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং এসব যন্ত্রপাতির জন্য হিস্ট্রি বুক সংরক্ষণ করা, জরুরিভিত্তিতে কুমারগাঁও ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্রের বিকল্প সোর্স তৈরির সুপারিশ করা হয় তদন্ত প্রতিবেদনে।
ওই প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছিলেন, ‘প্রতিটি গ্রিড বা বিদ্যুৎকেন্দ্রের সাইবার সিকিউরিটি ও ফিজিক্যাল সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে প্রদত্ত নির্দেশনা অনুসরণ করা প্রয়োজন। লোকবল স্বল্পতার দোহাই দেয়া হয়। কিন্তু নিজেদের আপগ্রেড করার বিষয়ে কাউকেই ততটা আন্তরিক মনে হয় না। রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে যারা ছিলেন তাদের দায়িত্বহীনতা এই দুর্ঘটনার জন্য অনেকটাই দায়ী। সিলেট অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্য জনগণের যে অবর্ণনীয় কষ্ট ও আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তার দায়ও এরা এড়াতে পারে না।’
তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দেন প্রতিমন্ত্রী।
সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা প্রসঙ্গে সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল কাদির বলেন, ‘কিছু কিছু বাস্তবায়ন হয়েছে। বাকিগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে। জেআইএস নির্মাণের কাজ চলমান। এটি বাজেটের অভাবে কিছুদিন বন্ধ ছিলো। এখন আবার শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে নিরাপত্তা অবস্থা আরও জোরদার হবে।’
তিনি বলেন, মূল সমস্যা হলো সমন্বয়হীনতা। এখানে পিজিসিবি ও পিডিবিসহ বেসরকারি আরও কয়েকটি বিদ্যুৎ কোম্পানির যন্ত্রপাতি রয়েছে। সবার মধ্যে সমন্বয়ের প্রয়োজন। আমরা সবাইকে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চিঠি দিচ্ছি।
‘এটি পুরনো বিদ্যুৎকেন্দ্র হওয়ায় অনেক যন্ত্রপাতি পুরনো হয়ে গেছে। নতুন গ্রিড সাবস্টেশন হচ্ছে। কাজ শেষ হলে সেখান থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ হবে।’
প্রসঙ্গত, সোমবার সকাল ৯টার দিকে কুমারগাঁও উপকেন্দ্রের ভেতরের ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৩৩ কেভি লাইনের নিচে বিদ্যুতের হাইভোল্টেজের তার ছিঁড়ে স্পার্কিং হয়। ওই সময় নিচে ডাম্পিং করে রাখা পরিত্যক্ত এয়ার ফিল্টারে আগুন লেগে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট এসে এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
আগুন নেভাতে যাওয়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন কর্মকর্তা বেলাল হোসেন বলেন, ‘এয়ার ফিল্টারগুলো সেখানে রাখা ঠিক হয়নি। সেগুলো দাহ্য হওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।’
কুমারগাঁও বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন জানান, সোমবারের অগ্নিকাণ্ডের পর দুটি ফিডারের আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। তবে অন্য ফিডার থেকে কিছু এলাকায় ওই সময়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। বিকেলে ক্ষতিগ্রস্ত লাইন মেরামত করার পর সরবরাহ স্বাভাবিক হয়।
আরও পড়ুন:১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল। বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ অনুষ্ঠান। হাতে তেমন সময় নেই। কেউ নিয়ে এলেন চেয়ার-টেবিল, কেউ নিয়ে এলেন বাঁশ-খুঁটি।
বাড়িতে পরার নতুন কাপড় ব্যবহার করা হলো প্যান্ডেল ঘেরাওয়ের কাজে। আগের দিনের অর্ধেক সময় আর রাত জেগে পাহারা দেয়া হলো মেহেরপুরের তৎকালীন বৈদ্যনাথতলার আম্রকানন।
শুরুটা শপথের অনুষ্ঠান থেকে হলেও মুক্তিকামী মানুষকে সহযোগিতা করতে গিয়ে কেটে গেল যুদ্ধের পুরোটা সময়।
সময় গড়িয়েছে, মত-পথ পাল্টেছে। তবে একাত্তরের ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক সেই শপথ অনুষ্ঠানের পেছনের কারিগরদের কেউ মনে রাখেনি। খোঁজ নেয়নি কেউ।
রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি তো দূরে থাক, স্থানীয়ভাবেও তারা পাননি যথাযথ সম্মান। এই আক্ষেপ নিয়ে কেউ পাড়ি দিয়েছেন পরপারে, কেউবা মৃত্যুর প্রহর গুনছেন।
কথাগুলো বঙ্গবন্ধুর ডাকে গঠিত বৈদ্যনাথতলা সংগ্রাম কমিটি নিয়ে।
জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে প্রত্যেক গ্রামে গ্রামে, পাড়ায় মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলার নির্দেশনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার বৈদ্যনাথতলা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন কয়েক যুবক।
সে সময়ের এমএনএ ছহি উদ্দীন বিশ্বাস এবং এসডিও তৌহিক-এলাহি চৌধুরীর পরামর্শে তারা ঐতিহাসিক শপথের সব আয়োজন করেছিলেন। শপথ অনুষ্ঠানে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, বাইবেল পাঠ, জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনসহ বিভিন্ন কাজে যারা যুক্ত হয়েছিলেন তাদেরকে আম্রকাননে নিয়ে এসেছিলেন সংগ্রাম কমিটির সদস্যরা।
প্রথম সরকারের শপথ অনুষ্ঠানের পর গোটা এলাকা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। তারপরও জীবনের পরোয়া না করে সংগ্রাম কমিটির অকুতোভয় সদস্যরা ত্রাণ সংগ্রহের কাজ করেছিলেন। তাদের অনেকে রাষ্ট্রের কাছ থেকে সম্মান না পাওয়ার কষ্ট নিয়ে ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন। দুই-একজন যারা বেঁচে আছেন তারা মৃত্যুর আগে রাষ্ট্রের স্বীকৃতিটুকু পেতে চান।
সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম সদস্য বল্লভপুর গ্রামের বয়োবৃদ্ধ থিওফিল মণ্ডল বলেন, ‘প্রাণের টানে প্রতি বছর ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে ছুটে আসি। পঁচাত্তর-পরবর্তী পরিস্থিতিতে ১৯৭৬ সালে কেউ মুজিবনগর দিবস পালন করতে আসেনি। আমরা মাত্র ১৯ জন লোক বাগানে গিয়ে মুজিবনগর দিবস পালন করেছিলাম।’
রাষ্ট্রীয় সম্মান-স্বীকৃতি না পাওয়ার আক্ষেপ করে এই বীর মুক্তিযাদ্ধা বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শুনেছিলাম হাতেগোনা কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আছেন। পরবর্তীতে দেখি শতাধিক মানুষ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা পাচ্ছে। তারপরও সংগ্রাম কমিটির সদস্যরা অবহেলিত।’
একই কথা জানালেন মানিকনগর গ্রামের বয়োবৃদ্ধ দোয়াজ উদ্দীন মাস্টার। তিনি বলেন, ‘সংগ্রাম কমিটির সদস্যরা সব আয়োজন করেছিল। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করার জন্য আমার ছাত্র দারিয়াপুর গ্রামের বাকের আলীকে ডেকে নিয়ে আসি। সে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছে। এছাড়াও সংগ্রাম কমিটির আরেক সদস্য আব্দুল মোমিন চৌধুরী স্বীকৃতি পেয়েছেন।’
সংগ্রাম কমিটির সদস্যসহ যারা সেদিন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ অনুষ্ঠান আয়োজনে প্রাণের মায়া ত্যাগ করে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছিলেন তাদের সবার স্বীকৃতি দাবি করেন তিনি।
বাংলা একাডেমী প্রণীত ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস: মেহেরপুর জেলা’ গ্রন্থের মাধ্যমে মূলত সংগ্রাম কমিটির বিষয়টি সবার নজরে আসে। এই গ্রন্থের লেখক মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ও বাংলা একাডেমী পুরস্কারপ্রাপ্ত দেশবরেণ্য কথাসাহিত্যিক রফিকুর রশিদ বলেন, ‘অনিবার্য মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার হাত বাড়ানো এসব মানুষের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাওয়াটা খুবই প্রয়োজন। তারা শুধু শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজনই করেননি, কুষ্টিয়া অঞ্চলে সম্মুখ যুদ্ধে সব রসদ মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন জীবন বাজি রেখে।
বাগোয়ান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেনও সংগ্রাম কমিটির সদস্য ও সংশ্লিষ্ট অন্যদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দাবি করেন।
তবে আশার কথা শুনিয়েছেন মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘ঐতিহাসিক মুহূর্তে ঐতিহাসিক ভূমিকার সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত ছিলেন তারা বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাদের সবাইকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়ার জন্য বিষয়টি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে উত্থাপন করা হয়েছে।’
‘রাজাকার-আলবদর থাকে আজ রাজপ্রাসাদে, আমি শহীদুল ইসলাম বীর প্রতীক থাকি একটা কুইড়াঘরে (কুঁড়েঘরে) তার কারণ কী?’
২০০৩ সালে ধারণ করা এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা, টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার সূতী গ্রামের হেলাল উদ্দিনের ছেলে শহীদুল ইসলাম।
তার পরিবার সূত্রে জানা যায়, ছোট থেকেই অনেক সাহসী ও বুদ্ধিমান ছিলেন শহীদুল। তাই তো দেশকে হানাদার মুক্ত করতে ১২ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন কাদেরিয়া বাহিনীর কমান্ডার আনোয়ার হোসেন পাহাড়ির অধীনে।
দেশের সর্বকনিষ্ঠ এ বীর প্রতীকের পরিবারের নেই স্থায়ী কোনো নিবাস। সন্তানদের জন্য নেই চাকরির ব্যবস্থা। তিনি কুলির কাজ ও খাবার হোটেলের কাজ করে কাটিয়েছেন জীবনের অধিকাংশ সময়।
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ বীর প্রতীকের পরিবার বসবাস করছেন ঢাকার মিরপুর মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন প্রকল্পের সরকারি জমিতে। প্রথম সন্তান মুক্তা বেগম (৩৫) পেশায় গৃহিণী, স্বামীর বাড়ি রাজশাহীর নাটোরে। দ্বিতীয় সন্তান আক্তার হোসেন (৩২) পেশায় গাড়ি চালক, তৃতীয় সন্তান সোহাগ হোসেন (২৭) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সদ্য গ্রাজুয়েশন শেষ করেছেন, চতুর্থ সন্তান শিখা আক্তার (২০) ঢাকার একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেছেন।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, ভারতে ট্রেনিং চলাকালে সর্বকনিষ্ঠ হওয়ায় সহযোদ্ধারা তাকে লালু আর তার চেয়ে বয়সে বড় শ্যামলকে ভুলু নামে ডাকতে শুরু করেন। দেশে ফিরলে তার বুদ্ধিমত্তায় একাধিকবার মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণে বাঁচেন।
সেই ঘটনাই বর্ণনা করে তার পরিবার, কাদেরিয়া বাহিনীর কমান্ডারের নির্দেশে ছদ্মবেশ ধারণ করেন চতুর শহীদুল ইসলাম। কৌশলে এক রাজাকারের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে গোপালপুর থানা কম্পাউন্ডের, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বাংকারে ঢুকে পরেন। তার কৌশল ও দুঃসাহসিক গ্রেনেড হামলায় একাধিক বাংকার ধ্বংস করলে গোপালপুর থানা হানাদার মুক্ত হয়।
শহীদুলের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বীর প্রতীক উপাধি লাভ করেন তিনি। রাইফেলের সমান উচ্চতা হওয়ায় ভারতে প্রশিক্ষণ চলাকালে তাকে স্টেনগান চালনা ও গ্রেনেড ছোঁড়ার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। কাদেরিয়া বাহিনী ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি টাঙ্গাইলের বিন্দুবাসিনী বালক উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অস্ত্র সমর্পণের সময় সময় ১২ বছরের কিশোর শহীদুলের বীরত্বের কথা শুনে মুগ্ধ হয়ে তাকে কোলে তুলে নেন স্বয়ং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
ছবিটি সামরিক ও মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।
শহীদুলের জীবন সংগ্রাম
শৈশবে বাবা-মা আর মুক্তিযুদ্ধের সময় এক ভাই-এক বোনের মৃত্যু হলে দারিদ্র্যতায় উপায়ান্তর না দেখে মুক্তিযুদ্ধের পর দুই ভাইকে রেখে জীবিকার তাগিদে বাড়ি ছাড়া হন শহীদুল। ঢাকার সোয়ারীঘাটে বালু টানা, ঠেলা গাড়ি চালানো, রাজমিস্ত্রীর হেলপারের কাজ, শেষে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে কুলির কাজ শুরু করেন।
একপর্যায়ে কুলির কাজ শেষে হোটেলে কাজ শুরু করেন। যাযাবর অবস্থায় বিয়েও করেন, এক মেয়ে ও এক ছেলের জন্ম নেয়া সেই সংসার স্থায়ী হয়নি।
পরবর্তী সময় কুমিল্লায় হোটেলে কাজ করা অবস্থায় সহকর্মীকে জীবনের সব ঘটনা খুলে বলেন। দুই সন্তানকে নিয়ে ওই সহকর্মীর সঙ্গে মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুর চলে যান। ১৯৯৬ সালে সেই সহকর্মীর নিকটাত্মীয় মালা বেগমের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি।
এ দম্পতির ছেলে সন্তান সোহাগ হোসেনের জন্মের পর সংসারে অভাব অনটন দেখা দেয়। ঢাকার পোস্তগোলায় নিজের খাবার হোটেল চালু করার কিছু দিনের মধ্যেই ১৯৯৮ সালে জটিল কিডনি রোগে আক্রান্তের কথা জানতে পারেন শহীদুল।
কোনো উপায় না পেয়ে কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর ঢাকার বাসার ঠিকানা জোগাড় করে দেখা করেন। কাদের তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করান, উপস্থিত সহযোদ্ধাদের নির্দেশ দেন তার কাগজপত্র সংগ্রহ করতে। কাদেরিয়া বাহিনীর যোদ্ধা বীর প্রতীক আবদুল্লাহকে নির্দেশ দেন, ঢাকার মিরপুর মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন প্রকল্পে শহীদুলের পরিবারের জন্য জায়গা দিতে। সে অনুযায়ী তার পরিবারের ঠাঁই হয় সেখানে।
বীর প্রতীক খেতাব লাভ
চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হন শহীদুল ইসলাম। কাগজপত্র সংগ্রহের পর জানতে পারেন তিনি বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা, তিনিই সর্বকনিষ্ঠ বীর প্রতীক। পরে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক তাকে ৩০ হাজার টাকা অনুদান প্রদানের সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে অপর দুইভাই তাকে খুঁজে পায়।
শহীদুলের চিরবিদায়
অসুস্থতার কারণে শেষ সময়ে কোনো কাজকর্ম করতে পারেননি শহীদুল। শুভাকাঙ্ক্ষীদের অর্থে চলেছে চিকিৎসা ও পরিবারের খরচ। ২০০৯ সালে ২৫ মে অসুস্থ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে তাকে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
পরিবারের বক্তব্য
বীর প্রতীক শহীদুল ইসলামে স্ত্রী মালা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার স্বামীর জীবদ্দশায় ভাতাপ্রাপ্ত ছিলেন না, তাই শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহায়তায় চিকিৎসা করাতে হয়েছে। উনার মৃত্যুর পর চার সন্তানকে অনেক কষ্টে লালনপালন করি। এরপর মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রীর কাছে গেলে ২০১৪ সালে দুই হাজার টাকা ভাতা চালু হয়।
‘মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন প্রকল্পের সরকারি জমিতে একাধিক রুম বানিয়ে ভাড়ার টাকায় সন্তানদের বড় করি। সন্তানদেরকে শিক্ষিত বানিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার দাবি সন্তানদের জন্য উপযুক্ত চাকরি ও আমাদের স্থায়ী নিবাসের ব্যবস্থা করে দেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘তার নিজ এলাকার মানুষের থেকে সে তেমন মূল্যায়ন পায়নি, এই ক্ষোভে তিনি মৃত্যুর আগে কখনও গোপালপুর যাননি, তবে সন্তানদের নিয়ে আমি একাধিকবার গোপালপুর গিয়েছিলাম।’
সর্বকনিষ্ঠ বীর প্রতীকের সন্তান সোহাগ হোসেন বলেন, ‘মানুষের মৌলিক চাহিদার একটি বাসস্থান। আমরা বিশেষ পরিবারের সন্তান হলেও ঢাকার মিরপুরে সরকারি জমিতে বসবাস করতেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট দাবি, স্থায়ী বাসস্থান ও আমাদের জন্য উপযুক্ত চাকুরির ব্যবস্থা যেন উনি করেন।’
নিয়মিত সরকারি রেশন ও ভাতা পাচ্ছেন বলেও জানান তারা।
জনপ্রতিনিধিদের ভাষ্য
গোপালপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদ্য সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা সমরেন্দ্রনাথ সরকার বিমল বলেন, ‘সূতী মীরপাড়ায় গোপালপুরের একমাত্র বীর প্রতীক শহীদুল ইসলামের জন্ম হলেও, এখানে তার বাড়ি-ঘর নেই। তার পরিবার এখানে এসে কিছু চায় নাই, তাই বীর নিবাসসহ অন্যান্য সুবিধাদি পায়নি। তার পরিবার বীর প্রতীক ভাতা পাচ্ছেন।’
গোপালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বীর নিবাস তৈরি করে দেয়ার একটি প্রকল্প চলমান আছে। গোপালপুরে জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ৬২টি বীর নিবাস নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে এবং ছয়টি নির্মাণাধীন রয়েছে।
‘উনাকে আবেদন করে রাখতে বলেন। পরের অর্থবছরে আবার যদি বরাদ্দ আসে তবে হয়ত এগুলো পাঠাতে পারব।’
আরও পড়ুন:কিছুদিন মন্দাবস্থার পর ঈদ উপলক্ষে চাঙা হয়ে উঠেছে সিলেটের পর্যটন খাত। ঈদের ছুটিতে ব্যাপকসংখ্যক পর্যটক এসেছেন সিলেটে। এতে খুশি পর্যটন খাতের উদ্যোক্তারা।
আগামী কয়েক দিন এই চাঙাভাব অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন তারা।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেটে পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় দুটি গন্তব্য গোয়াইনঘাটের জাফলং ও কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথর। এ দুই জায়গাতেই ঈদের দিন থেকে পর্যটকদের ঢল নেমেছে, তবে ঈদের দিনের চেয়ে তার পরের দিন পর্যটক সমাগম আরও বাড়ে।
জাফলংয়ের পর্যটন খাতের উদ্যেক্তারা জানান, ঈদ মৌসুমে জাফলংয়ে আট থেকে ১০ লাখ পর্যটকের সমাগম হবে বলে আশা করছেন তারা।
জাফলং, সাদাপাথর ছাড়াও বিছনাকান্দি, রাতারগুল সোয়াম ফরেস্ট, পানতুমাই ঝরনা, লালাখাল ও সিলেটের বিভিন্ন চা বাগানে বৃহস্পতিবার থেকেই পর্যটকদের ঢল নামে। সিলেটের বেশির ভাগ হোটেল-রিসোর্ট এখন অতিথিতে পূর্ণ।
সিলেট শহর থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে সাদাপাথর। সাদা পাথুরে নদীর শীতল জল আর পাশেই দিগন্ত বিস্তৃত মেঘালয় পাহাড়। প্রকৃতির এ অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে সারা বছরই পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। ঈদ মৌসুমে পর্যটক সমাগম আরও বাড়ে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
ঈদুল ফিতরের পরের দিন শুক্রবার সাদাপাথরে গিয়ে দেখা যায়, পর্যটকদের কারণে নদীতে পা ফেলার অবস্থা নেই। ভিড়ের কারণে অনেকে নদীর তীরে দাঁড়িয়ে ছিলেন; নামতে পারছিলেন না পানিতে।
সাদাপাথর ঘুরতে আসা কুমিল্লার শিউলি বেগম বলেন, ‘এই পরিবেশ অপরূপ। যে কেউ আসলে মন ভালো হয়ে যাবে।’
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর থেকে আসা রাজেল মিয়া বলেন,‘দুপুরে সাদাপাথরে এসেছি। সাদাপাথরের ধলাই নদীর শীতল স্পর্শ মনকে চাঙা করে দিয়েছে।
‘সত্যিই অসাধারণ জায়গা। অবসর পেলেই চলে আসি।’
পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ সিলেট রিজিয়নের পরিদর্শক আখতার হোসেন বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। সাদাপাথরে এই ঈদে প্রতিদিন কয়েক হাজার লোক ঘুরতে আসছেন।
‘আমাদের কয়েকটি টিম সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছে। পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দ্যে ঘোরাফেরা করছেন।’
সিলেটের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্য জাফলং। শনিবার জাফলংয়ে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে মেঘ-পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন দর্শনার্থীরা।
জাফলংয়ে সকাল থেকেই দলবেঁধে পর্যটকেরা ঘুরতে আসেন। নদীতে নেমে কেউ কেউ গোসল করতে ব্যস্ত। আর নৌকা পার হয়ে অনেকের গন্তব্য মায়াবী ঝরনা, খাসিয়া পল্লি ও চা বাগানে। বেলা বাড়ার সঙ্গে দর্শনার্থীদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে।
পর্যটক সুজন আহমেদ বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে পরিবারের সদস্যরা মিলে ঘুরতে এসেছি। জাফলং ভীষণ ভালো লেগেছে।
‘পাহাড় আর পাথরের সৌন্দর্য আমাদের মুগ্ধ করেছে, তবে বৃষ্টিতে একটু ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।’
এদিকে পর্যটকদের চাপে সিলেটের হোটেল-মোটেলগুলোতে কক্ষ খালি ছিল না। ব্যস্ততা দেখা গেছে রেস্তোরাঁগুলোতেও। পর্যটকের সমাগমে খুশি এখানকার পর্যটন ব্যবসায়ীরাও।
জাফলং পর্যটনকেন্দ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হোসেন মিয়া বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে জাফলংয়ে অনেক পর্যটক বেড়াতে এসেছেন। ব্যবসায়ীদের বেচাকেনাও ভালো হয়েছে।
‘এখানকার কোনো হোটেল-রিসোর্টেই এখন কক্ষ খালি নেই। আগামী কয়েক দিন পর্যটক সমাগম বেশি থাকবে বলে আশা করছি।’
পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে টুরিস্ট পুলিশ, থানা-পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে জাফলং ট্যুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ রতন শেখ বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে সকাল থেকেই পর্যটকে মুখরিত ছিল জাফলং। আগত পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা কাজ করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ছাড়াও পর্যটকরা বেড়াতে এসে যাতে কোনোভাবেই ভোগান্তিতে না পড়েন, সেদিকে আমাদের নজর রয়েছে।’
আরও পড়ুন:কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলায় ঈদ উৎসবে কিষান-কিষানিদের নিয়ে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। সেসব খেলা দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে হাজারো দর্শনার্থী এস ভিড় জমায়।
কৃষকদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে ব্যতিক্রমী এ আয়োজন করে ফাইট আনটিল লাইট (ফুল) নামে একটি সামাজিক সংগঠন। মূলত কৃষকদের ঈদকে প্রাণবন্ত করতে এ উৎসবের আয়োজন করে সংগঠনটি। খেলা শেষে ৩৫ জন বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়।
শুক্রবার দিনব্যাপী ফুলবাড়ী উপজেলার উত্তর বড়ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এসব খেলা অনুষ্ঠিত হয়।
দিনব্যাপী চলা অনুষ্ঠানে প্রায় ২২ ধরনের ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল হাঁড়ি ভাঙা, বালিশ খেলা, সুঁইসুতা, সাঁতার, তৈলাক্ত কলাগাছ বেয়ে চড়া, স্লো সাইকেল রেস, বেলুন ফাটানো এবং কিষানিদের বল ফেলা, বালিশ খেলা এবং যেমন খুশি তেমন সাঁজোসহ আরও অন্যান্য খেলা। এসব খেলায় অংশ নেন বিভিন্ন বয়সের শতাধিক কিষান-কিষানি।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আইনুল ইসলাম, সাংবাদিক শফি খান, রংপুর বিভাগীয় হিসাবরক্ষক সাইদুল হক, ফুল-এর নির্বাহী পরিচালক আব্দুল কাদের প্রমুখ।
খেলা দেখতে আসা ময়নাল হক বলেন, ‘গ্রামে এসব খেলা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। প্রায় ১০-১৫ বছর পর গ্রামের ঐতিহ্যবাহী খেলা দেখে খুবই আনন্দ পেলাম। সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে কৃষকদের হাঁড়ি ভাঙা, সাইকেল খেলা দেখে। এছাড়া কিষানিদের সুঁইসুতা খেলা ও বালিশ খেলা ছিল বেশ আনন্দের।’
কৃষক নুর ইসলাম বলেন, ‘কৃষকদের নিয়ে এমন ব্যতিক্রমী আয়োজন সত্যি ভালো লেগেছে। আমরা এখানে শতাধিক কিষান-কিষানি আজকের খেলায় অংশ নিয়েছি। খু্ব ভালো লেগেছে।’
ফুল-এর নির্বাহী পরিচালক আব্দুল কাদের বলেন, ‘কৃষক হাসলে বাংলাদেশ হাসে- এ প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে দিনব্যাপী শতাধিক কিষান-কিষানিকে নিয়ে প্রায় ২২টি খেলার আয়োজন করা হয়েছে।
‘এ খেলার মাধ্যমে সমাজে বাল্যবিয়ে বন্ধে সচেতনতা বাড়াতে চেষ্টা করেছি। এছাড়া গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানাতেও এ খেলার আয়োজন করা হয়েছে।’
মন্তব্য