পার্বত্য এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও উন্নত ভবিষ্যতের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হয়ে আসছে পর্বত দিবস। জাতিসংঘ ১১ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস হিসেবে ঘোষণা করে ২০০৩ সালে। সেই থেকে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও দিনটি পালিত হয়।
দেশের প্রথম নারী এভারেস্ট-জয়ী নিশাত মজুমদার নিউজবাংলাকে জানান, এবারের পর্বত দিবসের প্রতিপাদ্য ‘সাসটেইনেবল মাউন্টেইন ট্যুরিজম’। করোনার কারণে অনেক কিছু থমকে গেছে বলে অনেক অনেক আনুষ্ঠানিকতা নেই বলেও জানান তিনি।
নিউজবাংলার সঙ্গে আলাপকালে তিনি দিবসটি ছাড়াও জানিয়েছেন পর্বতারোহণের নানা গল্প। এখানকার সমস্যা, সম্ভাবনা।
বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তির মুহূর্তে তার অর্জনও স্বাধীন বাংলাদেশের সঞ্চয়। প্রত্যাশার কথাও জানিয়েছেন এ পর্বতারোহী।
বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি হতে যাচ্ছে, অর্থাৎ বিজয়ের ৫০ বছর। এর মধ্যে যেসব গৌরব, তার মধ্যে আপনার অর্জনও রয়েছে। তার অংশীদার আমরা সবাই। কেমন লাগে?
বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি আমাদের জন্য, বাংলাদেশিদের জন্য খুব অহংকারের একটি মুহূর্ত। এ সময়টা আমাদের অনেকভাবে উদযাপন করার কথা ছিল, পাহাড় নিয়ে অনেক কিছু করার কথা ছিল, অনেক কিছু যুক্ত করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু কোভিড আমাদের সবকিছু থমকে দিয়েছে।
তবে আমার পর্যবেক্ষণ থেকে যুক্ত করে বলতে চাই অহংকার অবশ্যই আবার রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের কোথায় যাবার কথা ছিল, কোথায় গিয়েছি- এটার মূল্যায়ন করার সময়ও এখন। অনেক ক্ষেত্রে সামনে এগিয়েছি, অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছি।
সম্প্রতি আপনি লবুচে পর্বতে আরোহণ করেছেন বলে ধারণা করছি। কারণ ফেসবুকে এ বিষয়ে আপনার পোস্ট দেখেছি। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাই।
অতি সম্প্রতি, গত মাসের ২১ তারিখে ছিল আমাদের আরোহণের দিন। প্রতিবছরই চেষ্টা করি পাহাড়ে যাবার এবং আরোহণ করার। গত দুই বছর কিছুই করতে পারিনি। তাই কিছুটা সময় পেতেই সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাইনি।
নেপালের হিমালয়ের একটি ছোট পাহাড় লবুচে। এভারেস্টের পাশেই এটি। যারা মাউন্ট এভারেস্টে যায়, তারা এই পাহাড়টা কেউ বেছে নেয় আরোহণ করার জন্য। এর উচ্চতা ৬ হাজার ৯০ মিটার।
দেশ-বিদেশের মোট কতটি পর্বত আরোহণ করেছেন আপনি?
গুনতে হবে। ১৫ থেকে ১৮টির মতো হবে। ১৮টি হবে।
দেশ-বিদেশের পর্বত আরোহণের পার্থক্য তো রয়েছে? সেগুলো কেমন?
দুটি বিষয়, একটি হলো মাউন্টেইন আরেকটি হিল। আমাদের দেশে যেগুলো সেগুলো সবই হিল। এটি উচ্চতার ওপর নির্ভর করে। মাউন্টেইনে যেতে চাইলে নেপাল বা ভারতে যেতে হয়। হোয়াইট মাউন্টেইন হলো টোতে বরফ পড়ে থাকে।
আমাদের দেশে বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে কিছু হিল আছে, যেগুলো উচ্চতায় কম। সেখানে যাওয়া হয় কখনো কখনো প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে। নতুনদের নিয়ে যাই।
উচ্চতার পার্থক্যের কারণে পোশাকের পার্থক্য হয়, খাওয়াদাওয়ার পার্থক্য হয়। আমাদের এখানে তো গাড়ি নিয়ে চলে যাওয়া যায়।
আমরা যারা গরমের দেশে থাকি বা সমতলের মানুষ, তাদের জন্য হোয়াইট মাউন্টেইন বা বরফের পাহাড় আরোহণ অনেক কষ্টের, খুবই চ্যালেঞ্জিং। পাহাড়ে উঠতে যত ওপরে উঠতে থাকি তত অক্সিজেন লেভেল কমতে থাকে। তখন হার্ট ও ফুসফুসের ওপর চাপ পড়তে থাকে।
আপনি তো প্রশিক্ষণও দিচ্ছেন। সেটা কি আগে থেকেই? নাকি আপনার এভারেস্ট আরোহণের পর থেকে?
তরুণ প্রজন্মের মধ্যে একটি চাহিদা তৈরি হয়েছে। এটি আনন্দের বিষয় হয়ে উঠেছে। এভারেস্টে আরোহণ করার পর আমার দায়বদ্ধতা তৈরি হয়। সেখান থেকে আমি প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু করি।
অনেক পর্বত আরোহণ করেছেন; একটা ভয় তো নিশ্চয়ই কাজ করে।
পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে থাকে ভয়, আতঙ্ক। প্রতি পদক্ষেপে মনে হয় যে এটিই সবচেয়ে ভালো সময় এখান থেকে ফিরে যাওয়ার। পরের সময়টায় জানি না আমি বেঁচে থাকব কি না।
আমার এটা হয়, আমি বাসা থেকে যখন বিদায় নিয়ে যাই, বাসায় তো আর বলা যায় না, মনে মনে বলি এটাই হয়তো শেষবিদায়। পাহাড়ের প্রতিটা মুহূর্তেই বিপদের আতঙ্ক।
এভারেস্টে আমি বেশ কয়েকবার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি। অনেক সময় বোঝাও যায় না যে শরীরের সব শক্তি কীভাবে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। একদমই বলা যায় না, কখন চলে আসবে শেষমুহূর্ত।
পাহাড়ের একটা শিহরণ আছে। দূর থেকে দেখলেও সেই শিহরণটা পাওয়া যায়। পাহাড়ের একটা আলাদা ব্যাপার আছে। আমরা এটাকে বলি ‘মাউন্টেইন কলিং’। মাউন্টেইন একবার যদি ডাকে, সেটা ফিরিয়ে দেয়া অসম্ভব হয়ে যায়।
এভারেস্ট বাদ দিয়ে কোনো শিহরণ জাগানো গল্প যদি বলেন।
অনেক অনেক মুহূর্ত আছে। এ মুহূর্তে একটা মনে পড়ছে। আমি ককেশাস পর্বতমালায় গিয়েছিলাম, মাউন্ট এলবুর্জ, রাশিয়াতে, জর্জিয়ার শেষ সীমান্তে। যখন আমি সামিটের কাছাকাছি পৌঁছাই, তখন দেখি সেদিন পূর্ণিমা ছিল, পূর্ণিমার চাঁদটা অস্ত যাচ্ছে আর সূর্য উঠছে। এটি আমার কাছে মনে হয়, আমার এক মানবজীবনে এ রকম অভাবনীয় মুহূর্ত হয়তো আর পাব না।
এসবের জন্য মানসিক, শারীরিক এবং আর্থিক সক্ষমতার প্রয়োজন কেমন?
প্রথম ও প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা। পর্বতারোহণ খুবই ব্যয়বহুল একটি বিষয়। একটি ফুটবল হলে ২২ জন খেলতে পারে। ক্রিকেট ব্যাট আর বল হলেই অনেকে মিলে খেলতে পারে, কিন্তু পর্বতারোহণ একজনের জন্যই লাখ লাখ টাকা প্রয়োজন। এটার কাছেই আমরা বারবার হেরে যাচ্ছি।
আমি যেমন এইবার গেলাম। এখানে আমার একজন প্রশিক্ষণার্থী নিয়ে যেতে চেয়েছি এবং বিশেষ করে নারীকে। আমাদের কোনো পৃষ্ঠপোষক পেলাম না। পরে আমি আমার চেষ্টায় যেতে পারলেও কাউকে নিয়ে যেতে পারিনি।
এগুলো নিয়ে কখনও সরকারের কোনো পক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে আপনার বা তারা কোনো আগ্রহ দেখিয়েছে?
আমি আসলে পাইনি।
বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকরা কি বিষয়টি ওয়াকিবহাল নাকি তাদের বিষয়টি ভালো করে বোঝাতে হয়?
তাদের ভালো ধারণা আছে। আমরা আসলে যে এই পর্যন্ত এসেছি সেটা কর্পোরেটের সাহায্যে। আমি যখন এভারেস্টে গিয়েছি তখন ১১টি প্রতিষ্ঠান ছিল আমার স্পন্সর। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ভালোভাবে ওয়াকিবহাল।
আর কী কী সীমাবদ্ধতা দেখেন?
যারা পর্বত আরোহণ করবে, তাদের লাইফস্টাইল এবং মনোযোগ ঠিক থাকা দরকার। তরুণদের মধ্যে এ বিষয়টি নিয়ে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে মনে হয়।
এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে বা গ্লোবালাইজেশনের কারণে বিস্ময়টি কমে গেছে। আমার ব্যক্তিগত অনুধাবন হলো, কখনও কখনও আগ্রহ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে, মনোযোগ নষ্ট হয়ে যেতে পারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে।
পাহাড় একটা মনঃসংযোগের বিষয়। পাহাড় একসেস দেয়, যে ঠিক আছ তুমি, আমার কাছে আসতে পার। এই জায়গাটার জন্য একটা পাহাড় এবং পর্বতারোহীর মধ্যে যোগাযোগ দরকার, যার জন্য প্রয়োজন মনঃসংযোগ।
এর জন্য একটা লাইফ স্টাইল লাগে। কখন, কীভাবে খাচ্ছি, কখন ঘুম থেকে উঠছি, সারা দিন আমি কী করছি, এমনকি কী ভাবছি, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ।
কীভাবে আমি দড়িটা বাঁধব, কীভাবে হাঁটবো, কী খাব, আমি যখন বিপদে পড়ব তখন কী করব, কোনো অ্যাক্সিডেন্ট হয় যদি, তখন আমি কীভাবে নিজেকে বাঁচাব, এই কাজগুলো কিন্তু হাতে-কলমে শিক্ষা নিতে হয়। এটার জন্য আমাদের পাশের দেশে বিশেষ করে ভারতে যেতে হয়। এই প্রশিক্ষণ কিন্তু খুব ব্যয়বহুল, লম্বা একটা প্রশিক্ষণ। এই প্রোগ্রামে আমাদের কিছু নিজস্ব অর্থায়নে পাঠিয়েছি, কিন্তু ট্রেনিংয়ের পরবর্তী কাজ হলো পাহাড়ে যাওয়া। পৃষ্ঠপোষকতা দিতে পারছি না, তাই তরুণদের যাওয়া হচ্ছে না।
আপনারা যারা পর্বতারোহী, তাদের মধ্যে যোগাযোগ বা কোনো সংগঠন রয়েছে কি না?
আমরা একটা প্ল্যাটফর্মে আসতে পারিনি, তবে আমাদের যোগাযোগ আছে।
আমি কিছু প্রস্তাব করেছি যে সরকারের যুব উন্নয়ন নিয়ে অনেক ফান্ড আছে। খেলাধুলায়, কালচারাল কাজে ফান্ড আছে। সেখানে থেকে অ্যাডভেঞ্চার ফান্ড করতে হবে। যেসব ছেলে-মেয়ে পর্বত আরোহণে যেতে চায়, সেখানে একটা সুবিধা পাবে। এটা ভারতে আছে।
এই অর্জন কখনও কি মূল্যহীন মনে হয়? হীনম্মন্যতায় ভোগেন?
আমি কখনও হীনম্মন্যতায় ভোগি না। আমি আমার দেশের মানুষের কাছ থেকে যে পরিমাণ ভালোবাসা পেয়েছি, যে পরিমাণ গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছি, একজীবনে আর কিছু পাওয়ার নেই।
খারাপ লাগা আছে, আমরা ২০১১ সাল থেকে পর্বত আরোহণ করে আসছি। ১০ বছর কেটে গেল, কোথায় আছি, কোথায় থাকার কথা ছিল। এটা একটা স্লো প্রোসেস, তারপরও।
১১ ডিসেম্বর পর্বত দিবস। আপনারা এটা পালক করেন কি না?
কভিডের কারণে কিছুই করা হচ্ছে না। এবার পর্বত দিবসের স্লোগান ‘সাসটেইনেবল মাউন্টেইন ট্যুরিজম’। আমরা লেখা আহ্বান করেছি। পাহাড়ে যাওয়ার গল্প লেখার ভিত্তিতে আমরা পুরস্কার দেব। আমাদের দেশের পাহাড়ে ভ্রমণের সুযোগ পাবে বিজয়ীরা। আমরা ম্যারাথন দৌড়ের সঙ্গে যুক্ত। সেটাও থাকছে পর্বত দিবস উপলক্ষ্যে।
শেষে আর কিছু বলতে চান?
আমার দুই ধরনের কাজ। একটি হচ্ছে নিজেকে পাহাড়ের সঙ্গে রাখা, আরেকটি হচ্ছে যারা পাহাড়ে যেতে চায়, তাদের পাহাড়ের কাছে নিয়ে যাওয়া। দুভাবেই কিছু পরিকল্পনা করেছি। বাকিটা নির্ভর করছে পৃষ্ঠপোষকতার ওপর।
আরেকটি জিনিস বলতে চাই। আমরা সবাই পাহাড়ে যাব, কিন্তু ওই পাহাড়ে যাওয়াটা যেন আমাদের দায়িত্বশীল ভ্রমণ হয়।
আমি যে জায়গায় যাব, সেই পরিবেশের কোনো ক্ষতি করব না বা সেখানকার মানুষের সম্মান করব। সেখানকার প্রাণ-প্রকৃতির যেন কোনো ক্ষতি না হয় আমার দ্বারা।
ওই জায়গাটার জন্য তো আমরা যাচ্ছি, ওটা যদি না থাকত তাহলে তো যেতাম না, ওইটাই তো গুরুত্বপূর্ণ। ওখানে যে মানুষটি বছরের-পর-বছর বাস করছে, সেই মানুষটি ওখানে গুরুত্বপূর্ণ, তাদের শ্রদ্ধা করব, ভালোবাসব ও সম্মান করব। পর্বত দিবসে এটি আমার মিনতি আবেদন।
ছবি: নিশাত মজুমদারের ফেসবুক থেকে
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন দেশের আলোচিত ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল ও নিগার সুলতানা জ্যোতি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তারা বাংলা নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানান।
নতুন বছরের আগের দিন শনিবার রাতে ফেসবুকে ভেরিফায়েড পেজে এক পোস্টে সাকিব লিখেন, ‘শুভ নববর্ষ! আশা করি আমাদের সবার জীবনে এই নতুন বছর অঢেল সুখ, শান্তি এবং আনন্দ নিয়ে আসবে।’
নিজ ভেরিফায়েড পেজে ‘শুভ নববর্ষ ১৪৩১’ লেখা একটি পোস্টার শেয়ার করে ওপেনার তামিম ইকবাল এক বাক্যে লিখেন, ‘সবাইকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা।’
এ দুই তারকা ছাড়াও অনেকেই নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বলে বার্তা সংস্থা বাসসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
ডানহাতি পেসার তাসকিন আহমেদ নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে লিখেন, ‘নববর্ষে নবরূপ রাঙিয়ে দিক প্রতিটি মুহূর্ত। সুন্দর সমৃদ্ধ হোক আগামীর দিনগুলো। শুভ নববর্ষ সকলকে।’
নিজ ফেসবুক অ্যাকাউন্টে অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজ লিখেন, ‘আনন্দ, উন্নতি ও শুভকামনার বার্তা নিয়ে নতুন বছরের সূচনায় ভরে উঠুক সকলের জীবন। সবাইকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা। শুভ নববর্ষ ১৪৩১।’
জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি লিখেন, ‘নববর্ষে নবরূপ রাঙিয়ে দিক প্রতিটি মুহূর্ত। সুন্দর সমৃদ্ধ হোক আগামীর দিনগুলো। শুভ নববর্ষ।’
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ বাংলা নববর্ষ-১৪৩১ উদযাপন উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার আয়োজন করে হয়েছে।
উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের শহীদনগর বাজারে রোববার নববর্ষ উদযাপন কমিটি ও শাপলা সবুজ সংঘের আয়োজনে দুই দিনব্যাপী ৩১তম বৈশাখী মেলা শুরু হয়।
বর্ষবরণ উপলক্ষে কমলগঞ্জে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রা শেষে মাইজগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের নিয়ে দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বর্ষবরণ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নববর্ষ উদযাপন কমিটির সভাপতি পতনঊষার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অলি আহমদ খান সভাপতিত্ব করেন। এতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পতনঊষার ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার তওফিক আহমদ বাবু, বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক আবদুল হান্নান চিনু, আবুল ফজল চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিছবাউর রহমান চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম, পতনঊষার ইউপি সদস্য তোয়াবুর রহমান তবারক, শাপলা সবুজ সংঘের সভাপতি নারায়ণ মল্লিক সাগর, শহীদনগর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল বশর জিল্লুল, প্রবাসী ইমদাদুল হক ইমরান, নববর্ষ উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাকসহ অনেকে।
এদিকে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী বৈশাখী মেলায় বাঙালির ঐতিহ্যবাহী সব পণ্যের পসরা সাজানো হয়েছে।
পহেলা বৈশাখের দিন রোববার থেকে শুরু হওয়া এ মেলা চলবে সোমবার পর্যন্ত। মেলায় উঠেছে হরেক রকমের পণ্য।
মেলা দেখতে ভিড় করেছে শিশু, কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সীরা। দীর্ঘদিন পর মেলা হওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে আগত দর্শনার্থীরা।
আরও পড়ুন:পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদ থেকে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়েছে।
ঐক্য, সাংস্কৃতিক গর্ব ও স্থিতিস্থাপকতার প্রতীক শোভাযাত্রাটি ঐতিহ্যবাহী শিল্পীসত্তা ও চেতনার মন্ত্রমুগ্ধকর প্রদর্শনীর মধ্যে দিয়ে রোববার সকাল ৯টা ১৮ মিনিটে আরম্ভ হয়। খবর ইউএনবির
উৎসাহী অংশগ্রহণকারীদের নেতৃত্বে মঙ্গল শোভাযাত্রা শাহবাগ, ঢাকা ক্লাব এবং শিশু পার্কের মতো ঐতিহাসিক স্থান হয়ে ঢাকার ব্যস্ত রাস্তা অতিক্রম করে। বর্ণিল পোশাকে সজ্জিত ও প্রতীকী নিদর্শন সম্বলিত শোভাযাত্রাটি বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিধ্বনি করে এবং আনন্দ-উল্লাসে নতুন বছরকে স্বাগত জানায়
সৃজনশীলতা ও শৈল্পিক প্রকাশের লালনের জন্য পরিচিত চারুকলা অনুষদ সাংস্কৃতিক তাৎপর্যের সূচনা স্থান। অনুষদের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের আয়োজিত এই আয়োজনে বাংলাদেশের বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক সৌন্দর্যের প্রচার ও সংরক্ষণে প্রতিষ্ঠানটির অঙ্গীকারের দৃষ্টান্ত ফুটে ওঠে।
শোভাযাত্রাটি টিএসসিতে সমাপ্তির পথে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার বাতাস হর্ষধ্বনি, সংগীত এবং অংশগ্রহণকারী ও দর্শকদের সম্মিলিত উল্লাসে অনুরণিত হয়। মঙ্গল শোভাযাত্রা শুধু বাংলা নববর্ষের আগমনই উদযাপন করে না, প্রতিকূলতার মধ্যেও বাঙালি মানুষের সহনশীলতা ও চেতনার সাক্ষ্য বহন করে।
আধুনিক বিশ্বের চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে এই জাতীয় আয়োজন ঐক্য, স্থিতিস্থাপকতা ও একাত্মতার বোধকে লালন করার ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গুরুত্ব নিশ্চিত করে।
বাংলা নতুন বছর ১৪৩১ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলা নববর্ষের আগের দিন শনিবার এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন বলে বার্তা সংস্থা বাসসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলা নতুন বছর ১৪৩১ আমাদের জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে।’
দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘শুভ নববর্ষ, ১৪৩১। উৎসবমুখর বাংলা নববর্ষের এই দিনে আমি দেশবাসীসহ সকল বাঙালিকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।’
তিনি বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ বাংলা সনের প্রথম দিন। এটি সর্বজনীন উৎসব। এদিন আনন্দঘন পরিবেশে বরণ করে নেয়া হয় নতুন বছরকে। আবহমান কাল ধরে নববর্ষের এই উৎসবে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র জাতি জেগে ওঠে নবপ্রাণ স্পন্দনে, নব অঙ্গীকারে। সারা বছরের দুঃখ-জরা, মলিনতা ও ব্যর্থতাকে ভুলে বাঙালি রচনা করে সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য, আনন্দ ও ভালোবাসার মেলবন্ধন।’
পহেলা বৈশাখ উদযাপনের ইতিহাস তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্যে পহেলা বৈশাখ বিশেষ স্থান দখল করে আছে। বাংলা নববর্ষ পালনের সূচনা হয় মূলত মোঘল সম্রাট আকবরের সময় থেকে। কৃষিকাজের সুবিধার্থে সম্রাট আকবর ‘ফসলি সন’ হিসেবে বাংলা সন গণনার যে সূচনা করেন, তা কালের পরিক্রমায় সমগ্র বাঙালির কাছে অসাম্প্রদায়িক চেতনার স্মারক উৎসবে পরিণত হয়েছে।
“পহেলা বৈশাখ বাঙালিয়ানার প্রতিচ্ছবি। এই উদযাপন আমাদের শেকড়ের সন্ধান দেয়। এর মধ্য দিয়ে খুঁজে পাওয়া যায় জাতিসত্তার পরিচয়।”
বৈশাখের প্রথম দিনকেন্দ্রিক উৎসবের বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাঙালির প্রতিটি ঘরে, জনজীবনে এবং আর্থ-সামাজিক সংস্কৃতিতে পহেলা বৈশাখ এক অনন্য উৎসব। পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে হালখাতার পাশাপাশি যাত্রাগান, পালাগান, পুতুলনাচ, অঞ্চলভিত্তিক লোকসংগীত, খেলাধুলাসহ বিভিন্ন পসরা নিয়ে মেলার বর্ণিল আয়োজনের মাধ্যমে যেমন লোকজ-সংস্কৃতি প্রাণ ফিরে পায়, তেমনি দেশের অর্থনীতি তথা ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমৃদ্ধ হয়, ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসে।’
আরও পড়ুন:‘আমার বয়স অনেক হয়েছে, তবুও আমি সুস্থ আছি নিয়মিত লাঠি খেলার কারণে। আমার যারা ওস্তাদ ছিল, সবাই মারা গেছে। তাদের শেখানো লাঠি খেলা দেখিয়ে গ্রামের মানুষকে আনন্দ দিয়ে থাকি।’
কথাগুলো বলছিলেন নওগাঁ সদর উপজেলার দারিয়াপুর গ্রামের সাহাজ আলী সরদার। ৬০ বছর বয়সী এ ব্যক্তি শুক্রবার বিকেলে জেলা শহরের মুক্তির মোড়ে অংশ নেন লাঠি খেলায়।
বাউল আখড়া বাড়ির চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে এ খেলার আয়োজন করা হয়।
লাঠি খেলা দেখতে আসা ভীমপুর এলাকার বাসিন্দা মুমিন সরদার (৩৫) বলেন, ‘গ্রাম-বাংলার হারিয়ে যাওয়া খেলাটি এখন আর দেখতেই পাওয়া যায় না। বিভিন্ন সংগঠন প্রতি বছর এ খেলার আয়োজন করে বলে আমরা যুবসমাজ দেখতে পারি।
‘গ্রামীণ খেলাগুলো টিকিয়ে রাখতে আমাদের সবাইকে চেষ্টা করা উচিত।’
শহরের পোস্ট অফিসপাড়ার মীম বলেন, ‘আমরা সবাই এখন ভিডিও গেইমের প্রতি আসক্ত হয়ে যাচ্ছি দিন দিন। তাই গ্রামের ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলো দেখলে অন্যরকম ভালো লাগে।
‘বেড়াতে এসেছিলাম। ঢোলের শব্দ শুনে এসে দেখি লাঠি খেলা হচ্ছে। খুব ভালো লাগছে অনেক পুরোনো লাঠি খেলা দেখে।’
লাঠি খেলার দলের সদস্য আবদুস সামাদ (৫৫) বলেন, ‘আমার বয়স যখন ১৩ বছর, তখন আমার বাবার কাছ থেকে লাঠি খেলা শিখেছি। একসময় প্রচুর খেলা দেখানোর জন্য দাওয়াত পেতাম।
‘এখন আর পাই না, তবে এটা ভেবে ভালো লাগে যে, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এখনো লাঠি খেলাকে টিকিয়ে রেখেছেন।’
দারিয়াপুর গ্রামের সাহাজ আলী সরদার (৬০) বলেন, ‘একটা সময় ছিল প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে দাওয়াত পেতাম, তবে এখন আর আগের সময় নেই।
‘সবাই বিভিন্ন ধরনের অনলাইন গেইম নিয়ে ব্যস্ত। গ্রামীণ খেলাগুলোর মাধ্যমে যুবসমাজ বিভিন্ন ধরনের নেশা থেকে বিরত থাকবে বলে আমি মনে করি।’
আয়োজনের বিষয়ে বাউল আখড়া বাড়ির সভাপতি সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘লাঠি খেলা হলো গ্রামীণ ঐতিহ্য। এটি যেন বিলীন না হয়ে যায়, সে জন্য আমরা আয়োজন করেছি, যাতে মানুষেরা গ্রামীণ সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মূলত এখানে বাউল গানের আয়োজন করা হয়েছে, কিন্তু আমরা গ্রামীণ সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে বাদ দিয়ে কিছু করতে পারি না। কারণ লাঠি খেলাও আমাদের ঐতিহ্য। আমরা প্রতি বছর লাঠিখেলা ধরে রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’
আরও পড়ুন:যথাযথ মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে নওগাঁর এক হাজার ৩০০টি স্থানে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শহরের নওজোয়ান মাঠে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটায় ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন নওগাঁ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের প্রেস ইমাম মুফতি রেজওয়ান আহম্মেদ।
ওই জামাতে স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যরিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন, জেলা প্রশাসক গোলাম মওলা, পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।
এদিকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঈদ উৎসব উদযাপনের জন্য জেলা প্রশাসন বেশ কিছু নির্দেশনা দেয়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ভবনে সঠিক মাপ ও নিয়মে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, পটকা ও আতশবাজি বন্ধ, সরকারি শিশু পরিবার, এতিমখানা, জেলখানা ও হাসপাতালে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন। এ ছাড়াও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ঈদের দিন ও পরবর্তী সময়ে তরুণদের বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চলাচল রোধ করার পদক্ষেপ নেয়া হয়।
জেলায় সুষ্ঠুভাবে ঈদুল ফিতর উদযাপনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা হিসেবে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্য ও গোয়েন্দাদের নজরদারি বাড়ানো হয়।
মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা শেষে বুধবার ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলিমরা।
বাংলাদেশের আকাশে মঙ্গলবার চাঁদ দেখা না যাওয়ায় ঈদ উদযাপন হবে বৃহস্পতিবার, তবে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে এবারও ঈদ উদযাপন হয়েছে বিভিন্ন জেলায়।
দেশের নানা প্রান্তে ঈদ উদযাপনের খবর জানিয়েছেন আমাদের প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা।
কুড়িগ্রাম
জেলার রৌমারী, রাজীবপুর ও ভূরুঙ্গামারী উপজেলার চারটি গ্রামে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা। আলাদা আলাদা ঈদ জামাতে পাঁচ শতাধিক মুসল্লি অংশ নিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
সকালে রৌমারী উপজেলার শৈলমারী ইউনিয়নের গয়টাপাড়া গ্রাম, রাজিবপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের পূর্ব করাতিপাড়া গ্রাম ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলার পাইকেরছড়া ইউনিয়নের পাইকডাঙ্গা ও পাইকেরছড়া গ্রামে ঈদের এসব জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
ঈদের জামাত আদায় করা রৌমারী উপজেলার শৈলমারী ইউনিয়নের গয়টাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আবদুল মোত্তালেব বলেন, ‘আমরা প্রায় পাঁচ বছর ধরে সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে রমজানের রোজা রাখা, ঈদের নামাজ আদায় ও ঈদ উৎসব পালন করে আসছি।’
কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার আল আসাদ মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘জেলা পুলিশের নিরাপত্তায় পূর্ণ উৎসবমুখর পরিবেশে কুড়িগ্রামের চারটি গ্রামে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নাগরিক সেবায় জেলা পুলিশ সবসময় নিবেদিত।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ
জেলা সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার তিন শতাধিক মানুষ বুধবার ঈদ উদযাপন করেছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার দেবীনগর ইউনিয়নের মোমিন টোল ও বাগানপাড়া এলাকায় সকালে দুটি ঈদের জামাতে দুই শতাধিক মুসল্লি অংশ নেন।
অন্যদিকে শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের রাধানগর ও ছিয়াত্তর বিঘি এলাকার বিভিন্ন পরিবারের শতাধিক সদস্য সকালে ঈদের নামাজ আদায় করেন ছিয়াত্তর বিঘি আম বাগানে।
গত কয়েক বছর ধরে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা রাখার পাশাপাশি ঈদ উদযাপন করে আসছেন এসব গ্রামের লোকজন।
মৌলভীবাজার
জেলার শতাধিক পরিবারের মুসল্লিরা ঈদের জামাতে অংশ নিয়েছেন।
সকাল সাতটায় মৌলভীবাজার শহরের সার্কিট হাউস এলাকার আহমেদ শাবিস্তা নামক বাসায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
নামাজে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত নারী ও পুরুষ মুসল্লিরা অংশ নেন। এতে ইমামতি করেন উজান্ডির পির আলহাজ আব্দুল মাওফিক চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘কোরআন ও হাদিস অনুসারে পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় চাঁদ দেখা গেলে রোজা এবং ঈদ করতে হয়। সেই অনুসারে আমরা আজ ঈদের নামাজ আদায় করলাম।’
ময়মনসিংহ
জেলার গৌরীপুরের বাহাদুরপুর নূরমহল সুরেশ্বর দরবার শরিফে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল ফিতর উদযাপন হচ্ছে।
সকাল ৯টায় ঈদের জামাতে ইমামতি করেন মাওলানা মো. ইব্রাহিম। এ জামাতে ময়মনসিংহ সদর, ঈশ্বরগঞ্জ, নান্দাইল, ফুলপুর, হালুয়াঘাট, শম্ভুগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েক শ আশেকান, মুরিদ ও ভক্ত অংশ নেন। নারীদের জন্য আলাদা জামাতের ব্যবস্থা করা হয়।
সুরেশ্বর দরবার শরিফের পীর সৈয়দ শাহ্ নূরে আফতাব পারভেজ নূরী বলেন, ‘সৌদি আরবের সঙ্গে চাঁদের মিল রেখেই প্রতি বছর এখানে ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হয়। তাই এবারও আমরা বাংলাদেশে এক দিন আগে থেকে রোজা রাখা শুরু করি এবং ঈদুল ফিতর উদযাপন করি।’
শেরপুর
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে শেরপুরের ছয়টি গ্রামে ঈদুল ফিতর উদযাপন হয়েছে।
গ্রামগুলো হলো সদর উপজেলার উত্তর চরখারচর ও দক্ষিণ চরখারচর, নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী পশ্চিমপাড়া ও গোবিন্দনগর ছয়আনি পাড়া, নকলা উপজেলার চরকৈয়া এবং ঝিনাইগাতী উপজেলার বনগাঁও চতল।
স্থানীয় লোকজন ছাড়াও জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকেও মুসল্লিরা ওইসব গ্রামে ঈদের নামাজ আদায় করতে যান।
প্রতি বছর সদর উপজেলার বামনেরচর গ্রামে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হলেও এবার সেখানকার বেশ কিছু মুসল্লি নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী পশ্চিমপাড়া এলাকায় ঈদের নামাজ আদায় করেন।
সকাল সাতটা থেকে ১০টার মধ্যে এসব গ্রামে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যেকটি জামাতে ২০০ থেকে ২৫০ জন মুসল্লি অংশ নেন। এসব জামাতে পুরুষ মুসল্লিদের পাশাপাশি নারীরাও অংশ নেন।
টাঙ্গাইল
জেলার দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটি ইউনিয়নের শশীনাড়া গ্রামে সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে অর্ধশতাধিক পরিবার উদযাপন করছে ঈদুল ফিতর।
সকাল আটটায় স্থানীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। তাতে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও অংশ নেন।
গত ১২ বছর ধরে ওই এলাকার লোকজন সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ ও রোজা পালন করে আসছেন।
ঝালকাঠি
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে জেলার রাজাপুর উপজেলার মঠবাড়ি ইউনিয়নের ডহরশংকর গ্রামে বুধবার ঈদ উদযাপন করেন স্থানীয়রা।
এ গ্রামের বসবাসরত বাসিন্দাদের একটি অংশ রোজাও রাখেন এক দিন আগে থেকে। তাদের মতে, যেকোনো দেশে চাঁদ দেখা গেলে রোজা রাখা ও ঈদ উদযাপন করা যাবে।
ডহরশংকর গ্রামের প্রায় ৫০টি পরিবারের ২০০ মুসল্লি প্রতি বছর এভাবে ঈদ উদযাপন করে আসছেন। বেশ কয়েক বছর আগে এ নিয়ে এলাকার অন্য মুসল্লিদের সঙ্গে হট্টগোল হলেও বর্তমানে তারা নির্বিঘ্নে ঈদ উদযাপন করছেন।
সকাল আটটায় মঠবাড়ি ইউনিয়নের ডহরশংকর গ্রামের নাপিতের হাট এলাকায় দারুস সুন্নাহ মসজিদ প্রাঙ্গণে ঈদের জামাত আদায় করা হয়। এতে পৃথক স্থানে নারীরা একই জামাতে অংশ নেন। জামাতে ইমামতি করেন মাওলানা মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম।
ঈদ উদযাপনকারী মুসল্লি মোনাসেফ মৃধা বলেন, ‘আমরা পূর্বপুরুষ থেকেই সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে পবিত্র ঈদুল ফিতর পালন করে আসছি। গ্রামের প্রায় অর্ধশত পরিবার এক যুগ যাবত মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে ঈদের নামাজে উপস্থিত হচ্ছেন।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য