পার্বত্য এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও উন্নত ভবিষ্যতের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হয়ে আসছে পর্বত দিবস। জাতিসংঘ ১১ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস হিসেবে ঘোষণা করে ২০০৩ সালে। সেই থেকে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও দিনটি পালিত হয়।
দেশের প্রথম নারী এভারেস্ট-জয়ী নিশাত মজুমদার নিউজবাংলাকে জানান, এবারের পর্বত দিবসের প্রতিপাদ্য ‘সাসটেইনেবল মাউন্টেইন ট্যুরিজম’। করোনার কারণে অনেক কিছু থমকে গেছে বলে অনেক অনেক আনুষ্ঠানিকতা নেই বলেও জানান তিনি।
নিউজবাংলার সঙ্গে আলাপকালে তিনি দিবসটি ছাড়াও জানিয়েছেন পর্বতারোহণের নানা গল্প। এখানকার সমস্যা, সম্ভাবনা।
বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তির মুহূর্তে তার অর্জনও স্বাধীন বাংলাদেশের সঞ্চয়। প্রত্যাশার কথাও জানিয়েছেন এ পর্বতারোহী।
বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি হতে যাচ্ছে, অর্থাৎ বিজয়ের ৫০ বছর। এর মধ্যে যেসব গৌরব, তার মধ্যে আপনার অর্জনও রয়েছে। তার অংশীদার আমরা সবাই। কেমন লাগে?
বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি আমাদের জন্য, বাংলাদেশিদের জন্য খুব অহংকারের একটি মুহূর্ত। এ সময়টা আমাদের অনেকভাবে উদযাপন করার কথা ছিল, পাহাড় নিয়ে অনেক কিছু করার কথা ছিল, অনেক কিছু যুক্ত করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু কোভিড আমাদের সবকিছু থমকে দিয়েছে।
তবে আমার পর্যবেক্ষণ থেকে যুক্ত করে বলতে চাই অহংকার অবশ্যই আবার রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের কোথায় যাবার কথা ছিল, কোথায় গিয়েছি- এটার মূল্যায়ন করার সময়ও এখন। অনেক ক্ষেত্রে সামনে এগিয়েছি, অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছি।
সম্প্রতি আপনি লবুচে পর্বতে আরোহণ করেছেন বলে ধারণা করছি। কারণ ফেসবুকে এ বিষয়ে আপনার পোস্ট দেখেছি। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাই।
অতি সম্প্রতি, গত মাসের ২১ তারিখে ছিল আমাদের আরোহণের দিন। প্রতিবছরই চেষ্টা করি পাহাড়ে যাবার এবং আরোহণ করার। গত দুই বছর কিছুই করতে পারিনি। তাই কিছুটা সময় পেতেই সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাইনি।
নেপালের হিমালয়ের একটি ছোট পাহাড় লবুচে। এভারেস্টের পাশেই এটি। যারা মাউন্ট এভারেস্টে যায়, তারা এই পাহাড়টা কেউ বেছে নেয় আরোহণ করার জন্য। এর উচ্চতা ৬ হাজার ৯০ মিটার।
দেশ-বিদেশের মোট কতটি পর্বত আরোহণ করেছেন আপনি?
গুনতে হবে। ১৫ থেকে ১৮টির মতো হবে। ১৮টি হবে।
দেশ-বিদেশের পর্বত আরোহণের পার্থক্য তো রয়েছে? সেগুলো কেমন?
দুটি বিষয়, একটি হলো মাউন্টেইন আরেকটি হিল। আমাদের দেশে যেগুলো সেগুলো সবই হিল। এটি উচ্চতার ওপর নির্ভর করে। মাউন্টেইনে যেতে চাইলে নেপাল বা ভারতে যেতে হয়। হোয়াইট মাউন্টেইন হলো টোতে বরফ পড়ে থাকে।
আমাদের দেশে বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে কিছু হিল আছে, যেগুলো উচ্চতায় কম। সেখানে যাওয়া হয় কখনো কখনো প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে। নতুনদের নিয়ে যাই।
উচ্চতার পার্থক্যের কারণে পোশাকের পার্থক্য হয়, খাওয়াদাওয়ার পার্থক্য হয়। আমাদের এখানে তো গাড়ি নিয়ে চলে যাওয়া যায়।
আমরা যারা গরমের দেশে থাকি বা সমতলের মানুষ, তাদের জন্য হোয়াইট মাউন্টেইন বা বরফের পাহাড় আরোহণ অনেক কষ্টের, খুবই চ্যালেঞ্জিং। পাহাড়ে উঠতে যত ওপরে উঠতে থাকি তত অক্সিজেন লেভেল কমতে থাকে। তখন হার্ট ও ফুসফুসের ওপর চাপ পড়তে থাকে।
আপনি তো প্রশিক্ষণও দিচ্ছেন। সেটা কি আগে থেকেই? নাকি আপনার এভারেস্ট আরোহণের পর থেকে?
তরুণ প্রজন্মের মধ্যে একটি চাহিদা তৈরি হয়েছে। এটি আনন্দের বিষয় হয়ে উঠেছে। এভারেস্টে আরোহণ করার পর আমার দায়বদ্ধতা তৈরি হয়। সেখান থেকে আমি প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু করি।
অনেক পর্বত আরোহণ করেছেন; একটা ভয় তো নিশ্চয়ই কাজ করে।
পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে থাকে ভয়, আতঙ্ক। প্রতি পদক্ষেপে মনে হয় যে এটিই সবচেয়ে ভালো সময় এখান থেকে ফিরে যাওয়ার। পরের সময়টায় জানি না আমি বেঁচে থাকব কি না।
আমার এটা হয়, আমি বাসা থেকে যখন বিদায় নিয়ে যাই, বাসায় তো আর বলা যায় না, মনে মনে বলি এটাই হয়তো শেষবিদায়। পাহাড়ের প্রতিটা মুহূর্তেই বিপদের আতঙ্ক।
এভারেস্টে আমি বেশ কয়েকবার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি। অনেক সময় বোঝাও যায় না যে শরীরের সব শক্তি কীভাবে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। একদমই বলা যায় না, কখন চলে আসবে শেষমুহূর্ত।
পাহাড়ের একটা শিহরণ আছে। দূর থেকে দেখলেও সেই শিহরণটা পাওয়া যায়। পাহাড়ের একটা আলাদা ব্যাপার আছে। আমরা এটাকে বলি ‘মাউন্টেইন কলিং’। মাউন্টেইন একবার যদি ডাকে, সেটা ফিরিয়ে দেয়া অসম্ভব হয়ে যায়।
এভারেস্ট বাদ দিয়ে কোনো শিহরণ জাগানো গল্প যদি বলেন।
অনেক অনেক মুহূর্ত আছে। এ মুহূর্তে একটা মনে পড়ছে। আমি ককেশাস পর্বতমালায় গিয়েছিলাম, মাউন্ট এলবুর্জ, রাশিয়াতে, জর্জিয়ার শেষ সীমান্তে। যখন আমি সামিটের কাছাকাছি পৌঁছাই, তখন দেখি সেদিন পূর্ণিমা ছিল, পূর্ণিমার চাঁদটা অস্ত যাচ্ছে আর সূর্য উঠছে। এটি আমার কাছে মনে হয়, আমার এক মানবজীবনে এ রকম অভাবনীয় মুহূর্ত হয়তো আর পাব না।
এসবের জন্য মানসিক, শারীরিক এবং আর্থিক সক্ষমতার প্রয়োজন কেমন?
প্রথম ও প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা। পর্বতারোহণ খুবই ব্যয়বহুল একটি বিষয়। একটি ফুটবল হলে ২২ জন খেলতে পারে। ক্রিকেট ব্যাট আর বল হলেই অনেকে মিলে খেলতে পারে, কিন্তু পর্বতারোহণ একজনের জন্যই লাখ লাখ টাকা প্রয়োজন। এটার কাছেই আমরা বারবার হেরে যাচ্ছি।
আমি যেমন এইবার গেলাম। এখানে আমার একজন প্রশিক্ষণার্থী নিয়ে যেতে চেয়েছি এবং বিশেষ করে নারীকে। আমাদের কোনো পৃষ্ঠপোষক পেলাম না। পরে আমি আমার চেষ্টায় যেতে পারলেও কাউকে নিয়ে যেতে পারিনি।
এগুলো নিয়ে কখনও সরকারের কোনো পক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে আপনার বা তারা কোনো আগ্রহ দেখিয়েছে?
আমি আসলে পাইনি।
বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকরা কি বিষয়টি ওয়াকিবহাল নাকি তাদের বিষয়টি ভালো করে বোঝাতে হয়?
তাদের ভালো ধারণা আছে। আমরা আসলে যে এই পর্যন্ত এসেছি সেটা কর্পোরেটের সাহায্যে। আমি যখন এভারেস্টে গিয়েছি তখন ১১টি প্রতিষ্ঠান ছিল আমার স্পন্সর। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ভালোভাবে ওয়াকিবহাল।
আর কী কী সীমাবদ্ধতা দেখেন?
যারা পর্বত আরোহণ করবে, তাদের লাইফস্টাইল এবং মনোযোগ ঠিক থাকা দরকার। তরুণদের মধ্যে এ বিষয়টি নিয়ে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে মনে হয়।
এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে বা গ্লোবালাইজেশনের কারণে বিস্ময়টি কমে গেছে। আমার ব্যক্তিগত অনুধাবন হলো, কখনও কখনও আগ্রহ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে, মনোযোগ নষ্ট হয়ে যেতে পারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে।
পাহাড় একটা মনঃসংযোগের বিষয়। পাহাড় একসেস দেয়, যে ঠিক আছ তুমি, আমার কাছে আসতে পার। এই জায়গাটার জন্য একটা পাহাড় এবং পর্বতারোহীর মধ্যে যোগাযোগ দরকার, যার জন্য প্রয়োজন মনঃসংযোগ।
এর জন্য একটা লাইফ স্টাইল লাগে। কখন, কীভাবে খাচ্ছি, কখন ঘুম থেকে উঠছি, সারা দিন আমি কী করছি, এমনকি কী ভাবছি, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ।
কীভাবে আমি দড়িটা বাঁধব, কীভাবে হাঁটবো, কী খাব, আমি যখন বিপদে পড়ব তখন কী করব, কোনো অ্যাক্সিডেন্ট হয় যদি, তখন আমি কীভাবে নিজেকে বাঁচাব, এই কাজগুলো কিন্তু হাতে-কলমে শিক্ষা নিতে হয়। এটার জন্য আমাদের পাশের দেশে বিশেষ করে ভারতে যেতে হয়। এই প্রশিক্ষণ কিন্তু খুব ব্যয়বহুল, লম্বা একটা প্রশিক্ষণ। এই প্রোগ্রামে আমাদের কিছু নিজস্ব অর্থায়নে পাঠিয়েছি, কিন্তু ট্রেনিংয়ের পরবর্তী কাজ হলো পাহাড়ে যাওয়া। পৃষ্ঠপোষকতা দিতে পারছি না, তাই তরুণদের যাওয়া হচ্ছে না।
আপনারা যারা পর্বতারোহী, তাদের মধ্যে যোগাযোগ বা কোনো সংগঠন রয়েছে কি না?
আমরা একটা প্ল্যাটফর্মে আসতে পারিনি, তবে আমাদের যোগাযোগ আছে।
আমি কিছু প্রস্তাব করেছি যে সরকারের যুব উন্নয়ন নিয়ে অনেক ফান্ড আছে। খেলাধুলায়, কালচারাল কাজে ফান্ড আছে। সেখানে থেকে অ্যাডভেঞ্চার ফান্ড করতে হবে। যেসব ছেলে-মেয়ে পর্বত আরোহণে যেতে চায়, সেখানে একটা সুবিধা পাবে। এটা ভারতে আছে।
এই অর্জন কখনও কি মূল্যহীন মনে হয়? হীনম্মন্যতায় ভোগেন?
আমি কখনও হীনম্মন্যতায় ভোগি না। আমি আমার দেশের মানুষের কাছ থেকে যে পরিমাণ ভালোবাসা পেয়েছি, যে পরিমাণ গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছি, একজীবনে আর কিছু পাওয়ার নেই।
খারাপ লাগা আছে, আমরা ২০১১ সাল থেকে পর্বত আরোহণ করে আসছি। ১০ বছর কেটে গেল, কোথায় আছি, কোথায় থাকার কথা ছিল। এটা একটা স্লো প্রোসেস, তারপরও।
১১ ডিসেম্বর পর্বত দিবস। আপনারা এটা পালক করেন কি না?
কভিডের কারণে কিছুই করা হচ্ছে না। এবার পর্বত দিবসের স্লোগান ‘সাসটেইনেবল মাউন্টেইন ট্যুরিজম’। আমরা লেখা আহ্বান করেছি। পাহাড়ে যাওয়ার গল্প লেখার ভিত্তিতে আমরা পুরস্কার দেব। আমাদের দেশের পাহাড়ে ভ্রমণের সুযোগ পাবে বিজয়ীরা। আমরা ম্যারাথন দৌড়ের সঙ্গে যুক্ত। সেটাও থাকছে পর্বত দিবস উপলক্ষ্যে।
শেষে আর কিছু বলতে চান?
আমার দুই ধরনের কাজ। একটি হচ্ছে নিজেকে পাহাড়ের সঙ্গে রাখা, আরেকটি হচ্ছে যারা পাহাড়ে যেতে চায়, তাদের পাহাড়ের কাছে নিয়ে যাওয়া। দুভাবেই কিছু পরিকল্পনা করেছি। বাকিটা নির্ভর করছে পৃষ্ঠপোষকতার ওপর।
আরেকটি জিনিস বলতে চাই। আমরা সবাই পাহাড়ে যাব, কিন্তু ওই পাহাড়ে যাওয়াটা যেন আমাদের দায়িত্বশীল ভ্রমণ হয়।
আমি যে জায়গায় যাব, সেই পরিবেশের কোনো ক্ষতি করব না বা সেখানকার মানুষের সম্মান করব। সেখানকার প্রাণ-প্রকৃতির যেন কোনো ক্ষতি না হয় আমার দ্বারা।
ওই জায়গাটার জন্য তো আমরা যাচ্ছি, ওটা যদি না থাকত তাহলে তো যেতাম না, ওইটাই তো গুরুত্বপূর্ণ। ওখানে যে মানুষটি বছরের-পর-বছর বাস করছে, সেই মানুষটি ওখানে গুরুত্বপূর্ণ, তাদের শ্রদ্ধা করব, ভালোবাসব ও সম্মান করব। পর্বত দিবসে এটি আমার মিনতি আবেদন।
ছবি: নিশাত মজুমদারের ফেসবুক থেকে
মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ঝালকাঠিতে সাতটি দলের চার শতাধিক প্রতিযোগীর অংশগ্রহণে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সুগন্ধা নদীতে প্রতিযোগিতাটি মঙ্গলবার বিকেলে আয়োজন করে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন।
এক আয়োজক বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ২৬ মার্চ বিকেলে অনুষ্ঠিত নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতাটি সুগন্ধা নদীর ইকোপার্ক প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে কলেজ খেয়াঘাট সংলগ্ন মিনি পার্কে এসে শেষ হয়। এতে আলাদা সাতটি দলের ৪ শতাধিক প্রতিযোগী অংশ নেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার জিতেছে শেখেরহাট ইউনিয়ন পরিষদ। দ্বিতীয় হয় সদর উপজেলা পরিষদ এবং তৃতীয় হয় ঝালকাঠি বণিক সমিতি।’
নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন জেলা প্রশাসক ফারাহ্ গুল নিঝুম।
পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঝালকাঠির পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খান সাইফুল্লাহ পনির এবং সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা অনুজা মন্ডল।
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি।
ইসলামী ব্যাংকের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন ব্যাংকের ডিরেক্টর বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জয়নাল আবেদীন ও মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন এফসিএমএ।
ওই সময় অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর মুহাম্মদ কায়সার আলী ও ক্যামেলকো তাহের আহমেদ চৌধুরীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল নানান ধরনের মিষ্টির জন্য বিখ্যাত। এর মধ্যে রয়েছে টাঙ্গাইলের চমচম, কুমিল্লার রসমালাই, নেত্রকোণার বালিশ মিষ্টি বা নাটোরের কাঁচাগোল্লাসহ আরও অনেক ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি।
এসব মিষ্টি নিয়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে শুরু হয়েছে প্রথমবারের মতো ‘জাতীয় মিষ্টি মেলা’।
বার্তা সংস্থা ইউএনবির প্রতিবেদনে বলা হয়, খাদ্য সংস্কৃতি হিসেবে দেশের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টিগুলোকে সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি গত বুধবার শুরু করে এ মেলার আয়োজন। পাঁচ দিনব্যাপী মেলা চলবে ১০ মার্চ পর্যন্ত। এতে অংশ নিয়েছেন দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আসা ৬৪ এর অধিক মিষ্টি শিল্পীরা।
জাতীয় মিষ্টিমেলার দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার বিকেলে মূল অনুষ্ঠানের আগে পরিবেশিত হয় অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী। লোক-সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় সংগীত পরিবেশন করে সরকারি সংগীত কলেজ। সমবেত শাস্ত্রীয় সংগীত ‘রাগ বৈরাগী ভৈরব’ এবং সমবেত যন্ত্রসংগীত পরিবেশন করেন তারা।
এরপর পর্যায়ক্রমে পরিবেশিত হয় একক সংগীত। একক সংগীত পরিবেশন করেন ড. ফকির শহীদুল ইসলাম, শেখ খালিদ হাসান, মাইনুল আহসান, ছন্দা চক্রবর্তী, উত্তম কুমার সাহা, মফিজুর রহমান, এম এ মমিন, উর্বী সোম, সৌমিতা বোম, পূর্ণ চন্দ্র মণ্ডল, সাইফুল ইসলাম, এম এম ইউনুসুর রহমান ও গোলাম মোস্তফা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন আব্দুল্লাহ আল মনসুর।
প্রথম জাতীয় মিষ্টি মেলা ১০ মার্চ পর্যন্ত চলবে প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। প্রতিদিন বিকেল ৫টায় থাকবে লোক-সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
আরও পড়ুন:অমর একুশে বইমেলা শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল দুদিন আগে বৃহস্পতিবারই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ অনুমোদনক্রমে মেলার সময় বাড়ানো হয়েছে দুদিন। বর্ধিত সেই সময় শেষ হচ্ছে আজ।
তবে যে প্রত্যাশা নিয়ে মেলার সময় বাড়ানোর দাবি জানানো হয়েছিল সে অনুযায়ী বই বিক্রি হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীরা। তাদের ভাষ্য, বেইলি রোডের মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ড ও প্রাণহানির ঘটনা পাঠকদের আলোড়িত করেছে। এ অবস্থায় মেলা শেষ হওয়ার আগের দিন শুক্রবার হওয়া সত্ত্বেও ভিড় ও বিক্রি ছিল কম।
আবার অনেকে বলছেন, মেলার সময় বাড়ানোর তথ্যটা যে পরিমাণে প্রচার হওয়া দরকার ছিল সেই পরিমাণে হয়নি। তাই অনেকে জানেনই না যে মেলার সময় বেড়েছে।
সাধারণত প্রাণের অমর একুশে বইমেলা হয় ২৮ দিনে। তবে এ বছর অধিবর্ষ হওয়ায় মেলা একদিন বেশি পেয়ে দাঁড়ায় ২৯ দিনে। তার ওপর ২৯তম দিনটি বৃহস্পতিবার হওয়ায় প্রকাশকদের দাবি ছিল মেলার সময় বাড়িয়ে শনিবার পর্যন্ত নেয়ার। তাদের দাবি মেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ অনুমোদনক্রমে ২৭ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা দিয়ে বইমেলার সময় দুদিন বাড়ানো হয়।
এবারের বইমেলা শুরু থেকেই ছিল জাঁকজমকপূর্ণ। প্রথম সপ্তাহের পর থেকে মেলা পুরোদমে জমে ওঠে। এর মধ্যে আবার মেট্রো ট্রেন বইমেলায় যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা। দূরত্ব ও যানজট বিবেচনায় আগে যারা বইমেলায় আসতে নিরুৎসাহ বোধ করতেন এবার মেট্রো ট্রেন তাদেরকেও নিয়ে এসেছে বইমেলায়। ফলে বিগত বছরগুলোর তুলনায় দর্শনার্থীর ভিড় এবং ভালো বেচাবিক্রি হওয়ায় প্রকাশকদের মুখেও ছিল সন্তুষ্টির ছাপ।
এ ছাড়া আবহাওয়া ভালো থাকায় প্রকৃতির বিরূপ প্রভাবও পড়েনি মেলায়। ২২ ফেব্রুয়ারি অল্প সময়ের বৃষ্টি মেলার বেচা-বিক্রিতে কিছুটা বিঘ্ন সৃষ্টি করলেও তা প্রকাশক ও পাঠকদের বড় ভোগান্তির কারণ হয়নি। তবে পাঠকের অত্যধিক সমাগমের দিন মেলার ধুলোবালি কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলেছে দর্শনার্থীদের।
এদিকে বেশি ভালো বিক্রির প্রত্যাশায় মেলা দুদিন বাড়ানোর দাবি তোলা হলেও বইয়ের বিক্রি আশানুরূপ হয়নি। পাঠক সমাগমও ততোটা বাড়েনি। প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীরা এজন্য ভিন্ন ভিন্ন কারণ তুলে ধরেছেন।
শুক্রবার মেলায় কথা হয় তাম্রলিপি প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি কাউসার হোসেনের সঙ্গে। বেচাবিক্রি কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বেচাবিক্রি শুক্র-শনিবারের মতো তো হচ্ছেই না, নরমাল দিনের মতোও বলা যাচ্ছে না। অনেকে হয়তো জানেনই না যে মেলা দুদিন বেড়েছে। আবার এটাও হতে পারে- যারা বই কেনার তারা ২৯ তারিখের মধ্যেই কিনে ফেলেছেন।’
মাওলা ব্রাদার্সের বিক্রয়কর্মী তামিম হোসেন বলেন, ‘বিক্রি বা ভিড় অনেক কম। নগণ্যই বলা যায়। হতে পারে মেলার সময় বাড়ার খবরটা মানুষের মাঝে পৌঁছাতে যত প্রচার করা দরকার ছিল ততোটা প্রচার হয়নি। ফেসবুক থেকে মানুষ আর কতটাই বা নিউজ জানতে পারে।’
ঐতিহ্য প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি হাসেম আলী বলেন, ‘বেচা বিক্রি নেই বললেই চলে। মালিক পক্ষ যে প্রত্যাশা নিয়ে মেলা দুদিন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছিল তার ধারেকাছেও নেই বেচাবিক্রি। অর্ধেকেরও কম হবে বলে মনে হচ্ছে।’
তবে অন্বেষা প্রকাশনীর প্রকাশক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘শুক্রবার হিসেবে আজ পাঠক ও ক্রেতা সমাগম বেশি হওয়ার কথা ছিল। আমরাও সেরকম প্রত্যাশা করে মেলা দুদিন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছিলাম। আমাদের দাবি পূরণ হয়েছে। কিন্তু বেইলি রোডের মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ড অনেকের মনে প্রভাব বিস্তার করেছে। মেলায় হয়তো তার প্রভাবটা পড়েছে। আশা করি আজ ভালো বিক্রি হবে।’
মেলা শেষের আগের দিনে ২১৯ নতুন বই
এদিকে মেলার শেষ সময়েও নতুন বই নিয়ে আসছেন প্রকাশকরা। শুক্রবার বইমেলার ৩০তম দিনেও নতুন বই এসেছে ২১৯টি।
শুক্রবার হওয়ায় এদিন মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায় আর শেষ হয় রাত ৯টায়। তবে এদিন ছিল না কোনো শিশুপ্রহর। শনিবারও থাকবে না কোনো শিশুপ্রহর।
মেলার শুরু থেকে মূল মঞ্চে প্রতিদিনই থেকেছে আলোচনা এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। লেখক বলছি মঞ্চে থাকতো বই নিয়ে কথোপকথন। বর্ধিত দুই দিনে তা-ও থাকছে না। এই সময়টাতে মূলত বই বিক্রিই মুখ্য বিষয় থাকবে প্রকাশকদের।
সমাপনী দিনের অনুষ্ঠান
শনিবার সমাপনী দিনে মেলা শুরু হবে সকাল ১১টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৫টায় সমাপনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৪’-এর সদস্য সচিব ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম। প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
অনুষ্ঠানে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার এবং শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার দেয়া হবে।
আরও পড়ুন:বাঙালির প্রাণের অমর একুশে বইমেলায় বিদায়ের সুর বেজে উঠছে। মেলার বাকি আর মাত্র চার দিন।
এ কয়েকদিন রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে এ বছরের অমর একুশে গ্রন্থমেলা। এর মধ্য দিয়ে পাঠক, দর্শক ও প্রকাশকের আনাগোনায় মুখরিত থাকা বইমেলার ইতি টানা হবে, তবে বিক্রি নিয়ে সন্তুষ্ট নন প্রকাশকরা।
এদিকে এ বছর মেলা দুদিন বাড়ানোর জন্য বাংলা একাডেমির কাছে প্রকাশকরা আবেদন করলেও এখনও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমির সামনের বিভিন্ন স্টল ঘুরে পছন্দের বই খুঁজছেন পাঠকরা। বেশির ভাগ দর্শনার্থীই বই কিনতে মেলায় ভিড় করেছেন। মেলায় বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি।
পাশাপাশি নানা বয়সি মানুষ বইমেলায় এসেছেন। তাদের কেউবা মনের আনন্দে ঘুরে বেরিয়েছেন। কেউ বই দেখেছেন আবার কেউ কেউ প্রিয় লেখকের বই সংগ্রহ করেছেন। এভাবেই কেটেছে বইমেলার প্রতিটি দিন।
ব্যস্ততার কারণে সাধারণ দিনগুলোতে যারা মেলায় আসতে পারেননি, বন্ধের দিনে তারা ঠিকই হাজির হয়েছেন প্রাণের মেলায়। ফলে ছুটির দিনগুলোতে সবচেয়ে মুখরিত থাকত বইমেলা। এ দুদিন বইয়ের বিক্রিও অন্য দিনের তুলনায় বেশি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। এদিকে নতুন লেখকদের বইও বিক্রি হচ্ছে বেশ। তবুও প্রকাশকদের চোখে মুখে হতাশার ছাপ।
প্রকাশকরা বলছেন, মেলায় আগের তুলনায় বিক্রি অনেক কম হয়েছে। যদিও শেষ মুহূর্তে বেচাকেনা ও নতুন বই প্রকাশে ব্যস্ত পাঠক, লেখক ও প্রকাশকরা, তবে শেষ কয়েকদিন পাঠকের ঢল নামার প্রত্যাশা করেছেন তারা।
বিভিন্ন প্রকাশনীর বিক্রেতারা জানান, মেলার শেষ দিকে প্রতিদিন বিক্রি ভালো হয়। এখনও প্রতিদিন নতুন নতুন বই মেলায় আসছে।
মেলায় ঘুরতে আসা লিমন ইসলাম বলেন, ‘প্রথম দিকে কিছু বই সংগ্রহ করেছি। আবার এসেছি নতুন বই কিনেছি। বান্ধবীকে বই উপহার দিলাম। শেষের দিকে আবার আসব। আর অবশ্যই আমাদের সকলের বই পড়ার অভ্যাস করতে হবে।’
নারায়ণগঞ্জ থেকে বইমেলায় এসেছেন লাইজু লিজা। তিনি বলেন, ‘বইমেলা আমাদের প্রাণের মেলা। এ মেলা এক মাস কেন, সারা বছর থাকা উচিত।’
মাওলা ব্রাদার্সের প্রকাশক আহমেদ মাহমুদুল হক বলেন, ‘প্রথম দিকের চেয়ে এবার শেষের দিকে এসে মেলায় বিক্রি বেড়েছে। মেট্রোরেলের নতুন মাত্রা এবারের বইমেলায় বই বিক্রি বাড়ার প্রধান কারণ। আমরা তরুণ লেখকদের বইগুলো তরুণদের হাতে দিতে পারছি, তবে এ বছর এখনও ব্যাগভর্তি বই ক্রেতা দেখছি না।’
এদিকে রোববার অমর একুশে বইমেলার ২৫তম দিনে মেলা শুরু হয় বিকেল ৩টায় এবং চলে রাত ৮টা ৩০ পর্যন্ত। এদিন নতুন বই এসেছে ৯৬টি।
স্থপতি মোবাশ্বের হোসেনের স্বরণে আলোচনা অনুষ্ঠান
বিকেল ৪টার দিকে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কাজী নূরুল করিম দিলু। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন তানভীর নেওয়াজ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেবুন নাসরীন আহমেদ।
প্রাবন্ধিক বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা স্থপতি মোবাশ্বের হোসেনের কর্মপরিধি ছিল বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ক্র্যাক প্লাটুনের অন্যতম গেরিলা সদস্য হিসেবে একের পর এক দুঃসাহসিক অপারেশনে অংশ নিয়েছেন তিনি। তার পরিকল্পিত নকশায় নির্মিত হয়েছে দেশের অনেক দৃষ্টিনন্দন ভবন ও স্থাপনা।
‘গণমানুষের অধিকারের বিষয়ে মোবাশ্বের হোসেন ছিলেন আপসহীন। দেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ভবন সুরক্ষা, পরিবেশ রক্ষা, শিক্ষা, ক্রীড়া এমনকি ভোক্তা অধিকার সুরক্ষা থেকে শুরু করে প্রায় সকল ক্ষেত্রেই তিনি রেখেছেন সক্রিয় ভূমিকা।’
আলোচক বলেন, বাংলাদেশের বহুবিধ স্থাপত্য প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে বীর মুক্তিযোদ্ধা স্থপতি মোবাশ্বের হোসেনের নাম। ব্যক্তিমানুষ হিসেবে অত্যন্ত আন্তরিক মোবাশ্বের হোসেন দেশ ও মানুষের কল্যাণের জন্য সব সময় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক জেবুন নাসরীন আহমেদ বলেন, বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী স্থপতি মোবাশ্বের হোসেনের চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্যই ছিল দৃঢ়তা, সততা, সাহসিকতা এবং দেশ ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা। তার কর্মমুখর জীবন ও আদর্শ সবার জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
বই-সংলাপ ও রিকশাচিত্র প্রদর্শন মঞ্চের আয়োজন
এ মঞ্চে বিকেল ৫টার দিকে কবি ও চলচ্চিত্রকার মাসুদ পথিকের কবিতা ও চলচ্চিত্র বিষয়ে তার সঙ্গে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
এদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি এজাজ ইউসুফী, জান্নাতুল ফেরদৌসী, উৎপলকান্তি বড়ুয়া, প্রসপারিনা সরকার, অংকিতা আহমেদ রুবি, রিশাদ হুদা, সৌমিত্র দেব, অরবিন্দ চক্রবর্তী, আহসান মালেক, রওশন ঝুনু, সমর চক্রবর্তী, গিরিশ গৈরিক এবং আহমেদ জসিম।
ছড়া পাঠ করেন ছড়াকার আখতার হুসেন, আমীরুল ইসলাম, লুৎফর রহমান রিটন, ফারুক হোসেন, আনজীর লিটন, মাহমুদউল্লাহ, সারওয়ার উল আলম, রিফাত নিগার শাপলা এবং তপংকর চক্রবর্তী। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মাহমুদা আখতার, চিং হ্লা মং চৌধুরী এবং চৌধুরী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর।
এবারের বইমেলায় ৬৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৯৩৭টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বাংলা একাডেমির মাঠে ১২০টি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৩টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৫১৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৬৪টি স্টল বরাদ্দ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ বছর মোট ৩৭টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গত বছর ৬০১টি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মোট ৯০১টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
আজকের বইমেলা
২৬শে ফেব্রুয়ারি সোমবার অমর একুশে বইমেলার ২৬তম দিন মেলা শুরু হবে বেলা ১২টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। এদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণ: আবুবকর সিদ্দিক এবং স্মরণ: আজিজুর রহমান আজিজ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।
প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন যথাক্রমে ফরিদ আহমদ দুলাল এবং কামরুল ইসলাম। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন মামুন মুস্তাফা, তৌহিদুল ইসলাম, মো. মনজুরুর রহমান এবং আনিস মুহম্মদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন কবি আসাদ মান্নান।
আরও পড়ুন:অসাম্প্রদায়িক চেতনায় আবারও নিজেদের শাণিত করে পরম শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় ভাষাশহিদদের স্মরণ করলেন অস্ট্রিয়ার প্রবাসী বাঙালিরা।
দেশটির রাজধানী ভিয়েনার হেলবেগটাসে অস্ট্রিয়া আওয়ামী লীগের নিজস্ব কার্যালয়ে বুধবার বিকেলে অস্থায়ীভাবে নির্মিত শহীদ মিনারের বেদিতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করা হয়।
পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের পর শহিদদের স্মরণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অস্ট্রিয়া আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি খন্দকার হাফিজুর রহমান নাসিম। সঞ্চালনা করেন, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান শ্যামল।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি, অস্ট্রিয়া প্রবাসী মানবাধিকার কর্মী, লেখক, সাংবাদিক এম. নজরুল ইসলাম।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অস্ট্রিয়া বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি রবিন মোহাম্মদ আলী, অস্ট্রিয়া আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শ্রী রুহী দাস সাহা, শফিকুর রহমান বাবুল, মনোয়ার পারভেজ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব খান শামীম, সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম কাঞ্চন, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক জহির তুহিন।
অনুষ্ঠানে এম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘একুশে আমাদেরকে ন্যায়ের পক্ষে দৃঢ় থাকতে এবং মাথা নত না করতে শিখিয়েছে। একুশ আমাদের ঐক্য ও শক্তির প্রতীক। একুশের চেতনায়ই আজ এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।’
খন্দকার হাফিজুর রহমান নাসিম বলেন, ‘এই একুশে বরকত, সালাম, জব্বার, রফিকরা ভাষার দাবিতে রক্ত দিয়েছিল। একুশ আমাদেরকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখিয়েছে।’
বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাঙালির উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানে অমর একুশের গান, মুক্তিযুদ্ধের গান ও দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন স্থানীয় শিল্পীরা।
আরও পড়ুন:অমর একুশে বইমেলা ২০২৪-এ প্রকাশিত হয়েছে জনপ্রিয় স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান জি বাংলা'র মীরাক্কেল দশের অন্যতম ফাইনালিস্ট আফনান আহমেদ রাশেদের রম্য বই ‘ফিলিং চিলিং’।
অমর একুশে বইমেলার মাঠে শিখা প্রকাশনী মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছে।
শিখা প্রকাশনীর ৩০০, ৩০১, ৩০২, ৩০৩ নম্বর স্টলে ফিলিং চিলিং বইটি পাওয়া যাচ্ছে। ঘরে বসেও পাঠকরা অনলাইন বইয়ের শপ রকমারি, প্রথমা, বইফেরী সহ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে বইটি সংগ্রহ করতে পারবেন।
বইটির লেখক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী আফনান আহমেদ রাশেদ ছিলেন মীরাক্কেল সিজন টেনের অন্যতম ফাইনালিস্ট। পড়াশোনা করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকায়। পেশাগত জীবনে স্ট্যান্ড-আপ-কমেডিয়ান, স্ক্রিপ্ট রাইটার।
তরুণ এই লেখক এবং স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ানের ভাষ্যমতে, দর্শকদের ভালোবাসা তাকে বিমোহিত করে তাই তিনি নিজেকে রেডিও, টেলিভিশন কিংবা মঞ্চে এখন সরব রেখেছেন।
লেখক রাশেদ বলেন, রম্য কিংবা জোকসের বই মানেই অন্যরকম ভালোলাগা, আনন্দ কিংবা প্রাণবন্ত অনূভুতির চমৎকার বহিঃপ্রকাশ ফিলিং-চিলিং বই ।
রাশেদ বলেন, মীরাক্কেলের ভেতর বাইরে নানান গল্প নিয়ে লিখেছেন ২০২২ সালে মীরাক্কেল এক্সপ্রেস বইটি। সেই সময়ে মানুষের ভালোবাসায় বইটি প্রচুর পাঠক সমাগম ও জনপ্রিয়তা পায়। এই জন্য এবার তিনি চেষ্টা করেন মানুষকে আনন্দ দেয়ার। এইজন্য তার লেখা এই ভিন্নধর্মী বই ফিলিং-চিলিং। বইটিতে রয়েছে দুর্দান্ত সব স্যাটায়ার, সেন্স অব হিউমার, কমিক পাঞ্চলাইন, ক্রিঞ্চ কমেডি সহ বিভিন্ন জোক।
জি বাংলার রিয়্যালিটি শো মীরাক্কেলের সিজন টেনের অন্যতম ফাইনালিস্ট ছিলেন রাশেদ। মীরাক্কেল খ্যাত রাশেদ এর জনপ্রিয় বই "মীরাক্কেল এক্সপ্রেস"। যা ২০২২ সালে অমর একুশে বইমেলায় পাঠকমহলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান, স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে কাজ করার পর লেখক হিসেবে তার আবির্ভাব হয়েছে।
মন্তব্য