ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ময়লাবাহী গাড়ির সংখ্যা ৩৩০টি। অথচ স্থায়ী চালক আছেন অর্ধেকেরও কম, ১২৯ জন। যান্ত্রিক ত্রুটি না থাকলে শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সব গাড়িই ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়। তাহলে বাকি অর্ধেক গাড়ি চালান কারা?
বাস্তবতা হলো, দুই সিটির অর্ধেকের বেশি গাড়ি চালান মাস্টাররোল ও দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে নিয়োজিত চালকরা। স্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত চালকদের বাইরে যারা ময়লা বহনকারী ভারী ট্রাকগুলো চালান, তাদের একটা বড় অংশই অপেশাদার। তদের অধিকাংশেরই ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই।
আবার যারা স্থায়ী নিয়োগ পেয়ে চালক হিসেবে আছেন, তাদেরও একটা অংশ নিজে গাড়ি না চালিয়ে চাবি তুলে দেন অন্যের হাতে। সেই প্রক্সি চালকও আবার লাইসেন্সধারী নন।
দুই সিটির পরিসংখ্যান ও সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, চালক সংকট এবং স্থায়ী চালকদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে ময়লাবাহী ভারী ট্রাকগুলো চালাচ্ছেন অদক্ষরা। এর জনবহুল নগরে হামেশাই ঘটছে দুর্ঘটনা। প্রাণ হারাচ্ছে নিরীহ মানুষ।
গত সপ্তাহে ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নটর ডেম কলেজের এক শিক্ষার্থী এবং একজন সাবেক সংবাদকর্মী মারা যান।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, অপেশাদার এবং লাইসেন্সবিহীন ব্যক্তিদের দিয়ে ময়লাবাহী গাড়িগুলো চালানোর কারণে সড়কে দুর্ঘটনা বাড়ছে। সাম্প্রতিক দুটি মৃত্যু সেটাই প্রমাণ করে।
গত ২৪ নভেম্বর গুলিস্তানে বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে হল মার্কেটের পাশের সড়কে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ হারান নটর ডেম কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাঈম হাসান।
ঘটনাস্থল থেকেই রাসেল নামে চালককে আটক করা হয়। রাসেলের কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে পুলিশ জানিয়েছে, তিনি মাস্টাররোলে একসময় পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। সেই চাকরি আগেই চলে গেছে। তিনি হারুন নামে একজনের কাছ থেকে গাড়িটা নিয়ে চালাচ্ছিলেন।
পুলিশ ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, হারুনও দুর্ঘটনা ঘটানো গাড়িটির প্রকৃত চালক নন। তিনিও পরিচ্ছন্নতাকর্মী। হারুন গাড়িটি নিয়েছেন স্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত চালক ইরানের কাছ থেকে। রাসেল ও হারুন গ্রেপ্তার হলেও পলাতক রয়েছেন ইরান।
নাঈমের মৃত্যুর পর থেকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আবার আন্দোলন শুরু করেন বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালেই বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর পান্থপথে আহসান কবীর খান নামে এক সাবেক সংবাদকর্মী মারা যান। উত্তর সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী একটি গাড়ির চাপায় তিনি প্রাণ হারান।
চালক হানিফ গাড়ি ফেলে পালিয়ে গেলেও গত শনিবার তাকে চাঁদপুর থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। গ্রেপ্তারের পর হানিফ র্যাবকে জানিয়েছেন, তিনি উত্তর সিটি করপোরেশনের বেতনভুক্ত চাকরিজীবী নন। সিটি করপোরেশনের গাড়ি থেকে তেল চুরি করে বিক্রিই হানিফের আয়ের উৎস।
দক্ষিণে গাড়ি ১৮৫, চালক ৯৫
বাসা, মার্কেট, প্রতিষ্ঠান থেকে ময়লা নিয়ে রাখা হয় সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনে। সেখান থেকে ময়লা সংগ্রহ করে ময়লাবাহী ভারী ট্রাক মাতুয়াইলে ভাগাড়ে ফেলে।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, তাদের ময়লাবাহী ভারী ট্রাকের সংখ্যা ১৮৫টি। এর বিপরীতে তাদের নিয়োগ করা চালকের সংখ্যা ৯৫। এই ৯৫ জনের মধ্যে ১৯ জন গত মাসে নিয়োগ পেয়েছেন।
বাকি গাড়িগুলো দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন কর্মচারী দিয়ে চালানো হয়।
সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডের পাশে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ির স্ট্যান্ড। সোমবার ওই স্ট্যান্ডে গিয়ে কথা হয় কয়েকজন চালকের সঙ্গে। তারা জানান, পর্যাপ্ত চালক না থাকায় সিটি করপোরেশনের যেসব কর্মচারী গাড়ি চালাতে পারেন, তাদের দিয়ে ভারী ট্রাকগুলো চালানো হয়।
এ ছাড়া স্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত কয়েকজন অসাধু চালক নিজেরা না চালিয়ে অন্যকে দিয়ে গাড়ি চালান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একজন পুরোনো চালক নিউজবাংলাকে বলেন, যারা প্রকৃত চালকের বদলি হিসেবে চালান, তারা কিছু টাকা ওই চালকের কাছ থেকে পান। বাকি টাকা বরাদ্দ তেলের অংশ বিক্রি করে তারা আয় করেন। সিটি করপোরেশন এদের কোনো টাকা দেয় না।
মহিউদ্দিন নামে এক চালক বলেন, ‘রাতে জ্যাম ঠেলে দুই থেকে তিনটি ট্রিপ দেয়া যায়। প্রতি ট্রিপ পৌঁছানোর পর স্লিপ দেয়া হয়। সেই স্লিপ অনুযায়ী আমরা তেল পাই। ট্রিপ প্রতি গড়ে এক থেকে দুই লিটার তেল থাকে।’
অনেক সময় গাড়ির কাজ নিজেকেই করাতে হয় বলে দাবি করেন এই চালক। এতে অনেক সময়ই তেল বিক্রি করে পাওয়া টাকা ও গাড়ি মেরামতের খরচ সমান সমান হয়ে যায়।
মো. আলী নামে এক চালক বলেন, ‘আমাদের চালকের সংখ্যা কম এটা সত্য। কিন্তু বর্তমান মেয়র উদ্যোগ নিলে এ সমস্যা থাকবে না। আমি ’৯৬ সাল থেকে গাড়ি চালাই। আমার গাড়ি কোনোদিন কাউকে দেইনি। অন্য কেউ দিলে সেটা আমার জানা নেই।’
এই চালকের সঙ্গে কথা বলার সময় এগিয়ে আসেন আরেক চালক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, অ্যাক্সিডেন্ট হওয়ার পর নিয়োগ পাওয়া সব চালকই গাড়ি চালাচ্ছেন। আগে তাদের অনেকে নিজেরা না চালিয়ে অন্যদের দিয়ে গাড়ি চালাতেন।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের স্থায়ী নিয়োগ পাওয়া চালকদের বাইরে যারা গাড়ি চালান, তারাও সিটি করপোরেশনের কর্মচারী, অন্য কাজ করেন। বাড়তি হিসেবে দৈনিক মজুরিতে তারা ময়লার গাড়ি চালিয়ে থাকেন।’
দৈনিক মজুরিতে যারা গাড়ি চালান, তারা কত করে পান এবং প্রত্যেকের ভারী যান চালানোর লাইসেন্স আছে কি না সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি আবু নাছের।
চালক সংকটের মাঝে কীভাবে ময়লাবাহী গাড়িগুলো সচল রাখা হয়েছে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে চাননি দক্ষিণ সিটির মহাব্যবস্থাপক (পরিবহন) বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস।
নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানের মৃত্যুর ঘটনায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটিতে বিপুল চন্দ্র বিশ্বাসও রয়েছেন। গত ২৪ নভেম্বর গঠিত কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন জমার আগে কোনো মন্তব্য করতে চান না বিপুল চন্দ্র।
উত্তরে গাড়ি ১৪৭, চালক ৩৪
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) ময়লা বহনকারী গাড়ির সংখ্যা ১৪৭টি। তাদের মধ্যে স্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত চালক ৩৪ জন। এর বাইরে ৬৭ জন চালক আছেন, যারা মাস্টাররোলে চালক হিসেবে চাকরি করেন। বাকি ৪৬ জন দক্ষ শ্রমিক, যারা উত্তর সিটিতে চাকরি করেন। বাড়তি কাজ হিসেবে গাড়ি চালান।
১৪৭ জন চালকেরই গাড়ি চালানোর লাইসেন্স আছে বলে দাবি করেন ডিএনসিসির মহাব্যবস্থাপক(পরিবহন) মিজানুর রহমান। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেক চালকের লাইসেন্স আছে। সেকেন্ডারি স্টেশন থেকে তারা রাতের বেলা গাড়িতে করে আমিনবাজার পেরিয়ে বুলিয়ারপুর ল্যান্ডফিল্ডে ময়লা ফেলে আসে।’
ময়লাবাহী গাড়িগুলো ভারী যান হলেও পান্থপথে গাড়িচাপায় একজনের মৃত্যুতে মারুফ নামে যে চালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তার ভারী গাড়ি চালানোর লাইসেন্স ছিল না। তার কাছে হালকা যান চালানোর লাইসেন্স ছিল।
তিনি কীভাবে ভারী গাড়ি চালাচ্ছিলেন-এমন প্রশ্নে মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি তদন্তনাধীন। তদন্ত শেষে বলা যাবে।’
ময়লাবাহী গাড়ি নিয়ে অব্যবস্থাপনার সঙ্গে যারা যারা যুক্ত, প্রত্যেককে বিচার এবং জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছেন বুয়েটের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক সারওয়ার জাহান। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ময়লাবাহী গাড়িগুলোর বেপরোয়া চলাচল, উল্টোপথে যাওয়া, অদক্ষ চালক দিয়ে চালানো- সব অভিযোগ পুরনো। এর ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। শুধু চালক-শ্রমিক নন, যারা এই অব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত, তাদের চিহ্নিত করে বিচার করতে হবে। যাদের অবহেলায় এগুলো হচ্ছে, তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।'
চলমান তাপপ্রবাহে সারা দেশের সঙ্গে পুড়ছে রাজধানী ঢাকাও। প্রচণ্ড গরমে দুর্বিষহ নগর জীবন। এ অবস্থায় রাজধানীর সড়ক-মহাসড়কে পানি ছিটাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ডিএনসিসির চিফ হিট অফিসারের পরামর্শে এমন উদ্যোগ নিয়েছে সিটি কর্তৃপক্ষ।
শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বায়ু দূষণ রোধ ও তীব্র দাবদাহে শহরকে ঠাণ্ডা রাখতে ডিএনসিসির ওয়াটার স্প্রে (পানি ছিটানো) কার্যক্রম পরিদর্শন করেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।
এ সময় তিনি বলেন, ‘দুটি স্প্রে ক্যানন প্রধান সড়কে পানি ছিটাবে। এগুলো বেশ বড় হওয়ায় গলির সড়কে প্রবেশ করতে পারবে না৷ গলির সড়কে পানি ছিটানোর জন্য দশটি ব্রাউজার কাজ করবে। এগুলোর মাধ্যমে সড়কগুলো ভিজিয়ে ঠাণ্ডা রাখা হবে।
‘এছাড়াও ডিএনসিসির পার্কগুলোতে স্প্রে ক্যাননের মতো কৃত্রিম বৃষ্টির ব্যবস্থার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছি। এক সপ্তাহের মধ্যে পার্কগুলোতে কৃত্রিম বৃষ্টির ব্যবস্থা করা হবে।’
এ সময় তিনি বলেন, ‘চিফ হিট অফিসার (সিএইচও) বুশরা আফরিনের পরামর্শে চলমান তীব্র দাবদাহে জনগণকে স্বস্তি দিতে সড়কে পানি ছিটানো এবং ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডে বিনামূল্যে খাবার পানি সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘প্রতিটি ওয়ার্ডে তিনটি বিশেষ ভ্যানগাড়ি (৫০০ লিটার পানির ট্যাংক সংবলিত) পথচারীদের পানি পান করানোর জন্য নামানো হয়েছে। ভ্যানগুলো বিশুদ্ধ খাবার পানি নিয়ে ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরবে। এই ভ্যানগুলো ছোট আকারে করা হয়েছে যেন শহরের অলিগলিতে প্রবেশ করতে পারে।’
চিফ হিট অফিসারের কার্যক্রম সম্পর্কে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘চিফ হিট অফিসার আমাদের পরামর্শ দিচ্ছেন। হিট অফিসার একজন একক ব্যক্তি। তিনি তো কাজগুলো বাস্তবায়ন করবেন না। তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু কাজগুলো আমাদের সবাইকে করতে হবে। তার পরামর্শেই জনগণকে স্বস্তি দিতে আমরা এই কাজগুলো করছি।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অনেকে বলছেন যে চিফ হিট অফিসার সিটি করপোরেশন থেকে বেতন পাচ্ছেন। বাস্তবে সিটি করপোরেশন থেকে তিনি একটি টাকাও পান না। এমনকি সিটি করপোরেশনে তার কোনো বসার ব্যবস্থাও নেই।
‘হিট অফিসার নিয়োগ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান অ্যাড্রিয়েন আরশট-রকফেলার ফাউন্ডেশন রেসিলিয়েন্স সেন্টার (আরশট-রক)। প্রতিষ্ঠানটি সারা বিশ্বে সাতজন চিফ হিট অফিসার নিয়োগ করেছে এবং তারা সবাই নারী।’
ওয়াটার স্প্রে পরিদর্শনকালে অন্যান্যের মধ্যে ডিএনসিসি'র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী ও প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ফিদা হাসান উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানীর বনানীতে মাঝ সড়কে চলন্ত অবস্থায় যাত্রীবাহী বাসে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নির্বাপনে কাজ করে।
জানা গেছে, শনিবার বিকেলে জে কে এন্টারপ্রাইজ পরিবহনের একটি বাস বনানী আর্মি স্টেডিয়ামের সামনে একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিলে মোটরসাইকেলের ট্যাঙ্কি বিস্ফোরিত হয়ে বাসটিতে আগুন ধরে যায়।
ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বরত কর্মকর্তা খালেদা ইয়াসমিন জানান, বিকেল ৪টা ২ মিনিটে যাত্রীবাহী একটি বাসে আগুন লাগার খবর আসে। পরে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নির্বাপন করে। প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা-শেরপুর রুটে চলাচল করা জে কে এন্টারপ্রাইজ পরিবহনের বাসটি বনানী আর্মি স্টেডিয়ামের সামনে একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। পরে মোটরসাইকেলটিকে টেনে-হিঁচড়ে বাসটি অনেক দূর নিয়ে আসে। এতে মোটরসাইকেলের তেলের ট্যাঙ্ক বিস্ফোরিত হয়ে বাসটিতেও আগুন লেগে যায়। এ ঘটনায় মোটরসাইকেলের চালক গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
বিএনপির সঙ্গে দাসত্বের তকমা লেগে আছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ক্ষমতা পাওয়ার জন্য বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করে সাবেক ক্ষমতাসীন দলটি।
জাতীয় নেতা শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের ৬২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তিন নেতার মাজারে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এ কথা বলেন তিনি।
বিএনপির বিষয়ে কাদের বলেন, ‘তারা জনগণের সমর্থনকে মূল মনে করে না। তারা মনে করে যে, বিদেশি প্রভুরদের দাসত্ব করলে ক্ষমতা রক্ষা করা যায়, ক্ষমতায় যাওয়া যায়।’
তার অভিযোগ, দাসত্ব করে কীভাবে ক্ষমতায় যাওয়া যায়, সেই দুরভিসন্ধি করছে বিএনপি।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বিএনপিকে গণতান্ত্রিক দল আমি মনে করি না। কারণ তাদের ইতিহাসটাই হলো গণতন্ত্র হত্যার। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কোনো নজির নেই। তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, প্রহসনে পরিণত করেছে এবং গণতান্ত্রিক বিধি-বিধান তারা দলের মধ্যে কোনোদিন মানেনি।
‘আজকে দলটির যে নেতারা বড় কথা বলেন, তারা কবে দলীয় কাউন্সিল করেছে এবং তাদের কোথায় কাউন্সিল হয়েছে? সাত-আট বছর আগে লা মেরিডিয়ানে তাদের কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিং হয়েছে। ৫০১ জনের জাম্বুজেট মার্কা কমিটি। কাজেই যাদের নিজেদের দলের ভেতরেই গণতন্ত্র নেই, তারা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে, এ আশা আমরা করি না।’
তিন নেতার মাজারে শনিবার আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদন করে। প্রথমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে ও পরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ওই সময় উপস্থিত ছিলেন দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা।
পরে সাংবাদিকদের কাছে বাংলার সাধারণ মানুষের কল্যাণে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের অবদান তুলে ধরেন কাদের।
তিনি বলেন, ‘তিনি (শেরো বাংলা) আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন। এ দেশে সাধারণ মানুষের মাঝে যারা রাজনীতিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম জাতীয় নেতা শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক। সাধারণ মানুষকে এই দেশে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিলেন সর্বকালের সবার সেরা বাঙালি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। শেরে বাংলাকে গ্রাম- বাংলার কৃষকরা কোনোদিন ভুলতে পারবে না।
‘তিনি চিরদিন তাদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন প্রজাস্বত্ব আইন এবং ঋণ সালিশি বোর্ড গঠন করে তিনি মহাজনদের নিপীড়ন-অত্যাচার থেকে বাংলার কৃষককূলকে রক্ষা করেছিলেন। সে জন্য তিনি এখনও স্মরণীয় হয়ে আছেন। আজকের দিনে আমাদের যে প্রত্যয়, যে অঙ্গীকার, সেটা হচ্ছে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক—অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনের।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর খিলগাঁওয়ের গোড়ানে খেলতে গিয়ে একটি ভবনের ছাদ থেকে পড়ে এক শিশু নিহত হয়েছে।
শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে পাঁচ তলা ভবনটির ছাদ থেকে পড়ে নিহত হয় সে।
নিহত শিশুর নাম খাদিজা আক্তার (৫)। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন শিশুটির ফুফা মোহাম্মদ ইসহাক মিয়া (২০ বছর)।
খাদিজার বাবা মোহাম্মদ ফয়সাল আহমাদ জানান, দুপুরে পাঁচ তলার ছাদে খাদিজা খেলাধুলা করার সময় ছাদ থেকে নিচে পড়ে যায়। এ সময় খাদিজার ফুফা দৌড়ে ধরতে গেলে তিনিও নিচে পড়ে যান।
তিনি জানান, পরে তাদেরকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় খাদিজা রাত সাড়ে ৮টার দিকে মারা যায় এবং ফারিয়ার ফুফাকে ভর্তি রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া থানা এলাকায়। খিলগাঁওয়ের গোড়ান নবাবীর মোড় বতর্মানে১৪৮ /১ রায়হান সাহেবের বাড়ির ভাড়াটিয়া আমরা।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মহম্মদ বাচ্চু মিয়া বলেন, শিশুটির মরদেহ ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্ত ছাড়া স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে বলে খিলগাঁও থানার সাথে কথা হয়েছে।
গ্যাস পাইপলাইনে জরুরি কাজের জন্য শনিবার সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে।
গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছে। খবর ইএনবির
তিতাস জানায়, যেসব এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে সেগুলো হলো- শনির আখড়া, বড়ইতলা, ছাপড়া মসজিদ, দনিয়া, জুরাইন, ধোলাইরপাড় ও কদমতলী।
এ সময় আশপাশের এলাকায় গ্যাস সরবরাহে চাপ কম থাকতে পারে বলেও জানিয়েছে তিতাস। গ্রাহকদের সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে কোম্পানি।
রাজধানীর মুগদায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একটি ময়লার গাড়ির ধাক্কায় এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে।
মুগদার বড়বাজারের সামনে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো মাহিন আহমেদ (১৩) মতিঝিল সরকারি আইডিয়াল স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল। সে পরিবারের সঙ্গে উত্তর মুগদার মদিনাবাগে একটি বাসায় থাকত।
মাহিনের খলাত ভাই হিমেল জানান, মাহিনের বাবা একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে মাহিন দ্বিতীয়। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল মাহিন, ওই সময় ময়লার গাড়িটি তাকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়।
পরে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে মাহিনের মৃত্যু হয়।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মাসুদ মিয়া জানান, ময়নাতদন্তের জন্য শিশুটির মরদেহ ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে রাখা হয়েছে এবং বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানাকে জানানো হয়েছে।
এ ঘটনায় সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়িটি জব্দ করে চালককে আটক করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:মেট্রোরেলের চলমান প্রকল্পটি সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে স্থানীয় নাগরিক সমাজ।
বৃহস্পতিবার সকালে সাভার উপজেলা পরিষদের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় মেট্রোরেলের এমআরাটি-৫ ও এমআরটি-৬-এর চলমান প্রকল্পটি হেমায়েতপুর থেকে নবীনগর জাতীয় স্মৃতিসৌধ অথবা দিয়াবাড়ি থেকে সাভারের রেডিও কলোনি পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এই প্রকল্পে সরকার যদি কোনোরকম জটিলতা মনে করে তাহলে এমআরটি-৬ প্রকল্প উত্তরা দিয়াবাড়ি থেকে বিরুলিয়া হয়ে সাভার রেডিও কলোনি পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা যেতে পারে। পর্যায়ক্রমে তা নবীনগর জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবিও জানান তারা।
কর্মসূচিতে সড়কের উপর দিয়ে সম্ভব না হলে মাটির নিচ দিয়ে মেট্রোরেলের যে প্রকল্প রয়েছে, সেই প্রকল্পে সাভারকে যুক্ত করার দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধন কর্মসূচির সভাপতিত্ব করেন সাভার নাগরিক কমিটির সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সভাপতি কামরুজামান খান।
তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেলের প্রকল্প সাভার পৌর এলাকার শেষ সীমানা পর্যন্ত সম্প্রসারণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বরাবর আবেদন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিবকে এ ব্যাপারে অবগতপত্র দেয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে রেলমন্ত্রী, সচিব ও মহাপরিচালকে পত্র দিয়ে এবং সরাসরি সবকিছু অবগত করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুবিধাবঞ্চিত সাভারবাসী রেলসেবা পাওয়ার আশায় বুক বেঁধেছে। সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সাভারের লাখ লাখ মানুষ মেট্রেরেলের সুবিধা প্রত্যাশা করেন। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন সাভার উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রোকেয়া হক, সাভার নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষানুরাগী সালাহউদ্দিন খান নঈম, সাভার পৌর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মিজানুর রহমান মাসুদ, সংস্কৃতিকর্মী স্বরণ সাহা, প্রভাত ডি রোজারিও, বন্ধুরহাট যুব সংগঠনের আলোকুর রহমান, জাগরণী থিয়েটারের সভাপতি আজিম উদ্দিনসহ আরও অনেকে।
মন্তব্য