আনুষ্ঠানিকভাবে ভোট বর্জন করলেও তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বেশ ভালো ফল করেছেন বিএনপির নেতারা। রোববারের এই ভোটে সারা দেশে অন্তত ৯৬ জন বিএনপি নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জিতে এসেছেন।
বিভাগওয়ারি হিসাব করলে বিএনপির এই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সবচেয়ে ভালো করেছেন রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে। রংপুর বিভাগে জিতেছেন ২৪ জন আর রাজশাহী বিভাগে ২০ জন নেতা।
এ ছাড়া সিলেট বিভাগে ১৩ জন, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন করে এবং খুলনা বিভাগে জিতেছেন ৯ জন নেতা। কেবল বরিশাল বিভাগে কেউ জিততে পারেননি।
তৃণমূলের ভোটে বিএনপি নেতাদের জিতে আসার বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশের সাধারণ জনগণ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। তারা জনগণের সরকার চায়। তারই প্রতিচ্ছবি এটা; এখন যার প্রমাণ আপনারাও পাচ্ছেন।’
গত কয়েক বছরে বিএনপি জাতীয় ও স্থানীয় যেসব নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ নিয়েছে, তাতে তারা ভালো ফল করতে পারেনি। দলটির পক্ষ থেকে অবশ্য ভোট সুষ্ঠু না হওয়ার অভিযোগ করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, তাদের সমর্থকদের ভোট দিতে দেয়া হয় না, প্রচারেও বাধা দেয়া হয়।
চলতি বছর পৌরসভা নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ আনার পর বর্তমান সরকার আর নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো ভোটে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। ফলে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও তাদের কোনো প্রার্থী নেই।
এই নির্বাচনে এখন পর্যন্ত ভোট হয়েছে তিন ধাপে, যার মধ্যে সবশেষ ভোট হয় রোববার।
এই ধাপে নির্বাচন কমিশন ১ হাজার ৭টি ইউনিয়নে ভোটের তফসিল ঘোষণা করে। তবে রোববার ভোট হয় সাড়ে আটশর কিছু বেশি এলাকায়। এর আগেই বেশ কিছু এলাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়ে যান।
তৃতীয় ধাপের এই নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী না দিলেও বিভিন্ন এলাকায় দলের নেতারা ভোটে অংশ নেন স্বতন্ত্র পরিচয়ে। দলের পুরো সমর্থনও তারা পেয়েছেন নানা এলাকায়।
গত ২ নভেম্বর ঠাকুরগাঁওয়ে নিজ বাসভবনে এক ব্রিফিংয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যা বলেন, তাতে এটা স্পষ্ট যে বিএনপি এই ভোটে না থেকেও আছে।
তিনি সেদিন বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে করাটা সঠিক নয়। তাই বিএনপি এ নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নিচ্ছে না। তবে বিএনপি থেকে কেউ স্বতন্ত্র হয়ে অংশ নিলে সেখানে বাধা নেই।’
রোববারের ভোটে সবচেয়ে বেশি ৪৩৯ ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়াই করা আওয়ামী লীগ নেতারা। আরও বেশ কিছু ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জিতেছেন অন্তত ২৬৭ জন। দলীয় প্রতীকে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, যারা জিতেছে ১৫টির মতো এলাকায়।
নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতে ইসলামীর ৮ জন প্রার্থী স্বতন্ত্র পরিচয়ে ভোটে দাঁড়িয়ে জিতেছেন। এর মধ্যে রংপুর বিভাগে দুজন আর রাজশাহী বিভাগে আছেন ছয়জন।
এই ছয়জনের মধ্যে দুজন সর্ব-উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের। তিনজন আছেন রাজশাহীর নওগাঁর, দুজন চাঁপাইনবাবগঞ্জের আর একজন আছেন রাজশাহীর।
ইসলামী আন্দোলন, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও কোনো দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন এমন ৩২ জন প্রার্থীও জিতে এসেছেন রোববারের ভোটে।
রংপুর বিভাগে জিতলেন বিএনপির যে নেতারা
এই জেলায় বিএনপির নেতারা সবচেয়ে ভালো করেছেন দিনাজপুরে। দুই উপজেলায় মোট ছয়টি ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন তারা।
এই জেলার ফুলবাড়ীর ১ নম্বর এলুয়াড়ী ইউনিয়নে নবিউল ইসলাম, বিরামপুর উপজেলায় ৪নং দিওড় ইউনিয়নে আব্দুল মালেক ও ৫নং বিনাইল ইউপিতে হুমায়ন কবীর বাদশা জয় পেয়েছেন।
নবাবগঞ্জ উপজেলায় ২ নম্বর বিনোদনগড় ইউনিয়নে নজরুল ইসলাম, ৪ নম্বর শালখুরিয়া ইউনিয়নে তারা মিয়া এবং ৫ নম্বর পুটিমারা ইউনিয়নে আনিছুর রহমান জয় পেয়েছেন।
বিএনপি ভালো করেছে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটেও। দুই জেলাতেই পাঁচজন করে নেতা জয় পেয়েছেন।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় ঘোগাদহ ইউনিয়নে আবদুল মালেক, ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নে সাইদুর রহমান, নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নে শফিউল আলম শফি, রায়গঞ্জ ইউনিয়নে আরিফুল ইসলাম দীপ ও নারায়ণপুর ইউনিয়নে মো. মোস্তফা পেয়েছেন জয়।
লালমনিরহাটে সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নে আব্দুল মজিদ মণ্ডল, কুলাঘাট ইউনিয়নে ইদ্রিস আলী, বড়বাড়ি ইউনিয়নে হবিবর রহমান হবি, দলগ্রাম ইউনিয়নে ইকবাল হোসেন এবং ভোটমারী ইউনিয়নে জিতেছেন ফরহাদ হোসেন।
ঠাকুরগাঁওয়ে জিতেছেন বিএনপির তিন নেতা। এর মধ্যে পীরগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নে মোখলেছুর রহমান চৌধুরী, সেনগাঁওয়ে সাইদুর রহমান এবং বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর ইউনিয়নে জিতেছেন বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম।
আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থানের এই জেলায় ভোট হয়েছে মোট ১৮টি ইউনিয়নে। এর মধ্যে ১৪টিকে নৌকা আর একটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা জিতেছেন।
কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নে বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর আলম ও আওয়ামী লীগের মাহাবুবার রহমানের ভোট সমান হওয়ায় ফলাফল ড্র হয়েছে।
এই বিভাগের পঞ্চগড় ও গাইবান্ধায় জয় পেয়েছেন বিএনপির দুজন করে নেতা।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নে রবিউল ইসলাম ও আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নে জিতেছেন আবদুস সামাদ, যাদেরকে বিএনপি মার্কা না দিলেও সমর্থন দিয়েছিল।
গাইবান্ধায় পলাশবাড়ী উপজেলার পবনাপুর ইউনিয়নে মাহাবুবুর রহমান মণ্ডল ও হরিনাথপুর ইউনিয়নে মো. কবির হোসাইন জাহাঙ্গীর জয় পেয়েছেন।
নীলফামারী জেলায় জিতেছেন বিএনপির একজন নেতা। কিশোরগঞ্জ উপজেলার নিতাই ইউনিয়নে জিতেছেন মোস্তাকিনুর রহমান।
রাজশাহী বিভাগে বিএনপির যে নেতাদের জয়
এই বিভাগের মধ্যে বিএনপির নেতারা সবচেয়ে বেশি জিতেছেন বগুড়ায়। দলটির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত জেলাটিতে ১০ জন নেতা জিতেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে।
এদের মধ্যে সদর উপজেলার নিশিন্দারা ইউনিয়নে সহিদুল ইসলাম সরকার, সাবগ্রাম ইউনিয়নে ফরিদ উদ্দিন সরকার, লাহিড়ীপাড়া ইউনিয়নে জুলফিকার আবু নাসের আপেল মাহমুদ, শেখেরকোলা ইউনিয়নে জিতেছেন রশিদুল ইসলাম মৃধা।
ধনুট উপজেলায় জিতেছেন কালেরপাড়া ইউনিয়নে সাজ্জাদ হোসেন, চিকাশি ইউনিয়নে জাকির হোসেন, গোসাইবাড়ী ইউনিয়নে মাসুদুল হক বাচ্চু, ভাণ্ডারবাড়ী ইউনিয়নে বেলাল হোসেন, শাজাহানপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নে আতিকুর রহমান এবং মাদলা ইউনিয়নে আতিকুর রহমান।
এই বিভাগে চারজন করে বিএনপির নেতা জিতেছেন নাটোর ও নওগাঁয়।
নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার ফাগুয়ারদিয়ার ইউনিয়নে এসএম লেলিন, জামনগরে গোলাম রাব্বানী, লালপুর উপজেলার ঈশ্বরদী ইউনিয়নে আব্দুল আজিজ রঞ্জু আর বিলমাড়িয়া ইউনিয়নে জিতেছেন সিদ্দিক আলী মিষ্টু।
নওগাঁর প্রসাদপুর ইউনিয়নে আব্দুল মতিন, বিষ্ণপুর ইউনিয়নে এসএম গোলাম আজম, গণেশপুর ইউনিয়নে শফিকুল ইসলাম বাবুল চৌধুরী এবং কাঁশোপাড়া ইউনিয়নে আব্দুস সালাম।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মোবারকপুর ইউনিয়নে মাহমুদুল হক হায়দারী এবং পাঁকা ইউনিয়নে জিতেছেন আব্দুল মালেক।
সিলেট বিভাগে বিএনপির যে নেতারা জিতলেন
গোটা বিভাগে বিএনপির নেতারা সবচেয়ে ভালো করেছেন সুনামগঞ্জে। এই জেলার সদর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলায় ভোট হয়েছে মোট ১৭টি ইউনিয়নে। এর ছয়টিতে জিতেছেন বিএনপি নেতারা। পক্ষান্তরে নৌকা নিয়ে আওয়ামী লীগ জিততে পেরেছে কেবল দুটি ইউনিয়নে।
সদর উপজেলা রঙ্গারচর ইউনিয়নে মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে জিতেছেন বিএনপি নেতা মো. আব্দুল হাই, মোল্লাপাড়া ইউনিয়নে জিতেছেন নুরুল হক, লক্ষণশ্রী ইউনিয়নে জিতেছেন আব্দুল ওয়াদুদ৷
শান্তিগঞ্জে স্বতন্ত্র পরিচয়ে জয়ী বিএনপির নেতারা হলেন দরগাপাশা ইউনিয়নে ছুফি মিয়া, পূর্ব পাগলা ইউনিয়নে মাসুক মিয়া ও পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নে লুৎফর রহমান জায়গীরদার খোকন।
লক্ষণশ্রী ইউনিয়নে নির্বাচিত জেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের জবাব দিয়েছে। আমাদের শঙ্কা ছিল ক্ষমতাসীনরা কিছু করে কি না। তবে সবকিছুকে হারিয়ে জনগণ তাদের ভোটের মাধ্যমে আমাকে জয়ী করেছে। আমি এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো চেয়ারম্যান হয়েছি। মানুষও জানে কাকে ভোট দিলে মেহনতি মানুষের উন্নয়ন হয়।’
হবিগঞ্জের ২১টি ইউনিয়নের মধ্যে তিনটিতে জয় পেয়েছেন বিএনপি নেতারা। তারা হলেন সদর উপজেলার গোপায়া ইউনিয়নে আব্দুল মন্নান, নবীগঞ্জ উপজেলার দিঘলবাগ ইউনিয়নে মোহাম্মদ ছালিক মিয়া এবং বাউসা ইউনিয়নে সাদিকুর রহমান শিশু।
সিলেট ও মৌলভীবাজারে জয় পেয়েছেন বিএনপির দুজন করে নেতা। এদের মধ্যে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্তে বাহারুল আলম বাহার ও গোয়াইনঘাটের রুস্তমপুরে জিতেছেন শাহাব উদ্দিন।
মৌলভীবাজারের এর মধ্যে বড়লেখা উপজেলার বর্ণি ইউনিয়নে জিতেছেন জয়নাল আবেদীন। কুলাউড়া উপজেলায় ভূকশিমইলে জিতেছেন আজিজুর রহমান। তিনি গতবারও জিতেছিলেন।
ঢাকা বিভাগে যারা জিতলেন
এই বিভাগে বিএনপির নেতারা সবচেয়ে টাঙ্গাইলে। এ জেলায় তিনজন সক্রিয় বিএনপি নেতা এবং একজন নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া নেতা জিতেছেন। এই জেলায় ভোট হয়েছে মোট তিনটি উপজেলায়। এর মধ্যে বিএনপি সম্পৃক্তরা জিতেছেন কেবল নাগরপুর ইউনিয়নে।
এরা হলেন গয়হাটা ইউনিয়নে সামছুল হক, ভাদ্রা ইউনিয়নে শওকত হোসেন ও সহবতপুর ইউনিয়নে তোফায়েল আহমেদ। পাকুটিয়া ইউনিয়নে জয়ী সিদ্দিকীকুর রহমানও বিএনপি করতেন। তবে সম্প্রতি তিনি দলীয় রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে যান।
দ্বিতীয় দুজন করে নেতা জয় পেয়েছেন মুন্সীগঞ্জ ও ফরিদপুরে।
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বজ্রযোগিনী ইউনিয়নের তোতা মিয়া মুন্সী আর টঙ্গীবাড়ি উপজেলার বেতকা ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন রোকনুজ্জামান রিগ্যান।
ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার গাজীরটেক ইউনিয়নে ইয়াকুব আলী (বিএনপি সমর্থক), বর্তমানে কোনো পদে নেই) এবং চরহরিরামপুর ইউনিয়নে জাহাঙ্গীর কবির (বিএনপি সমর্থক), বর্তমানে কোনো পদে নেই)।
কিশোরগঞ্জে কুলিয়ারচর, নিকলী ও সদর উপজেলায় ভোট হয়েছে মোট ২৩টি ইউনিয়নে। এর মধ্যে বিএনপি থেকে জিতেছেন একজন নেতা। সদর উপজেলায় চৌদ্দশত ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন দলটির নেতা আতহার আলী।
নরসিংদীতেও জয় পেয়েছেন বিএনপির একজন নেতা। চিনিশপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান হয়েছেন মেহেদী হাসান ভূইয়া তুহিন।
চট্টগ্রাম বিভাগে জয় যাদের
এই বিভাগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লা জেলায় বিএনপির তিনজন করে নেতা জয় পেয়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় পাকশিমুল ইউনিয়নে কাওসার হোসেন, সদর ইউনিয়নে আবদুল জব্বার, চুন্টা ইউনিয়নে জিতেছেন মনসুর আহমেদ।
কুমিল্লার হোমনা উপজেলার মাথাভাঙ্গা ইউনিয়নে জাহাঙ্গীর আলম, ঘাগটিয়া ইউনিয়নে মফিজুল ইসলাম গনি ও ঘারমোড়া ইউনিয়নে জিতেছেন শাহজাহান মোল্লা। বিএনপির এই তিন নেতার পক্ষে দলের নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রচারে ছিলেন।
নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলায় জয় পেয়েছেন বিএনপির দুই নেতা। এরা হলেন ছাতারপাইয়া ইউনিয়নে আবদুর রহমান ও কাবিলপুর ইউনিয়নে বাহার হোসেন।
চট্টগ্রামের হাটহাজারীর ছিপাতলী ইউনিয়নে জিতেছেন বিএনপি নেতা নূরুল আহসান লাভু।
চাঁদপুরে মতলব উত্তর উপজেলার এখলাশপুর ইউনিয়নে জিতেছেন বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী মফিজুল ইসলাম।
খুলনা বিভাগে বিজয়ী বিএনপির নেতারা
এই বিভাগে এক জেলায় বিএনপির সর্বোচ্চ তিনজন নেতা জিতেছেন সাতক্ষীরায়। এরা হলেন কালিগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগরে জাহাঙ্গীর আলম, পারুলিয়ায় গোলাম ফারুক বাবু এবং দেবহাটা উপজেলার দেবহাটা ইউনিয়নে আব্দুল মতিন।
বিভাগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দুজন নেতা জয় পেয়েছেন যশোরে। এরা হলেন মনিরামপুর উপজেলায় মনিরামপুর সদরে নিস্তার ফারুক এবং মনোহরপুরে আকতার ফারুক মিন্টু।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নে জিতেছেন খোয়াজ হোসেন মাস্টার।
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার সাফদারপুর ইউনিয়নে জিতেছেন আব্দুল মান্নান।
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার বাড়াদী ইউনিয়নে বিএনপি বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী (মোটরসাইকেল) তোবারক হোসেন নির্বাচিত হয়েছেন।
মাগুরার শালিখা উপজেলার শালিখা ইউনিয়নে জিতেছেন ইউনিয়নে বিএনপির আহ্বায়ক হুসেইন শিকদার।
ময়মনসিংহ বিভাগের জয়ীরা
এই বিভাগে বিএনপির নেতারা সবচেয়ে বেশি জিতেছেন শেরপুরে। এই জেলায় দলটির পাঁচজন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান হয়েছেন।
তারা হলেন নকলা উপজেলার ৭ নম্বর টালকি ইউনিয়নের মোজাফফর আহমদ বুলবুল, নালিতাবাড়ী উপজেলার রাজনগর ইউনিয়নের আতাউর রহমান, মরিচপুরান ইউনিয়নের আয়ুব আলী, কলসপাড় ইউনিয়নের আবদুল মজিদ ও নয়াবিল ইউনিয়নের মিজানুর রহমান।
নেত্রকোনায় জিতেছেন বিএনপির তিন নেতা। তারা হলেন কলমাকান্দা উপজেলার লেংগুরা ইউনিয়নের সাইদুর রহমান ভুইয়া, রংছাতি ইউনিয়নের আনিসুর রহমান খান পাঠান বাবুল ও দুর্গাপুর উপজেলার কুল্লাগড়া ইউনিয়নের আব্দুল আওয়াল।
ময়মনসিংহে জিতেছেন দুজন। তারা হলেন ত্রিশাল উপজেলার ৩ নম্বর কাঁঠাল ইউনিয়নের নূরে আলম সিদ্দিকী ও মুক্তাগাছা উপজেলার ৬ নম্বর মানকোন ইউনিয়নের শহিদুল ইসলাম।
এই বিভাগের অন্য জেলা জামালপুরে বিএনপির কোনো নেতা চেয়ারম্যান হতে পারেননি।
প্রতিবেদনটি প্রস্তুত হয়েছে সারা দেশে নিউজবাংলার প্রতিবেদকদের তথ্যে
আরও পড়ুন:কুমিল্লায় চার জনের শরীরে নতুন ভ্যারিয়েন্টের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে এক নারী চিকিৎসকসহ তিনজন পুরুষ রয়েছেন।
শনিবার (১৪ জুন) কুমিল্লা সিটি স্ক্যান এমআরআই স্পেশালাইজড অ্যান্ড ডায়ালাইসিস সেন্টারে করোনা পরীক্ষা শেষে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর বশির এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
করোনায় আক্রান্তরা হলেন, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আবদুল মোমিন (৭০), কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকার ডা. সানজিদা (৩০), বুড়িচং উপজেলার মো. হেলাল আহমেদ (৩৮) এবং সদর উপজেলার মো. ইবনে যুবায়ের (৩৯)।
সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর বশির বলেন, গত তিন দিনে কুমিল্লায় ১৩ জন রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা কয়। পরীক্ষা শেষে তাদের মধ্যে চারজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং বাকিদের নগরীর একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নমুনা পরীক্ষায় রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
তিনি বলেন, চারজনই বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে একজন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। দুজন এরই মধ্যে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় চলে গেছেন।
তবে আরেকজনের বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি সিভিল সার্জন।
করোনার প্রথম ধাক্কা কেটে যাওয়ার পর এতদিন কুমিল্লায় নতুন করে কেউ শনাক্ত হয়নি। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছিল। কিন্তু এখন আবার নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি দ্বিতীয় ধাপের শুরু হতে পারে এবং এখনই সতর্ক না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
চট্টগ্রামে নতুন করে আরো একজনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে গত ছয় দিনে মোট ৯ জনের শরীরে এ ভাইরাসের জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। শনিবার (১৪ জুন) সকালে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল আটটা থেকে শনিবার সকাল আটটা) ২৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে একজনের করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। ৪০ বছর বয়সী আক্রান্ত ওই ব্যক্তি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফতেহাবাদ এলাকার বাসিন্দা। তিনি শুক্রবার নগরের এভারকেয়ার হাসপাতালে করোনার পরীক্ষা করান। সেখানেই তার শরীরে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়।
এদিকে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আক্রান্ত নয়জনের মধ্যে পুরুষ ৫ জন এবং নারী ৪ জন। এদের মধ্যে ৭ জন নগরের এবং ২ জন উপজেলার বাসিন্দা।
অন্যদিকে, চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত বেসরকারি পর্যায়ে করোনা শনাক্তকরণের পরীক্ষা চালু আছে। তবে শিগগিরই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) আরটি–পিসিআর পরীক্ষা শুরু করা যাবে বলে আশা করছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম।
কুমিল্লার দাউদকান্দি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। দূর্ঘটনায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। তবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রোগীদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নেভাতে গিয়ে হাসপাতালের তিনজন কর্মী আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে স্থানীয় ফায়ারসার্ভিস কর্মীরা ছুটে আসে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আহতরা হলেন ইয়াসিন, মেহেদি ও মুছা। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
শনিবার (১৪জুন) বেলা ১১টায় দাউদকান্দি উপজেলা গৌরীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩য় তলায় ষ্টোর রুমে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে হাসাপাতালের ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের এবং বহিঃবিভাগে চিকিৎসা সেবা প্রায় দুই ঘন্টা বন্ধ থাকে৷ খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয় এবং হাসপাতালে কর্মরত স্টাফদের সহযোগিতায় অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা ১১ টার দিকে হাসপাতালের তিনতলার ষ্টোর রুমে আগুনের ধোয়া দেখা যায়। ধোয়া দেখে পাশের ওয়ার্ডের রোগীর স্বজন ও নার্সরা আগুন আগুন বলে চিৎকার শুরু করে। এ সময় হাসপাতালে থাকা রোগী ও তাদের স্বজনরা দৌঁড়াদৌড়ি শুরু করেন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পল্লী বিদ্যু ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে হাসপাতালের আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত ইয়াসিন, মেহেদি ও মুছা নামে তিন কর্মচারী আহত হয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে দাউদকান্দি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার মোঃ ইদ্রিস বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসার পর স্থানীয় এবং হাসপাতালে কর্মরত স্টাফদের সহযোগিতায় অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। প্রাথমিক ধারনা বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনে সূত্রপাত, পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে মূল কারণ জানা যাবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, হাসপাতালের ৩য় তলায় ডেঙ্গু রোগীদের ওয়ার্ডের পাশের কক্ষে ষ্টোর রুমে ঔষধসহ রোগীদের সেবার কাজে ব্যবহৃত সব ধরনের মালামালের সাথে কিছু দামী সরঞ্জামও ছিল। ওই কক্ষে আগুনে অধিকাংশ মালামালই পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু মালামাল বের করতে পারলেও তা ভালো আছে কিনা পরবর্তীতে যাচাই করে বলেতে পারবো । আগুনে ক্ষতির পরিমান এখন নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। আর আগুন নিয়ন্ত্রণ এবং মালামাল বিশেষ করে অক্সিজেন সিলিন্ডার বের করতে গিয়ে আমাদের আউটসোর্সিংয়ে কাজ করা তিনজন আহত হয়েছেন। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে হাসপাতালে অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে দাউদকান্দি উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) রেদওয়ান ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন৷
ঈদের ছুটিতে সিলেটে বেড়াতে এসে হেনস্তার শিকার হয়েছেন পর্যটকরা। একদিনের ব্যবধানে জাফলংয়ে পর্যটকদের উপর হামলা ও কোম্পানীগঞ্জে পর্যটনকেন্দ্র থেকে পর্যটকদের বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। দুটি ক্ষেত্রেই পর্যটকদের বিরুদ্ধে অশ্লীলতা ও পরিবেশ নষ্টের অভিযোগ তোলা হয়েছে। যদিও স্থানীয় একটি অংশের অভিযোগ, নির্বিঘ্নে চোরাচালান ও পাথর লুট করতেই পর্যটকদের বাধা দেয়া হচ্ছে। পর্যটক সমাগম বাড়লে লুটপাট ও চোরাকারবারে সমস্যা হয়। তাই পর্যটকদের আসতে বাধা দেয়া হচ্ছে বলে দাবি তাদের।
অশ্লীলতার অভিযোগ এনে সোমবার রাতে মৌলভীবাজারের রাজনগরে “রাজনগর রিসোর্ট এন্ড কফি হাউজে” তালা দিয়েছে স্থানীয় একদল লোক। এসময় স্থানীয় থানার পুলিশ সদস্যদেরও ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। সিলেটে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় দুটি স্থান জাফলং ও কোম্পানীগঞ্জ। সবসময়ই এই দুই এলাকায় পর্যটকদের ভিড় থাকে। ঈদের মতো বড় ছুটিতে ভিড় কয়েকগুণ বেড়ে যায়। সীমান্তবর্তী এই দুই এলাকা দিয়েই ভারত থেকে দেদারছে চোরাই পণ্য আসে। এছাড়া এসব এলাকার পাথুরে নদী ও ছড়া থেকে পাথর লুটপাটও নিত্তকার ঘটনা। গত বছরের ৫ আগস্টের পর চোরাচালান ও পাথর লুট অনেকটা বেড়ে গেছে। প্রশাসনও লুটপাটকারী ও চোরাকারবারীদের ঠেকাতে পারছে না।
জানা যায়, ঈদের পরদিন রোববার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর রনিখাই ইউনিয়নের পাহাড় থেকে নেমে আসা পাথুরে ছড়া উৎমাছড়া পর্যটনকেন্দ্রে ভিড় করেন অনেক পর্যটক। বিকেলে সেখানে কিছু সংখ্যক মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও স্থানীয় কিছু লোক জড়ো হয়ে পর্যটকদের বের করে দেয়। এ রকম একটি ভিডিও সোমবার রাত থেকে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। জড়ো হওয়া যুবকরা পর্যটকদের বিরুদ্ধে অশ্লীলতা, মদ্যপান ও এলাকার পরিবেশ নষ্টের অভিযোগ করেন।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পর্যটকদের বের করে দেয়ার একটি ভিডিওতে এক যুবককে বলতে শোনা যায়, 'এই এলাকা আলিমদের এলাকা, দ্বীনদার এলাকা। কিন্তু এইখানে অনেকে অনেক পরিবেশে থেকে আসে। এসে মদ খায়, আরও অনেককিছু করে, এতে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হয়। তাই আমাদের আবেদন, আপনারা এখানে আর আসবেন না। তাছাড়া এটি পর্যটনভুক্ত এলাকাও নয়'।
ভিডিওতে আরও বলতে শোনা যায়, ‘এই এলাকার আলেম-ওলামা ও স্থানীয়রা সিদ্ধান্ত নিয়েছে উৎমাছড়াকে পর্যটন করা যাবে না। তাই আপনারা যারা এখানে এসেছেন দয়া করে এখান থেকে চলে যান। আপনারা এখানে থেকে এখানের পরিবেশ নষ্ট করবেন না। এই এলাকার পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য আমরা এখানে পর্যটকদের আসতে নিরুৎসাহিত করছি আজকের পর আপনারা এখানে আর কোনদিন আসবেন না’।
পর্যটকদের বের করে দেয়ার এই ভিডিও যুক্ত করে পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা), সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম ফেসবুকে লিখেন, ‘একদিকে চলবে পর্যটক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা অন্যদিকে পর্যটনে বাঁধা! দেশের ভেতরে সরকার ঘোষিত সংরক্ষিত এলাকা ও ব্যক্তি বা গোষ্ঠী মালিকানাধীন জায়গা ব্যতীত কোথাও জনসাধারণের প্রবেশে বাঁধা দেয়া মানুষের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ। মানুষের চলাচলে বাঁধা প্রদান ও হুমকি প্রদান দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু সিলেটে এই অপরাধ ইতিপূর্বেও ঘটেছে।
কিম লিখেন, 'বছর কয়েক পূর্বে গোয়াইনঘাট উপজেলায় এক ঈদে মায়াবন নামে পরিচিত যুগীরকান্দি জলারবনে পর্যটকদের উপর হামলা করা হয়েছিল। এরপর থেকে ওই বনে কোন পর্যটক আর পা রাখেনি। স্থানীয় মাদ্রাসা ওই জলার বনের মাছ ভোগ করে বলে এখানে পর্যটক আসুক তা চায় না। অশ্লীলতার দোহাই দিয়ে যুগীরকান্দি বন বা মায়াবন সবার দৃষ্টির আড়ালে নিয়ে যাওয়া হয়। উতমাছড়ার পাথর লুটে ওই মাদ্রাসার সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা তা জানা প্রয়োজন।'
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ বলেন, ‘উৎমাছড়ায় বেড়াতে যাওয়া জন্য নির্দিষ্ট কিংবা উপযুক্ত রাস্তা নেই। এ জন্য পর্যটকেরা স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িঘর মাড়িয়ে যাতায়াত করেন। এতে তারা অসুবিধায় পড়েন। বৈঠকে এমন দাবি করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই এলাকায় মাদক সেবন ও অশ্লীলতা হয়, এমনটিও দাবি করা হয়েছে’।
উৎমাছড়ায় পর্যটকদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, ‘এ অঞ্চলে এমন ঘটনা আগে কখনোই ঘটেনি। বিষয়টি ইউএনওকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। তিনি তদন্ত করে দেখছেন। ইউএনও জানার চেষ্টা করছেন, বিষয়টি কী?’
এদিকে, সিলেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ে পর্যটকদের উপর হামলা চালিয়েছে স্থানীয় কিছু লোক। হামলাকারীরা চোরাকারবারের সাথে সম্পৃক্ত বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। সোমবার বিকেলে জাফলং বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কবির হোসেন বলেন, স্থানীয় বখাটেরা পর্যটকদের ওপর হামলা করেছে। পরে সাংবাদিক ও ইউপি সদস্য মিলে ঘটনাস্থলেই বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রতন কুমার অধিকারী বলেন, ‘তুচ্ছ বিষয় নিয়ে পর্যটকদের সঙ্গে ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছিল। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গেই সমাধান হয়ে গেছে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় অনেকের ভুল ধারণা হয়েছে।’
নাফ নদীর ভাঙন যেন থামছেই না। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের জালিয়া পাড়ায় প্রতিদিনই নদীর গর্ভে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি, ভেঙে যাচ্ছে স্বপ্ন। কিছুদিন আগেও যেখানে ছিল ঈদের প্রস্তুতি, হাসি-আনন্দে মুখর পরিবার—আজ সেখানে কান্না আর হাহাকার। প্রবল জোয়ার ও টানা বৃষ্টির তোড়ে শত শত পরিবার এখন আশ্রয়হীন, চরম মানবিক বিপর্যয়ের মুখে। বসতভিটা হারিয়ে কেউ খোলা আকাশের নিচে, কেউ গাছতলায় কিংবা নদীর পাড়েই মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজছে।
‘নাফের পানি ও তুফানে আমার ঘরবাড়ি ভেসে গেছে। ঈদের দিনেও কোরবানি দিতে পারিনি, ছেলেমেয়েদের নতুন জামা কিনতে পারিনি। এর চেয়ে বড় কষ্ট কিছু হতে পারে না।’-বলেন ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দা আবুল আলী। আলোকিত শহরের ঈদ আনন্দের বিপরীতে এই দ্বীপে নেই রান্নার হাঁড়ি, নেই নতুন জামার ঝলক, শুধু অসহায়ত্ব আর কান্নার সুর।
ভাঙনের মধ্যে দাঁড়িয়ে এক বৃদ্ধের আহাজারি
বৃদ্ধ আবুল আলী, কাঁপা গলায় হাতের ইশারায় দেখালেন যে জায়গাটিতে দাঁড়িয়ে আছেন, সেখানেই ছিল তার ছোট্ট ঘর। নাফের পানি একরাতে সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, ঘর, চুলা, শোবার জায়গা, কিছুই নাই আর। কতবার ঘর তুলুম? আমাদের দেখার কেউ নাই। বারবার আশার বাণী শুনিয়েছেন প্রশাসন। কেউ আজো কিছু দেয়নি। তবে কিছু করবে এমন আশায় আছি।’
ঈদের রান্নাও থেমে গেছে
বৃদ্ধা চলেমা খাতুন বলেন, ‘নাফের পানি চুলোতে ঢুকে ভেঙ্গে গেছে। এখনো রান্না করতে পারি না। ঈদের দিনেও ছেলে-মেয়েদের মুখে ভাত দিতে পারি নাই। নতুন কাপড় তো দূরের কথা। কোরবানিও করা সম্ভব হয় নাই। সাহায্য আসলেও তা আমরা পাই না।’
শুধু আবুল আলী বা চলেমা খাতুনই নন, এমন গল্প আজ জালিয়াপাড়ার শত শত পরিবারের। ঈদের সময় যখন দেশের অন্যপ্রান্তে আনন্দে মুখর প্রতিটি বাড়ি, তখন এই দ্বীপে ঈদ মানে কষ্ট, ভাঙা ঘর, খালি পেট, আর ভেজা চোখ।
আশ্বাস, প্রতিশ্রুতি—কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপ নেই
ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, বহুবার প্রশাসনের লোকজন এসেছেন, ছবি তুলেছেন, কথা দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে কোনো সহায়তা তারা পাননি। ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন,
‘কেবল ছবি তুললে আর রিপোর্ট করলেই কি ঘর ফিরে পাই? আমরা তো বাস্তব সাহায্য চাই।’ এক দশকের বেশি সময় ধরে চলছে নদীভাঙনের আতঙ্ক। শাহপরীর দ্বীপে নাফ নদীর ভাঙন নতুন নয়। ২০১২ সালের ভয়াবহ সামুদ্রিক জোয়ারে এই দ্বীপের চারটি পাড়ার অনেক ঘরবাড়ি, মসজিদ, দোকান সাগরে বিলীন হয়ে যায়। নোনা পানি নষ্ট করে দেয় কৃষিজমি, নিশ্চিহ্ন হয় গ্রাম, গৃহহীন হয়ে পড়ে হাজারো মানুষ। কিন্তু এত বড় অভিজ্ঞতার পরও দীর্ঘমেয়াদি কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
২০২৫ সালের এই ঈদুল আজহার সময়, ইতিহাস যেন আবার নিজের পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছে—আর এই পুনরাবৃত্তি শুধু কষ্টের, শুধু কান্নার। ধ্বংসের চিত্র এখনো স্পষ্ট জালিয়াপাড়ার বিভিন্ন স্থানে এখনো পড়ে আছে ভাঙা কাঠামো, উপড়ে যাওয়া গাছের শিকড়, পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া ঘরের চিহ্ন। পথচারীদের চোখে-মুখে শোক, মুখে একটাই প্রশ্ন—‘এই ভাঙন কি আর থামবে না?’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন জানান, শাহপরীর দ্বীপের জালিয়া পাড়ায় যেসব বাংলাদেশি নাফ নদীর ভাঙনে বাস্তুচ্যুত হচ্ছে তাদের তালিকা করে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার চন্দনা নদী থেকে মো. আসলাম প্রামানিক (৪২) নামে এক ইজিবাইক চালকের মরদেহ উদ্ধার করেছে কালুখালী থানা পুলিশ।
বুধবার (১১ জুন) সকাল ৭টার দিকে উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের চন্দনা ব্রিজের নিচ থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত আসলাম শেখ পাংশা উপজেলার চরলক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা এবং পিয়ার আলী প্রামানিকের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আসলাম শেখ গত মঙ্গলবার ইজিবাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। রাত পর্যন্ত তিনি আর বাড়িতে ফেরেননি। বুধবার সকালে স্থানীয়রা চন্দনা ব্রিজের নিচে একটি মরদেহ দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। পরবর্তীতে মরদেহটি আসলাম শেখের বলে শনাক্ত করেন।
এ বিষয়ে রাজবাড়ীর সহকারী পুলিশ সুপার (পাংশা সার্কেল) দেবব্রত সরকার জানান, “প্রথমে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। পরে পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি, ইজিবাইক ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে আসলাম শেখকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।”
পুলিশ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে এবং প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত হয়েছে।
সোমবার রাতে উপজেলার তারাবো এলাকায় এ দূর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, তারাবো সুলতানবাগ এলাকার দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার সাবেক রূপগঞ্জ প্রতিনিধি মরহুম আবুল হাসান আসিফের ছেলে শাহরিয়ার হাসান আকাশ (২৯) ও অটোরিক্সা চালক অজ্ঞাত (৩৫)।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, সোমবার রাতে তারাবো বিশ্বরোড এলাকা থেকে অটোরিক্সা যোগে তারাবো সুলতানবাগ এলাকার বাড়িতে ফিরছিলেন শাহরিয়ার হাসান আকাশ (২৯) ও তার বন্ধু সায়মন (২৯), তামিম সরকার (২৯)। পথিমধ্যে সাইফিং ফ্যাক্টরীর সামনে একটি হাইয়েস মাইক্রোবাসের সাথে অটোরিক্সাটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে অটোরিক্সাটি দুমড়েমুচড়ে যায়।
এ সময় ঘটনাস্থলেই নিহত হয় অটোরিক্সা চালক অজ্ঞাত (৩৫) এবং আহত হয় অটোরিক্সার যাত্রী শাহরিয়ার হাসান আকাশ (২৯) ও তার বন্ধু সায়মন (২৯), তামিম সরকার (২৯)। তাদের মধ্যে শাহরিয়ার হাসান আকাশ ও তার বন্ধু তামিম সরকারকে গুরুত্বর আহত অবস্থায়
স্থানীয়রা উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা শাহরিয়ার হাসান আকাশকে মৃত ঘোষনা করেন।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) লিয়াকত আলী বলেন, দূর্ঘটনার পর হাইয়েস মাইক্রোবাসের চালক মাইক্রোবাসটি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয় নি।
মন্তব্য