লেনদেনের শুরুতেই উত্থান, কিন্তু দিন শেষে পতন। গত সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া এমন প্রবণতা আরও একদিন দেখা গেল দেশের পুঁজিবাজারে।
এই বিষয়টির পাশাপাশি আরও একটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, সেটি হলো সূচক এক বা দুই দিন বাড়ছে, পরে এক দিন কমছে। এক বা দুই দিন কমছে, পরে এক বা দুই দিন বাড়ছে।
চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন সূচক পতনের পর দুই দিন উত্থান শেষে চতুর্থ কর্মদিবস বুধবার আবার পতন হলো। আবার এই পতনে গত সপ্তাহের একটি স্মৃতিকে ফিরিয়ে এনেছে। পুঁজিবাজারের সূচক ১০ বছর ৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭ হাজার ২৫৮ পয়েন্ট উঠার পর ১২ সেপ্টেম্বর সেখান থেকে এক ঘণ্টায় বাড়ে আরও ৭৮ পয়েন্ট। কিন্তু দিনের বাকি সময়ে সেখান থেকে ১২৪ পয়েন্ট পতন হয়।
তার পরের দিন ৪৪ পয়েন্ট বেড়ে যাওয়ার পর সেখান থেকে পতন হয় ১২১ পয়েন্ট।
একইভাবে বুধবার লেনদেন শুরুর আধা ঘণ্টার মধ্যে সূচক বেড়ে যায় ৪৭ পয়েন্ট। কিন্তু পরে সেখান থেকে পড়তে পড়তে দিন শেষে আগের দিনের তুলনায় কমে যায় ১৬ পয়েন্ট। অর্থাৎ সূচকে দিনের সর্বোচ্চ অবস্থানের চেয়ে সর্বনিম্ন অবস্থানের মধ্যে পার্থক্য ৬৩ পয়েন্ট।
পতনের মধ্যে স্বস্তি একটিই, দুই কর্মদিবস পর লেনদেন আবার দুই হাজার কোটি টাকার ওপরে উঠল। সোমবার ৩০ কর্মদিবস পর সর্বনিম্ন লেনদেন হয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে। তার পরদিন লেনদেন কিছুটা বাড়লেও তা দুই হাজার কোটি টাকার নিচে নামে।
গত ২৭ জুলাইয়ের পর পর পর দুই কর্মদিবসে দুই হাজার কোটি টাকার নিচে শেয়ার হাতবদল হয় এই প্রথম।
অবস্থান ধরে রাখছে সূচক, কমছে শেয়ারমূল্য
সূচকের এই উঠানামা শুরুর হওয়ার দিন থেকে বুধবারের অবস্থান খুব একটা নিচে নয়। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা খুব একট স্বস্তিতে, এমন নয়। বরং বেশিরভাগ শেয়ারের দর পতনে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে।
এই সময়ে বড় মূলধনি বেশ কিছু কোম্পানির উত্থানে সূচকে পয়েন্ট যোগ হলেও স্বল্প মূলধনি আর জেড ক্যাটাগরির শেয়ারের দরপতন হয়েছে। আর গত কয়েক মাসে এসব শেয়ারে বিশেষ করে ব্যক্তিশ্রেণির ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করেছে বেশ।
এই সময়ের মধ্যে ৯ কর্মদিবসে সূচকের একদিন পতন হলে দুই দিন উত্থান হয়েছে। আবার দুই দিন পতন হলে উত্থান হয়েছে একদিন। এভাবে সূচক অবস্থান ধরে রাখলেও সংশোধনের বৃত্তে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার।
৯ সেপ্টেম্বরের পর দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি শেষে ১২ সেপ্টেম্বর সূচক কমে ৫৬ পয়েন্ট, পরের দিন বাড়ে ১৬ পয়েন্ট। ১৪ সেপ্টেম্বর আবার কমে ৭৮ পয়েন্ট। পরের দুই দিন বাড়ে ৮৮ পয়েন্ট।
চলতি সপ্তাহেও এভাবে সূচক উঠানামা করছে। রোববার সূচক কমে ৩৭ পয়েন্ট, পরের দুই দিন বাড়ে যথাক্রমে ১৪ ও ৫২ পয়েন্ট। কিন্তু চতুর্থ কর্মদিবসে আবার পতন দেখল পুঁজিবাজার।
১৬ পয়েন্ট সূচক হারানোর দিন ১২৫টি শেয়ারের দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমে গেছে ২০৯টির দর, অপরিবর্তিত ছিল ৪২টির।
ওয়ালটন, ডেল্টালাইফ, ওরিয়ন ফার্মা, স্কয়ার ফার্মা, জিপিএইচ ইস্পাত, একটিভ ফাইন, ন্যাশনাল লাইফ, প্রাইম ব্যাংক, আরএকে সিরামিকস ও ম্যারিকোর শেয়ার দর বাড়ায় সূচকে যোগ হয়েছে সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট।
এই ১০টি কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ায় সূচকে যোগ হয়েছে ২৯ দশমিক ১৯ পয়েন্ট।
বুধবার সূচক উত্থান ও পতনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখা ২০টি কোম্পানি
অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি সূচক হারিয়েছে যে ১০টি কোম্পানির কারণে, সেগুলো হলো রবি, বেক্সিমকো লিমিটেড, ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো, লাফার্জ হোলসিম, ইউনাইটেড পাওয়ার, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, বিকন ফার্মা, সামিট পাওয়ার, গ্রামীণ ফোন ও বেক্সিমকো ফার্মার কারণে।
এই ১০ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমায় সূচক হারিয়েছে ২৭ দশমিক ০২ পয়েন্ট।
দুই খাতে এক তৃতীয়াংশ লেনদেন
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে যে পরিমাণ লেনদেন হয়েছে তার এক তৃতীয়াংশই হয়েছে ওষুধ ও রসায়ন এবং বস্ত্র খাতে।
এর মধ্যে ওষুধ ও রসায়ন খাতে হাতবদল হয়েছে সর্বোচ্চ ৩৬৪ কোটি ১০ লাখ টাকার আর বস্ত্র খাতে লেনদেন হয়েছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৬১ কোটি ১৩ লাখ টাকার।
অর্থাৎ এই দুই খাতেই লেনদেন হয়েছে ৭২৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেন ২ হাজার ১৫০ কোটি ৬৮ লাখ টাকার ৩৩.৭২ শতাংশ।
আগের দিন এই দুই খাতে লেনদেন হয়েছিল যথাক্রমে ২০৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা এবং ২৭৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
লেনদেন ব্যাপকহারে বাড়লেও শেয়ারের দাম খুব বেশি বেড়েছে এমন নয়। বস্ত্র খাতে ৫৮টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৩০টির, কমেছে ২২টির আর অপরিবর্তিত ছিল বাকি ৬টির দর।
এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি শেয়ার দর বেড়েছে প্যাসিফিক ডেনিমের, ৮.৩৭ শতাংশ। শেয়ার দর ১৬ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৮ টাকা ১০ পয়সা।
তসরিফার দর বেড়েছে ৭.৯১ শতাংশ বেড়ে ২০ টাকা ২০ পয়সা থেকে হয়েছে ২১ টাকা ৮০ পয়সা।
কাট্টালি টেক্সটাইলের দর ৬.৬৬ শতাংশ বেড়ে ২৮ টাকা ৫০ হয়েছে ৩০ টাকা ৪০ পয়সা।
দর পতনের দিক দিয়ে শীর্ষে ছিল দেশ গার্মেন্টস, যার দর কমেছে ৬.৩০ শতাংশ। তারপরই আছে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, যার প্রতি দর কমেছে ৪.১৮ শতাংশ।
ওষুধ ও রসায়ন খাতের ৩১ কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১৮টির, কমেছে ১১টির, একটির লেনদেন স্থগিত আর অপরিবর্তিত ছিল বাকি একটির দর।
এই খাতে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে অ্যাকটিভ ফাইন ক্যামিকেলের ৮.৪৬ শতাংশ। শেয়ার দর ২৪ টাকা ৮০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ২৬ টাকা ৯০ পয়সা।
ওরিয়ান ফার্মার দর ৭০ টাকা ২০ পয়সা থেকে ৭.৪০ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৭৫ টাকা ৪০ পয়সা।
ইমামবাটনের দর ৫.২৮ শতাংশ বেড়ে ৩৪ টাকা থেকে হয়েছে ৩৫ টাকা ৮০ পয়সা।
করোনার বছরে আগের বছরের চেয়ে ২৪ শতাংশ বেশি আয় করে ৯ শতাংশ বেশি লভ্যাংশ দেয়া ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালসের দর কমেছে ৫.৩০ শতাংশ।
কোম্পানিটি শেয়ারধারীদেরকে শেয়ার প্রতি ৪ টাকা ৭০ পয়সা লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগের বছর লভ্যাংশ ছিল ৩ টাকা ৮০ পয়সা।
এই খাতে বিকন ফার্মার দর ১.২৯ শতাংশ. জেএমআই সিরিঞ্জের দর কমেছে দশমিক ৯৮ শতাংশ।
কেপিসিএল চুক্তি চূড়ান্ত না হওয়ার পর বিদ্যুৎ জ্বালানিতে পতন
মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়া যে পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানোর ফাইলে প্রধানমন্ত্রী সই করেছেন, সেগুলোর সঙ্গে মঙ্গলবার বিদ্যুৎ বিভাগের বৈঠক হলেও বেশি কিছু বিষয়ে এখনও ঐক্যমত হয়নি।
সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বিদ্যুৎ না কিনলে আগের মতো কেন্দ্র বসিয়ে ভাড়া দেবে না। কিন্তু কেম্পানিগুলো সে ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বিদ্যুৎ কেনার গ্যারান্টি চাইছে। আবার সরকার বিদ্যুতের দাম কমাতে চাইছে, কিন্তু কোম্পানিগুলো তাতে রাজি নয়। এ নিয়ে আবার বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে ছিল বিশেষ করে কেপিসিএলের বিনিয়োগকারীরা। চুক্তি চূড়ান্ত না হওয়ায় আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কমেছে শেয়ারদর।
শেয়ার প্রতি দর এক টাকা হারিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে ৪৯ টাকা ১০ পয়সায়। বিদ্যুৎ খাতের তালিকাভুক্ত সামিট পাওয়ারেরও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বৃদ্ধির অপক্ষোয় আছে। এই কোম্পানিরও দর কমেছে ৬০ পয়সা।
মেয়াদ বাড়তে যাচ্ছে আরও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের, যেটি অরিয়ন ফার্মার সহযোগী প্রতিষ্ঠান। এই কোম্পানিটির দর অবশ্য বেড়েছে, তবে এটি বিদ্যুৎখাতে তালিকাভুক্ত নয।
চুক্তি চূড়ান্ত না হওয়ার পরদিন জ্বালানি খাতে আগ্রহ কমেছে। আগের দিন এই খাতে ১৫০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। সেটি কমে হয়েছে ১০৮ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
২৩টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৫টি কোম্পানির, কমেছে ১৪টির আর অপরিবির্তত ছিল বাকি ৪টির দর।
তবে দর বৃদ্ধি আর পতনের হার খুব একটা বেশি ছিল না। এই খাতে সবচেয়ে বেশি পতন হওয়া কেপিসিএলের শেয়ারদর কমেছে ২ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা শাহজিবাজার পাওয়ারের দর কমেছে ১.৫৫ শতাংশ।
এই খাতে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বিডিওয়েলডিংয়ের দর। ২.৬৯ শতাংশ বেড়ে ২২ টাকা ৩০ পয়সা থেকে হয়েছে ২২ টাকা ৯০ পয়সা।
বিমায় হতাশা
দরপতনের পাশাপাশি লেনদেনও কমে গেছে এই খাতে। ৫১টি কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে কেবল আটটির, কমেছে ৪১টির আর দুটির দর ছিল অপরিবর্তিত।
লেনদেনও কমে গেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। আগের দিন যেখানে ২৮৩ কোটি ১৫ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছিল, সেখানে আজ হয়েছে ২৪১ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
এই খাতে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে ডেল্টা লাইফের। ১৫৮ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৭১ কোটি টাকা।
ফারইস্ট ইসলামী লাইফের দর ৩.৩৯ শতাংশ বেড়ে ৭০ টাকা ৯০ পয়সা থেকে হয়েছে ৭৩ টাকা ৩০ পয়সা।
সবচেয়ে বেশি দর পতন হওয়ার তালিকায় আছে ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স, যেটির পতন হয়েছে ৬.১৭ শতাংশ। রূপালী লাইফের দর ৫.০২ শতাংশ আর ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের দর কমেছে ৪.৮৪ শতাংশ।
ব্যাংক আরও ঘুমে, আর্থিক খাতও ঝিমিয়ে
গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরে খাতভিত্তিক সবচেয়ে ভালো লভ্যাংশ দেয়া ব্যাংক খাতের মন্দাভাব আরও বেড়েছে। শেয়ারদর কমার মধ্যে লেনদেন এবার নেমে এসেছে একশ কোটি টাকার নিচে।
এই খাতের ৩২টি কোম্পানির মধ্যে বেড়েছে কেবল তিনটির দর। নয়টির দর ছিল অপরিবর্তিত, কমেছে বাকি ২০টির দর।
যে তিনটির দর বেড়েছে, সেগুলোর মধ্যে প্রাইম ব্যাংকের শেয়ার যোগ হয়েছে ১.৩৩ শতাংশ, ট্রাস্ট ব্যাংকে যোগ হয়েছে ০.৫৬ শতাংশ আর পূবালী ব্যাংকে ০.৩৯ শতাংশ।
দর হারিয়েছে যেগুলো, শতকরা হারে, সেগুলোরও খুব একটা পতন হয়নি।
সবচেয়ে বেশি ১.৮২ শতাংশ দর কমেছে রূপালী ব্যাংকের। ফার্স্ট সিকিউরিটজ ইসলামী ব্যাংকের দর ১.৬৪ শতাংশ ও ওয়ান ব্যাংকের দর কমেছে ১.৪৬ শতাংশ।
এই খাতে লেনদেন হয়েছে মোট ৯৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা, আগের দিন যা ছিল ১০৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
আর্থিক খাতেও দিনটি ভালো যায়নি। আগের দিন লেনদেন যেখানে ছিল ১৭১ কোটি ৭০ লাখ টাকা, সেটি কমে হয়েছে ১৬৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা।
২৩টি কোম্পানির মধ্যে একটির লেনদেন স্থগিত। বাকিগুলোর মধ্যে বেড়েছে কেবল ৫টির দর, কমেছে ১৫টির। অপরিবর্তিত ছিল বাকি ২টির।
অন্যান্য খাতের লেনদেন
প্রধান অন্যান্য খাতগুলোর মধ্যে বিবিধ খাতের ১৪টি লেনদেন হয়েছে ১৩০ কোটি ২০ লাখ টাকা, যা আগের দিন ছিল ১৭২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।
এই খাতের প্রধান কোম্পানি বেক্সিমকো লিমিটেডের দর কমার পর লেনদেনও কমে গেছে। শেয়ার প্রতি ২ টাকা ২০ পয়সা দর হারানোর পাশাপাশি লেনদেনও ব্যাপকভাবে কমে গেছে।
কোম্পানিটির ৯৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে, যা আগের দিনের তুলনায় অনেক কম।
এই খাতে ১১টি কোম্পানির দরপতনের বিপরীতে বেড়েছে ৩টির দর।
খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের ২০টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৯টির, কমেছে ১১টির। লেনদেন হয়েছে ৫৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন ছিল ৫০ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।
লেনদেন কমেছে তথ্য প্রযুক্তি খাতে। আগের দিন এই খাতের ১১টি কোম্পানিতে লেনদেন হয়েছিল ৪৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। সেটি কমে কিছুটা কমে হয়েছে ৪১ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
লেনদেন হওয়া ১১টি কোম্পানির মধ্যে সবকটির দাম কমেছে।
দারুণ লভ্যাংশের পর ঘুমে যাওয়া মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছিল ২৪ কোটি টাকা। সেটি বেড়ে হয়েছে ৩২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।
দামও কিছুটা বেড়েছে। ১৮টি ফান্ডের দর বাড়ার বিপরীতে ১০ পয়সা করে কমেছে ২টির আর অপরিবর্তিত ছিল বাকি ১৪টির দর।
সূচক ও লেনদেন
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৬ দশমিক ৭২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ২৪১ পয়েন্টে।
শরিয়াভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ৪ দশমিক ৪৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৮২ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস ৩০ সূচক ১২ দশমিক ৭৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৭৩ পয়েন্টে।
চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৮২ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ১৫৭ দশমিক ৬০ পয়েন্টে।
৩২০টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১১৫টির, কমেছে ১৭১টির ও পাল্টায়নি ৩৪টির।
লেনদেন হয়েছে ৬২ কোটি টাকা, আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৭০ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন:কোভিড-১৯ মহামারির অভিঘাতে সমগ্র বিশ্ব যখন টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে পতিত হয়, ঠিক সেই সময় বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে টেনে তুলতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তার নেতৃত্বে বিভিন্ন যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বিশ্বের দরবারে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যায়।
যদিও একটি শ্রেণি বাজারে নেতিবাচক ভূমিকা রাখতে বরাবরই সক্রিয় ছিল। তবে দূরদর্শী নেতৃত্বগুণে বিনিয়োগকারীদের অর্থের সুরক্ষা দিতে বারবার বহুমাত্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হতে দেননি অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
সম্প্রতি বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে অস্বাভাবিক আচরণ করছে পুঁজিবাজার। নিয়ন্ত্রক সংস্থাও এ পরিস্থিতি সামাল দিতে এরই মধ্যে অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করে বাজারকে স্থিতিশীল করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এমনকি পরিস্থিতি অনুকূলে আনতে গতকাল ফ্লোর প্রাইসমুক্ত সব শেয়ারে একদিনের দর কমার নিম্নসীমা (সার্কিট ব্রেকার) ৩ শতাংশে বেঁধে দিয়েছে সংস্থাটি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএসইসির সময়োপযোগী এমন পদক্ষেপ বাজারকে আবারও টেনে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে সন্দেহভাজন বেশকিছু লেনদেন পরিলক্ষিত হয়েছে বাজারে। এতে বিশেষ একটি শ্রেণি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য বাজারকে ম্যানিপুলেট করার চেষ্টা করছে। কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসও এতে জড়িত রয়েছে। বাজারে অবাঞ্ছিত বিক্রির আদেশ দিয়ে তারা অস্থিরতা তৈরি করছে। তাছাড়া বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে বাজারে একটা শ্রেণি স্বার্থ আদায়ের চেষ্টা করছে। ফলে বেশ কিছুদিন ধরে বাজার কিছুটা অস্বাভাবিক আচরণ করছে।
এ বিষয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে বেশ কিছু ট্রেডার নিজেদের মধ্যে যোগশাজসের মাধ্যমে প্রথমে কম দরে শেয়ার বিক্রি করত। পরে তাদের দেখাদেখি সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যখন প্যানিক হয়ে শেয়ার বিক্রি করত তখন তারা আবার কম দরে শেয়ারগুলো কিনে নিত। এভাবে তারা নিজেদের মধ্যে শেয়ার লেনদেন করে প্যানিক সৃষ্টির মাধ্যমে ভালো শেয়ারগুলোর দাম কমাত। এই কাজে তাদের বেশ কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসও সহযোগিতা করত।’
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে শেয়ারের দর কমার কথা নয়। গুটি কয়েক অসাধু ট্রেডারের কারসাজিতে বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এতে বড় বড় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আল-আমিন বলেন, ‘এক শ্রেণির অসাধু বিনিয়োগকারী চাচ্ছেন বর্তমান কমিশন বিদায় হয়ে নতুন কেউ দায়িত্বে আসুক, যাতে তারা নতুন করে আরও সুযোগ নিতে পারেন। তারাই বিভিন্ন দুর্বল শেয়ারে কারসাজি করে সুবিধা নিচ্ছেন।
‘ফোর্সড সেলের মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার তারা কম দরে কিনে নিচ্ছেন। কমিশনের উচিত হবে কারসাজিকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা, যাতে তারা বারবার বাজারকে ম্যানিপুলেট করার সাহস না পায়।’
এদিকে শেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক সময়ের টানা পতন ঠেকাতে আবারও শেয়ারের মূল্যসীমায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে বিএসইসি এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করেছে।
ওই আদেশে বলা হয়, এখন থেকে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দর এক দিনে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না। বর্তমানে দরভেদে কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত দরপতন হতে পারে।
দেশের পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে আদেশে জানানো হয়েছে। সার্কিট ব্রেকারের এ সিদ্ধান্ত বুধবার থেকে কার্যকর করতে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে নির্দেশও দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘আজকের এই সার্কিট ব্রেকার আরোপ বাজারে কারসাজি রোধ করবে। এটি সন্দেহভাজন লেনদেন বন্ধ করবে। আর এ সিদ্ধান্তের ফলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও উচ্চ সম্পদশালী একক বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি সক্রিয় হবে বলে আশা করছি।’
তিনি বলেন, ‘অনেক ভালো শেয়ার বর্তমানে আন্ডারভ্যালুতে আছে। এখানে তারা বিনিয়োগ করবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।’
সার্কিট ব্রেকার বাজারের দরপতন ফেরাতে ব্যর্থ হলে আবারও ফ্লোর প্রাইস দেয়ার কোনো সিদ্ধান্ত আছে কি না জানতে চাইলে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আশা করছি, আমাদের বাজারে আর কখনও ফ্লোর প্রাইস দিতে হবে না। শিগগিরই বাজার একটা স্থিতিশীল অবস্থানে ফিরবে।’
আরও পড়ুন:দেশের পুঁজিবাজারে শেয়ারের দরপতনের গতি কমিয়ে আনার চেষ্টার অংশ হিসেবে এবার মূল্যসীমায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন থেকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ার আগের দিনের শেষ হওয়া দরের ভিত্তিতে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না।
শেয়ারের দাম কমার ক্ষেত্রে আগে মূল্যসীমা ছিল ১০ শতাংশ। তবে ঊর্ধ্বসীমা অর্থাৎ কোনো শেয়ারের দাম বাড়ার সীমা ১০ শতাংশ অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বুধবার এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করেছে। বৃহস্পতিবার থেকেই এ আদেশ কার্যকর হবে বলে আদেশে জানানো হয়েছে।
বিএসইসি জানিয়েছে, যেসব শেয়ার ফ্লোর প্রাইসের আওতায় আছে সেসব শেয়ারের ক্ষেত্রে নতুন আদেশ প্রযোজ্য হবে না।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে বাজার সূচকের অবাধ পতন ঠেকাতে এর আগে ২০২২ সালের জুলাই শেষে প্রতিটি শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে দিয়েছিল বিএসইসি। ফ্লোর প্রাইস ছিল ২০২২ সালের ২৮ জুলাই ও তার আগের চার দিনের ক্লোজিং প্রাইসের গড়।
বর্তমানে বেক্সিমকো, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, খুলনা পাওয়ার কোম্পানি, মেঘনা পেট্রোলিয়াম ও শাহজীবাজার পাওয়ার কোম্পানির ক্ষেত্রে ওই ফ্লোর প্রাইস কার্যকর রয়েছে।
আরও পড়ুন:ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে পুঁজিবাজার। বুধবারের ধারাবাহিকতায় সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবারও দেশের পুঁজিবাজারে বড় উত্থান হয়েছে। সে সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের গতি।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার পাশাপাশি সবক’টি মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়েছে। ডিএসইতে দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করেছে হাফ ডজনের বেশি প্রতিষ্ঠান।
পুঁজিবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার দেখা মেলে বুধবার। তিন শতাধিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক বাড়ে ৫৮ পয়েন্ট। তবে লেনদেন কমে সাড়ে ৪০০ কোটি টাকার নিচে নেমে আসে।
সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে এসে মূল্যসূচকের বড় উত্থানের পাশাপাশি লেনদেনের গতিও কিছুটা ফিরে এসেছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে।
এদিন পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান সূচক ১৩ পয়েন্ট বেড়ে যায়। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দাম বাড়ার তালিকাও বড় হতে থাকে।
এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ৩০৩টি প্রতিষ্ঠান। বিপরীতে দাম কমেছে ৪৪টির। আর ৫০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
দাম বাড়ার তালিকায় থাকা ৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম একদিনে যতটা বাড়া সম্ভব ততটাই বেড়েছে। দিনের সর্বোচ্চ দামে এ সাত প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ শেয়ার ক্রয়ের আদেশ এলেও বিক্রিয় আদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়ে। এর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিস, শাহিনপুকুর সিরামিক, পেপার প্রসেসিং, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং এবং পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স।
দাম বাড়ার ক্ষেত্রে এ সাত প্রতিষ্ঠান দাপট দেখানোর পাশাপাশি আরও প্রায় এক ডজনের প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার সর্বোচ্চসীমার কাছাকাছি চলে আসে। আর ৪৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম ৪ শতাংশের ওপরে বেড়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৬৯ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৯৪১ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২৫ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৫৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৫ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২৯৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সবকটি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণ বেড়ে ৬০০ কোটি টাকার ওপরে চলে এসেছে। ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৬১০ কোটি ৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪২২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ১৮৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
এই লেনদেনে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে বেস্ট হোল্ডিংয়ের শেয়ার। কোম্পানিটির ২৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশের ২৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে গোল্ডেন সন।
এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, ফু-ওয়াং সিরামিক, মালেক স্পিনিং, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিস, রবি, গোল্ডেন হার্ভেস্ট এবং ওরিয়ন ফার্মা।
অপরদিকে সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১৭৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেয়া ২৩৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৭৩টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪৭টির এবং ১৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন:পুঁজিবাজারে সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বৃহস্পতিবার লেনদেন বেড়ে এক হাজার ৮৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ২০২২ সালের ২০ সেপ্টেম্বরের পর এটাই সর্বোচ্চ লেনদেন হলো।
সপ্তাহের শেষ দিনে ডিএসইতে বেশিসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে প্রধান মূল্যসূচক। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) মূল্যসূচক বেড়েছে। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসেই প্রধান মূল্যসূচক বাড়লো। একই সঙ্গে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ২০২২ সালের ৮ নভেম্বরের পর বা ১৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান সূচক ৮ পয়েন্ট বেড়ে যায়। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার ধারা অব্যাহত থাকায় লেনদেনের এক পর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ৪২ পয়েন্ট বেড়ে যায়।
অবশ্য লেনদেনের শেষদিকে বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমে যায়। পাশাপাশি দাম বাড়ার তালিকায় থাকা বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ার হার কমে আসে। একই সঙ্গে সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতাও কমে। এমনকি ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়া কোম্পানি নিয়ে গঠিত সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে।
লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ২১০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। দাম কমেছে ১৪০টির। দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৪টির।
দাম বাড়ার তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৩০টির দাম ৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এর মধ্যে হল্টেড হয়েছে ৭ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার।
ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ২০ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৩৭৩ পয়েন্টে উঠে এসেছে। এর মাধ্যমে ২০২২ সালের ৮ নভেম্বরের পর সূচকটি সর্বোচ্চ অবস্থানে অবস্থান করছে। ২০২২ সালের ৮ নভেম্বর ডিএসইর প্রধান সূচক ছিল ৬ হাজার ৩৮৪ পয়েন্ট।
অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৩৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় শূন্য দশমিক ১৮ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৩৮৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
প্রধান মূল্যসূচক বাড়ার দিনে ডিএসইতে এক হাজার ৮৫৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় এক হাজার ৭৩০ কোটি ৪৩ লাখ টাকার। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ১২৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে ২০২২ সালের ২০ সেপ্টেম্বরের পর সর্বোচ্চ লেনদেন হলো। ২০২২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ডিএসইতে ২ হাজার ৮৩২ কোটি ৩০ লাখ টাকার লেনদেন হয়। এরপর আর দুই হাজার কোটি টাকার লেনদেনের দেখা মেলেনি।
এই লেনদেনে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার। কোম্পানিটির ৬৫ কোটি ৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা আইএফআইসি ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬২ কোটি ৪৮ লাখ টাকার। ৫৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশন।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- মালেক স্পিনিং, ফরচুন সুজ, ফু-ওয়াং সিরামিক, ফু-ওয়াং ফুড, অলিম্পিক এক্সেসরিজ, এডভেন্ট ফার্মা এবং বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম।
অপর সিএসই-তে সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১২০ পয়েন্ট। এখানে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩০৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৫১টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১২০টির এবং ৩২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৩৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ২৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন:শেয়ারের ওপর থেকে বেঁধে দেয়া সর্বনিম্ন দর বা ‘ফ্লোর প্রাইস’ তুলে নেয়ার সুফল মিলতে শুরু করেছে দেশের পুঁজিবাজারে। ৩৫টি কোম্পানি বাদে বাকি সব শেয়ারের ওপর থেকে ‘ফ্লোর প্রাইস’ তুলে নেয়ার এক কার্যদিবস পরই সোমবার লেনদেন হাজার কোটি টাকার ঘর ছুঁয়েছে।
ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পরবর্তী কার্যদিবসে রোববার পুঁজিবাজারে সূচক ও লেনদেনে বড় নিম্নমুখিতা দেখা যায়। অবশ্য বাজার-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলের সক্রিয় ভূমিকায় ওইদিন আরও বড় পতনের হাত থেকে রক্ষা পায় স্টক এক্সচেঞ্জ।
তবে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিএসইসি’র পদক্ষেপ যে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত, তা প্রমাণ হয়ে গেছে পরবর্তী কার্যদিবসেই। ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাজার। সোমবার সূচক বাড়ার পাশাপাশি দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ছয় মাসেরও বেশি সময় পর লেনদেন হাজার কোটি টাকার ঘর স্পর্শ করেছে।
এমন পরিস্থিতিতে ফ্লোর প্রাইস বহাল রাখা ৩৫ কোম্পানির মধ্যে আরও ২৩ কোম্পানির সর্বনিম্ন দরসীমা সোমবার তুলে নিয়েছে বিএসইসি।
সংস্থাটির এমন সিদ্ধান্ত বাজারকে আগামী কয়েক দিনের জন্য কিছুটা নিম্নমুখী করতে পারে- এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বাজারে আরও সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মো. আল-আমিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় ভূমিকার কারণে গত দুদিন আমাদের ধারণার তুলনায় মার্কেট অনেকটা ভালো আচরণ করেছে। ধারণা ছিল যে, এতগুলো শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস যেহেতু একবারে তোলা হয়েছে, সেহেতু কয়েক দিনের মধ্যেই ৫০০ পয়েন্ট পর্যন্ত সূচক কমতে পারে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সাপোর্ট মার্কেটকে একটা স্ট্যাবল অবস্থানে রাখতে সাহায্য করেছে।’
নতুন চ্যালেঞ্জের জন্য তাদের আরও বেশি সক্রিয় হতে হবে বলে তিনি মনে করেন।
তবে নতুন করে ২৩ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়ার নেতিবাচক একটা দিক আগামী কয়েক দিন বাজারে দেখা যেতে পারে বলে মনে করেন বিশ্লেষক মো. আল-আমিন। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আরও বেশি সংক্রিয় ভূমিকা অব্যাহত থাকলে এ ক্ষেত্রে বাজারের জন্য সহায়ক হতে পারে বলে মনে করেন এই বিশ্লেষক।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, সোমবার লেনদেন শুরুর ২ মিনিট পর অতিরিক্ত বিক্রির চাপে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ৬০ পয়েন্ট কমে যায়। পরে অবশ্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণে সূচক বাড়তে থাকে। দিন শেষে সূচকটি ১৪ দশমিক শূন্য ৫ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২৫৪ পয়েন্টে অবস্থান নেয়। এর আগের কার্যদিবস রোববার লেনদেন শেষে সূচকটির অবস্থান ছিল ৬ হাজার ২৪০ পয়েন্টে।
ডিএসইএক্স সূচকটিকে পতনের দিকে ঠেলে দিতে সোমবার সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে জিপিএইচ ইস্পাত, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, ফরচুন সুজ, বিবিএসই ক্যাবলস ও সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড। তবে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, খান ব্রাদার্স পিপি, নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি), লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেডের ইতিবাচক ভূমিকায় সূচক দিন শেষে বেড়েছে।
ডিএসইর অন্য সূচকগুলোর মধ্যে এদিন লেনদেন শেষে শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ৬ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৬০ পয়েন্টে। আগের দিন লেনদেন শেষে সূচকটির অবস্থান ছিল ১ হাজার ৩৭৪ পয়েন্টে।
বাছাইকৃত শেয়ারের সমন্বয়ে গঠিত ব্লু-চিপ সূচক ডিএস ৩০ দিনের ব্যবধানে ১০ দশমিক ৪৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৪৮ পয়েন্টে। আগের দিন শেষে সূচকটির অবস্থান ছিল ২ হাজার ১৩৭ পয়েন্টে।
ডিএসইতে সোমবার মোট ১ হাজার ৪২ কোটি ২১ লাখ টাকার সিকিউরিটিজ লেনদেন হয়েছে। এর আগে এক্সচেঞ্জটিতে সবশেষ ১ হাজার কোটি টাকার ঘরে লেনদেন হয়েছিল গত বছরের ১৮ জুলাই। ওইদিন ডিএসইতে লেনদেন হয় ১ হাজার ৪৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকার সিকিউরিটিজ।
সোমবারের লেনদেন আগের কার্যদিবসের (রোববার) চেয়ে ৭৭ শতাংশ বেশি। ডিএসইতে এদিন লেনদেন হওয়া ৩৯২টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিন শেষে দর বেড়েছে ২০৭টির, কমেছে ১৪৫টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৪০টি সিকিউরিটিজের বাজার দর।
এদিকে বাজারকে সক্রিয় রাখতে দেশের শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন ‘সিইও ফোরাম’ থেকে সাপোর্ট অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সোমবার পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার পর এমন সিদ্ধান্ত নেয় সংগঠনটি।
সিদ্ধান্ত অনুসারে, পুঁজিবাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রত্যেক ডিলার অ্যাকাউন্টে ১ থেকে ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। ডিলার অ্যাকাউন্ট থেকে কোনো শেয়ার বিক্রি করা হবে না। বিনিয়োগকারীদেরকে ইতিবাচকভাবে বোঝানোর চেষ্টা করা হবে। যেসব শেয়ারের ক্রেতা থাকবে না, সেখানে বিক্রির আদেশ বসানো হবে না। ট্রেডারদের এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হবে। ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের কারণে যাতে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত না হন বা বাজারে বিক্রির চাপ তৈরি না করেন, সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতেও বলা হবে সংগঠনটির পক্ষ থেকে।
১২ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস বহাল
পুঁজিবাজারে এখন তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের সংখ্যা ৩৯২টি। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার ৩৫৭টি শেয়ারদরের সর্বনিম্ন সীমা তুলে নেয় বিএসইসি। আর নতুন করে আজ আরও ২৩ কোম্পানির ওপর থেকে সীমা তুলে নেয়ার পর কেবল ১২ কোম্পানির ওপর ফ্লোর প্রাইস বহাল থাকল। নতুন এই ২৩ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হবে। ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার হওয়া সব কোম্পানির শেয়ারদর ওঠানামার সার্কিট ব্রেকার আগের মতোই ১০ শতাংশ রাখা হয়েছে। অর্থাৎ কোনো শেয়ারের দাম ১০ শতাংশের বেশি কমতে বা বাড়তে পারবে না।
যে ১২ কোম্পানির ওপর ফ্লোর প্রাইস বহাল থাকছে- আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি (বিএটিবিসি), বেক্সিমকো লিমিটেড, বিএসআরএম লিমিটেড, গ্রামীণফোন, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, খুলনা পাওয়ার কোম্পানি, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস, রেনাটা লিমিটেড, রবি আজিয়াটা ও শাহজীবাজার পাওয়ার লিমিটেড।
এই ১২ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস কবে তুলে নেয়া হতে পারে এমন প্রশ্নে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ‘আগামী কয়েক দিনের লেনদেন ও বাজার পরিস্থিতি দেখে কমিশন এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। ফ্লোর ধরে রাখা কোম্পানিগুলোতে বিদেশি বিনিয়োগকারীও রয়েছেন। বাজারের প্রতি তারা যেন নেতিবাচক না হন, তাই পরের ধাপে এসব কোম্পানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
আরও পড়ুন:ফ্লোর প্রাইসের বাধামুক্ত হয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার পর অবশেষে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে এই পদক্ষেপ। তবে নির্দিষ্ট ৩৫টি কোম্পানি ফ্লোর প্রাইজের এই শর্তের মধ্যেই থেকে গেছে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের সর্বনিম্ন দরসীমা বেঁধে দেয়ার ফ্লোর প্রাইজ জারি হয়েছিলো প্রায় দেড় বছর আগে। অবশ্য এর আগে ২০২০ সালে আরও একবার ফ্লোর প্রাইস দিয়ে তা ২০২১ সালে তুলে নেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসি। তবে বিনিয়োগকারীদের পুঁজির সুরক্ষা দিতে এতো দীর্ঘ সময় ধরে ফ্লোর প্রাইস এর আগে দেখা যায়নি দেশের পুঁজিবাজারে।
বিএসইসি বৃহস্পতিবার এক আদেশ জারি করে পুঁজিবাজার থেকে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করে নেয়। ওই আদেশে একইসঙ্গে জানানো হয়, ৩৫টি কোম্পানি এখনও ফ্লোর প্রাইস-এর আওতায় থাকবে। কবে নাগাদ ওইসব কোম্পানির ওপর ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করা হবে তা জানায়নি কমিশন।
আদেশে কমিশন জানিয়েছে, ৩৫টি প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকি কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে আগের মতোই স্বাভাবিক লেনদেন হবে। তবে দৈনিক লেনদেনের সার্কিট ব্রেকার অর্থাৎ সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দরসীমা কার্যকর থাকবে। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী একদিনে কোনো শেয়ারের দর সর্বোচ্চ দশ শতাংশ বাড়তে পারে, কমার ক্ষেত্রেও সমপরিমাণ দর কমতে পারে।
জাতীয় নির্বাচন ঘিরে পুঁজিবাজার নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন অনেক বিনিয়োগকারী। তবে নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়ে নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর তাদের সেই শঙ্কা অনেকাংশেই কেটেছে। সুদিন ফিরতে শুরু করেছে দেশের দুই পুঁজিবাজারেই।
সদ্য শেষ হওয়া সপ্তাহে আগের সপ্তাহের চেয়ে লেনদেন বেড়েছে প্রায় ৬৫ শতাংশ। পাশাপাশি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসই ও চট্টগ্রাম স্টক একচেঞ্জ-সিএসইতে বেড়েছে সবগুলো সূচক। পুঁজিবাজার নিয়ে আশাবাদী হয়ে উঠতে শুরু করেছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরাও।
ইতোমধ্যে বুধবার ঘোষণা করা হয়েছে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের মুদ্রানীতি। টানা কয়েকদিন বাড়তে থাকা পুঁজিবাজারে বৃহস্পতিবার অবশ্য কিছুটা দর সংশোধন হয়েছে। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে প্রায় সাড়ে ৯ পয়েন্ট।
বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম সম্প্রতি নিউজবাংলাকে এক সাক্ষাৎকারে জানান, যে কোনো সময় প্রত্যাহার হতে পারে ফ্লোর প্রাইস। যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, বাজার তার স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারবে বলে মনে করে নিয়ন্ত্রণ কমিশন।
অবশেষে তার সেই কথারই প্রতিফলন ঘটলো ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে।
এদিকে বিনিয়োগকারীরা ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। শিমুল আহমেদ নামের এক বিনিয়োগকারীর মন্তব্য, এতে সাময়িকভাবে সূচকের কিছুটা পতন হলেও দীর্ঘমেয়াদে লাভবান হওয়া যাবে। তিনি বলেন, ‘ফ্লোর প্রাইস আজ হোক কাল হোক প্রত্যাহার করতে হতোই। এখানে বহু বিনিয়োগকারীর মূলধন আটকে আছে। তবে আমার কাছে মনে হয় কমিশন যথাসময়েই সিদ্ধান্তটা নিয়েছে’।
এছাড়া ৩৫টি কোম্পানির ওপর এখনও বহাল থাকা ফ্লোর প্রাইসও দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি এই বিনিয়োগকারীর।
বিএসইসির আদেশে যে কোম্পানিগুলোর ওপর ফ্লোরপ্রাইস বলবৎ থাকার কথা বলা হয়েছে সেগুলো হলো- আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, বারাকা পাওয়ার, বিএটিবিসি, বেক্সিমকো, বিএসসিসিএল, বিএসআরএম লিমিটেড, বিএসআরএম স্টিল, কনফিডেন্স সিমেন্ট, ডিবিএইচ, ডোরিন পাওয়ার, এনভয় টেক্সটাইল, গ্রামীণফোন, এইচআর টেক্সটাইল, আইডিএলসি, ইনডেক্স অ্যাগ্রো, ইসলামী ব্যাংক, কেডিএস লিমিটেড, কেপিসিএল, কট্টালি টেক্সটাইল, মালেক স্পিনিং, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল পলিমার, ওরিয়ন ফার্মা, পদ্মা অয়েল, রেনাটা, রবি, সায়হাম কটন, শাশা ডেনিমস, সোনালী পেপার, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স, শাইনপুকুর সিরামিকস, শাহজীবাজার পাওয়ার, সামিট পাওয়ার ও ইউনাইটেড পাওয়ার।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং শ্রীলঙ্কার দেউলিয়া ঘোষণাজনিত পরিস্থিতিতে দেশের পুঁজিবাজারে বড় ধরনের দরপতনের শঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ২৮ জুলাই দ্বিতীয়বারের মতো ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে বিএসইসি। তার আগে কোভিড-১৯ এর প্রকোপ শুরু হওয়ার পর ২০২০ সালের মার্চে একবার ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়েছিল।
তবে দ্বিতীয় ধাপের ফ্লোর প্রাইসের কারণে পুঁজিবাজারে শেয়ার কেনাবেচা তলানিতে নেমে আসে। দীর্ঘদিন ধরে ফ্লোর প্রাইস বহাল থাকায় বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি ব্রোকার হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক এবং অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলোও সংকটে পড়ে।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম একে অপরকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান বুধবার নিজেদের মধ্যে নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ সময় পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়াতে ব্যাংকগুলোকে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে গভর্নরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, আর্থিক খাতের দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধানদের এই বৈঠকে দেশের পুঁজিবাজার ও অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে পুঁজিবাজারে তারল্য কীভাবে বাড়ানো যায় সে বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়। এ জন্য ব্যাংকগুলোকে আইনের মধ্যে থেকে আরও সক্রিয় করার জন্য গভর্নরের কাছে অনুরোধ জানান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, বৈঠকে মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও বিএসইসি চেয়ারম্যান নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। এক পর্যায়ে অর্থনীতি ও পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি আলোচনায় উঠে আসে। এ সময় পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়াতে ব্যাংকগুলো কীভাবে আরও বেশি অবদান রাখতে পারে সে বিষয়ে গভর্নরের সহযোগিতা চান বিএসইসি চেয়ারম্যান।
বৈঠকে গভর্নরও পুঁজিবাজারের উন্নয়নে কাজ করার বিষয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যানকে আশ্বস্ত করেছেন বলে জানান রেজাউল করিম।
প্রসঙ্গত, পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সদ্য সমাপ্ত ২০২৩ বছর জুড়েই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। নতুন বছরে পুঁজিবাজারকে আরও বেগবান করতেও নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য