বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, দুজনের প্রাণহানি ও কিছু প্রার্থীর ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে ১৬০টি ইউনিয়ন পরিষদ ও ৯টি পৌরসভার নির্বাচন। ভোট শেষে চলছে গণনা।
কেন্দ্রগুলোতে সোমবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট দিয়েছেন ভোটাররা। এর মধ্যে সহিংসতার জেরে কয়েকটি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করা হয়।
সহিংসতায় কক্সবাজারে প্রাণ হারিয়েছেন দুইজন। বাগেরহাট ও সাতক্ষীরায় বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তথ্য অনুযায়ী, ভোটের আগেই ৪৪টি ইউপির চেয়ারম্যান পদে ও ৩টি পৌরসভার মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় একক প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। সেখানে ভোট হয়েছে অন্য পদগুলোতে।
সব পৌরসভায় ভোট হয়েছে ইভিএমে। ইউনিয়ন পরিষদগুলোর মধ্যে ১১টিতে ইভিএমে ভোট দিয়েছেন ভোটাররা।
কক্সবাজার
জেলার মহেশখালী ও চকরিয়া পৌরসভা এবং মহেশখালী, টেকনাফ ও কুতুবদিয়ার ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়েছে।
এর মধ্যে মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার দুই কেন্দ্রে সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছে। দুই কেন্দ্রেই সংঘর্ষের পর বন্ধ করা হয়েছে ভোট গ্রহণ।
কুতুবদিয়ার বড় ঘোপ ইউনিয়নের পিলটকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ব্যালট ছিনতাইচেষ্টার সময় দুর্বৃত্তদের ওপর গুলি ছোড়ে পুলিশ। সে সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান আব্দুল হালিম। তিনি ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এ ঘটনায় আহত হয়েছেন পাঁচজন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জামশেদুল ইসলাম সিকদার।
এর আগে সকাল ১০টার দিকে মহেশখালীর কুতুবজোম ইউনিয়নের একটি কেন্দ্রে দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিতে একজন নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হন তিন নারী।
ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নয়াপাড়া এলাকায় কুতুবজোম দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তির নাম আবুল কালাম। তিনি স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মোশাররফ হোসেন খোকনের সমর্থক বলে খবর পাওয়া গেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাই।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে তিনি জানান, ভোট চলাকালীন ওই কেন্দ্রে নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী শেখ কামালের সমর্থকদের সঙ্গে চশমার প্রার্থী মোশাররফ হোসেনের সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়। সে সময় গুলিবিদ্ধ হন চারজন। হাসপাতালে নেয়ার পথেই মৃত্যু হয় কালামের।
এ ছাড়া অন্য কেন্দ্রগুলোতে ভোট হয়েছে স্বাভাবিকভাবেই।
বাগেরহাট
জেলার ৬৫টি ইউনিয়নে ভোট হয়েছে। এর মধ্যে মোরেলগঞ্জ উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদে দুপুর ১২টার দিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে একজন আহত হন।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী রিপন চন্দ্র দাশ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে প্রতিপক্ষের সমর্থকরা আমার ভাইয়ের ওপর হামলা চালিয়েছে।’
এ অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল জব্বার মোল্লা বলেন, ‘আমার জয় নিশ্চিত জেনে তারা নিজেদের মধ্যে গণ্ডগোল করে দোষ চাপাচ্ছে।’
এই অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের মধ্যে কচুয়া উপজেলার ধোপাখালী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসুদ রানা লালন ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
ফকিরহাট উপজেলার শুভদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল প্রকাশ্যে ব্যালট পেপারে সিল দেয়া, ব্যালট পেপার ছিড়ে ফেলাসহ এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেছেন।
এ ছাড়া চিতলমারী উপজেলার কলাতলা ইউনিয়নের বিভিন্ন কেন্দ্রে সদস্য প্রার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা যায়। কয়েক জায়গায় হাতাহাতিও হয়।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বাগেরহাটের ৯ উপজেলার ৬৬টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও কচুয়ার রাঢ়ীপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্যের ১৩টি পদের সব কয়টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন প্রার্থীরা। তাই ভোট হয়েছে ৬৫টি ইউনিয়নে।
সাতক্ষীরা
জেলার কলারোয়া ও তালা উপজেলার ২১টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়েছে। সকালে বৃষ্টি হওয়ায় ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম ছিল। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার দেখা গেছে প্রায় সব কেন্দ্রেই।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, অনিয়মের অভিযোগ তুলে কলারোয়ার কয়লা ইউনিয়ন পরিষদের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলাম ভোট বর্জন করেন।
অনিয়ম হওয়ায় কেড়াগাছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করে উপজেলা প্রশাসন।
তালা উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর মক্তব কেন্দ্রে ককটেল ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টির অভিযোগে একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
আটক ব্যক্তির নাম আজহার হোসেন। তিনি নৌকা প্রতীকের কর্মী বলে জানা গেছে।
এর আগে সকালে শ্রীমন্তকাটি কেন্দ্রের পাশে নৌকার কর্মী-সমর্থকরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নাজমুল কবির জানান, ২১টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪টিতে ইভিএমে ভোট হয়েছে।
নোয়াখালী
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্র দখলসহ নানা অভিযোগ তুলে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোট বর্জন করেছেন পাঁচ চেয়ারম্যান প্রার্থী।
ভোট শুরুর ঘণ্টাখানেক পর নিজ নিজ বাড়ি থেকে সংবাদ সম্মেলন করে তারা ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
তারা হলেন বুড়িরচর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জিয়া আলী মোবারক কল্লোল, জাহাজমারা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের প্রার্থী এটিএম সিরাজ উদ্দিন, চরঈশ্বর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল হালিম আজাদ, সোনাদিয়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল ইসলাম মালয়েশিয়া ও নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী মেহেরাজ উদ্দিন।
এ উপজেলায় সাতটি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়। এর মধ্যে পাঁচটিতে প্রার্থীরা ভোট বর্জন করায় সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের জয় প্রায় নিশ্চিতই।
হাতিয়ার পাশাপাশি ইউপি নির্বাচনের ভোট হয় সুবর্ণচরেও। সেখানে ছয়টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট দেন ভোটাররা। ভোটার উপস্থিতি হাতিয়ার চেয়ে সুবর্ণচরেই বেশি দেখা যায়।
কবিরহাট পৌরসভাতেও হয়েছে ভোট। তবে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জহিরুল হক রায়হান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ায় সেখানে কাউন্সিল পদের জন্য ভোট হয়েছে।
ফেনী
জেলার সোনাগাজী পৌরসভায় কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেয়া, প্রার্থীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ভোট।
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী আবু নাসের অভিযোগ করেন, বাইরে নিরাপত্তা জোরদার থাকলেও কেন্দ্রের ভেতরে একজনের ভোট অন্যজন দিয়েছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর বহিরাগত সমর্থকরা ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধা দিয়েছে। একই অভিযোগ ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ইমাম উদ্দিন ভূঁইয়ার।
ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী হিজবুল্লাহ অভিযোগ করেন, তিনি সকালে ২ নম্বর ওয়ার্ডে কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে সরকারদলীয় সমর্থকরা তাকে লাঞ্ছিত করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেন।
এ ছাড়া ৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী অভিযোগ করেন, নির্বাচনি কেন্দ্রের ভেতর পরিবেশ ভালো থাকলেও বাইরে সরকারদলীয় সমর্থকরা তার সমর্থকদের ঢুকতে দেয়নি।
এসব অভিযোগ সত্য নয় জানিয়ে সোনাগাজী পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। যাদের কোনো ভোটার নেই তারা এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।’
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, সোনাগাজী পৌরসভার ৯টি কেন্দ্রের ৪৯টি বুথে ভোটাররা ভোট দিয়েছেন।
প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন কক্সবাজারের সাকিবুর রহমান, বাগেরহাটের মামুন আহমেদ, সাতক্ষীরার রফিকুল ইসিলাম শাওন, নোয়াখালীর মোহাম্মদ সোহেল, ফেনীর আরিফুর রহমান ও কুমিল্লার মাহফুজ নান্টু।
আরও পড়ুন:তীব্র গরম থেকে বাঁচতে ও বৃষ্টির আসায় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় নেচে গেয়ে ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছেন স্থানীয়রা। লোকজন।
উপজেলার চন্দ্রখানা বালাটারি গ্রামে শনিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বিয়ের অনুষ্ঠান চলে।
ওই এলাকার বাসিন্দা সাহাপুর আলীর স্ত্রী মল্লিকা বেগমের আয়োজনে বিয়েতে অসংখ্য নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। নাচ গানের মধ্যে দিয়ে ব্যাঙের বিয়ে শেষে বরণ ডালায় ব্যাঙ দুটিকে নিয়ে পুরো গ্রাম ঘুরে বেড়ান তারা। এ সময় গ্রামবাসীদের কাছ থেকে চাল ডাল সংগ্রহ করে বিয়েতে অংশগ্রহণকারীদের খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়।
বিয়ের আয়োজনকারী মল্লিকা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কিছুদিন ধরে তীব্র গরম। তাপমাত্রা বেশি হওয়ার কারণে আমরা কষ্টে রয়েছি; গ্রামের মানুষজন অস্তিত্বতে আছে। কেউই কোনো কাজ কামাই করতে পারছেন না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আগের যুগের মানুষরা ব্যাঙের বিয়ে দিলে বৃষ্টি হতো। সেই বিশ্বাস থেকেই আজ ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছি।’
বিয়ে দেখতে আসা জাহিদ নামের একজন বলেন, “আমার জীবনে প্রথম ব্যাঙের বিয়ে দেখলাম। খুবই ভালো লেগেছে। ‘বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের বিয়ে’ বিষয়টি প্রথম জানলাম।”
বৃদ্ধ আজিজুল হক বলেন, ‘বৃষ্টি না হওয়ার কারণে আবাদের ক্ষতি হচ্ছে। তাই বৃষ্টির আশায় ব্যাঙের বিয়েতে অংশগ্রহণ করেছি।’
রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘কুড়িগ্রামে বেশ কিছুদিন ধরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। আজ (শনিবার) জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।’
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে এক বছরের শিশু হুমাইরা আক্তারের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকালে সদর উপজেলার মদিনা বাজার এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মদিনা বাজারের উত্তর পাশে খানকা শরীফের সামনের সড়কে দুটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে।
এ সময় রাস্তার পাশে এক বছরের শিশু সন্তান হুমাইরাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা হাবিবা বেগমের ধাক্কা খান অটোরিকশার সঙ্গে। এতে শিশু হুমাইরা মায়ের কোল থেকে রাস্তায় ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হয়। শিশুটিকে দ্রুত মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় অটোরিকশা দুটি আটক করা হয়েছে। পালিয়ে যাওয়া দুই চালককে আটকের চেষ্টা চলছে।
মুন্সীগঞ্জে হিটস্ট্রোকে সাখাওয়াত হোসেন মুকুল নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির মাঠ পর্যায়ের বিপনন বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
২৭ বছর বয়সী মুকুলের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলায়।
প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির মুন্সীগঞ্জ শহরের সেলস রিপ্রেজেনটেটিভ মোহাম্মদ রোকন জানান, শনিবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জ শহরের অদূরে মুন্সীরহাট এলাকায় মাঠ পর্যায়ে কর্মরত অবস্থায় তীব্র গরমের কারণে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন মুকুল। সঙ্গে সঙ্গে তাকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালে নিয়ে এলে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস হাসান জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগে পথেই তার মৃত্যু হয়েছে। নিহতের হিটস্ট্রোকের লক্ষণ রয়েছে বলে জানান তিনি।
নিহতের মরদেহ তার নিজ জেলায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
আকস্মিক কালবৈশাখীর তাণ্ডবে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ও শমশেরনগর ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে আরও বেশ কিছু বাড়িঘর। ঝড়ের পর খোলা আকাশের নিচে দিনযাপন করছে অর্ধশতাধিক পরিবার।
এ ছাড়াও গাছপালা উপড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙেছে এবং তার ছিঁড়ে পড়ে। এতে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ওই অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
শুক্রবার রাত ৩টার দিকে এই ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হয়। প্রায় সাড়ে ১৫ ঘণ্টা পর শনিবার বিকেল ৪টার দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কালবৈশাখীর তাণ্ডবে উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের পতনঊষার, ধূপাটিলা, উসমানগড়, ব্রাহ্মণঊষারসহ ৮টি গ্রামের প্রায় শতাধিক ঘর এবং শমশেরনগর ইউনিয়নের কেছুলুটি, ভাদাইরদেউল গ্রামে আরও কয়েকটি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অসংখ্য গাছ-বাঁশ উপড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ও লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
পতনঊষার ইউনিয়নের নেছার মিয়া, ময়নুল মিয়া, খুশবা বেগম, লিপি বেগম, রহমান মিয়া, সুফিয়ান মিয়া, কালাম মিয়া, আনু মিয়া, ফখরুল মিয়াসহ অসংখ্য পরিবার দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন।
ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, গতরাতে কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে তীব্র শিলাবৃষ্টি হয়। মুহুর্তের মধ্যে তাদের ঘরবাড়ি উড়িয়ে নিয়ে যায়। আমরা এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি। সহোযোগিতা না পেলে আমাদের রাস্তায় থাকতে হবে।’
পতনঊষার ইউপি সদস্য তোয়াবুর রহমান জানান, আকস্মিক ঝড়ে পতনঊষার গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যাদের বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে সেসব দরিদ্র পরিবারের জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে।
পতনঊষার ইউপি চেয়ারম্যান অলি আহমদ খান বলেন, ‘কালবৈশাখী ঝড়ে আমার ইউনিয়নে প্রচুর পরিমাণ বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অনেক পরিবার খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। তাদের দ্রুত সহায়তার প্রয়োজন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাহেবকে অবহিত করা হয়েছে।’
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক গোলাম ফারুক মীর বলেন, ‘ঝড়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েকটি খুঁটি ভেঙে পড়েছে। অনেক স্থানে তার ছিঁড়ে গেছে। এসব জায়গায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার জন্য কাজ চলছে।’
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ ইউএনও জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘পতনঊষার ইউপি চেয়ারম্যান বাড়িঘর বিধ্বস্তের কথা বলেছেন। তবে পরিপূর্ণ হিসাব জানা যায়নি। চেয়ারম্যানদেরকে বলা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে দেয়ার জন্য। দ্রুত তাদের সহোযোগিতা করা হবে।’
আরও পড়ুন:চুয়াডাঙ্গায় অব্যাহত অতি তীব্র তাপপ্রবাহে ওষ্ঠাগত হয়ে পড়েছে জনজীবন। ভ্যাপসা গরমে অস্বস্তি বেড়েছে কয়েকগুণ।
শনিবার বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গা জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তীব্র থেকে অতি তীব্র আকার ধারণ করছে জেলার তাপপ্রবাহ। গরমে একটু স্বস্তি পেতে গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছে মানুষ। তবে, ভ্যাপসা গরমে স্বস্তি নেই কোথাও। আবহাওয়ার এমন বিরূপ আচরণের সঙ্গে কোনোভাবেই খাপ খাওয়াতে পারছে না জেলাবাসী। কেউ আবার পান করছেন ফুটপাতের অস্বাস্থ্যকর পানীয়। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছে প্রাণিকূল। হাসপাতালে বাড়ছে গরমজনিত রোগীর সংখ্যা।
দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ডের ইজিবাইক চালক হারেজ আলী বলেন, ‘কঠিন তাপ পড়চি। সূর্য মনে হচ্চি মাতার উপর চলি এসিচে। আমরা গরীব মানুষ, পেটের দায়ে বাইরি বের হয়িচি। মাজে মাজে রাস্তার পাশের দুকান থেকি শরবত খেয়ি ঠান্ডা হচ্চি।’
চলমান দাবদাহে ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে সেচ কার্যক্রম; নষ্ট হচ্ছে ধান, আম, লিচু ও কলাসহ মাঠের অন্যান্য ফসল।
মৌসুমের প্রায় সময়জুড়েই উত্তপ্ত থাকে চুয়াডাঙ্গা। এবারও চৈত্রের মধ্যভাগ থেকে শুরু হওয়া তাপমাত্রার এমন দাপট বৈশাখের আবহাওয়াকে জটিল করে তুলছে। এ যেন মরুর উষ্ণতা অনুভব করছে মানুষ।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘এ মাসের শেষের কয়েকদিন তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।’
আরও পড়ুন:মাদারীপুরে ইজিবাইকের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়াতে সেটিকে পাশ দিতে গিয়ে যাত্রীবাহী একটি বাস খাড়ে পড়ে যায়। এতে অল্পের জন্যে জীবন রক্ষা পেয়েছে বাসের অন্তত ৬৫ যাত্রীর। তবে এ ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত ৩০ জন।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুর জেলার ঘটকচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ এসে বাস ও আহতদের উদ্ধার করে।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, হাওলাদার পরিবহনের একটি বাস প্রায় ৬৫ জন যাত্রী নিয়ে বরিশাল থেকে সাতক্ষীরার উদ্দেশে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে ঘটকচর এলাকায় আসলে একটি ইজিবাইক রাস্তার মাঝে চলে আসে। দুর্ঘটনা এড়াতে ইজিবাইকটিকে পাশ দিতে বাসচালক দ্রুত মোড় নেয়ায় বাসটি রাস্তার পাশের খাদে চলে যায়। তবে খাদটি বেশি গভীর না হওয়ায় প্রাণে রক্ষা পেয়েছে বাসের যাত্রীরা। তবে আঘাত পেয়ে বাসের ভিতরে থাকা যাত্রীদের হাত-পায়ে একাধিক স্থানে কেটে গেছে। এ ঘটনায় ছোট-বড় মিলে প্রায় ৩০ জন যাত্রী আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে মোস্তফাপুর হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয়দের সহযোগিতায় যাত্রীদের উদ্ধার করে।
দুর্ঘটনাকবলিত বাসটির যাত্রী সজীব হোসেন বলেন, ‘আমি অফিশিয়াল কাজে সাতক্ষীরা যাচ্ছিলাম। ঘটকচর স্ট্যান্ডের কিছুটা দূরে আসার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ একটা ধাক্কা খেয়ে দুমড়ে মুচড়ে গেলাম। পরে দেখি বাসটি খাদে পড়ে গেছে। আমার নাকে কিছুটা আঘাত পেয়েছি। অন্য যাত্রীদেরও বেশ আঘাত লেগেছে।’
তিনি বলেন, ‘ইজিবাইক পাশ দিতে গিয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কে ইজিবাইক নছিমন বন্ধ করা উচিত।’
এ ব্যাপারে মোস্তফাপুর হাইওয়ে থানার ওসি মোহাম্মদ মারুফ রহমান বলেন, ‘বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে অন্তত ৬৫ জন যাত্রী। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে দুর্ঘটনাকবলিতদের উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ইজিবাইকটি আটক করা যায়নি।’
আরও পড়ুন:বৃহত্তর চট্টগ্রামে রোববার থেকে ৪৮ ঘণ্টা পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বৃহত্তর গণপরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্যপরিষদ।
বাসের ধাক্কায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থী নিহত ও অপর একজন আহত হওয়ার ঘটনার জের ধরে গাড়ি পোড়ানোর প্রতিবাদে এই ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্যপরিষদের আহ্বায়ক ও হাটহাজারী পৌরসভার প্রশাসক মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী মঞ্জু শনিবার বলেন, ‘কয়েক দিনে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে আমাদের তিনটি বাস পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। গাড়ি পোড়ানো ও সড়কে নৈরাজ্যের প্রতিবাদসহ চার দফা দাবি আদায়ে আগামীকাল (রোববার) সকাল ৬টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা, তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান এবং কক্সবাজার জেলায় এই ধর্মঘট পালিত হবে।’
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে সোমবার বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই চুয়েট শিক্ষার্থী নিহত হন। এর প্রতিবাদে ওইদিন থেকেই ১০ দফা দাবিতে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় বাসে আগুন দেয়া হয়।
বুধবার ওই বাসের চালককে পুলিশ গ্রেপ্তার করলে শিক্ষার্থীরা কিছুটা শান্ত হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ২০ জনের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে তিন ঘণ্টা বৈঠক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেখানে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসের মূল ফটকের সামনের সড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ১১ মে পর্যন্ত চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার বিকেলে চুয়েট সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই সময়ে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করতে পারবেন। যদিও জরুরি সিন্ডিকেট সভায় নেয়া সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সে সঙ্গে দাবি আদায়ে আবারও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
মন্তব্য