আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের কেন্দ্রীয় কারাগার ‘পুল-ই-চারকি’তে বন্দি দুই বাংলাদেশির খোঁজ মিলছে না।
উজবেকিস্তানের তাসখন্দে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে এ তথ্য।
ওই দুই বাংলাদেশি হলেন কাওসার সুলতানা ও ওবায়দুল্লাহ। তাদের সঙ্গে কারাবন্দি অপর বাংলাদেশি একটি আফগান পরিবারের আশ্রয়ে নিরাপদে আছেন।
তাসখন্দ দূতাবাস জানিয়েছে, আফগানিস্তানে আটকে পড়া সব বাংলাদেশি দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন, তবে তাবলিগে যাওয়া ছয়জন দেশে ফিরতে চাননি। তারা পাকিস্তান সীমান্তের আফগান শহর জালালাবাদে অবস্থান করছেন।
নিখোঁজ দুই বাংলাদেশিকে নিয়ে কী জানা গেল
তাসখন্দ দূতাবাস জানায়, গত ১৫ আগস্ট তালেবান কাবুল দখলের সময় প্রথমে পুল-ই-চারকি কারাগার খুলে দিয়ে আইএস সদস্য ছাড়া সবাইকে ছেড়ে দেয়া হয়। ওই কারাগারে আটক ছিলেন তিন বাংলাদেশি। তাদের মধ্যে মঈন আল মেজবাহ নামের এক বাংলাদেশি কারাগার থেকে বেরিয়ে গিয়ে এক আফগান পরিবারে আশ্রয় নিয়েছেন। তার জন্য হোয়াটসঅ্যাপে আউট পাস পাঠিয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাস।
কিন্তু ওই কারাগারে ঢাকার ভাষানটেকের নারী কাওসার সুলতানা ও ফেনীর ওবায়দুল্লাহর খোঁজ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
খোঁজ মিলেছে ৩০ জনের
দূতাবাস জানায়, আফগানিস্তানে এখন পর্যন্ত ৩০ বাংলাদেশির খোঁজ পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন এরই মধ্যে আফগানিস্তান ছেড়েছেন। অন্যদেরও নিরাপদে ফেরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
বরিশালের ফারুক হোসেন ও কুমিল্লার মহিউদ্দিন কাবুলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিতে কাজ করতেন। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিমানে কাবুল থেকে দোহা হয়ে মঙ্গলবার ঢাকায় পৌঁছেছেন।
ব্র্যাকের আটকে পড়া ছয় কর্মীর মধ্যে তিনজন আমেরিকান ফ্লাইটে দোহায় পৌঁছেছেন।
ঢাকার করিম শিকদার, রংপুরের আসাদুজ্জামান ও রকিবুল হক মৃধা জাতিসংঘের ব্যবস্থাপনায় বর্তমানে কাজাখস্তানের রাজধানী নুর সুলতানে রয়েছেন।
জার্মানির ফিচনার কোম্পানিতে কর্মরত বাংলাদেশি মো. রেজাউল করিম এবং এএন মিজানুর রহমান তাসখন্দে বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে উজবেকিস্তানের ভিসার ব্যবস্থার কথা বলেছেন। ভিসা হলে তারা জার্মানির বিশেষ বিমানে তাসখন্দ যেতে পারবেন।
কী বলছেন রাষ্ট্রদূত
উজবেকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জাহাঙ্গীর আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি উজবেকিস্তানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা করেছি, যার ভিত্তিতে দ্রুততম সময়ে ট্রানজিট ভিসা দিয়েছে দেশটি। উজবেক উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আফগানিস্তানে আটকে পড়া যেকোনো বাংলাদেশিকে ফেরানোর জন্য ট্রানজিট ভিসা দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তানে যেসব বাংলাদেশির ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে তাদের সহায়তা করার জন্য সব বিমানবন্দরে চিঠি দেয়া হয়েছে। যেসব বাংলাদেশির পাসপোর্টের মেয়াদ চলে গেছে তাদের জন্য ট্রাভেল পাস ইস্যু করছে উজবেকিস্তানে বাংলাদেশ দূতাবাস।
‘আফগানিস্তানে আটকে পড়া যারা আর্থিক সংকটে রয়েছেন, তাদের কাছে প্রয়োজনীয় অর্থ পাঠানো হয়েছে। আটকে পড়া বাংলাদেশিরা ভালো আছেন। তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করা হচ্ছে। তারা উজবেকিস্তানে আসতে পারলে বিভিন্ন ফ্লাইটে বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা সহজ হবে। যদিও আফগান শরণার্থীরা যাতে ঢুকে পড়তে না পারে, সে জন্য স্থলসীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে উজবেকিস্তান।’
আটকে পড়া বাকিদের কী অবস্থা
আফগান টেলিযোগাযোগ কোম্পানি এডব্লিউসিসিতে কাজ করতেন সাত বাংলাদেশি প্রকৌশলী। তারা কাবুলে আটকা পড়েছেন।
ওই প্রকৌশলীরা হলেন রাজিব বিন ইসলাম, কামরুজ্জামান, নজরুল ইসলাম, মাসুদ করিম, মো. ইমরান হোসেন, শেখ ফরিদ উদ্দিন ও মো. মনিরুল হক।
এ ছাড়া এডিবির হাইওয়ে প্রকল্পে কর্মরত সিভিল ইঞ্জিনিয়ার আমজাদ হোসেন কাবুলে আটকা পড়েছেন।
উত্তরাঞ্চলীয় মাজার-ই-শরিফে আটকে পড়েছেন ইএনএফজেড কোম্পানিতে কর্মরত প্রকৌশলী আবুল খায়ের, মো. মনিরুল হক ও শেখ ফরিদ উদ্দিনসহ কয়েকজন।
ব্র্যাকের সরফরাজ সিদ্দিক, কামাল হোসেন ও ইউসুফ হোসেন আটকা পড়েছেন।
কাবুলে গ্র্যান্ড টেকনোলজি অ্যান্ড রিসোর্সে কাজ করতেন সোহরাব হোসেন। আফগানিস্তান সরকারের নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রকল্পে আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা ছিলেন মৃদুল কান্তি বিশ্বাস। তারা এখন কাবুলে আটকে আছেন।
বাংলাদেশ থেকে যাওয়া তাবলিগ জামাতের ছয় সদস্য ফিরে আসার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কোনো সহায়তা চাননি।
মার্কিন ব্যবস্থাপনায় চট্টগ্রামে ফিরতে পারেন ১৬০ শিক্ষার্থী
ছুটিতে বাড়ি গিয়ে কাবুলসহ দেশটির বিভিন্ন শহরে আটকা পড়েছেন আফগানিস্তানের ১৬০ শিক্ষার্থী। এদের সবাই চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব উইমেনের শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার সানাউল করিম চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এই আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের ফিরে আসার খবর জেনেছি। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম, যুক্তরাষ্ট্রের সাপোর্ট ফোরাম, ইউএসএআইডি ও বিশ্বব্যাংকের তত্ত্বাবধানে তারা ফিরে আসছেন।
‘সংস্থাগুলো আন্তর্জাতিক এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডিং করে থাকে। তাই তারাই এ বিষয়ে সব জানে। তারা কোন বিমানে, কখন, কোথায় অবতরণ করবেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে এ ধরনের কোনো তথ্য নেই।’
বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এই ১৬০ আফগান শিক্ষার্থীর সঙ্গে ফিরতে পারেন কয়েকজন আটকে পড়া বাংলাদেশি। শেষ খবর অনুযায়ী আটকে পড়া বাংলাদেশিরা বিমানবন্দরেই ঢুকতে পারেননি।
রাষ্ট্রদূত জাহাঙ্গীর আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কয়েকজন আফগান আমাদের কাছে ভিসার আবেদন করেছিলেন। তাদের ভিসা দেয়াও হয়েছে। কিন্তু তারা আসতে পারেননি পাসপোর্ট নিতে। উজবেক সরকার শরণার্থী ঢল সামলাতে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে।’
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুরে অগ্রণী ব্যাংকের শাখা থেকে ১০ কোটি ১৩ লাখ টাকা লোপাটের অভিযোগে শাখা ম্যানেজারসহ তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার তাদের বরখাস্ত করা হয় বলে শনিবার দুপুরে জানান অগ্রণী ব্যাংকের রাজশাহী সার্কেলের জেনারেল ম্যানেজার আফজাল হোসেন।
বরখাস্ত হওয়া ব্যাংক কর্মকর্তারা হলেন- কাশিনাথপুর শাখার ব্যবস্থাপক (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) হারুন বিন সালাম, সিনিয়র অফিসার আবু জাফর ও ক্যাশ অফিসার সুব্রত চক্রবর্তী।
আফজাল হোসেন বলেন, ‘ব্যাংক পরিদর্শনে গিয়ে ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকা খোয়া যাওয়ার সত্যতা পাওয়া যায়। পরে পুলিশে অভিযোগ দিলে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে একটি তদন্ত দল পুরো বিষয়টির তদন্ত করছে। দলটির প্রধান হলেন সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার আনোয়ার হোসেন। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর অভিযুক্ত ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের শুক্রবার বিকেলে পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হয়। বিচারক আনোয়ার হোসেন সাগর গ্রেপ্তারকৃতদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুন:জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদের বলেছেন, ‘তিন বিদেশি বড় শক্তি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে কাজ করেছিল। আরও বেশ কয়েকটি বিদেশি শক্তি আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করার জন্য প্রস্তুত ছিল।’
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে শনিবার জাপার কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বর্ধিত সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
জিএম কাদের বলেন, ‘৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিদেশি বন্ধুদের সঙ্গে বৈঠক করে পরিষ্কার বুঝেছি, তিনটি বিদেশি বড় শক্তি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে এবং নির্বাচন সফল করতে কাজ করে যাচ্ছে। শুধু তারা নয়, আরও বেশ কয়েকটি বিদেশি শক্তি আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করতে প্রস্তুত ছিল।’
নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছিল জানিয়ে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচন বন্ধ করে কোনো দেশে সরকার পরিবর্তন সম্ভব নয়। তাই জাতীয় পার্টি নিয়মতান্ত্রিকভাবে রাজনীতি করছে।
‘নির্বাচনের আগে বর্ধিত সভায় নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে মতামত দেয়া হয়েছিল। ভোটে না গেলে ভবিষ্যতে জাতীয় পার্টিকে টিকিয়ে রাখা যাবে কী না সন্দেহ ছিল। তাই নির্বাচনে গিয়েছি।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। ভোটের আগ মুহূর্তে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তখন সুষ্ঠুভাবে পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করেছি। মনে হয়েছে, বিভিন্ন বিদেশি শক্তি বিভিন্নভাবে নানা দিকে নিচ্ছিল।
‘আর বিএনপির আন্দোলন নিয়ে পরিষ্কার ধারণা ছিল, তারা সফল হবে না। আন্দোলন চলাকালে তৃতীয় শক্তি এসে সরকার পরিবর্তন করে- এমন ইতিহাস বাংলাদেশে নেই। ফলে বিএনপি এক কিংবা ১০ লাখ বা এক কোটি লোক নিয়ে রাস্তায় নামলেও তাদের আন্দোলন সফল হবে না, তা বুঝতে পেরেছিলাম।’
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিএনপি ও জামায়াত আন্দোলনে পরাস্ত হয়ে জাতীয় পার্টিকে দোষ দিচ্ছে। তবে এটা ঠিক যে নির্বাচন ভালো হয়নি। সরকার জাতীয় পার্টিকে গৃহপালিত দল হিসেবে দেখতে চায়। তবে তা কখনও সম্ভব নয়। জাতীয় পার্টি কখনোই অনুগত বিরোধী দল ছিল না এবং আমরা গৃহপালিত বিরোধী দল হতে রাজি নই।’
তীব্র গরম থেকে বাঁচতে ও বৃষ্টির আসায় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় নেচে গেয়ে ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছেন স্থানীয়রা। লোকজন।
উপজেলার চন্দ্রখানা বালাটারি গ্রামে শনিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বিয়ের অনুষ্ঠান চলে।
ওই এলাকার বাসিন্দা সাহাপুর আলীর স্ত্রী মল্লিকা বেগমের আয়োজনে বিয়েতে অসংখ্য নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। নাচ গানের মধ্যে দিয়ে ব্যাঙের বিয়ে শেষে বরণ ডালায় ব্যাঙ দুটিকে নিয়ে পুরো গ্রাম ঘুরে বেড়ান তারা। এ সময় গ্রামবাসীদের কাছ থেকে চাল ডাল সংগ্রহ করে বিয়েতে অংশগ্রহণকারীদের খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়।
বিয়ের আয়োজনকারী মল্লিকা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কিছুদিন ধরে তীব্র গরম। তাপমাত্রা বেশি হওয়ার কারণে আমরা কষ্টে রয়েছি; গ্রামের মানুষজন অস্তিত্বতে আছে। কেউই কোনো কাজ কামাই করতে পারছেন না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আগের যুগের মানুষরা ব্যাঙের বিয়ে দিলে বৃষ্টি হতো। সেই বিশ্বাস থেকেই আজ ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছি।’
বিয়ে দেখতে আসা জাহিদ নামের একজন বলেন, “আমার জীবনে প্রথম ব্যাঙের বিয়ে দেখলাম। খুবই ভালো লেগেছে। ‘বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের বিয়ে’ বিষয়টি প্রথম জানলাম।”
বৃদ্ধ আজিজুল হক বলেন, ‘বৃষ্টি না হওয়ার কারণে আবাদের ক্ষতি হচ্ছে। তাই বৃষ্টির আশায় ব্যাঙের বিয়েতে অংশগ্রহণ করেছি।’
রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘কুড়িগ্রামে বেশ কিছুদিন ধরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। আজ (শনিবার) জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।’
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে এক বছরের শিশু হুমাইরা আক্তারের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকালে সদর উপজেলার মদিনা বাজার এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মদিনা বাজারের উত্তর পাশে খানকা শরীফের সামনের সড়কে দুটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে।
এ সময় রাস্তার পাশে এক বছরের শিশু সন্তান হুমাইরাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা হাবিবা বেগমের ধাক্কা খান অটোরিকশার সঙ্গে। এতে শিশু হুমাইরা মায়ের কোল থেকে রাস্তায় ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হয়। শিশুটিকে দ্রুত মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় অটোরিকশা দুটি আটক করা হয়েছে। পালিয়ে যাওয়া দুই চালককে আটকের চেষ্টা চলছে।
চলমান তাপপ্রবাহে সারা দেশের সঙ্গে পুড়ছে রাজধানী ঢাকাও। প্রচণ্ড গরমে দুর্বিষহ নগর জীবন। এ অবস্থায় রাজধানীর সড়ক-মহাসড়কে পানি ছিটাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ডিএনসিসির চিফ হিট অফিসারের পরামর্শে এমন উদ্যোগ নিয়েছে সিটি কর্তৃপক্ষ।
শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বায়ু দূষণ রোধ ও তীব্র দাবদাহে শহরকে ঠাণ্ডা রাখতে ডিএনসিসির ওয়াটার স্প্রে (পানি ছিটানো) কার্যক্রম পরিদর্শন করেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।
এ সময় তিনি বলেন, ‘দুটি স্প্রে ক্যানন প্রধান সড়কে পানি ছিটাবে। এগুলো বেশ বড় হওয়ায় গলির সড়কে প্রবেশ করতে পারবে না৷ গলির সড়কে পানি ছিটানোর জন্য দশটি ব্রাউজার কাজ করবে। এগুলোর মাধ্যমে সড়কগুলো ভিজিয়ে ঠাণ্ডা রাখা হবে।
‘এছাড়াও ডিএনসিসির পার্কগুলোতে স্প্রে ক্যাননের মতো কৃত্রিম বৃষ্টির ব্যবস্থার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছি। এক সপ্তাহের মধ্যে পার্কগুলোতে কৃত্রিম বৃষ্টির ব্যবস্থা করা হবে।’
এ সময় তিনি বলেন, ‘চিফ হিট অফিসার (সিএইচও) বুশরা আফরিনের পরামর্শে চলমান তীব্র দাবদাহে জনগণকে স্বস্তি দিতে সড়কে পানি ছিটানো এবং ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডে বিনামূল্যে খাবার পানি সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘প্রতিটি ওয়ার্ডে তিনটি বিশেষ ভ্যানগাড়ি (৫০০ লিটার পানির ট্যাংক সংবলিত) পথচারীদের পানি পান করানোর জন্য নামানো হয়েছে। ভ্যানগুলো বিশুদ্ধ খাবার পানি নিয়ে ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরবে। এই ভ্যানগুলো ছোট আকারে করা হয়েছে যেন শহরের অলিগলিতে প্রবেশ করতে পারে।’
চিফ হিট অফিসারের কার্যক্রম সম্পর্কে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘চিফ হিট অফিসার আমাদের পরামর্শ দিচ্ছেন। হিট অফিসার একজন একক ব্যক্তি। তিনি তো কাজগুলো বাস্তবায়ন করবেন না। তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু কাজগুলো আমাদের সবাইকে করতে হবে। তার পরামর্শেই জনগণকে স্বস্তি দিতে আমরা এই কাজগুলো করছি।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অনেকে বলছেন যে চিফ হিট অফিসার সিটি করপোরেশন থেকে বেতন পাচ্ছেন। বাস্তবে সিটি করপোরেশন থেকে তিনি একটি টাকাও পান না। এমনকি সিটি করপোরেশনে তার কোনো বসার ব্যবস্থাও নেই।
‘হিট অফিসার নিয়োগ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান অ্যাড্রিয়েন আরশট-রকফেলার ফাউন্ডেশন রেসিলিয়েন্স সেন্টার (আরশট-রক)। প্রতিষ্ঠানটি সারা বিশ্বে সাতজন চিফ হিট অফিসার নিয়োগ করেছে এবং তারা সবাই নারী।’
ওয়াটার স্প্রে পরিদর্শনকালে অন্যান্যের মধ্যে ডিএনসিসি'র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী ও প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ফিদা হাসান উপস্থিত ছিলেন।
মুন্সীগঞ্জে হিটস্ট্রোকে সাখাওয়াত হোসেন মুকুল নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির মাঠ পর্যায়ের বিপনন বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
২৭ বছর বয়সী মুকুলের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলায়।
প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির মুন্সীগঞ্জ শহরের সেলস রিপ্রেজেনটেটিভ মোহাম্মদ রোকন জানান, শনিবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জ শহরের অদূরে মুন্সীরহাট এলাকায় মাঠ পর্যায়ে কর্মরত অবস্থায় তীব্র গরমের কারণে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন মুকুল। সঙ্গে সঙ্গে তাকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালে নিয়ে এলে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস হাসান জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগে পথেই তার মৃত্যু হয়েছে। নিহতের হিটস্ট্রোকের লক্ষণ রয়েছে বলে জানান তিনি।
নিহতের মরদেহ তার নিজ জেলায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
আকস্মিক কালবৈশাখীর তাণ্ডবে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ও শমশেরনগর ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে আরও বেশ কিছু বাড়িঘর। ঝড়ের পর খোলা আকাশের নিচে দিনযাপন করছে অর্ধশতাধিক পরিবার।
এ ছাড়াও গাছপালা উপড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙেছে এবং তার ছিঁড়ে পড়ে। এতে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ওই অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
শুক্রবার রাত ৩টার দিকে এই ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হয়। প্রায় সাড়ে ১৫ ঘণ্টা পর শনিবার বিকেল ৪টার দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কালবৈশাখীর তাণ্ডবে উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের পতনঊষার, ধূপাটিলা, উসমানগড়, ব্রাহ্মণঊষারসহ ৮টি গ্রামের প্রায় শতাধিক ঘর এবং শমশেরনগর ইউনিয়নের কেছুলুটি, ভাদাইরদেউল গ্রামে আরও কয়েকটি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অসংখ্য গাছ-বাঁশ উপড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ও লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
পতনঊষার ইউনিয়নের নেছার মিয়া, ময়নুল মিয়া, খুশবা বেগম, লিপি বেগম, রহমান মিয়া, সুফিয়ান মিয়া, কালাম মিয়া, আনু মিয়া, ফখরুল মিয়াসহ অসংখ্য পরিবার দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন।
ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, গতরাতে কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে তীব্র শিলাবৃষ্টি হয়। মুহুর্তের মধ্যে তাদের ঘরবাড়ি উড়িয়ে নিয়ে যায়। আমরা এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি। সহোযোগিতা না পেলে আমাদের রাস্তায় থাকতে হবে।’
পতনঊষার ইউপি সদস্য তোয়াবুর রহমান জানান, আকস্মিক ঝড়ে পতনঊষার গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যাদের বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে সেসব দরিদ্র পরিবারের জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে।
পতনঊষার ইউপি চেয়ারম্যান অলি আহমদ খান বলেন, ‘কালবৈশাখী ঝড়ে আমার ইউনিয়নে প্রচুর পরিমাণ বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অনেক পরিবার খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। তাদের দ্রুত সহায়তার প্রয়োজন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাহেবকে অবহিত করা হয়েছে।’
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক গোলাম ফারুক মীর বলেন, ‘ঝড়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েকটি খুঁটি ভেঙে পড়েছে। অনেক স্থানে তার ছিঁড়ে গেছে। এসব জায়গায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার জন্য কাজ চলছে।’
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ ইউএনও জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘পতনঊষার ইউপি চেয়ারম্যান বাড়িঘর বিধ্বস্তের কথা বলেছেন। তবে পরিপূর্ণ হিসাব জানা যায়নি। চেয়ারম্যানদেরকে বলা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে দেয়ার জন্য। দ্রুত তাদের সহোযোগিতা করা হবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য