নারায়ণগঞ্জে করোনার কারণে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া এক ব্যবসায়ী ত্রাণ চেয়ে উল্টো জরিমানার মুখে পড়ার ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যে ভুল করেছেন, সেটির দায় মেটানো হচ্ছে জনগণের করের টাকায়।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের দেওভোগ নাগবাড়ি এলাকার ফরিদ আহমেদ ১০০ জনের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করতে খরচ করেছেন মোট ৬৫ হাজার টাকা। এই অর্থ জোগাড় হয়েছে তার স্ত্রীর অলংকার বন্ধক রাখার টাকায়।
তিনি থাকেন একটি চারতলা ভবনে। তার একটি গেঞ্জির কারখানা আছে। এ খবর জেনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফা জহুরা তাকে ত্রাণ বিতরণে বাধ্য করেন।
কিন্তু সেই ভবনটি ফরিদের একার না। তার গেঞ্জির কারখানা ২০২০ সালে করোনার প্রাদুর্ভাবের পর থেকে বন্ধ। তার আয়ের কোনো উপায় নেই। প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে আছেন বিপাকে।
ত্রাণ বিতরণের পর নিউজবাংলা এসব তথ্য জানতে পেরে সংবাদ প্রকাশ করে ত্রাণ সত্যিই দরকার ছিল ফরিদের, ভুল ইউএনওর শিরোনামে।
শনিবার রাতে এই সংবাদ প্রকাশ হলে তোলপাড়ের মধ্যে রোববার সকালে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফরিদ আহমেদের সেই টাকা ফিরিয়ে দেয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘উনি (ফরিদ আহমেদ) দরিদ্র মানুষ। তাই তাকে তার খরচকৃত টাকা ফেরত দিতে বলা হইছে।’
এই টাকা কে দেবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এই টাকা সরকারি অনুদানের ঐচ্ছিক ফান্ড থেকে দেয়া হবে।’
ভুল করেছেন ইউএনও, তাহলে জনগণের করের টাকা থেকে তার দায় কেন মেটানো হবে- এমন প্রশ্নে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘যাদের সাহায্য করা হয়েছে তারাও ওই এলাকার অসহায় মানুষই। তারা এমনিতেও সহায়তা পাওয়ার যোগ্য। তাই সরকারি অনুদান টাকা থেকেই দেয়া হবে।’
তবে নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজনের নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েল করের টাকায় ক্ষতিপূরণের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রশাসন বলছে ক্ষতিপূরণের টাকা ফিরিয়ে দেবে। কিন্তু আমাদের দাবি হলো ইউএনও ভুল করেছেন। এর মাশুল কেন সরকার দেবে?
‘কারণ, সরকারের টাকা জনগণের। যিনি ভুল করেছেন তিনিই টাকা দেবেন। একই সঙ্গে আমরা দাবি জানাই, ফরিদ আহমেদকে ত্রাণ সহায়তা করা হোক।’
ফরিদের বাসায় এখন প্রশাসনের ধরনা
রোববার সকাল থেকেই প্রশাসনের ২০ থেকে ২৫ জন মানুষ ফরিদের বাসায় আসতে থাকেন। তারা ফরিদকে আলাদা কক্ষে নিয়ে দরজা বন্ধ করে তার সঙ্গে কথা বলেন।
কিন্তু তারা নিজেদের পরিচয় গণমাধ্যমকে দেননি, আর ফরিদের সঙ্গে কী কথা হয়েছে, সে বিষয়েও কিছু বলেননি।
তবে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা নাসিরউদ্দিনের সঙ্গে কথা হয়েছে নিউজবাংলার। তিনি বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের এখানে পাঠানো হয়েছে। আমরা ফরিদ আহমেদকে নিশ্চিত করেছি, তিনি যে টাকার মালপত্র কিনে বিতরণ করেছেন, সে টাকা ফেরত দেয়া হবে। এবং আমরা পুরো ঘটনাটি তার কাছ থেকে শুনেছি। কিন্তু তা বলতে পারব না। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কথা বলবেন।’
ফরিদ আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আপনারা তো সকাল থেইকা বাড়ি ছিলেন, সবই দেখলেন। সকাল থেকে একের পর এক লোকজন আসতাছে।
‘১১টার দিকে ইউনিয়নের এক কর্মকর্তা আসেন। উনি তো দেড় ঘণ্টা আছিল। কত কথা হইল। ওনারে নাকি উপজেলা অফিস থেকে পাঠাইছে। উনি অনেক কথা জিজ্ঞাসা করছে। সবই তো কইলাম গত কয়দিন যা হইছে। পরে উনি কইল ইউএনও স্যার টাকা দিয়ে দিব আপনারে। এরপর আমার ভাতিজার সাথে ইউএনও স্যারের কথা হয়। ইউএনও নাকি বলছে খরচের মেমো পাঠাইতে। ভাতিজা পাঠায় দিছে। ওই স্যার চলে গেছে।’
ফরিদ বলেন, “এরপর আরও দুইজন আসে। তারাও জিজ্ঞাসা করছে। তাদেরও তো কইলাম। তার কথা হইল, ‘আপনি বাড়ির মালিক নয় এটা তাদের বলে নাই?’ আমি বলছি, তা তো কইছি কিন্তু ওনারা তো আমার কথা শুনেন নাই।”
ফরিদ আহমেদ দুপুরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আইয়ুব আলীর বাসায়ও যান।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দুপুরে মেম্বারের বাসায় গেছিলাম। মেম্বার কইল চিন্তা কাইরেন না টাকা ফেরত পাইবেন।’
ফরিদ আহমেদের ভাতিজা মো. সিয়াম বলেন, ‘সকাল থেকে লোক আসতাছে আর জিজ্ঞাসা করতাছে চাচারে। আমি কথা কইছি কয়েকজনের সাথে। তারা তো যাওয়ার সময় কইতাছে টাকা দিয়া দিব।’
দেখা দিচ্ছেন না ইউএনও
ইউএনও আরিফা জহুরা সকাল থেকেই ফোন ধরছেন না। ১৯ বার কল করার পর তিনি না ধরায় সদর উপজেলা ভবনে তার কার্যালয়ে যান নিউজবাংলার প্রতিনিধি। কিন্তু তার কক্ষে যাওয়ার অনুমতি মেলেনি।
আরিফা বসেন ভবনের দোতলার একটি কক্ষে। নিচতলা দিয়ে ঢুকতে গেলেই বাধা দেন নিরাপত্তাকর্মী। বলেন, ‘অনুমতি লাগবে ভেতরে যেতে।’
এই অনুমতি দেবেন ইউএনও নিজে। কিন্তু তিনি ফোন ধরছেন না, এই বিষয়টি জানালে নিরাপত্তাকর্মী বলেন, ‘ফোন ধরলে আইসেন।’
তবে এ ঘটনার আগে ইউএনও ফোন ধরেছেন, তার কক্ষে গিয়ে সাংবাদিকরা বক্তব্যও নিয়ে এসেছেন। এমনকি ফরিদের বাড়িতে গিয়ে ত্রাণ বিতরণ করে আসার পর শনিবার সন্ধ্যায়ও সাংবাদিকরা তার কক্ষে ঢুকেছেন অবাধে। তিনি কথা বলেছেন হাসিমুখেই।
তদন্ত কমিটি
ফরিদ আহমেদকে ত্রাণ বিতরণে বাধ্য করার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামিম ব্যাপারীকে প্রধান করে তিন সদস্যের এই কমিটিকে বুধবারের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুস্তাইন বিল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘তদন্তে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে আসবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে।’
ঘটনার শুরু যেভাবে
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের দেওভোগ নাগবাড়ি এলাকায় বাসা ফরিদ আহমেদের।
বৃহস্পতিবার ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে খাদ্য সহায়তা চান তিনি। খাবার নিয়ে আসেন উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন, অফিস সহকারী কামরুল ইসলাম। পরে তারা ভবন দেখে ফোন দিলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফা জহুরা আসেন ঘটনাস্থলে। দেন শাস্তির ঘোষণা।
ইউএনও জানান, সরকার প্রতি প্যাকেটে যে পরিমাণ খাবার দেয় দুস্থদের, সেই পরিমাণ খাবারসহ ১০০ প্যাকেট করে বিতরণ করতে হবে।
নির্দেশমতো শনিবার বিকেলে ফরিদ আহমেদ সেই খাবার বিতরণও করেন। আর সেখানে উপস্থিত ছিলেন ইউএনও স্বয়ং।
ঘটনাস্থলে গিয়ে ফরিদের জীবনের কাহিনি জেনেছে নিউজবাংলা। কিন্তু জানেননি ইউএনও।
ফরিদ আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাগো বাড়ি আছে। কিন্তু এই বাড়ি ছয় ভাই ও এক বোনের। আমাগো সবার আংশিক ভাগ আছে। এর মধ্যে আমি নিচ তলায় থাকি। আমার ১৬ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী ছেলে আছে। মেয়ে মহিলা কলেজে পড়ে। তাদের নিয়া আমার সংসারে অনেক টানাটানি।’
৩৩৩ নম্বরে কেন ফোন
ইউএনও আরিফা জহুরা দাবি করেছেন, ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে আসলেই খাবার পাওয়া যায় কি না, সেটি যাচাই করতেই ফোন করেছিলেন ফরিদ।
তবে ফরিদ বলেন উল্টো কথা।
তিনি বলেন, ‘প্রতি ঘণ্টা আমি এফএম রেডিও শুনি। সেখানে শুনছি ৩৩৩ নম্বরে ফোন করলে খাবার আসে। এ জন্য ফোন করছি কিন্তু জানতাম না এটা নিম্ন আয়ের মানুষের। আমিও তো পেটের দায়ে অভাবে পইড়াই ফোন করছি।
‘আমার খাদ্য প্রয়োজন ছিল বলেই ফোন করছি। সেখান থেকে তারা বলছে আপনার আবেদন গ্রহণ করা হইল। পরে তারা ফোন করে নাম, ঠিকানাসহ আমার ব্যক্তিগত তথ্য জিজ্ঞাসা করছে, আমি সব বলছি। এরপর তারা আইসা খাদ্য না দিয়া বরং আমারে ফাইন করে দিয়ে গেছে।’
জরিমানার আদেশের বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘কাশিপুর ইউনিয়নে পরিষদের (ইউপি) সদস্য আইয়ুব আলী আমাকে ডেকে নিয়ে বলেন, আপনি এই খাদ্য পাওয়ার উপযুক্ত নন। এই কথা বলে আমাকে নানাভাবে ধমকাতে থাকেন।
‘পরে আমি ভুলও স্বীকার করেছি। তার কিছুক্ষণ পর ইউএনও স্যার আসেন এবং আমাকে ডেকে নিয়ে নানা প্রশ্ন করার পর ১০০ মানুষকে খাদ্য সহায়তা করার জন্য নির্দেশ দেন। ইউএনও স্যার চলে যাওয়ার পর ইউপি সদস্যসহ অনেক খাদ্য সহায়তা করা না হলে তিন মাসের সাজা হবে বলে জানানো হয়।’
আরও পড়ুন:রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, এসব নির্বাচন নিয়ে কোনো উদ্বেগ নেই, ভালোভাবেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করছি। এজন্য আপনাদের (সাংবাদিক) সাহায্য ও সহযোগিতা দরকার।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে রাকসু ও চাকসু নির্বাচন-২০২৫ উপলক্ষে সার্বিক প্রস্তুতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিষয়ক সভা শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি রাকসু ও চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আজ তাদের সঙ্গে আলাপ করেছি। তারা দেশের সবচেয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত, শুধু দেশেই না বিদেশেও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত । যারা ভোট দেবে তারাও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত।
তিনি বলেন, ‘তাদের অভিজ্ঞতা আজ শেয়ার করলাম। যেহেতু আমাদের একটা জাতীয় নির্বাচন আছে ফেব্রুয়ারিতে, এই নির্বাচনগুলো দেখে আমাদের কিছু অভিজ্ঞতা হচ্ছে। সেটা আমরা জাতীয় নির্বাচনে কীভাবে প্রয়োগ করতে পারবো সেজন্য আজকে বসেছিলাম।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তারা আজ ভালো ভালো সাজেশন দিয়ে গেছে। সেই সাজেশন আমরা ভবিষ্যতে কাজে লাগাবো। একইসঙ্গে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় তাদেরও উপকার হয়েছে। যেহেতু দুইটা নির্বাচন হয়েছে। সেখানে নির্বাচনে কী করতে হবে, ছোটখাটো ভুল-ত্রুটি থাকলে সেগুলো কীভাবে সমাধান করা হবে, এসব নিয়ে বিস্তারিত কথা হয়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সভায় তারা কোনো ধরনের শঙ্কার কথা জানায়নি।
আজকের সভায় কি ধরনের সাজেশন এসেছে-এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে তারা বলেছে- কতগুলো সেন্টার হওয়া দরকার, ভোট গণনা কীভাবে হবে, কালি কীভাবে ব্যবহার করতে হবে, এসব নিয়ে কথা হয়েছে। দ্রুত ফল ঘোষণার জন্যও কি ব্যবস্থা নেয়া যায়, আলোচনা হয়েছে। ভোটারদের ছবিযুক্ত আইডি কার্ড ও ভোটার তালিকা যেন স্বচ্ছ থাকে এসব বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে।
ব্রিফিংয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার বলেন, রাকসু ও চাকসু নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হয়, এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ডাকসু ও জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ দুটি নির্বাচন থেকে অনেক কিছু শনাক্ত হয়েছে। এসব নির্বাচনে কোন বিষয়গুলো কাজ করেছে বা কোন বিষয়গুলো কাজ করেনি, তার একটি ধারণা পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে আমরা এখানে এসেছি। আজকের সভায় ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। এ দুটি নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা আছে। ভালো নির্বাচন হবে বলে আশা করছি।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ৪৭ তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি পেশ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া নাহিদ ইসলাম।
বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আজ জবানবন্দি পেশ শেষ করেন নাহিদ। তিনি গতকাল জবানবন্দি পেশ শুরু করেন।
আজ বিকেলে তাকে জেরা করবেন এই মামলায় পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন।
এ মামলায় প্রসিকিউসন পক্ষে আজ চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এসএইচ তামিম শুনানি করেন। সেই সাথে অপর প্রসিকিউটররা শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন।
উক্ত মামলায় পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। এ মামলায় গ্রেফতার হয়ে পরে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
একপর্যায়ে এ মামলায় দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে (অ্যাপ্রোভার) রাজসাক্ষী হতে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের আবেদন মঞ্জুর করেন ট্র্যাইব্যুনাল। পরবর্তীকালে এ মামলার ৩৬ তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন রাজসাক্ষী পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
এ মামলাটি ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, এর দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব অপরাধের বিচার কাজ চলছে
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, পরিবারে পুরুষের সঙ্গে নারী জেলেদেরও কার্ড থাকতে হবে। তিনি বলেন, সরকারের দেওয়া জেলে কার্ডে পুরুষ জেলেদের নামই আসে, মাত্র ৪ শতাংশ সেখানে নারী। পরিবারে একজন চাকরি করলে তিনিই চাকরিজীবী হোন কিন্তু যারা মাছ ধরে তার পুরো পরিবার এ কাজে যুক্ত। এ প্রক্রিয়ায় বেশিরভাগ সময় নারীদের বেশি কাজ করতে হয়। তাই পুরুষ জেলেদের সঙ্গে নারীদেরও কার্ড দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
উপদেষ্টা আজ বুধবার সকালে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বেসরকারি গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডিজ (সিএনআরএস) আয়োজিত “টেকসই মৎস্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক জাতীয় নীতি সংলাপ”-এ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, এ সেমিনার এসে দায়িত্ব বেড়ে গেছে। আমাদের জেলেদের বিশেষ করে নারী জেলেদের নিয়ে আরো বেশি কাজ করতে হবে। এখন পর্যন্ত নারীদেরকে কৃষকের স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য লড়াই করতে হচ্ছে। আর নারী জেলেদের কথা তো বলাই বাহুল্য। অথচ নারী জেলেরা তার পরিবার পরিজনের জন্য নদীতে মাছ ধরে। স্বামীর অবর্তমানে সংসার চালায়।
মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, "এ পেশায় পুরো পরিবারকে নিয়ে কাজ করতে হয়। মান্তা সম্প্রদায়ের দুঃখ দুর্দশার কথা শুনে খুব কষ্ট পেলাম।" জেলে সম্প্রদায়ের আইনগত সমস্যা নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ঝড় তুফানে অনেক জেলে মারা যায়, কেউ হারিয়ে যায়, সেসব পুরুষের হদিস না থাকায় ব্যাংকের টাকাও তুলতে পারে না তাদের স্ত্রীরা। তা ছাড়া নারীকে বিধবা ভাতাও দেওয়া যায় না। এসব আইনি জটিলতা দূর করতে হবে।
তিনি বলেন, "আমাদের আইনগুলো পুরুষদের কথা চিন্তা করে করা। সেখানে নারীদের স্থান খুব কম। আর আগের মৎস্য আইনও একই ধরনের। তাই মৎস্য আইনের খসড়া ২০২৫ -এ আমরা এসকল সমস্যার সমাধানে দৃষ্টি দিয়েছি। আর নারীদের স্বীকৃতি দিলে হলে সংখ্যার স্বীকৃতি দিতে হবে। অথচ আমাদের তালিকায় নারীজেলের সংখ্যা খুবই নগন্য, মাত্র ৪ শতাংশ। কিন্তু সমাজে অসংখ্য নারী জেলে রয়েছে। এসব ঘাটতি পূরণে আমরা কাজ করছি। "
অমৎস্যজীবীরা মৎস্যজীবীর কার্ড নিয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আগের তালিকা অনুসন্ধান করে দেখেছি অমৎস্যজীবীরা মৎস্যজীবীর কার্ড নিয়ে গেছে। এখন সেগুলো বাতিল করা হয়েছে। আমরা চাই যেন প্রকৃত জেলেরা কার্ড পেতে পারে। সেইসঙ্গে যে পরিবারে পুরুষ জেলের কার্ড থাকবে সেখানে নারীদেরও থাকতে হবে।
কাঁকড়া ও ঝিনুক মানুষের খাদ্যের অংশ এটিকে বন অধিদপ্তরের সংজ্ঞা থেকে বের করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তা ছাড়া যারা কীটনাশক ব্যবহার করে মাছ ধরছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জলমহাল ইজারা সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, জলমহালের কাছের মানুষের নামে অন্যরা জলমহাল ইজারা নেয়। এক্ষেত্রে জৈবভিত্তিক ইজারা দিতে হবে, অর্থাৎ এ পেশার সঙ্গে জড়িত জেলেদের দিতে হবে। বাওড়ে ইজারা জেলেদের দেওয়ার কথা নিশ্চিত হচ্ছে, তবে হাওর নিয়েও ভূমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা চলছে। যাতে প্রকৃত জেলেরা তা পায়।
নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা সময়ে যতজনকে ভিজিএফ কার্ডের আওতায় সহযোগিতা দেওয়া দরকার তা দেওয়া সম্ভব হয় না। এর পরিমাণ ও সংখ্যা বাড়ানোর জন্য আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তুলতে চাই।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আব্দুর রউফ। তিনি বলেন, নারী শ্রমিকরা পুরুষের চেয়ে ৩০ শতাংশ কম মজুরি পায়। তা ছাড়া আমাদের জলমহাল ইজারা রাজস্বভিত্তিক দেওয়া হয়। এটি বাতিল করে জাল যার জলা তার নীতিতে নিতে হবে। জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি কার্ড নিশ্চিত করে জেলে কার্ড দেওয়া হবে। বর্তমানে আমাদের নিবন্ধনে ১৭ লাখ জেলের মধ্যে ৪৪ হাজার রয়েছে নারী। এ সংখ্যা আমরা বৃদ্ধি করতে হবে।
এসময় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিএনআরএস এর পরিচালক মি. এম. আনিসুল ইসলাম। এমপাওয়ারিং উমেন থ্রু সিভিল সোসাইটি অ্যাক্টর্স ইন বাংলাদেশ (ইডাব্লিউসিএসএ) প্রকল্পের পরিচিতি উপস্থাপন করেন অক্সফাম বাংলাদেশের প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর শাহজাদী বেগম।
সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিএনআরএস-এর পরিচালক ড. এম. আমিনুল ইসলাম এবং জাগো নারী টিম লিডার রিসার্চ আহমেদ আবিদুর রেজা খান।
সংলাপ শেষে মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে নারী মৎস্যজীবীদের ক্ষমতায়ন ও টেকসই মৎস্য ব্যবস্থাপনা জোরদারে বিভিন্ন সুপারিশ উপস্থাপিত হয়।
সংলাপে সরকারি কর্মকর্তা, গবেষক, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, সিভিল সোসাইটি, শিক্ষাবিদ এবং উপকূলীয় অঞ্চলের মৎস্যসম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, গত বছরের চেয়ে এবার পূজা শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে করতে সরকার বদ্ধপরিকর।
তিনি বলেন, পূজা উপলক্ষে হামলার কোনো হুমকি নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো থাকবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আজ বুধবার রমনা কালী মন্দির পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। এ সময় রমনা কালী মন্দির কমিটির সভাপতি অপর্ণা রায়সহ কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জাহাঙ্গীর বলেন, পূজা নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠানের জন্য ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং করা হবে। সে কারণে একটি নতুন অ্যাপ খোলা হয়েছে। কোথাও কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পূজা শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি পূজা উদযাপন কমিটিকে নজরদারি করার আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান, সে কারণে ধর্মীয় নিয়ম মেনে সবাই এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বিগত সরকারের সময় ২ কোটি টাকা পূজা উপলক্ষে বরাদ্দ দেওয়া হতো। বর্তমান সরকার তা থেকে বাড়িয়ে গত বছর এ লক্ষ্যে ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল; এবার সেটি থেকে বাড়িয়ে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। পূজা মণ্ডপের সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরো সহায়তা করা হবে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোঃ মাহফুজ আলম বলেছেন, যেসব শিশু জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ হয়েছে, তাদের লেখা ও স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে 'নবারুণ' পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করতে হবে। এ বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করতে উপদেষ্টা চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। বুধবার (১৭ই সেপ্টেম্বর) ঢাকার তথ্য ভবনে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর প্রকাশিত কিশোর মাসিক পত্রিক 'নবারুণ'-এর লেখকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এই আহ্বান জানান।
'নবারুণ' পত্রিকা নিয়ে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, এই পত্রিকায় শিশু-কিশোরদের আঁকা ছবি ও লেখা গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করতে হবে। 'নবারুণ' পত্রিকায় শিশু-কিশোরদের লেখা ও ছবি বেশি পরিমাণে প্রকাশিত হলে তারা অনুপ্রাণিত হবে। এতে তাদের সৃজনশীলতা বিকশিত হবে।
মাহফুজ আলম বলেন, "যে সরকারই দায়িত্বে আসুক না কেন, শিশু-কিশোরদের ব্যাপারে নিরপেক্ষ থাকা উচিত।" তিনি ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান-সহ আর্থসামাজিক বিভিন্ন বিষয়ের ওপর লেখালিখি করার জন্য লেখকদের প্রতি অনুরোধ জানান।
'নবারুণ' পত্রিকা ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, প্রকাশনার শুরু থেকে (১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দ) এ পর্যন্ত 'নবারুণ' পত্রিকার সকল সংখ্যা ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করতে হবে এবং তা জনগণের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। এতে পাঠক অনলাইনে পুরাতন সংখ্যা পড়ে সমৃদ্ধ হতে পারবেন।
'নবারুণ' পত্রিকার কলেবর বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, 'নবারুণ' পত্রিকায় নতুন লেখকদের জন্য আলাদা বিভাগ চালু করা উচিত। পত্রিকার প্রতি সংখ্যায় কমপক্ষে পাঁচ জন নতুন লেখকের লেখা প্রকাশের জন্য তিনি কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেন। তিনি শিশু-সাহিত্যিকদের নিয়ে দিনব্যাপী একটি কর্মশালা আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
সভায় তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বলেন, যেসব লেখক ৪০-৫০ বছর ধরে লিখছেন, তাঁদের লেখা 'নবারুণ' পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করতে হবে। এতে পত্রিকা আরও সমৃদ্ধ হবে। তিনি 'নবারুণ' পত্রিকার লেখক-সম্মানি বাড়াতে কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দেন।
সভায় 'নবারুণ' পত্রিকার লেখকরা তাঁদের মতামত তুলে ধরেন। তাঁরা 'নবারুণ'-কে একটি অসাধারণ ও সাহসী পত্রিকা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তাঁরা পত্রিকাটির মানোন্নয়নে বেশ কিছু প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদা বেগম। সভার শুরুতে 'নবারুণ' পত্রিকা বিষয়ে তথ্যচিত্র উপস্থাপনা করেন পত্রিকার সম্পাদক ইসরাত জাহান। মতবিনিময় সভাটি সঞ্চালন করেন চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের সিনিয়র সম্পাদক শাহিদা সুলতানা।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
আজ বুধবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য (এমইপি) মুনির সাতোরির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা প্রতিনিধিদলকে জানান, ‘আমরা ইতোমধ্যেই নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করেছি। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ফেব্রুয়ারির শুরুতে, রমজানের ঠিক আগে।’
তিনি উল্লেখ করেন, জনসাধারণ বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে নির্বাচনী উৎসাহ বাড়ছে, কারণ দীর্ঘদিন পর—কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন দশকেরও বেশি সময় পর—ছাত্র সংসদ নির্বাচন আবার শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন হবে শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর।’ তিনি যোগ করেন, কিছু শক্তি এখনো নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে, তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
প্রধান উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন, তরুণ ভোটাররা এবার রেকর্ড সংখ্যায় ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে, কারণ ১৫ বছরেরও বেশি সময় পর অনেকেই প্রথমবারের মতো ভোট দেবে।
তিনি বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য এক নতুন সূচনা বয়ে আনবে। এটি আমাদের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে—জাতির জন্য এক নতুন যাত্রা।’
এক ঘণ্টাব্যাপী আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা ও ইউরোপীয় আইনপ্রণেতারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার উদ্যোগ, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক রূপান্তরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অব্যাহত সমর্থন এবং চলমান রোহিঙ্গা মানবিক সংকট নিয়ে মতবিনিময় করেন।
আগামী নির্বাচন বাংলাদেশে এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে উঠতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন ইউরোপীয় আইনপ্রণেতারা। একজন আইনপ্রণেতা প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সরকারের গত ১৪ মাসের ‘অসাধারণ’ প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।
একজন ডাচ আইনপ্রণেতা মন্তব্য করেন, বাংলাদেশ কতিপয় দেশের মধ্যে অন্যতম, যেখানে ‘ঘটনাগুলো সঠিক পথে এগোচ্ছে।’
প্রধান উপদেষ্টা ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য বাড়তি তহবিল প্রদানের আহ্বান জানান।
বিশেষ করে সম্প্রতি অর্থাভাবের কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের স্কুলগুলো পুনরায় চালু করতে সহায়তা প্রদানের অনুরোধ জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ শ্রম সংস্কারগুলো তুলে ধরে বলেন, এসব পদক্ষেপ বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্ক আরও জোরদার করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে ওয়েস্টিন পারনাস হোটেলে আজ থেকে ০৩(তিন) দিনব্যাপী (১৬-১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫) গ্লোবাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার কো-অপারেশন কনফারেন্স (জিআইসিসি)-২০২৫ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আজ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সেতু বিভাগের সচিব ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক জনাব মোহাম্মদ আবদুর রউফ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন। সম্মেলনে সেতু সচিব সেতু বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্পের উপর প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। সেতু সচিব প্রেজেন্টেশনে উল্লেখ করেন সেতু বিভাগের কয়েকটি প্রকল্পে কোরিয়ান ইডিসিএফ/ইডিপিএফ (EDCF/EDPF) অর্থানয়ের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের পরিবহন খাতে দক্ষিণ কোরিয়ার কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে।
জিআইসিসি-২০২৫ সম্মেলনের লক্ষ্য কোরিয়ান নির্মাণ সংস্থাগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি করা এবং বিভিন্ন দেশের প্রকল্প বাস্থবায়নকারীদের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপন করা। এটি মূলত একটি বিজনেস-টু-বিজনেস প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে, যেখানে কোরিয়ান কোম্পানিগুলো বিদেশী সরকার, প্রজেক্ট ডেভেলপার এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারে। সম্মেলনে প্রায় ৫০০ জন অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন, যার মধ্যে ৩০টি দেশের মন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এবং কোরিয়ান শীর্ষস্থানীয় নির্মাণ সংস্থাগুলির কর্মকর্তারা রয়েছেন।
এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্যগুলো হলো: বিভিন্ন দেশের আসন্ন অবকাঠামো প্রজেক্ট সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও আদান-প্রদান, বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন, নতুন প্রজেক্টে অংশগ্রহণের জন্য চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এবং কোরিয়ান উন্নত প্রযুক্তি যেমন স্মার্ট সিটি, হাই-স্পিড রেল, এবং স্মার্ট পোর্ট সিস্টেমের সাথে পরিচিতি করা।
এছাড়াও সম্মেলনের বাকী অংশে বিভিন্ন দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের প্যানেল আলোচনা, বিভিন্ন দেশের প্রজেক্ট ব্রিফিং, ব্যক্তিগত বিজনেস মিটিং, কোরিয়ান শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলো তাদের নতুন প্রযুক্তি প্রদর্শন করবে।
মন্তব্য