তিনি থাকেন চার তলা বাড়িতে, গেঞ্জি কারখানাও আছে। এটুকু সত্য। কিন্তু এর পেছনে আরও অনেক কাহিনি আছে।
সেই কারখানা বন্ধ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে। পরে সংসার চালাতে সেই ব্যক্তি কাজ নিয়েছেন আরেক কারখানায়, কিন্তু চোখের সমস্যায় সেই কাজও করতে পারেন না। সংসারের আয় নেই। আর তিনি যে বাসায় থাকেন, সেটি তাদের ছয় ভাই-বোনের। নিজের অংশ কমই।
এসব কথা না জেনেই ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে খাদ্য চাওয়ায় কেবল বাড়ি দেখে আর কারখানা থাকার খবর শুনে তাকে ১০০ জনকে খাবার বিতরণে বাধ্য করল প্রশাসন।
তাকে খাদ্য বিতরণে বাধ্য করা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এখন বলছেন, তাদের ভুল হলে যে টাকার ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে, সেটি সেই ব্যক্তিকে ফেরত দেয়া হবে।
তবে ইউএনওর ভুলের এই খেসারত রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে মেটানো হবে কি না, এ নিয়ে আছে প্রশ্ন।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের দেওভোগ নাগবাড়ি এলাকায় বাসা তার। নাম ফরিদ আহমেদ।
বৃহস্পতিবার ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে খাদ্য সহায়তা চান তিনি। খাবার নিয়ে আসেন উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন, অফিস সহকারী কামরুল ইসলাম। পরে তারা ভবন দেখে ফোন দিলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফা জহুরা আসেন ঘটনাস্থলে। দেন শাস্তির ঘোষণা।
জানান, সরকার প্রতি প্যাকেটে যে পরিমাণ খাবার দেয় দুস্থদের, সেই পরিমাণ খাবারসহ ১০০ প্যাকেট করে বিতরণ করতে হবে।
নির্দেশ মতো শনিবার বিকালে ফরিদ আহমেদ সেই খাবার বিতরণও করেন। আর সেখানে উপস্থিত ছিলেন ইউএনও স্বয়ং।
ঘটনাস্থলে গিয়ে ফরিদের জীবনের কাহিনি জেনেছে নিউজবাংলা। কিন্তু জানেননি ইউএনও।
ফরিদ আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাগো বাড়ি আছে। কিন্তু এই বাড়ি ছয় ভাই ও এক বোনের। আমাগো সবার আংশিক ভাগ আছে। এর মধ্যে আমি নিচ তলায় থাকি। আমার ১৬ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী ছেলে আছে। মেয়ে মহিলা কলেজে পড়ে। তাদের নিয়া আমার সংসারে অনেক টানাটানি।’
নিজের কারখানার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গত বছর করোনা মহামারি থেকে আমি বসা। বর্তমানে আমার কারখানা চলে না। এই করোনার কারণে আমি আরও সমস্যার মুখে পড়ছি। এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত।
‘কারখানা দেয়ার আগে যে হোসিয়ারিতে দীর্ঘদিন কাটিং মাস্টার ছিলাম। এখন আবার সেখানে কাজ করি। আমার দুই চোখে অনেক কম দেখি।’
৩৩৩ নম্বরে কেন ফোন
ইউএনও আরিফা জহুরা দাবি করেছেন ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে আসলেই খাবার পাওয়া যায় কি না, সেটি যাচাই করতেই ফোন করেছিলেন ফরিদ।
তবে ফরিদ বলেন উল্টো কথা।
তিনি বলেন, ‘প্রতি ঘণ্টা আমি এফএম রেডিও শুনি। সেখান শুনছি ৩৩৩ নম্বরে ফোন করলে খাবার আসে। এ জন্য ফোন করছি। কিন্তু জানতাম না এটা নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য। তবে আমিও তো পেটের দায়ে অভাবে পইড়াই ফোন করছি।
‘আমার খাদ্য প্রয়োজন ছিল বলেই ফোন করছি। সেখান থেকে তারা বলছে আপনার আবেদন গ্রহণ করা হইল। পরে তারা ফোন করে নাম, ঠিকানাসহ আমার ব্যক্তিগত তথ্য জিজ্ঞাসা করছে, আমি সব বলছি। এরপর তারা আইসা খাদ্য না দিয়া বরং আমারে ফাইন করে দিয়ে গেছে।’
জরিমানার আদেশের বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘কাশিপুর ইউনিয়নে পরিষদের (ইউপি) সদস্য আইয়ুব আলী আমাকে ডেকে নিয়ে বলেন, আপনি এই খাদ্য পাওয়ার উপযুক্ত নন। এই কথা বলে আমাকে নানাভাবে ধমকাতে থাকেন।
‘পরে আমি ভুলও স্বীকার করেছি। তার কিছুক্ষণ পর ইউএনও স্যার আসেন এবং আমাকে ডেকে নিয়ে নানা প্রশ্ন করার পর ১০০ মানুষকে খাদ্য সহায়তা করার জন্য নির্দেশ দেন। ইউএনও স্যার চলে যাওয়ার পর ইউপি সদস্যসহ অনেকে খাদ্য সহায়তা করা না হলে তিন মাসের সাজা হবে বলে’-সেদিনের ঘটনার এমন বর্ণনা দেন ফরিদ।
টাকা যোগাড় করলেন যেভাবে
ফরিদ আহমেদ জানালেন, কারাভোগের ভয়ে তিনি স্ত্রীর স্বর্ণ বন্ধক রেখে সুদে টাকা এনে খাদ্যসামগ্রী কিনেছেন।
তিনি বলেন, ‘তারা যেভাবে বলছে আমি সেভাবে ১০০ প্যাকেট বানিয়ে দিসি। এগুলো দিতে আমার ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আমার এই খাদ্য সহায়তা দিতে অনেক কষ্ট হইছে।’
কাঁদলেন ফরিদ আহমেদের স্ত্রী
নিউজবাংলার সঙ্গে আলাপকালে কেঁদে ফেলেন এই প্রবীণ ব্যবসায়ীর স্ত্রী হিরণ বেগম। তিনি বলেন, ‘গত দুইদিন বহু চেষ্টা করছি স্বামীরে জেলের হাত থেকে বাঁচাতে। নিজের স্বর্ণসহ আত্মীয়স্বজনের সোনার গয়না জুয়েলারি দোকানে বন্ধক রাইখা চড়া সুদে ঋণ করছি। মেম্বার আইযুব আলীর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ধার নিছি। মোট ৬৫ হাজার টাকার খাদ্যসামগ্রী কিনতে হয়েছে আমাগো।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিবার নিজেরাই চলতে পারি না। প্রতিবন্ধী ছেলে, পুরো পরিবার এমনিতেই আমরা সংকটে।’
বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
ফরিদ আহমেদ ছোট ভাই সেলিম খানের স্ত্রী বিলকিস বেগম বলেন, ‘বড় ভাসুর ফরিদ আহমেদ ব্রেন স্ট্রোক করেছেন দুই বার। এ কারণে ওনি গুছিয়ে কথা বলতে পারেন না। তার মানসিক সমস্যাও রয়েছে। গতরাতে তিনি দুই বার আত্মহত্যার চেষ্টা করছেন। আমরা তাকে সারারাত পাহারা দিয়ে রাখছি। টাকা পয়সা জোগাড় করতে সহায়তা করছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাগো বাড়ি আছে ঠিকই, কিন্তু কাম নাই, আমাগো ঘরে খাওন নাই। সরকারের কাছে খাদ্য চাইয়া উল্টো জরিমানা দিতে হইলো। আমাগো উপর জুলুম করল তারা।’
উচিত হয়নি, বলছেন জনপ্রতিনিধি
কাশীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আইয়ুব আলী বলেন, ‘আমি উপজেলা প্রশাসনকে বার বার বলছি ফরিদ আহমেদের ১০০ প্যাকেট খাদ্য বিতরণ করার শাস্তি দেয়া ঠিক হয় নাই। কিন্তু তারা মানে নাই। পরে বাধ্য হয়ে আমি নিজেও তারে ১০ হাজার টাকা দিছি।’
ইউএনওর দাবি, তাকে কিছু জানাননি ফরিদ আহমেদ
ফরিদ আহমেদকে নিয়ে এত বড় ভুল কীভাবে হলো, জানতে চাইলে ইউএনও আরিফা জহুরা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি নিজে ফরিদ আহমেদ এর বাড়িতে গিয়েছি। তখনো তিনি বলেনি তার সমস্যার কথা।
‘তিনি ফোন করার পর আমরা তার তথ্য যাচাই বাছাই করেছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের তথ্য অনুযায়ী জানতে পারি তিনি চার তলা বাড়ির মালিক ও পোশাক কারখানাও রয়েছে। ওই এলাকার স্থানীয় মেম্বারও তাই জানিয়েছে। তাই তাকে তখন অযথা সরকারি লোকজনকে হয়রানির করার দায়ে শাস্তি হিসেবে ১০০ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা করার জন্য অনুরোধ জানাই।’
আপনি বাসায় গিয়েও জানতে পারেননি?- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তিনি তখনও আমাকে জানিয়েছেন তিনি চার তলা বাড়ির মালিক ও পোশাক কারখানার ব্যবসা করেন। তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়নি। তাকে সরকারি কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টির দায়ে শাস্তি হিসেবে আশেপাশের ১০০ গরিব পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেয়ার অনুরোধ করেছি। তিনি তা মেনে নিয়েছেন।’
বিপাকে পড়া মানুষটি যে সুদে টাকা নিয়ে ত্রাণ বিতরণ করতে বাধ্য হয়েছেন, এখন তার সেই ক্ষতিপূরণ কে দেবে- এমন প্রশ্নে ইউএনও বলেন, ‘যদি তিনি কারও ভয়ে তথ্য গোপন করে থাকেন তাহলে সে বিষয়টি আমরা যাচাই-বাছাই করব। যদি তার অভিযোগ সত্য হয় তাহলে তিনি যে পরিমাণ টাকা খাদ্য সহায়তা করেছেন তার অর্থ ফিরিয়ে দেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:রাজধানী ঢাকার বাতাস আজ অস্বাস্থ্যকর। বায়ুদূষণে ঢাকা আজ বিশ্বের পঞ্চম স্থানে রয়েছে।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সকাল ৯টায় বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের (আইকিউএয়ার) সূচক থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
আইকিউএয়ার অনুযায়ী সকাল ৯টায় ঢাকার বায়ুর দূষণ মান ১৫৮। একই সময় বিশ্বে শীর্ষ দূষণের তালিকায় প্রথম থাকা পাকিস্তানের লাহোরের বায়ুর দূষণ মান ২২১। তৃতীয় অবস্থানের থাকা কলকাতার বায়ুর দূষণ মান ১৬৪ ও চতুর্থ অবস্থানে থাকা বায়ুর দূষণ মান ১৬২।
বায়ুর মান শূন্য থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকলে বায়ুর মান ভালো বলে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে মাঝারি বা সহনীয় ধরা হয়। ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়। স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে খুবই অস্বাস্থ্যকর বলে বিবেচনা করা হয়। এছাড়া ৩০১-এর বেশি হলে তা দুর্যোগপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়।
ইসরাইলি আটক থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তাদের কারাগারে কেমন ছিলেন সেই অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন ফিলিস্তিনিরা। তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার।
প্রতিবেদননে বলা হয়—আব্দাল্লাহ আবু রাফে নামের এক ফিলিস্তিনি তার ইসরাইল থেকে মুক্তির অনুভূতিকে ‘অসাধারণ’ বলে বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা ছিলাম এক কসাইখানায়, কারাগারে নয়। দুর্ভাগ্যবশত, আমরা ‘ওফার কারাগার’ নামের এক কসাইখানায় ছিলাম। সেখানে এখনো অনেক তরুণ পুরুষ আটক রয়েছে। ইসরাইলি কারাগারের অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ। সেখানে কোনো বিছানা নেই—তারা সবসময় বিছানা নিয়ে যায়। খাবারের অবস্থাও খুবই খারাপ। সেখানে জীবনযাপন সত্যিই কঠিন।’
আরেক মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দি, ইয়াসিন আবু আমরা, ইসরাইলি কারাগারের পরিস্থিতিকে ‘খুব, খুবই খারাপ’ বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘খাবার, নির্যাতন, মারধর—সবকিছুই খারাপ ছিল। কোনো খাবার বা পানীয় দেওয়া হতো না। আমি টানা চার দিন কিছু খাইনি। এখানে (খান ইউনিস) তারা আমাকে দুটি মিষ্টি দিয়েছে, আমি সেগুলোই খেয়েছি।’
আরেকজন মুক্তিপ্রাপ্ত, সাঈদ শুবাইর, যিনি সোমবার মুক্তি পান, বলেন তিনি তার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছেন না।
তিনি বলেন, ‘এই অনুভূতি বর্ণনাতীত। লোহার শিক ছাড়াই সূর্য দেখা—এই অনুভূতি বর্ণনা করার মতো নয়। আমার হাত এখন হ্যান্ডকাফমুক্ত। স্বাধীনতা অমূল্য।’
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরাইল প্রায় ২৫০ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে, যারা আজীবন বা দীর্ঘ মেয়াদের সাজা ভোগ করছিলেন। এছাড়া, গাজা থেকে যুদ্ধ চলাকালে আটক করা আরও প্রায় ১,৭১৮ জনকেও মুক্তি দেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘের মতে, এই দ্বিতীয় দলটি ‘জোরপূর্বক নিখোঁজ’ হিসেবে বিবেচিত ছিল।
ভারতের তিনটি কফ সিরাপের বিষয়ে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থাটি জানিয়েছে, এই কফগুলো উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে এবং জীবনের জন্য হুমকির কারণ হতে পারে। এই কফ সিরাপগুলো তৈরি করা হয়েছে ১ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের জন্য। খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।
ভারতের ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক সরকারি প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশনের (সিডিসসিও) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ডব্লিউএইচও’র সতর্কবর্তা সম্পর্কে তারা ওয়াবিহাল এবং এই সতর্কবার্তাকে আমলে নিয়ে ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরো কঠোর ও নিখুঁত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন তারা।
এই তিনটি কফ সিরাপ হলো ভারতীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান শ্রেসান ফার্মাসিউটিক্যালের তৈরি কোল্ডরিফ, রেডনেক্স ফার্মাসিউটিক্যালের তৈরি সিরাপ রেসপিফরেশ টিআর এবং শেপ ফার্মার তৈরি সিরাপ রিলাইফ।
এই সিরাপগুলোতে ডায়াথিলিন গ্লাইকোল নামের একটি রাসায়নিকের অস্বাভাবিক উপস্থিতির কারণেই এই সতর্কবার্তা দিয়েছে ডব্লিউএইচও। শিশুদের কাশির সিরাপ তৈরির জন্য ডায়াথিলিন গ্লাইকোল একটি প্রয়োজনীয় রাসায়নিক, তবে কোনো সিরাপে যদি অনুমোদিত বা নির্দিষ্ট মাত্রার বেশি ডায়াথিলিন গ্লাইকোল ব্যবহার করা হয়, তাহলে তা রীতিমতো বিষে পরিণত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, এই তিন কফ সিরাপে ডায়াথিলিন গ্লাইকোলের উপস্থিতি নির্ধারিত বা অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে ৫০০ গুণ বেশি।
গত আগস্টে ভারতে শ্রেসান ফার্মাসিউটিক্যালসের তৈরি কোল্ডরিফ সিরাপ খেয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৭ জন শিশুর।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় যৌথ অভিযানে প্রায় ১৪ কোটি টাকার অবৈধ চায়না দুয়ারী ও কারেন্ট জাল জব্দ করেছে ৪৭ বিজিবি ব্যাটালিয়ন। সোমবার (১৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া ৪৭ বিজিবির পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজিবি সূত্রে জানা যায়, গত ১১ ও ১২ অক্টোবর উপজেলার সীমান্তবর্তী আশ্রায়ন বিওপির আওতাধীন এলাকায় এই অভিযান পরিচালিত হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার নেতৃত্বে, সহকারী পরিচালক এবং ভারপ্রাপ্ত কোয়ার্টার মাস্টার মো. জাকিরুল ইসলাম অভিযানে অংশ নেন।
অভিযানকালে উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের চল্লিশপাড়া ও মদনের ঘাট এলাকায় আনুমানিক ৩৫ হাজার কেজি অবৈধ চায়না দুয়ারী ও কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়, যার বাজারমূল্য প্রায় ১৪ কোটি টাকা।
পরে সোমবার দুপুর ২টার দিকে কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়নের অধীনস্থ আশ্রায়ন বিওপি এলাকায় জনসম্মুখে এসব অবৈধ জাল ধ্বংস করা হয়। পরিচালক (অপারেশন) যশোর সদর দপ্তর, দক্ষিণ-পশ্চিম রিজিয়ন লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মিজানুর রহমান শিকদার এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাহবুব মুর্শেদ রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হাই সিদ্দিকী ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হোসেন আহমেদ এর উপস্থিতিতে জালগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়।
৪৭ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাহবুব মুর্শেদ রহমান বলেন, সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিজিবি সর্বদা তৎপর রয়েছে। মাদক ও সব ধরনের অবৈধ কার্যক্রম প্রতিরোধে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি। জনসাধারণের সেবায় বিজিবি ভবিষ্যতেও সর্বদা নিয়োজিত থাকবে।
দাবি পূরণ করে প্রজ্ঞাপন জারি না করায় মঙ্গলবার শহীদ মিনার থেকে ‘মার্চ টু সচিবালয়’ কর্মসূচি পালন করবেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। পাশাপাশি তাঁদের অবস্থান ও কর্মবিরতি চলবে।
মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া, শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য চিকিৎসা ভাতা দেড় হাজার টাকা এবং কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশের দাবিতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। গতকালেক তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। পাশাপাশি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মবিরতি পালিত হচ্ছে।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে সচিবালয় অভিমুখে ‘মার্চ টু সচিবালয়’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা। গতকাল রাতে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের পক্ষ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন সংগঠনের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী।
তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার দুপুর ১২টার মধ্যে প্রজ্ঞাপন বা ঘোষণা না এলে লং মার্চসহ পরবর্তী কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া হবে।
দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, ‘আমাদের ওপর নির্বিচার পুলিশি লাঠিপেটা করা হয়েছে। আমাদের শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করে রক্তাক্ত করা হয়েছে। টিয়ার সেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। এমনকি একজন শিক্ষককে ধরে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা এর নিন্দা জানাই ও বিচার দাবি করছি।’
তিন দফা দাবিতে গত রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেছিলেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। এতে সারা দেশ থেকে আসা বিপুলসংখ্যক শিক্ষক-কর্মচারী এতে অংশ নেন। কিন্তু সেখানে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি তারা। লাঠিপেটা, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান থেকে পানি ছুড়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। পরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে অবস্থান নেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-কর্মচারীরা।
বিশ বছর পর যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) নবম বৈঠকে বসতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। আগামী ২৭ অক্টোবর ঢাকায় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ উদ্দেশ্যে ঢাকা আসছেন পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী আহাদ খান চিমা।
আসন্ন জেইসি বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। আর পাকিস্তান প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন দেশটির অর্থনৈতিক বিষয়কমন্ত্রী আহাদ খান চিমা। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবে দুই দেশ। আহাদ খান চিমার ঢাকা সফরের সময় জেইসি বৈঠকে অংশ নেওয়া ছাড়াও একাধিক বৈঠকের কথা রয়েছে। সফরকালে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে পারেন। দুই দেশের যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের সবশেষ বৈঠকটি ২০০৫ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
সূত্রে জানা গেছে, জেইসির বৈঠকে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী যখন ঢাকায় থাকবেন, কাছাকাছি সময়ে ইসলামাবাদ সফরের কথা রয়েছে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের। পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খানের আমন্ত্রণে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনার জন্য শেখ বশিরউদ্দীনের ওই সফরের কথা রয়েছে।
গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সম্পর্ক স্বাভাবিক করার অংশ হিসেবে ব্যবসা-বাণিজ্যের নানা ইস্যু নিয়ে উদ্যোগ আর আলোচনা হচ্ছে। তাই এবারের জেইসি বৈঠকে দুই দেশ সরাসরি অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত সহযোগিতার বিষয় নিয়ে আলোচনা করার বিষয়টি ঠিক করেছে। সে ক্ষেত্রে ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানো, কৃষিতে সহায়তা, আর্থিক সেবা খাত, ব্যাংকিংসহ সংশ্লিষ্ট খাতে কীভাবে সামনের দিনে সহায়তা এগিয়ে নেওয়া যায়, তাতে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
এক কর্মকর্তা জানান, বৈঠকে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি পরিমাণে শুল্ক ও কোটামুক্তভাবে চা, পাটজাত পণ্য, মেডিসিন, তৈরি পোশাক, ইলেকট্রনিকস সামগ্রী আমদানির জন্য পাকিস্তানকে অনুরোধ করা হবে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আহাদ খান চিমার সফরটি হবে বাংলাদেশে পাকিস্তানি মন্ত্রী পর্যায়ের চতুর্থ সফর। সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার প্রথম ধাপ হিসেবে গত এপ্রিলে পররাষ্ট্র সচিবদের বৈঠকে অংশ নিতে ঢাকায় এসেছিলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ। এরপর ঢাকা আসেন বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান এবং উপপ্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার।
কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব আহমেদ জামিল স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, দ্য সিভিল অ্যাভিয়েশন রুল, ১৯৮৪ এর রুল ১৬ এর সাব রুল (১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার কক্সবাজার বিমানবন্দরকে ‘কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। জনস্বার্থে জারি করা এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।’
এই বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে ২০২১ সালে কাজ শুরু করে বেবিচক। এই প্রকল্পের আওতায় বিমানবন্দরটিতে নতুন টার্মিনাল নির্মাণসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে আগামী ডিসেম্বরে।
তবে এরই মধ্যে বেবিচক চেয়ারম্যান ঘোষণা দেন, চলতি বছর থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হবে৷ তবে তা সম্ভব হয়নি এয়ারলাইন্সগুলোর মাঝ থেকে কোনো প্রকার সাড়া না পাওয়ায়।
উল্লেখ্য, ২০০৯ থেকে ২০১৩ সালের মেয়াদে কক্সবাজার বিমানবন্দরের উন্নয়ন কাজ শুরু হয়। এরপর ২০১৫ সালে যোগ হয় আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার নতুন ধাপ। ভৌগোলিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় কক্সবাজার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট।
মন্তব্য