বাংলাদেশিদের দেয়া অনুদানের অর্থ সরাসরি গাজায় যাবে না বলে জানিয়েছেন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত। এ অর্থে কেনা চিকিৎসা সরঞ্জাম যাবে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায়। কীভাবে এই সহায়তা পৌঁছাবে, সেটিও জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার ঢাকার ফিলিস্তিন দূতাবাসের ওয়েবসাইটে এক বার্তায় অনুদান চেয়ে একটি বার্তা দেয়া হয়। সেটি দূতাবাসের ফেসবুক পেজেও দেয়া হয়। বার্তায় ফিলিস্তিনের গাজায় সাহায্যের জন্য চিকিৎসা সরঞ্জাম বা অর্থ দেয়ার কথা বলা হয়।
বৃহস্পতিবার দূতাবাসে গিয়ে দেখা যায়, সাধারণ মানুষ ওষুধ ও অর্থ নিয়ে দূতাবাসে ভিড় করেছেন। তারা সাধ্যমতো ফিলিস্তিনিদের জন্য সাহায্য করছেন। দূতাবাসের তিন জন কর্মকর্তা ব্যস্ত ছিলেন অনুদান নিতে। এ ছাড়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও মোবাইল আর্থিক সেবা বিকাশ, নগদ ও রকেটে অর্থ পাঠানো হচ্ছে।
তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই অনুদান কীভাবে পাঠানো হবে সেটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। গাজা ও পশ্চিম তীরের মধ্যে টানাপোড়েনের কারণে অনুদান ঠিকভাবে পৌঁছাবে কিনা সেটি নিয়েও অনেকে কথা বলছেন।
ফিলিস্তিনের দুটি অংশ পশ্চিম তীর ও গাজার উপত্যকা আলাদা কর্তৃপক্ষের অধীনে শাসিত হয়। তাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন আছে। বর্তমান প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) চেয়ারম্যান মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিন সরকার পশ্চিম তীর কেন্দ্রিক। আর গাজা (গাজা স্ট্রিপ) ফিলিস্তিনের অংশ হলেও ২০০৭ সাল থেকে ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স মুভমেন্টের (হামাস) নিয়ন্ত্রণাধীন। সেক্ষেত্রে ঢাকা থেকে অনুদান পাঠানোয় কোনো সমস্যা হবে কিনা অনেকের মনে সে প্রশ্ন দেখা দেয়।
বিষয়টি জানতে নিউজবাংলার পক্ষ থেকে কথা বলা হয় ঢাকায় ফিলিস্তিন রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এস ওয়াই রামাদানের সঙ্গে।
রামাদান নিউজবাংলাকে বলেন, ঢাকা থেকে সংগৃহিত অর্থ সরাসরি পাঠানো হবে না।
আরও পড়ুন: ঢাকায় ফিলিস্তিন দূতাবাসে অনুদানের ঢেউ
তিনি বলেন, ‘গাজায় আমাদের হাসপাতালগুলোর জন্য যে চিকিৎসা সরঞ্জাম দরকার, সেটি কেনার জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে। অনুদানে পাওয়া সকল অর্থ সেই কমিটির মাধ্যমে ব্যবহার করা হবে। আমরা গাজা থেকে একটি তালিকা পেয়েছি। এটি গাজার হাসপাতালগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসের তালিকা, যা গাজার সকল মানুষের উপকারে লাগবে। আমি এ সংক্রান্ত সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্যে একটি সংবাদ সম্মেলন করব।’
কীভাবে গাজায় চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেয়া হবে সেই বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত রামাদান বলেন, ‘গাজার হাসপাতালগুলো ডা. ফাওয়াজ আবু জায়েদার নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেছে। তারা আমার কাছে সেই তালিকাটি পাঠিয়েছে।
‘ওই কমিটি চিকিৎসা সরঞ্জাম উৎপাদনকারী তিনটি কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করবে, যারা ক্রয় প্রস্তাব দিবে। আমরা ঢাকা থেকে সরাসরি অর্থ পাঠিয়ে দেব নিয়োগপ্রাপ্ত এরকম একটি কোম্পানির কাছে। সেই কোম্পানি সরঞ্জাম সরবরাহ করবে গাজায়। (গাজার) কমিটি আমাদেরকে এ সংক্রান্ত নথি ও ছবি পাঠিয়ে দেবে।’
তবে অনুদানের অর্থ গাজায় চিকিৎসা সরঞ্জামের জন্য অপ্রতুল হবে বলে অনুমান করে তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের সকল চাহিদা পূরণ করতে পারব না, কেননা তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামের খরচ পড়বে প্রায় ৮০ লাখ ডলার। কাজেই আমরা তাদের শুধু অনুদানে পাওয়া অর্থেরই যোগান দেব। অনুগ্রহ করে নিশ্চিত জানুন, আমরা গাজায় ফিলিস্তিনি ব্যক্তিদের জন্য এটা করছি।’
অর্থ অনুদান নিয়ে প্রশ্ন
তবে অনেকেই টাকা তোলার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সরাসরি টাকা দিলে সেটির হিসেব কীভাবে রাখা হবে, সেটিও জানতে চেয়েছেন।
দূতাবাসের অনুদান চেয়ে বার্তায় সরাসরি অর্থ প্রদান, মোবাইল আর্থিক সেবা ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে একটা চিঠি এসেছে। বিদেশি কর্মাশিয়াল ব্যাংক অফ সিলনে একটা অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য দূতাবাস অনুমতি চেয়েছে। আপাতত এই টাকা ইউনাইটেড কর্মাশিয়াল ব্যাংকে (ইউসিবিএল) জমা হচ্ছে। ফরেন কারেন্সিতে টাকা পাঠানোর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমতি নিতে হবে। এখন হিসাব খোলার অনুমতি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু ফাইনালি দেশের বাইরে অর্থ পাঠানোর আগে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে অনুমতি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দিবে।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূতের
এ বিষয়ে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত জানান, অনুদান সংগ্রহ শেষ হলে তারা সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানাবেন।
তিনি বলেন, ‘সরাসরি কোনো অর্থ কারো হাতে তুলে দেয়া হবে না। আমরা শুধুমাত্র চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠাবো। কারণ টাকা সরাসরি পাঠালে কেউ পাবে আবার কেউ পাবে না। এটা একটি ঝামেলার সৃষ্টি করবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন নির্বাহী পরিচালক নিউজবাংলাকে বলেন, এভাবে টাকা ওঠানো হলে সেখানে স্বচ্ছতার প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ, মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যে কেউ টাকা দিতে পারছে। কিন্তু সেই অর্থ কি পুরোটা অনুদানে ব্যবহার করা হবে? বিকাশ, নগদ, রকেটের মাধমে কে কত টাকা পাঠাবে তার সঠিক হিসাব পাওয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
তিনি বলেন, ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট ছাড়া অন্যভাবে টাকা নিলে সেখানে ধোঁয়াশা থেকেই যায়। দেশের মানুষ আবেগের জায়গা থেকে সামর্থ্য অনুযায়ী টাকা দিচ্ছে। এ জন্য কত অংকের টাকা পাওয়া যাচ্ছে তার সঠিক হিসাব রাখা জরুরি।
আরও পড়ুন:ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে দেশটির একটি সামরিক স্থাপনায় বুধবার হামলা চালিয়েছে লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ।
ওই হামলায় কমপক্ষে ১৪ ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন বলে আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
হামলার দায় স্বীকার করে হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় হিজবুল্লাহর কয়েকজন সদস্য নিহত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ইহুদি রাষ্ট্রটিতে প্রতিশোধমূলক আক্রমণ করা হয়েছে।
ইরান সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীটির ভাষ্য, লেবানন সীমান্তবর্তী উত্তর ইসরায়েলের আরব সংখ্যাগরিষ্ঠ গ্রাম আরব আল-আরামশেতে ইসরায়েলের নতুন একটি সামরিক পর্যবেক্ষণ কমান্ড সেন্টারে দূর নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র ও বিস্ফোরক ড্রোন দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী জানায়, গতকালের হামলায় তাদের ১৪ সেনা আহত হন, যাদের মধ্যে ছয়জনের অবস্থা গুরুতর।
সেনাবাহিনী আরও জানায়, পূর্ব লেবাননে ‘সন্ত্রাসীদের অবকাঠামোতে’ হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান।
দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় মঙ্গলবার হিজবুল্লাহর একজন ফিল্ড কমান্ডারসহ তিনজন নিহত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েলে পাল্টা হামলা চালায় সশস্ত্র গোষ্ঠীটি।
ওই সময় ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, তাদের হামলায় হিজবুল্লাহর স্থানীয় দুই কমান্ডার ও অন্য একজন সদস্য নিহত হন।
আরও পড়ুন:গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল ২৫ হাজার টন বিস্ফোরকদ্রব্য ছুড়েছে বলে জানিয়েছেন ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডগুলোর জন্য নিয়োজিত জাতিসংঘের বিশেষ দূত ফ্রান্সিসকা আলবানিজ।
তার ভাষ্য, এসব বিস্ফোরকের বেশির ভাগ ছোড়া হয়েছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ব্যবহার করে।
আল জাজিরা বৃহস্পতিবার জানায়, ইসরায়েলে হামাসের হামলার জবাবে গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় শুরু হওয়া হামলার প্রথম সপ্তাহে গড়ে ২৫০ জন নিহত হন বলে জানান আলবানিজ।
জাতিসংঘের বিশেষ দূতের ভাষ্য, গাজায় হামলার শুরুর সপ্তাহে ‘ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়’ ইসরায়েল দুই হাজার পাউন্ড বাঙ্কার বাস্টার বোমা ছোড়ে।
যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত জিপি হটভলির এক মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে উল্লিখিত কথাগুলো বলেন আলবানিজ।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম স্কাই নিউজকে হটভলি বলেন, ‘শুধু ভাবুন, জেরুজালেমের মতো কোনো শহরের মাঝখানে বিশাল একটি ক্ষেপণাস্ত্র পড়লে বিষয়গুলো কেমন ঠেকত।
‘শুধু ভাবুন, এটি লোকালয় এবং জনগণ ও শিশুদের ওপর আঘাত করছে।’
গত শনিবার রাতে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ইরানের ছোড়া ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়ে সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলেন।
জিপির দাবি, ইরানের হামলায় ক্ষতি হয়নি বললেই চলে।
আরও পড়ুন:ফিলিস্তিনের গাজায় অসম যুদ্ধে লিপ্ত ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়েদ আলি খামেনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক্সে (একসময়ের টুইটার) বুধবার দেয়া পোস্টে তিনি এ আহ্বান জানান।
ইসরায়েলের হামলায় গাজায় ৩৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণহানি ও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন সৌদি আরব, ইরানসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলিমরা।
ইহুদি রাষ্ট্রটির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয়ে এক্সে ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে বেশ কয়েকটি পোস্ট দেন খামেনি, যার একটিতে তিনি বলেন, এটা পরিতাপের যে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কিছু দেশের সরকার গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলকে সহায়তা করছে। এ ধরনের অংশীদারত্ব সহায়তাকারী দেশগুলোর ধ্বংস ডেকে আনবে।
একটি পোস্টে ইসরায়েলের সঙ্গে অন্তত সাময়িকভাবে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের আহ্বান জানান আয়াতুল্লাহ।
আরেক পোস্টে তিনি বলেন, ‘জায়নবাদী (ইসরায়েল) সরকারের সঙ্গে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর সম্পর্ক ছিন্ন করা শুধু আমাদের প্রত্যাশার বিষয় নয়। এটি মুসলিম উম্মাহর প্রত্যাশা।
‘মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো গণভোট আয়োজন করলে প্রত্যেকে সন্দেহাতীতভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করার পক্ষে সরকারগুলোকে ভোট দেবেন।’
আরও পড়ুন:পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেয়া বার্তায় ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর ইসরায়েলি হামলা অবিলম্বে বন্ধের প্রয়োজনীয়তার ওপর সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুলআজিজ আল সৌদ জোর দিয়েছেন বলে জানিয়েছে সৌদি গেজেট।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ঈদবার্তায় ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নিরাপদ মানবিক ও ত্রাণ করিডর স্থাপন, স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠাসহ ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য সব অধিকার অর্জনে সক্ষমতা তৈরির মাধ্যমে তাদের দুর্ভোগের অবসানের আহ্বান জানিয়েছেন পবিত্র দুই মসজিদের জিম্মাদার।
মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পর ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলিমরা। অন্য অনেক ভূখণ্ডের মতো ঈদ এসেছে ফিলিস্তিনের গাজাতেও, তবে ১৮০ দিনের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের হামলায় থাকা অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে আনন্দের উপলক্ষ হয়ে আসেনি বিশেষ দিনটি।
বার্তায় রমজান শেষ করতে পারায় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন সৌদি বাদশাহ। একই সঙ্গে সবার রোজা ও ইবাদত কবুলের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন তিনি।
বাদশাহ সালমান তার বার্তায় জাতীয় ঐক্য, পবিত্র দুই মসজিদের জিম্মাদারি এবং হজ ও ওমরাহ যাত্রীদের স্বাগত জানানোর মতো অনেক নিয়ামত সৌদি আরবকে দেয়ায় আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পর ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলিমরা। অন্য অনেক ভূখণ্ডের মতো ঈদ এসেছে ফিলিস্তিনের গাজাতেও, তবে ১৮০ দিনের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের হামলায় থাকা অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে আনন্দের উপলক্ষ হয়ে আসেনি বিশেষ দিনটি।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, গাজাবাসী নিজেদের মতো করে ঈদুল ফিতরের ঐতিহ্য চর্চার চেষ্টা করলেও যুদ্ধের ছায়া সর্বত্র, যা উদযাপনকে কঠিন করে তুলেছে।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরের দোকানি আহমেদ ইসমাইল আল জাজিরাকে বলেন, ‘কোনো আনন্দ নেই। পবিত্র উপলক্ষটি উদযাপনের কোনো ক্ষুধাও নেই।
‘এমনকি শিশুরাও খেলনার প্রতি আগ্রহ হারিয়েছে, যেমনটা অতীতে ছিল। আমাদের জীবদ্দশায় সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছি।’
রাফাহর বাস্তুচ্যুত বাসিন্দা জাবর হাসান বলেন, ‘আমরা সব দিক থেকে দুর্ভোগ পোহাচ্ছি। লোকজন কোনো রকমে বেঁচে আছে।
‘তারা পরিবারের সদস্যদের খাওয়াতে পারছে না বললেই চলে। আমরা ঈদ, উদযাপন কিংবা অন্য কোনো ধরনের আনন্দের কথা চিন্তা করতে পারছি না।’
ইসরায়েলে ঢুকে গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজার শাসক দল হামাসের প্রাণঘাতী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে উপত্যকায় প্রায় বিরামহীন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে সামরিকভাবে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্রটি।
ইসরায়েলের হামলায় গাজায় প্রাণ গেছে ৩৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির, যাদের বড় অংশ নারী ও শিশু। অন্যদিকে হামাসের হামলায় নিহত ইসরায়েলির সংখ্যা এক হাজার ১৩৯।
বিরামহীন হামলার পাশাপাশি গাজায় বড় পরিসরে ত্রাণসামগ্রীও ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরায়েল, যা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলসহ অনেক অংশে দুর্ভিক্ষের কাছাকাছি পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, তবে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে গাজায় ব্যাপক মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞ এবং ইসরায়েলি অনেক সেনার প্রাণহানির পরও টেকসই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে পারেনি হামাস ও ইসরায়েল।
আরও পড়ুন:সিরিয়ার দারা প্রদেশে রোববার সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছে। বিস্ফোরণে বেশ কিছু শিশু নিহত হওয়ার একদিন পর ঘটনাটি ঘটল।
‘দ্য সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস’ এ কথা জানিয়েছে। খবর বাসসের
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে ২০১১ সালে শুরু হওয়া বিক্ষোভের মূল কেন্দ্র ছিল এ দারা প্রদেশ। সরকার ২০১৮ সালে প্রদেশটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। তখন থেকে দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশটিতে অস্থিরতা চলছে।
সূত্র মতে, একটি সশস্ত্র গ্রুপের নেতৃত্বদানকারী আহমাদ আল লাব্বাদের প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপ অভিযোগ করেছে, শনিবার সিরিয়ার আল সানামাইন জেলায় লাব্বাদের পুঁতে রাখা বিস্ফোরণে ৮ শিশু প্রাণ হারিয়েছে।
পূর্বে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংস্থায় কাজ করা লাব্বাদ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এদিকে রোববার প্রতিদ্বন্দ্বী সশস্ত্র গ্রুপটি সানামাইন শহরে প্রবেশের পর সংঘর্ষ শুরু হয়। হামলাকারীরা লাব্বাদের বাড়িতে হামলা চালায় এবং সেখানে বসবাসরতদের হত্যা করে।
পর্যবেক্ষক সংস্থাটি বলেছে, নিহত ২০ জনের মধ্যে তিনজন লাব্বাদের পরিবারের এবং ১৪ জন তার যোদ্ধা সিরিয়ার সরকারি সংবাদ মাধ্যম তাৎক্ষণিকভাবে এ সংঘর্ষের বিষয়ে কিছু জানায়নি।
দারায় প্রায়ই হামলা, সশস্ত্র সংঘর্ষ এবং হত্যার ঘটনা ঘটছে।
এদিকে সিরিয়ায় ২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত পাঁচ লাখেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছে লাখ লাখ মানুষ।
আরও পড়ুন:গাজায় ইসরায়েলের হামলার ষষ্ঠ মাসে এসে দেশজুড়ে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুবিরোধী বিক্ষোভ করেছেন ইসরায়েলিরা।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে জানানো হয়, হাজার হাজার বিক্ষোভকারী শনিবার সড়কে নেমে প্রতিবাদ জানান।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ঢুকে গাজার শাসক দল হামাসের প্রাণঘাতী হামলার জবাবে ওই দিন থেকেই উপত্যকায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এ হামলার ছয় মাস পূর্তি হয় রোববার।
আয়োজকরা জানান, প্রায় এক লাখ ইসরায়েলি তেল আবিবের একটি মোড়ে জড়ো হন। বিচার ব্যবস্থায় সংস্কারের প্রতিবাদে গত বছর শুরু হওয়া বিক্ষোভের সময় থেকে মোড়টি ‘গণতন্ত্র চত্বর’ হিসেবে পরিচিতি পায়।
‘এখনই নির্বাচন’ স্লোগান দেয়া বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পদত্যাগ দাবি করেন।
তেল আবিবের পাশাপাশি বিক্ষোভ হয়েছে অন্য শহরগুলোতেও। আলোচনার জন্য ওয়াশিংটনের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে কাফার সাবা এলাকার বিক্ষোভে অংশ নেন ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়াইর লাপিদ।
তিনি নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন সরকারের বিষয়ে বলেন, ‘তারা কিছুই শেখেনি, তারা বদলায়নি।’
লাপিদ আরও বলেন, ‘আমরা তাদের বাড়ি পাঠানোর আগে দেশকে সামনে এগোতে দেবে না তারা।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য