ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড করার দাবিতে গত বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে তুমুল আন্দোলনের মুখে যে আইন পাস হয়েছে, সেটি হেফাজত নেতা মামুনুল হকের জন্য তৈরি করেছে ঝুঁকি।
আগের আইনে ধর্ষণের অপরাধের ধরন বিবেচনায় সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন অথবা মৃত্যুদণ্ড থাকলেও, সংশোধিত আইনে আদালতে প্রমাণ সাপেক্ষে এখন যেকোনো ধর্ষণের ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড যুক্ত হয়েছে।
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, বিয়ের আশ্বাস দিয়ে যৌন সম্পর্কও ধর্ষণ।
মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ঝর্ণা মামলা করেছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯-এর ১ ধারায়।
এই ধারায় বলা আছে, ‘যদি কোনো পুরুষ বিবাহবন্ধন ব্যতীত ১৬ বছরের অধিক বয়সী কোনো নারীর সহিত তাহার সম্মতি ব্যতিরেকে বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তাহার সম্মতি আদায় করিয়া অথবা ১৬ বছরের কম বয়সী কোনো নারীর সহিত সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করেন, তাহা হইলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে।’
মামলার এজাহারে ঝর্ণা লেখেন, ‘সে (মামুনুল) আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। গত দুই বছর যাবৎ আমাকে বিভিন্ন সময় ঢাকা ও ঢাকার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরির নাম করে নিয়ে গিয়ে তার পরিচিত বিভিন্ন হোটেল ও রিসোর্টে রাত্রিযাপন ও বিবাহের আশ্বাস দিয়ে তার যৌন লালসা চরিতার্থ করে। একপর্যায়ে আমি বিবাহের কথা বললে সে আমাকে বিবাহ করব, করছি বলে নানা অজুহাতে কালক্ষেপণ করতে থাকে।’
৩ এপ্রিল হেফাজত নেতা বিয়ের প্রলোভন দেখিয়েই রয়্যাল রিসোর্টে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে মামলায় অভিযোগ করেছেন ঝর্ণা।
মামলা করার পর ঝর্ণা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে উনি (মামুনুল) আমার সঙ্গে অন্যায় করেছেন, প্রতারণা করেছেন। আমি রাষ্ট্রের কাছে বিচার চাই। আমার এইটুকুই বলার, আর কিছুই বলার নেই।’
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘মামুনুল হক সরলতার সুযোগ নিয়ে আমাকে ধর্ষণ করেছে। বিভিন্ন অজুহাতে আমাকে অনেক জায়গায় নিয়ে গেছে, সেখানে রাত্রি যাপন করেছে। বিয়ের ব্যাপারে কথা বলার অজুহাতে রয়্যাল রিসোর্টের ৫০১ নম্বর রুমে নিয়ে ধর্ষণ করেছে। সে আমার সঙ্গে অন্যায় করেছে, প্রতারণা করেছে। আমি রাষ্ট্রের কাছে তার বিচার চাই।’
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর ৯(১) ধারায় বলা হয়েছিল, ‘যদি কোনো পুরুষ কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহা হইলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন।’
তবে ২০২০ সালের সংশোধিত আইনের ৯(১) ধারায় সশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি মৃত্যুদণ্ডের শাস্তিও যুক্ত হয়েছে। এখনকার আইনটির ৯(১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো পুরুষ কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহা হইলে তিনি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন।’
২০০০ সালের আইনটিতে কেবল ধর্ষণের পর মৃত্যু ও দলগত ধর্ষণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান ছিল। তবে গত বছর সংশোধন করা আইনের ৯(১), ৯(২), ৯(৩), ৯ (৪) (ক) ধারার সবগুলোতেই মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
আপিল বিভাগের সাবেক বিচারক বিচারপতি নিজামুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আইন সংশোধনের পর আদালতে অভিযোগ প্রমাণ হলে সে অনুযায়ীই আসামির সর্বোচ্চ সাজা হতে পারে।’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আইনুন নাহার সিদ্দিকা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যে ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে, তাতে তো সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবনের বিধান রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এখন সমস্যা হলো ধর্ষণ মামলা প্রমাণ করা। প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের কথা বলা হয়েছে, প্রশ্ন হলো ২৫ থেকে ৩০ বছরের একজন নারীকে প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ কতটা যৌক্তিক। এ অবস্থায় অভিযোগটি প্রমাণ করা বড় চ্যালেঞ্জ হবে।’
সাজা বৃদ্ধি যেভাবে
গত বছরের সেপ্টেম্বরে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও তার ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর তুমুল আন্দোলনের মুখে সাজা বাড়ানো হয়।
বিক্ষোভকারীরা সব ধরনের ধর্ষণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড করার দাবি তোলেন, এরপর ১২ অক্টোবর মন্ত্রিসভা সেই দাবিতে সায় দিয়ে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়।
সে সময় সংসদ অধিবেশনে না থাকায় ১৩ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের অধ্যাদেশ জারির মধ্য দিয়ে সব ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড যুক্ত হয়।
পরে সংসদ অধিবেশনে বসলে ১৭ নভেম্বর আইন সংশোধনের বিল পাস হয়।
৮ নভেম্বর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আইন সংশোধন করে যে বিল উত্থাপন করেন, তাতে ৯(১) উপধারায় ‘যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপন করা হয়।
মামলার পর যা হলো
সোনারগাঁ মডেল থানায় মামলার কিছুক্ষণ পর নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ঝর্ণার শারীরিক পরীক্ষা করা হয়।
এরপর সঙ্গে থাকা বড় ছেলে আবদুর রহমান জামির জিম্মায় দেয়া হয় ঝর্ণাকে।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম জানান, ধর্ষণের মামলায় মামুনুল হককে গ্রেপ্তার দেখিয়ে নারায়ণগঞ্জে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। মামলার পরবর্তী কার্যক্রম আদালতের মাধ্যমে চলবে।
গত ১৮ এপ্রিল মামুনুল গ্রেপ্তার হন নাশকতার এক মামলায়। ১৯ এপ্রিল এক মামলায় সাত দিনের রিমান্ড শেষে আরও একটি মামলায় তাকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে নাশকতার ১৭টিরও বেশি মামলা রয়েছে।
রিসোর্ট-কাণ্ডে মামুনুল যেভাবে বিপাকে
গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়্যাল রিসোর্টের সঙ্গীনিকে দুই বছর আগে বিয়ে করার দাবি করেছিলেন হেফাজতের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব।
তবে সেই রাতেই তার এই বিয়ের দাবি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কারণ, তিনি তার স্ত্রী আমিনা তাইয়্যেবাকে ফোন করে নিজে বলেন, তার সঙ্গীনি জনৈক শহিদুল ইসলামের স্ত্রী।
আর মামুনুল হক রিসোর্টেও সঙ্গীনির নাম গোপন করেন। তিনি রেজিস্টার বইয়ে তার নাম লেখেন আমিনা তাইয়্যেবা। এটি প্রকৃতপক্ষে তার স্ত্রীর নাম।
আবার স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদে শ্বশুরের নাম বলেন জাহিদুল ইসলাম, গ্রামের বাড়ি খুলনায় বলে দাবি করেন। পরে জানা যায়, ঝর্ণার বাবার নাম ওলিয়র রহমান, বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায়।
যদিও ওই রাতেই চার ভাইকে নিয়ে ফেসবুক লাইভে এসে তিনি দাবি করেন, দুই বছর আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়েছে তাদের।
তবে রিসোর্টে হাঙ্গামার দিনই মামুনুলের স্ত্রী আমিনা তাইয়্যেবা তার চার সন্তানকে নিয়ে মামুনুলের বাসা ছেড়ে চলে যান।
তবে মামুনুল তার বিয়ে করার দাবি করতেই থাকেন। যদিও ১৮ অক্টোবর গ্রেপ্তার হওয়ার পর পুলিশকে ‘চুক্তিভিত্তিক’ বিয়ের কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার হারুন অর রশিদ।
এর মধ্যে আরও এক নারীর সঙ্গে মামুনুলের গোপন সম্পর্কের কথা ফাঁস হয়। সেই নারীর ভাইকেও মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসায় ডেকে নিয়ে মামুনুল দাবি করেছেন, তিনি আরও একটি বিয়ে করেছেন গোপনে।
রিসোর্ট-কাণ্ডের পর থেকে ঝর্ণার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। তাকে উদ্ধারের অনুরোধ করে বড় সন্তান আবদুর রহমান জামি ঢাকার পল্টন থানায় ও বাবা ওলিয়র রহমান কলাবাগান থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
২৭ এপ্রিল মোহাম্মদপুরে মামুনুল হকের বোনের বাসা থেকে ঝর্ণাকে উদ্ধার করে তার বাবার হাতে তুলে দেয় পুলিশ। দুই দিন পর সোনারগাঁ থানায় গিয়ে ঝর্ণা মামলা করেন।
আরও পড়ুন:সব ধরনের আগ্রাসন ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর পাশাপাশি যুদ্ধকে ‘না’ বলতে বৃহস্পতিবার সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
থাইল্যান্ডে জাতিসংঘের কনফারেন্স সেন্টারে (ইউএনসিসি) এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনএসক্যাপ) ৮০তম অধিবেশনে দেয়া ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান বলে বার্তা সংস্থা বাসসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের সব ধরনের আগ্রাসন ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে এবং যুদ্ধকে ‘না’ বলতে হবে। বাংলাদেশ জাতিসংঘ মহাসচিবের ‘শান্তির জন্য নতুন এজেন্ডা’র পক্ষে।”
ভাষণে সব ধরনের যুদ্ধ, আগ্রাসন ও নৃশংসতা বন্ধে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুধু হতাহতের সংখ্যা বাড়াচ্ছে, বিশেষত নারী ও শিশুরা এর বলি হচ্ছে। অথচ আলোচনায় আসতে পারে শান্তি।
তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনি যুদ্ধ ও গণহত্যা চলছে। এটি অবশ্যই বন্ধ হতে হবে। যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না।’
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা তার উদ্যোগ ও শাসনামলে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে ‘পার্বত্য শান্তি চুক্তি’র কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আঞ্চলিক বিরোধ ও উত্তেজনা নিষ্পত্তি করতে হবে।’
আরও পড়ুন:দেশজুড়ে চলমান দাবদাহ আরও ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম বৃহস্পতিবার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তায় এ তথ্য জানিয়েছেন।
সতর্কবার্তায় বলা হয়, ‘দেশের ওপর চলমান তাপপ্রবাহ আজ (২৫ এপ্রিল, ২০২৪) হতে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে।’
৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ নিয়ে জানায়, খুলনা বিভাগসহ দিনাজপুর, নীলফামারী, রাজশাহী, পাবনা, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ বরিশাল বিভাগ এবং রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
তাপমাত্রার বিষয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর পূর্তিতে বুধবার প্রাণ হারানো শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন হতাহত শ্রমিক, তাদের পরিবার, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও পুলিশ সদস্যরা।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঘটে যাওয়া ওই দুর্ঘটনায় পাঁচটি পোশাক কারখানার এক হাজার ১৩৮ জন শ্রমিক প্রাণ হারান। পঙ্গুত্ব নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন দুই সহস্রাধিক শ্রমিক।
ট্র্যাজেডির বার্ষিকীতে আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসন ও সুচিকিৎসা নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন শ্রমিক ও সংগঠনগুলোর সদস্যরা।
সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বুধবার সকাল থেকে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানানো শুরু হয়।
একে একে নিহত শ্রমিকের পরিবার, আহত শ্রমিক, পুলিশ ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ফুলের শ্রদ্ধায় সিক্ত হয়ে ওঠে বেদি। ওই সময় নিহত শ্রমিকদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
পরে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি আদায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ, র্যালি ও মানববন্ধন করা হয়।
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে প্রাণ হারানো শ্রমিকদের অনেক স্বজন প্রিয়জনের কথা স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
সমাবেশে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর পর এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে তা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান বক্তারা।
একই সঙ্গে ভবনের মালিক সোহেল রানার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডেরও দাবি জানান তারা।
আরও পড়ুন:দেশজুড়ে বয়ে চলেছে তাপপ্রবাহ। প্রচণ্ড গরমে অস্থির জনজীবন। বিদ্যুতের লোডশেডিং সেই অস্বস্তি-অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন রেকর্ড গড়লেও সারাদেশে লোডশেডিং কমার কোনো লক্ষণ নেই। বরং আগের তুলনায় লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অফ বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ন্যাশনাল লোড ডিসপ্যাচ সেন্টারের (এনএলডিসি) তথ্যের উল্লেখ করে বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানায়, বুধবার (দেশে প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। আগের দিন মঙ্গলবার তা ছিল ১ হাজার ৪৯ মেগাওয়াট।
এনএলডিসির তথ্যে আরও দেখা যায়, মঙ্গলবার রাত ১টায় লোডশেডিং ছিল ১ হাজার ৪৬৮ মেগাওয়াট। তবে বুধবার দিনের বেলায় বিদ্যুৎ ঘাটতির মাত্রা কমে সকাল ৭টায় ৫৪২ মেগাওয়াটে নেমে আসে। আবার বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। বিকেল ৩টায় লোডশেডিং বেড়ে দাঁড়ায় ৮২১ মেগাওয়াট।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ও পিজিসিবির তথ্য বলছে, ১৫ হাজার ২০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে বুধবার বিকেল ৫টায় দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ৪৭৩ মেগাওয়াট। সে হিসাবে সন্ধ্যার এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উৎপাদন ঘাটতি ছিল ৭২৭ মেগাওয়াট।
ওদিকে বুধবার সন্ধ্যায় চাহিদার পূর্বাভাস ছিল ১৬ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট এবং সরবরাহের পূর্বাভাস ছিল ১৬ হাজার ৫৩০ মেগাওয়াট।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য বড় শহরে লোডশেডিং এড়াতে গিয়ে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে।
বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া সংবাদে জানা যায়, এই গ্রীষ্মে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে লোডশেডিংয়ের মাত্রা গ্রামীণ মানুষের দুর্দশা আরও বাড়িয়ে তুলছে।
এদিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পেট্রোবাংলার সরকারি তথ্যে দেখা যায়, ৩ হাজার ৭৬০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে দেশে গ্যাস উৎপাদন হয়েছে দৈনিক ৩ হাজার ৫৬ মিলিয়ন ঘনফুট।
বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র, বিশেষ করে যেগুলো প্রাথমিক জ্বালানি হিসেবে গ্যাস ব্যবহার করে, সেগুলোতে গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ২ হাজার ৩১৬ দশমিক ৯ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে ১ হাজার ৩৪৯ দশমিক ৯ মিলিয়ন ঘটফুট গ্যাস সরবরাহ পেয়েছে।
আরও পড়ুন:সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নতুন তিন বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। বৃহস্পতিবার তারা শপ্রথ গ্রহণ করবেন।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে বুধবার।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের তিনজন বিচারককে তাদের শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করেছেন।
আপিল বিভাগে নবনিযুক্ত বিচারপতিগণ হলেন- বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ, বিচারপতি মো শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি কাশেফা হোসেন।
বৃহস্পতিবার শপথ
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রব্বানী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার বলা হয়, আপিল বিভাগে নবনিযুক্ত তিন বিচারপতি বৃহস্পতিবার শপথ গ্রহণ করবেন। এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেজ লাউঞ্জে প্রধান বিচারপতি তাদেরকে শপথ পাঠ করাবেন।
মিয়ানমারের কারাগারে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ শেষে ১৭৩ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। গভীর সাগরে অবস্থানরত মিয়ানমার প্রতিরক্ষা বাহিনীর জাহাজ ‘চিন ডুইন’ থেকে তাদের নিয়ে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর একটি জাহাজ বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ার ছড়া ঘাটে এসে পৌঁছায়।
এর আগে বুধবার বেলা ১১টার দিকে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজার এসে পৌঁছায়।
প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজার পৌঁছানোর পরপরই ঘাট থেকে গাড়িযোগে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার উদ্দেশে রওনা হয়, যেখানে বিজিবির অধীনে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ২৮৫ সদস্য রয়েছেন। তাদের নিয়ে বৃহস্পতিবার মিয়ানমার ফেরত যাবে প্রতিনিধি দলটি।
এদিন বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও কক্সবাজার ৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল।
তিনি বলেন, ‘দুপুর ১টার দিকে ১৭৩ বাংলাদেশি ঘাটে এসে পৌঁছাতে পারেন। তারা মিয়ানমারের কারাগারে ভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ করে সরকারের প্রচেষ্টায় ফিরছেন।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ১৭৩ জনের মধ্যে ১২৯ জন কক্সবাজার জেলার, ৩০ জন বান্দরবান জেলার, সাতজন রাঙ্গামাটি জেলার এবং একজন করে রয়েছেন খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজবাড়ী, নরসিংদী ও নীলফামারী জেলার। ইতোমধ্যে ফেরত আসাদের অপেক্ষায় ঘাটে ভীড় করছেন তাদের স্বজনরা।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম জানিয়েছেন, দেশে ফেরত আসাদের গ্রহণ করে পুলিশে হস্তান্তর করবে বিজিবি। তারপর যাচাই-বাছাই শেষে স্ব স্ব থানার পুলিশের মাধ্যমে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
এদিকে ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানিয়েছে, রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের কারণে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হওয়া মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ সফররত মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বাহিনীর ‘চিন ডুইন’ জাহাজটি ১৭৩ বাংলাদেশিকে বহন করে মঙ্গলবার যাত্রা শুরু করে। এর মধ্যে ১৪৪ জন কারাগারে পূর্ণ মেয়াদে সাজা ভোগ করেছেন। অপর ২৯ জন মিশনের প্রচেষ্টায় ক্ষমা পেয়ে বাংলাদেশে ফিরছেন।
মূলত বাংলাদেশিদের নিয়ে আসা মিয়ানমারের জাহাজটিই বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বিজিপির ২৮৫ সদস্যকে নিয়ে ফেরত যাবে।
মিয়ানমারের ২৮৫ সদস্যকে ফেরত নেয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেই মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি নাইক্ষ্যংছড়ি গেছে।
মিয়ানমারে ফেরত যাওয়াদের মধ্যে গত ১৯ এপ্রিল একদিনে নতুন ২৪ জন, ১৬ এপ্রিল ৬৪ জন, ১৪ এপ্রিল ১৪ জন, ৩০ মার্চ ৩ জন ও ১ মার্চ ১৭৭ জন বিজিপি ও সেনা সদস্য পালিয়ে আশ্রয় নেন। এরও আগে ফেব্রুয়ারির শুরুতে কয়েক দফায় বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন আরও ৩৩০ জন, যাদের গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
প্রথম দফায় ফেরতের সময় ঘটনাস্থলে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ ও সংশ্লিষ্টরা কথা বললেও এবার তা হচ্ছে না। ফেরত আসা বাংলাদেশিদের গ্রহণ এবং ২৮৫ জনকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শেষ করে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে প্রেস ব্রিফিং করে বিস্তারিত জানানো হবে। সেখানেও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ সংরক্ষিত হতে পারে।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ। আগামী তিন বছরের জন্য এই পদে তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
বুধবার চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৮ এর ধারা-৭ অনুযায়ী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চুক্তি ও বৈদেশিক নিয়োগ শাখার উপ-সচিব ভাস্কর দেবনাথ বাপ্পি স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এই আদেশ দেয়া হয়। বিকেলে তিনি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে গিয়ে এই পদে যোগদান করেন।
মোহাম্মদ ইউনুছ আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদের সদস্য এবং চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার সদস্য সচিব।
সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষের তিন বছরের মেয়াদ শেষ হয়েছে বুধবার (২৪ এপ্রিল)। ২০১৯ সাল থেকে দুই মেয়াদে টানা পাঁচ বছর এই পদে ছিলেন তিনি।
২০০৯ সাল থেকে সরকারের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার এই পদে চুক্তিভিত্তিক রাজনৈতিক নিয়োগ দিয়ে আসছে সরকার। মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও বোয়ালখালী-চান্দগাঁও আসনের সংসদ সদস্য আবদুচ ছালাম টানা ১০ বছর এই দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল নিয়োগ দেয়া হয় মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জহিরুল আলম দোভাষকে।
চিটাগাং ডেভেলপমেন্ট অথরিটি অর্ডিন্যান্স ১৯৫৯ কে যুগোপযোগী করে ২৯ জুলাই ২০১৮ সালে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়। সেই আইনের ৭ নম্বর ধারায় উল্লেখ রয়েছে- চেয়ারম্যান বা বোর্ড সদস্য হিসেবে কোনো ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি সময়ের জন্য নিয়োগলাভের জন্য বলে বিবেচিত হবেন না। জহিরুল আলম দোভাষ ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল প্রথম মেয়াদে দুই বছরের জন্য ও ২০২১ সালের ২৪ এপ্রিল দ্বিতীয় মেয়াদে তিন বছরের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হন।
সিডিএ’র উপ-সচিব অমল কান্তি গুহ বলেন, ‘দুপুরে প্রজ্ঞাপন হয়েছে। আমরা পেয়েছি। নিয়ম অনুযায়ী, নতুন চেয়ারম্যান মহোদয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে যোগদান করে এরপর সিডিএ কার্যালয়ে আসবেন।’
মোহাম্মদ ইউনুছ প্রয়াত রাজনীতিক এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ভাবশিষ্য হিসেবে পরিচিত। সত্তরের দশকে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করা ইউনুছ বর্তমানে আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য।
মন্তব্য