কলাবাগানে বন্ধুর বাসায় গিয়ে নিহত কিশোরী তার ধানমন্ডির বাসা থেকে বের হয়েছিলেন ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে। দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে বাসা থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
ওই কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে অভিযোগে মামলা করেছে পরিবার। গ্রেপ্তার হয়েছেন কিশোরীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকা তরুণ ফারদিন ইফতেখার দিহান।
মধ্যবর্তী এই দুই ঘণ্টায় কী ঘটেছিল নিউজবাংলার পক্ষ থেকে তা অনুসন্ধানের চেষ্টা করা হয়েছে।
পরিবার, চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে কলাবাগানে দিহানের বাসায় যান ইংরেজি মাধ্যমে ‘ও’ লেভেলে পড়া ওই কিশোরী। ফাঁকা বাসায় তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক ঘটে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে কলাবাগান লেক সার্কাস রোডের বাসা থেকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নেয়ার আগেই ওই ছাত্রী মারা যান।
ওইদিন রাত দেড়টার দিকে দিহানকে একমাত্র আসামি করে কলাবাগান থানায় মামলা করেন নিহত ছাত্রীর বাবা। শুক্রবার দুপুরে দিহানকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। সেখানে ১৬৪ ধারায় তার জবানবন্দি রেকর্ডের পর কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত।
ছাত্রীর মা চাকরিজীবী। কর্মস্থলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সকাল সাড়ে আটটায় তিনি বাসা থেকে বের হন। বাবা ব্যবসায়ী। তিনি বাসা থেকে বের হন সাড়ে ৯টার দিকে।
ছাত্রীর বাবা জানিয়েছেন, বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে মেয়েটি তার মাকে ফোন করে কোচিং থেকে কিছু কাগজ আনার জন্য যাবে বলে জানান। এরপর আর মেয়ের সঙ্গে বাবা-মা কারও কথা হয়নি।
নিহত ছাত্রী তার বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতেন ধানমন্ডিতে। ওই বাসায় বৃহস্পতিবার দারোয়ানের দায়িত্বে ছিলেন শাহাবুদ্দিন। তার সঙ্গে শনিবার দুপুরে কথা হয় নিউজবাংলা প্রতিবেদকের। শাহাবুদ্দিন জানান, ওই ছাত্রী বাসা থেকে বের হওয়া বা প্রবেশের সময় তার সঙ্গে সালাম বিনিময় হতো। ঘটনার দিনও বাসা থেকে বের হওয়ার সময় সালাম বিনিময় হয়।
তিনি বলেন, ‘ওইদিন আমি গেইটে ছিলাম। আপু পৌনে ১২টার দিকে বাসা থেকে বের হন। তিনি সালাম দিয়ে বেরিয়ে যান।’
তবে ধানমন্ডির বাসা থেকে বের হওয়ার সঠিক সময় জানা যায়নি। বাড়িতে সিসি ক্যামেরা লাগানো থাকলেও তা কয়েক দিন ধরে অকেজো রয়েছে জানিয়েছেন শাহাবুদ্দিন।
কোচিংয়ে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হলেও সেখানে যাননি ছাত্রী। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে দিহান বলেছেন, ধানমন্ডির বাসা থেকে বের হয়ে ওই শিক্ষার্থী সোবহানবাগের মেট্রো শপিং মলের সামনে এসে অপেক্ষা করছিলেন। দিহান নিজের গাড়িতে করে মেট্রোর সামনে অপেক্ষায় থাকা ছাত্রীকে নিয়ে লেকসার্কাস সড়কের মাথায় লাজ ফার্মার সামনে নামিয়ে দেন। অল্প দূরত্বে থাকা নিজের বাসায় দিহান তার নিজের গাড়ি নিয়ে একা প্রবেশ করেন এবং ওই ছাত্রীকে পরে একা বাসায় প্রবেশ করতে বলেন।
দিহানের পরামর্শ অনুযায়ী, ওই ছাত্রী একা দিহানের বাসায় প্রবেশ করেন। বাসার নিচে তখন দারোয়ানের দায়িত্বে ছিলেন দুলাল। কোনো বাধা ছাড়াই কলাবাগানের বাসায় প্রবেশ করেন ওই ছাত্রী।
ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দিহানের কলাবাগানের বাসা ঘুরে দেখা গেছে, তারা থাকেন ভবনটির তৃতীয় তলায়। মা, আপন ভাই ও এক চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে থাকেন দিহান।
তার মা জানান, দিহানের নানা অসুস্থ। তাকে দেখার জন্য বৃহস্পতিবার সকালে বগুড়ার উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। আপন ভাই অফিসের উদ্দেশে সকালেই বাসা থেকে বের হন এবং প্রায় একই সময়ে চাচাতো ভাই ব্যবসার কাজে বের হন।
বাসাটি সকাল ১০টার পর থেকে ফাঁকা থাকবে জেনেই দিহান ও ওই কিশোরী নিজেদের মধ্যে কথা বলে কলাবাগানে দিহানের বাসায় দেখা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জবানবন্দিতে জানিয়েছেন দিহান।
দুপুর ১২টার পর কলাবাগানে দিহানের বাসায় প্রবেশ করেন ওই ছাত্রী। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য জানিয়েছিলেন দিহান। কলাবাগান থানা পুলিশের এক জন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, বেলা ১২টার পর বাসায় আসেন ওই ছাত্রী। লাজ ফার্মার সামনে থেকে একাই বাসায় যান তিনি।
আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে দিহান জানিয়েছেন, শারীরিক মিলনের কোনো পরিকল্পনা তাদের ছিল না। কিন্তু ওই ছাত্রী বাসায় আসার পর তারা শারীরিক মিলনের সিদ্ধান্ত নেন। তবে শারীরিক মিলনের আগে ওই ছাত্রী ভীত ছিলেন বলে দাবি করেন দিহান। বাসার বেডরুমে দুজনের শারীরিক মিলনের একপর্যায়ে মেয়েটির রক্তক্ষরণ শুরু হয়।
দিহান জবানবন্দিতে বলেন, এরপর বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ানোর পর মেয়েটি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। তার মুখে পানি ছিটিয়ে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করেন দিহান। কিন্তু কোনো কাজ না হওয়ায় অজ্ঞান অবস্থায় থাকা ছাত্রীকে সামনের কক্ষের সোফায় নিয়ে আসেন তিনি।
ইন্টারকমের মাধ্যমে বাসার নিচে গার্ডের দায়িত্বে থাকা দুলালকে বাসায় ডেকে আনেন দিহান। এরপর তিনি ও দুলাল অজ্ঞান অবস্থায় থাকা ভুক্তভোগী ছাত্রীকে ধরে তৃতীয় তলা থেকে বাসার নিচে নিয়ে আসেন এবং গাড়িতে তোলেন। এরপর দিহান নিজেই গাড়ি চালিয়ে ছাত্রীকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নিয়ে যান।
দুপুর দেড়টায় চেতনাহীন ছাত্রীকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয় বলে জানিয়েছেন দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক ও সেখানকার স্টাফরা। তখন আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক হিসেবে আসির ছিলেন বলে জানান হাসপাতালের প্রেস সচিব শেখ নাজমুল হক সৈকত।
শেখ নাজমুল হক সৈকত বলেন, মেয়েটির ঘাড় কাত হয়ে ছিল, তার কোনো জ্ঞান ছিল না। তখনও ব্লিডিং হচ্ছিল। ডিউটি ডাক্তার তার পালস না পেয়ে, সিপিআর (কার্ডিও পালমোনারি রিসাসিটেশন) দেন। তবুও হার্ট চালু না হওয়ায়, সবশেষ ইসিজি করে নিশ্চিত হওয়া যায় কিশোরী মারা গেছেন। দুপুর ১টা ৪৩ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
হাসপাতাল থেকে দেয়া ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর সময় বলা হয়েছে ১টা ৪৫ মিনিট।
দিহান হাসপাতালেই আটক
ছাত্রী মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কলাবাগান থানাকে ফোন করে ঘটনা জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল থেকে কল পেয়ে কাছাকাছি থাকা পুলিশ সদস্যদের দ্রুত ঘটনাস্থলে যাওয়া জন্য থানা থেকে নির্দেশ দেয়া হয়।
থানা পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, খবর পাওয়ার পর হাসপাতালে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত যতজনকে সন্দেহভাজন মনে হয়েছে, তাদের সবাইকে থানায় নিয়ে আসার নির্দেশ দেয়া হয়। তাৎক্ষণিকভাবে দিহান ও তার তিন বন্ধুকে হাসপাতালে পাওয়া যায় এবং তাদের থানায় নিয়ে আসা হয়।
থানায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে নিজে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন দিহান। তবে থানায় নিয়ে আসা তার অপর তিন বন্ধুর কোনো সম্পৃক্ততা পায়নি পুলিশ।
কলাবাগান থানার পরিদর্শক (অপারেশন্স) ঠাকুর দাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে অন্যরাও জড়িত থাকতে পারে এই সন্দেহে আমরা দিহানের তিন বন্ধুকে থানায় এনেছিলাম। তাদের কোনো সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় শুক্রবার বিকেলে পরিবারের জিম্মায় তিন জনকে ছেড়ে দেয়া হয়।’
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এই তিন বন্ধু দিহানের কলে হাসপাতালে এসেছিলেন। তারা ভেবেছিলেন দিহান অসুস্থ। হাসপাতালে এসে জানতে পারেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাদেরকে আসার জন্য ফোন করেন দিহান।’
পুলিশ হাসপাতালে পৌঁছার পর নিহত ছাত্রীর সুরতহাল করে মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। থানা পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে অন্য আরেকটি টিম ঘটনাস্থলে (কলাবাগানে দিহানের বাসা) যায়।
আলামত হিসেবে যা জব্দ হয়েছে
স্কুলছাত্রীর নিহত হওয়ার ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজসহ গুরুত্বপূর্ণ আলামত জব্দ করেছে কলাবাগান থানা পুলিশ। সংবেদনশীল মামলা হওয়ায় বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে আলামত সংগ্রহ করা হয় বলে নিউজবাংলাকে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কলাবাগান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আ ফ ম আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘প্রথমে আমরা হাতের কাছে যে আলমত পেয়েছি, তা হলো দিহানের গাড়ি। সেটিতে করে দিহান রক্তাক্ত অবস্থায় আনোয়ার খান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে মেয়েটিকে নিয়ে এসেছিলেন। জব্দ তালিকায় আরও রয়েছে দিহানের ব্যবহৃত স্মার্টফোন, ভিকটিমের কাপড়, রক্তমাখা টিস্যু, একটি ছোট বালিশ (রক্তমাখা) ও হাসপাতালের বিছানার একটি চাদর।’
এ ছাড়া সিআইডির ক্রাইমসিন বিভাগ ঘটনাস্থল থেকে তাদের মতো করে আলামত সংগ্রহ করেছে বলে জানান আসাদুজ্জামান।
ঘটনার দুটি সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছে কলাবাগান থানার একটি দায়িত্বশীল সূত্র। একটি আনোয়ার খান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের, অন্যটি ঘটনাস্থলের পাশের বাড়ির ক্যামেরায় ধারণ করা।
সূত্রটি জানায়, আনোয়ার খান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফুটেজে দেখা যায়, দিহান নিজে গাড়ি চালিয়ে ওই স্কুলছাত্রীকে নিয়ে আসেন। তার সঙ্গে সে সময় অন্য কেউ ছিল না।
অন্য ফুটেজে রয়েছে দিহানের গাড়ির বাসায় ঢোকা আর বের হওয়ার ছবি। সেখানে তার সঙ্গে অন্য কেউ ছিল কিনা তা বোঝা যায়নি। মামলার গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রমাণ হিসেবে দুটি ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
এদিকে ঘটনার পর থেকে পলাতক আছেন দুলাল নামের নিরাপত্তাকর্মী। ওই কিশোরীকে বাড়ির তৃতীয় তলায় দিহানদের ফ্ল্যাট থেকে গাড়ি পর্যন্ত তুলতে দিহানকে সাহায্য করেছিলেন দুলাল।
শনিবার কথা হয় ওই বাড়ির অপর নিরাপত্তাকর্মী আব্দুল মোতালেবের সঙ্গে। মোতালেব এ বাড়িতে চাকরি করছেন সাড়ে চার বছর ধরে। আর দুলাল কাজ করছেন কয়েক মাস। তারা দুজন একসঙ্গে বাড়ির ছোট্ট একটি ঘরে থাকেন।
মোতালেব জানান, ঘটনার সময় গেটের দায়িত্ব ছিল দুলালের। ডিউটি না থাকায় ঘটনার পুরো সময়টা মোকাররম বাড়ির বাইরে ছিলেন। ফিরে এসে দেখে দুলাল নেই, গেট ফাঁকা, রোদে শুকাতে দেয়া আছে দুলালের ভেজা লুঙ্গি। ডিউটিতে থাকার সময় দুলাল সে লুঙ্গিটাই পরে ছিলেন বলে জানান মোতালেব। এর কিছুক্ষণ পরই বাড়িতে পুলিশ আসে। পুলিশসহ উপরে উঠে দিহানদের ফ্ল্যাটের সামনে রক্তের ছাপ দেখেছিলেন মোতালেব।
কথা বলার জন্য একাধিকবার ফোন করা হয় দুলালকে। রিং বাজলেও ফোন ধরেননি তিনি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, ‘দুলাল যেহেতু চাক্ষুস সাক্ষী, তাই তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা অব্যাহত আছে।’
আরও পড়ুন:ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হবে। সবাই ভোট দিতে পারবেন। ভোট হবে দিনের বেলা, রাতের বেলা নয়। নতুন নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে পুরোনো ঠিকানায় চলে যাব। আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। সুযোগ সব সময় আসে না। একবার সুযোগ আসতে ৫৪ বছর লেগে যায়। আবার কবে সুযোগ আসবে জানি না। তাই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ঐক্যবদ্ধ হই। ঐক্যই শক্তি, শক্তিই শান্তি।’
রাজধানীর বকশিবাজারে গতকাল বুধবার সকালে সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার ২৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে ৫৪ বছর পর সুযোগ এসেছে। এ সুযোগ কোনোভাবেই হাতছাড়া করা যাবে না।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘অতি আধুনিক শিক্ষার নামে মাদ্রাসা শিক্ষায় কোরান-হাদিস থেকে সরে গিয়ে কোণঠাসা হয়ে গেছে। মনে রাখতে হবে মাদ্রাসা শিক্ষা বিশেষায়িত শিক্ষা। আধুনিকতার পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষার মূল ভিত্তি থাকতে হবে কোরান এবং হাদিস, ফেকাহ।’
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশে আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি মাদ্রাসার ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে। আলিয়া পদ্ধতির মাদ্রাসার অবদান স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মতো। অনেক যোগ্য ব্যক্তি এখানে তৈরি হয়েছেন। আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি মাদ্রাসার ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে। আরবি, ইংরেজি জানলে বিভিন্ন দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও বৃত্তি পাবেন।’
রাষ্ট্র ও সমাজ গঠনে যুগ যুগ ধরে আলিয়া মাদ্রাসা ভূমিকা রাখছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ধারা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যাশা করি। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতির নামে দুর্বৃত্তপনা বন্ধ করতে হবে। এ সময় ঐক্যের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমদের আল্লাহ এক, কোরান এক, কেবলা এক। এই মিল আমাদের এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসবে।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, বাহিরের ইন্ধনে দুষ্কৃতকারীরা পূজাকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছিল। তারা সফল হতে পারেনি।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের ইছাপুরায় শ্রী শ্রী সার্বজনীন দুর্গাপূজা মণ্ডপ পরিদর্শনকালে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, পূজার শুরুতে ধর্ষণের ঘটনা প্রচার করে পূজাকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হয়েছে। এ কাজে বাহিরের ইন্ধন ছিল কিন্তু দুষ্কৃতকারীরা সফল হতে পারেনি।
এবার বাংলাদেশের সব জায়গায় ভালোভাবে উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে পূজা সম্পন্ন হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীল বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, দুর্গাপূজা ও বৌদ্ধদের বিজু উৎসব যাতে ভালোভাবে হতে না পারে তার জন্য পার্শ্ববর্তী দেশের সহযোগিতায় কিছু সন্ত্রাসী এ ধরনের কাজ করেছে।
তিনি বলেন, স্থানীয় প্রশাসন এবং বিশেষ করে পূজা কমিটির সহযোগিতায় এ বছর শান্তিপূর্ণভাবে পূজা সম্পন্ন হয়েছে। এ জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা আক্তার, সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল ) মো. ইব্রাহিম, পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাদর পাল। সূত্র : বাসস
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দ্রুত প্রত্যাহার হবে এমন কোন সম্ভাবনা নেই।
বরিশাল নগরীর শংকর মঠ পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আজ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, যখন একটা দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়, স্থায়ী কি অস্থায়ী এ ধরনের প্রশ্ন থাকে। আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের উপর দেয়া নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়া হবে এরকম কোনো সম্ভাবনা আমি দেখছি না।
বিদেশি গণমাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা বলেন, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অশান্ত পাহাড় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাহাড়কে যারা অশান্ত করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার।
তিনি আজ দুপুরে বরিশাল সার্কিট হাউজে পৌঁছে নগরীর নতুন বাজার সংলগ্ন শংকর মঠ পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের সাঙ্গে সাক্ষাৎ ও কুশল বিনিময় করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- বরিশাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, পুলিশ সুপার মো. শরীফ উদ্দীন, শংকর মঠ পূজা মণ্ডপ কমিটির সভাপতি কানু লাল সাহা ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক তম্ময় তপু প্রমুখ।
বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থের একটি অংশ আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আশাবাদী অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি মঙ্গলবার এ কথা বলেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মাধ্যমে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়া ক্রমান্বয়ে এগোচ্ছে। এটি সময়সাপেক্ষ বিষয়, একদিনে সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, যারা বিদেশে টাকা পাচার করে তারা সাধারণত খুব কৌশলী ও প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ হয়। ফলে ফেরত আনার কাজ দীর্ঘমেয়াদি ও জটিল হয়ে পড়ে।
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ‘অর্থ ফেরত আনা মানে সুইস ব্যাংকে ফোন দিয়ে টাকা নিয়ে আসা নয়। আন্তর্জাতিক আইনি ও আর্থিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই এটি করতে হয়। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে কিছু অগ্রগতি হয়েছে এবং বেশ কিছু বিখ্যাত আইনি সংস্থার সঙ্গে আলোচনা চলছে। কিছু নির্দিষ্ট বিচার ব্যবস্থার সঙ্গেও আলোচনা এগোচ্ছে। আমরা আশা করি ফেব্রুয়ারির মধ্যে কিছু ফল পাওয়া যাবে।’
অর্থ উপদেষ্টা জানান, সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ইতোমধ্যে ১১-১২ টি মানিলন্ডারিং মামলা চিহ্নিত করেছে এবং সংশ্লিষ্ট সম্পদের তদন্ত অব্যাহত আছে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক সম্পদ জব্দ করেছে, বিদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট শনাক্ত করেছে এবং সংশ্লিষ্টদের পাসপোর্ট ও বসবাসের তথ্য সংগ্রহ করেছে। এসব মামলা আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই এগোচ্ছে।’
আগামী নির্বাচনের পর নতুন সরকার আপনাদের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে কি না-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘বাধ্য হয়ে তাদের চালিয়ে যেতে হবে। কারণ আমরা প্রক্রিয়াগুলো চালু করে গেলাম, সেটা অব্যাহত না থাকলে তো টাকা ফেরত আনতে পারবে না। তারা বসে থাকলে টাকা ফেরত আসবে না। আর যদি আনতে হয় এই প্রক্রিয়াগুলো মানতে হবে। এটা তো ইন্টারন্যাশনাল প্র্যাকটিস। আমরা যে প্রক্রিয়া শুরু করেছি তা বজায় রাখতে হবে।’
খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘পর্যাপ্ত মজুত থাকা সত্ত্বেও সরকার সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা আতপ চালের একটি বাফার মজুত রাখি। অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটলে যাতে সংকট না হয় সে জন্য নীতিগতভাবে আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, সার বিশেষ করে-ডিএপি ও ইউরিয়া আমদানিতে সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে। সুখবর হচ্ছে-আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম কিছুটা কমেছে। আমরা বাজার স্থিতিশীল রাখতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করছি, পাশাপাশি যথেষ্ট চাল ও সারের মজুদও রাখছি।
সাম্প্রতিক বিবিএস প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সরকার শিশু ও মাতৃকল্যাণ বিষয়ে সতর্ক। তাই ভিজিএফ কর্মসূচি এবং উপকূলীয় ও হাওর অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, আসন্ন মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞাকালে জেলেদের প্রতিটি পরিবারকে ২০ কেজি চাল দেওয়া হবে।’
বর্তমান বাজার পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মজুত ভালো থাকায় চালের দাম সম্প্রতি কমেছে। তবে শাকসবজি ও অন্যান্য দ্রুত নষ্ট হওয়া পণ্যের দাম মৌসুমি কারণে ওঠানামা করে। পাইকারি ও খুচরা বাজারে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীর কারসাজি এখনো অব্যাহত রয়েছে। ‘ এ কারণেই আমরা এখনো পূর্ণ সাফল্য দাবি করতে পারছিনা,’ স্বীকার করেন তিনি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সিটি লেভেল কো-অর্ডিনেশন কমিটি (সিএলসিসি) এর প্রথম সভা আজ নগর ভবন অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ডিএসসিসি প্রশাসক জনাব মোঃ শাহজাহান মিয়া এঁর সভাপতিত্বে স্থানীয় সরকার বিভাগের "সিটি কর্পোরেশন নাগরিক সম্পৃক্ততকরণ নির্দেশিকা" এর আলোকে গঠিত সিএলসিসির ৭১ জন সদস্য উপর্যুক্ত সভায় অংশগ্রহণ করেন।
সিটি লেভেল কো-অর্ডিনেশন কমিটি (সিএলসিসি) সভায় আলোচনাপূর্বক উন্নয়ন ও সেবামূলক কর্মপরিকল্পনা সুপারিশ করতে পারে। এ সভায় সিটি কর্পোরেশনের বার্ষিক বাজেট ও উন্নয়ন পরিকল্পনা, আর্থিক বিবরণীসহ বার্ষিক অর্জন সম্পর্কিত প্রতিবেদন, নাগরিক জরিপ, সামাজিক সমস্যাবলি সমাধানের জন্য গৃহীত পদক্ষেপ, সিটি কর্পোরেশনের সেবাসমূহের মান উন্নয়ন, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও নাগরিকদের যথাযথভাবে সেবা প্রদানে চ্যালেঞ্জসমূহ আলোচিত হতে পারে।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে ডিএসসিসি প্রশাসক বলেন, "জুলাই পরবর্তী নাগরিক প্রত্যাশা পূরণে সিএলসিসি কমিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেননা তাদের মাধ্যমে সরাসরি নাগরিকদের মতামতের প্রতিফলন হয়।" এ সময় প্রশাসক ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ ও জলাবদ্ধতা নিরসনে ডিএসসিসির গৃহীত পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরে জনগণকে এ বিষয়ে আরও সচেতন ও সম্পৃক্ত করতে সিটি লেভেল কো-অর্ডিনেশন কমিটির সদস্যদের সহযোগিতা কামনা করেন।
সভায় সদস্যবৃন্দ ডিএসসিসির সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে আলোচনা ও সুপারিশ প্রদান করেন এবং সিটি কর্পোরেশন নাগরিক জরিপে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে ডিএসসিসি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মোঃ জহিরুল ইসলাম, সচিব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, সকল বিভাগীয় প্রধান এবং মিস নাউকু আনজাই, টিম লিডার, সিফরসি২ উপস্থিত ছিলেন।
তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত নারী শ্রমিকদের মধ্যে বাল্যবিয়ে ও কিশোরী অবস্থায় গর্ভধারণের প্রবণতা উদ্বেগজনক আকারে বেড়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই শ্রমিকদের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি (৬৬ শতাংশ) ১৮ বছরের আগেই বিয়ে হয়েছে। তাদের অধিকাংশই অপ্রাপ্ত বয়সে প্রথমবারের মতো গর্ভধারণ করেছেন। একই সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ ও গর্ভপাতের হারও এ জনগোষ্ঠীর মধ্যে তুলনামূলক বেশি।
গতকাল সোমবার রাজধানীর মহাখালীতে আইসিডিডিআরবি মিলনায়তনে ‘তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত নারী শ্রমিকদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার’ শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়।
গবেষণা বলছে, প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নারী শ্রমিক অন্তত একবার অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন এবং প্রতি চারজনের একজন গর্ভপাত বা মেনস্ট্রুয়াল রেগুলেশন করেছেন।
জানা গেছে, গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার সহায়তায় আইসিডিডিআরবি প্রায় ২৪ মাসব্যাপী এই গবেষণা পরিচালনা করে, যা বাংলাদেশে পরিচালিত প্রথম এমন কোনো গবেষণা। ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত গবেষণাটি কড়াইল ও মিরপুর বস্তি এবং গাজীপুরের টঙ্গী বস্তিতে আইসিডিডিআরবির আর্বান হেলথ অ্যান্ড ডেমোগ্রাফিক সার্ভেইলেন্সের আওতাধীন এলাকায় পরিচালিত হয়। ১৫-২৭ বছর বয়সি মোট ৭৭৮ জন বিবাহিত নারী গার্মেন্ট শ্রমিককে এই গবেষণাটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং প্রতি ছয় মাস অন্তর অন্তর এদের ওপর জরিপ পরিচালনা করা হয়।
সেমিনারে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে জানানো হয়, গার্মেন্টস কর্মীদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন ছিলেন ৪৯ শতাংশ শ্রমিক, যা দুই বছর শেষে বেড়ে দাঁড়ায় ৭০ শতাংশে। জরুরি গর্ভনিরোধক বড়ি সম্পর্কে জ্ঞান ছিল মাত্র ১৫ শতাংশ নারীর; গবেষণা শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯ শতাংশে। একই সময়ে পরিবার পরিকল্পনায় লিঙ্গ সমতার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব ৫৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭১ শতাংশে পৌঁছেছে।
গবেষণায় দেখা যায়, নারী শ্রমিকরা ঘর ও কর্মস্থল দুই জায়গাতেই সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। গত ১২ মাসে স্বামীর সহিংসতার হার ছিল উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। যৌন সহিংসতা ছাড়া অন্য সব ধরনের সহিংসতা গত দুই বছরে বেড়েছে। কর্মক্ষেত্রেও সহিংসতার প্রবণতা উল্টোদিকে গেছে— গবেষণার শুরুতে যেখানে প্রায় ৪৮ শতাংশ শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে মানসিক সহিংসতার শিকার হয়েছিলেন, গবেষণার শেষ দিকে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৫ শতাংশে।
তবে সহিংসতার শিকার হওয়ার পরও খুব কম সংখ্যক নারী আনুষ্ঠানিকভাবে সাহায্য চাইছেন। গবেষণার শুরুতে যেখানে ৩৫ শতাংশ নারী অনানুষ্ঠানিকভাবে (পরিবার বা বন্ধুদের কাছে) সাহায্য চাইতেন, গবেষণার শেষ দিকে তা কমে দাঁড়ায় মাত্র ২১ শতাংশে। কর্মক্ষেত্রের সহিংসতার ঘটনাতেও মাত্র এক-পঞ্চমাংশ নারী কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন, এবং দুই বছর পরেও এ হার অপরিবর্তিত থাকে।
তরুণ বয়সে গর্ভধারণের ঝুঁকি কমাতে কিছু নিয়ামকও চিহ্নিত হয়েছে গবেষণায়। দেখা গেছে, যারা সন্তান ধারণের আগেই গর্ভনিরোধক ব্যবহার শুরু করেছিলেন, তাদের কিশোরী অবস্থায় গর্ভধারণের ঝুঁকি ৪৭ শতাংশ কম। এছাড়া যারা প্রথম গর্ভধারণের আগে গার্মেন্ট খাতে কাজ শুরু করেছিলেন, তাদের ঝুঁকি আরও কম।
অন্যদিকে, স্বামী কর্তৃক সহিংসতার অভিজ্ঞতা থাকলে কিশোরী অবস্থায় গর্ভধারণের ঝুঁকি ২৬ শতাংশ বেড়ে যায় বলেও গবেষণায় উঠে এসেছে।
গবেষণার উপাত্ত বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, নারীর ক্ষমতায়নের বিভিন্ন মাত্রা স্বামীর সহিংসতাকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। যেমন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বেশি থাকলে মানসিক ও যৌন সহিংসতা থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়। মতামত প্রকাশের ক্ষমতা থাকলে যৌন সহিংসতা কমে। আবার চলাচলে স্বাধীনতা থাকলে শারীরিক সহিংসতার ঝুঁকিও কমে যায়।
ঢাকার মহাখালীতে আইসিডিডিআরবি ক্যাম্পাসে আয়োজিত সেমিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (পরিকল্পনা ও গবেষণা) সহকারী পরিচালক ডা. সেকেন্দার আলী মোল্লা, পপুলেশন কাউন্সিল বাংলাদেশের সাবেক পরিচালক ডা. উবাইদুর রব, বিকেএমইএর যুগ্ম সচিব ফারজানা শারমিন এবং মেরী স্টোপস বাংলাদেশের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও স্বতন্ত্র গবেষক ইয়াসমিন এইচ আহমেদ।
বিকেএমইএর যুগ্ম সচিব ফারজানা শারমিন বলেন, গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে পরামর্শমূলক সেবা বৃদ্ধির কাজ চলছে। তবে আরও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
এই গবেষণার প্রধান গবেষক ছিলেন আইসিডিডিআরবির ইমেরিটাস সায়েন্টিস্ট ড. রুচিরা তাবাসসুম নভেদ। তিনি বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পেলে তারা শুধু পরিবারে নয়, কর্মক্ষেত্রেও সহিংসতা থেকে সুরক্ষিত হতে পারেন। গার্মেন্ট শ্রমিক নারীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, খাগড়াছড়ির বর্তমান পরিস্থিতি সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে।
তিনি বলেন, খাগড়াছড়িতে স্থিতিশীল পরিস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সোমবার রাজধানীর রমনায় ডিএমপি’র পাঁচটি থানার ভবন নির্মাণ কাজের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, খাগড়াছড়িতে কেউ যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, খাগড়াছড়িতে স্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সেখানে আছেন। তিনি বিষয়টি দেখাশোনা করছেন এবং স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
খাগড়াছড়িতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টিতে প্রতিবেশী একটি দেশের অর্থ ও অস্ত্র সহায়তা সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি কোনো দেশের নাম উল্লেখ করতে চাই না, তবে পতিত ফ্যাসিস্টদের দল খাগড়াছড়িতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে।’
তিনি আরো বলেন, ফ্যাসিস্ট দলটি সারা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। যাতে চলমান দুর্গাপূজা উৎসবমুখর ও বাধাহীনভাবে উদযাপন করা না যায়।
দুর্গাপূজা নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, গতকাল থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বড় ধর্মীয় উৎসব শুরু হয়েছে। কেউ যেন কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে ও পূজা নির্বিঘ্নে আয়োজিত হয়, সেজন্য সবাইকে সহায়তা করতে হবে।
পাহাড়ে আটকে পড়া পর্যটকদের বিষয়ে তিনি বলেন, আটকে পড়া পর্যটকদের অধিকাংশকেই নিরাপদভাবে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, ডিএমপিতে ৫০টি থানা রয়েছে, যার অর্ধেক ভাড়া করা ভবনে আছে। আমরা সমস্ত থানাকে তাদের নিজস্ব ভবনে স্থানান্তর করার জন্য কাজ করছি।
খাগড়াছড়িতে সাম্প্রতিক অস্থিরতায় তিনজন নিহত এবং পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সদস্যসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
মন্তব্য