কলাবাগানে ‘ও’ লেভেল পড়ুয়া ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলার আসামি ফারদিন ইফতেখার দিহান নিজেই গাড়ি চালিয়ে ওই ছাত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যান। পথিমধ্যে তিনি ফোনে তার কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা হাসপাতালে দিহানের সঙ্গে যোগ দেন।
তবে ওই কিশোরীকে হাসপাতালে নেয়ার আগেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু ঘটে।
ঘটনা তদন্তে যুক্ত পুলিশ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে কলাবাগান লেক সার্কাস রোডের একটি বাড়িতে। চারতলা বাড়ির তৃতীয় তলার পশ্চিম পাশে মা ও ভাইয়ের সঙ্গে থাকেন দিহান। ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন দুলাল। ঘটনার পরদিন শুক্রবার তিনি কাজে যোগ দেননি। তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে ফোন করার চেষ্টা করলে এ প্রতিবেদক সেটি বন্ধ পান।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভবনের এক কেয়ারটেকার নিউজবাংলাকে জানান, দিহানের গাড়িতে করে বাসায় এসেছিলেন ভুক্তভোগী ছাত্রী। বাসায় অসুস্থ হওয়ার পর তাকে কীভাবে গাড়িতে নেয়া হয়েছে, সে তথ্য তিনি কিছু জানাতে পারেননি।
এ ভবনের গেট ও নিচতলায় কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকায় এ ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ওই কিশোরীকে হাসপাতালে নেয়ার তথ্য জানা গেছে পুলিশের কাছ থেকে। রমনা বিভাগের নিউমার্কেট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল হাসান জানান, অচেতন হয়ে যাওয়ার পর ওই কিশোরীকে দিহান নিজেই গাড়ি চালিয়ে বাসা থেকে সামান্য দূরের আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘দিহান নিজেই গাড়ি চালিয়ে ভিকটিমকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। ঘটনার সঙ্গে অন্য কারও সম্পৃক্ততা এখনও পাওয়া যায়নি। সেটি পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
হাসপাতালে নেয়ার পর যা ঘটে
ভুক্তভোগী ছাত্রীকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত অবস্থায় পান বলে জানিয়েছে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ওইদিন দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক ও স্টাফদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুপুর ১টার দিকে জরুরি বিভাগে ছুটে আসেন দিহান। তিনি বলেন, গুরুতর অসুস্থ রোগী গাড়িতে রয়েছে। তিনি হুইল চেয়ার বা স্ট্রেচারে রোগীকে হাসপাতালে আনতে বলেন।
সঙ্গে সঙ্গে এক জন ওয়ার্ড বয় ও এক জন পেশেন্ট অ্যাটেনডেন্ট হুইল চেয়ার নিয়ে বাইরে যান। তারাই অচেতন অবস্থায় থাকা ওই কিশোরীকে গাড়ি থেকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন।
চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে বুঝতে পারেন কিশোরী বেঁচে নেই। হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানান তারা।
হাসপাতালটির ওয়ার্ডবয় আবদুল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই সময় আমি আর মোরসালিন (পেশেন্ট অ্যাটেনডেন্ট) ছিলাম। হুইল চেয়ার নিয়ে গিয়ে দেখি মেয়েটা রক্তাক্ত এবং অচেতন অবস্থায় আছে। পরে স্যারেরা (দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক) জানান, আগেই মারা গেছেন।’
ওই কিশোরী মারা গেছেন জানার পর হাসপাতাল থেকে কলাবাগান থানায় খবর দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির কাস্টমার কেয়ারের নির্বাহী কর্মকর্তা সায়মন সবুজ।
তিনি বলেন, পুলিশ এসে মরদেহের সুরতহালসহ যে গাড়িতে করে ছাত্রীকে নিয়ে আসা হয়েছিল, সেটি জব্দ করে নিয়ে যায়। এ ছাড়া যে ছেলে মেয়েটিকে নিয়ে এসেছিল তাকেসহ কয়েকজনকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা কলাবাগান থানায় ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় ফারদিন ইফতেখার দিহানকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে শুক্রবার আদালতে পাঠানো হলে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
তিন বন্ধুকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ
দিহানের তিন বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করার পর শুক্রবার দুপুরে মুচলেকা দিয়ে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
রমনা বিভাগের নিউমার্কেট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনার পর আসামি দিহান বন্ধুদের হাসপাতালে আসতে বলেন। তার কলে তিন জন আনোয়ার খান হাসপাতালে আসেন। বিভিন্নভাবে পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে।’
আবুল হাসান বলেন, ‘সন্দেহ ছিল, তারাও এ ঘটনায় যুক্ত ছিল কি না। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত তাদের কোনো সম্পৃক্ততা পাইনি। যে কারণে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন:ঈদের পর সমাধান করা হবে- স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এমন আশ্বাসে এক মাসের জন্য আন্দোলন থামালেন বেতন-ভাতা বাড়ানো ও বকেয়া ভাতা পরিশোধসহ চার দফা দাবিতে কর্মবিরতি কর্মসূচি পালনকারী পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চিকিৎসকরা যে দাবিগুলো করেছেন সেগুলো যৌক্তিক। চিকিৎসকরা হাসপাতালকে বাঁচিয়ে রাখে। তাদের বেতন বাড়ানোর বিষয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, চিকিৎসকদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন হবে। তারা কাজে যোগদান করুক।’
বিষয়টি কতদিনে বাস্তবায়িত হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কিছুদিন তো লাগবেই। তবে ঈদের পর হয়তো বলতে পারব, কতদিনের মধ্যে বেতন বাড়বে।’
এর আগে গত শনিবার (২৩ মার্চ) চার দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন করেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
আগামী মাসে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির বাংলাদেশ সফরে কিছু বিষয়ে গুরুত্ব পাবে বলে ইউএনবিকে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র।
ওই সূত্র বার্তা সংস্থাটিকে জানায়, শেখ তামিমের সফরে জনশক্তি, জ্বালানি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বৃহত্তর সহযোগিতার মাধ্যমে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চায় উভয় দেশ।
কাতারের আমিরের সফরে দুই দেশের মধ্যে প্রায় ডজনখানেক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও চুক্তি চূড়ান্ত করার বিষয়ে আলোচনা চলছে জানিয়ে সূত্রটি বলেছে, সফরকালে এসব এমওইউ ও চুক্তি সই করা হবে।
ইউএনবির প্রতিবেদনে বলা হয়, কাতারের আমিরের দুই দিনের সফরটি হতে পারে আগামী ২১ থেকে ২২ এপ্রিল।
বার্তা সংস্থাটি জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমিরের বৈঠকের পর যেসব এমওইউ ও চুক্তি সই হবে, সেগুলো নিয়ে দুই পক্ষ এখন কাজ করছে। সফরের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে আন্তমন্ত্রণালয় সভা করেছে।
গত বছরের মার্চে কাতারের রাজধানী দোহায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বিষয়ে জাতিসংঘের সম্মেলন এলডিসি-৫-এর পার্শ্ববৈঠকে কাতারের আমির শেখ তামিমের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ওই বৈঠকে কাতারের কাছে বিশেষ করে এলএনজি সরবরাহে সহযোগিতার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনের পর একই বছরের ৪ মার্চ বাংলাদেশকে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় কাতার।
১৯৭৫ সালের ২৫ জুন দোহায় বাংলাদেশ তার কূটনৈতিক মিশন চালু করে। ১৯৮২ সালে ঢাকায় কূটনৈতিক মিশন খোলে কাতার।
আরও পড়ুন:দেশের সাত বিভাগে ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমন বার্তা দিয়েছে।
পূর্বাভাসে আজকের বৃষ্টিপাত নিয়ে বলা আছে, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুই এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
সিনপটিক অবস্থান নিয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
আজকের তাপমাত্রা নিয়ে পূর্বাভাসে বলা আছে, সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা সোমবার সকালে ছিল ৮৫%।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় সময় বুধবার নিউ ইয়র্কের কুইন্সের একটি বাসায় মানসিক অবসাদে ভোগা ওই যুবককে বাধ্য হয়েই গুলি করতে হয় বলে পুলিশ দাবি করেছে।
নিউ ইয়ক টাইমস বলছে, ১৯ বছর বয়সী উইন রোজারিওকে দুপুর পৌনে ২টার দিকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তিনি ওজোন পার্কের ১০৩ নম্বর স্ট্রিটে দ্বিতীয় তলার বাসায় তার পরিবারের সঙ্গে থাকতেন।
পুলিশ জনিয়েছে, ৯১১ নম্বরে ফোন পেয়ে পুলিশ ওই যুবকের বাসায় গিয়েছিল। এ সময় কাঁচি দিয়ে অফিসারদের হুমকি দিয়েছিলেন তিনি। এরই এক পর্যায়ে তার পায়ে গুলি চালানো হয়।
নিহতের ভাই উশতো রোজারিও বলেন, মা উইনকে ফেরাতে চেষ্টা করছিলেন। তবে এর মধ্যেই পুলিশ গুলি ছুড়েছে। এই গুলি ছোড়ার কোনো দরকার ছিল না।
পুলিশ ডিপার্টমেন্টের টহল প্রধান জন চেল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, দুজন অফিসার মানসিক যন্ত্রণায় থাকা ব্যক্তি সম্পর্কে ৯১১ নম্বরে একটি কল পেয়ে সেখানে যায়। বাধ্য হয়েই গুলি চালাতে হয়েছে। বেশ উত্তেজনাপূর্ণ, বিশৃঙ্খল এবং বিপজ্জনক অবস্থা তৈরি হয়েছিল। রোজারিও ৯১১ নম্বরে কল করেছিলেন।
উইনের বাবা ফ্রান্সিস রোজারিও জানান, তার পরিবার ১০ বছর আগে বাংলাদেশ থেকে নিউইয়র্কে যান। উইনের স্বপ্ন ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়া। পরিবারের গ্রিন কার্ড পেতে দেরি হওয়ায় সেটি আর হয়নি।
নিহতের ভাই উশতো রোজারিও জানান, তার ভাই দুই বছর আগে ওজোন পার্কের জন অ্যাডামস হাই স্কুল থেকে স্নাতক করেছে। সম্প্রতি বিষণ্ণ ছিলেন তিনি। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে গত বছর হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল তাকে।
নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইউনেস্কো থেকে যে ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কার পেয়েছেন বলে প্রচার করা হয়েছে, তা প্রতারণামূলক এবং সর্বৈব মিথ্যাচার বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। তিনি বলেছেন, এ ধরনের মিথ্যাচার দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করবে।
বুধবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির এক সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে যোগাযোগ করা হয়েছে। সেখান থেকে তারা আমাদের নিশ্চিত করেছেন যে, ইউনেস্কো ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এ ধরনের কোনো সম্মাননা প্রদান করেনি।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ড. ইউনূস আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে গজনভি ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখানে ইসরায়েলের ভাস্কর্য শিল্পী মিজ হেদভা সের তাকে ‘ট্রি অফ পিস’ সম্মাননা স্মারক দেন।’
ভাস্কর হেদভা সেরও নিশ্চিত করেছেন যে, এটি ইউনেস্কোর সম্মাননা বা পুরস্কার নয়। এটি গজনভি ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রদত্ত একটি পুরস্কার।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ইউনেস্কো সদর দপ্তরকে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করব। ড. ইউনূস ও ইউনেস্কোর নাম নিয়ে যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে সেটি অনৈতিক এবং অপরাধমূলক। সেটি আমাদের দেশের জন্য মানহানিকর- এ তথ্যও জানাব।’
তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলি ভাস্কর্য শিল্পীর দেয়া পুরস্কারকে ড. ইউনূস ইউনেস্কোর পুরস্কার হিসেবে প্রচার করেছেন। এটি অত্যন্ত সংবেদনশীল ও অপমানকরও বটে।
‘ইউনূস সেন্টারের ওয়েবসাইটে এটি ইউনেস্কোর পুরস্কার হিসেবে প্রচার করা হয়েছে। ইউনূস সেন্টারকে অনুরোধ করব যে, এভাবে এ ধরনের ভয়াবহ মিথ্যাচার প্রচারণা থেকে তারা যেন বিরত থাকে। তা না হলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
এদিকে বুধবার ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে ইউনেস্কো কর্তৃক ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কার প্রদানের সংবাদটি সঠিক নয় এবং ইউনুস সেন্টার কর্তৃক দাবিকৃত সম্মাননা ইউনেস্কোর কোনো পুরস্কার বা সম্মাননাও নয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল জুবাইদা মান্নান।
এ ধরনের সংবাদ প্রচারকে ‘প্রতারণামূলক ও পরিকল্পিত মিথ্যাচার’ বলে আখ্যায়িত করে ভবিষ্যতে এ ধরনের সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে ইউনূস সেন্টারকে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সম্প্রতি ঢাকার কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় এবং ইউনূস সেন্টারের অফিশিয়াল ওয়েব পেইজে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ইউনেস্কো কর্তৃক ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কার প্রদানের সংবাদটিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের (বিএনসিইউ) দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে।
“ইউনূস সেন্টার কর্তৃক প্রেরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বরাত দিয়ে পত্রিকায় যে সংবাদ ছাপা হয়েছে, তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৬ মার্চ আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত ১১তম গ্লোবাল বাকু ফোরোমে ড. ইউনূসকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়, কিন্তু ইউনেস্কো ঢাকা অফিস জানিয়েছে, প্যারিসস্থ ইউনেস্কো সদরদপ্তর এই বিষয়ে একেবারেই অবহিত নয়।
“১১তম বাকু ফোরাম যেখানে এই সম্মাননা দেয়ার সংবাদ প্রচার হয়েছে, সেখানে ইউনেস্কোর কোন অফিশিয়াল প্রতিনিধিই ছিল না। অধিকন্তু, ইউনূস সেন্টার কর্তৃক দাবিকৃত সম্মাননা ইউনেস্কোর কোনো পুরস্কার বা সম্মাননাও নয়।”
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, “ড. ইউনুসকে ‘ট্রি অফ পিস’ নামক একটি ভাস্কর্য স্মারক/সম্মাননা প্রদান করেন ইসরায়েলি ভাস্কর্য শিল্পী মিজ হেদভা সের। মিজ হেদভা নিজে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যে, ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে ‘ট্রি অফ পিস’ প্রদানে ইউনেস্কোর কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।
“নিজামী গনজবী ইন্টারন্যাশন্যাল সেন্টারের আমন্ত্রণে ইসরায়েলি ভাস্কর্য শিল্পী মিজ হেদভা সের ড. ইউনুসকে এটি প্রদান করেন। মিস হেদভা সের ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক কূটনীতি বিষয়ক গুইউইল অ্যাম্বাসেডর, কিন্তু ইউনেস্কোর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিনিধি নন এবং ইউনেস্কোর কোনো পুরস্কার/সম্মাননা দেয়ার এখতিয়ারও রাখেন না।
“সুতরাং, উল্লিখিত বাস্তবতার নিরিখে বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস পরিচালিত ইউনূস সেন্টার কর্তৃক প্রেরিত এবং প্রচারিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং প্রতারণামূলক বলে মনে করে তার নিন্দা জানাচ্ছে।
“বাংলাদেশ ইউনেস্কোর অন্যতম সক্রিয় সদস্য রাষ্ট্র। ভবিষ্যতে ইউনেস্কোর মতো জাতিসংঘের এমন একটি মর্যাদাপূর্ণ এবং সুখ্যাতিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের নাম অপব্যবহার থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ইউনূস সেন্টারকে সতর্ক করা হলো।”
এই বিষয়টি যেহেতু প্রতারণামূলক এবং পরিকল্পিত মিথ্যাচার, সেহেতু তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে না, তার ব্যাখা চাওয়া হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১ জানুয়ারি বাংলাদেশের আদালত ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং গ্রামীণ টেলিকমের আরও তিনজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা করে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার সহযোগীরা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন, যেটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন।
এ ছাড়াও আয়কর আইন লঙ্ঘনের জন্য তার ব্যক্তিগত আয়কর দাবি আদালতে বিচারাধীন। সুতরাং, তিনি যতদিন আদালত কর্তৃক নির্দোষ প্রমাণিত না হন, ততদিন তাকে কোনো মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার কিংবা সম্মাননা প্রদান সমীচীন নয় বলেও উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশে ইউনেস্কোর সঙ্গে কার্যক্রমের জন্য সরকারের ফোকাল পয়েন্ট হচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন। কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে, কেউ যাতে ইউনেস্কোর নামের অপব্যবহার কিংবা অপপ্রয়োগ না করতে পারে, সেটি নিশ্চিত করা। সে হিসেবে ইউনেস্কোর নাম অপব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের পক্ষ থেকে ইউনেস্কো ঢাকা অফিস এবং ইউনেস্কোতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির সঙ্গে পরামর্শ করে ইউনেস্কো সদর দপ্তরকে অবহিত করা হবে।
আরও পড়ুন:একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানও বাঙালিদের ওপর আক্রমণ করেছিলেন বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের ঢাকা জেলা কার্যালয়ে বুধবার দুপুরে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এমন দাবি করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সোয়াত জাহাজে অস্ত্র এসেছিল পাকিস্তান থেকে। সেই অস্ত্র খালাস করতে গিয়েছিল জিয়াউর রহমান। সেখান থেকে তাকে ধরে নিয়ে আসা হয়। ২৫ মার্চের কালো রাত্রিতে সেও পাকিস্তানিদের সঙ্গে বাঙালিদের ওপরে আক্রমণ করেছিল।’
মুক্তিযুদ্ধের সময় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা পালিয়েছিলেন বলে বিএনপির এক নেতার মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পালিয়ে গেলে যুদ্ধটা করল কে?’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির এক নেতাকে বলতে শুনলাম, ২৫ মার্চ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা নাকি পালিয়ে গিয়েছিল। আমি তাদের কাছে জানতে চাই, তাহলে যুদ্ধটা করল কে? আজকে যে দলটি বড় বড় কথা বলছে, ২৫ মার্চ আওয়ামী লীগ পালিয়েছিল, তাহলে যে মুক্তিযুদ্ধের সরকার গঠন করা হলো, সেক্টর ভাগ করা হলো, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় জিয়াউর রহমান ছিল একজন বেতনভুক্ত কর্মচারী।
‘জিয়াউর রহমান যে মেজর থেকে মেজর জেনারেল হলো এই প্রমোশনটা কে দিল? আওয়ামী লীগ দিয়েছে৷’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা প্রশ্ন করেন আওয়ামী লীগ কোথায় ছিল, আমি প্রশ্ন করি, আপনারা কোথায় ছিলেন?’
ভারতীয় পণ্য বর্জনের অংশ হিসেবে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর চাদর পোড়ানো নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা কথা না বলে পারলাম না। বিএনপির এক নেতা চাদর খুলে পুড়ল। যে নেতারা বলছেন, ভারতীয় পণ্য বর্জন করবেন, তাদের বউদের কয়খানা ভারতীয় শাড়ি আছে?
‘আমি জানি, ঈদের আগে দেখি বিএনপির মন্ত্রীদের বউরা ভারত থেকে শাড়ি এনে বিক্রি করত। আমি এখন বলব বিএনপি নেতারা যদি বাসায় গিয়ে বউদের ভারতীয় শাড়ি পোড়ান, সেদিন বিশ্বাস করব আপনারা সত্যি ভারতীয় শাড়ি বর্জন করলেন। ভারতীয় মসলা তারা খেতে পারবে কি না এ উত্তর তাদের দিতে হবে। আপনারা এ পণ্য সত্যি বর্জন করছেন কি না, এ কথাটাই আমরা জানতে চাই।’
কিছু বুদ্ধিজীবীর সমালোচনা করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের দেশে কিছু আঁতেল আছে। বুদ্ধিজীবী। বুদ্ধি বেচে জীবিকা নির্বাহ করেন যিনি। বাংলাদেশে একটা কাণ্ড আমরা দেখি, অতি বাম, অতি ডান। স্বাভাবিকভাবে গণতান্ত্রিক ধারাটা তারা পছন্দ করেন না।’
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধুকে সময় দেয়া হয়নি উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়তে বঙ্গবন্ধুকে সহায়তা না করে উল্টো বিরোধিতা করা হয়েছিল। যারা এখন দেশের উন্নয়ন দেখতে পায় না, তারাই জাতির পিতার অবদানকে অস্বীকার করেছিল।’
আরও পড়ুন:আসন্ন ঈদে যাতায়াতে দুর্ভোগ, পথে পথে যাত্রী হয়রানি, ভাড়া নৈরাজ্য ও সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে ভাগে ভাগে যাওয়ার সুবিধার্থে ছুটি দুই দিন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
ঈদযাত্রা নিরাপদ ও ভোগান্তিমুক্ত করতে বুধবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি জানান সংস্থাটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে মোজাম্মেল জানান, এবারের ঈদে ঢাকা থেকে এক কোটি, গাজীপুর থেকে ৪০ লাখ, নারায়ণগঞ্জ থেকে ১২ লাখসহ ঢাকা ও আশেপাশের জেলা থেকে এক কোটি ৬০ লাখ মানুষ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করবে। ঈদের আগের চার দিনে বাস-মিনিবাসে ৩০ লাখ, ট্রেনে চার লাখ, প্রাইভেট কার, জিপ ও মাইক্রোবাসে ৩৫ লাখ, মোটরসাইকেলে ১২ লাখ, লঞ্চে ৬০ লাখ, উড়োজাহাজে প্রায় এক লাখ যাত্রীর যাতায়াত হতে পারে।
তিনি জানান, গণপরিবহন সংকট ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যর কারণে বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে এবং খোলা ট্রাক ও পণ্যবাহী পরিবহনে ১৮ লাখ যাত্রীর যাতায়াত হতে পারে। এ ছাড়াও আন্তজেলায় যাতায়াত করবে প্রায় চার থেকে পাঁচ কোটি যাত্রী।
গণপরিবহনের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা না গেলে এবারের ঈদযাত্রায় নারকীয় পরিস্থিতি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, ‘কেননা এবার রোজা ৩০টি সম্পন্ন হলে ১১ এপ্রিল ঈদ হতে পারে। ঈদের আগে ১০ এপ্রিল মাত্র এক দিন সরকারি ছুটি রয়েছে। ঈদের পরে ১০ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত পাঁচ দিনের লম্বা ছুটি রয়েছে। ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ হওয়ায় এবারের ঈদযাত্রায় মুসলমানদের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও পহেলা বৈশাখ উদযাপনে লম্বা ছুটির সুবাদে গ্রামের বাড়ি যাবে। তাই যাত্রী সংখ্যা বাড়বে।
‘৯ ও ১০ এপ্রিল প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ লাখ হারে মানুষ রাজধানী ছাড়বে। অথচ আমাদের গণপরিবহনগুলোতে ২২ থেকে ২৫ লাখের মতো মানুষ পাড়ি দেয়ার সক্ষমতা আছে। এমন পরিস্থিতিতে ঈদের আগে ছুটি না বাড়ালে দেশের সকল পথে যাতায়াত পরিস্থিতি কোমায় চলে যেতে পারে। তাই ৮ এবং ৯ এপ্রিল ২ দিন ঈদের ছুটি বাড়ানো হলে ৫ এপ্রিল থেকে সবাই স্বাচ্ছন্দ্যে, ধাপে ধাপে বাড়ি যাওয়ার সুযোগ পাবে। গণপরিবহন সংকট ও যাত্রী ভোগান্তি থেকেও মুক্তি মিলবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য