কলাবাগানে বন্ধুর বাসায় গিয়ে নিহত কিশোরী তার ধানমন্ডির বাসা থেকে বের হয়েছিলেন ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে। দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে বাসা থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
ওই কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে অভিযোগে মামলা করেছে পরিবার। গ্রেপ্তার হয়েছেন কিশোরীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকা তরুণ ফারদিন ইফতেখার দিহান।
মধ্যবর্তী এই দুই ঘণ্টায় কী ঘটেছিল নিউজবাংলার পক্ষ থেকে তা অনুসন্ধানের চেষ্টা করা হয়েছে।
পরিবার, চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে কলাবাগানে দিহানের বাসায় যান ইংরেজি মাধ্যমে ‘ও’ লেভেলে পড়া ওই কিশোরী। ফাঁকা বাসায় তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক ঘটে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে কলাবাগান লেক সার্কাস রোডের বাসা থেকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নেয়ার আগেই ওই ছাত্রী মারা যান।
ওইদিন রাত দেড়টার দিকে দিহানকে একমাত্র আসামি করে কলাবাগান থানায় মামলা করেন নিহত ছাত্রীর বাবা। শুক্রবার দুপুরে দিহানকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। সেখানে ১৬৪ ধারায় তার জবানবন্দি রেকর্ডের পর কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত।
ছাত্রীর মা চাকরিজীবী। কর্মস্থলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সকাল সাড়ে আটটায় তিনি বাসা থেকে বের হন। বাবা ব্যবসায়ী। তিনি বাসা থেকে বের হন সাড়ে ৯টার দিকে।
ছাত্রীর বাবা জানিয়েছেন, বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে মেয়েটি তার মাকে ফোন করে কোচিং থেকে কিছু কাগজ আনার জন্য যাবে বলে জানান। এরপর আর মেয়ের সঙ্গে বাবা-মা কারও কথা হয়নি।
নিহত ছাত্রী তার বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতেন ধানমন্ডিতে। ওই বাসায় বৃহস্পতিবার দারোয়ানের দায়িত্বে ছিলেন শাহাবুদ্দিন। তার সঙ্গে শনিবার দুপুরে কথা হয় নিউজবাংলা প্রতিবেদকের। শাহাবুদ্দিন জানান, ওই ছাত্রী বাসা থেকে বের হওয়া বা প্রবেশের সময় তার সঙ্গে সালাম বিনিময় হতো। ঘটনার দিনও বাসা থেকে বের হওয়ার সময় সালাম বিনিময় হয়।
তিনি বলেন, ‘ওইদিন আমি গেইটে ছিলাম। আপু পৌনে ১২টার দিকে বাসা থেকে বের হন। তিনি সালাম দিয়ে বেরিয়ে যান।’
তবে ধানমন্ডির বাসা থেকে বের হওয়ার সঠিক সময় জানা যায়নি। বাড়িতে সিসি ক্যামেরা লাগানো থাকলেও তা কয়েক দিন ধরে অকেজো রয়েছে জানিয়েছেন শাহাবুদ্দিন।
কোচিংয়ে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হলেও সেখানে যাননি ছাত্রী। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে দিহান বলেছেন, ধানমন্ডির বাসা থেকে বের হয়ে ওই শিক্ষার্থী সোবহানবাগের মেট্রো শপিং মলের সামনে এসে অপেক্ষা করছিলেন। দিহান নিজের গাড়িতে করে মেট্রোর সামনে অপেক্ষায় থাকা ছাত্রীকে নিয়ে লেকসার্কাস সড়কের মাথায় লাজ ফার্মার সামনে নামিয়ে দেন। অল্প দূরত্বে থাকা নিজের বাসায় দিহান তার নিজের গাড়ি নিয়ে একা প্রবেশ করেন এবং ওই ছাত্রীকে পরে একা বাসায় প্রবেশ করতে বলেন।
দিহানের পরামর্শ অনুযায়ী, ওই ছাত্রী একা দিহানের বাসায় প্রবেশ করেন। বাসার নিচে তখন দারোয়ানের দায়িত্বে ছিলেন দুলাল। কোনো বাধা ছাড়াই কলাবাগানের বাসায় প্রবেশ করেন ওই ছাত্রী।
ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দিহানের কলাবাগানের বাসা ঘুরে দেখা গেছে, তারা থাকেন ভবনটির তৃতীয় তলায়। মা, আপন ভাই ও এক চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে থাকেন দিহান।
তার মা জানান, দিহানের নানা অসুস্থ। তাকে দেখার জন্য বৃহস্পতিবার সকালে বগুড়ার উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। আপন ভাই অফিসের উদ্দেশে সকালেই বাসা থেকে বের হন এবং প্রায় একই সময়ে চাচাতো ভাই ব্যবসার কাজে বের হন।
বাসাটি সকাল ১০টার পর থেকে ফাঁকা থাকবে জেনেই দিহান ও ওই কিশোরী নিজেদের মধ্যে কথা বলে কলাবাগানে দিহানের বাসায় দেখা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জবানবন্দিতে জানিয়েছেন দিহান।
দুপুর ১২টার পর কলাবাগানে দিহানের বাসায় প্রবেশ করেন ওই ছাত্রী। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য জানিয়েছিলেন দিহান। কলাবাগান থানা পুলিশের এক জন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, বেলা ১২টার পর বাসায় আসেন ওই ছাত্রী। লাজ ফার্মার সামনে থেকে একাই বাসায় যান তিনি।
আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে দিহান জানিয়েছেন, শারীরিক মিলনের কোনো পরিকল্পনা তাদের ছিল না। কিন্তু ওই ছাত্রী বাসায় আসার পর তারা শারীরিক মিলনের সিদ্ধান্ত নেন। তবে শারীরিক মিলনের আগে ওই ছাত্রী ভীত ছিলেন বলে দাবি করেন দিহান। বাসার বেডরুমে দুজনের শারীরিক মিলনের একপর্যায়ে মেয়েটির রক্তক্ষরণ শুরু হয়।
দিহান জবানবন্দিতে বলেন, এরপর বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ানোর পর মেয়েটি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। তার মুখে পানি ছিটিয়ে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করেন দিহান। কিন্তু কোনো কাজ না হওয়ায় অজ্ঞান অবস্থায় থাকা ছাত্রীকে সামনের কক্ষের সোফায় নিয়ে আসেন তিনি।
ইন্টারকমের মাধ্যমে বাসার নিচে গার্ডের দায়িত্বে থাকা দুলালকে বাসায় ডেকে আনেন দিহান। এরপর তিনি ও দুলাল অজ্ঞান অবস্থায় থাকা ভুক্তভোগী ছাত্রীকে ধরে তৃতীয় তলা থেকে বাসার নিচে নিয়ে আসেন এবং গাড়িতে তোলেন। এরপর দিহান নিজেই গাড়ি চালিয়ে ছাত্রীকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নিয়ে যান।
দুপুর দেড়টায় চেতনাহীন ছাত্রীকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয় বলে জানিয়েছেন দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক ও সেখানকার স্টাফরা। তখন আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক হিসেবে আসির ছিলেন বলে জানান হাসপাতালের প্রেস সচিব শেখ নাজমুল হক সৈকত।
শেখ নাজমুল হক সৈকত বলেন, মেয়েটির ঘাড় কাত হয়ে ছিল, তার কোনো জ্ঞান ছিল না। তখনও ব্লিডিং হচ্ছিল। ডিউটি ডাক্তার তার পালস না পেয়ে, সিপিআর (কার্ডিও পালমোনারি রিসাসিটেশন) দেন। তবুও হার্ট চালু না হওয়ায়, সবশেষ ইসিজি করে নিশ্চিত হওয়া যায় কিশোরী মারা গেছেন। দুপুর ১টা ৪৩ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
হাসপাতাল থেকে দেয়া ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর সময় বলা হয়েছে ১টা ৪৫ মিনিট।
দিহান হাসপাতালেই আটক
ছাত্রী মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কলাবাগান থানাকে ফোন করে ঘটনা জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল থেকে কল পেয়ে কাছাকাছি থাকা পুলিশ সদস্যদের দ্রুত ঘটনাস্থলে যাওয়া জন্য থানা থেকে নির্দেশ দেয়া হয়।
থানা পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, খবর পাওয়ার পর হাসপাতালে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত যতজনকে সন্দেহভাজন মনে হয়েছে, তাদের সবাইকে থানায় নিয়ে আসার নির্দেশ দেয়া হয়। তাৎক্ষণিকভাবে দিহান ও তার তিন বন্ধুকে হাসপাতালে পাওয়া যায় এবং তাদের থানায় নিয়ে আসা হয়।
থানায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে নিজে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন দিহান। তবে থানায় নিয়ে আসা তার অপর তিন বন্ধুর কোনো সম্পৃক্ততা পায়নি পুলিশ।
কলাবাগান থানার পরিদর্শক (অপারেশন্স) ঠাকুর দাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে অন্যরাও জড়িত থাকতে পারে এই সন্দেহে আমরা দিহানের তিন বন্ধুকে থানায় এনেছিলাম। তাদের কোনো সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় শুক্রবার বিকেলে পরিবারের জিম্মায় তিন জনকে ছেড়ে দেয়া হয়।’
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এই তিন বন্ধু দিহানের কলে হাসপাতালে এসেছিলেন। তারা ভেবেছিলেন দিহান অসুস্থ। হাসপাতালে এসে জানতে পারেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাদেরকে আসার জন্য ফোন করেন দিহান।’
পুলিশ হাসপাতালে পৌঁছার পর নিহত ছাত্রীর সুরতহাল করে মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। থানা পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে অন্য আরেকটি টিম ঘটনাস্থলে (কলাবাগানে দিহানের বাসা) যায়।
আলামত হিসেবে যা জব্দ হয়েছে
স্কুলছাত্রীর নিহত হওয়ার ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজসহ গুরুত্বপূর্ণ আলামত জব্দ করেছে কলাবাগান থানা পুলিশ। সংবেদনশীল মামলা হওয়ায় বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে আলামত সংগ্রহ করা হয় বলে নিউজবাংলাকে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কলাবাগান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আ ফ ম আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘প্রথমে আমরা হাতের কাছে যে আলমত পেয়েছি, তা হলো দিহানের গাড়ি। সেটিতে করে দিহান রক্তাক্ত অবস্থায় আনোয়ার খান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে মেয়েটিকে নিয়ে এসেছিলেন। জব্দ তালিকায় আরও রয়েছে দিহানের ব্যবহৃত স্মার্টফোন, ভিকটিমের কাপড়, রক্তমাখা টিস্যু, একটি ছোট বালিশ (রক্তমাখা) ও হাসপাতালের বিছানার একটি চাদর।’
এ ছাড়া সিআইডির ক্রাইমসিন বিভাগ ঘটনাস্থল থেকে তাদের মতো করে আলামত সংগ্রহ করেছে বলে জানান আসাদুজ্জামান।
ঘটনার দুটি সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছে কলাবাগান থানার একটি দায়িত্বশীল সূত্র। একটি আনোয়ার খান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের, অন্যটি ঘটনাস্থলের পাশের বাড়ির ক্যামেরায় ধারণ করা।
সূত্রটি জানায়, আনোয়ার খান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফুটেজে দেখা যায়, দিহান নিজে গাড়ি চালিয়ে ওই স্কুলছাত্রীকে নিয়ে আসেন। তার সঙ্গে সে সময় অন্য কেউ ছিল না।
অন্য ফুটেজে রয়েছে দিহানের গাড়ির বাসায় ঢোকা আর বের হওয়ার ছবি। সেখানে তার সঙ্গে অন্য কেউ ছিল কিনা তা বোঝা যায়নি। মামলার গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রমাণ হিসেবে দুটি ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
এদিকে ঘটনার পর থেকে পলাতক আছেন দুলাল নামের নিরাপত্তাকর্মী। ওই কিশোরীকে বাড়ির তৃতীয় তলায় দিহানদের ফ্ল্যাট থেকে গাড়ি পর্যন্ত তুলতে দিহানকে সাহায্য করেছিলেন দুলাল।
শনিবার কথা হয় ওই বাড়ির অপর নিরাপত্তাকর্মী আব্দুল মোতালেবের সঙ্গে। মোতালেব এ বাড়িতে চাকরি করছেন সাড়ে চার বছর ধরে। আর দুলাল কাজ করছেন কয়েক মাস। তারা দুজন একসঙ্গে বাড়ির ছোট্ট একটি ঘরে থাকেন।
মোতালেব জানান, ঘটনার সময় গেটের দায়িত্ব ছিল দুলালের। ডিউটি না থাকায় ঘটনার পুরো সময়টা মোকাররম বাড়ির বাইরে ছিলেন। ফিরে এসে দেখে দুলাল নেই, গেট ফাঁকা, রোদে শুকাতে দেয়া আছে দুলালের ভেজা লুঙ্গি। ডিউটিতে থাকার সময় দুলাল সে লুঙ্গিটাই পরে ছিলেন বলে জানান মোতালেব। এর কিছুক্ষণ পরই বাড়িতে পুলিশ আসে। পুলিশসহ উপরে উঠে দিহানদের ফ্ল্যাটের সামনে রক্তের ছাপ দেখেছিলেন মোতালেব।
কথা বলার জন্য একাধিকবার ফোন করা হয় দুলালকে। রিং বাজলেও ফোন ধরেননি তিনি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, ‘দুলাল যেহেতু চাক্ষুস সাক্ষী, তাই তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা অব্যাহত আছে।’
আরও পড়ুন:ভোক্তা পর্যায়ে ডিসেম্বর মাসের জন্য তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলপিজি) দাম সমন্বয় করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
চলতি মাসের প্রথম কর্মদিবস রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এ মূল্য ঘোষণা করা হয়, যা কার্যকর হবে সন্ধ্যা ছয়টা থেকে।
প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহে এলপিজির সমন্বয়কৃত দর ঘোষণা করে বিইআরসি।
সমন্বয়কৃত মূল্য অনুযায়ী, ডিসেম্বরে এলপিজির ১২ কেজির সিলিন্ডার কিনতে ভোক্তাকে গুনতে হবে ১ হাজার ৪০৪ টাকা, যা নভেম্বরে ছিল ১ হাজার ৩৮১ টাকা। অর্থাৎ রান্নার কাজে ব্যবহৃত গ্যাসের ১২ কেজির সিলিন্ডার কিনতে চলতি মাসে ক্রেতাকে ২৩ টাকা বেশি গুনতে হবে।
বিইআরসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভোক্তা পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর তথা মূসকসহ সাড়ে পাঁচ কেজি এলপিজির দাম ঠিক করা হয়েছে ৬৪৪ টাকা। এ ছাড়া ১৫ কেজি এলপিজির দাম ১ হাজার ৭৫৫ টাকা, ২০ কেজির দাম দুই হাজার ৩৪০ টাকা, ২৫ কেজির দাম ২ হাজার ৯২৬ টাকা ও ৩০ কেজির দাম ৩ হাজার ৫১১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আগামী ১০ নভেম্বর আওয়ামী লীগ সমাবেশ করতে চাইলে ইসির অনুমতি নিতে হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
আগারগাঁও নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে রোববার সকালে পর্যবেক্ষণে ঢাকায় আসা ইইউ ইলেকশন এক্সপার্ট টিমের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
আগামী ১০ তারিখ বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ একটি সমাবেশ করার কথা বলছে। ইসির অনুমতি ছাড়া তারা এ সমাবেশ করতে পারবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের আচরণ বিধিতে যা আছে তাতে করে রাজনৈতিক সমাবেশের জন্য অনুমতি নিতে হবে। আমাদের লোকাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন আছে, যেমন রিটার্নিং অফিসার আছে তাদের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। তবে এখনও এ বিষয়ে আমরা কোনো চিঠি পাই নাই। চিঠি পেলে পরে চিন্তা করব।’
অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘আজকে আমাদের সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইইউ এক্সপার্ট দল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বসতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে আমিসহ আমাদের যুগ্ম সচিবরা তাদের সঙ্গে বসেছি। তারা আগামী ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত এ দেশে থাকবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এক্সপার্ট দল মূলত আমাদের কাছে কিছু বিষয়ে জানতে চেয়েছে, আমরা সেগুলো তাদেরকে জানিয়েছি। তারা নির্বাচন পরবর্তী ও পূর্ববর্তী সময় সব বিষয় অবজার্ভ করবেন। তারা অবজারভ করবেন কোড অফ কন্ডাক্টের কোনো ভায়লেশন হচ্ছে কি না।’
‘তারা আমাদের নির্বাচন কমিশনের আইনগুলো জানতে চেয়েছেন। মূলত আইনগুলো বাংলায় লেখা হওয়ার কারণে তাদের বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে, তাই ইতোমধ্যে আমরা তাদের কিছু ইংরেজিতে প্রোভাইড করেছি।’
অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘মূলত তারা সারা দেশব্যাপী ঘুরবে। এ কারণে তাদের কিছু ইনকয়ারি ছিল, তারা সেগুলো আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন।’
এক্সপার্ট দল আর কী কী জানতে চেয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের নির্বাচনে কতজন ক্যান্ডিডেট হয়েছে, কতগুলো দল অংশগ্রহণ করছে, কতগুলো বিদেশি অবজারভার দল আসবে, কতগুলো লোকাল অবজারভার থাকবে এগুলো জানতে চেয়েছে। আলোচনা শেষে আমরা মনে করি, তারা আমাদের কথায় কনভিন্সড হয়েছে।’
বৈঠকে ইইউ ইলেকশন এক্সপার্ট টিমের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা হলেন ডেভিড নোয়েল ওয়ার্ড (ইলেকশন এক্সপার্ট), আলেকজান্ডার ম্যাটাস (ইলেকটোরাল অ্যানালিস্ট), সুইবেস শার্লট (ইলেকটোরাল অ্যানালিস্ট) এবং রেবেকা কক্স (লিগ্যাল এক্সপার্ট)।
আরও পড়ুন:বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধ কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রাজধানীসহ সারা দেশে ৪৩৫টি টহল দল মোতায়েন করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
এর মধ্যে শুধু রাজধানীতে ১৪১টি টহল দল মোতায়েন রয়েছে। খবর বাসসের।
র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, র্যাবের গোয়েন্দারা ছদ্মবেশে নজরদারি অব্যাহত রেখেছে। যেকোনো ধরনের নাশকতা ও সহিংসতা প্রতিরোধে বাসস্ট্যান্ড, রেলওয়ে স্টেশনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ও স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার এবং বিশেষ টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি জানান, যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে নিরাপত্তা প্রদানে দেশের বিভিন্ন স্থানে দূরপাল্লার গণপরিবহন ও পণ্যবাহী পরিবহনকে র্যাব টহলের মাধ্যমে এস্কর্ট প্রদান করে নিরাপদে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দিচ্ছে র্যাব।
এদিকে অবরোধের আগের দিন শনিবার রাতে রাজধানী ঢাকায় তিনটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজালাল শিকদার জানান, শনিবার রাতে রাজধানীর গাবতলী, আগারগাঁও ও যাত্রাবাড়ী-ডেমরা এলাকায় বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
আরও পড়ুন:দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রোববার সকালে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক স্বাক্ষরিত আবহাওয়া অধিদপ্তরের ১০ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরও উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় (১১.৫০ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮২.৫০ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) ঘূর্ণিঝড় ‘মিগজাউম’-এ পরিণত হয়েছে।
‘ঘূর্ণিঝড়টি রোববার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৫৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৫২৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৪৫০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৪৫০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে।’
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের আশপাশের অবস্থা নিয়ে বলা হয়, ‘ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।’
বন্দরে সতর্ক সংকেত নিয়ে বলা হয়, ‘চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
‘উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ঢাকায় আসা ইইউ ইলেকশন এক্সপার্ট টিমের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বৈঠক শুরু হয়েছে।
রোববার সকাল ১১টার দিকে আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে সম্মেলনকক্ষে অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথের নেতৃত্বে বৈঠকে বসে নির্বাচন কমিশন।
বৈঠকে ইইউ ইলেকশন এক্সপার্ট টিমের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা হলেন ডেভিড নোয়েল ওয়ার্ড (ইলেকশন এক্সপার্ট), আলেকজান্ডার ম্যাটাস (ইলেকটোরাল এনালিস্ট), সুইবেস শার্লট (ইলেকটোরাল এনালিস্ট) এবং রেবেকা কক্স (লিগ্যাল এক্সপার্ট)।
দুই মাসের মিশন নিয়ে গত ২৯ নভেম্বর ঢাকায় পৌঁছায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) চার সদস্যের এ নির্বাচনি এক্সপার্ট টিম।
এদিকে বাংলাদেশে এবারের নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ কোনো পর্যবেক্ষক দল পাঠাচ্ছে না ইইউ। এর আগে গত ২০ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে এ সিদ্ধান্ত জানায় ইউরোপের ২৭ দেশের এই জোট।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানো নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে গত ২৯ নভেম্বর যৌথসভা করে ইইউ। বৈঠকে সংস্থাটির ১০ প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে তারা অবাধ ও সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের তাগিদ দেন ইসিকে।
আরও পড়ুন:বিএনপি ও সমমনা বিরোধী দলগুলোর ডাকা দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শুরু হয়েছে।
সড়ক, রেল ও নৌপথে ডাকা সর্বাত্মক এই অবরোধ রোববার সকাল ৬টায় শুরু হয়েছে, শেষ হবে মঙ্গলবার সকাল ৬টায়।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে গত বৃহস্পতিবির এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
শনিবার রাতে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দেশবাসী এবং বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলের সমর্থকদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।
সংবাদপত্র বা গণমাধ্যমের যানবাহন, অ্যাম্বুলেন্স এবং অক্সিজেন সিলিন্ডার ও ওষুধ পরিবহনকারী যানবাহন অবরোধের আওতার বাইরে থাকবে।
বিএনপির এই অবরোধ-হরতালের এ কর্মসূচি শুরু হয়েছে গত ২৮ অক্টোবরের পর। সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে সেদিন রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করছিল বিএনপি। ওই সমাবেশ চলাকালে এক পর্যায়ে দৈনিক বাংলা মোড়, কাকরাইল ও পল্টনসহ আশপাশের এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান দলটির নেতা-কর্মীরা।
এ অবস্থায় সমাবেশ কর্মসূচি চলার মধ্যেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৯ অক্টোবর সারা দেশে হরতালের ডাক দেন। পরে একদিন বিরতি দিয়ে ৩১ অক্টোবর থেকে টানা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি। অজ্ঞাত স্থান থেকে রুহুল কবির রিজভী এ কর্মসূচি দেন। বিএনপির অবরোধে একাত্মতা জানায় জামায়াতে ইসলামীও।
এর পর থেকে বিরতি দিয়ে দফায় দফায় অবরোধ-হরতালের ঘোষণা দিয়ে আসছে বিএনপি। দলীয় সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, নেতা-কর্মীদের মুক্তিসহ কিছু দাবিতে এমন কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে। তবে এর মাঝে নির্বাচনের তফসিল প্রত্যাখ্যান করে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল দিয়েছিল বিএনপি। এ ছাড়া একদিন হরতাল ও একদিন অবরোধও ঘোষণা করা হয়েছিল। সর্বশেষ ঘোষণা করা হয় টানা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ।
বিএনপির ডাকা অবরোধে প্রতিদিনই রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, ককটেল নিক্ষেপসহ নানা সহিংসতা হচ্ছে। কঠোর অবস্থানে থেকে দলটির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করছে পুলিশ। তবে আতঙ্ক সঙ্গে করেই বাইরে বের হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
আরও পড়ুন:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা বিশ্বে নন্দিত একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং একজন সাহসী রাজনৈতিক নেতা বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী।
শনিবার বিকেলে রাজধানীর লে মেরিডিয়েন হোটেলে বঙ্গবন্ধু-কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে বিশিষ্ট লেখক ও রাজনৈতিক গবেষক ডা. আবুল হাসনাত মিল্টনের লেখা ‘শেখ হাসিনা: দ্য মেকিং অফ অ্যান এক্সট্রাঅর্ডিনারি সাউথ এশিয়ান লিডার’ (Sheikh Hasina: The making of an Extraordinary South Asian Leader) বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী আমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাইফুল আলম, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, মোহাম্মদ আলী আরাফাত এমপি প্রমুখ।
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘আজকের এই অনুষ্ঠানে বইটির মোড়ক উন্মোচনের বিরল সুযোগ পেয়ে আমরা সবাই বেশ সম্মানিত। কেননা যার জীবনালেখ্য নিয়ে বইটি লেখা হয়েছে, তিনি একজন অসাধারণ ও অমূল্য মানুষ। তিনি আর কেউ নন; আমাদের সবার প্রিয়, অতি পরিচিত, অতি আপন, দেশের মানুষের মধ্যমণি, নন্দিত প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা। তিনি আমাদের দেশ পরিচালনার একজন যোগ্য ও সাহসী রাজনৈতিক নেতা। তিনি শুধু বাংলাদেশেরই অসাধারণ একজন নারী নন, তিনি অত্যন্ত সাহসী রাজনীতিবিদ। পাশাপাশি তার দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আজ সমগ্র বিশ্বনেতার কাতারে নিজের অবস্থান সুসংহত করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সারা বিশ্বে তার সফল কর্মের জন্য নন্দিত। আমরা আজকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুধু জাতীয়ভাবে বিবেচনা করব না। তিনি আজ বিশ্ব প্রেক্ষাপটে বিচরণ করছেন তার সাহসী সব সিদ্ধান্তের কারণে।’
স্পিকার বলেন, ‘এই বইটিতে লেখক ডা. আবুল হাসনাত মিল্টন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছোটবেলা থেকে কীভাবে ধাপে ধাপে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার অতিবাহিত করেছেন এবং কীভাবে একজন সফল রাজনৈতিক নেতা হয়েছেন- তার সঠিক তথ্য দারুণভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ১৯৭৫ সালের মতো একটি ঘটনা যার জীবনে ঘটেছে, শুধু তিনিই বলতে পারবেন তার প্রতি নির্মমতা কতটা গভীর এবং কতটা বেদনাদায়ক। তারপরও শেখ হাসিনা এগিয়ে গেছেন এবং দেশের সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।’
বঙ্গবন্ধুর মতোই বাংলার মানুষের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভালোবাসার কথা উল্লেখ করে স্পিকার বলেন, ‘দেশের মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভালোবাসা অপার। তিনি ’৭৫-এর সেই বেদনাদায়ক অধ্যায়কে বুকে ধারণ করে, সেই নির্মমতাকে সঙ্গী করে দেশের হতদরিদ্র মানুষের জন্য তার বাবার অপূর্ণ স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতেই জীবন উৎসর্গ করেছেন। এটিই তার জীবনের মূল লক্ষ্য। যে স্বপ্ন ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের, তার সবই বাস্তবে রূপ দিচ্ছেন তিনি।’
তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করবেন বলেই ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে আসেন এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে কাজ শুরু করেন। দেশের তৃণমূল পর্যায় থেকে তিনি এ বাংলায় রাজনৈতিক সংগ্রাম করেছেন এবং আস্তে আস্তে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছেন। মানুষের ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি কাজ করেছেন এবং পরবর্তীতে দেশকে সাংবিধানিক ধারায় ফিরিয়ে এনেছেন। এই যে মহাকর্মযজ্ঞ এবং দেশের মানুষের জন্য নিবেদিতপ্রাণ একজন মানুষ, তার সম্পর্কে জানার জন্য অবশ্যই এমন সব বই দরকার।’
শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘এমন একটি বই সত্যিই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জাতীয় চেতনায় এগিয়ে যাওয়ার জন্য বিশেষভাবে ভূমিকা রাখবে। শুধু তাই নয়, ডা. আবুল হাসনাত মিল্টন এ বইটির আগে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে যে বইটি লিখেছেন, সেটির জন্যও তাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই। আমি বলব- দুটি বই-ই আমাদের জন্য অমূল্য রচনা। ইংরেজি ভাষাভাষী মানুষের জন্য বইগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি সম্পদ হিসেবে আমাদের কাছে থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
অনুষ্ঠানে বইটি লেখার স্মৃতিচারণ করে ডা. আবুল হাসনাত মিল্টন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে লেখা এই বইটির আগে আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে একটি বই লেখার তাগিদ অনুভব করি। করোনাকালে আমার একজন পরিচিত মানুষ ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন যে, তার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে বঙ্গবন্ধুর ওপর একটি বই উপহার দেবেন। কিন্তু কোনোভাবেই জাতির পিতার ওপর লেখা একটি ভালো ইংরেজি বই পাওয়া যাচ্ছে না। তারপর আমি শেখ হাসিনার কাছে বঙ্গবন্ধুর ওপর একটি বই লেখার অনুমতি চাই। সেটি আমি জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর মাধ্যমে জানাই। এরপর নানাভাবে অনেকের সহযোগিতা পেয়ে বইটি লিখে ফেলি। ওই বই লিখতে গিয়ে আমি শেখ হাসিনাকে অন্যভাবে আবিষ্কার করি। তখনই আমি তার ওপর আরেকটি বই লেখার আগ্রহ প্রকাশ করি। সেটিও আমি যথারীতি জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিনকে জানাই।
‘তখন প্রধানমন্ত্রী জানান, তাকে নিয়ে বই লেখা লাগবে না; তার বাবাকে নিয়ে আরও কাজ যেন করি। কিন্তু ওই বইটি লিখতে গিয়ে আমার কাছে প্রধানমন্ত্রীকে এত ঘটনাবহুল একজন মানুষ মনে হয়েছে, যা আমাকে বেশ আবেগতাড়িত করে। তাই আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে একটি বই লেখার আগ্রহ প্রকাশ করি। কারণ আমার কাছে মনে হয়েছে, শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার একজন নেতা হিসেবে তিনি কাজ করছেন। এটি সারা বিশ্বকে জানাতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বইটি লিখতে গিয়ে আমি শেখ হাসিনার বেশ সান্নিধ্য পেয়েছি। তিনি আমাকে বড় বোনের মতো স্নেহ দিয়েছেন, ছায়াও দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক মানের একটি বই করার জন্য যা যা প্রয়োজন আমি তাই করেছি।’
‘এটি শুধু একটি বই নয়। একজন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার জীবনে কী কী অধ্যায় পার করে আজকের জায়গায় এসেছেন, তার সবই জানা যাবে বইটি পড়লে। ১৯৭৫-এর পরবর্তী সময়ে একজন শেখ হাসিনা শুধু শোক নিরসনের মধ্য দিয়ে যাননি। তিনি সেই জীবনকে কীভাবে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে গেছেন এবং নিজেই নিজেকে কীভাবে তৈরি করেছেন- সব কথা আছে বইটিতে।
‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শৈশব-কৈশোর থেকে শুরু করে আজকের দিনটি পর্যন্ত তার সমগ্র জীবন বইটিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। শুধু তাই নয়- একজন মানুষ হিসেবে শেখ হাসিনা কেমন, একজন মা হিসেবে, নেতা হিসেবে, এমনকি একজন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি কেমন- তার সবই আছে বইটিতে।’
‘Sheikh Hasina: The making of an Extraordinary South Asian Leader’ বই হাতে লেখকসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ। ছবি: নিউজবাংলা
ডা. মিল্টন বলেন, ‘তাই আমার প্রত্যাশা- বইটি দেশ এবং দেশের বাইরের সব মানুষের কাছে পৌঁছুক। এত ঘটনাবহুল ও বেদনাবহুল একজন মানুষের রাজনৈতিক সংগ্রামটা কেমন- তা জানতে হলে বইটি পড়তে হবে।’
‘যে শেখ হাসিনাকে চেনেনি, শেখ হাসিনাকে জানেনি, সে আসলে হতভাগা। শেখ হাসিনাকে জানা মানেই আজকের বাংলাদেশ এবং আজকের রাজনীতিকে চমৎকারভাবে অধ্যয়ন করা।’
মন্তব্য