অন্যের জমি দখলে নাম আসা ঢাকা-৭ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিম এবার পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরের কাছে ভুয়া দলিলে পৌনে পাঁচ একর জমি দখল করার পর প্রতিরোধের মুখে পড়েছেন।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করছেন, সংসদ সদস্য তার মদিনা গ্রুপের নামে ওই জমি দখল করেছেন। পায়রা বন্দরের দিকে যাওয়া চার লেন রাস্তার পাশে পেট্রল পাম্প বসানোর চেষ্টা করেছেন।
অভিযোগ উঠেছে, জমি দখলের পর মালিকদের মারধরের হুমকি দেয়া হয়েছে। তাদের বাড়িতে ডাকাত দল হানা দিয়েছে। এভাবে তাদেরকে এলাকা ছাড়া করতে বাধ্য করা হয়েছে।
পাঁচ বছর জমি উদ্ধারে দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ফল পাননি। তবে গত অক্টোবরে ঢাকায় নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধরের মামলায় পুত্র ইরফান সেলিম কারাগারে যাওয়া পর হাজী সেলিমের দখল করা বহু জমি উদ্ধার করেছে প্রশাসন। এই ঘটনার পর সাহসী হয়ে ভুক্তভোগীরা একজোট হয়েছেন। দখলদারদের হটিয়ে দিয়েছেন। রাত জেগে পাহারাও দিচ্ছেন।
হাজী সেলিমের লোকদের করা বাঁধ কেটে দিয়ে জমিটি আবার চাষের উপযোগী করা হচ্ছে।
হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে পুরান ঢাকাতেও একই প্রক্রিয়ায় বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি দখলের অভিযোগ আছে। সব ক্ষেত্রেই তিনি জমি বা স্থাপনা কেনার দলিল হাজির করেন। এরপর তার লোকজন গিয়ে শক্তি দেখিয়ে সব দখল করে।
হাজী সেলিমের দখলে আছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কালের তিব্বত হল, এমনকি রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাংক অগ্রণীর শত কোটি টাকা মূল্যের জমি। যেটি ইরফান সেলিমকে গ্রেপ্তারের পর উদ্ধার করে র্যাব বুঝিয়ে দিয়েছিল ব্যাংককে। সেই জমি থেকে আবার ব্যাংককে হটিয়ে দিয়েছেন তিনি।
ঢাকা ছাড়িয়ে নারায়ণঞ্জের সোনারগাঁয়ের মেঘনাঘাট এলাকাতেও বিপুল পরিমাণ সরকারি সম্পত্তি দখল করেছিলেন হাজী সেলিম। তবে সেখান থেকে তাকে উচ্ছেদ করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
ফতুল্লার পিলকুনি এলাকায় সাখাওয়াত হোসেন নামে এক বৃদ্ধের জমিও দখলের চেষ্টা করেছিলেন হাজী সেলিম। তাকে চার বছর ধরে পানিবন্দি করে রাখার পর সম্প্রতি ভূমি অফিস থেকে সাখাওয়াতের পক্ষে রায় দেয়া হয়েছে।
পুরান ঢাকায় বধির স্কুলকে বরাদ্দ দেয়া জমিতে হাজী সেলিমের গড়ে তোলা পেট্রল পাম্পের একাংশও উদ্ধার করেছে প্রশাসন।
পায়রাতে যা ঘটেছে
দেশের তৃতীয় পায়রা সমুদ্র বন্দরের প্রবেশমুখের কিছু আগে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া গ্রামের ঘটনা এটি।
ভুক্তভোগীদের এক জন চার সন্তানের জনক ইউসুফ মিনা। বয়স তার ৬৭।
আশির দশকে গ্রামের হাশেম মৃধার কাছ থেকে দুই একর জায়গা কেনেন তিনি ও তার ভাইয়ের ছেলে ইউনুস মিনা। বছর দুই আগে বিএস জরিপও তাদের নামে রেকর্ড রয়েছে।
তাদের বাড়ির পূর্বপাশে কেনা ওই জমির সঙ্গে আরও এক একর জমি ৯০ এর দশকের আগে তার আরেক সন্তান আল মামুন এবং ভাইয়ের ছেলে ইউনুস, আনোয়ার, শহিদুল, মান্নান ও দেলোয়ারের নামে কেনেন।
পাশের দুই একর জমিও সে সময় কেনা হয় আহসান পাভেল, ইসমাইল গাজী, মোজাম্মেল ও কামরুল ইসলামের নামে। এরা ইউসুফ মিনার নিকটাত্মীয়।
ওই পাঁচ একর জমি পায়রা বন্দরের সংযোগের জন্য তৈরি করা চার লেন রাস্তার পাশে। স্থানীয় কয়েক জন ওই জমি বিক্রি করতে মালিকদের নানা ভাবে প্রস্তাব দিতে থাকে। কিন্তু রাজি হননি মালিকরা।
ইউসুফ মিনা জানান, ২০১৬ সালের মে মাসে আচমকা মদিনা গ্রুপের লোকজন এসে দলিল দেখান। তারা নাকি দুই একর জমি বিক্রি করেছেন।
এরপর থেকে ভুক্তভোগীরা ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদে ধরনা দিতে থাকেন জমি উদ্ধারের জন্য। কিন্তু লাভ হয়নি। পরে আদালতে যান তারা।
এতে কাজ তো হয়ইনি, উল্টো দুই বছরের মাথায় পাঁচ একর জমির পুরোটাই দখল করে নেয় হাজী সেলিমের লোকজন।
ইউসুফ মিনার স্ত্রী কহিনুর বেগম জানান, ২০১৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে মুখোশধারী ডাকাত দল তাদের ঘরে ঢুকে টাকা, স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। সেই থেকে তাদের সন্তানরা ওই এলাকা ছেড়ে কলাপাড়া উপজেলা শহরে আশ্রয় নেন। সেখানেই দোকান দিয়েছেন।
ইউসুফ মিনার ছেলে আবুল কালাম বলেন, ‘শহরে গিয়াও শান্তিতে থাকতে পারি নাই। পিরায় (প্রায়) দোহানে যাইয়া হুমকি দেয়। গত বছর বাবারে মসজিদে মাগরিবের নামাজ পরতে যাওয়ার সময় মারছে। ডরে কেউ মুখ খুলে নাই।’
ইউসুফ মিনার ছেলে আল মামুন কাজ করেন স্থানীয় একটি সরকারি অফিসে। বলেন, ‘হাজী সেলিমের ছেলেকে গ্রেপ্তারের খবরে আমরা ভুক্তভোগী ১৩টি পরিবারের সদস্যরা এক হয়ে জমি উদ্ধারের চেষ্টা করছি।’
আনোয়ার মিনা বলেন, ‘আমরা ঐক্যবদ্ধ হইছি। জোর কইরা ডর দেহাইয়া মোগো জমি দহলে নিয়া এলাকা ছাড়া করেছে হাজী সেলিম। এবার মোরা আর ছাড়মু না। মোরা এহন দিন রাইত পাহারা দিই মুগো জমি।’
ভূক্তভোগীদের এক জন সৈয়দ আহসান পাভেল সংবাদকর্মী। জানান, ভুয়া কাগজ আর লোক দেখিয়ে তাদের এক একর ৪৩ শতাংশ জমি দখল করা হয়েছে। ওই জমিতে মদিনা ফিলিং সার্ভিস সেন্টার নির্মাণ করার চেষ্টা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ওই সম্পত্তি আমরা পুনরুদ্ধার করে ফসল উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত করছি। জমিতে মদিনা গ্রুপের দেয়া রিংবাধও আমরা কেটে ফেলেছি। ঘণ্টায় আড়াই হাজার টাকা ভাড়া নিয়ে এক্সক্যাভেটর এনে জমি সমান করার চেষ্টা করছি।’
হাজী সেলিমের ‘ডান হাত’ শিমু চেয়ারম্যান
স্থানীয়দের অভিযোগ, পায়রা বন্দর নির্মাণ কাজ শুরু থেকেই হাজী সেলিম ওই এলাকায় দখল নেয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। বন্দরের পাশের টিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান শিমু মীরকে পক্ষে টানেন তিনি।
শিমু চেয়ারম্যানের লোকদের মাধ্যমেই পায়রা বন্দর ও আশপাশের এলাকায় দখল চলে।
ওই ১৩ পরিবারের পাঁচ একর জমি দখল করে হাজী সেলিমকে বুঝিয়ে দেয়ার অভিযোগ এই জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধেই।
২০১৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ইউসুফ মিনার ঘরে যে ডাকাতি হয় তাতে শিমু চেয়ারম্যানের লোকজনের সম্পৃক্ততার অভিযোগও করছেন ভুক্তভোগীরা।
যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করে শিমু মীর বলেছেন, ‘হাজী সেলিম আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এমপি। তিনি ঢাকায় থাকেন, এখানে তার ব্যবসা রয়েছে। আমি জাস্ট স্থানীয় চেয়ারম্যান হিসেবে তাকে যতটুকু সহায়তা করার ততটুকুই করছি। কিন্তু তাও আগে, এখন না।’
গত ২৯ নভেম্বর বিকেলে ১০ লাখ টাকা চাঁদা না দেয়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলমকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করার অভিযোগ আছে শিমু মীর ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় ওই দিন রাতে মামলা করার পর রাতেই শিমু মীরকে তার স্ত্রী ও তিন সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করা হয়।
তবে সম্প্রতি তিনি জামিনে মুক্তি পেয়ে তার বিরুদ্ধে উঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
মদিনা গ্রুপের বক্তব্য
মদিনা গ্রুপের ডিজিএম (ল্যান্ড) নুরুল হামিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইল ফোনে বলেন, ‘এটি এখন ডেড ইস্যু। বিষয়টি নিয়ে আদালতে দুটি মামলা চলমান। এখন আদালত সিদ্ধান্ত দেবে জমি কার। আমরা ইউসুফ মিনার ছেলে ইসমাইলের কাছ থেকে জমি কিনেছি। আমাদের কাগজপত্র আছে। এখন ওনারা (ইউসুফ) বলছে ওই জমি তাদের।’
দখলের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভাই আমরা ঢাকা থেকে টাকা দিয়ে জমি কিনেছি। ওখানে দখল করতে কেন যাব? বিষয়টি কলাপাড়া উপজেলার অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন দেখভাল করছেন। এ বিষয়ে আরও কিছু জানার থাকলে তার কাছ থেকে জেনে নিন।’
তবে কলাপাড়ায় নাসিরউদ্দিন নামে কোনো আইনজীবী আছেন কি না তা জানা যায়নি বহু চেষ্টা করেও।
আরও পড়ুন:জলদস্যুর কবল থেকে মুক্ত জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ চট্টগ্রাম বন্দরে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছে। জাহাজে বহন করা ৫৫ হাজার টন কয়লা খালাস ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এটি এখন দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দর থেকে আমিরাতের আরেক বন্দর মিনা সাকার উদ্দেশে যাত্রা করেছে। সেখানে পণ্য লোড করার পর জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে রওনা করবে।
মে মাসের মাঝামাঝিতে ২৩ নাবিকসহ জাহাজটি চট্টগ্রামে পৌঁছবে বলে ধারণা করছে মালিক পক্ষ কেএসআরএম গ্রুপ।
২৩ নাবিকসহ জাহাজটি ২১ এপ্রিল বিকেলে আল হামরিয়া বন্দরের বহির্নোঙরে নোঙর করে। জেটিতে নোঙর ফেলে ২২ এপ্রিল। এরপর শুরু হয় কয়লা খালাসের প্রক্রিয়া।
কেএসআরএম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আল হামরিয়া বন্দরে পণ্য খালাস করে শনিবার রাতে জাহাজটি মিনা সাকার নামে আরেকটি বন্দরের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। সেখান থেকে নতুন পণ্য নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবে এমভি আবদুল্লাহ। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ২৩ নাবিকসহ জাহাজটি চট্টগ্রামে নোঙর করবে বলে আমরা আশা করছি।’
প্রসঙ্গত, ১২ মার্চ সোমালিয়ার দস্যুরা ভারত মহাসাগর থেকে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি জিম্মি করে। পরে মুক্তিপণ দিয়ে জাহাজটি ১৩ এপ্রিল রাতে ছাড়া পায়। অর্থাৎ জিম্মি করার ৩২ দিন পর জাহাজটি মুক্তি পায়।
দেশের তিন জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র এবং পাঁচ জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি শনিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমন বার্তা দিয়েছে।
পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলা হয়, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য জায়গায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ নিয়ে বলা হয়, রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা ও পাবনা জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র দাবদাহ এবং টাঙ্গাইল, বগুড়া, বাগেরহাট, যশোর ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলার পাশাপাশি রংপুর, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগ এবং ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে, যা অব্যাহত থাকতে পারে।
দেশের কোনো অঞ্চলের তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেখানে মৃদু তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ বইছে ধরা হয়।
তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তীব্র দাবদাহ ধরা হয়। অন্যদিকে তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হলে বলা হয় অতি তীব্র দাবদাহ।
চুয়াডাঙ্গায় শুক্রবার বেলা তিনটায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ দশমিক সাত ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা চলতি মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ। একই দিনে পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
তাপমাত্রার বিষয়ে অধিদপ্তর জানায়, সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:দেশের বিভিন্ন স্থানে যেভাবে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা অব্যাহত থাকতে পারে। এর মধ্যে কোথাও কোথাও বৃষ্টিরও সম্ভাবনা রয়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এতে বলা হয়, রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা ও পাবনা জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। টাঙ্গাইল, বগুড়া, বাগেরহাট, যশোর, কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ রংপুর, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগসহ ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়োহাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে এবং সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে।
অধিদপ্তর বলছে, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।
আবহাওয়ার সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। আগামী পাঁচ দিনেও আবহাওয়াও প্রায় একই থাকতে পারে।
শুক্রবার দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়া ২০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশের কোথাও বৃষ্টি হয়নি বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
থাইল্যান্ডে রাষ্ট্রীয় সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির গভর্নর হাউসে শুক্রবার থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিন আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে তিনি এ মন্তব্য করেন বলে বার্তা সংস্থা ইউএনবির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, খাদ্য নিরাপত্তা, পর্যটন, জনস্বাস্থ্য, জ্বালানি ও আইসিটি খাতে সহযোগিতা জোরদারের সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে অনুভব করি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, খাদ্য নিরাপত্তা, পর্যটন, জনস্বাস্থ্য, জ্বালানি, আইসিটি, জনগণ থেকে জনগণে যোগাযোগ ও সংযোগের ক্ষেত্রে এবং বিমসটেকের অধীনে আমাদের সহযোগিতা জোরদার করার সুযোগ রয়েছে।’
এর আগে দুই নেতা গভর্নর হাউসে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে যোগ দেয়ার আগে ১৫ মিনিটের জন্য একান্ত বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে পাঁচটি দ্বিপক্ষীয় নথি—একটি চুক্তি, তিনটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও একটি লেটার অফ ইনটেন্ট (এলওআই) সই করা হয়।
মধ্যাহ্নভোজে শেখ হাসিনা বলেন, নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশ থাইল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বন্ধুত্ব আমাদের ঐতিহাসিক, ভাষাগত ও অভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গভীরে প্রোথিত। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, টেকসই উন্নয়ন, জনগণ থেকে জনগণে যোগাযোগ ও সংযোগসহ সহযোগিতার বহুমুখী ক্ষেত্রে আমাদের দুই বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের মধ্যে উষ্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী থাভিসিন ও তিনি পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা করতে এবং দুই দেশের সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার মধ্যে আরও আলাপ-আলোচনাকে উৎসাহিত করতে সম্মত হয়েছি। একইভাবে দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগের প্রসার ও সুবিধার্থে আমাদের সব রকম প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘শুক্রবার ঢাকা ও ব্যাংকক যে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করেছে, তা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য একটি দৃঢ় কাঠামো প্রদান করবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, সফরটি ‘প্রতিবেশী’ নীতির বৃহত্তর ফোকাসের অংশ, যা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গতি আরও নবায়নের জন্য দুই দেশকে চমৎকার সুযোগ করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যে, এই সফর আমাদের দুই দেশের সম্পর্ককে আরও গভীর করতে সাহায্য করবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, এই সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পূর্ণ সম্ভাবনায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয় গতি সঞ্চার করবে।
তিনি বলেন, ‘এই সরকারি সফর আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে, যা আমাদের দুই দেশের মধ্যে ফলপ্রসূ অংশীদারত্বের এক নতুন যুগের সূচনা করেছে।
‘আগামী দিনগুলোয় আমাদের জনগণ ও দেশের পারস্পরিক সুবিধার জন্য আমাদের সম্পর্কের নতুন গতি বজায় রাখতে হবে।’
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা অন্বেষণ করতে থাইল্যান্ডের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাইটেক পার্কেও থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ কামনা করেছেন।
বার্তা সংস্থা ইউএনবির প্রতিবেদনে জানানো হয়, থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে শুক্রবার গভর্নমেন্ট হাউসে দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশি চিকিৎসাকর্মীদের প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমি তাকে বাংলাদেশের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা অন্বেষণেরও প্রস্তাবও দিয়েছি।’
বৈঠক শেষে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে পাঁচটি দ্বিপক্ষীয় নথি, একটি চুক্তি, তিনটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও একটি লেটার অফ ইনটেন্টে (এলওআই) সই করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে থাইল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্ককে বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। আমাদের বন্ধুত্ব আমাদের ঐতিহাসিক, ভাষাগত ও অভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গভীরে প্রোথিত।
‘সহযোগিতার বহুমুখী ক্ষেত্রে আমাদের দুই দেশের মধ্যে উষ্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
বৈঠকে দুই নেতা পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
এ নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গতিশীল অর্থনীতির সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে থাইল্যান্ডকে আমরা এক গুরুত্বপূর্ণ ও গতিশীল অংশীদার হিসেবে দেখি।’
বাণিজ্য সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের বর্তমান পরিসর বাড়ানোর জন্য দীর্ঘ পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসা সহজীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমি প্রধানমন্ত্রীকে (থাভিসিন) আশ্বস্ত করেছি। আমি থাই পক্ষকে আমাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাইটেক পার্কে বিনিয়োগ করার ও শুধু থাইল্যান্ডের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছি।’
আরও পড়ুন:দেশের দুটি জেলায় অতি তীব্র ও ১৬টিতে তীব্র দাবদাহ চলছে জানিয়ে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, সেটি অব্যাহত থাকতে পারে।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমন তথ্য জানিয়েছে।
পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
বৃষ্টিপাতের বিষয়ে জানানো হয়, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। একই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য জায়গায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ নিয়ে বলা হয়, চুয়াডাঙ্গা ও যশোর জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলা এবং খুলনা বিভাগের অন্যান্য জেলার (১০ জেলার মধ্যে বাকি আটটি) ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ঢাকা, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, বগুড়া, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
দেশের কোনো অঞ্চলের তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেখানে মৃদু তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ বইছে ধরা হয়।
তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তীব্র দাবদাহ ধরা হয়। অন্যদিকে তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হলে বলা হয় অতি তীব্র দাবদাহ।
তাপমাত্রার বিষয়ে অধিদপ্তর জানায়, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ইউএনবি জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গভর্নমেন্ট হাউসে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান থাই প্রধানমন্ত্রী।
বার্তা সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই পক্ষ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ও আঞ্চলিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা।
বৈঠকের পর দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এশিয়ার দুই দেশের মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় নথিতে সই করা হয়। দুই নেতার মধ্যে প্রায় ১৫ মিনিট একান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
গভর্নমেন্ট হাউসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাই সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দলের দেয়া গার্ড অফ অনার পরিদর্শন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভর্নমেন্ট হাউসের অতিথি বইয়ে সই করার আগে স্রেথা থাভিসিন তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে তাকে পরিচয় করিয়ে দেন।
গভর্নমেন্ট হাউস ত্যাগ করার আগে শেখ হাসিনা সেখানে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন।
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে ছয় দিনের সরকারি সফরে বুধবার ব্যাংককে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য