অন্যের জমি দখলে নাম আসা ঢাকা-৭ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিম এবার পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরের কাছে ভুয়া দলিলে পৌনে পাঁচ একর জমি দখল করার পর প্রতিরোধের মুখে পড়েছেন।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করছেন, সংসদ সদস্য তার মদিনা গ্রুপের নামে ওই জমি দখল করেছেন। পায়রা বন্দরের দিকে যাওয়া চার লেন রাস্তার পাশে পেট্রল পাম্প বসানোর চেষ্টা করেছেন।
অভিযোগ উঠেছে, জমি দখলের পর মালিকদের মারধরের হুমকি দেয়া হয়েছে। তাদের বাড়িতে ডাকাত দল হানা দিয়েছে। এভাবে তাদেরকে এলাকা ছাড়া করতে বাধ্য করা হয়েছে।
পাঁচ বছর জমি উদ্ধারে দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ফল পাননি। তবে গত অক্টোবরে ঢাকায় নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধরের মামলায় পুত্র ইরফান সেলিম কারাগারে যাওয়া পর হাজী সেলিমের দখল করা বহু জমি উদ্ধার করেছে প্রশাসন। এই ঘটনার পর সাহসী হয়ে ভুক্তভোগীরা একজোট হয়েছেন। দখলদারদের হটিয়ে দিয়েছেন। রাত জেগে পাহারাও দিচ্ছেন।
হাজী সেলিমের লোকদের করা বাঁধ কেটে দিয়ে জমিটি আবার চাষের উপযোগী করা হচ্ছে।
হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে পুরান ঢাকাতেও একই প্রক্রিয়ায় বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি দখলের অভিযোগ আছে। সব ক্ষেত্রেই তিনি জমি বা স্থাপনা কেনার দলিল হাজির করেন। এরপর তার লোকজন গিয়ে শক্তি দেখিয়ে সব দখল করে।
হাজী সেলিমের দখলে আছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কালের তিব্বত হল, এমনকি রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাংক অগ্রণীর শত কোটি টাকা মূল্যের জমি। যেটি ইরফান সেলিমকে গ্রেপ্তারের পর উদ্ধার করে র্যাব বুঝিয়ে দিয়েছিল ব্যাংককে। সেই জমি থেকে আবার ব্যাংককে হটিয়ে দিয়েছেন তিনি।
ঢাকা ছাড়িয়ে নারায়ণঞ্জের সোনারগাঁয়ের মেঘনাঘাট এলাকাতেও বিপুল পরিমাণ সরকারি সম্পত্তি দখল করেছিলেন হাজী সেলিম। তবে সেখান থেকে তাকে উচ্ছেদ করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
ফতুল্লার পিলকুনি এলাকায় সাখাওয়াত হোসেন নামে এক বৃদ্ধের জমিও দখলের চেষ্টা করেছিলেন হাজী সেলিম। তাকে চার বছর ধরে পানিবন্দি করে রাখার পর সম্প্রতি ভূমি অফিস থেকে সাখাওয়াতের পক্ষে রায় দেয়া হয়েছে।
পুরান ঢাকায় বধির স্কুলকে বরাদ্দ দেয়া জমিতে হাজী সেলিমের গড়ে তোলা পেট্রল পাম্পের একাংশও উদ্ধার করেছে প্রশাসন।
পায়রাতে যা ঘটেছে
দেশের তৃতীয় পায়রা সমুদ্র বন্দরের প্রবেশমুখের কিছু আগে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া গ্রামের ঘটনা এটি।
ভুক্তভোগীদের এক জন চার সন্তানের জনক ইউসুফ মিনা। বয়স তার ৬৭।
আশির দশকে গ্রামের হাশেম মৃধার কাছ থেকে দুই একর জায়গা কেনেন তিনি ও তার ভাইয়ের ছেলে ইউনুস মিনা। বছর দুই আগে বিএস জরিপও তাদের নামে রেকর্ড রয়েছে।
তাদের বাড়ির পূর্বপাশে কেনা ওই জমির সঙ্গে আরও এক একর জমি ৯০ এর দশকের আগে তার আরেক সন্তান আল মামুন এবং ভাইয়ের ছেলে ইউনুস, আনোয়ার, শহিদুল, মান্নান ও দেলোয়ারের নামে কেনেন।
পাশের দুই একর জমিও সে সময় কেনা হয় আহসান পাভেল, ইসমাইল গাজী, মোজাম্মেল ও কামরুল ইসলামের নামে। এরা ইউসুফ মিনার নিকটাত্মীয়।
ওই পাঁচ একর জমি পায়রা বন্দরের সংযোগের জন্য তৈরি করা চার লেন রাস্তার পাশে। স্থানীয় কয়েক জন ওই জমি বিক্রি করতে মালিকদের নানা ভাবে প্রস্তাব দিতে থাকে। কিন্তু রাজি হননি মালিকরা।
ইউসুফ মিনা জানান, ২০১৬ সালের মে মাসে আচমকা মদিনা গ্রুপের লোকজন এসে দলিল দেখান। তারা নাকি দুই একর জমি বিক্রি করেছেন।
এরপর থেকে ভুক্তভোগীরা ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদে ধরনা দিতে থাকেন জমি উদ্ধারের জন্য। কিন্তু লাভ হয়নি। পরে আদালতে যান তারা।
এতে কাজ তো হয়ইনি, উল্টো দুই বছরের মাথায় পাঁচ একর জমির পুরোটাই দখল করে নেয় হাজী সেলিমের লোকজন।
ইউসুফ মিনার স্ত্রী কহিনুর বেগম জানান, ২০১৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে মুখোশধারী ডাকাত দল তাদের ঘরে ঢুকে টাকা, স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। সেই থেকে তাদের সন্তানরা ওই এলাকা ছেড়ে কলাপাড়া উপজেলা শহরে আশ্রয় নেন। সেখানেই দোকান দিয়েছেন।
ইউসুফ মিনার ছেলে আবুল কালাম বলেন, ‘শহরে গিয়াও শান্তিতে থাকতে পারি নাই। পিরায় (প্রায়) দোহানে যাইয়া হুমকি দেয়। গত বছর বাবারে মসজিদে মাগরিবের নামাজ পরতে যাওয়ার সময় মারছে। ডরে কেউ মুখ খুলে নাই।’
ইউসুফ মিনার ছেলে আল মামুন কাজ করেন স্থানীয় একটি সরকারি অফিসে। বলেন, ‘হাজী সেলিমের ছেলেকে গ্রেপ্তারের খবরে আমরা ভুক্তভোগী ১৩টি পরিবারের সদস্যরা এক হয়ে জমি উদ্ধারের চেষ্টা করছি।’
আনোয়ার মিনা বলেন, ‘আমরা ঐক্যবদ্ধ হইছি। জোর কইরা ডর দেহাইয়া মোগো জমি দহলে নিয়া এলাকা ছাড়া করেছে হাজী সেলিম। এবার মোরা আর ছাড়মু না। মোরা এহন দিন রাইত পাহারা দিই মুগো জমি।’
ভূক্তভোগীদের এক জন সৈয়দ আহসান পাভেল সংবাদকর্মী। জানান, ভুয়া কাগজ আর লোক দেখিয়ে তাদের এক একর ৪৩ শতাংশ জমি দখল করা হয়েছে। ওই জমিতে মদিনা ফিলিং সার্ভিস সেন্টার নির্মাণ করার চেষ্টা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ওই সম্পত্তি আমরা পুনরুদ্ধার করে ফসল উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত করছি। জমিতে মদিনা গ্রুপের দেয়া রিংবাধও আমরা কেটে ফেলেছি। ঘণ্টায় আড়াই হাজার টাকা ভাড়া নিয়ে এক্সক্যাভেটর এনে জমি সমান করার চেষ্টা করছি।’
হাজী সেলিমের ‘ডান হাত’ শিমু চেয়ারম্যান
স্থানীয়দের অভিযোগ, পায়রা বন্দর নির্মাণ কাজ শুরু থেকেই হাজী সেলিম ওই এলাকায় দখল নেয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। বন্দরের পাশের টিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান শিমু মীরকে পক্ষে টানেন তিনি।
শিমু চেয়ারম্যানের লোকদের মাধ্যমেই পায়রা বন্দর ও আশপাশের এলাকায় দখল চলে।
ওই ১৩ পরিবারের পাঁচ একর জমি দখল করে হাজী সেলিমকে বুঝিয়ে দেয়ার অভিযোগ এই জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধেই।
২০১৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ইউসুফ মিনার ঘরে যে ডাকাতি হয় তাতে শিমু চেয়ারম্যানের লোকজনের সম্পৃক্ততার অভিযোগও করছেন ভুক্তভোগীরা।
যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করে শিমু মীর বলেছেন, ‘হাজী সেলিম আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এমপি। তিনি ঢাকায় থাকেন, এখানে তার ব্যবসা রয়েছে। আমি জাস্ট স্থানীয় চেয়ারম্যান হিসেবে তাকে যতটুকু সহায়তা করার ততটুকুই করছি। কিন্তু তাও আগে, এখন না।’
গত ২৯ নভেম্বর বিকেলে ১০ লাখ টাকা চাঁদা না দেয়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলমকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করার অভিযোগ আছে শিমু মীর ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় ওই দিন রাতে মামলা করার পর রাতেই শিমু মীরকে তার স্ত্রী ও তিন সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করা হয়।
তবে সম্প্রতি তিনি জামিনে মুক্তি পেয়ে তার বিরুদ্ধে উঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
মদিনা গ্রুপের বক্তব্য
মদিনা গ্রুপের ডিজিএম (ল্যান্ড) নুরুল হামিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইল ফোনে বলেন, ‘এটি এখন ডেড ইস্যু। বিষয়টি নিয়ে আদালতে দুটি মামলা চলমান। এখন আদালত সিদ্ধান্ত দেবে জমি কার। আমরা ইউসুফ মিনার ছেলে ইসমাইলের কাছ থেকে জমি কিনেছি। আমাদের কাগজপত্র আছে। এখন ওনারা (ইউসুফ) বলছে ওই জমি তাদের।’
দখলের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভাই আমরা ঢাকা থেকে টাকা দিয়ে জমি কিনেছি। ওখানে দখল করতে কেন যাব? বিষয়টি কলাপাড়া উপজেলার অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন দেখভাল করছেন। এ বিষয়ে আরও কিছু জানার থাকলে তার কাছ থেকে জেনে নিন।’
তবে কলাপাড়ায় নাসিরউদ্দিন নামে কোনো আইনজীবী আছেন কি না তা জানা যায়নি বহু চেষ্টা করেও।
আরও পড়ুন:সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে জানিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, দেশে প্রথম রোজার দিন বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হতে পারে একটি বিভাগে।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এমন বার্তা দেয়া হয়েছে।
পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলা হয়, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে রয়েছে।
দিনভর আবহাওয়া কেমন থাকবে, তা নিয়ে অধিদপ্তর জানায়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে, তবে সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় হালকা বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
তাপমাত্রা নিয়ে বলা হয়, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।
ঢাকায় শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ১১ মিনিটে সূর্য অস্ত যাবে জানিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, শনিবার ঢাকায় সূর্যোদয় হবে ভোর ৫টা ৫৮ মিনিটে।
পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার অবস্থা নিয়ে জানানো হয়, সামান্য পরিবর্তন হতে পারে।
অধিপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়, বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ ৩৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায়। শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন ১৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে।
গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয় ভোলায়।
আরও পড়ুন:পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার পলাতক আসামি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে অবস্থানরত আরাব খান ওরফে রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করেছে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল।
রেড নোটিশ পাওয়া বাংলাদেশিদের তালিকায় ছবিসহ যুক্ত করা হয়েছে তার নাম।
আরাবসহ ইন্টারপোলের রেড নোটিশপ্রাপ্তদের তালিকায় থাকা বাংলাদেশির সংখ্যা ৬৩।
ইন্টারপোলের তালিকায় আরাব নামটি উল্লেখ করা হয়নি। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে তার পূর্ণ নাম রবিউল ইসলাম ও ডাকনাম রবিউল লেখা হয়েছে। জন্মস্থান দেখানো হয়েছে বাগেরহাট; বয়স উল্লেখ করা হয়েছে ৩৫ বছর।
বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে আরাবের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছে ইন্টারপোল।
রোড নোটিশ নিয়ে যা বলেছিলেন আইজিপি
আরাব খান ওরফে রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির আবেদন গ্রহণের কথা শুনেছেন বলে জানিয়েছিলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
চট্টগ্রামের এনায়েত বাজার পুলিশ ফাঁড়ির নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন শেষে ২০ মার্চ দুপুরে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।
পুলিশপ্রধান বলেন, ‘আরাব খানের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য ইন্টারপোলসহ বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ শুরু করেছি। আমি কিছুক্ষণ আগে জানতে পেরেছি যে, তার যে নামে আমরা চার্জশিট দিয়েছি, ওই নামে রেড নোটিশ জারির একটা বিষয় (আবেদন/অনুরোধ) দিয়েছি। এটা বোধ হয় ইন্টারপোল গ্রহণ করেছে, এ রকম একটা খবর আমি পেয়েছি। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি, কীভাবে কাজ করছি সেটা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাচ্ছি না তদন্তের স্বার্থে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশ থেকে যদি কোনো আসামি পলায়ন করে বিদেশে চলে যায়, যখন আমরা তার সম্পর্কে মোটামুটি কিছু তথ্য পাই, তখন আমরা একটা রেড নোটিশ জারি করি। এটা ইন্টারপোল হেড কোয়ার্টারে যায়। আমি যেটা খবর পেয়েছি যে, এটা তারা অ্যাকসেপ্ট করেছে।’
এর আগে ১৮ মার্চ পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার ফেরারি আসামি আরাব খান ওরফে রবিউল ইসলামকে দেশে ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলকে চিঠি দেয়ার খবর জানায় বাংলাদেশ পুলিশ।
ইন্টারপোল বাংলাদেশ ডেস্কের এক কর্মকর্তা ওই দিন বিকেলে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এই বিষয়ে (আরাবকে দেশে ফেরানো) ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ইন্টারপোলকে মেইল করেছি। তারা আমাদের দেয়া তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।’
একই দিনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানান, আরাবকে ফেরাতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার পলাতক আসামি আরাবকে দেশে ফেরানোর উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘ইন্টারপোলের সহায়তায় তাকে ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে তাকে ধরতে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
‘আমরা অনেক কিছুই শুনেছি, জেনেছি। যেসব তথ্য আমাদের কাছে এসেছে, তা যাচাই-বাচাই করে বাদবাকি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরাবকে নিয়ে আলোচনার শুরু যেখান থেকে
পুলিশ পরিদর্শক মামুন এমরান খাঁন হত্যা মামলার আসামি আরাব খান ওরফে রবিউল ইসলাম আলোচনায় আসেন মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে গোল্ড জুয়েলারি শপ ‘আরাব জুয়েলার্স’ উদ্বোধন ঘোষণাকে কেন্দ্র করে এ আলোচনা শুরু হয়। শপটির লোগো বানানো হয় ৬০ কেজি সোনা দিয়ে।
আরাবের এই জুয়েলারি শপের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ পান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। এ নিয়ে সাকিব আল হাসানের ভিডিওবার্তার পর বিষয়টি নজরে আসে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি)।
সে সময় ডিবি মতিঝিল বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেছিলেন, ‘পুলিশ পরিদর্শককে হত্যা মামলার চার্জশিট হয়েছে অনেক আগেই। রবিউল চার্জশিটভুক্ত পলাতক আসামি। জুয়েলারি শপ উদ্বোধনের ঘোষণার পর আইডেন্টিফাই করি, যে ব্যক্তি আরাব খান নামে আইডিটি পরিচালনা করছেন, তিনি পুলিশ পরিদর্শক মামুন এমরান খাঁন হত্যা মামলার আসামি রবিউল ইসলাম। তার ভারতীয় একটি পাসপোর্ট ও বাংলাদেশি পাসপোর্ট আমাদের কাছে রয়েছে।’
রবিউলকে ইন্টারপোলের সহায়তায় দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছিলেন ডিবি মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার রাজিব আল মাসুদ।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেছিলেন, ‘আমরা তাকে অনেক দিন ধরেই খুঁজছিলাম। দুবাইতে তিনি অবস্থান করছেন, এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে। ফলে এখন আমরা ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেব।’
ফেরারি আসামি আরাব খানের মালিকানাধীন আরাব জুয়েলার্স উদ্বোধন হয় ১৫ মার্চ রাতে। দুবাইয়ে নিউ গোল্ড সোক হিন্দ প্লাজার ৫ নম্বর ভবনের ১৬ নম্বর দোকানটি আরাবের।
তার ফেসবুক প্রোফাইল ঘেঁটে দেখা যায়, সাকিব আল হাসানের পাশাপাশি পাকিস্তানের ক্রিকেটার মোহাম্মদ আমির, আফগানিস্তানের ক্রিকেটার হযরতউল্লাহ জাজাই, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটার এভিন লুইস, ইংল্যান্ডের বেনি হাওয়েল, শ্রীলঙ্কার ইসুরু উদানা, বাংলাদেশি লেখক সাদাত হোসাইন, অভিনেত্রী দীঘি, আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিরো আলম, চলচ্চিত্র পরিচালক দেবাশীষ বিশ্বাস, কণ্ঠশিল্পী নোবেল, বেলাল খানসহ অনেকে জুয়েলারি শপ উদ্বোধন উপলক্ষে শুভেচ্ছাবার্তা দেন। তাদের একটি বড় অংশ দুবাইতে গিয়ে অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের নিন্দা জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
বৃহস্পতিবার সংগঠনের উপদেষ্টা ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ নিন্দা জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে যেসব মন্তব্য করেছে তা আমাদের বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ করেছে। এই প্রতিবেদনে ’৭১-এর গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে বলা হয়েছে।’
‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হয়রানির কারণে বাংলাদেশের বৃহত্তম মুসলিম রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও সদস্যবৃন্দ তাদের সংবিধানপ্রদত্ত বাকস্বাধীনতা ও সমাবেশের স্বাধীনতা ভোগ করতে পারছেন না।সরকার কর্তৃক রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিলের কারণে জামায়াত প্রার্থীরা দলের নামে নির্বাচন করতে পারছেন না’।
বিবৃতিতে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি বলে, ‘জামায়াত সম্পর্কে অত্যন্ত নিন্দনীয় মার্কিন প্রতিবেদনের এই রিপোর্ট শুধু অসত্য নয়, বাংলাদেশসহ গোটা উপমহাদেশে জামায়াত পরিচালিত জঙ্গি মৌলবাদী সন্ত্রাসকে ইন্ধন জোগাবে বলে আমরা মনে করি।’
সংগঠনটির পক্ষ থেকে আরও বলা হয় , জামায়াত একটি গণতন্ত্রবিরোধী ফ্যাসিস্ট দল যারা বাংলাদেশের সংবিধান মান্য করে না। এ কারণে বাংলাদেশের উচ্চতর আদালত ২০১৩ সালে এ দলের নিবন্ধন বাতিল করেছে, যার ফলে দলীয় পরিচয়ে জামায়াতের নেতারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। সরকার কখনও জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেনি। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিভিন্ন রায়ে জামায়াতে ইসলামীকে ’৭১-এর গণহত্যার জন্য দায়ী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। জামায়াত মানব রচিত সংবিধানে বিশ্বাস করে না।
জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা আবুল আলা মওদুদী আব্রাহাম লিঙ্কনের বিখ্যাত গেটিসবার্গ ভাষণে ঘোষিত গণতন্ত্রের সংজ্ঞাকে প্রত্যাখ্যান করে ৮০ বছর আগে লিখেছিলেন ‘গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি কুফরি মতবাদ। যারা এসব মতবাদ প্রচার করবে তারা ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে।
এ হেন গণতন্ত্র বিদ্বেষী ফ্যাসিস্ট জামায়াতে ইসলামীকে স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের বৃহত্তম ইসলামী দল হিসেবে আখ্যায়িত করে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করার জন্য যে ওকালতি করছে তাতে উপমহাদেশসহ সমগ্র বিশ্বে ইসলামের নামে যাবতীয় সন্ত্রাসের গুরু জামায়াত শুধু অধিকতর সন্ত্রাসী কার্যক্রমে উৎসাহিত হবে না, ভবিষ্যতে আমেরিকার মতো দেশে ৯/১১-এর মতো অসংখ্য সন্ত্রাসী ঘটনায় ইন্ধন জোগাবে বলে তারা বিবৃতিতে উল্লেখ করেন।
‘২০১৮ সালের ২০ নবেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে কংগ্রেসম্যান জিম ব্যাংক জামায়াত-শিবিরকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে একটি প্রস্তাব জমা দিয়েছেন, যেখানে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবিরের বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিবরণ দেয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘আমরা গত ৩১ বছর ধরে ’৭১-এর গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের জন্য দায়ী, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সংবিধান বিরোধী জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ করবার জন্য আন্দোলন করছি। স্টেট ডিপার্টমেন্ট যদি বাংলাদেশসহ মার্কিন জনমত উপেক্ষা করে জামায়াত তোষণ নীতিতে অবিচল থাকে তা শুধু বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাকে বিপন্ন করবে না, দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক নিরাপত্তা সহ পশ্চিমা দেশসমূহের জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও সমূহ বিপদ ডেকে আনবে।’
বিবৃতিতে স্বাক্ষরদাতাদের মধ্যে রয়েছেন-বিচারপতি শামসুল হুদা, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, অধ্যাপক অনুপম সেন, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, সমাজকর্মী মালেকা খান, শিল্পী হাশেম খান, শিল্পী রফিকুননবী, অধ্যাপিকা পান্না কায়সার, অধ্যাপিকা মাহফুজা খানম, জননেতা ঊষাতন তালুকদার, কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন, চলচ্চিত্রনির্মাতা নাসির উদ্দীন ইউসুফ, অধ্যাপক ডাঃ কাজী কামরুজ্জামান, অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন আলমগীর সাত্তার বীরপ্রতীক, অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন সাহাবউদ্দিন আহমেদ বীরউত্তম, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আবদুর রশীদ , অধ্যাপক আমজাদ হোসেন, ড. নূরন নবী, লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, শহীদজায়া সালমা হক, কলামিস্ট সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ, শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ।
২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছেন আপিল বিভাগের বিচারপতি এম. এনায়েতুর রহিম।
বৃহস্পতিবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি আয়োজিত ‘১৯৭১ সালের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি: প্রয়োজন গবেষণা, প্রকাশনা ও কূটনৈতিক তৎপরতার তাৎপর্য’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ দাবি জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিচারপতি এম. এনায়েতুর রহিম বলেন, ‘২৫ মার্চকে গণহত্যা বা জেনোসাইডের স্বীকৃতি দিতে হবে- এই দাবি নতুন প্রজন্মকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ছড়িয়ে দিতে হবে। আমরা জেনোসাইডের স্বীকৃতি পেলাম কি পেলাম না সেদিকে না তাকিয়ে আমাদের দাবি তুলে ধরতে হবে।
‘বাঙালিকে ধর্ম দিয়ে বিভক্তিকরণের চেষ্টা সবসময়ই ছিল। তারপরও আমাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে হবে।’
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক ও ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. একেএম লুৎফর রহমান।
রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নাফিস আহমদের সঞ্চালনায় সেমিনারে প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এস এম মাসুম বিল্লাহ ও লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদের প্রাক্তন ডিন অধ্যাপক ড. মো. জাকারিয়া মিয়া।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট পরিচালক, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় চেয়ারম্যানবৃন্দ, শিক্ষক-শিক্ষকা এবং শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:নয়জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৩’ প্রদান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে তিনি এ পুরস্কার বিতরণ করেন।
জাতীয় পর্যায়ে গৌরবময় ও অসামান্য অবদানের জন্য এই স্বীকৃতি দেয়া হয়।
পদকপ্রাপ্তদের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল শামসুল আলম, প্রয়াত লেফটেন্যান্ট এজি মোহাম্মদ খুরশিদ (মরণোত্তর), শহীদ খাজা নিজামউদ্দিন ভূঁইয়া (মরণোত্তর) ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী (মায়া) বীর বিক্রম ‘স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ’ ক্যাটাগরিতে এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন।
প্রয়াত ড. মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন আহমেদ (সেলিম আল দীন) (মরণোত্তর) ‘সাহিত্য’ বিভাগে মনোনীত হন এবং পবিত্র মোহন দে ও এএসএম রকিবুল হাসানকে যথাক্রমে ‘সাংস্কৃতিক’ এবং ‘ক্রীড়া’ বিভাগে মনোনীত করা হয়।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগকে ‘সোশ্যাল সার্ভিস/পাবলিক সার্ভিসেস’ বিভাগে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়।
বেগম নাদিরা জাহান (সুরমা জাহিদ) এবং ড. ফেরদৌসী কাদরীকে ‘গবেষণা ও প্রশিক্ষণ’ বিভাগে মনোনীত করা হয়।
গত ৯ মার্চ স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রত্যেক পুরস্কারপ্রাপ্তকে একটি স্বর্ণপদক, একটি সার্টিফিকেট ও সম্মানী চেক দেয়া হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন এবং পুরস্কারপ্রাপ্তদের সংক্ষিপ্ত জীবন বিবরণী তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে ড. ফেরদৌস কাদরী নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
মরণোত্তর পুরস্কারপ্রাপ্তদের পক্ষ থেকে তাদের প্রতিনিধিরা পদক গ্রহণ করেন।
সারা দেশের মহাসড়কে রয়েছে ৮৮৩টি বিপজ্জনক বাঁক। তাতে এসব পয়েন্টে তৈরি হয়েছে মরণফাঁদ। এসব বাঁকে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। হতাহত হচ্ছে বিভিন্ন পরিবহনের যাত্রী ও পথচারী।
মহাসড়কে বিগত ১০ বছরে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে এসব বিপজ্জনক বাঁক চিহ্নিত করেছে হাইওয়ে পুলিশ। বাঁকগুলোতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমাতে মহাসড়কের ওই অংশ সোজা করাসহ বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে।
তথ্যমতে, ৮৮৩টি বাঁকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৬৪টি বাঁক রয়েছে হাইওয়ে পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের মাদারীপুর রিজিওনে। এই রিজিওনের আওতায় রয়েছে মাদারীপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, বরিশাল, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, খুলনা, বাগেরহাট, মাগুরা, যশোর ও নড়াইল।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চসংখ্যক বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে বগুড়া রিজিওনে। এই রিজিওনের আওতাধীন বগুড়া, পঞ্চগড়, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, রংপুর, দিনাজপুর, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধার মহাসড়কে বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে ২৪৮টি।
এর বাইরে কুমিল্লা রিজিওনে ১৮১টি ও সিলেট রিজিওনে ১২৬টি বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে। এই মরণফাঁদ সবচেয়ে কম রয়েছে গাজীপুর রিজিওনে। এখানকার মহাসড়কে বিপজ্জনক বাঁকের সংখ্যা ৬৪টি।
হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি শাহাবুদ্দীন খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ঝুঁকি বিবেচনায় মহাসড়কের বাঁকগুলো চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানিয়েছি। সে অনুযায়ী কাজও হচ্ছে। এসব বাঁকে যে রেগুলার দুর্ঘটনা ঘটছে এমনটা নয়। তবে এই স্পটগুলোতে বাড়তি ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। কোনোটাতে কম ঝুঁকি, কোনোটাতে বেশি।
তিনি জানান, দুর্ঘটনা কমানোর জন্য কিছু সড়কে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাজ হয়েছে। আরিচা মহাসড়কে কাজ হয়েছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে রোড প্রশস্ত করা এবং সার্ভিস লেন করার মাধ্যমে কাজ হয়েছে। এভাবে ঝুঁকি কমানোর কাজ চলছে।
তিনি বলেন, ‘সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে পথচারী ও যানবাহনের চালকদের সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। অন্যান্য সংস্থার পাশাপাশি হাইওয়ে পুলিশ এই সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে।
সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে সচেতনতার পাশাপাশি মহাসড়ককে বাঁকমুক্ত করতে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে অভিমত গবেষকদের। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক ও দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআরআই) সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ বলেন, ‘মহাসড়কের এসব বাঁক বছরের পর বছর ধরে আলোচনায় রয়েছে। এর মধ্যে কিছু বাঁক সোজা করা হয়েছে। তবে বেশিরভাগ বাঁকই আগের মতোই বিপজ্জনক অবস্থায় রয়ে গেছে। এ কারণে সড়ক দুর্ঘটনার হার বাড়ছে।
‘পাশাপাশি অনেক যানবাহনের ফিটনেস না থাকার পরও তারা মহাসড়কে বেপরোয়া। বেশিরভাগ দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেই তদন্তে ফিটনেস ফেইলের তথ্য বেরিয়ে আসে।’
হাইওয়ে পুলিশের তথ্যমতে, বরিশাল থেকে মহাসড়ক ধরে গৌরনদী পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দিতে একজন চালককে অতিক্রম করতে হয় চারটি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক। গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এসব বাঁকে বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহনের অবস্থান চিহ্নিত করা যায় না। চালক যখন বুঝতে পারেন ততক্ষণে ঘটে যায় প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা। সারাদেশে এ ধরনের ৮৮৩টি বাঁক রয়েছে।
মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধে নানামুখী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দুর্ঘটনাপ্রবণ বিপজ্জনক বাঁক চিহ্নিত করার কাজটিও করে থাকে হাইওয়ে পুলিশ।
হাইওয়ে পুলিশের তথ্য বলছে, বরিশাল থেকে ভুরঘাট পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার মহাসড়কে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে অন্তত দুই ডজন। এর মধ্যে কাশিপুরের বন বিভাগ ও সমবায় ইনস্টিটিউটের সামনের রাস্তা, গড়িয়ারপাড়ের জননী পেট্রোল পাম্প ও কলাডেমা, ক্যাডেট কলেজ, রহমতপুর সেতুর ঢাল, বিমানবন্দর মোড়, দোয়ারিকা ব্রিজের ঢাল, জয়শ্রী, গৌরনদীর প্রবেশপথ, বামরাইল স্কুল সংলগ্ন, বাটাজোড়, আশুকাঠি, টরকি বাজার, কটকস্থল, বার্থি ও ভুরঘাটা সেতুর আগে বিপজ্জনক এসব বাঁক রয়েছে।
বিপজ্জনক বাঁকগুলোতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বাড়িয়েছে অবৈধ যানবাহন। এসব যানবাহন মহাসড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলেও মনে করে হাইওয়ে পুলিশ। গত এক বছরে সড়কে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে সবচেয়ে বেশি জরিমানা আদায় হয়েছে মাদারীপুর রিজিওনে। এরপর পর্যায়ক্রমে রয়েছে কুমিল্লা, গাজীপুর, সিলেট ও বগুড়া রিজিওন।
মহাসড়কে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি (এইচ আর অ্যান্ড মিডিয়া) মো. শামসুল আলম।
তিনি বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড দেয়া হয়েছে। বাঁকগুলো সম্পর্কে আশপাশ এলাকার স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভা করা হয়েছে। পাশাপাশি মহাসড়কে চলাচল করা যানবাহনের চালকদের নিয়েও সভা করা হয়েছে। সচেতনতামূলক কর্মসূচি এখনও পালন করা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনিয়ম হলে ভোট বন্ধ করার হুশিয়ারি দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা। এ প্রসঙ্গে তিনি অনিয়মের কারণে বন্ধ হওয়া গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।
‘ভোটাররা কোনো ধরনের বাধা ছাড়া পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিতে পারবেন সেই নিশ্চয়তা বর্তমান কমিশন দিচ্ছে’, যোগ করেন তিনি।
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
অনিয়মের কারণে গত বছরের ১২ অক্টোবর ভোটগ্রহণ চলার মধ্যেই গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচন বন্ধ করে দেয় কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন।
ঢাকায় নির্বাচন ভবনে বসে সিসিটিভি ক্যামেরায় কেন্দ্রের পরিস্থিতি সরাসরি পর্যবেক্ষণ করে এ সিদ্ধান্ত নেয় বর্তমান কমিশন। পাশাপাশি ভোটে দায়িত্বরত ১৩৩ জনকে দায়িত্বে অবহেলার দায়ে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়।
রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘আমাদের একটাই মেসেজ, জাতীয় নির্বাচনে ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে কোনোরকম বাধা ছাড়াই ভোট দিতে পারবেন। আমরা সেই নিশ্চয়তা দিচ্ছি। অনিয়মের কারণে গাইবান্ধার উপনির্বাচনে যেমন ভোট বন্ধ করে দিয়েছি, জাতীয় নির্বাচনেও অনিয়ম হলে ভোট বন্ধ করে দেব।’
চলতি বছর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ৫ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহারে আগ্রহ প্রকাশ করে এই কমিশনার বলেন, ‘ভোটগ্রহণ করা হবে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। জাতীয় নির্বাচনে সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহারের সিদ্ধান্ত এখনও রয়েছে। সামনে কী হবে তা এখনই বলতে পারব না। তবে আমাদের ইচ্ছা আছে।’
আগামী জাতীয় নির্বাচনে দাতা সংস্থাগুলোর কোনো সহায়তা কমিশন নেবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সে রকম যদি হয়, আমাদের তো নিতে অসুবিধা নেই। তবে কে কী দেবে বা কিভাবে হবে সেটা আগে দেখতে হবে।’
সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনে কী পদক্ষেপ রয়েছে কমিশনের এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি রাশেদা বলেন, ‘আস্থার বিষয়টি তো মানসিক। কে কিভাবে আস্থা পাবে, তা তো আমরা বলতে পারব না। তবে আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর এমন কোনো কাজ করিনি যে কেউ কমিশনকে আস্থায় নেবে না। গাইবান্ধার উপনির্বাচনে আমরা সে প্রমাণ দিয়েছি।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য