নোয়াখালীর হাতিয়ায় সাড়ে ১৬ বছর আগের ধর্ষণ মামলা নিষ্পত্তি। আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
ময়মনসিংহে শিশুকে ধর্ষণের মামলায় সাড়ে সাত বছর পর রায়। এই আসামিরও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
মানিকগঞ্জে আট বছর আগে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে একজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
ধর্ষণ মামলার বিচারে দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে চলতি সপ্তাহে এমন তিনটি মামলার রায় এসেছে, যেগুলো বছরের পর বছর ধরে ঝুলে ছিল।
এই তিনটি মামলার রায়ের পর জেলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধর্ষণের পুরনো মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী ধর্ষণ মামলা ১৮০ দিনে নিষ্পত্তির বিধান আছে। তবে নানা কারণে বিচারে বিলম্ব হয়ে থাকে।
সম্প্রতি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নারী নির্যাতনের প্রতিক্রিয়ায় গড়ে উঠা আন্দোলনের পর সরকার ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড করেছে। ১২ অক্টোবর সাজা বাড়িয়ে আইনে মন্ত্রিসভা সায় দেয়ার দিন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, তারা কেবল সাজা বাড়ানো হয়, মামলা নিষ্পত্তিতেও নজর দিচ্ছেন।
এরপর থেকেই বেশ কিছু আটকে থাকা মামলার রায় আসতে শুরু করে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ধর্ষণের যেসব মামলা দীর্ঘ দিন ধরে বিচারাধীন, সেগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে প্রসিকিউশনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতিও বিভিন্ন সময় এসব মামলা দ্রুত শেষ করতে ডাইরেকশন (নির্দেশনা) দিয়েছেন। পুরানো মামলাগুলো আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে রায় দিতে বলা হয়েছে।’
নোয়াখালীর হাতিয়ায় ২০০৪ সালের এপ্রিলে করা ধর্ষণ মামলাটি ঝুলে ছিল সোয়া এক যুগ। দণ্ড পাওয়া আসামি মো. ইব্রাহীম সাড়ে ছয় বছর বিদেশে কাটিয়ে দেশে ফিরে ব্যবসা করছিলেন। গত বছর তিনি ধরা পড়েন। তার পরেও বিচার আগায়নি।
তবে সম্প্রতি নোয়াখালীর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়। ২৮ অক্টোবর এই মামলার রায়ে আসামি ইব্রাহীমকে দেয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
রাষ্ট্রপক্ষের পিপি মর্জুজা আলী পাটোয়ারী নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এই রায় স্বাভাবিকভাবেই এসেছে। তবে আমরা এখন পুরনো ধর্ষণ মামলাগুলোকে আরও বেশি গুরুত্বের সাথে দেখছি।’
এই আইনজীবী বলেন, ‘আমরা প্রতি সপ্তাহে জেলা প্রসাশকের সঙ্গে ধর্ষণ মামলাগুলো নিয়ে আলোচনা করি। আগের বিভিন্ন মামলাগুলো যেনো দ্রুত নিষ্পত্তি হয় তার জন্য আমরা এখন অনেক বেশি সচেষ্ট।’
গত ২৭ অক্টোবর, শিশুকে ধর্ষণের মামলায় সাড়ে সাত বছর পর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় এসেছে ময়মনসিংহের একটি আদালত থেকে।
মামলা হয়েছিল ২০১৩ সালের ১৩ এপ্রিল।
ময়মনসিংকে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুনালের বিশেষ পিপি বদর উদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এখন আগের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করছি। নতুন আইন ঘোষণার পর থেকেই পুরাতন মামলাগুলোর দিকে বেশি নজর দেয়া হচ্ছে।’
গত ১৪ অক্টোবর দিনাজপুরে রবি সরেন নামে এক তরুণকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে সাড়ে পাঁচ বছর আগের মামলায়।
জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি (সরকারি কৌঁসুলি) তৈয়বা বেগম বলেন, ‘করোনার জন্য ও সাক্ষী আনার বিষয়গুলোর কারণে এই দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়েছে। তবে নতুন আইন পাস ও ওই সময় কিছু নির্দেশনার ফলে এখন ধর্ষণ মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির কাজ চলছে।’
‘আমরা চিন্তা করছি, জজ চিন্তা করছেন, আসামিপক্ষ তো আর করবে না। ওরা তো লেংধি (দেরি) করতে চাইবে। আমরা চেষ্ট করছি যত দ্রুত সম্ভব মামলাগুলো শেষ করে দেওয়া। সরকারের আদেশের পর থেকেই মূলত এটি শুরু হয়েছে।’
বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সালমা আলী মনে করেন, ধর্ষণ মামলায় তিনটি বিষয় সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, ‘সময়মত চার্জশিট দিতে হবে। সেখানে নিদির্ষ্ট করে সত্য কথা উল্লেখ করতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভিকটিমকে দুর্বলপক্ষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যার ফলে চার্জশিট ইচ্ছামত লেখা হয়।
‘কোর্টে ওভারবারডেন আর একটা বড় বিষয়। এই ওভারবারডেন এর কারণে নারী নির্যাতন মামলাগুলো পিছিয়ে যায়।
‘অনেকক্ষেত্রে আসামিপক্ষ টাকা দিয়ে আইনজীবী কিনে নেয়।’
পুরনো মামলাগুলো নিষ্পত্তিতে একটা কমিটি করার পরামর্শও দিয়েছেন এই নারী অধিকার কর্মী।
সাম্প্রতিক ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের অংশ নেয়া ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি অনিক রায় বলেন, কঠোর সাজা আর দ্রুত নিষ্পত্তি ছাড়াও আরও বেশ কিছু আইনি পরিবর্তন জরুরি।
ধর্ষণ মামলায় সাক্ষ্য আইন ১৮৭৯ এর ১৫৫ (৪) ধারা বিলোপ না করলে ভুক্তভোগীর ন্যায়বিচার পাওয়া কঠিন হয়ে যায় বলে মনে করেন অনিক।
ওই ধারায় বলা আছে, সাক্ষীকে ‘দুশ্চরিত্র’ প্রমাণ করে তার বক্তব্যকে মিথ্যা প্রমাণ করা যায়।
এ ছাড়া ডিএনএ প্রতিবেদন বিবেচনায় নেয়া, তদন্ত চলাকালে ভুক্তভোগীকে মানসিক হয়রানি না করার বিষয়েও জোর দেন অনিক।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ৯৭৫ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে ধর্ষণের পর মৃত্যু হয়েছে ৪৩ জনের। ধর্ষণের পর ১২ জন নারী আত্মহত্যার তথ্যও পেয়েছে সংস্থাটি।
তবে অনেক অভিযোগ থানা পর্যন্ত না পৌঁছানোয় প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে অধিকারকর্মীদের ধারণা।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত ১৬ বছরে ধর্ষণের ঘটনায় ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার থেকে মামলা হয়েছে চার হাজার ৫৪১টি। এর মধ্যে আসামির শাস্তি হয়েছে ৬০টি ঘটনায়।
টানা তিন দিন ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পানির সংকটে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল।
পানি না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা।
এদিকে দুই দিন ধরেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে ৩০০ থেকে ৩৫০ জন রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে ভর্তি থাকেন হাসপাতালে। ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালে রোগী ও স্বজনসহ সহস্রাধিক মানুষ অবস্থান করছেন। প্রতিদিন এখানে ২০ হাজার লিটার পানি প্রয়োজন।
হাসপাতালটিতে শনিবার বেলা ১১টা থেকে শৌচাগারসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
সরেজমিনে সোমবার গিয়ে দেখা যায়, রোগী ও তাদের স্বজনরা বাইরে থেকে পানি এনে জরুরি কাজ সারছেন।
এদিকে পানি সংকটে শৌচাগার থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। হাসপাতালের পক্ষ থেকে পানির জন্য বিকল্প কোনো ব্যবস্থাও করা হয়নি।
শৌচাগারে ব্যবহারের জন্য পানিও লোকজনকে কিনে আনতে হচ্ছে। রোগীর স্বজনরা আশপাশের দোকান থেকে কিনে কিংবা অনেক দূর থেকে হেঁটে ফিল্টার ও বাসাবাড়ি থেকে বোতল, বালতিতে করে পানি নিয়ে আসছেন।
বিশুদ্ধ পানি না থাকায় রোগীরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
জেলার তাড়াইল উপজেলার রাউতি গ্রামের বাসিন্দা শাহিনুল ইসলাম জানান, গত তিন দিন যাবত তার চাচাত বোনকে নিয়ে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
তিনি বলেন, ‘আসার পর থেকে দেখলাম বাথরুমে পানি নেই। হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছে বলার পর তিনি জানিয়েছিলেন আজকের মধ্যেই সমস্যা সমাধান হবে। কিন্তু আজকে তিন দিন হয়ে গেলেও সমস্যাটি সমাধান হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম দিন কোনো রকম আশপাশে গিয়ে জরুরি প্রয়োজন সেরে এসেছি। দ্বিতীয় দিন রোগীসহ বিপদে পড়েছি। পরে নিচে নেমে অটোরিকশা করে শহরের খরমপট্টি এলাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় গিয়ে গোসলসহ প্রয়োজনীয় কাজ সেরে এসেছি।’
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার কাশোরারচর এলাকার বাসিন্দা আব্দুল কাদির বলেন, ‘একটা সরকারি হাসপাতালের টয়লেটে পানি নেই, এটা হতে পারে? ময়লা আর দুর্গন্ধে আশপাশেও থাকা যাচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘অসুস্থ মানুষ সুস্থ হওয়ার জন্য হাসপাতালে আসে। আর এই হাসপাতালের যে পরিবেশ, তাতে একজন সুস্থ মানুষও অসুস্থ হতে সময় লাগবে না।’
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আবুজর গিফারী জানান, রবিবার রাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে খবর পেয়ে দুটি গাড়িতে করে ৮ হাজার ৬০০ লিটার পানি দেওয়া হয়েছে।
গতকাল রাত ১১ টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সেখানে কাজ করেছেন বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের (ভারপ্রাপ্ত) তত্ত্বাবধায়ক ডা. নূর মোহাম্মদ শামসুল আলম সমস্যার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, রবিবার রাতে ফায়ার সার্ভিসের মাধ্যমে যে পরিমাণ পানি আনা হয়েছিল, সে পানি দিয়ে গতকাল রাত থেকে সকাল পর্যন্ত চলছে। এখন আবার জনস্বাস্থ্য থেকে খাবার পানি আনা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ছয় তলায় ১০ ঘোড়ার একটি বড় মোটর রয়েছে। ২০২০ সালে লাগানো মোটরটি প্রায়ই সমস্যা করে। কিন্তু এবার একেবারে বিকল হয়ে যাওয়ায় পানির সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে টানা দুই দিন ধরে পানি না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন চিকিৎসা নিতে আসা শত শত রোগী ও তাদের স্বজনরা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, রোববারের মধ্যেই সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা চলছে।
রোগী নিয়ে গত তিন দিন ধরে হাসপাতালে আছেন নিকলী উপজেলার সিংপুর গ্রামের বাসিন্দা আতিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘বাথরুমে পানি নেই। ময়লা আর দুর্গন্ধে আশপাশেও থাকা যাচ্ছে না। রোগী বা সাথের কারও বাথরুমে যেতে হলে নিচ তলায় যেতে হচ্ছে।’
তিনি জানান, এ অবস্থায় রোগীর চিকিৎসায় সময় দেবেন নাকি পানি আনতে দৌড়াবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না।
হাসপাতালে রোগী নিয়ে এসেছেন সদর উপজেলার নীলগঞ্জের বাসিন্দা জুবেদা খাতুন।
তিনি রোববার সকালে বলেন, ‘অসুস্থ মানুষ সুস্থ হওয়ার জন্য হাসপাতালে আসে। আর এ হাসপাতালের যে পরিবেশ, তাতে একজন সুস্থ মানুষও অসুস্থ হতে সময় লাগবে না।’
৫৫ বছর বয়সী এ নারী জানান, লিফট থাকলেও সেটার ব্যবহার না জানায় বারবার সিড়ি বেয়ে নিচে নামতে হচ্ছে তার।
জেলা সদর উপজেলার কাটাবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীদের সমস্যার দিক একটুও চিন্তা করেন না।’
চিকিৎসার ক্ষেত্রে রীতিমতো অবহেলার শিকার হচ্ছেন দাবি করে এ যুবক বলেন, ‘এখানে নামমাত্র সেবা প্রদান করা হচ্ছে। কারও কোনো সমস্যা হলে সময়মতো ডেকেও ডাক্তার পাওয়া যায় না।’
সদর উপজেলার কাশোরারচর এলাকার বাসিন্দা আবদুল কাদির বলেন, ‘দৈনন্দিন জীবনে সবচেয়ে প্রয়োজন পড়ে পানির। কিন্তু এখানে সেই ব্যবস্থাটাই নেই। একটা মানুষ জরুরি প্রয়োজনে বাথরুমে গিয়ে যখন দেখেন পানিটাই নাই, তখন কোন ধরনের সমস্যায় পড়েন, সেটা তো বুঝতেই পারছেন।
‘এ সমস্যাটা কিছুক্ষণের জন্য হলে হতেই পারে। সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু টানা দুই দিন যাবত এই হাসপাতালে পানি নেই। অথচ কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা নেই।’
জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের (ভারপ্রাপ্ত) তত্ত্বাবধায়ক ডা. নূর মোহাম্মদ শামসুল আলম সমস্যার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, ছয় তলায় ১০ ঘোড়ার একটি বড় মোটর রয়েছে। ২০২০ সালে লাগানো মোটরটি প্রায়ই সমস্যা করে। কিন্তু এবার একেবারে বিকল হয়ে যাওয়ায় পানির সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। আজকের মধ্যেই সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা সদর থেকে এক কিলোমিটার দূরে কুঞ্জবন গ্রাম। এ গ্রামের পূর্ব পাশ দিয়ে বয়ে গেছে আত্রাই নদী।
এ নদীর দুই পারের সড়কের পাশে অসংখ্য গাছ। বহতা সে নদীর স্বচ্ছ জলে পরিযায়ী পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে থাকে চারপাশ।
শীতের শুরু থেকেই অসংখ্য পরিযায়ী পাখি এসে আবাস গড়েছে আত্রাই নদীতীরের পুরো কুঞ্জবন এলাকাজুড়ে। তাদের কিচিরমিচির শব্দে এখন ঘুম ভাঙে নদীর দুই পারের বসবাসকারী মানুষদের। নিরাপদে পাখিগুলোর বসবাসের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সামাজিক সংগঠন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ১১ বছর ধরে নওগাঁর মহাদেবপুরের আত্রাই নদীর কুঞ্জবন এলাকাজুড়ে অতিথি পাখি আসছে শীত মৌসুমে। শীতপ্রধান দেশ থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য পরিযায়ী পাখিরা এসে কুঞ্জবনের নদীতে আশ্রয় নেয়।
শীতের শুরুতে আসতে থাকে পাখি। নদীতে বছরের চার থেকে পাঁচ মাস পাখিগুলো থাকে। সারা দিন নদীতে থাকলেও রাতে তারা ফিরে যায় পাশের রামচন্দ্রপুর, মধুবনসহ কয়েকটি স্থানের গাছে। ভোরে আবারও ফিরে আসে আত্রাই নদীতে।
প্রতিদিনই পরিযায়ী এসব পাখি দেখতে দূরদুরান্ত থেকে আসেন নানা বয়সী দর্শনার্থীরা।
পাখি দেখতে নওগাঁ শহরের তাজের মোড় থেকে এসেছেন সারোয়ার হোসেন দম্পতি।
কথা হলে সারোয়ার বলেন, ‘আত্রাই নদীতে পাখির কলরবে পুরো কুঞ্জবন এলাকা যেন মুখরিত হয়ে গেছে। এখানে এসে আমাদের খুব ভালো লাগছে। পাখিগুলোকে কেউ যেন বিরক্ত না করে, সেই দিকে প্রশাসনের খেয়াল রাখতে হবে।’
নওগাঁ শহরের চকদেবপাড়া থেকে আসা সজিব হোসেন বলেন, ‘প্রতি বছর এখানে অনেক পরিযায়ী পাখির সমাগম ঘটে বলে জানতে পেরে এসেছি। এতগুলো পাখি একসাথে কখনো দেখিনি। খুব ভালো লাগছে এখানে এসে।
‘নদীতে ড্রেজার মেশিন নামিয়ে বা কেউ যাতে পাখিগুলোকে শিকার না করে, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে কর্তৃপক্ষের।’
মহাদেবপুর উপজেলা সদরের সুমন হোসেন বলেন, ‘আমরা কয়েকজন বন্ধু-বান্ধবী মিলে পাখিগুলো দেখতে এসেছি। শীত মৌসুম ছাড়া এখানে এত পাখির বিচরণ হয় না।
‘স্থানীয় সামাজিক সংগঠনের পাশাপাশি যদি সরকারিভাবে পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তাহলে আগামীতে এই এলাকায় পাখিদের আরও বেশি আগমন ঘটবে এবং সেই সাথে এটাকে ঘিরে বিনোদনের কেন্দ্র গড়ে তোলা যেতে পারে বলে মনে করছি।’
কথা হয় স্থানীয় বিচিত্র পাখি উৎপাদন গবেষণা পরিষদ নামের সামাজিক সংগঠনের পরিচালক মুনসুর সরকারের সঙ্গে।
এ পাখিপ্রেমী বলেন, ‘পরিযায়ী পাখিদের নিরাপদ অবস্থানের জন্য নদীর পানিতে বেশ কিছু বাঁশ দিয়ে ঘের তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি উড়ে এসে পানিতে পড়ছে।
‘কেউ গা ভাসিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেউ গা পরিষ্কার করছে। আবার কেউ বাঁশের ওপর বসে আরাম করছে।’
তিনি বলেন, ‘চলতি শীত মৌসুমে বালিহাঁস, সরালি হাঁস, পানকৌড়ি, রাতচোরাসহ প্রায় ১৫ প্রজাতির পরিযায়ী পাখির বিচরণ ঘটেছে আত্রাই নদীতে। এ ছাড়া পিয়াং হাঁস, পাতি সরালি, লেঙজাহাঁস, বালিহাঁস, পাতিকুট, শামুকখোল, পানকৌড়ি, ছন্নি হাঁসসহ প্রায় ১২ জাতের দেশি পাখির সমাগম ঘটেছে।’
মুনসুর সরকার আরও বলেন, ‘কেউ যেন পাখি শিকার বা মাছ শিকার করতে গিয়ে পাখিদের বিরক্ত না করে, সে জন্য আমরা কাজ করছি। মাঝে মাঝেই আমরা মাইকিং করে জনসাধারণকে সতর্ক করছি।
‘সরকারি উদ্যোগ নিয়ে এখানে পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল হতে পারে।’
এ বিষয়ে মহাদেবপুর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শিল্পী রায় বলেন, ‘আত্রাই নদীতে যেসব স্থানে পাখিদের অবাধ বিচরণ আছে, সেই সব স্থানে যাতে কেউ নৌকা দিয়ে মাছ শিকার করার কারণে পাখিদের অবাধ বিচরণে বাধাগ্রস্ত না হয় এবং কেউ যেন পাখি শিকার করতে না পারে, সে বিষয়ে মৎস্য অফিসের পক্ষ থেকে নজরদারি রয়েছে।
‘এ ছাড়া কেউ যদি পাখি শিকার করে, আমরা জানতে পারলে বন বিভাগের সাথে সমন্বয় করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। স্থানীয় সামাজিক সংগঠনগুলোও পাখির অবাধ বিচরণে কাজ করে যাচ্ছে।’
আরও পড়ুন:সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলা থেকে বিশেষ একটা খাবারের খোঁজে নগরের চাঁদনীঘাট এলাকায় এসেছেন বদরুল আলম। তার চাচি যুক্তরাজ্যে থাকেন।
চাচিকে যুক্তরাজ্যে বিশেষ খাবারটি পাঠাবেন বদরুল। এটি আবার চাঁদনীঘাট এলাকা ছাড়া তেমন কোথাও পাওয়া যায় না। তাই বিয়ানীবাজার থেকে প্রায় ৫২ কিলোমিটার দূরে এসেছেন তিনি।
শুনে আশ্চর্য লাগবে, বিশেষ খাবারটি মাটি দিয়ে তৈরি। বিস্কুটের আদলে তৈরি বলে একে ‘মাটির বিস্কুট’ বলে থাকেন অনেকে, তবে সিলেটে খাবারটি ‘ছিকর’ নামে পারিচিত।
বিস্কুটের মতো কামড়ে কামড়ে খাওয়া হয় ছিকর। সিলেট অঞ্চলে ছিকর খাওয়ার প্রচলন অনেক দিনের।
চাঁদনী ঘাট এলাকায় বুধবার বিকেলে কথা হয় বদরুল আলমের সঙ্গে, যিনি বলেন, ‘আমার চাচি লন্ডন থাকেন। সেখান থেকে চাচি অনেকদিন থেকে ছিকর পাঠাতে বলছেন। তাই এটি এখানে কিনতে এলাম।
‘এক কেজি কিনেছি। আগামী সপ্তাহে এক আত্মীয় লন্ডন যাবেন। তার সাথে এগুলো পাঠিয়ে দেব।’
সুরমা নদীর তীরঘেঁষা চাঁদনীঘাট এলাকায় পাশপাশি সিলেটের কয়েকটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। কিন ব্রিজ, আলী আমজদের ঘড়ি, সারদা হলের অবস্থান এখানেই।
সারদা হলের সামনের ফুটপাতে মাটির জিনিসপত্র বিক্রি করেন চার থেকে পাঁচজন বিক্রেতা। তাদের সবার কাছেই পাওয়া যায় এ মাটির বিস্কুট।
বিক্রেতারা জানান, তাদের মূল ক্রেতা নারীরা। বিশেষত গর্ভবতী নারীরা ছিকর খেয়ে থাকেন, তবে দেশের চেয়ে বিদেশে বসবাসরত সিলেটের লোকজনই এটির প্রধান ক্রেতা। সিলেট থেকে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে যায় এ বিস্কুট।
ছিকর কী
ছিকর হচ্ছে পাহাড়ের এঁটেল মাটি দিয়ে তৈরি এক প্রকার পোড়ামাটির বিস্কুট।
উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ছিকর তৈরি প্রথম শুরু হয় হবিগঞ্জে। এরপর এটি সিলেটসহ আশপাশের জেলার ছড়িয়ে পড়ে।
ছিকর শব্দটি এসেছে ফারসি শব্দ ‘ছিয়া’ তথা কালো এবং ‘কর’ (মাটি) থেকে। ছিয়াকর শব্দটিই পরে ছিকর হিসেবে পরিচিতি পায়।
ছিকর কেন খাওয়া হয়
চিকর কেন খাওয়া হয় এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে একেকজন একেক তথ্য দিয়েছেন।
সিলেটের প্রবীণ ও মধ্যবয়সী কয়েকজন নারী ও পুরুষের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, আগে দরিদ্র লোকজন খাবারের বিকল্প হিসেবে পাহাড়ের মাটি পুড়িয়ে তৈরি এ বিস্কুট খেতেন। ছিকরে অনেক খনিজ উপাদান রয়েছে এবং রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে এটি কার্যকর ও শক্তিবর্ধক বলেও জানিয়েছেন তাদের কয়েকজন। তাই খনিজ উপাদানের ঘাটতি কাটাতে গ্রামীণ নারীরা গর্ভাবস্থায় ছিকর খেয়ে থাকেন। এ ছাড়া পান-তামাকের মতো দীর্ঘদিনের অভ্যাসবশতও অনেক প্রবীণ নারী ও পুরুষ ছিকর খেয়ে থাকেন।
নগরের মদিনা মার্কেট এলাকার গৃহিনী লাইলী বেগম পাঁচ বছর আগে সন্তানের জন্ম দেন। গর্ভবতী অবস্থায় তিনি এই ‘মাটির বিস্কুট’ খেয়েছেন।
কেন খেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গর্ভবতী অবস্থায় এটি খাওয়ার ইচ্ছা হয়। তা ছাড়া মুরব্বিরাও খেতে বলেন। তাই খেয়েছি। তবে এতে কোনো উপকার হয়েছে কি না জানি না।’
স্ত্রী লাইলী বেগমের সঙ্গে তখন তার স্বামী মুরাদ আহমদও ছিকর খেয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ‘এটি খেতে মজাই লাগে। মিষ্টি মিষ্টি স্বাদ। তাই একবার খেলে আবার খাওয়ার ইচ্ছা জাগে।’
সিলেটের দক্ষিণ সুরমার রাখালগঞ্জ এলাকার প্রায় ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধা রেখা রানী দাস বলেন, ‘ছিকর শক্তি বাড়ায় ও রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে বলে শুনেছি। আগে তো মানুষজন তেমন ওষুধপত্র খেত না। ডাক্তারের কাছে যাওয়া বা ওষুধ খাওয়ার সামর্থ্যও তখন ছিল না।
‘সে সময় মানুষজন ছিকর খেত। বিশেষ করে প্রায় সব গর্ভবতী নারী এটি খেতেন, তবে এখন ছিকর খাওয়া অনেক কমে গেছে।’
এ জিনিস কেন খাওয়া হয়, তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি চাঁদনীঘাট এলাকার কোন বিক্রেতাই। প্রায় ২০ বছর ধরে এ এলাকায় মাটির জিনিসপত্র ও ছিকর বিক্রি করেন শহিদ আহমদ।
তিনি বলেন, ‘অনেকেই এটি কিনে নেয়, তবে কেন খায় জানি না। শুনেছি এটি খেলে শক্তি বাড়ে ও খাওয়ার রুচি বাড়ে।
‘এ ছাড়া আয়রন ট্যাবলেটের বিকল্প হিসেবেও ছিকর খাওয়া হয়। তাই গর্ভবতী নারীরা এটি বেশি খায়।’
তিনি বলেন, ‘যারা রক্ত বিক্রি করে তাদের অনেকেও ছিকর কিনে খায়।’
এ ব্যাপারে সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্ত বলেন, ‘ছিকরের কোনো উপকারিতা আছে বলে আমার জানা নেই। এটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিতও নয়।’
তিনি বলেন, ‘গর্ভবতী অবস্থায় নারীদের ক্যালসিয়াম ও আয়রনের সাপ্লিমেন্টারি দেয়া হয়, কিন্তু মাটির মধ্যে এই দুই উপাদান নেই। বরং এর মাঝে অনেক ক্ষতিকারক ব্যকটেরিয়া থাকতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তর বা ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়া কোনো কিছু খাওয়াই ঠিক নয়।’
কোথায় ও কীভাবে তৈরি হয় ‘মাটির বিস্কুট’
সিলেটের লালাবাজারের সনাতন পাড়ার সজিব মালাকার প্রায় ৪৫ বছর ধরে ছিকর তৈরি করেন। তার বাবা এবং দাদাও এই কাজ করতেন।
ছিকরের প্রস্তুতপ্রণালী সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘পাহাড়-টিলার তলদেশের এঁটেল মাটি দিয়ে ছিকর তৈরি করা হয়। প্রথমে গর্ত খুঁড়ে পাহাড়ের তলা থেকে লম্বা বাঁশ দিয়ে মিহি মাটি সংগ্রহ করা হয়। এগুলো সারা রাত ভিজিয়ে রেখে নরম করা হয়। তারপর তা মাখিয়ে খাই বানিয়ে মন্ড তৈরি করা হয়।
‘পরে এগুলো কাঠের হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে চ্যাপ্টা করা হয়। এরপর চাকু দিয়ে বিস্কুটের মতো ছোট ছোট করে টুকরা করা হয়। এরপর কাঁচা ছিকরগুলো রোদে দুই-এক দিন শুকানোর পর মাটির চুলায় এগুলো পোড়ানো হয়। ঘণ্টা দুয়েক পর ছিকর কালচে বর্ণ ধারণ করে সুঘ্রাণ ছড়াতে থাকে। এতে গোলাপজলসহ বিভিন্ন সুগন্ধি মেশানো হয়।’
তিনি বলেন, দেশের চেয়ে বিদেশে এটি বেশি বিক্রি হয়। লন্ডনের ক্রেতারা এটি সবচেয়ে বেশি কিনে নেন।
ছিকর এক ধরনের নেশাজাতীয় খাবার উল্লেখ করে সজিব বলেন, ‘সিগারেটের মতো এটিও এক ধরনের নেশাজাতীয় খাবার। দীর্ঘদিনের অভ্যাস থেকে অনেকে এটি খান। সবচেয়ে বেশি খান নারীরা।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলেটের লালাবাজার ও গোয়ালাবাজার, সুনামগঞ্জের ছাতক, হবিগঞ্জের বানিয়াচং, বাহুবল ও মাধবপুর এবং মৌলভীবাজারের কয়েকটি এলাকায় ছিকর তৈরি করা হয়। এসব এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু লোক বংশ পরম্পরায় ছিকর তৈরি ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত, তবে এখন বিক্রি কমে যাওয়ায় বেশির ভাগই এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন।
মৌলভীবাজারের জগৎসী এলাকার ব্যবসায়ী বিষ্ণপদ দে বলেন, ‘আগে শহরের পাশের শব্দকর ও কুমার সম্পদায়ের লোকজন ছিকর তৈরি করতেন। আমাদের ছোটবেলায় ওই সম্প্রদায়ের নারীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছিকর বিক্রি করতেন, তবে এখন আর কেউ বাড়িতে গিয়ে ফেরি করে ছিকর বিক্রি করে না।’
কেমন ব্যবসা
চাঁদনীঘাট এলাকার ছিকর বিক্রেতা শহিদ আহমদ জানান, প্রতি কেজি ছিকর ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি করেন তিনি।
প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ কেজি ছিকর বিক্রি করেন বলে জানান তিনি।
শহিদ আহমদ বলেন, ‘প্রবাসীদের আত্মীয়-স্বজনই বেশির ভাগ ক্রেতা। তারা এগুলো কিনে প্রবাসে তাদের আত্মীয়দের কাছে পাঠান। আবার অনেকে আমাদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশে রপ্তানিও করেন।
‘রপ্তানির জন্য আমরা বিশেষভাবে তৈরি ছিকর দিয়ে থাকি। এগুলোর দাম একটু বেশি হয়।’
শহিদ আমাদের পাশেরই আরেক বিক্রেতা আল কাইয়ুম রনি বলেন, ‘এখন ছিকরের বিক্রি একেবারে কমে গেছে। বয়স্ক মানুষরা এটি কিছু কিনে নেন, তবে কম বয়সীরা এসব প্রায় কিনেনই না। এখন প্রতিদিন ৪/৫ কেজি ছিকর বিক্রি করি।’
লালাবাজারের ছিকরের কারিগর সজিব মালাকার বলেন, ‘আমরা পাইকারি দরে প্রতি কেজি ছিকর ৪০/৫০ টাকা করে বিক্রি করি।
‘আবার বিদেশে পাঠানোর জন্য তৈরি ছিকর প্রতি কেজি ৮০/৯০ টাকায় বিক্রি করি।’
আরও পড়ুন:হাতে নিয়ে চাপ দিলেই ভেঙে গুঁড়ি হয়ে যাচ্ছে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার বলভদ্রপুর, কালিখোলা-বালিয়াডাঙ্গা সড়ক নির্মাণে ব্যবহৃত ইটের খোয়া।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডিজি বাংলার হয়ে স্থানীয় সাবেক এক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য নিম্নমানের এ খোয়া সরবরাহ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিষয়টি টের পেয়ে প্রতিবাদ করলে ওই ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের মারধরের শিকার হতে হয়েছে। এমন অবস্থায় তাদের (স্থানীয়) তীব্র প্রতিবাদে কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাবি, স্থানীয় বিএনপি নেতা ও সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য বাবুল শেখ এ খোয়া সরবরাহ করেন।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সড়কের দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী মো. মোরশেদ বলেন, ‘সরবরাহকারী বাবুল শেখ ভালো খোয়া দেখিয়ে আমাদের নিম্নমানের খোয়া দিয়েছে। উপজেলা প্রকৌশলীর নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা খোয়া অপসারণ শুরু করেছি।
‘ভালো মানের নির্মাণসামগ্রী দিয়েই কাজ করা হবে।’
জায়েদ শেখ নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘খোয়া এত পচা যে, চাপ দিলেই ভেঙে যায়। রাবিশ খোয়া দিয়ে রাস্তা করা যাবে না এটা বললে খোয়া সরবরাহকারী মাহবুবুল হক বাবুল ওরফে বাবুল মেম্বর আমাকে ও আমার ছোট ভাইকে মারধর করে। আমরা তার বিচার চাই।’
স্থানীয় সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য হেমায়েত শেখ বলেন, ‘সড়কটি নির্মাণের শুরু থেকেই মাহবুবুল হক বাবুল শেখ নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি নানা জটিলতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। এখন নিম্নমানের খোয়া দিয়ে রাস্তা করার চেষ্টা করছে।
‘লোকজন বাধা দিলে বিএনপি নেতা পরিচয় দিয়ে তাদের মারধর করে এবং ভয়ভীতি দেখায়। বিএনপি-আওয়ামী লীগ বুঝি না। আমাদের দাবি একটাই–রাস্তা নির্মাণ হবে ভাল খোয়া দিয়ে।’
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য খোয়া সরবরাহকারী মাহবুবুল হক বাবুল ওরফে বাবুলকে মোবাইল ফোনে কল করে পাওয়া যায়নি।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সেই সাথে ঠিকাদারকে সড়কে ব্যবহার করা নিম্নমানের খোয়া অপসারণ করতে বলা হয়েছে। ঠিকাদার নিম্নমানের খোয়া অপসারণ শুরু করেছেন।
‘ভালো মানের নির্মাণসামগ্রী দিয়েই কাজ করতে হবে। সড়কের কাজে কোনোভাবে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করতে পারবে না।’
মোরেলগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কালিখোলা বলভদ্রপুর কালিমন্দির-বালিয়াডাঙ্গা পর্যন্ত দুই কিলোমিটার পিচের সড়ক ও একটি কালভার্ট নির্মাণ করছে। দুই কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ডিজি বাংলা নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি করছে। চলতি বছরের ৩০ জুন কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সময় বৃদ্ধি করেছে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন:ঝালকাঠির নলছিটিতে দুটি স্কুলের পাশে ফসলি জমিতে রয়েছে ‘রিয়াজ ব্রিকস’ নামের একটি ইটভাটা।
এ ভাটা থেকে শব্দ ও পরিবেশ দূষণ হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
শুধু ইটভাটার চুল্লিই নয়, ভাটায় মাটি ও বিক্রিত ইট সরবারহ করতে ব্যবহৃত হচ্ছে অবৈধ ট্রলি গাড়ি। এসব ট্রলির বেপোরোয়া গতি, উচ্চ শব্দ এবং কালো ধোঁয়ায় অতিষ্ঠ দুই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন-২০১৯ অনুযায়ী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক হাজার মিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। এমন আইন থাকলেও সেটা না মেনে নলছিটি উপজেলার সরই গ্রামে দুটি স্কুল ঘেঁষে স্থাপন করা হয় ‘রিয়াজ ব্রিকস’ নামের ইটভাটাটি।
এ ভাটার ৩০০ মিটার দূরত্বে রয়েছে ১৯ নম্বর সরই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এর ৫০০ মিটার দূরত্বে রয়েছে মাটিভাঙা মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
ইট পোড়ানোর চুল্লির (ক্লিন) ধোঁয়া, ইট কাটার মাঠের (ফরাস) ধুলা এবং মালামাল আনা-নেয়ার কাজে ব্যবহৃত বাংলা ট্রলি গাড়ির শব্দে অতিষ্ঠ স্কুলের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক ও কর্মীরা। স্কুলঘেঁষা সড়কে বেপরোয়াভাবে চলাচলরত ইটভাটার ট্রলি (টমটম) গাড়ির শব্দে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান।
প্রাথমিক বিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষ বলছে, ইটভাটার দূষণ থেকে পরিবেশ রক্ষা এবং শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির দিক বিবেচনা করে ভাটার বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা দপ্তরে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে, তবে সেখান থেকে এখনও কোনো প্রতিকার মেলেনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার কুলকাঠি ইউনিয়নের সরই গ্রামে দুটি বিদ্যালয়ের মাঝখানে ফসলি জমির মধ্যেই ‘রিয়াজ ব্রিকস’ নামের এ ইটভাটার অবস্থান। সেখানকার স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ, দুটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ওই বিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের অভিভাবক, আশপাশের ফসলি জমির কৃষকসহ অনেকে সাংবাদিক দেখে নানা অভিযোগ জানালেন।
কীভাবে এখানে অনুমোদনহীন ইটভাটা নির্মাণ করল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সবাই। একই সঙ্গে স্কুলঘেঁষা অনুমোদনহীন ভাটা চালু করার পর প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এমন বাস্তবতায় প্রশাসনকে উৎকোচ দিয়ে এ ইটভাটাটি চালানো হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্ন অনেকের মুখে।
স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের শেষের দিকে গড়ে তোলা হয় ‘রিয়াজ ব্রিকস’ নামের এ ইটের ভাটাটি। নানা জটিলতায় গত তিন মৌসুম এটি বন্ধ থাকলেও মালিক রিয়াজ হোসেন ব্যবসা পরিচালনার জন্য চলতি বছর এটি সুমন ফকির নামের অপর একজনের কাছে ভাড়া দিয়েছেন।
সুমনের দাবি, ভাড়া নয়, তিনি রিয়াজের সঙ্গে ব্যবসায় অংশীদার হয়েছেন।
এ বিষয়ে কথা হয় সরই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। তাদের একজন বলে, ‘ইটের ভাটার জন্য আমরা গ্রামের সুন্দর পরিবেশ থেকে বঞ্চিত। আর স্কুলের সামনে অনেক জোরে টমটম ট্রলি চলাচল করে।
‘স্কুলে আসা এবং ছুটির সময় বের হওয়ার সময় রাস্তা পাহারা দিতে হয়।’
স্কুলের প্রধান শিক্ষক শিরিন আক্তার বলেন, ‘স্কুলের পাশে ইটভাটা বন্ধ এবং শিক্ষার্থীদের চলাচলে ব্যবহৃত সড়কটিতে বেপরোয়া গতিতে ট্রলি চলাচলে নিষেধ করা হয়েছে।
‘ইটভাটা মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় আমরা কিছুই করতে পারছি না, তবুও লিখিত পত্র উপজেলা শিক্ষা অফিসে দিয়েছি।’
রিয়াজ ব্রিকসের সত্বাধিকারী মো. রিয়াজ জানান, তিনি বর্তমানে ভাটাটি সুমন ফকির নামের অন্য একজনের কাছে ভাড়া দিয়েছে।
মোবাইল ফোনে এ প্রতিবেদককে সুমন ফকির বলেন, ‘ভাড়া নয়, আমি রিয়াজের সাথে ব্যবসার পার্টনার হয়েছি।’
অনুমোদন না থাকার কথা স্বীকার করে সুমন বলেন, ‘অনুমোদন চেয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরে আবেদন করেছি।’
পরিবেশ অধিদপ্তর ঝালকাঠি জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আনজুমান নেছা বলেন, “নলছিটি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ‘রিয়াজ ব্রিকস’ নামের একটি ইটভাটার বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংলগ্ন স্থানে ইটভাটা স্থাপনের আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
“এ ছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও লাইসেন্সবিহীন ইটভাটা স্থাপনের কোনো সুযোগ নেই।”
নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া ইটভাটা পারিচালনার কোনো সুযোগ নেই।
‘নলছিটিতে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে শিগগিরই পরিবেশ অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসনের যৌথ অভিযান চালানো হবে।’
আরও পড়ুন:‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কাল রাতে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী যখন নিরীহ বাঙালিদের ওপর সামরিক অভিযান চালানো শুরু করে, তখন আমি তৎকালীন অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের নেতৃত্ব দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলাম। এটি ছিল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আমি বলেছিলাম- আমরা বিদ্রোহ করছি।’
১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত ‘একটি জাতির জন্ম’ শীর্ষক নিবন্ধে এসব কথা বলেছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।
১৯৭৪ সালে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সাপ্তাহিক বিচিত্রা নিবন্ধটি পুনঃপ্রকাশ করে। সাংবাদিক ও লেখক মাহফুজ উল্লাহ রচিত ‘প্রেসিডেন্ট জিয়া অব বাংলাদেশ: এ পলিটিক্যাল বায়োগ্রাফি’ বইয়ে এই নিবন্ধের উল্লেখ রয়েছে।
সাবেক সেনাপ্রধান এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম নেতা মেজর জিয়াউর রহমান তার নিবন্ধে নিজের স্কুলজীবন, পাকিস্তান আমলে সামরিক একাডেমির ক্যাডেট জীবন, পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) অস্থির পরিস্থিতি এবং মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
জিয়াউর রহমান লিখেছেন, ‘স্কুলজীবন থেকেই পাকিস্তানিদের মনোভাব আমাকে ব্যথিত করত। আমি জানতাম, তারা আমাদের গভীরভাবে ঘৃণা করে। আমার অনেক বন্ধুর কাছ থেকে আমি এরকম অনেক গল্প শুনেছি। তাদের পরিবারে যা আলোচনা হতো, তারা স্কুলে এসে আমাদের বলত।
‘তখন থেকেই আমি মনে মনে একটি স্বপ্ন লালন করতাম- যদি সুযোগ পাই, একদিন পাকিস্তানিদের অস্তিত্বের ভিত্তিমূলে আঘাত হানব। গভীর যত্ন ও ভালোবাসার সঙ্গে আমি এই চিন্তাটি লালন করতাম।’
পাকিস্তানি মিডিয়া, বুদ্ধিজীবী, সরকারি কর্মচারী, সেনাবাহিনী এবং সাধারণ জনগণ কীভাবে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনকে তাদের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে প্রচার করেছিল তিনি সে কথাও লিখেছেন।
১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের সময়ের উল্লেখ করে জিয়া লিখেছেন, ‘তখন আমি দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্যাডেট ছিলাম। কিছু পাকিস্তানি ক্যাডেট আমাদের জাতীয় নেতাদের নিয়ে কটূক্তি করে। আমরা এর প্রতিবাদ করি এবং এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়। পরে সিদ্ধান্ত হয় যে তর্কই যথেষ্ট নয়; এটি বক্সিং প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সমাধান করা হবে।’
‘আমি বাঙালিদের জন্মগত অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বক্সিং গ্লাভস পরি। পাকিস্তানিদের পক্ষ থেকে ক্যাডেট লতিফ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। সে শপথ করেছিল আমাকে শিক্ষা দেবে। কিন্তু বক্সিং প্রতিযোগিতা ৩০ সেকেন্ডও স্থায়ী হয়নি। আমার প্রতিপক্ষ মাটিতে পড়ে যায় এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানায়।’
পাকিস্তানি শাসনামলের উল্লেখযোগ্য ও অস্থির ঘটনাগুলো তুলে ধরে জিয়াউর রহমান লিখেন, ‘এরপর এলো সেই কালরাত্রি- ২৫ মার্চ ও ২৬ মার্চের মধ্যবর্তী রাত। রাত ১টায় আমার কমান্ডিং অফিসার আমাকে একটি নৌবাহিনীর ট্রাকে করে চট্টগ্রাম বন্দরে গিয়ে জেনারেল আনসারির কাছে রিপোর্ট করার নির্দেশ দেন।
‘আমাকে জানানো হয়েছিল, নৌবাহিনীর একটি প্রহরী দল (পাকিস্তানি) আমাকে সঙ্গ দেবে এবং আমি চাইলে তিনজন লোক সঙ্গে নিতে পারব। তবে আমার ব্যাটালিয়নের একজন পাকিস্তানি অফিসার আমার প্রহরী হিসেবে থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বন্দরের দিকে রওনা হলাম। কিন্তু আগ্রাবাদে একটি ব্যারিকেডের কারণে থামতে হলো। হঠাৎ মেজর খালেকুজ্জামান ক্যাপ্টেন অলি আহমদের একটি বার্তা নিয়ে এলেন। তিনি আমাকে একটু দূরে নিয়ে মৃদু স্বরে বললেন, ‘ওরা (পাকিস্তানি সেনারা) ক্যান্টনমেন্ট এবং শহরে সামরিক অভিযান শুরু করেছে। অনেক বাঙালিকে হত্যা করেছে।’
এরপর জিয়াউর রহমান দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘আমরা বিদ্রোহ করছি’ এবং সহযোদ্ধাদের পাকিস্তানি অফিসারদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। এরপর তিনি নিজেই তার কমান্ডিং অফিসারের বাড়িতে গিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করেন।
জিয়াউর রহমান লিখেছেন, ‘যখন ব্যাটালিয়নে ফিরে আসি, দেখি সব পাকিস্তানি অফিসারকে গ্রেপ্তার করে একটি ঘরে রাখা হয়েছে। আমি অফিসে যাই এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমআর চৌধুরী ও মেজর রফিকের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। কিন্তু কোনোভাবেই পারলাম না।
‘পরে আমি বেসামরিক বিভাগের টেলিফোন অপারেটরের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাকে অনুরোধ করি জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, কমিশনার, ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের জানাতে যে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অষ্টম ব্যাটালিয়ন বিদ্রোহ করেছে এবং তারা দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করবে।’
মন্তব্য