মফস্বল থেকে ভালো রেজাল্ট করে ঢাকা কমার্স কলেজের বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন জাহিন জাইমা। তবে পড়াশোনার চাপ নিতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি। করোনার সময়ের পড়াশোনার গ্যাপ কাটিয়ে উঠতে ও সেশনজট কমাতে তার কলেজ যে বেশি বেশি ক্লাস-পরীক্ষার চাপ দিচ্ছিল, তা নিতে পারেননি জাইমা।
এক পর্যায়ে মানসিক চাপে শরীর খারাপ হতে শুরু করলে আবার মফস্বলে গিয়ে সাধারণ একটি কলেজে ভর্তি হন এই শিক্ষার্থী। তবে রাজধানীর ভালো কলেজে পড়ার অনেক স্বপ্ন নিয়ে আসা জাইমার সেই কলেজে থাকতে না পারার কষ্ট রয়েই গেছে।
আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে ভর্তি হওয়ার পর অতিরিক্ত পড়াশোনার চাপে খাওয়াদাওয়ার নিয়মেও ব্যাঘাত ঘটে ফজলে শ্রাবণের। শরীরে ধরা পড়ে জন্ডিস। বাধ্য হয়ে তিনি ট্রান্সফার নিয়ে চলে যান নিজের এলাকার একটি কলেজে।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে নেভি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘একই দিন দুই-তিনটা করে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। সব কিছু ভুলে সারা দিন বই নিয়ে থাকতে হয়। এতে কোথাও ১০ মিনিট বসে আড্ডা দেয়ার কথা ভাবা তো দূরে থাক, মানসিক রিফ্রেশমেন্টের জন্যও বাইরে যাওয়ার সাহস হয়ে ওঠে না।
‘মাঝে মাঝে খুব আপসেট হয়ে যাই। হতাশ লাগে। এত চাপে শেষ পর্যন্ত টিকতে পারব কিনা। আমার বন্ধুরাও যারা বিভিন্ন কলেজে রয়েছে সবারই এক অবস্থা। কারও সঙ্গে যোগাযোগ ঠিকমতো হয় না এখন। আগে যেখানে দিনে অন্তত একবার হলেও কথা হতো।’
এসব হতাশা তীব্র আকার ধারণ করলে নানা ধরনের মানসিক সমস্যা হতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, সার্বিক পরিস্থিতিতে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে দেশে। বেড়েছে আত্মহত্যার প্রবণতা।
দেশে সোমবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘সবার মানসিক স্বাস্থ্য ও ভালো থাকাটাই হোক বৈশ্বিক অগ্রাধিকার।' সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও সামাজিক সংগঠন আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে।
অতিরিক্ত স্পর্শকাতরতা এবং প্রত্যাশা
সম্প্রতি আঁচল ফাউন্ডেশন এক সংবাদ সম্মেলনে ‘মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর অ্যাকাডেমিক চাপের প্রভাব এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা’ শীর্ষক এক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে।
ফাউন্ডেশনের সভাপতি তানসেন রোজ বলেন, ‘আমরা গবেষণায় দেখি, গত ৯ মাসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা মারাত্মক বেড়ে গেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আত্মহত্যা করেছেন ৪০৪ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ৫৭, স্কুলের রয়েছে ২১৯ জন, মাদ্রাসার ৪৪ জন ও কলেজপড়ুয়া আছে ৮৪ জন। আত্মহত্যা করাদের মধ্যে ছাত্রী ২৪২ ও ছাত্র ১৬২ জন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল দুটি। এক. আত্মহত্যা কেন করছে। দুই. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চাপ। আত্মহত্যার কারণ হিসেবে দেখা যায় গত দুই বছরে শিক্ষার্থীরা অনেকটা ভঙ্গুর মানসিকতার হয়ে গেছে।’
উদাহরণ দিয়ে তানসেন রোজ বলেন, ‘এ বছর সাত বছরের একটি শিশু আত্মহত্যা করে। শিশুটি বাবার কাছে দুই টুকরো মাংস চাওয়ায় বাবা দেননি। এক টুকরো দিয়েছেন। এটা তার প্রত্যাশার জায়গাকে আঘাত করেছে। বিষয়টি খুব ছোট হলেও তার স্পর্শকাতরতার জন্য সেটা মেনে নিতে পারেনি। এতে সে এমন একটা পথ বেছে নিয়েছে। আরও কিছু ব্যাপার আছে, এসব কাউন্সেলিং এবং বাবা-মায়ের সচেতনার মাধ্যমে কমিয়ে আনা সম্ভব।’
পরিবারের ভাঙন থেকেও বাড়ছে হতাশা
কিছুদিন আগে কয়েক দিনের ব্যবধানে পরপর দুটি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। দুটি ঘটনাই হতাশাজনিত কারণে, যা মানসিক সমস্যার একটি রূপ। আর দুজনই আত্মহত্যা করেন ছাদ থেকে লাফিয়ে। একজন রাজধানীর হলিক্রস স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী পারপিতা ফাইহা। আরেকজন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ছাত্রী সানজানা মোসাদ্দেক।
তীব্র হতাশার কারণে তারা এই পথ বেছে নিয়েছিলেন বলে মত বিশেষজ্ঞদের। এর মধ্যে সানজানার ছিল ডিসথিমিয়া (মানসিক রোগ)।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এইচ এম মাহমুদ হারুন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই ধরনের রোগীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা থাকে। তবে পরিবেশের নেতিবাচক প্রভাবের কারণে তা আরও তীব্র হয়। পারিবারিক অশান্তি তার একটি বড় কারণ।
‘আবার এই রোগ জন্মগতভাবে হয় এটা না। আশপাশের পরিবেশ এই হতাশার কারণ হতে পারে। যেহেতু সানজানার পারিবারিক অশান্তি তীব্র ছিল এবং বাবাই তাকে শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার করতেন বলে জানা গেছে, সে ক্ষেত্রে তার এই প্রবণতা আরও প্রকট হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার একজন রোগী আসেন, যিনি এক সন্তানের মা। ডিভোর্স হওয়ার পর বিয়ে করে নতুন জীবন শুরু করেন তিনি। সেখানে তার সন্তানের সঙ্গে খুব বন্ধুত্বপূর্ণ রিলেশন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সন্তান মায়ের কাছে থাকে। এ ক্ষেত্রে সৎবাবা যদি নিজের সন্তানের মতোই ভালোবাসা দেন, তাহলে ব্রোকেন ফ্যামিলির ব্যাপারটা সে ফিল করে না।’
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মাহমুদ হারুন বলেন, ‘আমাদের মেডিক্যাল টার্মে আছে, কোনো দম্পতির কেউ একজন ডিভোর্স চাইলে সেখানে কাপল থেরাপি কাজ করে না। সেই পরিবারও মনের বিরুদ্ধে সম্পর্ক টিকিয়ে রেখে সন্তানকে একটা স্বাস্থ্যকর পরিবেশ দিতে পারে না। এতেও কিন্তু সন্তান ভালো থাকছে না।
‘সেক্ষেত্রে সন্তানকে এমন একটা পারিবারিক পরিবেশ দিতে হবে, যেন মা-বাবার সেপারেশনকে সে নেতিবাচকভাবে না নিয়ে জীবনেরই একটা স্বাভাবিক অংশ মনে করে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহ এহসান হাবিব বলেন, ‘পরিবার হলো সামাজিকীকরণের প্রথম মাধ্যম। আমাদের জীবনে দীর্ঘ একটি প্রভাব ফেলে আমাদের সমাজ। বাংলাদেশে যে বিষয়গুলো আমরা দেখতে পাচ্ছি, পরিবারের ভাঙন বা মা-বাবার মধ্যে দ্বান্দ্বিক সম্পর্কের প্রভাব। সেটা সন্তানদের ওপর পড়ছে এবং সেই জায়গা থেকে মুক্তি আমরা পাচ্ছি না।
‘এর কারণ হচ্ছে বাচ্চাদের মধ্যে একটা সেন্স অফ ডিপ্রাইভেশন অর্থাৎ বিচ্ছেদের যে অনুভূতি এটা কোনো না কোনোভাবে মা-বাবাই তৈরি করেছেন। আমাদের সমাজে যে মা-বাবা সেপারেশনে যান, তাদের মধ্যে খুব কমসংখ্যকই আছেন, যারা তাদের সন্তানের মানসিক চাহিদাটা পূরণ করতে পারেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা হয়ত অর্থনৈতিক দায়িত্বটা পালন করি। কিন্তু সেই সঙ্গে তাদের মানসিক বিকাশ, মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং সুন্দর একটি সামাজিক পরিবেশ দেয়া, সেই জায়গাগুলোতে আমরা খুব বেশি নজর দেই না। যার ফলে তারা একাকীত্ব অনুভব করে এবং ডিপ্রেশনে চলে যায়। এর থেকে এ রকম আত্মহত্যার প্রবণতা চলে আসতে পারে।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২২-এর জরিপ বলছে, প্রতি বছর বিশ্বে আনুমানিক ৭ লাখ ৩ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে। এ রকম প্রতিটি আত্মহত্যার কারণে আরও ২০ জন আত্মহত্যার চেষ্টা করছে এবং অনেকে আত্মহত্যার গুরুতর চিন্তা রয়েছে। বহু মানুষ তীব্র কষ্টের মধ্যে থাকে। যার ফলে আত্মঘাতী আচরণ তাদের গভীরভাবে প্রভাবিত করে।
সংস্থাটি বলছে, আত্মহত্যায় মৃত্যু জনস্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগ। এটি তাদের আশপাশের লোকদের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে এবং সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপকে উৎসাহিত করতে হবে। তাহলে বিশ্বজুড়ে আত্মহত্যার ঘটনা কমানো সম্ভব।
আরও পড়ুন:চলমান তাপপ্রবাহে সারা দেশের সঙ্গে পুড়ছে রাজধানী ঢাকাও। প্রচণ্ড গরমে দুর্বিষহ নগর জীবন। এ অবস্থায় রাজধানীর সড়ক-মহাসড়কে পানি ছিটাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ডিএনসিসির চিফ হিট অফিসারের পরামর্শে এমন উদ্যোগ নিয়েছে সিটি কর্তৃপক্ষ।
শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বায়ু দূষণ রোধ ও তীব্র দাবদাহে শহরকে ঠাণ্ডা রাখতে ডিএনসিসির ওয়াটার স্প্রে (পানি ছিটানো) কার্যক্রম পরিদর্শন করেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।
এ সময় তিনি বলেন, ‘দুটি স্প্রে ক্যানন প্রধান সড়কে পানি ছিটাবে। এগুলো বেশ বড় হওয়ায় গলির সড়কে প্রবেশ করতে পারবে না৷ গলির সড়কে পানি ছিটানোর জন্য দশটি ব্রাউজার কাজ করবে। এগুলোর মাধ্যমে সড়কগুলো ভিজিয়ে ঠাণ্ডা রাখা হবে।
‘এছাড়াও ডিএনসিসির পার্কগুলোতে স্প্রে ক্যাননের মতো কৃত্রিম বৃষ্টির ব্যবস্থার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছি। এক সপ্তাহের মধ্যে পার্কগুলোতে কৃত্রিম বৃষ্টির ব্যবস্থা করা হবে।’
এ সময় তিনি বলেন, ‘চিফ হিট অফিসার (সিএইচও) বুশরা আফরিনের পরামর্শে চলমান তীব্র দাবদাহে জনগণকে স্বস্তি দিতে সড়কে পানি ছিটানো এবং ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডে বিনামূল্যে খাবার পানি সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘প্রতিটি ওয়ার্ডে তিনটি বিশেষ ভ্যানগাড়ি (৫০০ লিটার পানির ট্যাংক সংবলিত) পথচারীদের পানি পান করানোর জন্য নামানো হয়েছে। ভ্যানগুলো বিশুদ্ধ খাবার পানি নিয়ে ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরবে। এই ভ্যানগুলো ছোট আকারে করা হয়েছে যেন শহরের অলিগলিতে প্রবেশ করতে পারে।’
চিফ হিট অফিসারের কার্যক্রম সম্পর্কে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘চিফ হিট অফিসার আমাদের পরামর্শ দিচ্ছেন। হিট অফিসার একজন একক ব্যক্তি। তিনি তো কাজগুলো বাস্তবায়ন করবেন না। তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু কাজগুলো আমাদের সবাইকে করতে হবে। তার পরামর্শেই জনগণকে স্বস্তি দিতে আমরা এই কাজগুলো করছি।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অনেকে বলছেন যে চিফ হিট অফিসার সিটি করপোরেশন থেকে বেতন পাচ্ছেন। বাস্তবে সিটি করপোরেশন থেকে তিনি একটি টাকাও পান না। এমনকি সিটি করপোরেশনে তার কোনো বসার ব্যবস্থাও নেই।
‘হিট অফিসার নিয়োগ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান অ্যাড্রিয়েন আরশট-রকফেলার ফাউন্ডেশন রেসিলিয়েন্স সেন্টার (আরশট-রক)। প্রতিষ্ঠানটি সারা বিশ্বে সাতজন চিফ হিট অফিসার নিয়োগ করেছে এবং তারা সবাই নারী।’
ওয়াটার স্প্রে পরিদর্শনকালে অন্যান্যের মধ্যে ডিএনসিসি'র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী ও প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ফিদা হাসান উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানীর বনানীতে মাঝ সড়কে চলন্ত অবস্থায় যাত্রীবাহী বাসে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নির্বাপনে কাজ করে।
জানা গেছে, শনিবার বিকেলে জে কে এন্টারপ্রাইজ পরিবহনের একটি বাস বনানী আর্মি স্টেডিয়ামের সামনে একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিলে মোটরসাইকেলের ট্যাঙ্কি বিস্ফোরিত হয়ে বাসটিতে আগুন ধরে যায়।
ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বরত কর্মকর্তা খালেদা ইয়াসমিন জানান, বিকেল ৪টা ২ মিনিটে যাত্রীবাহী একটি বাসে আগুন লাগার খবর আসে। পরে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নির্বাপন করে। প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা-শেরপুর রুটে চলাচল করা জে কে এন্টারপ্রাইজ পরিবহনের বাসটি বনানী আর্মি স্টেডিয়ামের সামনে একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। পরে মোটরসাইকেলটিকে টেনে-হিঁচড়ে বাসটি অনেক দূর নিয়ে আসে। এতে মোটরসাইকেলের তেলের ট্যাঙ্ক বিস্ফোরিত হয়ে বাসটিতেও আগুন লেগে যায়। এ ঘটনায় মোটরসাইকেলের চালক গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
বিএনপির সঙ্গে দাসত্বের তকমা লেগে আছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ক্ষমতা পাওয়ার জন্য বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করে সাবেক ক্ষমতাসীন দলটি।
জাতীয় নেতা শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের ৬২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তিন নেতার মাজারে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এ কথা বলেন তিনি।
বিএনপির বিষয়ে কাদের বলেন, ‘তারা জনগণের সমর্থনকে মূল মনে করে না। তারা মনে করে যে, বিদেশি প্রভুরদের দাসত্ব করলে ক্ষমতা রক্ষা করা যায়, ক্ষমতায় যাওয়া যায়।’
তার অভিযোগ, দাসত্ব করে কীভাবে ক্ষমতায় যাওয়া যায়, সেই দুরভিসন্ধি করছে বিএনপি।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বিএনপিকে গণতান্ত্রিক দল আমি মনে করি না। কারণ তাদের ইতিহাসটাই হলো গণতন্ত্র হত্যার। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কোনো নজির নেই। তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, প্রহসনে পরিণত করেছে এবং গণতান্ত্রিক বিধি-বিধান তারা দলের মধ্যে কোনোদিন মানেনি।
‘আজকে দলটির যে নেতারা বড় কথা বলেন, তারা কবে দলীয় কাউন্সিল করেছে এবং তাদের কোথায় কাউন্সিল হয়েছে? সাত-আট বছর আগে লা মেরিডিয়ানে তাদের কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিং হয়েছে। ৫০১ জনের জাম্বুজেট মার্কা কমিটি। কাজেই যাদের নিজেদের দলের ভেতরেই গণতন্ত্র নেই, তারা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে, এ আশা আমরা করি না।’
তিন নেতার মাজারে শনিবার আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদন করে। প্রথমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে ও পরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ওই সময় উপস্থিত ছিলেন দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা।
পরে সাংবাদিকদের কাছে বাংলার সাধারণ মানুষের কল্যাণে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের অবদান তুলে ধরেন কাদের।
তিনি বলেন, ‘তিনি (শেরো বাংলা) আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন। এ দেশে সাধারণ মানুষের মাঝে যারা রাজনীতিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম জাতীয় নেতা শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক। সাধারণ মানুষকে এই দেশে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিলেন সর্বকালের সবার সেরা বাঙালি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। শেরে বাংলাকে গ্রাম- বাংলার কৃষকরা কোনোদিন ভুলতে পারবে না।
‘তিনি চিরদিন তাদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন প্রজাস্বত্ব আইন এবং ঋণ সালিশি বোর্ড গঠন করে তিনি মহাজনদের নিপীড়ন-অত্যাচার থেকে বাংলার কৃষককূলকে রক্ষা করেছিলেন। সে জন্য তিনি এখনও স্মরণীয় হয়ে আছেন। আজকের দিনে আমাদের যে প্রত্যয়, যে অঙ্গীকার, সেটা হচ্ছে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক—অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনের।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর খিলগাঁওয়ের গোড়ানে খেলতে গিয়ে একটি ভবনের ছাদ থেকে পড়ে এক শিশু নিহত হয়েছে।
শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে পাঁচ তলা ভবনটির ছাদ থেকে পড়ে নিহত হয় সে।
নিহত শিশুর নাম খাদিজা আক্তার (৫)। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন শিশুটির ফুফা মোহাম্মদ ইসহাক মিয়া (২০ বছর)।
খাদিজার বাবা মোহাম্মদ ফয়সাল আহমাদ জানান, দুপুরে পাঁচ তলার ছাদে খাদিজা খেলাধুলা করার সময় ছাদ থেকে নিচে পড়ে যায়। এ সময় খাদিজার ফুফা দৌড়ে ধরতে গেলে তিনিও নিচে পড়ে যান।
তিনি জানান, পরে তাদেরকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় খাদিজা রাত সাড়ে ৮টার দিকে মারা যায় এবং ফারিয়ার ফুফাকে ভর্তি রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া থানা এলাকায়। খিলগাঁওয়ের গোড়ান নবাবীর মোড় বতর্মানে১৪৮ /১ রায়হান সাহেবের বাড়ির ভাড়াটিয়া আমরা।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মহম্মদ বাচ্চু মিয়া বলেন, শিশুটির মরদেহ ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্ত ছাড়া স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে বলে খিলগাঁও থানার সাথে কথা হয়েছে।
গ্যাস পাইপলাইনে জরুরি কাজের জন্য শনিবার সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে।
গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছে। খবর ইএনবির
তিতাস জানায়, যেসব এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে সেগুলো হলো- শনির আখড়া, বড়ইতলা, ছাপড়া মসজিদ, দনিয়া, জুরাইন, ধোলাইরপাড় ও কদমতলী।
এ সময় আশপাশের এলাকায় গ্যাস সরবরাহে চাপ কম থাকতে পারে বলেও জানিয়েছে তিতাস। গ্রাহকদের সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে কোম্পানি।
রাজধানীর মুগদায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একটি ময়লার গাড়ির ধাক্কায় এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে।
মুগদার বড়বাজারের সামনে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো মাহিন আহমেদ (১৩) মতিঝিল সরকারি আইডিয়াল স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল। সে পরিবারের সঙ্গে উত্তর মুগদার মদিনাবাগে একটি বাসায় থাকত।
মাহিনের খলাত ভাই হিমেল জানান, মাহিনের বাবা একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে মাহিন দ্বিতীয়। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল মাহিন, ওই সময় ময়লার গাড়িটি তাকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়।
পরে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে মাহিনের মৃত্যু হয়।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মাসুদ মিয়া জানান, ময়নাতদন্তের জন্য শিশুটির মরদেহ ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে রাখা হয়েছে এবং বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানাকে জানানো হয়েছে।
এ ঘটনায় সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়িটি জব্দ করে চালককে আটক করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:মেট্রোরেলের চলমান প্রকল্পটি সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে স্থানীয় নাগরিক সমাজ।
বৃহস্পতিবার সকালে সাভার উপজেলা পরিষদের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় মেট্রোরেলের এমআরাটি-৫ ও এমআরটি-৬-এর চলমান প্রকল্পটি হেমায়েতপুর থেকে নবীনগর জাতীয় স্মৃতিসৌধ অথবা দিয়াবাড়ি থেকে সাভারের রেডিও কলোনি পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এই প্রকল্পে সরকার যদি কোনোরকম জটিলতা মনে করে তাহলে এমআরটি-৬ প্রকল্প উত্তরা দিয়াবাড়ি থেকে বিরুলিয়া হয়ে সাভার রেডিও কলোনি পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা যেতে পারে। পর্যায়ক্রমে তা নবীনগর জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবিও জানান তারা।
কর্মসূচিতে সড়কের উপর দিয়ে সম্ভব না হলে মাটির নিচ দিয়ে মেট্রোরেলের যে প্রকল্প রয়েছে, সেই প্রকল্পে সাভারকে যুক্ত করার দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধন কর্মসূচির সভাপতিত্ব করেন সাভার নাগরিক কমিটির সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সভাপতি কামরুজামান খান।
তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেলের প্রকল্প সাভার পৌর এলাকার শেষ সীমানা পর্যন্ত সম্প্রসারণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বরাবর আবেদন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিবকে এ ব্যাপারে অবগতপত্র দেয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে রেলমন্ত্রী, সচিব ও মহাপরিচালকে পত্র দিয়ে এবং সরাসরি সবকিছু অবগত করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুবিধাবঞ্চিত সাভারবাসী রেলসেবা পাওয়ার আশায় বুক বেঁধেছে। সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সাভারের লাখ লাখ মানুষ মেট্রেরেলের সুবিধা প্রত্যাশা করেন। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন সাভার উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রোকেয়া হক, সাভার নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষানুরাগী সালাহউদ্দিন খান নঈম, সাভার পৌর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মিজানুর রহমান মাসুদ, সংস্কৃতিকর্মী স্বরণ সাহা, প্রভাত ডি রোজারিও, বন্ধুরহাট যুব সংগঠনের আলোকুর রহমান, জাগরণী থিয়েটারের সভাপতি আজিম উদ্দিনসহ আরও অনেকে।
মন্তব্য