মফস্বল থেকে ভালো রেজাল্ট করে ঢাকা কমার্স কলেজের বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন জাহিন জাইমা। তবে পড়াশোনার চাপ নিতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি। করোনার সময়ের পড়াশোনার গ্যাপ কাটিয়ে উঠতে ও সেশনজট কমাতে তার কলেজ যে বেশি বেশি ক্লাস-পরীক্ষার চাপ দিচ্ছিল, তা নিতে পারেননি জাইমা।
এক পর্যায়ে মানসিক চাপে শরীর খারাপ হতে শুরু করলে আবার মফস্বলে গিয়ে সাধারণ একটি কলেজে ভর্তি হন এই শিক্ষার্থী। তবে রাজধানীর ভালো কলেজে পড়ার অনেক স্বপ্ন নিয়ে আসা জাইমার সেই কলেজে থাকতে না পারার কষ্ট রয়েই গেছে।
আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে ভর্তি হওয়ার পর অতিরিক্ত পড়াশোনার চাপে খাওয়াদাওয়ার নিয়মেও ব্যাঘাত ঘটে ফজলে শ্রাবণের। শরীরে ধরা পড়ে জন্ডিস। বাধ্য হয়ে তিনি ট্রান্সফার নিয়ে চলে যান নিজের এলাকার একটি কলেজে।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে নেভি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘একই দিন দুই-তিনটা করে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। সব কিছু ভুলে সারা দিন বই নিয়ে থাকতে হয়। এতে কোথাও ১০ মিনিট বসে আড্ডা দেয়ার কথা ভাবা তো দূরে থাক, মানসিক রিফ্রেশমেন্টের জন্যও বাইরে যাওয়ার সাহস হয়ে ওঠে না।
‘মাঝে মাঝে খুব আপসেট হয়ে যাই। হতাশ লাগে। এত চাপে শেষ পর্যন্ত টিকতে পারব কিনা। আমার বন্ধুরাও যারা বিভিন্ন কলেজে রয়েছে সবারই এক অবস্থা। কারও সঙ্গে যোগাযোগ ঠিকমতো হয় না এখন। আগে যেখানে দিনে অন্তত একবার হলেও কথা হতো।’
এসব হতাশা তীব্র আকার ধারণ করলে নানা ধরনের মানসিক সমস্যা হতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, সার্বিক পরিস্থিতিতে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে দেশে। বেড়েছে আত্মহত্যার প্রবণতা।
দেশে সোমবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘সবার মানসিক স্বাস্থ্য ও ভালো থাকাটাই হোক বৈশ্বিক অগ্রাধিকার।' সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও সামাজিক সংগঠন আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে।
অতিরিক্ত স্পর্শকাতরতা এবং প্রত্যাশা
সম্প্রতি আঁচল ফাউন্ডেশন এক সংবাদ সম্মেলনে ‘মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর অ্যাকাডেমিক চাপের প্রভাব এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা’ শীর্ষক এক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে।
ফাউন্ডেশনের সভাপতি তানসেন রোজ বলেন, ‘আমরা গবেষণায় দেখি, গত ৯ মাসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা মারাত্মক বেড়ে গেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আত্মহত্যা করেছেন ৪০৪ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ৫৭, স্কুলের রয়েছে ২১৯ জন, মাদ্রাসার ৪৪ জন ও কলেজপড়ুয়া আছে ৮৪ জন। আত্মহত্যা করাদের মধ্যে ছাত্রী ২৪২ ও ছাত্র ১৬২ জন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল দুটি। এক. আত্মহত্যা কেন করছে। দুই. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চাপ। আত্মহত্যার কারণ হিসেবে দেখা যায় গত দুই বছরে শিক্ষার্থীরা অনেকটা ভঙ্গুর মানসিকতার হয়ে গেছে।’
উদাহরণ দিয়ে তানসেন রোজ বলেন, ‘এ বছর সাত বছরের একটি শিশু আত্মহত্যা করে। শিশুটি বাবার কাছে দুই টুকরো মাংস চাওয়ায় বাবা দেননি। এক টুকরো দিয়েছেন। এটা তার প্রত্যাশার জায়গাকে আঘাত করেছে। বিষয়টি খুব ছোট হলেও তার স্পর্শকাতরতার জন্য সেটা মেনে নিতে পারেনি। এতে সে এমন একটা পথ বেছে নিয়েছে। আরও কিছু ব্যাপার আছে, এসব কাউন্সেলিং এবং বাবা-মায়ের সচেতনার মাধ্যমে কমিয়ে আনা সম্ভব।’
পরিবারের ভাঙন থেকেও বাড়ছে হতাশা
কিছুদিন আগে কয়েক দিনের ব্যবধানে পরপর দুটি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। দুটি ঘটনাই হতাশাজনিত কারণে, যা মানসিক সমস্যার একটি রূপ। আর দুজনই আত্মহত্যা করেন ছাদ থেকে লাফিয়ে। একজন রাজধানীর হলিক্রস স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী পারপিতা ফাইহা। আরেকজন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ছাত্রী সানজানা মোসাদ্দেক।
তীব্র হতাশার কারণে তারা এই পথ বেছে নিয়েছিলেন বলে মত বিশেষজ্ঞদের। এর মধ্যে সানজানার ছিল ডিসথিমিয়া (মানসিক রোগ)।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এইচ এম মাহমুদ হারুন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই ধরনের রোগীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা থাকে। তবে পরিবেশের নেতিবাচক প্রভাবের কারণে তা আরও তীব্র হয়। পারিবারিক অশান্তি তার একটি বড় কারণ।
‘আবার এই রোগ জন্মগতভাবে হয় এটা না। আশপাশের পরিবেশ এই হতাশার কারণ হতে পারে। যেহেতু সানজানার পারিবারিক অশান্তি তীব্র ছিল এবং বাবাই তাকে শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার করতেন বলে জানা গেছে, সে ক্ষেত্রে তার এই প্রবণতা আরও প্রকট হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার একজন রোগী আসেন, যিনি এক সন্তানের মা। ডিভোর্স হওয়ার পর বিয়ে করে নতুন জীবন শুরু করেন তিনি। সেখানে তার সন্তানের সঙ্গে খুব বন্ধুত্বপূর্ণ রিলেশন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সন্তান মায়ের কাছে থাকে। এ ক্ষেত্রে সৎবাবা যদি নিজের সন্তানের মতোই ভালোবাসা দেন, তাহলে ব্রোকেন ফ্যামিলির ব্যাপারটা সে ফিল করে না।’
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মাহমুদ হারুন বলেন, ‘আমাদের মেডিক্যাল টার্মে আছে, কোনো দম্পতির কেউ একজন ডিভোর্স চাইলে সেখানে কাপল থেরাপি কাজ করে না। সেই পরিবারও মনের বিরুদ্ধে সম্পর্ক টিকিয়ে রেখে সন্তানকে একটা স্বাস্থ্যকর পরিবেশ দিতে পারে না। এতেও কিন্তু সন্তান ভালো থাকছে না।
‘সেক্ষেত্রে সন্তানকে এমন একটা পারিবারিক পরিবেশ দিতে হবে, যেন মা-বাবার সেপারেশনকে সে নেতিবাচকভাবে না নিয়ে জীবনেরই একটা স্বাভাবিক অংশ মনে করে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহ এহসান হাবিব বলেন, ‘পরিবার হলো সামাজিকীকরণের প্রথম মাধ্যম। আমাদের জীবনে দীর্ঘ একটি প্রভাব ফেলে আমাদের সমাজ। বাংলাদেশে যে বিষয়গুলো আমরা দেখতে পাচ্ছি, পরিবারের ভাঙন বা মা-বাবার মধ্যে দ্বান্দ্বিক সম্পর্কের প্রভাব। সেটা সন্তানদের ওপর পড়ছে এবং সেই জায়গা থেকে মুক্তি আমরা পাচ্ছি না।
‘এর কারণ হচ্ছে বাচ্চাদের মধ্যে একটা সেন্স অফ ডিপ্রাইভেশন অর্থাৎ বিচ্ছেদের যে অনুভূতি এটা কোনো না কোনোভাবে মা-বাবাই তৈরি করেছেন। আমাদের সমাজে যে মা-বাবা সেপারেশনে যান, তাদের মধ্যে খুব কমসংখ্যকই আছেন, যারা তাদের সন্তানের মানসিক চাহিদাটা পূরণ করতে পারেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা হয়ত অর্থনৈতিক দায়িত্বটা পালন করি। কিন্তু সেই সঙ্গে তাদের মানসিক বিকাশ, মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং সুন্দর একটি সামাজিক পরিবেশ দেয়া, সেই জায়গাগুলোতে আমরা খুব বেশি নজর দেই না। যার ফলে তারা একাকীত্ব অনুভব করে এবং ডিপ্রেশনে চলে যায়। এর থেকে এ রকম আত্মহত্যার প্রবণতা চলে আসতে পারে।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২২-এর জরিপ বলছে, প্রতি বছর বিশ্বে আনুমানিক ৭ লাখ ৩ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে। এ রকম প্রতিটি আত্মহত্যার কারণে আরও ২০ জন আত্মহত্যার চেষ্টা করছে এবং অনেকে আত্মহত্যার গুরুতর চিন্তা রয়েছে। বহু মানুষ তীব্র কষ্টের মধ্যে থাকে। যার ফলে আত্মঘাতী আচরণ তাদের গভীরভাবে প্রভাবিত করে।
সংস্থাটি বলছে, আত্মহত্যায় মৃত্যু জনস্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগ। এটি তাদের আশপাশের লোকদের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে এবং সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপকে উৎসাহিত করতে হবে। তাহলে বিশ্বজুড়ে আত্মহত্যার ঘটনা কমানো সম্ভব।
আরও পড়ুন:সাবেক সিনিয়র সচিব আবু আলম শহীদ খানকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। শাহবাগ থানার মামলায় আজ সোমবার রাজধানীর রমনা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সোমবার দুপুর ১২টার দিকে শাহবাগ থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় সাবেক সিনিয়র সচিব আবু আলম শহীদ খানসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, আবু আলম শহীদ খান ১৯৯৬-২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ৫৬৭টি মামলা করেছে ঢাকা
মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ।
এছাড়াও অভিযানকালে ৩২০টি গাড়ি ডাম্পিং ও ১৩৫টি গাড়ি রেকার করা হয়েছে।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সোমবার এ তথ্য জানানো হয়।
এতে আরও বলা হয়, রোববার ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসব মামলা করে।
ঢাকা মহানগর এলাকায় ট্রাফিক শৃঙ্খলা রক্ষায় ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
দূষিত বায়ুদূষণ বাংলাদেশিদের গড় আয়ু ৫ বছর ৫ মাস কমিয়ে দিচ্ছে। বিষাক্ত বায়ুর এই প্রভাব রাজধানী ঢাকায় বিশেষভাবে তীব্র। বায়ুদূষণ এই শহরের মানুষের গড় আয়ু ৬ বছর ৯ মাস কমিয়ে দেয়।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউটের গত সপ্তাহের এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স রিপোর্টে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে বাংলাদেশকে বায়ুদূষণে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ু দূষণ হলো আয়ুর জন্য সবচেয়ে বড় বহিরাগত হুমকি। বাংলাদেশে, যা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশ।
রিপোর্ট অনুসারে, বাংলাদেশের ১৬ কোটির বেশি মানুষের সবাই এমন এলাকায় বাস করে, যেখানে বাতাসে ফাইন পার্টিকুলেট দূষণের বার্ষিক গড় মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা (৫ মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটার) এবং দেশের জাতীয় সীমা (৩৫ মাইক্রোগ্রাম) উভয়ই ছাড়িয়ে গেছে। রাজধানী ঢাকার মতো জায়গায় এই মাত্রা ৭৬ মাইক্রোগ্রামের ওপরে দেখা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশিকা মেনে চললে বাংলাদেশিদের গড় আয়ু ৫.৫ বছর বেশি হতে পারে।’
প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, সরকার সমস্যা সমাধানের জন্য প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বায়ুর মান দ্রুত খারাপ হচ্ছে।
ঢাকার স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য খুবই উদ্বেগের। আমার সন্দেহ আছে, বিশ্বের আর কোনো দেশ এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির সাক্ষী আছে কিনা।’
তিনি বলেন, ‘এখানে বায়ু দূষণ এতটাই মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে, এটি শনাক্ত করার জন্য কোনো গবেষণার প্রয়োজন নেই, কারণ এটি খালি চোখেই দেখা যায়।’
বাংলাদেশের শহরগুলোর বাসিন্দাদের জন্য ‘ধোঁয়াশা’ একটি নিত্যদিনের বাস্তবতা। প্রায় প্রতিদিন সকালেই তাদের ঢেকে রাখে এই ‘ধোঁয়াশা’। কিন্তু আরও বিপজ্জনক হলো, দূষণ যেগুলো চোখ দেখতে পায় না: কণা পদার্থ, PM2.5 — ২.৫ মাইক্রোমিটারের কম প্রশস্ত বায়ুবাহিত ক্ষুদ্র কণা- এগুলো ফুসফুস এবং রক্তপ্রবাহের গভীরে প্রবেশ করে মারত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
১৯৯০-এর দশকের শেষের দিক থেকে বাংলাদেশে PM2.5-এর মাত্রা তীব্রভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২২ সালে করোনা ভাইরাস মহামারির সময়ই কেবল এই মাত্রা কমেছিল। কিন্তু সেই প্রবণতা স্থায়ী হয়নি।
ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘গত বছরের AQLI রিপোর্টে, আমাদের গড় আয়ু ৪.৮ বছর কমেছে, এবং এই বছর তা ৫.৫ বছর হিসাবে রিপোর্ট করা হয়েছে।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। এটি দেখায় যে, রাষ্ট্র তার জনগণের সুরক্ষার জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশ এই প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করেনি, যার অর্থ বাংলাদেশ সরকারও এই প্রতিবেদনের ফলাফলের সঙ্গে একমত। রাষ্ট্র এখানে দায়িত্ব এড়াতে পারে না।’
দূষণের প্রধান উৎস হিসেবে তিনি জীবাশ্ম জ্বালানি এবং ইটভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়ার ক্রমবর্ধমান ব্যবহারকে তালিকাভুক্ত করেন, বিশেষত ইটের জন্য কয়লা বা কাঠ পোড়ানো।
তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর ঢাকার রাস্তায় অতিরিক্ত ১ লাখ যানবাহন চলাচল করে। এই যানবাহনগুলোর অনেকগুলো যথাযথ ফিটনেস পরীক্ষা ছাড়াই চলে। এটি বায়ু দূষণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে আন্তঃসীমান্ত বায়ুদূষণও আমাদের ওপর প্রভাব ফেলছে। খোলা জায়গায় পোড়ানোসহ সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবও একটি বড় কারণ।’
সর্বশেষ বায়ুদূষণ প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় সরকার বছরের শেষ নাগাদ তার প্রচেষ্টা আরও জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যদিও কাজটি সহজ নয়, তবুও পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ু মান ব্যবস্থাপনার পরিচালক ড. জিয়াউল হক স্বীকার করেছেন, ‘বায়ু দূষণের প্রতিটি উৎস’ বাংলাদেশের পরিবেশে বিদ্যমান।
তিনি আরব নিউজকে বলেন, ‘আমরা রাস্তা থেকে ফিটনেস পরীক্ষা ছাড়াই যানবাহনগুলো সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু এই খাতে আমরা এখনো কোনো সাফল্য দেখতে পাচ্ছি না।’
ড. জিয়াউল হক বলেন, ‘যেসব বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান বায়ুদূষণের জন্য দায়ী, আমরা তাদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের আওতায় আনব। তাদের কারখানার চুল্লিতে একটি যন্ত্র স্থাপন করা হবে এবং আমাদের কর্মকর্তারা কেন্দ্রীয়ভাবে নির্গমনের ফলাফল নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবেন। যদি কোনো বিচ্যুতি পাওয়া যায়, তাহলে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে হস্তক্ষেপ করব। ‘বাংলাদেশ পরিষ্কার বায়ু’ প্রকল্পের আওতায় আগামী দুই মাসের মধ্যে এই কাজ শুরু হবে।’
যদিও দূষণের সমস্ত উৎস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়, তবুও কিছু উৎস এখন পর্যন্ত সঠিকভাবে মোকাবিলা করা হয়নি। তিনি বলেন, ‘ঢাকার ক্ষেত্রে আন্তঃসীমান্ত দূষণ ৩০ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশ বায়ুদূষণের জন্য দায়ী। এই পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকার ৩৫ শতাংশ বায়ু দূষণ দেশের বাইরে থেকে আসে।’
তিনি উল্লেখ করেন, ঢাকার বায়ু দূষণের ২৯ শতাংশই বর্জ্য এবং জ্বালানি কাঠ পোড়ানোর কারণে হয়। আমরা এই সমস্যাটি সঠিকভাবে সমাধান করতে পারিনি। আমাদের প্রচেষ্টা সেখানেই আছে।’
সূত্র: আরব নিউজ
রাজধানীর শাহবাগে ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ঘটেছে। এ ঘটনায় ২ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
বুধবার (২৭ আগস্ট) দুপুর দেড়টার দিকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে এই ঘটনা ঘটে।
ব্যারিকেড ভেঙে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ‘যমুনা’র দিকে অগ্রসর হতে চাইলে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। একপর্যায়ে সংঘর্ষ বেঁধে গেলে পুলিশের পক্ষ থেকে সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া হয়।
পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)- সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের একদল শিক্ষার্থী সকাল ১০টার দিকে পূর্বঘোষিত ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি পালনের উদ্দেশ্যে সড়কে অবস্থান নেন। এতে শাহবাগ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
দুপুর দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীরা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে স্থাপিত ব্যারিকেড ভেঙে যমুনার দিকে অগ্রসর হতে চাইলে পুলিশ পানি ছোড়ার পাশাপাশি লাঠিচার্জ শুরু করে। এ সময় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দুই পুলিশ সদস্যও আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এ সময় পুলিশ সদস্যদের সাউন্ড গ্রেনেডও নিক্ষেপ করতে দেখা যায়। পরে বাধা পেয়ে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড়ের মেট্রোরেল স্টেশনের কাছে অবস্থান নেন।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো— ইঞ্জিনিয়ারিং নবম গ্রেড বা সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদে প্রবেশের জন্য সবাইকে নিয়োগ পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে এবং ন্যূনতম বিএসসি ডিগ্রিসম্পন্ন হতে হবে। কোটার মাধ্যমে কোনো পদোন্নতি নয়, এমনকি অন্য নামে সমমান পদ তৈরি করেও পদোন্নতি দেওয়া যাবে না।
টেকনিক্যাল দশম গ্রেড বা উপ-সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদের নিয়োগ পরীক্ষা ন্যূনতম ডিপ্লোমা এবং একই ডিসিপ্লিনে উচ্চতর ডিগ্রিসম্পন্ন বিএসসিদের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।
ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি ডিগ্রি ব্যতীত প্রকৌশলী পদবি ব্যবহারকারীদের বিষয়ে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। নন-অ্যাক্রিডেট বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সগুলোকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আইইবি-বিএইটিই অ্যাক্রিডেশনের আওতায় আনতে হবে।
বুয়েট শিক্ষার্থী জাহিদুল হক বলেন, আমাদের স্পষ্ট দাবি, প্রকৌশল অধিকার আন্দোলনের ৩ দফা বাস্তবায়নের জন্য নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। এ ছাড়া প্রকৌশলী রোকনুজ্জামানকে হত্যার হুমকি দেওয়া ডিপ্লোমা সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
তিন দফা দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো শাহবাগ অবরোধ করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ‘মার্চ টু ঢাকা’ অনুযায়ী আজ (বুধবার) সকাল ১০টা থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রকৌশলের শিক্ষার্থীরা শাহবাগে জড়ো হন। এর ফলে সড়কটির যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো— ইঞ্জিনিয়ারিং নবম গ্রেড বা সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদে প্রবেশের জন্য সবাইকে নিয়োগ পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে এবং ন্যূনতম বিএসসি ডিগ্রিসম্পন্ন হতে হবে। কোটার মাধ্যমে কোনো পদোন্নতি নয়, এমনকি অন্য নামে সমমান পদ তৈরি করেও পদোন্নতি দেওয়া যাবে না।
টেকনিক্যাল দশম গ্রেড বা উপ-সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদের নিয়োগ পরীক্ষা ন্যূনতম ডিপ্লোমা এবং একই ডিসিপ্লিনে উচ্চতর ডিগ্রিসম্পন্ন বিএসসিদের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।
ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি ডিগ্রি ব্যতীত প্রকৌশলী পদবি ব্যবহারকারীদের বিষয়ে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। নন-অ্যাক্রিডেট বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সগুলোকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আইইবি-বিএইটিই অ্যাক্রিডেশনের আওতায় আনতে হবে।
বুয়েট শিক্ষার্থী জাহিদুল হক বলেন, আমাদের স্পষ্ট দাবি, প্রকৌশল অধিকার আন্দোলনের ৩ দফা বাস্তবায়নের জন্য নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। এ ছাড়া প্রকৌশলী রোকনুজ্জামানকে হত্যার হুমকি দেওয়া ডিপ্লোমা সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ৩৪৪টি মামলা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ।
এছাড়াও অভিযানকালে ৩১৩টি গাড়ি ডাম্পিং ও ১১৪টি গাড়ি রেকার করা হয়েছে।
ডিএমপি’র মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, মঙ্গলবার ডিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসব মামলা করা হয়।
ঢাকা মহানগর এলাকায় ট্রাফিক শৃঙ্খলা রক্ষায় ডিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
রাজধানীর মুগদায় মায়ের সঙ্গে অভিমানে ইঁদুর মারার বিষ পান করে সামিয়া আক্তার (১৫) নামে এক স্কুল শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
রোববার (২৪ আগস্ট) দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে অচেতন অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত সামিয়া মুগদা মাল্টিমিডিয়া স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী ও উত্তর মান্ডার এলাকার আজিজুল হকের মেয়ে।
সামিয়ার ভাই সাহিম জানান, সামিয়া একটু রাগী স্বভাবের ছিল। রাতে মায়ের সঙ্গে তুচ্ছ বিষয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে অভিমানে বাসায় রাখা ইঁদুর মারার বিষ পান করে। পরে দ্রুত ঢামেকে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক মিয়া বলেন, ‘নিহত শিক্ষার্থীর মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি মুগদা থানা পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে।
মন্তব্য