দেশের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি। ১৯৯২ সালে যাত্রা শুরু করা এই উচ্চ-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি নিয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আগ্রহ দেখা যায়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টি যেন ডুবতে বসেছে ট্রাস্টি বোর্ডের প্রভাবশালী দুই সদস্য এম এ কাশেম ও আজিম উদ্দীন আহমদের দৌরাত্ম্যে।
অভিযোগ আছে, নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি করে চলেছে কাশেম-আজিম সিন্ডিকেট। তাদের কাছে অসহায় ট্রাস্টি বোর্ডের অধিকাংশ সদস্য। কাশেম-আজিম সিন্ডিকেটের অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ করে ব্যর্থ হয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আর যান না ট্রাস্টি বোর্ডের স্থায়ী সদস্য ব্যবসায়ী আব্দুল আউয়াল।
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত কয়েক বছর কাশেম-আজিম সিন্ডিকেটই ঘুরেফিরে ট্রাস্টি বোর্ডের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় বিলাসবহুল গাড়ি কিনেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি কেনায় অনিয়ম করেছেন, ভর্তি-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন বছরের পর বছর। তাদের এসব অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে বোর্ডের কোনো সদস্য প্রতিবাদ করলেই তাকে কৌশলে কোণঠাসা করে দেয়া হয়। এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়টির দখল নিয়ে আছে এই সিন্ডিকেট।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ তহবিল থেকে ট্রাস্টিদের আর্থিক সুবিধা ও সিটিং অ্যালাউন্সের নামে মোটা অঙ্কের অর্থ গ্রহণ ও বিদেশ ভ্রমণের ঘটনা তদন্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
ইউজিসির তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির আর্থিকসহ সার্বিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনার উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ২৮ বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব পুনর্নিরীক্ষার নির্দেশ দেয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ের মনোনীত প্রতিষ্ঠান দিয়ে।
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি যে ট্রাস্টের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত তার ডিডে বলা আছে, মানবহিতৈষী, দানশীল, জনহিতকর, অরাজনৈতিক, অলাভজনক ও অবাণিজ্যিকভাবে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হবে। ট্রাস্টের অর্থের জোগান দেবে।
জানা গেছে, গাড়িগুলো কেনার সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন ট্রাস্টি এম এ কাশেম। তিনি এ পর্যন্ত চারবার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমান চেয়ারম্যান আজিম উদ্দীন এর আগে তিনবার চেয়ারম্যান ছিলেন।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয় একটি ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে। এই ট্রাস্টি বোর্ড একটি মানবহিতৈষী, দানশীল, জনহিতকর, অরাজনৈতিক, অলাভজনক ও অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান।
কিন্তু আজিম উদ্দীন আহমেদ ও এম এ কাশেম মানবহিতৈষী ও অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানটিকে বেআইনিভাবে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে রূপদান করে শত শত কোটি টাকা বাণিজ্য করছেন। সেই টাকা আত্মসাৎ করেছেন এবং এ ধারা অব্যাহত রেখেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, রাষ্ট্রের স্বার্থে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি প্রতিষ্ঠানে এমন লাগামহীন দুর্নীতি ও বিশ্ববিদ্যালয়টিকে জঙ্গি তৈরির কারখানায় রূপান্তর করা দুই ট্রাস্টি আজিম উদ্দীন ও এম এ কাশেমের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির হাত থেকে প্রতিষ্ঠান ও দেশকে বাঁচানোর দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
সংবাদ সম্মেলনে ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ড. সুফি সাগর সামস্ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই দুই ট্রাস্টির দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, দুই ট্রাস্টি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আশালয় হাউজিং লিমিটেডের কাছ থেকে জমি কিনে প্রায় ২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। ২০১৯ সালে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে ২১ কোটি টাকা অপব্যয় ও আত্মসাৎ করেন। ইউজিসির অনুমোদনের বাইরে ১০টি সেকশন চালু করে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তিপূর্বক বিশাল অঙ্কের টাকা বাণিজ্য করেন এবং এই টাকা বিভিন্নভাবে আত্মসাৎ করেন।
তবে নিউজবাংলার কাছে সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন এম এ কাশেম ও আজিম উদ্দীন।
আরও পড়ুন: ‘দুর্নীতি-জঙ্গিবাদের কবল’ থেকে নর্থ সাউথকে রক্ষার দাবি
দুর্নীতিবাজদের কারণে ক্যাম্পাসেই যান না ট্রাস্টি আব্দুল আউয়াল
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের স্থায়ী সদস্য আব্দুল আউয়াল বুধবার নিউজবাংলাকে অভিযোগ করে জানিয়েছেন, মূলত দুর্নীতিবাজদের কারণেই ক্যাম্পাসে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।
আব্দুল আউয়াল জানান, বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই তারা তিনজন পরিশ্রম করেছেন; অনুমোদনের জন্য দৌড়ঝাঁপ করেছেন। ক্যাম্পাস গড়ে তোলা থেকে শুরু করে সরকারি অনুমোদন সব কাজই করেছেন তারা তিনজন।
কাশেম-আজিম সিন্ডিকেটের দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘যেহেতু তারা দুনীতি করে, তাই আমি ওইদিকে যাই না। ওরাও আমাকে কোনো নোটিশ পাঠায় না। আমি তো ওইখানের পার্মানেন্ট ট্রাস্টি মেম্বার। কাশেম, আজিম, শাহজাহান সিন্ডিকেট মিলে এই দুর্নীতিগুলো করছে। এই কারণে আমি ওইদিকে যাই না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ট্রাস্টি সদস্য তালিকায় নাম নেই কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাকে বাদ দেয়ার ক্ষমতা নেই ওদের। নর্থ সাউথের ২০১০ সালে যে ট্রাস্টি বোর্ড হইছিল, ওইখানে আমার নাম ট্রাস্টি বোর্ডের পার্মানেন্ট মেম্বার হিসেবে আছে। আমাকে বাদ দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না।’
‘কাশেম-আজিমদের আমি পরে নিয়েছি’
আব্দুল আউয়াল আক্ষেপ করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করার মূল লোক আমি। সঙ্গে আরও দুজন ছিলেন, তারা মারা গেছেন। আর এই যে কাশেম-আজিমরা এখন আছে, এদের আমি পরে নিয়েছি।
‘এটা প্রতিষ্ঠা করা, সরকার থেকে পারমিশন নেয়া- সবই আমরা করেছি। পুরো ক্যাম্পাসই আমার হাতে হয়েছে। কিন্তু যখনই তারা চুরি শুরু করল, তখনই আমি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করি। পরে একটা মামলা করি।’
দুর্নীতির প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ট্রাস্টি বোর্ডের এই স্থায়ী সদস্য আরও বলেন, ‘এই যে গাড়িঘোড়া কিনছে ১০ কোটি, ১২ কোটি টাকায়। কিন্তু এটা তো একটা ট্রাস্ট। এটা একটা নন-প্রফিটেবল প্রতিষ্ঠান। এখান থেকে তো ১০ টাকাও কেউ নিতে পারবে না।
আরও পড়ুন: সাউথইস্ট ব্যাংক নিয়ে অপপ্রচারের নেপথ্যে কাশেম-আজিম সিন্ডিকেট
‘কোনো সিটিং অ্যালাউন্সও নিতে পারে না। আমি কখনোই এক টাকাও সিটিং অ্যালাউন্স নিতাম না। কিন্তু এরা নিয়েছে। এখন দেখতেছি, এরা লাখ লাখ টাকা নিচ্ছে। এ থেকেই বোঝা যায়, এদের চরিত্র কী। এসব তো আমার পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব না। তাই আমি যাই না।’
‘বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় ব্যক্তিগত গাড়ি কেনা অবশ্যই অনিয়ম’
অভিযোগ আছে, বোর্ড অফ ট্রাস্টিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় তিন কোটি টাকার গাড়ি কিনেছেন। কিন্তু এটি তো অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত। সে ক্ষেত্রে এটা তারা করতে পারেন কি না?
নিউজবাংলার এমন প্রশ্নে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে স্পষ্ট বলা আছে যে, বিশ্ববিদ্যালয় যত আয় করবে তা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ চালিয়ে যা অতিরিক্ত থাকবে, সেটা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য উন্নয়নকাজ করা হবে।
‘এখানে গাড়ি কেনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থের সঙ্গে সম্পৃক্ত না। ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা যে কমিটমেন্ট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু করেছেন, তার সঙ্গে এটা কোনোভাবেই যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় ব্যক্তিগত গাড়ি কেনা অবশ্যই অনিয়ম। এটা আর্থিক স্বেচ্ছাচারিতা। এখন এগুলোই হচ্ছে আর কী।’
বোর্ড অফ ট্রাস্টির সদস্যরা সিটিং অ্যালাউন্স হিসেবে কখনো কখনো এক লাখ টাকা নিয়েছেন, কখনো কখনো ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন। এটা ইউজিসির প্রতিবেদনের তথ্য। ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা এটা করতে পারেন কি না?
এমন প্রশ্নে ড. আলমগীর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিটিং অ্যালাউন্স নেয়ার যে সংস্কৃতি, সেটা অন্য কোথাও আছে কি না আমার জানা নেই। তবে বাংলাদেশে এটা ব্যাপকভাবে চালু হয়েছে। ট্রাস্টি বোর্ড মিটিংয়ে সিটিং অ্যালাউন্স নেয়াটা যুক্তিযুক্ত না। ইউজিসির নির্দেশনায় বলা আছে, কিছু ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত সিটিং অ্যালাউন্স নিতে পারে, এর বেশি না।’
‘শিক্ষার্থীদের ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছে’
এক প্রোগ্রামের কথা বলে দশটা প্রোগ্রাম চালাচ্ছে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি।
এমন সুযোগ আছে কি না, জানতে চাইলে ইউজিসির এই সদস্য বলেন, ‘এটা তারা কোনোভাবেই করতে পারে না। একটা ডিপার্টমেন্টের অধীনে আন্ডার গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রাম একটাই থাকতে পারবে। তারা যেটা করছে, সেটা সম্পূর্ণ অবৈধ। শুধু তা-ই না, এসব প্রোগ্রামের অধীনে যেসব শিক্ষার্থী সার্টিফিকেট নিচ্ছে, সেগুলোরও কোনো বৈধতা নেই।
‘এভাবে শিক্ষার্থীদের ব্ল্যাইমেইল করা হচ্ছে। এটা যেকোনো ধরনের গুরুতর অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। কারণ কোনো শিক্ষার্থীর জীবন নিয়ে খেলার অধিকার নেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। তারা এটা জেনেশুনে করেছে। এখন ভাব দেখাচ্ছে যে তারা এটা জানে না। এখন অনুমতির জন্য বলছে। এটা হয় নাকি?’
‘সবার মনোরঞ্জন করে চলি, নোংরামি পছন্দ করি না’
এসব অভিযোগের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আজিম উদ্দীন নিউজবাংলাকে বলেন, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি তো শুধু আমাদের দুজনের না। প্রায় ২৬ জন মিলে আমরা এটা প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা সেখানে ট্রাস্টি।
‘আমি চতুর্থবার নর্থ সাউথের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হলাম। এই প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমে আমার কোনো অসুবিধা হয়নি। আমি সবার মনোরঞ্জন করে চলি। এত নোংরামি আমি পছন্দ করি না। আমরা জীবনে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, আমাদের সবাই চেনে।’
আজিম উদ্দীন বলেন, ‘নর্থ সাউথে বাই রোটেশন চেয়ারম্যান হয়। আগে আমরা ১০ বছরে হয়তো বাই রোটেশন হয়ে যেতাম। এখন সদস্য কমে যাওয়ার কারণে আমরা আগে হচ্ছি। আমি চার বছর পরেই চলে আসছি।
‘আগে এত তাড়াতাড়ি আসা সম্ভব হতো না। এটা বাই রোটেশনে হয়। এখানে কোনো ইলেকশন হয় না। এটা আমাদের একটা ট্রাস্ট, আমরা এটা সুন্দরভাবে করে যাচ্ছি।’
‘যখন যে রাজা তখন তাকে সালাম দিতে হয়’
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে এম এ কাশেম দাবি করেন, তার সময়ে কোনো গাড়িই কেনা হয়নি। কোনো রকম দুর্নীতি হয়নি।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমার সময় কোনো গাড়িই কেনা হয় নাই। কোনো টাকাও দেয়া হয় নাই। কোনো রকম দুই নম্বর কাজও হয় নাই।’
এম এ কাশেম এ সময় পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, কিছু লোক তাদের ব্যাপারে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তবে সব সরকারের সঙ্গেই তার সুসম্পর্ক ছিল। এখনো আছে।
এম এ কাশেম বলেন, ‘যখন যে রাজা তখন তাকে সালাম দিতে হয়। যখন এরশাদ ছিল তখন তাকে সালাম দিয়েছি, যখন খালেদা ছিল তখন তাকে দিয়েছি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে দিয়েছি, এখনো দিচ্ছি। দান-অনুদানেও জড়িত আছি।’
১৯ জুন ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) এর ১৭তম বার্ষিক সিনেট সভা বিইউপির বিজয় অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিইউপির উপাচার্য ও সিনেট চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ মাহ্বুব-উল আলম, বিএসপি, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, এমফিল, পিএইচডি।
সভার শুরুতে বিইউপির উপাচার্য ও সিনেট চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ মাহ্বুব-উল আলম বিদায়ী সদস্যদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং নবনিযুক্ত সদস্যদের স্বাগত জানান। পরে বিইউপির ট্রেজারার এয়ার কমডোর মোঃ রেজা এমদাদ খান, জিইউপি, বিইউপি, এনডিসি, পিএসসি, জিডি(পি), ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট ১৩৪ কোটি ৮ লক্ষ টাকা ও ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের ১৩৪ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন।
সিনেট সদস্যগণ ট্রেজারার এর বক্তৃতার ওপর আলোচনা করেন এবং সর্বসম্মতিক্রমে বাজেট প্রস্তাব অনুমোদন করেন। এছাড়াও সিনেট সভায় ১৭তম বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপিত ও সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়। ১৭তম বার্ষিক সিনেট সভাটি সার্বিকভাবে সঞ্চালনা করেন বিইউপির রেজিস্ট্রার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ রাব্বি আহসান, এনডিসি, পিএসসি।
সভায় সিনেট চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মাহ্বুব তাঁর বক্তব্যে বলেন, বিইউপি বয়সে নবীন হলেও এর শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও গবেষকগণের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ ও গবেষণা ভিত্তিক কার্যক্রমের অর্জনসমূহ জাতীয় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সুনাম বয়ে আনছে। যুগোপযোগী শিক্ষা প্রদান, গবেষণা ও উদ্ভাবনী কার্যক্রমে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নিত হওয়ার লক্ষ্যে অত্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক একটি সুনির্দিষ্ট Academic Strategic Plan –২০৫০ প্রণয়ন করা হয়েছে।
Academic Strategic Plan এর মাধ্যমে পাঠ্যক্রমের আধুনিক মান নির্ধারণ, Outcome Based Education (OBE) কারিকুলাম প্রনয়ণ, গবেষণা, উদ্ভাবন, প্রকাশনা ও গবেষণা সহায়তার সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
মাননীয় উপাচার্য সকলকে অবহিত করেন যে বিইউপি’র গবেষণাভিত্তিক অগ্রযাত্রায় BUP Research Centre (BRC) অংঙ্গীভূত ফ্যাকাল্টি ও অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে গবেষণা, উদ্ভাবন ও পরামর্শমূলক কার্যক্রমে গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে কাজ করছে। 'Inspiring Innovation for Advancing Knowledge' শ্লোগানকে ধারণ করে, BUP Research Centre, গবেষকদের মানসম্মত গবেষণায় উৎসাহ দিচ্ছে এবং শিল্প-প্রতিষ্ঠান ও একাডেমিয়ার মধ্যে সংযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
এছাড়াও তিনি উল্লেখ করেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষকদের গবেষণালব্ধ জ্ঞান প্রসারের উদ্দেশ্যে বিইউপি থেকে ৫টি জার্নাল প্রতিবছর নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে যা সকলের মাঝে সমাদৃত। সিনেট চেয়ারম্যান আরও উল্লেখ করেন যে, শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পাশাপাশি একজন সুশৃঙ্খল, নৈতিকতা সম্পন্ন সু-নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিইউপি বদ্ধপরিকর এবং সে লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের চারিত্রিক গুণাবলি ও আত্মিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সকল প্রোগ্রামের পাঠ্যক্রমে নৈতিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে Need Based Education - কেও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন যে, আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের মানসম্মত কারিকুলাম ও শিক্ষা পরিবেশের পাশাপাশি বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক সান্নিধ্যের গুরুত্বকে সামনে রেখে বিইউপি'তে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, নবপ্রজন্মের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ, সততা, চরিত্র গঠন ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং দেশপ্রেম জাগ্রত করতে পড়াশোনার পাশাপাশি বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য, জাতীয় দিবসগুলোর তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য তুলে ধরে বিইউপি’র বিভিন্ন আলোচনা সভা, সিম্পোজিয়াম, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনের কথা উল্লেখ করেন।
এই সিনেট সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং বিইউপির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউএফটি) এ শুরু হতে যাচ্ছে ভর্তি মেলা, যা চলবে আগামী ২২ জুন থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত। ২০২৫ সালের ফল সেমিস্টারকে কেন্দ্র করে আয়োজিত এই মেলায় শিক্ষার্থীরা পাবেন ভর্তি ফি'তে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং বিশেষ স্কলারশিপের সুবিধা।
বিশ্বমানের শিক্ষা, আধুনিক প্রযুক্তি ও বাস্তবমুখী অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে বিইউএফটি ইতোমধ্যে দেশের অন্যতম শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এখানে ফ্যাশন ডিজাইন, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের পাশাপাশি ব্যবসায় প্রশাসন, ইংরেজি, কম্পিউটার সায়েন্স ও পরিবেশ বিজ্ঞানের মতো চাহিদাসম্পন্ন বিষয়গুলোতে শিক্ষা দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাসে রয়েছে অত্যাধুনিক ল্যাব, প্রফেশনাল ডিগ্রি, ডিপ্লোমা ও সার্টিফিকেট কোর্সের ব্যবস্থা, যেখানে ৫০টিরও বেশি ল্যাব, ২০টিরও বেশি প্রফেশনাল প্রোগ্রাম এবং দক্ষ শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে শেখার সুযোগ পান। পাশাপাশি দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যুক্ত থেকে শিক্ষার্থীরা ইন্টার্নশিপ ও চাকরির সুযোগও পান।
বিইউএফটির বৈশ্বিক সংযোগও শিক্ষার্থীদের জন্য বড় একটি সুযোগ। অস্ট্রেলিয়া, চীন, কোরিয়া, জার্মানি সহ ৩০টিরও বেশি দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম এবং যৌথ গবেষণা কার্যক্রমের সুযোগ রয়েছে। ফলে বিদেশে পড়াশোনা এবং স্কলারশিপ পাওয়ার পথও খুলে যায়।
শুধু একাডেমিক নয়, বিইউএফটি শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ২২টি স্টুডেন্ট ক্লাব, গবেষণা, ফ্যাশন শো, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার সুযোগ। এখানকার সাবেক শিক্ষার্থীদের অনেকেই ইতোমধ্যে দেশ-বিদেশে সফল ক্যারিয়ার গড়ে তুলেছেন।
বিশেষায়িত এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তি হয়ে তরুণ শিক্ষার্থীরা গড়তে পারেন তাদের স্বপ্নের ভবিষ্যৎ। ভর্তি মেলায় অংশ নিয়ে ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা ও কোর্স সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সুযোগ রয়েছে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য।
বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ একাডেমি অফ সায়েন্স গত ১৮ মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে, ১৬ তম কাউন্সিল সভায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য, অধ্যাপক ড. এ. বি. এম. বদরুজ্জামানকে ফেলো হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করেছেন। এই মর্যাদাপূর্ণ সম্মাননা প্রকৌশলবিদ্যায় তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান এবং বাংলাদেশ ও দেশের বাইরে তাঁর প্রকৌশল ও বৈজ্ঞানিক মেধাকে স্বীকৃতি দেয়। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের ডিসটিংগুইশড অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে, যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল পরিবেশ বিজ্ঞান। তিনি আর্সেনিক কন্টামিনেশন, সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট, সারফেস এন্ড গ্রাউন্ড ওয়াটার কোয়ালিটি মডেলিং, এনভায়রনমেন্টাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, হেভি মেটাল স্পিসিয়েশন ও ট্রান্সপোর্টেশান ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণা করেন। গ্রাউন্ড ওয়াটারের আর্সেনিক দূষণ এবং প্রতিরোধের মডেলের উপর বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ২০১২ সালে প্রিন্স সুলতান বিন আব্দুল আজিজ পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি মালয়েশিয়ান ইনভেনশন এন্ড ডিজাইন সোসাইটি কর্তৃক প্রদত্ত আইটেক্স গোল্ড মেডেল লাভ করেন। প্রফেসর বদরুজ্জামান বৈজ্ঞানিক জার্নালগুলোতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রকাশনা করেছেন যা তাঁর গবেষণার ক্ষেত্রে একজন উদীয়মান গবেষক হিসেবে তাঁর পান্ডিত্য নির্দেশ করে। তিনি এখন পর্যন্ত মোট ইমপেক্ট ফ্যাক্টর স্কোর ৪২৫, ৬,০৭৩ টি সাইটেশন, এইচ সূচক ৩১, আই ১০ সূচক ৪৮ সহ চিত্তাকর্ষক মেট্রিকস অর্জন করেছেন। বৈজ্ঞানিক ও প্রকৌশল অনুসন্ধানে তাঁর দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্ব এবং পরামর্শ কেবল প্রকৌশল বিদ্যাকে সমৃদ্ধি করেনি বরং গবেষকদের একটি নতুন প্রজন্মকে জ্ঞান এবং আবিষ্কারের সন্ধান শুরু করতে অনুপ্রাণিত করেছে। প্রফেসর বদরুজ্জামান বিভিন্ন কনফারেন্স সেমিনার I ওয়ার্কশপে e³…Zv প্রদানের মাধ্যমে তাঁর জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করে থাকেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটিতে, এবং ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট অস্টিন-এ ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য
দীর্ঘদিন থেকে চরম অনিশ্চয়তা ও হতাশার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পরিসংখ্যান বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীরা। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এমএস পরীক্ষার ফোলাফল প্রকাশ করা হয়নি ছয় মাসেও। ফলে উচ্চশিক্ষা, চাকরি ও স্কলারশিপের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেক শিক্ষার্থী। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিভাগীয় সভাপতির অসহযোগিতা ও প্রশাসনিক জটিলতাকে কেন্দ্র করে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে এবং বিভাগজুড়ে তৈরি হয়েছে এক ধরনের অস্থিরতা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, স্নাতকোত্তর ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এমএস পরীক্ষা ২০২২ শুরু হয় ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর এবং শেষ ১ ডিসেম্বর। এই পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটির সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক ড. সোমা চৌধুরী বিশ্বাস।
কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন অধ্যাপক মো. মনিরুল ইসলাম, অধ্যাপক মো. রোকনুজ্জামান এবং সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ভূঞা। পরীক্ষা শেষে চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি ‘লিভ প্রিপারেটরি টু রিটায়ারমেন্ট’ (এলপিআরে) গমন করেন অধ্যাপক ড. সোমা চৌধুরী বিশ্বাস। ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরীক্ষা কমিটির সভাপতির পদটি শূন্য হয়ে যায়।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়মানুযায়ী, অ্যাকাডেমিক কমিটির মাধ্যমে নতুন সভাপতি নিযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতিতে কমিটির অন্য সদস্যরা দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগীয় সভাপতি অধ্যাপক চন্দন কুমার পোদ্দারকে একাধিকবার অনুরোধ করেন বিষয়টি অ্যাকাডেমিক কমিটির সভায় আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য। তবে তিনি তা করতে অস্বীকৃতি জানান। সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ২৪ এপ্রিল এক জরুরি সভায় পরীক্ষা কমিটি বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ও কমিটির সদস্য অধ্যাপক মো. মনিরুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে মনোনীত করে ফল চূড়ান্তকরণের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। তিনি দায়িত্ব পালন করে যথানিয়মে ফলাফল প্রস্তুতও করেন। তবে তা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে জমা দিলে, অ্যাকাডেমিক কমিটির অনুমোদন ছাড়া সভাপতি মনোনীত হওয়ায় পরীক্ষার ফলাফল গ্রহণ ও প্রকাশে অপারগতা প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ। এতে শিক্ষার্থীরা পড়েছেন চরম দুরবস্থায়।
একাধিক শিক্ষার্থী জানান, তারা উচ্চশিক্ষা, চাকরি ও স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারছেন না। অনেকে দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও শুধু ফলাফল না পাওয়ার কারণে সুযোগ হারাচ্ছেন। এছাড়া পূর্ববর্তী ব্যাচের ফলাফল প্রকাশ না হওয়ায় ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ফরম পূরণ এবং স্নাতকোত্তর পরীক্ষাও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রশাসনিক জটিলতায় তাদের পড়াশোনার স্বাভাবিক অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে, যা মানসিক চাপে ফেলে দিচ্ছে তাদের। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী হৃদয় আহমেদ বলেন, ‘আমাদের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি অবসরে যাওয়ার পর পদটি শূন্য হয়ে পড়ে। ফলে বাকি সদস্যরা আমাদের ফলাফল প্রকাশ করতে পারছিলেন না। অন্যদিকে, চেয়ারম্যান স্যার জানিয়েছেন, সিনিয়র কোনো সদস্য চাইলে ফল প্রকাশ করতে পারেন; কিন্তু এই বিষয়টি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। ফলে ফলাফল না হওয়ায় শুধু আমাদের ব্যাচ নয়,
পরবর্তী ব্যাচগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সোহেল মিয়া নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের ফল প্রকাশে দীর্ঘবিলম্বের মূল কারণ চেয়ারম্যান স্যারের অসহযোগিতা। পরীক্ষা কমিটি প্রায় দুই মাস আগে ফলাফল প্রস্তুত করলেও তা এখনো প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। কারণ, চেয়ারম্যান স্যার অ্যাকাডেমিক মিটিংয়ের মাধ্যমে নতুন পরীক্ষা কমিটি পুনর্গঠন করেননি। মেহরাব সাকিব নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ফলাফল প্রকাশ না হওয়ায় আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ চাকরির আবেদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। পাশাপাশি এক ধরনের মানসিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে সময় পার করছি। শিক্ষক ও প্রশাসনের উচিত এ বিষয়ে
দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরীক্ষা কমিটির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. সোমা চৌধুরী বিশ্বাস বলেন, ‘আমি এলপিআরে ‘অবসর পূর্ব ছুটি’ যাওয়ার সময় পরীক্ষা কমিটির অন্য সদস্যদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছি। সিনিয়র সদস্য হিসেবে আমি মনিরুল ইসলাম স্যারকে ফলাফলে স্বাক্ষরের অনুরোধ করি। তবে তিনি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর থেকে আনুষ্ঠানিক চিঠি না পাওয়া পর্যন্ত স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানান। শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে, তা এড়ানো যেত যদি বিভাগীয় সভাপতি সময়মতো অ্যাকাডেমিক কমিটির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন।’ বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ও কমিটির সদস্য অধ্যাপক মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘অধ্যাপক চন্দন কুমার পোদ্দারকে একাধিকবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তিনি অ্যাকাডেমিক কমিটির সভা আহ্বান করেননি। তিনি নতুন সভাপতি নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণে ইচ্ছাকৃতভাবে অবহেলা করেছেন। যার মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি-বিধান লঙ্ঘন করেছেন। তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হওয়ায় ফল প্রকাশে অনিবার্যভাবে বিলম্বিত হয়েছে। এর মাধ্যমে তিনি শিক্ষার্থীদের কল্যাণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্বের প্রতি অসচেতনতা প্রদর্শন করেছেন। আমাদের ইচ্ছে থাকার পরও আমরা ফলাফল প্রকাশ করতে পারিনি। কারণ ভবিষ্যতে আইনি জটিলতা দেখা দিতে পারে।’
৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার (আবশ্যিক ও পদসংশ্লিষ্ট বিষয়) পুনর্নির্ধারিত সময়সূচি প্রকাশ করেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রকাশিত সূচি অনুযায়ী, আগামী ২৪ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত আবশ্যিক বিষয় এবং ১০ আগস্ট থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত পদ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
পরীক্ষাগুলো ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানায় পিএসসি। এর আগে ৪৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা ৮ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। পরে পরীক্ষার্থীদের দাবির মুখে তা স্থগিত করা হয়। গত ৯ মে ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারির ফল প্রকাশিত হয়। এতে ১০ হাজার ৬৩৮ জন উত্তীর্ণ হন।
২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর ৪৬তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এ বিসিএসে ৩ হাজার ১৪০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। সবচেয়ে বেশি নেওয়া হবে স্বাস্থ্য ক্যাডারে সহকারী সার্জন ১ হাজার ৬৮২ জন, সহকারী ডেন্টাল সার্জন ১৬ জন, শিক্ষা ক্যাডারে শিক্ষায় ৫২০ জন, প্রশাসন ক্যাডারে ২৭৪ জন, পররাষ্ট্রে ১০ জন, পুলিশে ৮০ জন, আনসারে ১৪ জন, মৎস্যে ২৬ জন ও গণপূর্তে ৬৫ জনকে নেওয়া হবে। মোট ৩ হাজার ১৪০ শূন্য পদের বিপরীতে ৩ লাখ ৩৮ হাজার আবেদন জমা পড়ে।
এখন থেকে একজন গ্রাহক সর্বাধিক ১০টি মোবাইল ফোন সিম ব্যবহার করতে পারবেন। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গতকাল শনিবার বিটিআরসির এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, আগে একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ ১৫টি সিম নিবন্ধন করতে পারতেন। তবে নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন থেকে সর্বোচ্চ ১০টি সিমই নিবন্ধন করা যাবে।
বিটিআরসি জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক অনুশীলন এবং জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থ বিবেচনা করে একজন গ্রাহকের নামে সর্বোচ্চ নিবন্ধনযোগ্য সিম সংখ্যা ১৫ থেকে দশে কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। সংস্থাটি আরও জানায়, সর্বোচ্চ ১০টি ব্যক্তিগত সিম নিবন্ধনের সীমা নির্ধারণ করা হলে প্রায় ২৬ লাখ গ্রাহকের মোট ৬৭ লাখ সিম বন্ধ করতে হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিদেশে উচ্চশিক্ষা অর্জনের স্বপ্ন অনেকেরই থাকে, কিন্তু এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে প্রয়োজন হয় সঠিক দিকনির্দেশনা ও দক্ষ সহযোগিতার। ঠিক এখানেই NiT Academy Global তার অনন্য ভূমিকা রাখছে। রাজশাহী ভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষার সুযোগ করে দিচ্ছে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য। তারা শুধুমাত্র ভিসা প্রসেসিং বা অ্যাপ্লিকেশনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং একজন শিক্ষার্থীর পুরো উচ্চশিক্ষা যাত্রার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করে।
NiT Academy Global শিক্ষার্থীদের প্রথমে উপযুক্ত কোর্স ও বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নিতে সহায়তা করে, যা তাদের আগ্রহ ও ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এরপর শুরু হয় আবেদন প্রক্রিয়া, যেখানে প্রতিটি ডকুমেন্ট প্রস্তুত থেকে শুরু করে আবেদনপত্র সঠিকভাবে জমা দেওয়ার বিষয়েও তারা সহায়তা করে। এছাড়া ভিসা প্রক্রিয়ায় পূর্ণ সহায়তা, সাক্ষাৎকারের প্রস্তুতি এবং প্রয়োজনীয় কনসালটেন্সি সরবরাহ করা হয়। যারা আর্থিকভাবে কিছুটা পিছিয়ে আছেন, তাদের জন্য রয়েছে বৃত্তি সংক্রান্ত পরামর্শ ও সহায়তা।
বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশে উচ্চশিক্ষার জন্য NiT Academy Global শিক্ষার্থীদের পাঠানোর ব্যবস্থা করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, জাপান, চীন, ফিনল্যান্ড, রাশিয়া, ফ্রান্স এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত (বিশেষ করে দুবাই)।
NiT Academy Global শুধু একাডেমিক সাপোর্টেই সীমাবদ্ধ নয়, তারা প্রাক-ভ্রমণ সহায়তা, এয়ার টিকেট বুকিং, এয়ারপোর্ট পিকআপ ও হোস্টেল/বাসস্থানের ব্যবস্থাও করে থাকে। এক কথায়, বিদেশে যাওয়ার শুরু থেকে সেখানকার স্থায়ীভাবে থিতু হওয়ার পর্যায় পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে তারা শিক্ষার্থীদের পাশে থাকে।
প্রতিষ্ঠানটির সেবা গ্রহণ করে অনেক শিক্ষার্থী ইতিমধ্যেই বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য স্থান পেয়েছেন। কেউ যুক্তরাজ্যে, কেউ কানাডায়, কেউবা আবার জাপান কিংবা অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করছেন। তাদের সাফল্যই NiT Academy Global-এর কার্যক্রমের সফলতা প্রমাণ করে।
যোগাযোগ:
ফোন: +8801612751894
ইমেইল: [email protected]
ঠিকানা: হাউস-১২২, প্রতিতির রান্নাঘর বিল্ডিং, গণকপাড়া, বোয়ালিয়া, রাজশাহী।
মন্তব্য