দেশের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি। ১৯৯২ সালে যাত্রা শুরু করা এই উচ্চ-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি নিয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আগ্রহ দেখা যায়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টি যেন ডুবতে বসেছে ট্রাস্টি বোর্ডের প্রভাবশালী দুই সদস্য এম এ কাশেম ও আজিম উদ্দীন আহমদের দৌরাত্ম্যে।
অভিযোগ আছে, নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি করে চলেছে কাশেম-আজিম সিন্ডিকেট। তাদের কাছে অসহায় ট্রাস্টি বোর্ডের অধিকাংশ সদস্য। কাশেম-আজিম সিন্ডিকেটের অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ করে ব্যর্থ হয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আর যান না ট্রাস্টি বোর্ডের স্থায়ী সদস্য ব্যবসায়ী আব্দুল আউয়াল।
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত কয়েক বছর কাশেম-আজিম সিন্ডিকেটই ঘুরেফিরে ট্রাস্টি বোর্ডের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় বিলাসবহুল গাড়ি কিনেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি কেনায় অনিয়ম করেছেন, ভর্তি-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন বছরের পর বছর। তাদের এসব অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে বোর্ডের কোনো সদস্য প্রতিবাদ করলেই তাকে কৌশলে কোণঠাসা করে দেয়া হয়। এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়টির দখল নিয়ে আছে এই সিন্ডিকেট।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ তহবিল থেকে ট্রাস্টিদের আর্থিক সুবিধা ও সিটিং অ্যালাউন্সের নামে মোটা অঙ্কের অর্থ গ্রহণ ও বিদেশ ভ্রমণের ঘটনা তদন্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
ইউজিসির তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির আর্থিকসহ সার্বিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনার উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ২৮ বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব পুনর্নিরীক্ষার নির্দেশ দেয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ের মনোনীত প্রতিষ্ঠান দিয়ে।
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি যে ট্রাস্টের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত তার ডিডে বলা আছে, মানবহিতৈষী, দানশীল, জনহিতকর, অরাজনৈতিক, অলাভজনক ও অবাণিজ্যিকভাবে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হবে। ট্রাস্টের অর্থের জোগান দেবে।
জানা গেছে, গাড়িগুলো কেনার সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন ট্রাস্টি এম এ কাশেম। তিনি এ পর্যন্ত চারবার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমান চেয়ারম্যান আজিম উদ্দীন এর আগে তিনবার চেয়ারম্যান ছিলেন।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয় একটি ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে। এই ট্রাস্টি বোর্ড একটি মানবহিতৈষী, দানশীল, জনহিতকর, অরাজনৈতিক, অলাভজনক ও অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান।
কিন্তু আজিম উদ্দীন আহমেদ ও এম এ কাশেম মানবহিতৈষী ও অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানটিকে বেআইনিভাবে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে রূপদান করে শত শত কোটি টাকা বাণিজ্য করছেন। সেই টাকা আত্মসাৎ করেছেন এবং এ ধারা অব্যাহত রেখেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, রাষ্ট্রের স্বার্থে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি প্রতিষ্ঠানে এমন লাগামহীন দুর্নীতি ও বিশ্ববিদ্যালয়টিকে জঙ্গি তৈরির কারখানায় রূপান্তর করা দুই ট্রাস্টি আজিম উদ্দীন ও এম এ কাশেমের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির হাত থেকে প্রতিষ্ঠান ও দেশকে বাঁচানোর দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
সংবাদ সম্মেলনে ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ড. সুফি সাগর সামস্ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই দুই ট্রাস্টির দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, দুই ট্রাস্টি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আশালয় হাউজিং লিমিটেডের কাছ থেকে জমি কিনে প্রায় ২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। ২০১৯ সালে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে ২১ কোটি টাকা অপব্যয় ও আত্মসাৎ করেন। ইউজিসির অনুমোদনের বাইরে ১০টি সেকশন চালু করে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তিপূর্বক বিশাল অঙ্কের টাকা বাণিজ্য করেন এবং এই টাকা বিভিন্নভাবে আত্মসাৎ করেন।
তবে নিউজবাংলার কাছে সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন এম এ কাশেম ও আজিম উদ্দীন।
আরও পড়ুন: ‘দুর্নীতি-জঙ্গিবাদের কবল’ থেকে নর্থ সাউথকে রক্ষার দাবি
দুর্নীতিবাজদের কারণে ক্যাম্পাসেই যান না ট্রাস্টি আব্দুল আউয়াল
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের স্থায়ী সদস্য আব্দুল আউয়াল বুধবার নিউজবাংলাকে অভিযোগ করে জানিয়েছেন, মূলত দুর্নীতিবাজদের কারণেই ক্যাম্পাসে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।
আব্দুল আউয়াল জানান, বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই তারা তিনজন পরিশ্রম করেছেন; অনুমোদনের জন্য দৌড়ঝাঁপ করেছেন। ক্যাম্পাস গড়ে তোলা থেকে শুরু করে সরকারি অনুমোদন সব কাজই করেছেন তারা তিনজন।
কাশেম-আজিম সিন্ডিকেটের দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘যেহেতু তারা দুনীতি করে, তাই আমি ওইদিকে যাই না। ওরাও আমাকে কোনো নোটিশ পাঠায় না। আমি তো ওইখানের পার্মানেন্ট ট্রাস্টি মেম্বার। কাশেম, আজিম, শাহজাহান সিন্ডিকেট মিলে এই দুর্নীতিগুলো করছে। এই কারণে আমি ওইদিকে যাই না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ট্রাস্টি সদস্য তালিকায় নাম নেই কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাকে বাদ দেয়ার ক্ষমতা নেই ওদের। নর্থ সাউথের ২০১০ সালে যে ট্রাস্টি বোর্ড হইছিল, ওইখানে আমার নাম ট্রাস্টি বোর্ডের পার্মানেন্ট মেম্বার হিসেবে আছে। আমাকে বাদ দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না।’
‘কাশেম-আজিমদের আমি পরে নিয়েছি’
আব্দুল আউয়াল আক্ষেপ করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করার মূল লোক আমি। সঙ্গে আরও দুজন ছিলেন, তারা মারা গেছেন। আর এই যে কাশেম-আজিমরা এখন আছে, এদের আমি পরে নিয়েছি।
‘এটা প্রতিষ্ঠা করা, সরকার থেকে পারমিশন নেয়া- সবই আমরা করেছি। পুরো ক্যাম্পাসই আমার হাতে হয়েছে। কিন্তু যখনই তারা চুরি শুরু করল, তখনই আমি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করি। পরে একটা মামলা করি।’
দুর্নীতির প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ট্রাস্টি বোর্ডের এই স্থায়ী সদস্য আরও বলেন, ‘এই যে গাড়িঘোড়া কিনছে ১০ কোটি, ১২ কোটি টাকায়। কিন্তু এটা তো একটা ট্রাস্ট। এটা একটা নন-প্রফিটেবল প্রতিষ্ঠান। এখান থেকে তো ১০ টাকাও কেউ নিতে পারবে না।
আরও পড়ুন: সাউথইস্ট ব্যাংক নিয়ে অপপ্রচারের নেপথ্যে কাশেম-আজিম সিন্ডিকেট
‘কোনো সিটিং অ্যালাউন্সও নিতে পারে না। আমি কখনোই এক টাকাও সিটিং অ্যালাউন্স নিতাম না। কিন্তু এরা নিয়েছে। এখন দেখতেছি, এরা লাখ লাখ টাকা নিচ্ছে। এ থেকেই বোঝা যায়, এদের চরিত্র কী। এসব তো আমার পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব না। তাই আমি যাই না।’
‘বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় ব্যক্তিগত গাড়ি কেনা অবশ্যই অনিয়ম’
অভিযোগ আছে, বোর্ড অফ ট্রাস্টিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় তিন কোটি টাকার গাড়ি কিনেছেন। কিন্তু এটি তো অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত। সে ক্ষেত্রে এটা তারা করতে পারেন কি না?
নিউজবাংলার এমন প্রশ্নে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে স্পষ্ট বলা আছে যে, বিশ্ববিদ্যালয় যত আয় করবে তা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ চালিয়ে যা অতিরিক্ত থাকবে, সেটা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য উন্নয়নকাজ করা হবে।
‘এখানে গাড়ি কেনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থের সঙ্গে সম্পৃক্ত না। ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা যে কমিটমেন্ট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু করেছেন, তার সঙ্গে এটা কোনোভাবেই যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় ব্যক্তিগত গাড়ি কেনা অবশ্যই অনিয়ম। এটা আর্থিক স্বেচ্ছাচারিতা। এখন এগুলোই হচ্ছে আর কী।’
বোর্ড অফ ট্রাস্টির সদস্যরা সিটিং অ্যালাউন্স হিসেবে কখনো কখনো এক লাখ টাকা নিয়েছেন, কখনো কখনো ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন। এটা ইউজিসির প্রতিবেদনের তথ্য। ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা এটা করতে পারেন কি না?
এমন প্রশ্নে ড. আলমগীর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিটিং অ্যালাউন্স নেয়ার যে সংস্কৃতি, সেটা অন্য কোথাও আছে কি না আমার জানা নেই। তবে বাংলাদেশে এটা ব্যাপকভাবে চালু হয়েছে। ট্রাস্টি বোর্ড মিটিংয়ে সিটিং অ্যালাউন্স নেয়াটা যুক্তিযুক্ত না। ইউজিসির নির্দেশনায় বলা আছে, কিছু ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত সিটিং অ্যালাউন্স নিতে পারে, এর বেশি না।’
‘শিক্ষার্থীদের ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছে’
এক প্রোগ্রামের কথা বলে দশটা প্রোগ্রাম চালাচ্ছে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি।
এমন সুযোগ আছে কি না, জানতে চাইলে ইউজিসির এই সদস্য বলেন, ‘এটা তারা কোনোভাবেই করতে পারে না। একটা ডিপার্টমেন্টের অধীনে আন্ডার গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রাম একটাই থাকতে পারবে। তারা যেটা করছে, সেটা সম্পূর্ণ অবৈধ। শুধু তা-ই না, এসব প্রোগ্রামের অধীনে যেসব শিক্ষার্থী সার্টিফিকেট নিচ্ছে, সেগুলোরও কোনো বৈধতা নেই।
‘এভাবে শিক্ষার্থীদের ব্ল্যাইমেইল করা হচ্ছে। এটা যেকোনো ধরনের গুরুতর অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। কারণ কোনো শিক্ষার্থীর জীবন নিয়ে খেলার অধিকার নেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। তারা এটা জেনেশুনে করেছে। এখন ভাব দেখাচ্ছে যে তারা এটা জানে না। এখন অনুমতির জন্য বলছে। এটা হয় নাকি?’
‘সবার মনোরঞ্জন করে চলি, নোংরামি পছন্দ করি না’
এসব অভিযোগের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আজিম উদ্দীন নিউজবাংলাকে বলেন, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি তো শুধু আমাদের দুজনের না। প্রায় ২৬ জন মিলে আমরা এটা প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা সেখানে ট্রাস্টি।
‘আমি চতুর্থবার নর্থ সাউথের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হলাম। এই প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমে আমার কোনো অসুবিধা হয়নি। আমি সবার মনোরঞ্জন করে চলি। এত নোংরামি আমি পছন্দ করি না। আমরা জীবনে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, আমাদের সবাই চেনে।’
আজিম উদ্দীন বলেন, ‘নর্থ সাউথে বাই রোটেশন চেয়ারম্যান হয়। আগে আমরা ১০ বছরে হয়তো বাই রোটেশন হয়ে যেতাম। এখন সদস্য কমে যাওয়ার কারণে আমরা আগে হচ্ছি। আমি চার বছর পরেই চলে আসছি।
‘আগে এত তাড়াতাড়ি আসা সম্ভব হতো না। এটা বাই রোটেশনে হয়। এখানে কোনো ইলেকশন হয় না। এটা আমাদের একটা ট্রাস্ট, আমরা এটা সুন্দরভাবে করে যাচ্ছি।’
‘যখন যে রাজা তখন তাকে সালাম দিতে হয়’
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে এম এ কাশেম দাবি করেন, তার সময়ে কোনো গাড়িই কেনা হয়নি। কোনো রকম দুর্নীতি হয়নি।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমার সময় কোনো গাড়িই কেনা হয় নাই। কোনো টাকাও দেয়া হয় নাই। কোনো রকম দুই নম্বর কাজও হয় নাই।’
এম এ কাশেম এ সময় পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, কিছু লোক তাদের ব্যাপারে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তবে সব সরকারের সঙ্গেই তার সুসম্পর্ক ছিল। এখনো আছে।
এম এ কাশেম বলেন, ‘যখন যে রাজা তখন তাকে সালাম দিতে হয়। যখন এরশাদ ছিল তখন তাকে সালাম দিয়েছি, যখন খালেদা ছিল তখন তাকে দিয়েছি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে দিয়েছি, এখনো দিচ্ছি। দান-অনুদানেও জড়িত আছি।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ডক্টর এ এস এম আমানুল্লাহ বলেছেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সত্তুর শতাংশ উচ্চশিক্ষা নিয়ন্ত্রণ করে। এই প্রতিষ্ঠানের স্বাস্থ্য যদি ভালো না হয় দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি হবে না।
জামালপুরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত জামালপুর শেরপুর জেলার কলেজ সমূহের অধ্যক্ষ উপাধ্যক্ষ ও শিক্ষকগণের সাথে শিক্ষার মান উন্নয়ন বিষয়ক মত বিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকালে জামালপুর সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের মিলনায়তনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ মনিটরিং এন্ড ইভালুয়েশন দপ্তরের আয়োজনে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর হারুন অর রশিদ এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ডক্টর এ এস এম আমানুল্লাহ, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ডক্টর মো: নুরুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) আফসানা তাসলিম। এ সময় তিনি আরো বলেন, উন্নত দেশগুলোতে যেখানে মোট জিডিপির তিন থেকে পাঁচ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেখানে বাংলাদেশে মাত্র এক দশমিক পাঁচ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয় যা শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য খুবই অপ্রতুল। এখান থেকে বিশ্বমানের নাগরিক গড়ে তোলা সম্ভব নয়। শিক্ষাব্যবস্থায় মোট জিডিপির পাঁচ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়ার সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান। এ ছাড়াও তিনি প্রাইমারি শিক্ষা ব্যবস্থার উপর কিছু পরিবর্তন আনার কথা বলেন না। মত বিনিময় সভায় জামালপুর শেরপুর জেলার কলেজসমূহের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষসহ শিক্ষকগণ উপস্থিত ছিলেন।
অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে স্নাতকে (অনার্স) তথ্য প্রযুক্তি ও ইংরেজি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
আধুনিক পাঠ্যক্রম প্রণয়নের পাশাপাশি তা বাস্তবায়নে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা দেওয়া হবে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজে গতকাল বুধবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারের এটুআই প্রকল্পের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ এসব কথা বলেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন শিক্ষাক্রমের আইসিটি বিষয়ের ‘টিচিং, লার্নিং অ্যান্ড অ্যাসেসমেন্ট স্ট্র্যাটেজি’ শীর্ষক এ কর্মশালার প্রথম সেশনে সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও এটুআই প্রোগ্রামের প্রকল্প পরিচালক মো. রশিদুল মান্নাফ কবীর।
উপাচার্য বলেন, কলেজগুলোতে তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষাদানে শিক্ষক সংকটসহ নানা সমস্যা রয়েছে। এ বিষয়ে সহায়তার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সব টেকনিক্যাল কলেজ ও কম্পিউটার কাউন্সিলের সাথে আলোচনা করছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের কলেজ শিক্ষার্থীদের মেধার ঘাটতি নেই। সঠিক দিকনির্দেশনা পেলে তারা সহজেই তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ হয়ে উঠবে।
শিক্ষার্থীদের জন্য আধুনিক, সময়োপযোগী ও কর্মমুখী তথ্য প্রযুক্তি পাঠ্যক্রম প্রণয়নে সরকারের এটুআই প্রোগ্রাম ও শিক্ষাবিদদের প্রতি আহ্বান জানান অধ্যাপক এ এস এম আমানুল্লাহ।
কর্মশালার দ্বিতীয় সেশনে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম।
দিনব্যাপী এ কর্মশালায় দেশের বিভিন্ন কলেজের ৮টি বিভাগের ৪০ জন তথ্য প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ড. নাজমা তারা এবং মির্জা মোহাম্মদ দিদারুল আনাম।
এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরের পরিচালক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন স্থগিত করে দেওয়া হাইকোর্টের আদেশ স্থগিতই রেখেছেন আপিল বিভাগ। এর ফলে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচনে আর কোনো বাধা রইল না।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত এই আদেশ বহাল থাকবে রায়ে বলা হয়েছে।
এদিন আদালতে ঢাবির পক্ষে মোহাম্মদ শিশির মনির, রিটের পক্ষে অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম ও ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া এবং ডাকসুর জিএস প্রার্থী এসএম ফরহাদের পক্ষে ব্যারিস্টার ইমরান এ সিদ্দিকী শুনানি করেন।
ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট মনোনীত ছাত্র শিবির সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের প্রার্থিতার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বামজোট মনোনীত প্যানেলের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী বিএম ফাহমিদা আলম এ রিট দায়ের করেন।
রিটে অভিযোগ করা হয়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে এস এম ফরহাদ ‘ছাত্রলীগের কমিটিতে’ ছিলেন। এরপরও তিনি কীভাবে ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্যানেলে প্রার্থী হলেন— এমন প্রশ্ন তুলে তার প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করা হয়।
এরপর গেল সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ডাকসু নির্বাচন প্রক্রিয়া ও চূড়ান্ত ভোটার তালিকার কার্যক্রম ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করেন হাইকোর্ট। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি হাবিবুল গণি ও বিচারপতি এস কে তাহসিন আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে কোন প্রক্রিয়ায় ডাকসু নির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়ন, বাছাই ও চূড়ান্ত করা হচ্ছে এবং ভোটের প্রস্তুতির প্রক্রিয়া কী— এ বিষয়েও জানতে চান চাওয়া হয়।
তবে তার এক ঘণ্টারও কম সময়ের ব্যবধানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের আদালত ওই স্থগিতাদেশ দেন।
ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় পুনরায় মামলাটির বিষয়ে গতকাল (২ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবেদন নিয়ে চেম্বার জজ আদালতে গেলে এ বিষয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আজ বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) শুনানির জন্য মামলার দিন নির্ধারণ করা হয়েছিল।
জানা গেছে, নির্বাচনি তফসিল অনুযায়ী আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিন নির্ধারণ করা হয়। নির্বাচনে কেন্দ্রীয় এবং হল সংসদ মিলিয়ে মোট ৪৭১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ৪৫ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৯ জন এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ২৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে ১৭ জন, কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ১১ জন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে ১৪ জন, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে ১৯ জন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ১২ জন, গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ৯ জন, ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১৩ জন, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে ১২ জন, সমাজসেবা সম্পাদক পদে ১৭ জন, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে ১৫ জন, মানবাধিকার ও আইন বিষয়ক সম্পাদক পদে ১১ জন এবং ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক পদে ১৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সবচেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে সদস্য পদে। এবার ১৩টি সদস্য পদের বিপরীতে মোট ২১৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে এক নারী শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আলী হুসেনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আলী হুসেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২০২১ সেশনের শিক্ষার্থী এবং শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের বাসিন্দা।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রীকে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় আক্রমণ ও হুমকি দেওয়ার ঘটনায় আলী হুসেনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৬ মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এ বিষয়ে গঠিত প্রক্টরিয়াল সত্যানুসন্ধান কমিটির সুপারিশের আলোকে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
এটি বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডারে প্রদত্ত প্রক্টরের এখতিয়ারভুক্ত সর্বোচ্চ শাস্তি বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
একই সঙ্গে আলী হুসেনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন বিষয়ক কমিটিতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত ৫ লাখের বেশি শিক্ষক ও কর্মচারীকে অবসরের ৬ মাসের মধ্যে অবসরকালীন সুবিধা প্রদানের নির্দেশনা দিয়ে রায় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।
গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজি জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ ১৩ পৃষ্ঠার এ রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এ রায় প্রকাশ করেছেন।
রিটকারীদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সিদ্দিক উল্যাহ মিয়া গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এর আগে গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত ৫ লাখের বেশি শিক্ষক ও কর্মচারীকে অবসরের ৬ মাসের মধ্যে অবসরকালীন সুবিধা প্রদানের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজি জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
রায়ের সময় হাইকোর্ট বলেন, এটা চিরন্তন সত্য যে শিক্ষকরা রিটায়ারমেন্ট (অবসরকালীন) বেনিফিট (সুবিধা) পেতে বছরের পর বছর ঘুরতে হয়। এই হয়রানি থেকে তারা কোনোভাবেই পার পান না। একজন প্রাথমিকের শিক্ষক কত টাকা বেতন পান, সেটাও বিবেচনায় নিতে হবে। এ জন্য তাদের অবসরভাতা ৬ মাসের মধ্যে দিতে হবে। এই অবসর ভাতা পাওয়ার জন্য শিক্ষকরা বছরের পর বছর দ্বারে দ্বারে ঘুরতে পারে না বলেও মন্তব্য করেছেন আদালত।
সেদিন রায়ের পর আইনজীবী ছিদ্দিক উল্যাহ মিয়া বলেন, সারাদেশে এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় ৫ লাখের বেশি শিক্ষক কর্মচারী অবসরকালীন সুবিধা পেতে ২০১৯ সালে একটি রিট দায়ের করেছিলাম। রিটে আমরা ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন থেকে ৬ শতাংশ কেটে নেওয়া হতো। সেই কর্তনকৃত টাকাসহ সুবিধান অবসরের পর দেওয়া হতো। এই অবস্থায় ২০১৭ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নতুন করে ১০ শতাংশ কেটে নেওয়ার সিদ্ধান্তে নেয়। ১০ শতাংশ কেটে নেওয়া হলেও ৬ শতাংশের যে সুবিধা দেওয়া হতো সেটাই বহাল রাখা হয়। যে কারণে আমরা রিট দায়ের করে বলেছি, যাতে ১০ শতাংশের সুবিধা দেওয়া হয়। এরপর এই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। সেই রুলের দীর্ঘ শুনানি শেষে এ রায় ঘোষণা করা হয়।
রায়ে আদালত বলেছেন, ১০ শতাংশ কেটে নেওয়া হলেও তাদের যেন বাড়তি সুবিধা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে অবসরের ৬ মাসের মধ্যে যেন অবসরকালীন সুবিধা প্রদান করা হয়।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট প্রবিধানমালা, ১৯৯৯ এর প্রবিধান-৬ এবং বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা প্রবিধানমালা, ২০০৫ এর প্রবিধান-৮ অনুযায়ী শিক্ষক ও কর্মচারীদের মূল বেতনের ২ শতাংশ এবং ৪ শতাংশ কাটার বিধান ছিল। যার বিপরীতে শিক্ষকদের ট্রাস্টের তহবিল থেকে শিক্ষক ও কর্মচারীদের কিছু আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হতো। কিন্তু ২০১৭ সালের ১৯ এপ্রিল উল্লিখিত প্রবিধানমালাগুলোর শিক্ষক ও কর্মচারীদের মূল বেতনের ২ শতাংশ এবং ৪ শতাংশ কাটার বিধানগুলো সংশোধনপূর্বক ৪ শতাংশ এবং ৬ শতাংশ করে দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে শিক্ষক ও কর্মচারীদের মূল বেতনের ২ শতাংশ এবং ৪ শতাংশ কাটার পরিবর্তে ৪ শতাংশ এবং ৬ শতাংশ কাটার বিধান করা হলেও ওই অতিরিক্ত অর্থ কাটার বিপরীতে শিক্ষক ও কর্মচারীদের কোনো বাড়তি আর্থিক সুবিধার বিধান করা হয়নি। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারীদের এপ্রিল ২০১৯ মাসের বেতন হতে ৬ শতাংশ এবং ৪ শতাংশ টাকা অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টে জমা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা প্রদান করেন।
ফলে অতিরিক্ত অর্থ কাটার বিপরীতে কোনো আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধি না করেই শিক্ষক ও কর্মচারীদের মূল বেতনের ৬ শতাংশ এবং ৪ শতাংশ টাকা কাটার আদেশের কারণে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫ লাখ শিক্ষক ও কর্মচারীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে ক্ষুব্ধ হয়ে বিভিন্ন সময়ে অতিরিক্ত অর্থ কাটার আদেশ বাতিল করার জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে তারা বিভিন্ন সময়ে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। শিক্ষক ও কর্মচারীরা ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জারি করা প্রজ্ঞাপনটি চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন সংক্রান্ত হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে করা আপিল আবেদনের শুনানি আজ আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় এক নম্বরে রাখা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হবে। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে সোমবার হাইকোর্ট ডাকসু নির্বাচন আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করেন। তবে বিকেলে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত ওই আদেশ স্থগিত করেন।
তাৎক্ষণিক হাতে লেখা আপিল আবেদনের ভিত্তিতে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব চেম্বার কোর্টে শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন।
চেম্বার আদালত একইসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করতে নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আপিল আবেদন করে। পরে চেম্বার আদালত বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠান।
সোমবার হাইকোর্ট বিচারপতি হাবিবুল গণি ও বিচারপতি শেখ তাহসিন আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ডাকসু নির্বাচন স্থগিত করেন।
ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট মনোনীত ডাকসু জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিটের শুনানিতে এই আদেশ দেন হাইকোর্ট। রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া।
হাইকোর্ট আদেশে রিটকারী ও ডাকসু নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী বি এম ফাহমিদা আলমকে জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ডাকসুর নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে দাখিল করতে বলা হয়।
এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যে অচলাবস্থা চলছে, শিগগিরই সে সমস্যার সমাধান হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার।
মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।
উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে অচলাবস্থা চলছে, তা দুঃখজনক। এজন্য মন্ত্রণালয়ও উদ্বিগ্ন। তবে আলোচনা করেই এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। শিগগিরই এসব ঘটনার সমাধান হবে।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার ফলে শিক্ষা ব্যাহত হচ্ছে। এ ধরনের পরিস্থিতি কারও কাম্য নয়। তবে সবকিছু আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে।
চলমান সমস্যাগুলো দ্রুততম সময়ে সমাধান করা হবে এবং এক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলেও আশ্বস্ত করেন উপদেষ্টা।
মন্তব্য