দেশের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি। ১৯৯২ সালে যাত্রা শুরু করা এই উচ্চ-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি নিয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আগ্রহ দেখা যায়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টি যেন ডুবতে বসেছে ট্রাস্টি বোর্ডের প্রভাবশালী দুই সদস্য এম এ কাশেম ও আজিম উদ্দীন আহমদের দৌরাত্ম্যে।
অভিযোগ আছে, নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি করে চলেছে কাশেম-আজিম সিন্ডিকেট। তাদের কাছে অসহায় ট্রাস্টি বোর্ডের অধিকাংশ সদস্য। কাশেম-আজিম সিন্ডিকেটের অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ করে ব্যর্থ হয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আর যান না ট্রাস্টি বোর্ডের স্থায়ী সদস্য ব্যবসায়ী আব্দুল আউয়াল।
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত কয়েক বছর কাশেম-আজিম সিন্ডিকেটই ঘুরেফিরে ট্রাস্টি বোর্ডের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় বিলাসবহুল গাড়ি কিনেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি কেনায় অনিয়ম করেছেন, ভর্তি-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন বছরের পর বছর। তাদের এসব অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে বোর্ডের কোনো সদস্য প্রতিবাদ করলেই তাকে কৌশলে কোণঠাসা করে দেয়া হয়। এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়টির দখল নিয়ে আছে এই সিন্ডিকেট।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ তহবিল থেকে ট্রাস্টিদের আর্থিক সুবিধা ও সিটিং অ্যালাউন্সের নামে মোটা অঙ্কের অর্থ গ্রহণ ও বিদেশ ভ্রমণের ঘটনা তদন্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
ইউজিসির তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির আর্থিকসহ সার্বিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনার উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ২৮ বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব পুনর্নিরীক্ষার নির্দেশ দেয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ের মনোনীত প্রতিষ্ঠান দিয়ে।
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি যে ট্রাস্টের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত তার ডিডে বলা আছে, মানবহিতৈষী, দানশীল, জনহিতকর, অরাজনৈতিক, অলাভজনক ও অবাণিজ্যিকভাবে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হবে। ট্রাস্টের অর্থের জোগান দেবে।
জানা গেছে, গাড়িগুলো কেনার সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন ট্রাস্টি এম এ কাশেম। তিনি এ পর্যন্ত চারবার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমান চেয়ারম্যান আজিম উদ্দীন এর আগে তিনবার চেয়ারম্যান ছিলেন।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয় একটি ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে। এই ট্রাস্টি বোর্ড একটি মানবহিতৈষী, দানশীল, জনহিতকর, অরাজনৈতিক, অলাভজনক ও অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান।
কিন্তু আজিম উদ্দীন আহমেদ ও এম এ কাশেম মানবহিতৈষী ও অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানটিকে বেআইনিভাবে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে রূপদান করে শত শত কোটি টাকা বাণিজ্য করছেন। সেই টাকা আত্মসাৎ করেছেন এবং এ ধারা অব্যাহত রেখেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, রাষ্ট্রের স্বার্থে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি প্রতিষ্ঠানে এমন লাগামহীন দুর্নীতি ও বিশ্ববিদ্যালয়টিকে জঙ্গি তৈরির কারখানায় রূপান্তর করা দুই ট্রাস্টি আজিম উদ্দীন ও এম এ কাশেমের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির হাত থেকে প্রতিষ্ঠান ও দেশকে বাঁচানোর দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
সংবাদ সম্মেলনে ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ড. সুফি সাগর সামস্ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই দুই ট্রাস্টির দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, দুই ট্রাস্টি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আশালয় হাউজিং লিমিটেডের কাছ থেকে জমি কিনে প্রায় ২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। ২০১৯ সালে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে ২১ কোটি টাকা অপব্যয় ও আত্মসাৎ করেন। ইউজিসির অনুমোদনের বাইরে ১০টি সেকশন চালু করে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তিপূর্বক বিশাল অঙ্কের টাকা বাণিজ্য করেন এবং এই টাকা বিভিন্নভাবে আত্মসাৎ করেন।
তবে নিউজবাংলার কাছে সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন এম এ কাশেম ও আজিম উদ্দীন।
আরও পড়ুন: ‘দুর্নীতি-জঙ্গিবাদের কবল’ থেকে নর্থ সাউথকে রক্ষার দাবি
দুর্নীতিবাজদের কারণে ক্যাম্পাসেই যান না ট্রাস্টি আব্দুল আউয়াল
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের স্থায়ী সদস্য আব্দুল আউয়াল বুধবার নিউজবাংলাকে অভিযোগ করে জানিয়েছেন, মূলত দুর্নীতিবাজদের কারণেই ক্যাম্পাসে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।
আব্দুল আউয়াল জানান, বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই তারা তিনজন পরিশ্রম করেছেন; অনুমোদনের জন্য দৌড়ঝাঁপ করেছেন। ক্যাম্পাস গড়ে তোলা থেকে শুরু করে সরকারি অনুমোদন সব কাজই করেছেন তারা তিনজন।
কাশেম-আজিম সিন্ডিকেটের দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘যেহেতু তারা দুনীতি করে, তাই আমি ওইদিকে যাই না। ওরাও আমাকে কোনো নোটিশ পাঠায় না। আমি তো ওইখানের পার্মানেন্ট ট্রাস্টি মেম্বার। কাশেম, আজিম, শাহজাহান সিন্ডিকেট মিলে এই দুর্নীতিগুলো করছে। এই কারণে আমি ওইদিকে যাই না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ট্রাস্টি সদস্য তালিকায় নাম নেই কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাকে বাদ দেয়ার ক্ষমতা নেই ওদের। নর্থ সাউথের ২০১০ সালে যে ট্রাস্টি বোর্ড হইছিল, ওইখানে আমার নাম ট্রাস্টি বোর্ডের পার্মানেন্ট মেম্বার হিসেবে আছে। আমাকে বাদ দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না।’
‘কাশেম-আজিমদের আমি পরে নিয়েছি’
আব্দুল আউয়াল আক্ষেপ করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করার মূল লোক আমি। সঙ্গে আরও দুজন ছিলেন, তারা মারা গেছেন। আর এই যে কাশেম-আজিমরা এখন আছে, এদের আমি পরে নিয়েছি।
‘এটা প্রতিষ্ঠা করা, সরকার থেকে পারমিশন নেয়া- সবই আমরা করেছি। পুরো ক্যাম্পাসই আমার হাতে হয়েছে। কিন্তু যখনই তারা চুরি শুরু করল, তখনই আমি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করি। পরে একটা মামলা করি।’
দুর্নীতির প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ট্রাস্টি বোর্ডের এই স্থায়ী সদস্য আরও বলেন, ‘এই যে গাড়িঘোড়া কিনছে ১০ কোটি, ১২ কোটি টাকায়। কিন্তু এটা তো একটা ট্রাস্ট। এটা একটা নন-প্রফিটেবল প্রতিষ্ঠান। এখান থেকে তো ১০ টাকাও কেউ নিতে পারবে না।
আরও পড়ুন: সাউথইস্ট ব্যাংক নিয়ে অপপ্রচারের নেপথ্যে কাশেম-আজিম সিন্ডিকেট
‘কোনো সিটিং অ্যালাউন্সও নিতে পারে না। আমি কখনোই এক টাকাও সিটিং অ্যালাউন্স নিতাম না। কিন্তু এরা নিয়েছে। এখন দেখতেছি, এরা লাখ লাখ টাকা নিচ্ছে। এ থেকেই বোঝা যায়, এদের চরিত্র কী। এসব তো আমার পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব না। তাই আমি যাই না।’
‘বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় ব্যক্তিগত গাড়ি কেনা অবশ্যই অনিয়ম’
অভিযোগ আছে, বোর্ড অফ ট্রাস্টিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় তিন কোটি টাকার গাড়ি কিনেছেন। কিন্তু এটি তো অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত। সে ক্ষেত্রে এটা তারা করতে পারেন কি না?
নিউজবাংলার এমন প্রশ্নে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে স্পষ্ট বলা আছে যে, বিশ্ববিদ্যালয় যত আয় করবে তা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ চালিয়ে যা অতিরিক্ত থাকবে, সেটা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য উন্নয়নকাজ করা হবে।
‘এখানে গাড়ি কেনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থের সঙ্গে সম্পৃক্ত না। ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা যে কমিটমেন্ট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু করেছেন, তার সঙ্গে এটা কোনোভাবেই যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় ব্যক্তিগত গাড়ি কেনা অবশ্যই অনিয়ম। এটা আর্থিক স্বেচ্ছাচারিতা। এখন এগুলোই হচ্ছে আর কী।’
বোর্ড অফ ট্রাস্টির সদস্যরা সিটিং অ্যালাউন্স হিসেবে কখনো কখনো এক লাখ টাকা নিয়েছেন, কখনো কখনো ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন। এটা ইউজিসির প্রতিবেদনের তথ্য। ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা এটা করতে পারেন কি না?
এমন প্রশ্নে ড. আলমগীর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিটিং অ্যালাউন্স নেয়ার যে সংস্কৃতি, সেটা অন্য কোথাও আছে কি না আমার জানা নেই। তবে বাংলাদেশে এটা ব্যাপকভাবে চালু হয়েছে। ট্রাস্টি বোর্ড মিটিংয়ে সিটিং অ্যালাউন্স নেয়াটা যুক্তিযুক্ত না। ইউজিসির নির্দেশনায় বলা আছে, কিছু ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত সিটিং অ্যালাউন্স নিতে পারে, এর বেশি না।’
‘শিক্ষার্থীদের ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছে’
এক প্রোগ্রামের কথা বলে দশটা প্রোগ্রাম চালাচ্ছে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি।
এমন সুযোগ আছে কি না, জানতে চাইলে ইউজিসির এই সদস্য বলেন, ‘এটা তারা কোনোভাবেই করতে পারে না। একটা ডিপার্টমেন্টের অধীনে আন্ডার গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রাম একটাই থাকতে পারবে। তারা যেটা করছে, সেটা সম্পূর্ণ অবৈধ। শুধু তা-ই না, এসব প্রোগ্রামের অধীনে যেসব শিক্ষার্থী সার্টিফিকেট নিচ্ছে, সেগুলোরও কোনো বৈধতা নেই।
‘এভাবে শিক্ষার্থীদের ব্ল্যাইমেইল করা হচ্ছে। এটা যেকোনো ধরনের গুরুতর অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। কারণ কোনো শিক্ষার্থীর জীবন নিয়ে খেলার অধিকার নেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। তারা এটা জেনেশুনে করেছে। এখন ভাব দেখাচ্ছে যে তারা এটা জানে না। এখন অনুমতির জন্য বলছে। এটা হয় নাকি?’
‘সবার মনোরঞ্জন করে চলি, নোংরামি পছন্দ করি না’
এসব অভিযোগের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আজিম উদ্দীন নিউজবাংলাকে বলেন, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি তো শুধু আমাদের দুজনের না। প্রায় ২৬ জন মিলে আমরা এটা প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা সেখানে ট্রাস্টি।
‘আমি চতুর্থবার নর্থ সাউথের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হলাম। এই প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমে আমার কোনো অসুবিধা হয়নি। আমি সবার মনোরঞ্জন করে চলি। এত নোংরামি আমি পছন্দ করি না। আমরা জীবনে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, আমাদের সবাই চেনে।’
আজিম উদ্দীন বলেন, ‘নর্থ সাউথে বাই রোটেশন চেয়ারম্যান হয়। আগে আমরা ১০ বছরে হয়তো বাই রোটেশন হয়ে যেতাম। এখন সদস্য কমে যাওয়ার কারণে আমরা আগে হচ্ছি। আমি চার বছর পরেই চলে আসছি।
‘আগে এত তাড়াতাড়ি আসা সম্ভব হতো না। এটা বাই রোটেশনে হয়। এখানে কোনো ইলেকশন হয় না। এটা আমাদের একটা ট্রাস্ট, আমরা এটা সুন্দরভাবে করে যাচ্ছি।’
‘যখন যে রাজা তখন তাকে সালাম দিতে হয়’
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে এম এ কাশেম দাবি করেন, তার সময়ে কোনো গাড়িই কেনা হয়নি। কোনো রকম দুর্নীতি হয়নি।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমার সময় কোনো গাড়িই কেনা হয় নাই। কোনো টাকাও দেয়া হয় নাই। কোনো রকম দুই নম্বর কাজও হয় নাই।’
এম এ কাশেম এ সময় পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, কিছু লোক তাদের ব্যাপারে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তবে সব সরকারের সঙ্গেই তার সুসম্পর্ক ছিল। এখনো আছে।
এম এ কাশেম বলেন, ‘যখন যে রাজা তখন তাকে সালাম দিতে হয়। যখন এরশাদ ছিল তখন তাকে সালাম দিয়েছি, যখন খালেদা ছিল তখন তাকে দিয়েছি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে দিয়েছি, এখনো দিচ্ছি। দান-অনুদানেও জড়িত আছি।’
এইচ এসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে, পঞ্চগড় জেলার তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করেনি।
বৃহস্পতিবার ফলাফল প্রকাশ হলে এ তথ্য জানা যায়, পঞ্চগড় জেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে।
পঞ্চগড় জেলার মোট ৩৮টি কলেজ এইচএসসি পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন ৬৭১২ জন, তাদের মধ্যে ২৮৯৯ পাস করেন, ফেল করেন ৩৮১৩ জন, জিপিএ -৫-১১৩ জন,পাশের পার্সেন্ট ৪৩.১৯%
মাদরাসা ১৬টি কলেজ, ৪০০ জন শিক্ষার্থী, পাস করেন ২১৩ জন, ফেল করেন ১৮৭ জন, জিপিএ -৫ -১ জন, পাসের পার্সেন্টেজ ৫৩.২৫%
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—বোদা উপজেলার বোদা পাইলট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মাড়েয়া মডেল হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং তেঁতুলিয়া উপজেলার আলহাজ্ব তমিজ উদ্দীন কলেজ। প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো এমপিওভুক্ত হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বোদা পাইলট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ১২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়, যার মধ্যে ৪ জন অনুপস্থিত ছিল। মাড়েয়া মডেল হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ জন, আর আলহাজ্ব তমিজ উদ্দীন কলেজ থেকে অংশ নেয় ৪ জন শিক্ষার্থী, যার মধ্যে ২ জন অনুপস্থিত ছিল।
মাড়েয়া মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ অধ্যক্ষ সপেন্দ্রনাথ বর্মণ বলেন, আমাদের কলেজ শাখা এমপিওভুক্ত হয়নি। কয়েক বছর ধরে নেই কোনো শিক্ষক। এজন্য একজন পরীক্ষায় অংশ নিলেও পাস করতে পারেনি।
বোদা পাইলট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নার্গিস পারভিন মৌসুমী বলেন, ভর্তি হওয়ার পরে সবার বিয়ে হয়ে গেছে, এ জন্য কেউ পাস করতে পারেনি।
আলহাজ্ব তমিজ উদ্দীন কলেজের অধ্যক্ষ হাসান আলী বলেন, আমাদের কলেজের চারজনের মধ্যে দুজন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। দুজনে পাস করার কথা ছিল। আমরা বোর্ড চ্যালেঞ্জ করব।
ভারপ্রাপ্ত জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা খায়রুল আনাম মো. আফতাবুর রহমান হেলালী বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করতে পারেনি সেসব প্রতিষ্ঠানকে শোকজ করা হবে। এই ফলাফলের কারণ খুঁজে বের করে এখান থেকে কিভাবে উত্তরণ করা যায়, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডেও ফল বিপর্যয় ঘটেছে। চলতি বছর এই বোর্ডে পাসের হার ৫৯ দশমিক ৪০ শতাংশ, যা সাত বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, চলতি বছর রাজশাহী বোর্ডে ১ লাখ ৩৪ হাজার ১৪৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন। এর মধ্যে পাস করেছেন ৭৭ হাজার ৭৪২ জন। আরও জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১০ হাজার ১৩৭ জন।
এ বছর রাজশাহী বোর্ডে ছাত্রদের পাসের হার ৫০ দশমিক ৬৯ শতাংশ, আর ছাত্রীদের পাসের হার ৬৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এছাড়া ছাত্রদের মধ্যে ৪ হাজার ৪৫৫ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন, আর ছাত্রীদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৫ হাজার ৬৮২ জন।
এর আগে ২০২৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় রাজশাহী বোর্ডে পাসের হার ছিল ৮১ দশমিক ২৪ শতাংশ, ২০২৩ সালে ছিল ৭৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ, ২০২২ সালে ৮১ দশমিক ৬০ শতাংশ, ২০২১ সালে ৯৭ দশমিক ২৯ শতাংশ, ২০২০ সালে ১০০ শতাংশ এবং ২০১৯ সালে ৭৬ দশমিক ৩৮ শতংশ।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। সব শিক্ষা বোর্ড থেকে একযোগে এ ফল প্রকাশ করা হয়।
এ বছর দেশের ৯টি সাধারণ ও কারিগরি এবং মাদরাসা বোর্ড মিলিয়ে ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় পাসের হার কমেছে ১৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ও সাঘাটা উপজেলার দুই কলেজে এ বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সব পরিক্ষার্থীই অকৃতকার্য হয়েছেন। মোট ৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিলেও একজনও পাস করতে পারেননি। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে ব্যাপক হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
বৃহস্পতিবার পরিক্ষার ফলাফল ঘোষণার পর একাধিক মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
জানা গেছে, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ঘাগোয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন মাত্র ৫ জন শিক্ষার্থী। অপরদিকে, সাঘাটা উপজেলার জুমারবাড়ি মহিলা কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন মাত্র ১ জন। কিন্তু দুই কলেজের কেউই পাস করতে পারেননি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাসে অনুপস্থিতি, শিক্ষক সংকট, পর্যাপ্ত প্রস্তুতির অভাব এবং প্রশাসনিক নজরদারির ঘাটতির কারণে এ ধরনের ফলাফল হয়েছে। বিশেষ করে উপজেলার প্রান্তিক এলাকার ছোট কলেজগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে পাঠদানের মান কমে যাওয়ায় এমন বিপর্যয় ঘটছে বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতনজনরা।
এছাড়াও স্থানীয় অভিভাবক ও সাধারণ মানুষ বলছেন, বছরের পর বছর শিক্ষক সংকট ও একাডেমিক দুর্বলতার কারণে উপজেলার অনেক কলেজেই এখন শিক্ষার মান প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।
গাইবান্ধা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘কোনো কলেজ থেকে শতভাগ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হওয়া অত্যন্ত হতাশাজনক। আমরা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট দুই প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাদের সন্তোষজনক জবাব না পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
চলতি বছর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় গজারিয়া উপজেলায় সবচেয়ে খারাপ ফলাফল করেছে বালুয়াকান্দি ডা.আব্দুল গাফফার স্কুল এন্ড কলেজ। ভয়াবহ ফলাফল বিপর্যয়ে পড়া এই প্রতিষ্ঠানটি থেকে পাশ করেছে মাত্র একজন শিক্ষার্থী।
খবর নিয়ে জানা যায়, বালুয়াকান্দিতে অবস্থিত ডা. আব্দুল গাফফার স্কুল এন্ড কলেজ থেকে চলতি বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ১৭জন শিক্ষার্থী। প্রকাশিত ফলাফলে প্রতিষ্ঠানটি থেকে শুধুমাত্র একজন শিক্ষার্থী পাশ করেছে। পাসের হার মাত্র ৫.৮৮ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটির এমন ফলাফলে সমালোচনামুখর অভিভাবক শ্রেণি।
স্থানীয় বাসিন্দা সোলায়মান জানান, চলতি বছর ১৭জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও তাদের মধ্যে ১৪ জনই অনিয়মিত শিক্ষার্থী। নিয়মিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ৩ জন। মাত্র ৪জন জনবল নিয়ে কোনরকমে কার্যক্রম চালাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। মানবিক বিভাগের অনিয়মিত শিক্ষার্থী ইয়াসিন ব্যতীত এই প্রতিষ্ঠানটি থেকে কেউ পাশ করতে পারেননি।
স্থানীয় বাসিন্দা হোসেন আলী বলেন, ' প্রতিষ্ঠানটির স্কুল শাখা অত্যন্ত ভালো। তবে কলেজ শাখা এমপিওভুক্ত নয় সেজন্য কলেজ পরিচালনা করার ক্ষেত্রে অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এসব সীমাবদ্ধতার সাথে লড়াই করে কোনো রকমের টিকে আছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে শিক্ষার মান উন্নয়ন করতে না পারলে প্রতিষ্ঠানটি অস্তিত্ব সংকটে পড়বে'।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ বশির উল্লাহর মোবাইলে কল করা হলে তিনি বলেন, ' আমি এখন ব্যস্ত আছি এ বিষয় নিয়ে কয়েকদিন পরে আপনাদের সাথে কথা বলব'।
বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির কলেজ শাখা এমপিওভুক্ত নয় সেজন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থী স্বল্পতাসহ নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ফলাফল খারাপের বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের সাথে বসব’।
চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে নীলফামারী জেলার ১০টি কলেজের কোনো শিক্ষার্থীই পাস করতে পারেনি। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ফলাফলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মহা. তৌহিদুল ইসলাম।
তিনি জানান, বোর্ডের অধীনে নীলফামারীর ১০টি কলেজের ৪০ জন শিক্ষার্থীর কেউই উত্তীর্ণ হয়নি।
কলেজগুলো হলো, নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ সৃজনশীল কলেজের মানবিক বিভাগের ১ জন, সৈয়দপুর উপজেলার সাতপাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক বিভাগের ১ জন, কিশোরগঞ্জ উপজেলার নয়নখাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক বিভাগের ৮ জনের মধ্যে ৫ জন ফেল ও ৩ জন অনুপস্থিত, জলঢাকা উপজেলার বগুলাগাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক বিভাগের ১৮ জনের মধ্যে ১৫ জন ফেল ও ৩ জন অনুপস্থিত, একই উপজেলার চেওড়াডাঙ্গী স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক বিভাগের ৯ জনের মধ্যে ৬ জন ফেল ও ৩ জন অনুপস্থিত, গোলমুন্ডা আদর্শ কলেজের মানবিক বিভাগের ৩ জন, ডিমলা উপজেলার জেলা পরিষদ স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ১ জন ও মানবিক বিভাগের ১ জন,একই উপজেলার নাউতারা বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক বিভাগের ৩ জন,ডিমলা সীমান্ত কলেজের মানবিক বিভাগের ২ জন এবং গয়াখড়িবাড়ি মহিলা কলেজের মানবিক বিভাগের ৩ জনের মধ্যে ২ জন ফেল ও ১ জন অনুপস্থিত।
নীলফামারী জেলা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর (২০২৫) জেলায় ৯৩টি কলেজের ১২ হাজার ১৮৯ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে পাস করেছে ৭ হাজার ৫২৪ জন এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৮১ জন।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে এবারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় (এইচএসসি) পাসের হার বিগত ৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এবারের পাসের হার ৫২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। যা গত বছরের তুলানায় ১৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ কম। গতবছর পাসের হার ছিল ৭০ দশমিক ৩২ শতাংশ।
এছাড়া এবার জিপিএ-৫ কমেছে অর্ধেকেরও বেশি। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬ হাজার ৯৭ জন। যা গতবার পেয়েছিল ১০ হাজার ২৬৯ জন শিক্ষার্থী। ২০২০ সাল থেকে প্রতিবছর গড়ে এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার কমেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড মিলনায়তনে ফল ঘোষণা করেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পারভেজ সাজ্জাদ চৌধুরী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বোর্ডের চেয়ারম্যান ইলিয়াছ উদ্দিন আহাম্মদ এবং সচিব এ কে এম সামছু উদ্দিন আজাদ।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার পরীক্ষার্থী ছিলেন ১ লাখ ২ হাজার ৯৭০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছেন ৫৩ হাজার ৫৬০ জন। ছাত্রদের পাসের হার ৪৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ; ছাত্রীদের পাসের হার ৫৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এর মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীতে পাসের হার ৭০ দশমিক ৯০ শতাংশ। জেলায় পাসের হার ৪৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
এছাড়া তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে রাঙামাটিতে পাসের হার ৪১ দশমিক ২৪ শতাংশ, খাগড়াছড়িতে ৩৫ দশমিক ৫৩ এবং বান্দরবানে ৩৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ। কক্সবাজার জেলায় পাসের হার ৪৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার সবচেয়ে বেশি ৭৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাসের হার ৫৫ দশমিক ৩০ শতাংশ ও মানবিক বিভাগে পাসের হার ৩৭ দশমিক শূন্য ৮০ শতাংশ।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর ড. পারভেজ সাজ্জাদ চৌধুরী ফলাফলের বিষয়ে বলেন, এবার মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা ছিল খাতার মূল্যায়ন যেন মেধার ভিত্তিতে হয়। শিক্ষার্থী খাতায় লিখে যে নম্বরটি পাবে, সেটাই যেন মারকিং করা হয়। অতি মূল্যায়নের সুযোগ ছিল না। আমি পরীক্ষার পর সব প্রধান নিরীক্ষকদেও ডেকে এটাই বুঝিয়েছিলাম; রুব্রিক্স পদ্ধতিতে যেন খাতা কাটা হয়। তাছাড়াও জুলাই আন্দোলনের জন্য শিক্ষার্থীদের পড়াশুনায় বিঘ্ন ঘটেছিল। যা সার্বিক ফলাফলে প্রভাব পড়েছে বলেন তিনি।
ঢাকা বিশ্বদ্যালয়ের আরবি বিভাগ থেকে মাস্টার্সের ফলাফলে ৩.৯৭ সিজিপিএ পেয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করলেন ইমরান হোসেন। একই সাথে অসামান্য সাফল্যের জন্য ডিনস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ইমরান হোসেন।
মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ডিনস অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের হাত থেকে ইমরান হোসেন ডিনস অ্যাওয়ার্ড অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন।
ইমরান হোসেন গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার ডহরপাড়া গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে।
ইমরান হোসেন ঢাবির আররি বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী। স্নাতকে তিনি ৩.৮৫ সিজিপিএ পেয়ে প্রথম শ্রেণিতে পঞ্চম হন। এবার মাস্টার্সের ফলাফলেও তিনি ৩.৯৭ সিজিপিএ পেয়ে যৌথভাবে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছেন।
ইমরান হোসেন ২০১৬ সালে বলুহার ইসলামীয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও ২০১৮ সালে ঢাকা মাদ্রাসা ই আলিয়া থেকে আলিম পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি বিভাগে ভর্তি হন।
এছাড়া তিনি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া বাঁশবাড়িয়া মাদ্রাসা থেকে ২০০৯ সালে কুরআনের হিফজ সম্পন্ন করেন। এসময় গওহরডাঙ্গা আঞ্চলিক বোর্ড ১০ম স্থান অর্জণ করেন।
ঢাকার ফরিদাবাদ মাদ্রাসা থেকে দাওরা হাদিস সম্পন্ন করেন। এছাড়া ঢাকার মাদ্রাসাতুস সালমান থেকে মুফতি ডিগ্রি অর্জন করেন।
ইমরান হোসেন বলেন, ১৪ বছর আগে বাবা পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে পড়ায় ভেবেছিলাম লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে। তখন ছোট ভাই রেজোয়ান ইসলাম পরিবারের হাল ধরে আগলে রাখেন। পরিবারের সকলের সহযোগিতার জন্য আমার লেখাপড়া অব্যাহত থাকে এবং এই ফলাফল অর্জনে সক্ষম হই।
কোটালীপাড়া সাংবাদিক ফোরামের আহবায়ক মনিরুজ্জামান শেখ জুয়েল বলেন, একটি কৃষক পরিবার থেকে উঠে আসা ইমরান হোসেনের এই ফলাফল সত্যিই আমাদের জন্য গর্বের। ইমরান হোসেন কোটালীপাড়ার মুখ উজ্জ্বল করেছে। পরবর্তী প্রজন্ম ইমরান হোসেনের এই ফলাফলে অনুপ্রাণিত হবে।
মন্তব্য