পাবনার গণপূর্ত ভবনে অস্ত্রের মহড়ায় নেতৃত্ব দেয়া আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হোসেনকে নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন ঠিকাদারি সংশ্লিষ্ট আরও দুটি সরকারি অফিসের কর্মকর্তারা।
তারা বলছেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ফারুক হোসেন জোর করে ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নিতে ৬ জুনের ওই ঘটনার আগেও তাদের লাঞ্ছিত করেছেন; দিয়েছেন হত্যার হুমকিও।
তার ব্যাপারে মুখ খুলছেন স্থানীয় লোকজনও। তারা বলছেন, পাবনা শহরের কৃষ্ণপুর মহল্লার আতোয়ার হোসেনের ছেলে ফারুক হোসেন। তাদের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো ছিল না। সংসার চলত নিউ মার্কেটের কসমেটিক্সের দোকানের আয়ে। অষ্টম শ্রেণির পর আর লেখাপড়া হয়নি ফারুকের। একসময় লেখাপড়া বাদ দিয়ে সিনেমা হলের সামনে বাদাম বিক্রি শুরু করেন তিনি।
পরে বাবার দোকানের সামনের ফুটপাতে কসমেটিক্সের দোকানও দেন ফারুক। একপর্যায়ে চলে যান সিঙ্গাপুর। প্রায় এক যুগ আগে দেশে ফেরেন। তারপর ঠিকাদারি কাজের সমঝোতা করতে করতে পরিচিতি পান ‘নিগো ফারুক’ নামে। কখনও নিম্নমানের কাজ করে, কখনও কাজ না করেই বিল তুলতে থাকেন। এভাবে গড়তে শুরু করেন সম্পদের পাহাড়।
এর একপর্যায়ে ‘নিগো ফারুক’ নামের বদনাম মুছতে বছর পাঁচেক আগে হজ করেন ফারুক। তারপর থেকে নিজেকে হাজি ফারুক পরিচয় দিতে শুরু করেন। বর্তমানে তার ‘সিগন্যাল’ ছাড়া কোনো দপ্তরের ঠিকাদারি কাজ পান না কেউ।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, ফারুকের এত অল্প সময়ে এত ক্ষমতাধর হওয়ার পেছনে রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতা। তার আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে অষ্টম শ্রেণি ‘পাস’ ফারুক বাগিয়ে নিয়েছেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদকের মতো পদ।
ফারুক এখন নাইস কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক। যে প্রতিষ্ঠানটির নামে সম্প্রতি কোটি কোটি টাকার গাড়ি ও ঠিকাদারির কাজের যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে।
তবে ফারুক হোসেন বলছেন, তিনি কোনো অনিয়মে জড়িত নন। জেলার সব প্রকৌশলীর সঙ্গেই তার সুসম্পর্ক রয়েছে। ঠিকাদারি করেই বৈধভাবে এসব সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি।
গত ১২ জুন ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ৬ জুন দুপুর ১২টার দিকে ফারুক হোসেন দলবল নিয়ে গণপূর্ত ভবনে ঢোকেন। তার পেছনে শটগান হাতে ছিলেন পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলী রেজা খান মামুন। অস্ত্র হাতে ঢুকতে দেখা যায় জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শেখ লালুকেও।
এ ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ ছড়িয়ে পড়লে আগ্নেয়াস্ত্র দুটি ও সেগুলোর গুলি জব্দ করে পুলিশ। ঘটনা তদন্তে আওয়ামী লীগ নেতাদের অস্ত্র আইনের শর্তভঙ্গের প্রমাণ পেয়ে লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশও করেছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: আ.লীগ নেতারা শটগান হাতে গণপূর্ত অফিসে
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৬ জুনের আলোচিত এই ঘটনার আগে ২৩ মে জেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কার্যালয়ে এক প্রকৌশলীকে লাঞ্ছিত করেন ফারুক। আওয়ামী লীগের ‘প্রভাবশালী নেতাদের’ হস্তক্ষেপে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা হয়। তারও আগে গত ১৯ অক্টোবর ফারুক জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে ঢুকে সুপারিনটেনডেন্ট মুশফিকুর রহমানকে লাঞ্ছিত করে হত্যার হুমকি দেন।
স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা গেছে, ফারুক হোসেন পড়ালেখা ছেড়ে দেয়ার পর পাবনার বীণা বাণী সিনেমা হলের সামনে বাদাম বিক্রি করতেন। এভাবে কিছুদিন চলার পর নিউ মার্কেটে বাবার কসমেটিক্সের দোকানের সামনে ফুটপাতে কসমেটিক্সেরই কম দামি পণ্য বিক্রি শুরু করেন। তার কিছুদিন পর সিঙ্গাপুর চলে যান ফারুক। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশে ফেরেন।
আরও পড়ুন: শটগান হাতে গণপূর্ত অফিসে: অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ
ফারুক দেশে ফিরে প্রথমে বিভিন্ন ঠিকাদারের সাইট ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন। একপর্যায়ে স্থানীয় এক ‘প্রভাবশালী নেতার’ সুনজরে পড়েন। তার ছত্রছায়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), এলজিইডিসহ বিভিন্ন দপ্তরের ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নিতে শুরু করেন।
সাধারণ ঠিকাদারদের বাধা দেয়ার পাশাপাশি সিন্ডিকেট করে কাজ কেড়ে নিতে থাকেন। এভাবে টেন্ডার সমঝোতা কমিটির হর্তাকর্তা বনে যান ‘নিগো ফারুক’। ধীরে ধীরে এলজিইডির উন্নয়নকাজে আধিপত্য বিস্তার করে, কখনও নিম্নমানের কাজ করে, কখনও কাজ না করেই বিল তুলে নিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।
গত বছর ফারুক তার নাইস কনস্ট্রাকশনের অধীনে কয়েক কোটি টাকার ঠিকাদারি মেশিনারিজ ক্রয় করেছেন। কিনেছেন একাধিক দামি গাড়ি। নিজস্ব বাহিনীর জন্যও নিয়েছেন বেশ কিছু মোটরসাইকেল। জেলা প্রশাসকের বাসভবনের ঠিক সামনেরই একটি বিলাসবহুল বাড়িও কিনেছেন ফারুক।
ফারুকের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন এলজিইডি পাবনার সহকারী প্রকৌশলী ও দরপ্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি আব্দুল খালেক।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, সম্প্রতি স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে পাবনার ফরিদপুর উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকায় একটি রাস্তা নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করা হয়।
‘২৩ মে দুপুরে হঠাৎ হাজি ফারুক হোসেন আমার কক্ষে এসে কাজটি তাকে দেয়ার দাবি করেন। নিয়ম অনুযায়ী আবেদন, দরপ্রস্তাব ও কাগজপত্র ঠিক থাকলে কাজ পাবেন। আর যোগ্যতা না থাকলে বাতিল হবে জানালে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে গালিগালাজ করে আমাকে মারতে উদ্যত হন। তিনি আমাকে দেখে নেয়ারও হুমকি দেন।’
এ বিষয়ে কেন আইনি ব্যবস্থা নেননি জানতে চাইলে এলজিইডির এই সহকারী প্রকৌশলী বলেন, ‘ঘটনা জানিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রধান কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত জানিয়েছি। মামলার প্রস্তুতিও নিয়েছিলাম। কিন্তু প্রভাবশালী দুজন জনপ্রতিনিধি বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ নিয়ে আমাদের অফিসে আসেন। নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমান তাদের উপস্থিতিতে বিষয়টি মীমাংসা করে নেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এলজিইডি পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘এটি একটি মীমাংসিত বিষয়। এ নিয়ে কথা বলার কিছু নেই। সব বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া যায় না।’ সমঝোতা বৈঠকে উপস্থিত জনপ্রতিনিধিদের নাম জানতে চাইলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।
এলজিইডির একটি সূত্র জানায়, ফারুকের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ এবং নিম্নমানের কাজ করে বিলের জন্য কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি দেখানো নতুন কোনো ঘটনা নয়। ৬ জুনের আগেও কর্মকর্তাদের গালাগাল ও লাঞ্ছিত করেছেন তিনি। তার দাপটে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাধারণ ঠিকাদাররা অতিষ্ঠ। তারা আইনের আশ্রয় নেয়া তো দূরের কথা, তার বিরুদ্ধে মুখ খোলারই সাহস করেন না।
জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের সুপারিনটেনডেন্ট মুশফিকুর রহমানের অভিযোগ, গত ১৯ অক্টোবর হাজি ফারুক তাকে লাঞ্ছিত করেন এবং হত্যার হুমকিও দেন। তাই জীবনের নিরপত্তা চেয়ে সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।
মুশফিকুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জেলা ফিন্যান্স ও অ্যাকাউন্টস অফিস থেকে সব সরকারি কর্মকর্তার বেতন ও উন্নয়ন কাজের বিলের অর্থ দেয়া হয়। নাইস কনস্ট্রাকশনের মালিক ফারুক হোসেন তার একটি ঠিকাদারি কাজের জামানতের পাঁচটি চালান হারিয়ে ফেলে জাল চালান দিয়ে বিল দাখিল করেন। বিষয়টি আইনসম্মত না হওয়ায় হারিয়ে যাওয়া জামানতের চালানের অনুকূলে থানায় সাধারণ ডায়েরিসহ বিল দাখিলের পরামর্শ দেয়া হয়।
‘এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ফারুক। বিকেলেই ম্যানেজার আসাদকে নিয়ে অফিসে এসে গালিগালাজ করে মারতে যান। অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছুটে এসে তাকে থামাতে গেলে তিনি আমাকে হত্যার হুমকি দেন। পরে দলের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে এসে আমার কাছে ক্ষমা চান।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ফারুক হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রকৌশলী আব্দুল খালেকের সঙ্গে আমার কাজ নিয়ে কোনো ঝামেলা হয়নি। সামান্য কথাকাটি হয়েছিল।’
অন্য কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিত করার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জেলার সব প্রকৌশলীর সঙ্গেই আমার খুব ভালো সম্পর্ক।’
অঢেল সম্পদের বিষয়ে জানতে চাইলে ফারুক বলেন, ‘অন্যায়ভাবে সম্পদশালী হইনি। ঠিকাদারি ব্যবসায় ভালো করায় সম্পদ বেড়েছে।’
কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গাবাহী নৌকাডুবির পর উদ্ধারে গিয়ে নিখোঁজ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সিপাহী মো. বিল্লাল হাসানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়ায় বঙ্গোপসাগর থেকে রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বিল্লাল শাহপরীর দ্বীপ বিজিবি সীমান্ত চৌকির অধীনে সিপাহী ছিলেন। তিনি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কাজিরতলা গ্রামের বজলুর রহমানের ছেলে।
এর আগে গত শুক্রবার গভীর রাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় কক্সবাজারের টেকনাফে সমুদ্রে রোহিঙ্গাদের বহনকারী নৌকাডুবির ঘটনায় নারী-শিশুসহ ২৫ জন রোহিঙ্গাকে জীবত উদ্ধার করে। সে সময় বিজিবির সদস্যের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা নিখোঁজ হন।
ঘটনার পরের দিন শনিবার পর্যন্ত পাঁচজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান বলেন, ‘নিখোঁজ থাকার দুই দিন পর সাগর থেকে বিজিবি সদস্যের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। এর আগে সমুদ্রে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টাকালে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিম পাড়ায় বহনকারী নৌকায় উদ্ধার অভিযানে যায় বিজিবি সদস্য। ওই সময় নৌকাডুবির ঘটনায় সমুদ্রে নিখোঁজ হন তিনি। অবশেষে তার মৃতদেহ পাওয়া গেছে।’
তিনি বলেন, ‘এ ছাড়া ঘটনার দিন খবর পেয়ে বিজিবি সদস্যরা স্থানীয় জেলেদের সহায়তায় উদ্ধার অভিযানে যান এবং শিশুসহ ২৫ জনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হন। আমাদের উদ্ধার অভিযান চলছে।’
এদিকে নিহত বিজিবি সদস্যের ভাই আবু বকর বলেন, ‘ভাইকে খোঁজার জন্য টেকনাফের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলাম। এর মধ্য খবর আসে সাগরে চরের মধ্য ভাইয়ের মৃতদেহ পাওয়া গেছে।
‘গত শুক্রবার সাগরে রোহিঙ্গা বহনকারী নৌকা উদ্ধার অভিযানে গেলে নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ ছিল ভাই। ওই সময় আমাদের জানানো হয়েছিল তিনিসহ ৩৩ জন নিখোঁজ ছিল। এ নিয়ে আমাদের ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল।’
নিখোঁজ বিজিবি সদস্যের মরদেহ উদ্ধারের কথা জানিয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘এর আগে রোহিঙ্গা বহনকারী নৌকাডুবির ঘটনায় শিশুসহ চার রোহিঙ্গার মৃতদেহ ভাসমান পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আরও বেশ কিছু রোহিঙ্গা নিখোঁজ রয়েছে। তাদের বিষয়ে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।’
স্থানীয়রা জানান, গত ২২ মার্চ রাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাবাহী একটি নৌকা টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়া এলাকায় সাগরে ভাসতে দেখেন বিজিবির সদস্যরা। তারা স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আমিনের মালিকাধীন মাছ ধরার নৌকায় শাকের মাঝির নেতৃত্বে রোহিঙ্গা বহনকারী নৌকাটি থামানোর সংকেত দেন সমুদ্রে। পরে ওই নৌকাতে ওঠেন বিজিবি সদস্য।
ওই সময় উত্তাল সাগরের ঢেউয়ে নৌকাটি ডুবে যায়। সেখানে চিৎকারে নারী-শিশুসহ ২৫ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে স্থানীয় জেলে ও বিজিবি। পরে নিখোঁজ বিজিবি সদস্যসহ রোহিঙ্গাদের সন্ধানে সাগরে তল্লাশি চালানো হয়।
ডুবে যাওয়া নৌকায় অর্ধশতাধিক লোকজন ছিল বলে জানিয়েছেন উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গারা।
মানব পাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য ঈমান হোসাইন ও আবুল মনছুর মিলে মিয়ানমারের থেকে রোহিঙ্গা পারাপার করছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
আরও পড়ুন:সিলেটের কানাইঘাট সীমান্তের ওপারে ভারতীয় খাসিয়াদের গুলিতে নিহত শাহেদ আহমদের মরদেহ ফেরত দিয়েছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।
পতাকা বৈঠকের পর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের কাছে শনিবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে মরদেহ হস্তান্তর করে তারা।
পুলিশ জানায়, বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তবর্তী বড়ছড়া এলাকায় বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর ভারতের মেঘালয় রাজ্য পুলিশের হেফাজতে থাকা গুলিবিদ্ধ শাহেদ আহমদের মরদেহ বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে বিএসএফ।
পতাকা বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন জকিগঞ্জ বিজিবি ১৯ ব্যাটালিয়নের কোম্পানি কমান্ডার গোলাম কবির, কানাইঘাট থানার ওসি (তদন্ত) মো. আবু সায়েম এবং ভারতের পক্ষে বিএসএফ ও সেখানকার পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।
কানাইঘাট থানার ওসি (তদন্ত) মো. আবু সায়েম জানান, পতাকা বৈঠক শেষে শাহেদ আহমদের মরদেহ বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়। মরদেহ থানায় নিয়ে আসার পর আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে ভারতীয় খাসিয়ার গুলিতে নিহত হন শাহেদ আহমদ। তিনি লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী মঙ্গলপুর আলুবাড়ি গ্রামের মশাহিদ আলীর পুত্র।
তার মরদেহ উদ্ধার করে সেখানকার পুলিশ ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে। খবর পেয়ে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও থানা পুলিশকে অবহিত করে পরিবার। পরে বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করে মরদেহ আনার উদ্যোগ নেয় বিজিবি।
আরও পড়ুন:টানা তিন দিন ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পানির সংকটে ছিল কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল। তবে সোমবার রাতে নতুন মোটর লাগানোর পর পানির সংকট কেটেছে।
গত তিন দিন পানি না থাকায় ভোগান্তিতে ছিলেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে ৩০০ থেকে ৩৫০ জন রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে ভর্তি থাকেন হাসপাতালে। ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালে রোগী ও স্বজনসহ সহস্রাধিক মানুষ অবস্থান করেন।
প্রতিদিন এখানে ২০ হাজার লিটার পানি প্রয়োজন। হাসপাতালে পানির সংকটের কারণে অন্তত ৩০ জন রোগী অন্যত্র চলে গেছে বলেও খবর পাওয়া যায়।
পানির মোটর বিকল হয়ে যাওয়ায় হাসপাতালটিতে শনিবার বেলা ১১টা থেকে শৌচাগারসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। পানি সংকটে শৌচাগার থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতালে।
টানা দুই দিন বিকল হয়ে যাওয়া মোটরটি সচল করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয় কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে পানি সরবরাহের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাতে প্রয়োজন মেটেনি।
কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের (ভারপ্রাপ্ত) তত্ত্বাবধায়ক ডা. নূর মোহাম্মদ শামসুল আলম বলেন, ‘বিগত তিন দিনে রোগীদের অনেক ভোগান্তি হয়েছে, এটা সত্য। তবে আমরা আমাদের অবস্থান থেকে সমস্যা সমাধানে সর্বোচ্চ চেষ্টাটুকু করেছি।
‘গতকাল রাতে একটি নতুন মোটর লাগানোর পর পানি সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে।’
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলাধীন মেঘনা নদীতে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারের সঙ্গে স্পিডবোটের সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ছয়জনকে।
হতাহত সবাই নৌ ডাকাত নয়ন বাহিনীর সক্রিয় সদস্য বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
প্রাণ হারানো চারজন হলেন গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলী বেপারীর ছেলে ওদুদ বেপারী (৩৬), মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা চরঝাপ্টা রমজানবেগ গ্রামের বাচ্চু সরকারের ছেলে বাবুল সরকার (৪৮), চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার সাকিব (২৬) ও একই এলাকার নয়াকান্দি বড়ইচর গ্রামের মোহন ভান্ডারের ছেলে নাঈম (২৫)।
মেঘনা নদীর কালীপুরা ঘাট সংলগ্ন এলাকায় শুক্রবার রাত ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, হতাহত সবাই নৌ ডাকাত নয়ন বাহিনীর সক্রিয় সদস্য। তারা সবাই অবৈধ বালুমহাল পরিচালনার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। নিহত ওদুদ বেপারি নৌ ডাকাত নয়ন বাহিনীর সেকেন্ড ইন কামান্ড পিয়াসের বড় ভাই।
স্থানীয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামসংলগ্ন মেঘনা নদীতে অবৈধ একটি বালুমহাল পরিচালনা করতেন নৌ ডাকাত নয়ন বাহিনীর লোকজন। দিনের আলোতে নদীর ওই অংশে বালুমহালের অস্তিত্ব না থাকলেও সন্ধ্যা হলেই সেখানে চালু করা হতো বালুমহাল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অসংখ্যবার অভিযান চালিয়েও অবৈধ বালুমহালটি বন্ধ করতে পারেনি।
সন্ধ্যায় অবৈধ বালুমহাল চালুর পর আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তিন থেকে চারটি স্পিডবোট ও ট্রলার নিয়ে নদীতে মহড়া দেয় নয়ন বাহিনীর লোকজন। এ বাহিনীর সাথে বিগত কয়েক মাসে কয়েকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রতিপক্ষের গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়দের দাবি, শুক্রবার রাতে অবৈধ বালুমহালের জন্য বাল্কহেড আটক করতে একটি স্পিডবোট ও ইঞ্জিনচালিত একটি ট্রলার নিয়ে যাচ্ছিল নয়ন বাহিনীর লোকজন। ওই সময় নৌযান দুটিতে ১০ থেকে ১১ জন আরোহী ছিল। রাতে ঘন কুয়াশার কারণে দ্রুতগতির স্পিডবোটটি দিক ভুলে ট্রলারে ধাক্কা দিলে ট্রলারটি তলিয়ে যায় এবং স্পিডবোটটি দুমড়েমুচড়ে যায়।
এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে তিনজনের লাশ উদ্ধার হলেও নাঈম (২৫) নামে একজন নিখোঁজ হন।
তার সন্ধানে উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিস, কোস্ট গার্ড ও বিআইডব্লিউটিএ। পরবর্তী সময়ে শনিবার দুপুর দুইটার দিকে নাঈমের লাশ উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধার ইউনিট প্রত্যয় নারায়ণগঞ্জের কমান্ডার ও বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক ওবায়দুল করিম খান বলেন, ‘শুক্রবার রাতে আমরা শুনেছিলাম বাল্কহেডের সাথে স্পিডবোটের সংঘর্ষ হয়েছে। তবে ঘটনাস্থলে আসার পরে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, স্পিডবোটের সাথে একটি ইঞ্জিনচালিত ট্রলারের সংঘর্ষ হয়েছে। দুর্ঘটনায় ট্রলারটি তলিয়ে যায় এবং স্পিডবোটটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমার ধারণা, যারা মারা গেছে, তারা সবাই ট্রলারের যাত্রী ছিল।
‘এ ঘটনায় একজন নিখোঁজ ছিল। উদ্ধার অভিযানের একপর্যায়ে শনিবার দুপুর দুইটার দিকে দুর্ঘটনাস্থলের অদূরে ঝোঁপ থেকে নিখোঁজ নাঈমের লাশ উদ্ধার করি আমরা।’
নিহত ওদুদ বেপারীর স্ত্রী ফেরদৌসীর দাবি, অবৈধ বালুমহাল পরিচালনা নয়, পার্শ্ববর্তী মতলব উত্তর উপজেলার একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ শেষে ফেরার পথে দুর্ঘটনার শিকার হন তারা। এ ঘটনায় চারজন নিহত হন। আহত হন পাঁচ থেকে ছয়জন।
গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, ‘ঘন কুয়াশার কারণে নদীতে একটি ট্রলারের সঙ্গে দ্রুতগতির স্পিডবোটের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছে। বিস্তারিত পরে বলতে পারব।’
আরও পড়ুন:ঝালকাঠি সদর উপজেলার রামপুর জোড়াপোল এলাকায় ৬ জানুয়ারি সুদেব হালদার (২৮) নামের ব্যবসায়ীকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় জড়িতরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বজন ও স্থানীয়রা।
সুদের হত্যার দিনই ঝালকাঠি সদর থানায় একটি মামলা করেন তার বাবা সুব্রত হালদার। কিন্তু ঘটনার তৃতীয় দিনেও হত্যায় জড়িত কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
এমন বাস্তবতায় ক্ষোভ জানিয়েছে নিহতের পরিবার, স্বজন ও এলকাবাসী। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ করতে বৃহস্পতিবার দোকান বন্ধ রেখে রাস্তায় নামেন।
সকালে ঝালকাঠির বাউকাঠি বাজারের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এক ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে প্রতিবাদ জানান ব্যবসায়ীরা।
সকাল ১০টার দিকে সুদেব হালদারের বাউকাঠি বাজারের মোবাইল ফোনের দোকানের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন ব্যবসায়ীরা।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তৃতা করেন নবগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ব্যবসায়ী সরদার মো. শহিদুল্লাহ, বাউকাঠি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. রুহুল আমিন ফকির, সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম, ব্যবসায়ী রাহুল রাড়ী, রফিকুল ইসলাম, আলতাফ হোসেন মোল্লা, আলী হায়দার রাড়ী, মো. আবু বক্কর, সৈয়দ রুহুল আমিন, মো. বেল্লাল খান, মো. আনিস সিকদার এবং নিহতের সহোদর সাগর হালদার সুকেশসহ অনেকে।
বক্তাদের একজন বলেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে সুদেব হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় লাগাতার কর্মসূচি দেওয়া হবে।’
ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচিতে শতাধিক ব্যবসায়ী অংশ নেন।
গত ৬ জানুয়ারি রাতে সুদেব হালদার দোকান বন্ধ করে বাড়ির পথে রওনা হলে দুর্বৃত্তরা তার গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে যায়। সকালে স্থানীয়রা মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়।
আরও পড়ুন:বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে সচিবালয়ে আগুন ধরেছিল বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণি।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে মঙ্গলবার প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
নাসিমুল গণি বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক তদন্তে যেটা উঠে এসেছে, এটা বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণেই আগুন লেগেছে। প্রাথমিক তদন্তে কোনো ধরনের নাশকতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’
গত ২৬ ডিসেম্বর সচিবালয়ের একটি ভবনের চারটি ফ্লোর পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। ৭ নম্বর ভবনের এসব ফ্লোরে পাঁচটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আংশিক কার্যালয় এবং একটি বিভাগের পুরো কার্যালয়ের অবকাঠামোর সঙ্গে সব নথিপত্রও পুড়ে যায়।
তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য বুয়েটের অধ্যাপক ড. মাকসুদ হেলালী জানান, প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে দাখিল করা হয়েছে। তার সঙ্গে প্রাথমিক তদন্ত কমিটির রিপোর্ট নিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা বিস্তারিত আলোচনা হয়। প্রধান উপদেষ্টা বিশেষজ্ঞ দলের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে খুঁটিনাটি জেনে নিয়ে ভবিষ্যতে করণীয় সম্পর্কে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ বলেন, কোনো বিস্ফোরক ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের দেয়া নমুনাতেও কোনো বিস্ফোরক ব্যবহারের আলামত পাওয়া যায়নি। ডগ স্কোয়াডের সার্চেও মেলেনি বিস্ফোরকের আলামত।
আরও পড়ুন:পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা কর্মবিরতির কারণে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় এক কিশোরের মৃত্যুর জেরে একাধিক বাস ভাঙচুরের প্রতিবাদে সোমবার থেকে বাস চলাচল বন্ধ রাখেন শ্রমিকরা। মঙ্গলবারও ওই সড়কটিতে বাস চলাচল করেনি।
বাস বন্ধের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারগামী যাত্রীরা।
জকিগঞ্জের কামালগঞ্জ এলাকায় বাসের ধাক্কায় এক স্কুলছাত্রের নিহতের ঘটনার জেরে বাস ভাঙচুরের ঘটনায় সিলেট জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন অনির্দিষ্টকালের এ কর্মবিরতির ডাক দেয়। এর আগে সোমবার বিকেলে মঙ্গলবার থেকে সিলেটজুড়ে কর্মবিরতির ডাক দিলে রাতে ওই অবস্থান থেকে সরে আসেন শ্রমিকরা। কেবল সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে কর্মবিরতি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন তারা।
কদমতলী বাস টার্মিনালে মঙ্গলবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, টার্মিনাল থেকে কোনো বাস জকিগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যায়নি। একইভাবে জকিগঞ্জ থেকেও সিলেটের উদ্দেশে কোনো বাস ছেড়ে আসেনি। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীরা পড়েন মারাত্মক দুর্ভোগে।
টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, অনেক যাত্রী সেখানে বসে আছেন বাসের অপেক্ষায়। বাস ছেড়ে যাবে না জানার পরও তারা অপেক্ষা করছেন ধর্মঘট প্রত্যাহারের।
জকিগঞ্জ যাওয়ার জন্য টার্মিনালে অপেক্ষা করছিলেন কালিগঞ্জের যাত্রী বদরুল ইসলাম। তিনি জানান, পরিবার নিয়ে তিনি সকালে কদমতলী টার্মিনালে এসেছেন, কিন্তু কোনো বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। তাই মারাত্মক বিপাকে পড়েছেন।
তিনি আরও জানান, বিকেল নাগাদ ধর্মঘট প্রত্যাহার না হলে মাইক্রোবাস রিজার্ভ করে তাকে বাড়ি ফিরতে হবে।
গত রোববার সকালে জকিগঞ্জের কামালগঞ্জ আব্দুল মতিন কমিউনিটি সেন্টারের নিকটে সড়কের পাশে শিশু-কিশোররা ফুটবল খেলছিল। হঠাৎ বল সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে চলে গেলে সেটি আনতে আবির আহমদ (১৪) নামের এক কিশোর দৌড় দেয়। সে সময় দ্রুতগামী একটি গেটলক বাসের ধাক্কায় সে গুরুতর আহত হয়।
পরে তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পর স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা বাসটি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন।
পরিবহন শ্রমিকদের অভিযোগ, অন্তত তিনটি বাস ভাঙচুর করা হয় ওই সময়। এর প্রতিবাদে সোমবার পরিবহন শ্রমিকরা সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন। মঙ্গলবারও এ সড়কে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন তারা।
জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মুহিত বলেন, ‘আমাদের বাসের চালক অন্যায় করলে আইন অনুযায়ী তার শাস্তি হবে, কিন্তু আইন হাতে তুলে নিয়ে বাস ভাঙচুর করা ও পোড়ানো সন্ত্রাসী কাজ।
‘আমরা এর বিচার চাই। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত বাসের চালক বাদী হয়ে জকিগঞ্জ থানায় মামলা দায়েরের আবেদন করেছেন।’
জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম মুন্না বলেন, ‘বাস ভাঙচুরের দাবি করে রোববার রাতে হেলাল মিয়া নামের একজন লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। সেটি আমরা তদন্ত করে দেখছি। সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে এখন বাস, মিনিবাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য