অধ্যাপক যতীন সরকার আমাদের চেতনার অন্যতম বাতিঘর। তার মনীষা, দিকনির্দেশনা আমাদের আলো দেখায়। অসাম্প্রদায়িক-প্রগতিশীল চিন্তা ঋদ্ধ করে। স্বাধীনতা পুরস্কার ও বাংলা একাডেমি পদকপ্রাপ্ত এ চিন্তাবিদ ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি, ভাষা-সংস্কৃতি ও এর বর্তমান অবস্থা নিয়ে কথা বলেছেন নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন নেত্রকোনা প্রতিনিধি অনিন্দ্য পাল চৌধুরী।
প্রশ্ন: ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে বাংলা ভাষা নিয়ে আমরা একটু বেশি সরব হই। সারা বছর এ নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য পরিলক্ষিত হয় না। এ বিষয়ে আপনি কী ভাবেন?
উত্তর: একুশের চেতনা নিয়ে আমরা অনেক বড় বড় কথা বলি। বিশেষ করে ফেব্রুয়ারি মাস এলেই সর্বত্র এসব কথা শোনা যায়। কিন্তু একুশের চেতনাকে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করার জন্যে প্রশাসন থেকে আরম্ভ করে অন্যান্য মানুষ বিশেষ করে হঠাৎ বিত্তশালী হওয়া ব্যক্তিদের কোনো গরজ চোখে পড়ে না। গরজ তো করেনই না বরং একুশের চেতনাবিরোধী কাজ তারাই করেন। সেই অপকমের্র মধ্যে একটি হচ্ছে ইংরেজিমাধ্যম বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা এবং ওই মাধ্যমে ছেলেমেয়েদের পড়ানো। সন্তানদের বাংলা ভাষা ভালোভাবে শেখানোর যে ব্যাপারটা, সেটিও তারা করেন না। কাজেই এই অবস্থাতে একুশের চেতনা বাস্তবায়নের কথা মুখে বলা একেবারে অনর্থক।
প্রশ্ন: অনেকে বলে থাকেন বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চায় সমস্যা আছে, সেক্ষেত্রে আপনি কী বলবেন?
উত্তর: বিশ্বের সব জ্ঞান-বিজ্ঞানকে আমাদের ভাষায় নিয়ে আসতে হবে, করতে হবে মানসম্মত পরিভাষা ও অনুবাদ। যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু ইংরেজি ভাষার চর্চা ভালোভাবে করতে হবে। অন্য একটি ভাষা ভালো করে শিখলে সেই ভাষায় খুব তাড়াতাড়ি অনুবাদ করা যায়। আসল কথা হলো এটা কোনো অনুবাদই নয়। অন্য ভাষায় চিন্তা করা যায় না। চিন্তার ভাষা হচ্ছে মাতৃভাষা। ইংরেজির সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে আমরা পরিচিত। কাজেই ইংরেজি ভাষাটাও ভালো করে শিখতে হবে। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই ইংরেজির দাসত্ব করা চলবে না; কিংবা বিদেশি ভাষার দাসত্ব করা যাবে না।
প্রশ্ন: ভাষা আন্দোলনের অন্তর্নিহিত চেতনা প্রসঙ্গে যদি কিছু বলেন।
উত্তর: ভাষার যে আন্দোলন সেটা মূলত সাংস্কৃতিক আন্দোলনই ছিল। ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা রবীন্দ্রনাথকে চিনেছি। আমরা ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নজরুলের খণ্ডিতকরণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি। ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রচর্চা যেমন হয়েছে, তেমনি বাংলা ভাষাকে সঠিকভাবে ব্যবহারের যে চর্চা সেটিও হয়েছে। কাজেই এটি প্রকৃত প্রস্তাবে একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন ছিল। সেই সাংস্কৃতিক আন্দোলনই একসময় রাজনৈতিক আন্দোলন এবং তারপরে সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামে পরিণত হয়েছে। এই সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা লাভ করেছি। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন মুক্তির সংগ্রামের কথা। এখন লক্ষ্য হওয়া উচিত মুক্তির সংগ্রামে বিজয় লাভ করা।
প্রশ্ন: মাতৃভাষার উন্নতিকল্পে কী করণীয়?
উত্তর: মানুষ যে ভাষায় চিন্তা করে সেই ভাষায় কথা বলে। মাতৃভাষা ছাড়া অন্য ভাষায় কেউ চিন্তা করতে পারে না। কাজেই আমাদের মাতৃভাষার উন্নতির জন্য করণীয় সব কিছু করা উচিত। বাংলা ভাষাকে সত্যিকার অর্থে প্রচার করতে হলে বিদেশি ভাষাকেও ভালো করে জানতে হবে। এ ছাড়া বাংলা ভাষার ব্যাপক প্রচার করার আর কোনো বিকল্প নেই।
প্রশ্ন: আপনার স্মৃতি থেকে ভাষা আন্দোলনের কথা জানতে চাই।
উত্তর: ঘটনা ঢাকায় ঘটলেও এটা যে গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল সেটার সাক্ষী আমি। তখন আমি দশম শ্রেণির ছাত্র। আমি স্কুল থেকে বের হয়ে গিয়ে বসুরবাজারে হরতাল করি। এলাকার সমস্ত মানুষ সেই হরতালে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দেয়। এভাবে প্রত্যেকটা গ্রামের বাজারে বাজারে হরতাল হয়। সবখানে যখন একুশের ইতিহাস ও ঘটনার কথা লেখা হয়, তখন সেটা বড়জোর মহকুমা পর্যন্ত এসে থেমে যায়। যদি গ্রামাঞ্চলে কৃষকদের মধ্যে, কৃষকদের সন্তানদের মধ্যে চেতনা বিস্তৃত না হতো, তাহলে একুশ এত বিস্তৃত হতে পারত না।
প্রশ্ন: একুশের চেতনায় যে সাংস্কৃতিক ধারা সৃষ্টি হয়েছিল, সেটি কি বর্তমান প্রবাহিত বলে মনে করেন?
উত্তর: আমরা সবাই বলি একুশের চেতনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনা লাভ করেছি। একটা স্বাধিকার সংগ্রাম আমরা করেছি। একুশের চেতনার মধ্য দিয়ে একটা সাংস্কৃতিক সংগ্রাম তৈরি হয়েছিল। এখন সেই সাংস্কৃতিক ধারাটা বদলে গেছে। আমরা একুশের চেতনাকে মুখে মুখে বলি। একুশে ফেব্রুয়ারি আসলেই অনেক কথা বলি। কিন্তু একুশের চেতনাকে বাস্তবায়নের জন্য যথার্থ অর্থে বাংলা ভাষার যে সর্বত্র ব্যবহার এবং আমাদের সংবিধানে যে রাষ্ট্রভাষা বাংলার কথা বলা হয়েছে, তা সবখানেই বাস্তবায়িত হয়নি। বরং আজকে কিছুসংখ্যক মানুষ ইংরেজি মাধ্যমে ছেলেমেয়েদের পড়াতে পারলে বিশেষ খুশি হন। ইংরেজিমিশ্রিত ভাষা বলার চেষ্টা চলছে; যেটাকে বাংলিশ বলা যায়।
প্রশ্ন: আপনার মতে একুশের চেতনা কীভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব?
উত্তর : একুশের চেতনা যদি সত্যি সত্যি বাস্তবায়ন করতে চাই, তাহলে আমাদের সব জায়গায় বাংলা ভাষা যাতে প্রয়োগ হয়, সেই ব্যবস্থাটি আগে করতে হবে। অফিস-আদালতে বাংলা ভাষার ব্যবহার করতে হবে। বিচারকদের বাংলায় রায় দিতে হবে। সবখানে বাংলা যদি প্রয়োগ না হয় বা বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয় চালু না হয়, তবে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিচর্চা হুমকিতে পড়বে। ইংরেজি ভালোভাবে শেখার ব্যবস্থা বাংলা মাধ্যমেই সম্ভব। ইংরেজি ভালোভাবে শিখে এসে সেই বাংলা মাধ্যমে প্রচার করার ব্যবস্থা করতে হবে। এটি না করলে প্রকৃত অর্থে একুশের চেতনার বাস্তবায়ন আমরা করতে পারব না। একুশের ইতিহাস সঠিকভাবে লেখা হোক। চেতনা জাগ্রত হোক, এটাই ভাষার মাসে সবচেয়ে আমার বড় চাওয়া। একুশের চেতনা জাগ্রত করতে হলে একটা সাংস্কৃতিক আন্দোলন করতে হবে। যেমন ৬০-এর দশকে গড়ে উঠেছিল। সেই রকম একটা সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া একুশের চেতনাকে জাগ্রত করা এবং সবখানে প্রসারিত করা সম্ভব হবে না।
প্রশ্ন: নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ
উত্তর: ধন্যবাদ।
জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদের বলেছেন, ‘তিন বিদেশি বড় শক্তি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে কাজ করেছিল। আরও বেশ কয়েকটি বিদেশি শক্তি আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করার জন্য প্রস্তুত ছিল।’
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে শনিবার জাপার কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বর্ধিত সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
জিএম কাদের বলেন, ‘৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিদেশি বন্ধুদের সঙ্গে বৈঠক করে পরিষ্কার বুঝেছি, তিনটি বিদেশি বড় শক্তি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে এবং নির্বাচন সফল করতে কাজ করে যাচ্ছে। শুধু তারা নয়, আরও বেশ কয়েকটি বিদেশি শক্তি আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করতে প্রস্তুত ছিল।’
নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছিল জানিয়ে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচন বন্ধ করে কোনো দেশে সরকার পরিবর্তন সম্ভব নয়। তাই জাতীয় পার্টি নিয়মতান্ত্রিকভাবে রাজনীতি করছে।
‘নির্বাচনের আগে বর্ধিত সভায় নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে মতামত দেয়া হয়েছিল। ভোটে না গেলে ভবিষ্যতে জাতীয় পার্টিকে টিকিয়ে রাখা যাবে কী না সন্দেহ ছিল। তাই নির্বাচনে গিয়েছি।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। ভোটের আগ মুহূর্তে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তখন সুষ্ঠুভাবে পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করেছি। মনে হয়েছে, বিভিন্ন বিদেশি শক্তি বিভিন্নভাবে নানা দিকে নিচ্ছিল।
‘আর বিএনপির আন্দোলন নিয়ে পরিষ্কার ধারণা ছিল, তারা সফল হবে না। আন্দোলন চলাকালে তৃতীয় শক্তি এসে সরকার পরিবর্তন করে- এমন ইতিহাস বাংলাদেশে নেই। ফলে বিএনপি এক কিংবা ১০ লাখ বা এক কোটি লোক নিয়ে রাস্তায় নামলেও তাদের আন্দোলন সফল হবে না, তা বুঝতে পেরেছিলাম।’
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিএনপি ও জামায়াত আন্দোলনে পরাস্ত হয়ে জাতীয় পার্টিকে দোষ দিচ্ছে। তবে এটা ঠিক যে নির্বাচন ভালো হয়নি। সরকার জাতীয় পার্টিকে গৃহপালিত দল হিসেবে দেখতে চায়। তবে তা কখনও সম্ভব নয়। জাতীয় পার্টি কখনোই অনুগত বিরোধী দল ছিল না এবং আমরা গৃহপালিত বিরোধী দল হতে রাজি নই।’
তীব্র গরম থেকে বাঁচতে ও বৃষ্টির আসায় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় নেচে গেয়ে ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছেন স্থানীয়রা। লোকজন।
উপজেলার চন্দ্রখানা বালাটারি গ্রামে শনিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বিয়ের অনুষ্ঠান চলে।
ওই এলাকার বাসিন্দা সাহাপুর আলীর স্ত্রী মল্লিকা বেগমের আয়োজনে বিয়েতে অসংখ্য নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। নাচ গানের মধ্যে দিয়ে ব্যাঙের বিয়ে শেষে বরণ ডালায় ব্যাঙ দুটিকে নিয়ে পুরো গ্রাম ঘুরে বেড়ান তারা। এ সময় গ্রামবাসীদের কাছ থেকে চাল ডাল সংগ্রহ করে বিয়েতে অংশগ্রহণকারীদের খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়।
বিয়ের আয়োজনকারী মল্লিকা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কিছুদিন ধরে তীব্র গরম। তাপমাত্রা বেশি হওয়ার কারণে আমরা কষ্টে রয়েছি; গ্রামের মানুষজন অস্তিত্বতে আছে। কেউই কোনো কাজ কামাই করতে পারছেন না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আগের যুগের মানুষরা ব্যাঙের বিয়ে দিলে বৃষ্টি হতো। সেই বিশ্বাস থেকেই আজ ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছি।’
বিয়ে দেখতে আসা জাহিদ নামের একজন বলেন, “আমার জীবনে প্রথম ব্যাঙের বিয়ে দেখলাম। খুবই ভালো লেগেছে। ‘বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের বিয়ে’ বিষয়টি প্রথম জানলাম।”
বৃদ্ধ আজিজুল হক বলেন, ‘বৃষ্টি না হওয়ার কারণে আবাদের ক্ষতি হচ্ছে। তাই বৃষ্টির আশায় ব্যাঙের বিয়েতে অংশগ্রহণ করেছি।’
রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘কুড়িগ্রামে বেশ কিছুদিন ধরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। আজ (শনিবার) জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।’
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে এক বছরের শিশু হুমাইরা আক্তারের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকালে সদর উপজেলার মদিনা বাজার এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মদিনা বাজারের উত্তর পাশে খানকা শরীফের সামনের সড়কে দুটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে।
এ সময় রাস্তার পাশে এক বছরের শিশু সন্তান হুমাইরাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা হাবিবা বেগমের ধাক্কা খান অটোরিকশার সঙ্গে। এতে শিশু হুমাইরা মায়ের কোল থেকে রাস্তায় ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হয়। শিশুটিকে দ্রুত মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় অটোরিকশা দুটি আটক করা হয়েছে। পালিয়ে যাওয়া দুই চালককে আটকের চেষ্টা চলছে।
চলমান তাপপ্রবাহে সারা দেশের সঙ্গে পুড়ছে রাজধানী ঢাকাও। প্রচণ্ড গরমে দুর্বিষহ নগর জীবন। এ অবস্থায় রাজধানীর সড়ক-মহাসড়কে পানি ছিটাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ডিএনসিসির চিফ হিট অফিসারের পরামর্শে এমন উদ্যোগ নিয়েছে সিটি কর্তৃপক্ষ।
শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বায়ু দূষণ রোধ ও তীব্র দাবদাহে শহরকে ঠাণ্ডা রাখতে ডিএনসিসির ওয়াটার স্প্রে (পানি ছিটানো) কার্যক্রম পরিদর্শন করেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।
এ সময় তিনি বলেন, ‘দুটি স্প্রে ক্যানন প্রধান সড়কে পানি ছিটাবে। এগুলো বেশ বড় হওয়ায় গলির সড়কে প্রবেশ করতে পারবে না৷ গলির সড়কে পানি ছিটানোর জন্য দশটি ব্রাউজার কাজ করবে। এগুলোর মাধ্যমে সড়কগুলো ভিজিয়ে ঠাণ্ডা রাখা হবে।
‘এছাড়াও ডিএনসিসির পার্কগুলোতে স্প্রে ক্যাননের মতো কৃত্রিম বৃষ্টির ব্যবস্থার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছি। এক সপ্তাহের মধ্যে পার্কগুলোতে কৃত্রিম বৃষ্টির ব্যবস্থা করা হবে।’
এ সময় তিনি বলেন, ‘চিফ হিট অফিসার (সিএইচও) বুশরা আফরিনের পরামর্শে চলমান তীব্র দাবদাহে জনগণকে স্বস্তি দিতে সড়কে পানি ছিটানো এবং ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডে বিনামূল্যে খাবার পানি সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘প্রতিটি ওয়ার্ডে তিনটি বিশেষ ভ্যানগাড়ি (৫০০ লিটার পানির ট্যাংক সংবলিত) পথচারীদের পানি পান করানোর জন্য নামানো হয়েছে। ভ্যানগুলো বিশুদ্ধ খাবার পানি নিয়ে ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরবে। এই ভ্যানগুলো ছোট আকারে করা হয়েছে যেন শহরের অলিগলিতে প্রবেশ করতে পারে।’
চিফ হিট অফিসারের কার্যক্রম সম্পর্কে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘চিফ হিট অফিসার আমাদের পরামর্শ দিচ্ছেন। হিট অফিসার একজন একক ব্যক্তি। তিনি তো কাজগুলো বাস্তবায়ন করবেন না। তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু কাজগুলো আমাদের সবাইকে করতে হবে। তার পরামর্শেই জনগণকে স্বস্তি দিতে আমরা এই কাজগুলো করছি।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অনেকে বলছেন যে চিফ হিট অফিসার সিটি করপোরেশন থেকে বেতন পাচ্ছেন। বাস্তবে সিটি করপোরেশন থেকে তিনি একটি টাকাও পান না। এমনকি সিটি করপোরেশনে তার কোনো বসার ব্যবস্থাও নেই।
‘হিট অফিসার নিয়োগ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান অ্যাড্রিয়েন আরশট-রকফেলার ফাউন্ডেশন রেসিলিয়েন্স সেন্টার (আরশট-রক)। প্রতিষ্ঠানটি সারা বিশ্বে সাতজন চিফ হিট অফিসার নিয়োগ করেছে এবং তারা সবাই নারী।’
ওয়াটার স্প্রে পরিদর্শনকালে অন্যান্যের মধ্যে ডিএনসিসি'র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী ও প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ফিদা হাসান উপস্থিত ছিলেন।
মুন্সীগঞ্জে হিটস্ট্রোকে সাখাওয়াত হোসেন মুকুল নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির মাঠ পর্যায়ের বিপনন বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
২৭ বছর বয়সী মুকুলের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলায়।
প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির মুন্সীগঞ্জ শহরের সেলস রিপ্রেজেনটেটিভ মোহাম্মদ রোকন জানান, শনিবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জ শহরের অদূরে মুন্সীরহাট এলাকায় মাঠ পর্যায়ে কর্মরত অবস্থায় তীব্র গরমের কারণে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন মুকুল। সঙ্গে সঙ্গে তাকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালে নিয়ে এলে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস হাসান জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগে পথেই তার মৃত্যু হয়েছে। নিহতের হিটস্ট্রোকের লক্ষণ রয়েছে বলে জানান তিনি।
নিহতের মরদেহ তার নিজ জেলায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
আকস্মিক কালবৈশাখীর তাণ্ডবে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ও শমশেরনগর ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে আরও বেশ কিছু বাড়িঘর। ঝড়ের পর খোলা আকাশের নিচে দিনযাপন করছে অর্ধশতাধিক পরিবার।
এ ছাড়াও গাছপালা উপড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙেছে এবং তার ছিঁড়ে পড়ে। এতে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ওই অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
শুক্রবার রাত ৩টার দিকে এই ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হয়। প্রায় সাড়ে ১৫ ঘণ্টা পর শনিবার বিকেল ৪টার দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কালবৈশাখীর তাণ্ডবে উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের পতনঊষার, ধূপাটিলা, উসমানগড়, ব্রাহ্মণঊষারসহ ৮টি গ্রামের প্রায় শতাধিক ঘর এবং শমশেরনগর ইউনিয়নের কেছুলুটি, ভাদাইরদেউল গ্রামে আরও কয়েকটি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অসংখ্য গাছ-বাঁশ উপড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ও লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
পতনঊষার ইউনিয়নের নেছার মিয়া, ময়নুল মিয়া, খুশবা বেগম, লিপি বেগম, রহমান মিয়া, সুফিয়ান মিয়া, কালাম মিয়া, আনু মিয়া, ফখরুল মিয়াসহ অসংখ্য পরিবার দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন।
ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, গতরাতে কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে তীব্র শিলাবৃষ্টি হয়। মুহুর্তের মধ্যে তাদের ঘরবাড়ি উড়িয়ে নিয়ে যায়। আমরা এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি। সহোযোগিতা না পেলে আমাদের রাস্তায় থাকতে হবে।’
পতনঊষার ইউপি সদস্য তোয়াবুর রহমান জানান, আকস্মিক ঝড়ে পতনঊষার গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যাদের বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে সেসব দরিদ্র পরিবারের জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে।
পতনঊষার ইউপি চেয়ারম্যান অলি আহমদ খান বলেন, ‘কালবৈশাখী ঝড়ে আমার ইউনিয়নে প্রচুর পরিমাণ বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অনেক পরিবার খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। তাদের দ্রুত সহায়তার প্রয়োজন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাহেবকে অবহিত করা হয়েছে।’
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক গোলাম ফারুক মীর বলেন, ‘ঝড়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েকটি খুঁটি ভেঙে পড়েছে। অনেক স্থানে তার ছিঁড়ে গেছে। এসব জায়গায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার জন্য কাজ চলছে।’
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ ইউএনও জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘পতনঊষার ইউপি চেয়ারম্যান বাড়িঘর বিধ্বস্তের কথা বলেছেন। তবে পরিপূর্ণ হিসাব জানা যায়নি। চেয়ারম্যানদেরকে বলা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে দেয়ার জন্য। দ্রুত তাদের সহোযোগিতা করা হবে।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর বনানীতে মাঝ সড়কে চলন্ত অবস্থায় যাত্রীবাহী বাসে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নির্বাপনে কাজ করে।
জানা গেছে, শনিবার বিকেলে জে কে এন্টারপ্রাইজ পরিবহনের একটি বাস বনানী আর্মি স্টেডিয়ামের সামনে একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিলে মোটরসাইকেলের ট্যাঙ্কি বিস্ফোরিত হয়ে বাসটিতে আগুন ধরে যায়।
ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বরত কর্মকর্তা খালেদা ইয়াসমিন জানান, বিকেল ৪টা ২ মিনিটে যাত্রীবাহী একটি বাসে আগুন লাগার খবর আসে। পরে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নির্বাপন করে। প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা-শেরপুর রুটে চলাচল করা জে কে এন্টারপ্রাইজ পরিবহনের বাসটি বনানী আর্মি স্টেডিয়ামের সামনে একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। পরে মোটরসাইকেলটিকে টেনে-হিঁচড়ে বাসটি অনেক দূর নিয়ে আসে। এতে মোটরসাইকেলের তেলের ট্যাঙ্ক বিস্ফোরিত হয়ে বাসটিতেও আগুন লেগে যায়। এ ঘটনায় মোটরসাইকেলের চালক গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
মন্তব্য