ইসরায়েলি মন্ত্রীর আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে ঢোকার ঘটনায় প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে আরব বিশ্ব। আল-আকসা মসজিদের তত্ত্বাবধায়ক দেশ জর্ডান এই সফরকে আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন জানিয়ে কড়া সমালোচনা করেছে।
ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়া মিশর এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো আরব রাষ্ট্রগুলোও নিন্দা জানিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, যে সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েল শান্তি চুক্তি করতে মুখিয়ে, তারাও এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে। ইসরায়েলি মন্ত্রীর এই সফরটি ফিলিস্তিনিদের ক্ষোভকে আরও তীব্র করেছে।
আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণ মুসলিমদের কাছে ‘নোবেল স্যাঙ্কচুয়ারি’ হিসেবে পরিচিত। এটি ইসলামের তৃতীয় পবিত্র স্থান। পাশাপাশি এটি ইহুদি ধর্মেরও সবচেয়ে পবিত্র স্থান। এখানে তাদের দুটি প্রাচীন মন্দিরের অবশেষ রয়েছে।
ধর্মপ্রাণ ইহুদিরা মঙ্গলবার খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর সেই মন্দির দুটির প্রথমটিতে ব্যাবিলনীয় অবরোধের স্মরণে উপবাস করেছিলেন। এ সময় আকস্মিকভাবে জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণ পরিদর্শনে আসেন ইসরায়েলের নতুন উগ্র ডানপন্থি সরকারের নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির।
এই সফরের কয়েক ঘণ্টা আগে পাশের বেথলেহেমে এক ফিলিস্তিনি কিশোরকে গুলি করে হত্যা করে ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের দাবি, নিরাপত্তার স্বার্থে গুলি করা হয়েছে ওই কিশোরকে।
পরিদর্শন শেষে প্রথম টুইটে ইসরায়েলি মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির লেখেন, ‘টেম্পল মাউন্ট সবার জন্য উন্মুক্ত।’
আল আকসা সাইটের ইহুদি নাম টেম্পল মাউন্ট।
টুইটারে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কম্পাউন্ডের সীমানায় ঘোরাফেরা করছেন বেন-গভির। তার পাশে একজন অর্থোডক্স ইহুদি। তাদের ঘিরে আছে ভারী অস্ত্রে সজ্জিত একদল নিরাপত্তা বাহিনী।
The #Israeli far right wing minster Ben Gvir visited in Al-Aqsa compound for 13 minutes for the first time since election, pic.twitter.com/IP2xk4bsTJ
— Rushdi Abualouf (@Rushdibbc) January 3, 2023
এ সফরের পক্ষে সাফাই বক্তব্য দিয়েছে ইসরায়েল সরকার। তেল আবিবের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর জাতীয়তাবাদী-ধর্মীয় মন্ত্রিসভার শীর্ষ সদস্য বেন-গভিরের ১৫ মিনিটের সফরটি নিয়ম মেনেই হয়েছে। কারণ, কয়েক দশক আগের একটি ‘তথাকথিত স্থিতাবস্থা’ অমুসলিমদের শর্তের বিনিময়ে স্থানটি ভ্রমণের অনুমতি দেয়। শর্ত অনুযায়ী, অমুসলিমরা সেখানে প্রার্থনা করতে পারবেন না। আমাদের মন্ত্রী মসজিদের কাছেই যাননি।
সফরটি কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ছাড়াই শেষ হলেও, এটি ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে উত্তেজনা সৃষ্টির ঝুঁকি তৈরি করেছে।
ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শাতায়েহ ফিলিস্তিনিদের ‘আল-আকসা মসজিদে হামলা মোকাবিলা করার’ আহ্বান জানিয়েছেন। বেন-গভিরকে স্থানটিকে ‘ইহুদি মন্দিরে পরিণত করার’ ষড়যন্ত্র করার জন্য অভিযুক্ত করেছেন ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রী।
ইসরায়েল অবশ্য এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। আল-আকসা প্রাঙ্গণে ইহুদি প্রার্থনার ওপর নিষেধাজ্ঞার অবসানের পক্ষে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন বেন-গভির। ইসরায়েলের নতুন মন্ত্রিসভার বেশির ভাগ সদস্য এখন এটাই চাইছে।
বেন-গভির ইসরায়েলি পুলিশ বাহিনীর তত্ত্বাবধায়ক। এই পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে আল-আকসা প্রাঙ্গণে ইহুদি প্রার্থনার ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার দায়িত্বপ্রাপ্ত।
ইসরায়েলের সঙ্গে সহাবস্থান প্রত্যাখ্যানকারী এবং গাজা নিয়ন্ত্রণকারী ফিলিস্তিনি ইসলামি গোষ্ঠী হামাসের এক মুখপাত্র বেন-গভিরের সফর নিয়ে বলেন, ‘এই আচরণের ধারাবাহিকতা সব পক্ষকে একটি বড় সংঘর্ষের কাছাকাছি নিয়ে যাবে।’
টুইটে হামাসের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে দেরি করেননি ইসরায়েলের নিরাপত্তামন্ত্রী বেন-গভির।
তিনি লেখেন, ‘হামাস যদি মনে করে যে তারা আমাকে হুমকি দিয়ে আটকাতে পারবে, তবে তাদের বোঝা উচিত যে সময় বদলে গেছে। জেরুজালেমে একটি সরকার আছে!’
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু তার ষষ্ঠ মেয়াদে পবিত্র স্থানগুলোর চারপাশে ‘স্থিতিশীলতা’ রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বেন-গভির মঙ্গলবার বলেন, ‘জেরুজালেম প্রাঙ্গণে আন্দোলনের স্বাধীনতা বহাল থাকবে।’
এ সময় তিনি উপাসনার স্বাধীনতার বিষয়টি উল্লেখ করেননি।
ইসরায়েল গোটা জেরুজালেমকে তার ‘অবিচ্ছিন্ন’ রাজধানী মনে করে। তবে এই মর্যাদা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নয়। অন্যদিকে পূর্ব জেরুজালেমকে (যেখানে কম্পাউন্ডটি অবস্থিত) ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী বিবেচনা করে পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকা নিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখেন ফিলিস্তিনিরা।
গাজা উপকূলে ইসরায়েলি সৈন্যরা দুজন নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যার পর তাদের মরদেহ বুলডোজার দিয়ে বালুর নিচে চাপা দেয়ার একটি ভিডিও ফুটেজ সম্প্রচার করেছে আল জাজিরা।
এ ঘটনা তদন্তের জন্য বুধবার জাতিসংঘকে আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম নাগরিক অধিকার ও অ্যাডভোকেসি সংগঠন ‘দ্য কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন (সিএআইআর)’।
আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদনে বৃহস্পতিবার সিএআইআরের এ আহ্বানের কথা জানানো হয়।
আল জাজিরার দুই মিনিটের ওই ভিডিওটিতে দুই ফিলিস্তিনিদের মধ্যে একজনকে হাত উঁচু করে সাদা কাপড়ের টুকরো ওড়াতে দেখা যায়।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, সাদা কাপড় দেখিয়ে ওই ফিলিস্তিনি হয়ত বোঝাতে চাচ্ছিলেন তারা কোনো হুমকি নন। দুজনই উপকূল বরাবর একটি উন্মুক্ত এলাকায় হাঁটছিলেন, সম্ভবত তারা উত্তর গাজায় ফিরে যাওয়ার চেষ্টায় ছিলেন।
সিএআইআর জানায়, ইসরায়েলি বাহিনী গাজার উপকূলে দুই ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করেছে, যারা কোনো হুমকি ছিল না। এরপর তাদের মৃতদেহ মাটিচাপা দেয়ার জন্য একটি সামরিক বুলডোজার ব্যবহার করা হয়।
এমন জঘন্য যুদ্ধাপরাধের আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানিয়ে কাউন্সিল বলেছে, ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের ‘ইচ্ছে মতো’ হত্যা করছে এবং তাদের মৃতদেহগুলো ‘আবর্জনার মতো’ ব্যবহার করছে।
গণহত্যামূলক ইসরায়েলি সরকারকে জাতিসংঘের তদন্ত করা উচিত বলে মনে করছে সংগঠনটি।
আরও পড়ুন:ফিলিস্তিন ও দেশটির অবরুদ্ধ উপত্যকা গাজার নির্যাতিত মানুষকে সমর্থন দেয়ার ক্ষেত্রে ইরান কখনও ইতস্তত বোধ করবে না বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি।
গাজার শাসক দল হামাসের পলিট ব্যুরোর প্রধান ইসমাইল হানিয়ার নেতৃত্বে সংগঠনটির একটি প্রতিনিধিদল মঙ্গলবার তেহরানে সাক্ষাৎ করতে গেলে আয়াতুল্লাহ এ মন্তব্য করেন বলে জানিয়েছে প্রেস টিভি।
খামেনিকে উদ্ধৃত করে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমটির খবরে বলা হয়, ‘ফিলিস্তিনিদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম এবং গাজার নিপীড়িত ও সহিষ্ণু জনগণকে সমর্থনের ক্ষেত্রে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান কখনও ইতস্তত বোধ করবে না।’
গত বছরের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের ব্যাপক প্রাণঘাতী হামলার জবাবে ওই দিন থেকেই উপত্যকায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। প্রায় বিরতিহীন এ হামলায় গাজায় প্রাণ গেছে কমপক্ষে ৩২ হাজার ৪১৪ জনের।
এমন বাস্তবতায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের মুখে ‘ঐতিহাসিক ধৈর্য’ ধরার জন্য গাজাবাসীর প্রশংসা করে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা বলেন, এ ধৈর্য ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য মর্যাদা ও গর্বের উৎসে পরিণত হয়েছে।
অবরুদ্ধ গাজায় মারাত্মক খাদ্য সংকট লাঘবে উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের বিমান থেকে খাদ্য সহায়তা ছোড়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম)।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেয়া পোস্টে সেন্টকম এ তথ্য জানায় বলে শুক্রবার আল জাজিরার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
সেন্টকমের ভাষ্য, গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ হাজার ৬০০ প্যাকেট খাবারের সমতুল্য খাদ্যসামগ্রী বিমান থেকে উত্তর গাজায় ফেলা হয়েছে। ওই দিন মোট ৮০ বান্ডেল খাদ্যসামগ্রী আকাশ থেকে ভূমিতে ছোড়া হয়।
মিসর হয়ে গাজার রাফাহ ক্রসিং দিয়ে ত্রাণসামগ্রী পরিবহনে ইসরায়েলের নানাবিধ বাধার কারণে অন্য মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আকাশ থেকে খাদ্য সহায়তা ছুড়ে আসছে জর্ডান ও যুক্তরাষ্ট্র।
ত্রাণ পৌঁছাতে ইসরায়েলের বাধায় উত্তর গাজায় দুর্ভিক্ষের কাছাকাছি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার শাসক দল হামাসকে পরাজিত করতে চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান পার্টির নেতাদের জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে ডেমোক্রেটিক পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা চাক শ্যুমার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীকে শান্তির জন্য বাধা হিসেবে আখ্যা দেয়ার প্রায় এক সপ্তাহ পর রিপাবলিকানদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি কথা বলেন নেতানিয়াহু।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, রিপাবলিকান পার্টির মধ্যাহ্নভোজের আয়োজনে গাজায় যুদ্ধ নিয়ে নেতানিয়াহু তার অবস্থান ব্যক্ত করেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন দলটির নেতারা।
রিপাবলিকান পার্টির সিনেটর জিম রিচ বলেন, ‘তিনি (নেতানিয়াহু) যা করতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছিলেন, সেটিই করতে যাচ্ছেন। তিনি সেটি (হামাস নির্মূল অভিযান) শেষ করতে যাচ্ছেন।’
নেতানিয়াহুর বুধবারের এ আলোচনা যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েল নীতির রাজনীতিকরণের গুরুত্বকে তুলে ধরে।
রিপাবলিকানদের সঙ্গে নেতানিয়াহুর মিত্রতা দীর্ঘদিনের। যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীল দলটির অভিযোগ, চাক শ্যুমার ইসরায়েলের সরকারপ্রধানকে উৎখাত করতে চাইছেন।
নেতানিয়াহুর সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে সিনেটর জন ব্যারাসো বলেন, ‘আমরা তার কাছ থেকে যুদ্ধ, বন্দিদের মুক্তি এবং হামাসকে পরাজিত করার চেষ্টার বিষয়ে আপডেট জানতে চেয়ে পেয়েছি। আমরা তাকে বলেছি, আত্মরক্ষার সম্পূর্ণ অধিকার আছে ইসরায়েলের এবং তিনি বলেছেন, সেটাই তারা অব্যাহত রাখবেন।’
আরও পড়ুন:ফিলিস্তিনের গাজায় প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস ধরে চলা যুদ্ধের মধ্যে তীব্র ক্ষুধার কারণে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে থাকা শিশুর সংখ্যা ক্রমবর্ধমান বলে মন্তব্য করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
সংস্থাটির মুখপাত্র ডা. মার্গারেট হ্যারিস এ মন্তব্য করেন বলে বুধবার জানিয়েছে আল জাজিরা।
মার্গারেটকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘চিকিৎসক ও হাসপাতালের কর্মীরা আমাদের যা বলছেন, তা হলো তারা একের পর এক অনাহারের ফল দেখছেন। তারা দেখছেন, নিছক জন্মগত অতি কম ওজনের কারণে নবজাতকরা মারা যাচ্ছে।’
মার্গারেট আরও বলেন, ‘ক্রমবর্ধমানভাবে আমরা মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তের অবস্থানে দেখছি শিশুদের, যাদের ফের পুষ্টিকর খাবার দেয়া দরকার।’
ডব্লিউএইচওর এ কর্মকর্তা বলেন, গাজায় অবস্থানরত মেডিক্যাল টিমগুলোও স্বীকার করছে যে, মারাত্মক কম ওজনের অন্তঃসত্ত্বা নারীর সংখ্যা বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, গাজায় ক্ষুধার সংকট পুরোপুরিভাবে যুদ্ধের ফল এবং এটি সম্পূর্ণ মনুষ্যসৃষ্ট।
আরও পড়ুন:জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার প্রধানকে যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনের গাজায় প্রবেশে বাধা দিয়েছে ইসরায়েল।
ইসরায়েল জানিয়েছে, ইউএনআরডব্লিউএ প্রধান ফিলিপ লাজারিনি সোমবার গাজায় প্রবেশের সময় যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেননি। খবর বাসসের
মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ শউকরির সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ইউএনআরডব্লিউএর প্রধান বলেন, ‘আজ (সোমবার) রাফাতে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। আমার প্রবেশের কথা জানানো হয়েছিল, কিন্তু ইসরায়েল তা প্রত্যাখ্যান করেছে।’
তিনি এক্স-এ লিখেছেন, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তাকে গাজায় প্রবেশ করতে দেয়নি।
এর আগে লাজারিনি গত মাসে বলেছিলেন, ‘ইসরাইল ইউএনআরডব্লিউএ ধ্বংস করতে চায়।’
ইসরায়েল জানুয়ারিতে ইউএনআরডব্লিউএ-এর প্রায় ১৩ হাজার গাজান কর্মচারীকে অভিযুক্ত করে বলেছে, ইসরায়েলের ওপর হামাসের যোদ্ধারা ৭ অক্টোবরের হামলায় জড়িত।
ফিলিস্তিনের দখলিকৃত ভূখণ্ডে বেসামরিক বিষয়গুলো পরিচালনাকারী ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সংস্থা সিওজিএটি এক্স-এ বলেছে, লাজারিনি যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেননি তাই তাকে গাজায় ঢুকতে দেয়া হয়নি। তিনি গাজায় প্রবেশের অনুরোধ করার সময় প্রয়োজনীয় সমন্বয় প্রক্রিয়া এবং চ্যানেল অনুসরণ করেননি।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের ডেপুটি মুখপাত্র ফারহান হক জানিয়েছেন, লাজারিনি এবং ইউএনআরডব্লিউএ-তে তার সহকর্মীরাসহ জাতিসংঘের সব কর্মকর্তাদের গাজাজুড়ে অত্যাবশ্যক মানবিক কাজ করার সুবিধা নিশ্চিত করা উচিত।
ফারহান হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘গুতেরেস অবশ্যই চান যে, লাজারিনি গাজার সমস্ত অঞ্চলজুড়ে ইউএনআরডব্লিউএ কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ পান।’
আরও পড়ুন:গাজার উত্তরাঞ্চলে শিশুদের মধ্যে তীব্র অপুষ্টি দ্রুত ছড়াচ্ছে বলে শনিবার জানিয়েছে ফিলিস্তিনিদের জন্য নিয়োজিত জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, গাজার শাসক দল হামাসের হাতে বন্দিদের বিনিময়ে শান্তি চুক্তির আলোচনার জন্য কাতারে প্রতিনিধি দল পাঠাতে ইসরায়েলের প্রস্তুতির মধ্যে উল্লিখিত বার্তা দেয় জাতিসংঘের সংস্থাটি।
ইউএনআরডব্লিউএর ভাষ্য, উত্তর গাজায় দুই বছরের কম বয়সী প্রতি তিন শিশুর একজন বর্তমানে তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংস্থাটির পক্ষ থেকে দেয়া পোস্টে বলা হয়, ‘গাজায় শিশুদের অপুষ্টি দ্রুত ছড়াচ্ছে এবং তা নজিরবিহীন স্তরে পৌঁছছে।’
জাতিসংঘের সংস্থাটির এ বার্তার এক দিন আগে শুক্রবার ইসরায়েল জানায়, দেশটি মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আরও আলোচনার জন্য প্রতিনিধি দল পাঠাবে কাতারে।
এর আগে যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাব দেয় হামাস, যার মধ্যে রয়েছে ইসরায়েলি বন্দি ও ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির বিষয়টি।
শান্তি আলোচনা সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানায়, ইসরায়েলের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধান ডেভিড বার্নিয়া।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য