থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে জেরুজালেমে। আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে শত শত উগ্র ডানপন্থি প্রবেশ করায় সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সেখানে অবস্থান নিয়েছে ইসরায়েলি পুলিশ।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের বিরোধী নেতা ইতামার বেন-গভি রোববার ভোরে সমর্থকদের নিয়ে মসজিদ প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়েন। তাদের সবার হাতে ছিল ইসরায়েলের জাতীয় পতাকা। সেখানে ডানপন্থি ইহুদিদের সমাবেশ করার কথা রয়েছে। স্থানীয় সময় বিকেল ৪টায় শুরু হয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে আয়োজন।
আল জাজিরার নাজওয়ান সিমরি বলেন, ‘ইসরায়েলি বাহিনী রোববার সকালে কম্পাউন্ডের আল-কিবলি প্রার্থনা হলের ছাদ দখল করে। এতে সেখানে প্রার্থনা করতে আসা মুসলিমরা আটকা পড়েন। ইহুদি বসতিস্থাপনকারীদের যাতায়াতকে বাধাহীন করতে এ অবস্থান নেয় ইসরায়েলি পুলিশ।
‘ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ও ফটোগ্রাফারদের আল-আকসা মসজিদে প্রবেশ করতে বাধা দেয়া হয়েছে। এমনকি গ্রেপ্তারের হুমকিও দিচ্ছে ইসরায়েলি পুলিশ।’
Israeli occupation forces brutally assault and arrest Palestinian girl Alaa Al-Khalafawi in Bab Al-Amoud in occupied Jerusalem. pic.twitter.com/KG4kCtmmg0
— PALESTINE ONLINE 🇵🇸 (@OnlinePalEng) May 28, 2022
ফিলিস্তিনের সংবাদমাধ্যম ওয়াফা নিউজ এজেন্সির খবরে বলা হচ্ছে, ‘মসজিদ প্রাঙ্গণে ফিলিস্তিনি প্রতিবাদকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ইসরায়েলি পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে অন্তত ১৮ জনকে।’
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি বলছে, বসতিস্থাপনকারীরা ওল্ড সিটিতে একটি অ্যাম্বুলেন্স কর্মীর ওপর হামলা চালান। আল-ওয়াদ এলাকায় একজন আহত ব্যক্তির কাছে যাওয়ার সময় ঘটনাটি তারা দেখেছে।
ফিলিস্তিনিদের উসকে দিতে কয়েকজন ইহুদি আল-আকসা মসজিদে প্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন অনেক প্রত্যক্ষদর্শী।
ইসরায়েলি আইনে আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে ইহুদিদের উপাসনা করার অনুমতি নেই। ইসরায়েলের প্রধান ধর্মযাজক (রাব্বি) দ্বারাও এটি নিষিদ্ধ। তবে কিছু উগ্র ডানপন্থি ইসরায়েলি এটি মানেন না। তারা বিশ্বাস করেন, সেখানে তাদের প্রার্থনা করার অনুমতি দেয়া উচিত।
উগ্রবাদীদের এমন আচরণে ফিলিস্তিনিরা আছেন সার্বভৌমত্ব হারানোর শঙ্কায়। তারা বলছেন, অতি-ডানপন্থি ইসরায়েলিরা ‘আল-আকসা মসজিদ’ এবং ‘ডোম অফ দ্য রক’কে ইহুদি মন্দিরে প্রতিস্থাপনের চেষ্টা করছেন।
টুইটারে ছড়ানো একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, আল-কিবলি প্রার্থনা হলের দরজা সিল করে দিচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। ফিলিস্তিনের সংবাদ সংস্থা আল কাস্তাল বলছে, ফিলিস্তিনিদের ভেতরে আটকে রাখার চেষ্টা চলছে।
من أمام المصلى القبلي هذه اللحظات.. الاحتلال يواصل حصاره للمصلين لتأمين اقتحام المستوطنين pic.twitter.com/bC0hse1YQB
— AlQastal القسطل (@AlQastalps) May 29, 2022
ইসরায়েলি পুলিশের এক মুখপাত্র বলেন, ‘ছোট একটি দল মসজিদের ভেতরে নিজেদের ব্যারিকেড করে রেখেছিল। বাইরে অবস্থানরত পুলিশ কর্মকর্তাদের দিকে বড় বড় পাথর ছুড়ছিল। তবে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।’
ইসরায়েলি পুলিশের এ তথ্য যাচাই করতে পারেনি আল জাজিরা।
ইসরায়েলি বাহিনীও ওল্ড সিটির বিভিন্ন স্থানে ব্যারিকেড দিয়েছে। শহরের প্রধান প্রবেশদ্বার দামেস্ক গেট ব্যবহারে ফিলিস্তিনিদের বাধা দিচ্ছে তারা।
#شاهد: جيش الاحتلال يعتدي بوحشية على سيدات فلسطينيات في شارع الواد بالقدس المحتلة. pic.twitter.com/N3Duu1Wp35
— 48 الإخبارية (@48nnews) May 29, 2022
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেনেহ বলছেন, ‘ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বৈধতার সিদ্ধান্তকে সম্মান করে না। তারা নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে মনে করে।’
ভয়েস অফ প্যালেস্টাইন রেডিওতে শনিবার দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আবু রুদেইনা বলেন, ‘দায়িত্বহীন এবং বেপরোয়া হয়ে জেরুজালেমে ইহুদি বসতিস্থাপনের অনুমতি দিয়ে আগুন নিয়ে খেলছে ইসরায়েল।
‘তাদের রুখতে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক বিশ্বকে এগিয়ে আসতে হবে। নিজেদের দায়িত্ব পালন করুন। ডাবল স্ট্যান্ড (দুই পক্ষেই থাকা) নেবেন না।
জেরুজালেমে উগ্রবাদীদের সমাবেশ ঘিরে অন্তত তিন হাজার ইসরায়েলি পুলিশ শহর ঘিরে রেখেছে।
ওল্ড সিটির মুসলিম কোয়ার্টারের সরু রাস্তায় প্রতি বছর এ ধরনের সমাবেশ করে উগ্র ডানপন্থি ইহুদিরা। হাজার হাজার ইহুদি কুচকাওয়াজে অংশ নেন; ইসরায়েলি পতাকা নেড়ে গান গান।
১৯৬৭ সালের এই দিনে পূর্ব জেরুজালেম দখলে নেয় ইসরায়েল। দিনটি উদযাপনের উদ্দেশ্যেই এই পদযাত্রা। আর ব্যবসা বন্ধ করে ঘরের থেকে এই পদযাত্রা মেনে নিতে বাধ্য হন ফিলিস্তিনিরা।
গত মে মাসে ইহুদিদের কুচকাওয়াজে রকেট হামলা হয়। গাজা উপত্যকা থেকে চালানো হামলার জবাবে ১১ দিন গাজা অবরুদ্ধ করে রাখে ইসরায়েল। প্রতিরোধ গড়েন ফিলিস্তিনিরাও। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার হিসাবে, সে সময়ে ২৬০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি এবং ১৩ জন ইসরায়েলি নিহত হন।
এবার শক্ত প্রতিরোধের হুঁশিয়ারি দিয়েছে হামাস। জেরুজালেম এবং আল-আকসা মসজিদ রক্ষায় গাজা, অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং জেরুজালেমের ফিলিস্তিনিদের পাশাপাশি ইসরায়েলের ফিলিস্তিনি নাগরিকদের জেগে ওঠার ডাক দিয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি।
> >ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে দেশটির একটি সামরিক স্থাপনায় বুধবার হামলা চালিয়েছে লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ।
ওই হামলায় কমপক্ষে ১৪ ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন বলে আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
হামলার দায় স্বীকার করে হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় হিজবুল্লাহর কয়েকজন সদস্য নিহত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ইহুদি রাষ্ট্রটিতে প্রতিশোধমূলক আক্রমণ করা হয়েছে।
ইরান সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীটির ভাষ্য, লেবানন সীমান্তবর্তী উত্তর ইসরায়েলের আরব সংখ্যাগরিষ্ঠ গ্রাম আরব আল-আরামশেতে ইসরায়েলের নতুন একটি সামরিক পর্যবেক্ষণ কমান্ড সেন্টারে দূর নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র ও বিস্ফোরক ড্রোন দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী জানায়, গতকালের হামলায় তাদের ১৪ সেনা আহত হন, যাদের মধ্যে ছয়জনের অবস্থা গুরুতর।
সেনাবাহিনী আরও জানায়, পূর্ব লেবাননে ‘সন্ত্রাসীদের অবকাঠামোতে’ হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান।
দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় মঙ্গলবার হিজবুল্লাহর একজন ফিল্ড কমান্ডারসহ তিনজন নিহত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েলে পাল্টা হামলা চালায় সশস্ত্র গোষ্ঠীটি।
ওই সময় ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, তাদের হামলায় হিজবুল্লাহর স্থানীয় দুই কমান্ডার ও অন্য একজন সদস্য নিহত হন।
আরও পড়ুন:গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল ২৫ হাজার টন বিস্ফোরকদ্রব্য ছুড়েছে বলে জানিয়েছেন ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডগুলোর জন্য নিয়োজিত জাতিসংঘের বিশেষ দূত ফ্রান্সিসকা আলবানিজ।
তার ভাষ্য, এসব বিস্ফোরকের বেশির ভাগ ছোড়া হয়েছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ব্যবহার করে।
আল জাজিরা বৃহস্পতিবার জানায়, ইসরায়েলে হামাসের হামলার জবাবে গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় শুরু হওয়া হামলার প্রথম সপ্তাহে গড়ে ২৫০ জন নিহত হন বলে জানান আলবানিজ।
জাতিসংঘের বিশেষ দূতের ভাষ্য, গাজায় হামলার শুরুর সপ্তাহে ‘ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়’ ইসরায়েল দুই হাজার পাউন্ড বাঙ্কার বাস্টার বোমা ছোড়ে।
যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত জিপি হটভলির এক মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে উল্লিখিত কথাগুলো বলেন আলবানিজ।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম স্কাই নিউজকে হটভলি বলেন, ‘শুধু ভাবুন, জেরুজালেমের মতো কোনো শহরের মাঝখানে বিশাল একটি ক্ষেপণাস্ত্র পড়লে বিষয়গুলো কেমন ঠেকত।
‘শুধু ভাবুন, এটি লোকালয় এবং জনগণ ও শিশুদের ওপর আঘাত করছে।’
গত শনিবার রাতে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ইরানের ছোড়া ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়ে সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলেন।
জিপির দাবি, ইরানের হামলায় ক্ষতি হয়নি বললেই চলে।
আরও পড়ুন:ফিলিস্তিনের গাজায় অসম যুদ্ধে লিপ্ত ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়েদ আলি খামেনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক্সে (একসময়ের টুইটার) বুধবার দেয়া পোস্টে তিনি এ আহ্বান জানান।
ইসরায়েলের হামলায় গাজায় ৩৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণহানি ও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন সৌদি আরব, ইরানসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলিমরা।
ইহুদি রাষ্ট্রটির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয়ে এক্সে ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে বেশ কয়েকটি পোস্ট দেন খামেনি, যার একটিতে তিনি বলেন, এটা পরিতাপের যে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কিছু দেশের সরকার গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলকে সহায়তা করছে। এ ধরনের অংশীদারত্ব সহায়তাকারী দেশগুলোর ধ্বংস ডেকে আনবে।
একটি পোস্টে ইসরায়েলের সঙ্গে অন্তত সাময়িকভাবে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের আহ্বান জানান আয়াতুল্লাহ।
আরেক পোস্টে তিনি বলেন, ‘জায়নবাদী (ইসরায়েল) সরকারের সঙ্গে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর সম্পর্ক ছিন্ন করা শুধু আমাদের প্রত্যাশার বিষয় নয়। এটি মুসলিম উম্মাহর প্রত্যাশা।
‘মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো গণভোট আয়োজন করলে প্রত্যেকে সন্দেহাতীতভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করার পক্ষে সরকারগুলোকে ভোট দেবেন।’
আরও পড়ুন:পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেয়া বার্তায় ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর ইসরায়েলি হামলা অবিলম্বে বন্ধের প্রয়োজনীয়তার ওপর সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুলআজিজ আল সৌদ জোর দিয়েছেন বলে জানিয়েছে সৌদি গেজেট।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ঈদবার্তায় ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নিরাপদ মানবিক ও ত্রাণ করিডর স্থাপন, স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠাসহ ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য সব অধিকার অর্জনে সক্ষমতা তৈরির মাধ্যমে তাদের দুর্ভোগের অবসানের আহ্বান জানিয়েছেন পবিত্র দুই মসজিদের জিম্মাদার।
মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পর ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলিমরা। অন্য অনেক ভূখণ্ডের মতো ঈদ এসেছে ফিলিস্তিনের গাজাতেও, তবে ১৮০ দিনের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের হামলায় থাকা অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে আনন্দের উপলক্ষ হয়ে আসেনি বিশেষ দিনটি।
বার্তায় রমজান শেষ করতে পারায় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন সৌদি বাদশাহ। একই সঙ্গে সবার রোজা ও ইবাদত কবুলের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন তিনি।
বাদশাহ সালমান তার বার্তায় জাতীয় ঐক্য, পবিত্র দুই মসজিদের জিম্মাদারি এবং হজ ও ওমরাহ যাত্রীদের স্বাগত জানানোর মতো অনেক নিয়ামত সৌদি আরবকে দেয়ায় আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পর ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলিমরা। অন্য অনেক ভূখণ্ডের মতো ঈদ এসেছে ফিলিস্তিনের গাজাতেও, তবে ১৮০ দিনের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের হামলায় থাকা অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে আনন্দের উপলক্ষ হয়ে আসেনি বিশেষ দিনটি।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, গাজাবাসী নিজেদের মতো করে ঈদুল ফিতরের ঐতিহ্য চর্চার চেষ্টা করলেও যুদ্ধের ছায়া সর্বত্র, যা উদযাপনকে কঠিন করে তুলেছে।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরের দোকানি আহমেদ ইসমাইল আল জাজিরাকে বলেন, ‘কোনো আনন্দ নেই। পবিত্র উপলক্ষটি উদযাপনের কোনো ক্ষুধাও নেই।
‘এমনকি শিশুরাও খেলনার প্রতি আগ্রহ হারিয়েছে, যেমনটা অতীতে ছিল। আমাদের জীবদ্দশায় সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছি।’
রাফাহর বাস্তুচ্যুত বাসিন্দা জাবর হাসান বলেন, ‘আমরা সব দিক থেকে দুর্ভোগ পোহাচ্ছি। লোকজন কোনো রকমে বেঁচে আছে।
‘তারা পরিবারের সদস্যদের খাওয়াতে পারছে না বললেই চলে। আমরা ঈদ, উদযাপন কিংবা অন্য কোনো ধরনের আনন্দের কথা চিন্তা করতে পারছি না।’
ইসরায়েলে ঢুকে গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজার শাসক দল হামাসের প্রাণঘাতী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে উপত্যকায় প্রায় বিরামহীন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে সামরিকভাবে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্রটি।
ইসরায়েলের হামলায় গাজায় প্রাণ গেছে ৩৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির, যাদের বড় অংশ নারী ও শিশু। অন্যদিকে হামাসের হামলায় নিহত ইসরায়েলির সংখ্যা এক হাজার ১৩৯।
বিরামহীন হামলার পাশাপাশি গাজায় বড় পরিসরে ত্রাণসামগ্রীও ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরায়েল, যা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলসহ অনেক অংশে দুর্ভিক্ষের কাছাকাছি পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, তবে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে গাজায় ব্যাপক মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞ এবং ইসরায়েলি অনেক সেনার প্রাণহানির পরও টেকসই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে পারেনি হামাস ও ইসরায়েল।
আরও পড়ুন:সিরিয়ার দারা প্রদেশে রোববার সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছে। বিস্ফোরণে বেশ কিছু শিশু নিহত হওয়ার একদিন পর ঘটনাটি ঘটল।
‘দ্য সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস’ এ কথা জানিয়েছে। খবর বাসসের
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে ২০১১ সালে শুরু হওয়া বিক্ষোভের মূল কেন্দ্র ছিল এ দারা প্রদেশ। সরকার ২০১৮ সালে প্রদেশটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। তখন থেকে দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশটিতে অস্থিরতা চলছে।
সূত্র মতে, একটি সশস্ত্র গ্রুপের নেতৃত্বদানকারী আহমাদ আল লাব্বাদের প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপ অভিযোগ করেছে, শনিবার সিরিয়ার আল সানামাইন জেলায় লাব্বাদের পুঁতে রাখা বিস্ফোরণে ৮ শিশু প্রাণ হারিয়েছে।
পূর্বে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংস্থায় কাজ করা লাব্বাদ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এদিকে রোববার প্রতিদ্বন্দ্বী সশস্ত্র গ্রুপটি সানামাইন শহরে প্রবেশের পর সংঘর্ষ শুরু হয়। হামলাকারীরা লাব্বাদের বাড়িতে হামলা চালায় এবং সেখানে বসবাসরতদের হত্যা করে।
পর্যবেক্ষক সংস্থাটি বলেছে, নিহত ২০ জনের মধ্যে তিনজন লাব্বাদের পরিবারের এবং ১৪ জন তার যোদ্ধা সিরিয়ার সরকারি সংবাদ মাধ্যম তাৎক্ষণিকভাবে এ সংঘর্ষের বিষয়ে কিছু জানায়নি।
দারায় প্রায়ই হামলা, সশস্ত্র সংঘর্ষ এবং হত্যার ঘটনা ঘটছে।
এদিকে সিরিয়ায় ২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত পাঁচ লাখেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছে লাখ লাখ মানুষ।
আরও পড়ুন:গাজায় ইসরায়েলের হামলার ষষ্ঠ মাসে এসে দেশজুড়ে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুবিরোধী বিক্ষোভ করেছেন ইসরায়েলিরা।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে জানানো হয়, হাজার হাজার বিক্ষোভকারী শনিবার সড়কে নেমে প্রতিবাদ জানান।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ঢুকে গাজার শাসক দল হামাসের প্রাণঘাতী হামলার জবাবে ওই দিন থেকেই উপত্যকায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এ হামলার ছয় মাস পূর্তি হয় রোববার।
আয়োজকরা জানান, প্রায় এক লাখ ইসরায়েলি তেল আবিবের একটি মোড়ে জড়ো হন। বিচার ব্যবস্থায় সংস্কারের প্রতিবাদে গত বছর শুরু হওয়া বিক্ষোভের সময় থেকে মোড়টি ‘গণতন্ত্র চত্বর’ হিসেবে পরিচিতি পায়।
‘এখনই নির্বাচন’ স্লোগান দেয়া বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পদত্যাগ দাবি করেন।
তেল আবিবের পাশাপাশি বিক্ষোভ হয়েছে অন্য শহরগুলোতেও। আলোচনার জন্য ওয়াশিংটনের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে কাফার সাবা এলাকার বিক্ষোভে অংশ নেন ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়াইর লাপিদ।
তিনি নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন সরকারের বিষয়ে বলেন, ‘তারা কিছুই শেখেনি, তারা বদলায়নি।’
লাপিদ আরও বলেন, ‘আমরা তাদের বাড়ি পাঠানোর আগে দেশকে সামনে এগোতে দেবে না তারা।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য