মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্বের প্রতিবাদে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন খাতে ব্যাপক আন্দোলন চলছে।
দেশটির নাগরিকদের এ অসন্তোষ অদূর ভবিষ্যতে শেষ হবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
চলতি বছরের অক্টোবরে যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১১ দশমিক ১ শতাংশ, যা দেশটির গত ৪১ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি খানিকটা কমে ১০ দশমিক ৭ শতাংশ হয়েছে।
বেতন বৃদ্ধির দাবি নিয়ে ধর্মঘটে নার্সরা
যুক্তরাজ্যের ১০৬ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বেতন বৃদ্ধির দাবিতে ধর্মঘট করছেন নার্সরা।
নার্সদের ট্রেড ইউনিয়ন রয়্যাল কলেজ অফ নার্সিংয়ের (আরসিএন) ডাকে বৃহস্পতিবার থেকে এ ধর্মঘট শুরু হয়। এতে যোগ দেন ইংল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড ও নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের বিভিন্ন হাসপাতালের লক্ষাধিক নার্স।
এ ধর্মঘটের কারণে সার্জারি এবং অন্যান্য চিকিৎসাসেবা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে, তবে স্বাস্থ্যকর্মীরা কেমোথেরাপি, ডায়ালাইসিস এবং নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
আরসিএনের প্রধান প্যাট কুলেন বলেন, ‘নার্সিংয়ের জন্য একটি দুঃখজনক দিন এটি, রোগীদের জন্য করুণ দিন।’
এই ধর্মঘট থামাতে যুক্তরাজ্য সরকারকে বছর শেষের আগেই ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান কুলেন।
নার্সদের দাবি ১৯ শতাংশ বেতন বাড়ানোর, তবে যুক্তরাজ্য সরকার বলছে, তাদের পক্ষে এ বেতন দেয়া সম্ভব নয়।
স্কটল্যান্ডে সরকারের প্রস্তাবিত নতুন বেতন-ভাতার চুক্তি প্রকাশ হওয়ার পর ধর্মঘট স্থগিত করেছেন নার্সরা। এ চুক্তিতে তারা ভোট দেবেন। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই ভোটের ফল জানা যাবে।
রেলওয়ের সেবা বিপর্যস্ত
যুক্তরাজ্যে রেলওয়ের কর্মীরাও বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই সঙ্গে চাকরি ছাঁটাই বন্ধেরও নিশ্চয়তা চেয়েছেন তারা।
দেশটির সবচেয়ে বড় রেল ইউনিয়ন দ্য রেল, মেরিটাইম অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট (আরএমটি) চলতি বছরের ১৩, ১৪, ১৬ ও ১৭ ডিসেম্বর ধর্মঘটের ডাক দেয়। এ ছাড়া আগামী বছরের ৩, ৪, ৬ ও ৭ জানুয়ারি ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ইউনিয়নটি।
ব্রিটেনের বেশির ভাগ রেল নেটওয়ার্ক দেখভাল করে নেটওয়ার্ক রেল। উল্লেখযোগ্যভাবে ট্রেন কমে যাওয়ার বিষয়ে সংস্থাটি সতর্ক করে দিয়েছে। পাশাপাশি যাত্রীদের শুধু প্রয়োজন হলেই ভ্রমণ করার আহ্বান জানিয়েছে।
বুধবার ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট শেষ হওয়ার পর রেলের কর্মীদের অভিনন্দন জানিয়েছে আরএমটি।
আন্দোলন নিয়ে আরএমটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘এটা স্পষ্ট যে সরকার সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্য আমাদের প্রচেষ্টায় সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে।’
নেটওয়ার্ক রেলের কর্মকর্তা টিম শোভেলার বলেন, ‘রেলওয়ে যে একটি অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়েছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই, তবে ধর্মঘট এ সংকটকে আরও বড় করে তোলার পাশাপাশি সমাধানকে আরও কঠিন করে তুলছে।’
ডাক বিভাগের কর্মীরাও ধর্মঘটে
আসছে বড়দিনে সময়মতো উপহার নাও পেতে পারেন যুক্তরাজ্যের বাসিন্দারা। কারণ যেসব কর্মী এই উপহার পৌঁছে দেবেন, তারাই বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবিতে করছেন আন্দোলন।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান রয়্যাল মেইল কর্মীদের ইউনিয়ন দ্য কমিউনিকেশন ওয়ার্কার্স।
রয়্যাল মেইল হলো ব্রিটিশ সরকারের পোস্টাল সার্ভিস, যা ১৫১৬ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়।
সংস্থাটি জানিয়েছে, কর্মীদের আন্দোলনের কারণে তাদের সেবায় কিছুটা ব্যাঘাত ঘটবে।
পরিষেবা চালু রাখতে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
অন্যান্য খাতেও আন্দোলন
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যে বিমানবন্দরকর্মী, অ্যাম্বুলেন্সচালক, বাসচালক, ফায়ার সার্ভিসকর্মী, আবহাওয়াবিদ, সীমান্তরক্ষী বাহিনী, মহসড়ককর্মীরা বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আরেক সংবাদমাধ্যম কোয়ার্টজের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের বিমানবন্দরগুলোতে পাসপোর্ট চেক করা সীমান্তরক্ষী বাহিনী বড়দিন ও নতুন বছরের আগে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের ড্রাইভিং পরীক্ষকরা চাকরির নিরাপত্তা ও ১০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের বন্দর শ্রমিকরাও পারিশ্রমিক চুক্তি নিয়ে ধর্মঘট করছেন।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে সাফোকের ফেলিক্সস্টো বন্দরে ইউনাইটেড ইউনিয়নের সদস্যরা বেতন চুক্তি প্রত্যাখ্যান করার পর ওয়াক আউট করেছিলেন। নভেম্বরে পারিশ্রমিক চুক্তিতে সম্মত হওয়ার পর ধর্মঘট প্রত্যাহার করেন লিভারপুল বন্দরের শ্রমিকরা।
কী বলছে যুক্তরাজ্য সরকার
যুক্তরাজ্য সরকারের পরিসংখ্যান দপ্তরের বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে চলতি বছরের অক্টোবরে শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে যুক্তরাজ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক কর্মদিবস নষ্ট হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক জানিয়েছেন, ধর্মঘটের প্রভাব কমাতে কাজ করছে তার সরকার।
সুনাক এমপিদের জানিয়েছেন, সরকার ধর্মঘটের কারণে সৃষ্ট অসুবিধা দূর করার চেষ্টা করছে, তবে এ সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় হলো ইউনিয়নগুলোকে আলোচনার টেবিলে আনা।
ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির চেয়ারম্যান নাদিম জাহাবি রয়টার্সকে জানান, রাষ্ট্রীয় কর্মীরা বিক্ষোভ বন্ধ না করলে বড়দিনের আগে সেনা মোতায়েন হতে পারে যুক্তরাজ্যে।
দেশটির বিরোধী দলগুলোর দাবি, সরকার শ্রমিকদের আন্দোলন থামাতে যথাসাধ্য চেষ্টা চালাচ্ছে না।
যুক্তরাজ্যে চলমান অর্থনৈতিক মন্দা আর রাজনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ মন্দা কাটিয়ে উঠতে না পারলে পরবর্তী নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টির ভরাডুবি হতে পারে।
আরও পড়ুন:গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে জায়গা করে নেয়া বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত পুরুষ ব্রিটন জন টিনিসউড জানালেন তার ১১১ বছরের দীর্ঘ জীবনের রহস্য।
টিনিসউডকে উদ্ধৃত করে শনিবার এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, টিনিসউড মনে করেন, এত বছর বেঁচে থাকাটা তার ভাগ্যে ছিল। তার ডায়েটে বিশেষ কোনো গোপনীয়তা ছিল না। প্রতি শুক্রবার টিনিসউডের প্রিয় খাবার মাছ এবং চিপস।
এর আগে ১১৪ বছরের দীর্ঘজীবন শেষে ২ এপ্রিল মারা যান বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক পুরুষ হুয়ান ভিসেন্তে পেরেজ মোরা। ‘তিও’ ডাকনামে পরিচিত এ ব্যক্তি ছিলেন দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলার নাগরিক।
ভিসেন্তে পেরেজ মারা যাওয়ায় উত্তরাধিকারসূত্রে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত পুরুষ হিসেবে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসটি পান ব্রিটন জন টিনিসউড।
উত্তর ইংল্যান্ডের মার্সিসাইডে ১৯১২ সালে জন্মগ্রহণ করেন টিনিসউড। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত অ্যাকাউন্ট্যান্ট এবং প্রাক্তন ডাক পরিষেবা কর্মী। টিনিসউডের বয়স ১১১ বছর এবং ২২২ দিন।
দীর্ঘায়ুর রহস্য জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আপনার আয়ু হয়ত দীর্ঘ হবে অথবা কম হবে। এখানে আপনার কিছুই করার নেই।’
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে সবচেয়ে বয়স্ক মানুষ ছিলেন জাপানের জিরোইমন কিমুরা। তিনি ১১৬ বছর ৫৪ দিন বেঁচে ছিলেন। সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত নারী এবং সামগ্রিকভাবে সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি হলেন স্পেনের মারিয়া ব্রানিয়াস মোরেরা। তার বয়স বর্তমানে ১১৭ বছর।
পশ্চিমা ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলোর ওপর হামলার পরিকল্পনা নেই রাশিয়ার। এমনকি এর বাইরে পোল্যান্ড, চেক রিপাবলিক বা বাল্টিক কোনো দেশের ওপরও হামলা চালাবে না তারা। তবে ইউক্রেনকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিলে তা ধ্বংস করা হবে বলে জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
স্থানীয় সময় বুধবার রাশিয়ার বিমান বাহিনীর পাইলটদের সঙ্গে কথা বলার সময় এসব কথা বলেছেন তিনি।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে পূর্ব দিক থেকে রাশিয়ার দিকে অগ্রসর হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট। তবে রাশিয়ার এসব অঞ্চলের ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর ওপর হামলার পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন পুতিন।
তিনি বলেন, ‘এ জোটভুক্ত দেশগুলোর প্রতিও কোনো আগ্রাসন দেখানো হবে না। পোল্যান্ড, চেক রিপাবলিক বা বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোকে ভয় দেখানো হচ্ছে বলে যেসব কথা রটানো হয়েছে, সেগুলো সম্পূর্ণ বাজে কথা।’
এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে অর্থ, অস্ত্র ও বুদ্ধি দিয়ে সমর্থন করার অভিযোগ এনে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এ কারণেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে মস্কোর যে সম্পর্ক, তা সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে।’
পশ্চিমারা ইউক্রেনকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দেয়ার বিষয়ে পুতিন বলেন, ‘এ ধরনের কর্মকাণ্ডে ইউক্রেনের পরিস্থিতি পাল্টাবে না। আর ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া যান ও রকেট লঞ্চারের মতো ওগুলোকেও (এফ-১৬) আমরা ধ্বংস করব।’
তিনি বলেন, ‘এসব যুদ্ধবিমান যদি ইউক্রেনের বাইরের কোনো দেশ থেকে যুদ্ধক্ষেত্রে আসে, তবে সেসব স্থানও আমাদের বৈধ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে, তা সে যে স্থানই হোক না কেন।’
এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কাও বাড়াবে বলে এ সময় সতর্ক করেন তিনি।
আরও পড়ুন:রাশিয়ার মস্কোতে গত শুক্রবার কনসার্ট হলে ব্যাপক প্রাণঘাতী হামলার দায় ইসলামিক স্টেট (আইএস) স্বীকার করলেও এ ধরনের আক্রমণের সামর্থ্য জঙ্গি সংগঠনটির আছে বলে বিশ্বাস করে না রাশিয়া।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বুধবার তার দেশের এ অবস্থান ব্যক্ত করেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
জাখারোভা বলেন, মস্কোর কনসার্ট হলে হামলা চালানোর মতো সামর্থ্য আইএসের আছে, এমনটি বিশ্বাস করা অত্যন্ত কঠিন।
সাম্প্রতিক ওই হামলায় নিহত হন কমপক্ষে ১৪৩ জন। আহত অনেককে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে।
মস্কোর উপকণ্ঠে ক্রোকাস সিটি হলে হামলায় ইউক্রেনের জড়িত থাকার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেন রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র। যদিও এ দাবির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেননি তিনি।
রাশিয়ায় ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলার পর দায় স্বীকার করে আইএস। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা দাবি করেন, তাদের কাছে থাকা গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, হামলাটি চালায় আইএসের আফগান শাখা ইসলামিক স্টেট খোরাসান।
হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ বারবার নাকচ করেছে ইউক্রেন, তবে জাখারোভার ভাষ্য, ইউক্রেনকে হামলার দায় থেকে বাঁচাতে ত্বরিত গতিতে আইএসের ওপর দায় চাপায় পশ্চিমা দেশগুলো।
আরও পড়ুন:রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর উপকণ্ঠে শুক্রবার রাতে কনসার্ট হলে ব্যাপক প্রাণঘাতী বন্দুক হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার চারজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
বার্তা সংস্থাটির প্রতিবেদনে জানানো হয়, রাশিয়ার অভ্যন্তরে দুই দশকের সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলার ঘটনায় শোক পালনের অংশ হিসেবে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত করা হয় চার ব্যক্তিকে।
বন্দুক হামলার পর জড়িত সবাইকে শাস্তির আশ্বাস দিয়ে রোববারকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
কনসার্ট শুরুর আগে হলে আগত লোকজনের ওপর ওই হামলায় প্রাণ যায় তিন শিশুসহ ১৩৭ জনের। এ ঘটনায় আহত হন ১৮২ জন।
হামলায় আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১০০ জনের বেশি এখনও হাসপাতালে, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।
বন্দুক হামলায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে রোববার সন্ধ্যায় মস্কোর বাইরে নিজ বাসভবন এলাকার একটি গির্জায় মোমবাতি প্রজ্বালন করেন পুতিন।
এর আগে ঘটনাস্থল ছয় হাজার ২০০ জনের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ক্রোকাস সিটি হলের বাইরে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রুশ নাগরিকরা। এ হলে সোভিয়েত আমলের রক ব্যান্ড ‘পিকনিক’ পারফর্ম শুরু করার আগে হামলা চালান চার বন্দুকধারী।
বিশ্বজুড়ে নিন্দিত ওই হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস), তবে পুতিন তার বক্তব্যে জঙ্গি সংগঠনটির কথা উল্লেখ না করে বলেছেন, হামলাকারীরা পালিয়ে ইউক্রেন যেতে চেয়েছিল।
আরও পড়ুন:রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে যে চার বন্ধুকধারী হামলা চালিয়েছে সেই চারজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
১৩৩ জনকে হত্যা ও ১৪০ জনের বেশি মানুষকে আহত করার ওই হামলার দায় নিয়েছে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। তবে রাশিয়া দাবি করেছে, এই হামলার সঙ্গে ইউক্রেন জড়িত।
পুতিন বলেছেন, সবমিলিয়ে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে চারজন বন্ধুকধারী ইউক্রেনে যাওয়ার পথে গ্রেপ্তার হয়েছে।
শনিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে, হামলাকারীদের ইউক্রেনে সরিয়ে নেয়ার জন্য সীমান্তে প্রস্তুতি রাখা হয়েছিল।
ভয়াবহ এ হামলার ঘটনাটিকে ‘বর্বর সন্ত্রাসী হামলা’ আখ্যা দিয়ে এতে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পুতিন।
শনিবার টেলিগ্রামে আইএসের প্রচারমাধ্যম আমাক চার মুখোশধারীর একটি ছবি পোস্ট করে দাবি করেছে এরাই হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল। অবশ্য আইএসের দাবি নিয়ে রাশিয়া কোনো মন্তব্য করেনি।
রাশিয়ায় ২০০৪ সালে বেসলান স্কুল অবরোধের ঘটনার পর শুক্রবারের হামলাটি ছিল সবচেয়ে প্রাণঘাতী। মস্কোর ঠিক পশ্চিমে ছয় হাজার ২০০ আসনের ক্রোকাস সিটি হল কানায় কানায় পূর্ণ হওয়ার পর আসা লোকজনের ওপর গুলি ছোড়ে বন্দুকধারীরা। ‘পিকনিক’ নামের সোভিয়েত আমলের রক ব্যান্ডের পারফরম্যান্স শুরুর ঠিক আগে এ হামলা হয়।
আরও পড়ুন:রাজধানী মস্কোয় অনুষ্ঠিত হওয়া কনসার্টে ভয়াবহ হামলার ঘটনাটিকে ‘বর্বর সন্ত্রাসী হামলা’ আখ্যা দিয়ে এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
শুক্রবার সন্ধ্যার ওই ঘটনায় তিনি রোববার দেশজুড়ে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছেন বলে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে।
টেলিভিষণে দেয় ভাষণে পুতিন বলেন, ‘হামলার সঙ্গে জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হামলার পর চার বন্দুকধারী ইউক্রেন সীমান্ত দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেছিল। সীমান্তে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থার কারণে তারা ধরা পড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক তথ্য অনুসারে তারা ইউক্রেনের দিকে যাচ্ছিল, তাদের সীমান্ত অতিক্রম করিয়ে নেয়ার প্রস্তুতি রাখা ছিল।
‘তারা যে-ই হোক, যারাই তাদের নির্দেশ দিক, আমি আবারও বলছি, যারা সন্ত্রাসীদের ইন্ধন দিয়েছে, আমরা তাদের চিহ্নিত করব; তাদের শাস্তি দেব।’
দেশের জনগণের উদ্দেশে পুতিন বলেন, ‘শত্রুরা আমাদের বিভক্ত করতে পারবে না।’
রাশিয়ার এফএসবি নিরাপত্তা সার্ভিসের দাবি, হামলাকারীরা দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টার আগে ইউক্রেনে নিজেদের লোকজনের সঙ্গে ‘সংযুক্ত’ ছিল।
তবে রাশিয়ার এ দাবিকে ‘হাস্যকর’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে কিয়েভ। অবশ্য তাদের আশঙ্কা, এ ঘটনার পর ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার তীব্রতা আরও বেড়ে যাবে।
শুক্রবার ক্রোকাস সিটি কমপ্লেক্সের কনসার্ট হলে বন্দুক হামলা চালান ছদ্মবেশী হামলাকারীরা। গুলি করার পর ভবনের বিভিন্ন জায়গায় বিস্ফোরক ছিটিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, কনসার্টে আসা লোকজনের ওপর স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালান বন্দুকধারীরা, যার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)।
এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, (মুসলিম বিরোধী) বিভিন্ন দেশে তাদের নিয়মিত হামলার অংশ হিসেবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তবে আইএসের কোন আঞ্চলিক সংগঠনটি এ হামলা করেছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট করেনি সংগঠনটি।
ভেরিফায়েড ভিডিওতে দেখা যায়, হলে নিজেদের আসন গ্রহণ করছেন লোকজন। এরপর আর্তচিৎকারের সঙ্গে গুলির মুহুর্মুহু আওয়াজ পাওয়া যায়। ওই সময় লোকজনকে দৌড়ে বের হতে দেখা যায়।
অন্য ভিডিওতে দেখা যায়, বেশ কিছু মানুষকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছেন বন্দুকধারীরা। ওই সময় কনসার্ট হলে রক্তের মধ্যে নিথর অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় কাউকে কাউকে।
রাশিয়ায় ২০০৪ সালে বেসলান স্কুল অবরোধের ঘটনার পর গতকালের হামলাটি ছিল সবচেয়ে প্রাণঘাতী।
মস্কোর ঠিক পশ্চিমে ছয় হাজার ২০০ আসনের ক্রোকাস সিটি হল কানায় কানায় পূর্ণ হওয়ার পর আগত লোকজনের ওপর গুলি ছোড়েন বন্দুকধারীরা।
‘পিকনিক’ নামের সোভিয়েত আমলের রক ব্যান্ডের পারফরম্যান্স শুরুর ঠিক আগে এ হামলা চালানো হয়।
আরও পড়ুন:কনসার্ট হলে মুখোশ পরা বন্দুকধারীদের হামলার ঘটনায় নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে এখন পর্যন্ত ১৩৩ জনে পৌঁছেছে বলে জানা গেছে। রাশিয়ার কেন্দ্রীয় তদন্ত কর্তৃপক্ষ আজ শনিবার এ তথ্য বিশ্ব মিডিয়াকে জানিয়েছে।
তদন্তকারী কমিটি আরও জানিয়েছে, এখনও ঘটনাস্থলে উদ্ধার অভিযান চলছে। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উৎসবের আমেজে চলছিল কনসার্ট। সেখানে হামলা হয় দুর্বৃত্তদের। রাশিয়ার মস্কোর এই ঘটনায় পুরো বিশ্ব হতবাক। এই হামলাকে পরিকল্পিত বলছে রাশিয়া।
এদিকে ক্রেমলিনের বরাতে রুশ বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স জানিয়েছে, এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ১১ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে চারজন সরাসরি জড়িত বলে জানা গেছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় মস্কোর ক্রোকাস সিটি হলে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় বন্দুকধারীরা কনসার্ট হলে ঢুকে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল দিয়ে ভিড়ের মধ্যে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে থাকেন।
এর আগে প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় তদন্ত কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, হামলায় এখন পর্যন্ত ১১৫ জন নিহত হয়েছেন। নিহত মানুষের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। তার আগে, নিহতের সংখ্যা ৯৩ জন বলে জানানো হয়েছিল।
এ ঘটনাকে ‘রক্তাক্ত সন্ত্রাসী হামলা’ উল্লেখ করেছে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। হামলার ঘটনায় দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। যদিও রাশিয়ার পক্ষ থেকে এ হামলায় কারা জড়িত তেমন কিছুই নিশ্চিত করেনি।
কয়েক দশকের মধ্যে রাশিয়ায় সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলাগুলোর একটি এটি। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইতালি, কিউবাসহ বিশ্বনেতারা।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য