কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনা কেন্দ্র করে কঠোর পোশাকবিধি নিয়ে ইরানি নারীদের দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটেছে । ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে বিক্ষোভে উত্তাল ইরানে অন্তত অর্ধশত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন হাজারের বেশি।
নিরাপত্তা বাহিনীর সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করলেও প্রতিবাদের ঢেউ দেশটির অন্তত ৮০টি শহরে এরইমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। নারীর পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে প্রতিদিনই প্রাণ দিচ্ছে মানুষ। নিহতদের মধ্যে পুরুষের পাশাপাশি নারী-শিশুও রয়েছে।
মাহসাকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া বিক্ষোভে নতুন করে আরও একটি নাম প্রতিবাদের প্রতীকে পরিণত হয়েছে। তিনি ২২ বছরের তরুণী হাদিস নাজাফি।
কারাজ শহরে ২১ সেপ্টেম্বর ওই বিক্ষোভের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর ছোড়া বেশ কয়েকটি গুলিতে প্রাণ হারান এক তরুণী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে তার নাম হাদিস নাজাফি বলে দাবি করা হয়েছে।
সাংবাদিক এবং নারী অধিকারকর্মী মাসিহ আলিনেজাদ রোববার একটি ভিডিও পোস্ট করেন। এতে দেখা যায় হাদিস তার খোলা চুল ঝুঁটি বেধে বিক্ষোভে যোগ দিতে এগিয়ে যাচ্ছেন। মাসিহ আলিনেজাদের দাবি ছিল, এর পরপরই নিরাপত্তা বাহিনীর ছয়টি গুলিতে তিনি প্রাণ হারান।
ইরানের সাংবাদিক ফারজাদ সেফিকারানকে উদ্ধৃত করে আল আরাবিয়া জানায়, বিক্ষোভে নিহত হাদিসের মুখ, ঘাড় এবং বুকে গুলি লেগেছিল। স্থানীয় ঘায়েম হাসপাতালে নেয়ার পরপরই তার মৃত্যু হয়।
তবে সোমবার বিবিসি ফার্সির প্রতিবেদনে বলা হয়, চুল বেঁধে বিক্ষোভে যোগ দেয়া তরুণী আর নিহত তরুণী হাদিস এক ব্যক্তি নন।
চুল বাঁধা তরুণী নিজেও বিবিসিকে একটি ভিডিওবার্তায় বলেন, ‘আমি বিক্ষোভে নিহত হাদিসা নাজাফি নই। তবে আমি নারীদের জন্য, মাহসাদের অধিকারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাব।’
হাদিস নাজাফি হিসেবে প্রচার করা ওই তরুণীর চুল বেঁধে বিক্ষোভে যোগ দেয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। #MahsaAmini হ্যাশট্যাগের পাশাপাশি #HadisNajafi হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে ইরানের নারীদের পোশাকের স্বাধীনতার দাবিকে সমর্থন জানাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ।
বিক্ষোভে গুলিতে নিহত হাদিসকে রোববার দাফন করা হয়েছে। তার কবরের পাশে স্বজনদের আহাজারির একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে টুইটারে।
This is the funeral of 20 year old #HadisNajafi, who was shot dead on the streets by security forces for protesting yhe murder of #MahsaAmini by Hijab Police.
— Masih Alinejad 🏳️ (@AlinejadMasih) September 25, 2022
Hadis was a kind hearted girl and loved dancing. pic.twitter.com/tduxVe1SZf
কুর্দি নারী মাহসা আমিনিকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর তেহরানের ‘নৈতিকতা পুলিশ’ গ্রেপ্তার করে। ইরানের দক্ষিণাঞ্চল থেকে তেহরানে ঘুরতে আসা মাহসাকে একটি মেট্রো স্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি সঠিকভাবে হিজাব করেননি।
পুলিশ হেফাজতে থাকার সময়েই মাহসা অসুস্থ হয়ে পড়েন, এরপর তিনি কোমায় চলে যান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৬ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যু হয়। পুলিশ মাহসাকে হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরিবারের অভিযোগ গ্রেপ্তারের পর তাকে পেটানো হয়।
মাহসার মৃত্যুর পর থেকেই উত্তাল ইরান। ফেসবুক ও টুইটারে #MahsaAmini এবং #Mahsa_Amini হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে চলছে প্রতিবাদ। দেশটির বিভিন্ন জায়গায় নারীর পোশাকের স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলছে নিরাপত্তা বাহিনীর।
বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের হিসেবে বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত অর্ধশত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েক জন সদস্যও আছেন। তবে ইরান সরকারের দাবি, বিক্ষোভের ১১ দিনে পুলিশ সদস্যসহ প্রাণ গেছে ৪১ জনের।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিও বিক্ষোভকে আরও উসকে দিচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ইন্টারনেট পরিষেবা প্রায় বিচ্ছিন্ন রেখেছে দেশটির সরকার।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার পরিচালক হেবা মোরায়েফ বলেন, ‘ইন্টারনেট বন্ধ করে অন্ধকারের মধ্যে মানুয়ের ওপর কর্তৃপক্ষের আগ্রাসন কতটা নির্মম ও ক্রমবর্ধমান- সেটি মৃতের উদ্বেগজনক সংখ্যা থেকেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।‘
ইরানে ১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পরই নারীদের জন্য হিজাব বাধ্যতামূলক করা হয়। দেশটির ধর্মীয় শাসকদের কাছে নারীদের জন্য এটি ‘অতিক্রম-অযোগ্য সীমারেখা’। বাধ্যতামূলক এই পোশাকবিধি মুসলিম নারীসহ ইরানের সব জাতিগোষ্ঠী ও ধর্মের নারীদের জন্য প্রযোজ্য।
হিজাব আইন আরও কঠোরভাবে প্রয়োগের জন্য চলতি বছরের ৫ জুলাই ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি একটি আদেশ জারি করেন। এর মাধ্যমে ‘সঠিক নিয়মে’ পোশাকবিধি অনুসরণ না করা নারীদের সরকারি সব অফিস, ব্যাংক এবং গণপরিবহনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় গত জুলাইয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে #no2hijab হ্যাশট্যাগ দিয়ে শুরু হয় প্রতিবাদ। দেশটির নারী অধিকারকর্মীরা ১২ জুলাই সরকার ঘোষিত জাতীয় হিজাব ও সতীত্ব দিবসে প্রকাশ্যে তাদের বোরকা ও হিজাব সরানোর ভিডিও পোস্ট করেন।
সে সময় খোলা মাথায় কয়েক সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন ইরানি তরুণী মেলিকা কারাগোজলু। এ কারণে সম্প্রতি কারাগোজলুকে ৩ বছর ৮ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে ইরানের আদালত।
আরও পড়ুন:সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ থাকা খাবার কমে আসছে। এ কারণে জলদস্যুরা বাইরে থেকে জাহাজে খাবার নিয়ে আসা শুরু করেছে। ফলে খাবার নিয়ে তেমন সমস্যা না হলেও বিশুদ্ধ পানির সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কেএসআরএম সূত্র জানিয়েছে, দস্যুদের সঙ্গে সমঝোতার বিষয়টিও এগিয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ২৩ নাবিক ও জাহাজ উদ্ধারে করণীয় সবকিছুই করা হচ্ছে বলে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাধারণত জাহাজে দুই ধরনের খাবার থাকে। এগুলো হচ্ছে, হিমায়িত খাবার ও শুকনো খাবার। যাত্রাপথের সময় অনুযায়ী জাহাজে খাবার মজুত রাখা হয়। তবে শুকনো খাবার অনেক দিনের জন্য মজুত থাকে।’
তিনি বলেন, ‘জাহাজ জিম্মি করলে জলদস্যুরা সাধারণত খাবার সরবরাহ করে। তবে সুপেয় পানি নিয়ে সমস্যা হয়। সেক্ষেত্রে রেশনিং করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়।’
তিনি আরও জানান, জলদস্যুরা সম্প্রতি জাহাজের বাইরে থেকে খাবার আনছে- এরকম খবর তারা পেয়েছেন।
জাহাজের মালিক প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘খাবার এখনও শেষ হয়নি, তবে কমে আসছে। জলদস্যুরা তাদের নিজেদের জন্য বাইরে থেকে খাবার এনেছে বলে আমরা জেনেছি।’
তিনি বলেন, ‘আটক জাহাজ এবং জিম্মি ২৩ নাবিককে দ্রুত উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।
‘এমভি আবদুল্লাহকে জিম্মি করার সময় জাহাজটিতে নাবিকদের জন্য ২৫ দিনের খাবার ও ২০০ টন বিশুদ্ধ পানি ছিল। এই পানি দিয়ে এক মাস পর্যন্ত চালানো যাবে বলে তখন নাবিকরা জানিয়েছিলেন। তারা বলেছিলেন, তবে রেশনিং করলে অনেক দিন চালানো যাবে। পানি বাঁচাতে এখন শুধু রান্না ও খাবারের জন্য বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করছেন তারা।’
১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহকে জিম্মি করে সোমালি দস্যুরা। পরে তারা জাহাজটিকে সোমালিয়া উপকূলের কাছে নিয়ে যায়। চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের মালিকানাধীন জাহাজটি বর্তমানে সোমালিয়ার গদভজিরান জেলার জিফল উপকূল থেকে দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করে আছে।
প্রায় ১৩ বছর আগে ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর এমভি জাহান মণি নামের একই গ্রুপের মালিকানাধীন একটি জাহাজ জিম্মি করেছিল সোমালি জলদস্যুরা। জাহাজটি ১০০ দিন পর সব নাবিকসহ উদ্ধার করা হয়েছিল।
অপরদিকে, জলদস্যুদের কবল থেকে জিম্মি ২৩ নাবিককে উদ্ধার ও জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ফেরত আনার বিষয়ে আলোচনা অনেকদূর এগিয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদও।
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যোগাযোগের মধ্যে আছি। আমাদের উদ্দেশ্য হলো, নাবিকদের অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা। একইসঙ্গে জিম্মি জাহাজটি উদ্ধার করাও আমাদের উদ্দেশ্য। শুধু এতটুকু বলতে চাই, আমরা অনেক দূর এগিয়েছি।’
জাহাজে খাবার সংকটের বিষয়ে এক প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘অতীতে যখন জাহাজ অপহরণ হয়েছে, কখনও খাবারের সংকট হয়নি। তিন বছর ছিল, তখনও হয়নি; ১০০ দিন ছিল, তখনও হয়নি। আশা করি, এক্ষেত্রেও হবে না।’
আরও পড়ুন:পশ্চিমা ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলোর ওপর হামলার পরিকল্পনা নেই রাশিয়ার। এমনকি এর বাইরে পোল্যান্ড, চেক রিপাবলিক বা বাল্টিক কোনো দেশের ওপরও হামলা চালাবে না তারা। তবে ইউক্রেনকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিলে তা ধ্বংস করা হবে বলে জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
স্থানীয় সময় বুধবার রাশিয়ার বিমান বাহিনীর পাইলটদের সঙ্গে কথা বলার সময় এসব কথা বলেছেন তিনি।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে পূর্ব দিক থেকে রাশিয়ার দিকে অগ্রসর হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট। তবে রাশিয়ার এসব অঞ্চলের ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর ওপর হামলার পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন পুতিন।
তিনি বলেন, ‘এ জোটভুক্ত দেশগুলোর প্রতিও কোনো আগ্রাসন দেখানো হবে না। পোল্যান্ড, চেক রিপাবলিক বা বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোকে ভয় দেখানো হচ্ছে বলে যেসব কথা রটানো হয়েছে, সেগুলো সম্পূর্ণ বাজে কথা।’
এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে অর্থ, অস্ত্র ও বুদ্ধি দিয়ে সমর্থন করার অভিযোগ এনে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এ কারণেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে মস্কোর যে সম্পর্ক, তা সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে।’
পশ্চিমারা ইউক্রেনকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দেয়ার বিষয়ে পুতিন বলেন, ‘এ ধরনের কর্মকাণ্ডে ইউক্রেনের পরিস্থিতি পাল্টাবে না। আর ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া যান ও রকেট লঞ্চারের মতো ওগুলোকেও (এফ-১৬) আমরা ধ্বংস করব।’
তিনি বলেন, ‘এসব যুদ্ধবিমান যদি ইউক্রেনের বাইরের কোনো দেশ থেকে যুদ্ধক্ষেত্রে আসে, তবে সেসব স্থানও আমাদের বৈধ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে, তা সে যে স্থানই হোক না কেন।’
এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কাও বাড়াবে বলে এ সময় সতর্ক করেন তিনি।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় সময় বুধবার নিউ ইয়র্কের কুইন্সের একটি বাসায় মানসিক অবসাদে ভোগা ওই যুবককে বাধ্য হয়েই গুলি করতে হয় বলে পুলিশ দাবি করেছে।
নিউ ইয়ক টাইমস বলছে, ১৯ বছর বয়সী উইন রোজারিওকে দুপুর পৌনে ২টার দিকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তিনি ওজোন পার্কের ১০৩ নম্বর স্ট্রিটে দ্বিতীয় তলার বাসায় তার পরিবারের সঙ্গে থাকতেন।
পুলিশ জনিয়েছে, ৯১১ নম্বরে ফোন পেয়ে পুলিশ ওই যুবকের বাসায় গিয়েছিল। এ সময় কাঁচি দিয়ে অফিসারদের হুমকি দিয়েছিলেন তিনি। এরই এক পর্যায়ে তার পায়ে গুলি চালানো হয়।
নিহতের ভাই উশতো রোজারিও বলেন, মা উইনকে ফেরাতে চেষ্টা করছিলেন। তবে এর মধ্যেই পুলিশ গুলি ছুড়েছে। এই গুলি ছোড়ার কোনো দরকার ছিল না।
পুলিশ ডিপার্টমেন্টের টহল প্রধান জন চেল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, দুজন অফিসার মানসিক যন্ত্রণায় থাকা ব্যক্তি সম্পর্কে ৯১১ নম্বরে একটি কল পেয়ে সেখানে যায়। বাধ্য হয়েই গুলি চালাতে হয়েছে। বেশ উত্তেজনাপূর্ণ, বিশৃঙ্খল এবং বিপজ্জনক অবস্থা তৈরি হয়েছিল। রোজারিও ৯১১ নম্বরে কল করেছিলেন।
উইনের বাবা ফ্রান্সিস রোজারিও জানান, তার পরিবার ১০ বছর আগে বাংলাদেশ থেকে নিউইয়র্কে যান। উইনের স্বপ্ন ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়া। পরিবারের গ্রিন কার্ড পেতে দেরি হওয়ায় সেটি আর হয়নি।
নিহতের ভাই উশতো রোজারিও জানান, তার ভাই দুই বছর আগে ওজোন পার্কের জন অ্যাডামস হাই স্কুল থেকে স্নাতক করেছে। সম্প্রতি বিষণ্ণ ছিলেন তিনি। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে গত বছর হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল তাকে।
ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের নেতৃত্বাধীন মেটার প্ল্যাটফর্মগুলো স্ন্যাপচ্যাট, ইউটিউব এবং অ্যামাজন ব্যবহারকারীদের তথ্য গোপনে নজরদারি করছে বলে অভিযোগ করে নতুন তথ্য প্রকাশ করেছে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি ফেডারেল আদালত।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম টেকক্রাঞ্চের বরাত দিয়ে বুধবার এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়, ফেসবুক ২০১৬ সালে ‘ঘোস্টবাস্টারস’ নামে একটি গোপন প্রজেক্ট চালু করেছিল যাতে স্ন্যাপচ্যাট ও এর সার্ভার ব্যবহারকারীদের মধ্যে নেটওয়ার্ক ট্রাফিক এনক্রিপ্ট এবং ডিক্রিপ্ট করা যায়।
স্ন্যাপচ্যাটের ভূতের (ঘোস্ট) মতো লোগোর সঙ্গে মিল রেখে ফেসবুক এটির নাম দিয়েছে ‘প্রজেক্ট ঘোস্টবাস্টারস’।
আদালতের নথি অনুসারে, ঘোস্টবাস্টারস প্রজেক্টটি স্ন্যাপচ্যাটের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা অর্জন ও ব্যবহারকারীর আচরণ বোঝার জন্য তৈরি করা হয়েছে।
নথিতে প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনা করা সে সময়ের অভ্যন্তরীণ ফেসবুক ইমেইলগুলোও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ২০১৬ সালের জুনে মার্ক এমন একটি ইমেইলে বলেন, স্ন্যাপচ্যাট তাদের সিস্টেম এনক্রিপট (যে পদ্ধতির মাধ্যমে তথ্য গোপন কোডে রূপান্তরিত হয় যা তথ্যের প্রকৃত অর্থ লুকিয়ে রাখে) করার কারণে অ্যাপটির অভ্যন্তরীণ কোনো তথ্য ফেসবুকের কাছে নেই।
তাই তাদের সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য পেতে একটি নতুন উপায় বের করা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন মার্ক। এর জন্য একটি কাস্টম সফটওয়্যার তৈরির কথা জানান তিনি।
এর পরিপ্রেক্ষিতেই পরবর্তীতে ফেসবুকের প্রকৌশলীরা ঘোস্টবাস্টারস তৈরি করেন। পরে অ্যামাজন এবং ইউটিউবকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রকল্পটি প্রসারিত করা হয়ে।
ক্যালিফোর্নিয়ার আদালতের তথ্য অনুসারে, ফেসবুকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভদের একটি দল এবং প্রায় ৪১ জন আইনজীবী প্রজেক্ট ঘোস্টবাস্টারে কাজ করেছেন, তবে ফেসবুকের কিছু কর্মী এ প্রকল্পের বিপক্ষে ছিলেন। তারা এটি নিয়ে তাদের উদ্বেগও প্রকাশ করেন।
আরও পড়ুন:জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব পাস হওয়ার পরও গাজায় আক্রমণ থেমে নেই। ইসরায়েলের হামলায় ২৪ ঘণ্টায় ৮১ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৯৩ জন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছে।
ইসরায়েল গত বছরের ৭ অক্টোবরের পর থেকে গাজায় অব্যাহত হামলা চালিয়ে আসছে। এসব হামলায় এ পর্যন্ত নারী-শিশুসহ ৩২ হাজার ৪১৪ জন মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭৪ হাজার ৭৮৭ জনেরও বেশি।
গাজায় এসব হামলার পাশাপাশি পশ্চিম তীরেও নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েল।
প্যালেস্টাইনের অবরুদ্ধ গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালের কাছে একটি আবাসিক বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৩০ জন নিহত হয়েছেন।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, গাজায় স্থানীয় সময় মঙ্গলবার একটি পরিবারের ওপর এ হামলার ঘটনা ঘটে। স্থানীয় চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে এর সত্যতা নিশ্চিত করেছে প্যালেস্টাইনের বার্তা সংস্থা ‘ওয়াফা’।
এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে গাজার বৃহত্তম চিকিৎসা কেন্দ্র আল-শিফা ও এর আশপাশে ইসরায়েলি বাহিনী ব্যাপক আকারে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
এর আগে রাফাহ শহরের একটি আবাসিক বাড়িতে ইসরায়েলি বোমা হামলায় নয় শিশুসহ ১৮ জন নিহত হন।
এ ছাড়া রাফাহ শহরের উত্তর-পূর্বে নাসর এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর তীব্র গোলাবর্ষণেও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
প্রায় ছয় মাসের টানা ইসরায়েলি আক্রমণে বাস্ত্যুচ্যুত ১৪ লাখ গাজাবাসী বর্তমানে শরণার্থী হিসেবে রাফাহতে অবস্থান করছেন।
সোমবার (২৫ মার্চ) জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গাজা উপত্যকায় জরুরিভিত্তিতে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হয়েছে। প্রস্তাবে গাজায় যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি হামাসের হাতে জিম্মিদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির শর্ত রাখা হয়েছে।
প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত ছিল ইসরায়েলের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। তবে নিরাপত্তা পরিষদের বাকি ১৪টি দেশ প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দেয়।
প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত প্রস্তাব পাস হয়েছে। এই প্রস্তাব অবশ্যই বাস্তবায়ন হতে হবে। কোনো পক্ষ এই যুদ্ধবিরতি ও এর শর্তগুলো বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে তা হবে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।
হামলা অব্যাহত রাখার ঘোষণা নেতানিয়াহুর
এদিকে গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবিতে নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব হওয়া সত্ত্বেও ইসরায়েলি বাহিনী গাজা সিটি, রাফাহসহ পুরো উপত্যকাজুড়ে হামলা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
হামাসের যুদ্ধবিরতির দাবিকে ‘ভ্রান্তিমূলক’ উল্লেখ করে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় মঙ্গলবার এক এক্স বার্তায় বলেছে, ‘ইসরায়েল তার যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জন, বন্দিদের মুক্তি ও হামাসকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা পর্যন্ত গাজায় সামরিক আক্রমণ চালিয়ে যাবে।’
আরও পড়ুন:মস্কোর ক্রোকাস সিটি হলে কনসার্টে হামলায় ‘উগ্র ইসলামপন্থিদের’ হাত রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, এই নৃশংসতার পেছনে ইউক্রেনের হাত থাকতে পারে।
শুক্রবার ওই হামলার ঘটনার পর এই প্রথমবারের মতো তিনি এমনটা বলেছেন। তবে এই হামলার দায় স্বীকার করা আইএস-এর কথা উল্লেখ করেননি পুতিন।
শুক্রবারের ওই ভয়াবহ হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত ১১ জনকে আটক করা হয়েছে।
ছদ্মবেশী বন্দুকধারীরা ক্রোকাস সিটি হলে ঢুকে কনসার্টে অংশগ্রহণকারীদের ওপর গুলি চালায় এবং ভবনটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে অন্তত ১৩৭ জন নিহত হয়। হামলায় ১৮০ জনেরও বেশি লোক আহত হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মোট ৯৭ জন এখনও হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
টেলিভিশনে সোমবার সম্প্রচারিত এক বৈঠকে পুতিন বলেন, ‘আমরা জানি এই অপরাধ সংঘটিত হয়েছে উগ্র ইসলামপন্থিদের হাতে, যাদের আদর্শের বিরুদ্ধে শত শত বছর ধরে লড়াই করছে মুসলিম বিশ্ব।’
পুতিন বলেন, ‘তবে অবশ্যই এই প্রশ্নের জবাব দরকার- অপরাধ করার পর সন্ত্রাসীরা কেন ইউক্রেনে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল? ওখানে তাদের জন্য কে অপেক্ষা করছিল?’
ইসলামিক স্টেট ইন খোরাসান প্রভিন্স শুক্রবার থেকে বেশ কয়েকবার বলেছে যে, তারা এই হামলার দায় স্বীকার করেছে এবং আইএসআইএল-অনুমোদিত মিডিয়া চ্যানেলগুলো হামলার সময় বন্দুকধারীদের গ্রাফিক ভিডিও প্রকাশ করেছে।
আইএস হামলার দায় স্বীকার করার পর যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা তাদের দাবির পক্ষে সাফাই গায়। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘ফ্রান্সের কাছে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে যে, এর জন্য আইএসআইএল নামে একটি সংগঠনকে দায়ী করা হচ্ছে।’
এর আগে সোমবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের রাশিয়ায় তদন্তের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করার আহ্বান জানান।
এই হামলার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ৭ মার্চ মস্কোকে সতর্ক করেছিল বলে যে খবর বেরিয়েছে, সে বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের গোয়েন্দা তথ্য গোপনীয়।’
আরও পড়ুন:২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্টিন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা এক চিঠিতে মিখাইল মিশুস্টিন বলেন, ‘রাশিয়ান ফেডারেশন সরকারের পক্ষ থেকে এবং আমার নিজের পক্ষ থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় ও স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে অভিনন্দন।’
তিনি বলেন, ‘রাশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্ক বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার চেতনায় বিকশিত হচ্ছে, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা এগিয়ে যাচ্ছে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে নানা যৌথ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করলে বন্ধুত্ব আরও শক্তিশালী এবং উভয়ের স্বার্থরক্ষা হবে।’
রুশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও তার দায়িত্বশীল কাজে নতুন সাফল্য এবং বন্ধুপ্রতিম বাংলাদেশি জনগণের সুখ ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।
মন্তব্য