আল জাজিরার সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহকে যেদিন হত্যা করা হয়, সেদিন তার মাথায় ছিল হেলমেট, গায়ে ছিল ভেস্ট। যেখানে স্পষ্ট লেখা ছিল ‘প্রেস’।
গুলি হেলমেট ও ভেস্টের ঠিক মাঝখান দিয়ে শিরিনের ঘাড়ে বিদ্ধ হয়। এ সময় শিরিনের সহকর্মীরা এবং পথচারীরা তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করলে গুলি চলতে থাকে। তাই তারা এগিয়ে আসতে পারেননি। নিথর পড়ে ছিল শিরিনের দেহ।
শুরুতে ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা এই মৃত্যুর জন্য দায়ী। বিষয়টি প্রমাণে একটি ভিডিও প্রকাশ করে তেল আবিব। যেখানে দেখা যায়, একদল ফিলিস্তিনি গুলি ছুড়তে ছুড়তে একটি সরু গলি পার হচ্ছে।
ইসরায়েলের প্রভাবশালী মানবাধিকার সংস্থা- বিটস্লেম ওই ভিডিও ধারণের স্থানটি খুঁজে পেয়েছেন। তারা বলছে, ওই ভিডিওটি শিরিন হত্যাকাণ্ডের স্থান থেকে ৩০০ মিটার (৯৮৫ ফুট) দূরের একটি স্থান।
শিরিনের কর্মস্থল আল জাজিরার সানাদ নিউজ ভেরিফিকেশন অ্যান্ড মনিটরিং ইউনিটও বিষয়টি খতিয়ে দেখেছে। তারাও দাবি করেছেন ভিডিওটি ভুয়া।
প্রপাগান্ডায় কাজ না হওয়ায় আগের অবস্থান থেকে সরে আসে ইসরায়েল সরকার। তারা এই হত্যার তদন্ত করার আশ্বাস দেয়। তবে শেষমেশ আগের রূপেই ফিরেছে ইসরায়েল সরকার। তদন্ত না করার ইঙ্গিত দিয়েছে তেল আবিব। অতীতে ইসরায়েলি সেনাদের হাতে ফিলিস্তিনি নিহতের ঘটনায় তদন্ত করে নিজ দেশে সমালোচিত হয়েছিল দেশটির সরকার।
পশ্চিম জেরুজালেম থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক ইমরান খান বলেন, ‘আসলে সক্রিয় সামরিক অভিযানে একজন চাকরিরত ইসরায়েলি সেনা অফিসার বা সৈনিকের বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি তদন্ত খুলতে হবে। ইসরায়েলের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিষয়টা এখন একেবারেই অসম্ভব।
‘তদন্ত হলে সরকারের ওপর হামলা হবে। বিরোধীরা এটিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবে। এ ছাড়া সাধারণত ইসরায়েলিরা সেনাবাহিনীকে অন্য চোখে দেখে। তারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে সেনারা তাদের রক্ষক।’
ইসরায়েলের জনপ্রিয় দৈনিক হারেটজের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ঘটনায় ফৌজদারি আইন লঙ্ঘনের কোনো প্রমাণ নেই। ইসরায়েলি সেনারা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, তারা ভেবেছিল ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের দিকে গুলি ছোড়া হচ্ছিল। যদিও প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, সাংবাদিক শিরিনের আশপাশে কোনো গুলি চলেনি।
শিরিনের শরীর থেকে বের করা বুলেটের টুকরা প্রমাণ হিসেবে রেখেছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।
তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
ইসরায়েলের সামরিক পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ বলছে, তদন্ত হলে ইসরায়েলি সেনাদের সন্দেহভাজন হিসেবে বিবেচনা করা হবে। বিষয়টি ইসরায়েলি সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
ইসরায়েলি দৈনিক হারেটজের বরাতে বৃহস্পতিবার এ খবর ছেপেছে জেরুজালেম পোস্ট।
সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ দুই দশকের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা করেছেন। ২০০০ সালে শুরু হওয়া দ্বিতীয় ইন্তিফাদা বা বিদ্রোহের সময় পশ্চিম তীরের প্রধান শহরগুলোতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বড় বড় হামলাগুলো কভার করে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন শিরিন।
পশ্চিম তীরের শহর জেনিনে গত ১১ মে ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের খবর কভার করার সময় গুলিতে নিহত হন ৫১ বছরের শিরিন। প্রত্যক্ষদর্শী এবং তার সহকর্মীদের দাবি, ইসরায়েলি স্নাইপারের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন শিরিন।
হারেটজের প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় শিরিনের পরিবার জানিয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী মৃত্যুর তদন্ত না করায় তারা বিস্মিত নয়।
‘আমরা এটিই আশা করছিলাম। এ কারণেই আমরা চাইনি তারা (ইসরায়েল) তদন্তে অংশ নিক। আমরা এই কাজের জন্য দায়ী যে কাউকেই জবাবদিহি করতে চাই।
‘যেহেতু তিনি একজন আমেরিকান নাগরিক, তাই আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি। সেই সঙ্গে একটি ন্যায্য ও স্বচ্ছ তদন্ত শুরুর পাশাপাশি এসব হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।’
জবাব দিয়েছে ওয়াশিংটন। নিজের নাগরিকের হত্যার তদন্তে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন।
The IDF has confirmed to me that they will not be opening a criminal investigation into the death of al-Jazeera journalist Shireen Abu Akleh who was killed during a military operation in Jenin last week
— Anna Ahronheim (@AAhronheim) May 19, 2022
আরও পড়ুন:
আনুষ্ঠানিকভাবে শুক্রবার পদত্যাগ করেছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইউআভ গালান্ট।
তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন ইসরায়েল কাৎজ।
তিন দিন আগে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গালান্টকে বরখাস্ত করেন। এ ঘটনার পরই দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়।
ইসরায়েলের অনেকেই গালান্টকে কট্টর ডানপন্থি সরকারের মধ্যে একমাত্র মধ্যপন্থি কণ্ঠস্বর হিসেবে বিবেচনা করেন। তার অপসারণকে গাজায় বন্দিদের উদ্ধারে নেতানিয়াহুর অনাগ্রহ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
কাৎজ বর্তমানে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন এবং তিনি নেতানিয়াহুর দীর্ঘকালীন অনুগামী ও বর্ষীয়ান মন্ত্রী হিসেবে পরিচিত।
এদিকে শুক্রবার ইসরায়েলের সামরিক দপ্তর গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানোর জন্য নতুন এইড ক্রসিং খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তবে এর সময় এখনও নির্ধারণ করা হয়নি।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানায়, ৩০০ ট্রাক মানবিক সহায়তা সামগ্রী সরবরাহ করছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে গাজা উপত্যকায় এসব সহায়তা পাঠানোর অনুমতি দেবে তারা। এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা অনুযায়ী কম।
যুক্তরাষ্ট্র চায় প্রতিদিন ৩৫০টি ট্রাক সহায়তা গাজায় পাঠানো হোক।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হয় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ। সে সময় গাজার শাসক দল হামাস ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষকে হত্যা করে। সে সময় ২৫০ জনকে জিম্মি করা হয়।
পরে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী হামলা চালিয়ে ৪৩ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করে। নিহত ফিলিস্তিনিদের অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু।
আরও পড়ুন:ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা ও লেবাননে ইসরায়েলের ২৪ ঘণ্টার হামলায় শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন।
আল জাজিরা শুক্রবার জানায়, গাজাজুড়ে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৫০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়। এর মধ্যে গাজার অবরুদ্ধ উত্তরেই নিহত হন ৪২ জন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গত বছরের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৩ হাজার ৪৬৯ জনে পৌঁছেছে। এ সময়ে আহত হন আরও ১ লাখের বেশি মানুষ।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৫৩ জন নিহত ও ১৬১ জন আহত হয়।
এদিকে লেবাননজুড়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা অব্যাহত রেখেছে নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন বাহিনী। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনা, মসজিদের পাশাপাশি ঐতিহাসিক স্থাপনাতেও চালানো হচ্ছে একের পর এক হামলা।
ফিলিস্তিনের গাজার উত্তরে শনিবার একটি পোলিও টিকাদান কেন্দ্রে হামলায় চার শিশুসহ ছয়জন আহত হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ কথা জানায়।
জেনেভা থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, ইসরায়েলি বোমা হামলার কারণে এর আগে টিকাদান স্থগিত করতে বাধ্য হন সংশ্লিষ্টরা। পরে ডব্লিউএইচও শুধু গাজার উত্তরে শনিবার দ্বিতীয় দফা টিকাদান ফের শুরু করে।
ডব্লিউএইচওর প্রধান টেডরোস আধানম গেব্রিয়েসুস বলেন, স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি এমন একটি এলাকায় যেখানে টিকা দেয়ার একটি মানবিক বিরতি দেয়া হয় এবং পরবর্তী সময়ে দ্বিতীয় দফা টিকাদান প্রয়োজন পড়ে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত লেবাননে ইসরায়েলি বিমান হামলায় এক প্রবাসী বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বৈরুতে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস।
নিহত মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন (৩১) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার খাড়েরা ইউনিয়নের খাড়েরা গ্রামের মোহাম্মদ আবদুল কুদ্দুসের ছেলে। তিনি বৈরুতে একটি কফি শপে কর্মরত ছিলেন।
স্থানীয় সময় শনিবার বিকেলে নিজাম উদ্দিন বৈরুতের হাজমিয়ে এলাকায় নিজ কর্মস্থলে যাওয়ার পথে হামলার শিকার হয়ে প্রাণ হারান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা ইউএনবিকে জানান, নিহতের স্ত্রী বর্তমানে লেবাননে অবস্থান করছেন। লেবাননে বাংলাদেশের দূতাবাস তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।
যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ফ্লাইট না থাকায় মরদেহ বাংলাদেশে আনা সম্ভব হবে না বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
খাড়েরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘জীবিকার তাগিদে গত ১২ বছর আগে মোহাম্মদ নিজাম লেবাননে যান। শনিবার কর্মস্থলে যাওয়ার পথে বোমা বিস্ফোরিত হয়ে নিহত হয়েছেন বলে তার বড় ভাই আমাকে নিশ্চিত করেছেন। তার লাশ সেখানে হিমঘরে রাখা আছে।’
নিজাম উদ্দিনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন লেবাননে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এয়ার ভাইস মার্শাল জাভেদ তানভীর খান।
আরও পড়ুন:ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারি বাসভবন লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ।
স্থানীয় সময় শনিবার এ হামলা চালানো হয়। এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানায়, শনিবার সকালে লেবানন থেকে তেল আবিবের উত্তরে সিজারিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালানো হয়। হামলার সময় নেতানিয়াহু, তার স্ত্রী এবং পরিবার সিজারিয়াতে ছিল না। এ ছাড়া এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।
ড্রোন হামলায় নেতানিয়াহুর একটি বাসভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে তার কার্যালয়।
জেরুজালেম থেকে এএফপি জানায়, ড্রোনটি লেবানন থেকে ছোড়া হয়েছিল এবং এটি সরাসরি নেতানিয়াহুর বাসভবনে আঘাত হানে। এটি লেবানন থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে নেতানিয়াহুর বাসভবনে আছড়ে পড়ে।
হামলার পরপরই ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। এ ছাড়া একই সময় তেল আবিবে সতর্কতামূলক সাইরেন বেজে ওঠে।
নেতানিয়াহুর বাসভবনে যে ড্রোনটি আছড়ে পড়েছে তার সঙ্গে তেল আবিবে আরও দুটি ড্রোন হামলা চালায় হিজবুল্লাহ, তবে সেগুলো ঠেকিয়ে দেয়ার দাবি করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
আরও পড়ুন:ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি হামলায় উপত্যকার শাসক দল হামাসের প্রধান ইয়াহইয়া সিনওয়ার নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘(২০২৩ সালের) ৭ অক্টোবরের গণহত্যা ও নৃশংসতার জন্য দায়ী ইয়াহইয়া সিনওয়ারকে আজ ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর (আইডিএফ) সদস্যরা হত্যা করেছে।’
এর আগে এক বিবৃতিতে আইডিএফ জানায়, গাজায় অভিযানে হামাসের তিন নেতা নিহত হন, যাদের মধ্যে সিনওয়ারও আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সত্যিই তিনি নিহত হয়েছেন কি না, তা নিশ্চিত হতে লাশগুলোর ডিএনএ পরীক্ষার তোড়জোড় চলছে বলে জানায় আইডিএফ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসরায়েলের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, লাশটি সিনওয়ারের কি না, প্রাথমিক পরীক্ষায় তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আরেক ইসরায়েলি নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, সম্ভবত পরিকল্পিত বিমান হামলায় নয়, সরাসরি লড়াইয়ে তিনি নিহত হয়েছেন।
এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে হামাসের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য আসেনি।
গত ৩১ জুলাই ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথ অনুষ্ঠান উপলক্ষে তেহরানে অবস্থানকালে বিমান হামলায় নিহত হন হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান ইসমাইল হানিয়া। এর ছয় দিন পর হানিয়ার স্থলাভিষিক্ত হন ইয়াহইয়া সিনওয়ার।
ইসরায়েলের বিশ্বাস, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দেশটিতে হামাসের হামলার অন্যতম প্রধান কারিগর ছিলেন সিনওয়ার। ওই ঘটনার পর থেকেই তাকে হত্যায় মরিয়া ছিল ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দারা।
সিনওয়ারের মৃত্যু হলে তা হামাসের জন্য হবে বড় ধাক্কা। বছরের পর বছর ধরে তিনি গাজা উপত্যকায় হামাসের শীর্ষ নেতা এবং গোষ্ঠীটির সামরিক শাখার সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে আসছিলেন।
আরও পড়ুন:লেবাননের রাজধানী বৈরুতের কেন্দ্রস্থলের দুটি এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ২২ জন নিহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অনেকে।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের ওপর গুলিও চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, বৃহস্পতিবার দেশটিতে হিজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে চালানো ইসরায়েলি বিমান হামলায় এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে।
ঘটনাস্থলে থাকা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক আলোকচিত্রী জানান, এক বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে বৈরুতের মধ্যাঞ্চলে ইসরায়েলের সবচেয়ে প্রাণঘাতী এ বিমান হামলায় একটি আট তলা ভবন ধসে পড়ে এবং অন্যটির নিচ তলা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানায়, তারা এ হামলার বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলীতে ইসরায়েলি বিমান হামলা অনেক বেশি সাধারণ ঘটনা। এসব এলাকায় হিজবুল্লাহর অনেক সামরিক ঘাঁটি আছে।
হামলার পর হিজবুল্লাহর আল মানার টেলিভিশনের খবরে বলা হয়, গোষ্ঠীটির শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা ওয়াফিক সাফাকে হত্যার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
এতে বলা হয়, সাফা টার্গেট করা ভবনগুলোর কোনোটিতেই ছিলেন না।
হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে এক বছরের পাল্টাপাল্টি হামলা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সর্বাত্মক যুদ্ধে রূপ নেয়।
লেবাননজুড়ে ভারি হামলা চালানোর পাশাপাশি স্থল আক্রমণ শুরু করে ইসরায়েল। অন্যদিকে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে আরও জনবহুল এলাকায় রকেট হামলা বাড়িয়েছে হিজবুল্লাহ। এতে অল্প কিছু হতাহত হওয়াসহ দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।
ইসরায়েলি বাহিনী বৃহস্পতিবার দক্ষিণ লেবাননে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের ওপর গুলি চালিয়ে দুজনকে আহত করে, যা বিশ্বব্যাপী ব্যাপক নিন্দার ঝড় তুলেছে।
এ ঘটনার পর ইতালির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে প্রতিবাদ জানিয়েছে।
বৈরুতের মধ্যাঞ্চলে ইসরায়েলি বিমান হামলার
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাস আল-নাবা ও বুর্জ আবি হায়দার এলাকায় বৈরুতের দুটি স্থানের ধ্বংসস্তূপের কাছে অনেকগুলো অ্যাম্বুলেন্স ও বিপুলসংখ্যক মানুষকে জড়ো হতে দেখা যায়।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এ ঘটনায় ২২ জন নিহত ও ১১৭ জন আহত হন, তবে তাদের বিস্তারিত পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
সম্প্রতি বৈরুত সংলগ্ন এলাকায়, বিশেষ করে ঘনবসতিপূর্ণ দক্ষিণ শহরতলীতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরুল্লাহ এবং অন্যান্য জ্যেষ্ঠ কমান্ডার নিহত হন।
২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর হামাস ও ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে ইসরায়েলে রকেট হামলা শুরু করে হিজবুল্লাহ।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য