নানা সংকটে উত্তাল শ্রীলঙ্কায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে এবার পুলিশের এক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।
সোমবার রাজধানীর কলম্বোতে সংঘর্ষের সময় আহত হয়েছিলেন ওই পুলিশ সদস্য। মঙ্গলবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে।
কলম্বো জাতীয় হাসপাতালে মারা যাওয়া ২৪ বছর বয়সী এই পুলিশ কর্মকর্তার বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়নি।
এর আগে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর একটি ভবনে প্রবেশের চেষ্টার সময় নিহত হন দেশটির সরকারদলীয় একজন এমপি। তিনি নিজের গুলিতেই নিহত হয়েছেন বলে দাবি পুলিশের।
শ্রীলঙ্কার সংবাদমাধ্যম ডেইলি মিরর বলছে, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ‘টেম্পল ট্রিজ’র সামনে বিস্ফোরণ ও টিয়ার শেলে আহত হয়েছিলেন পুলিশ সদস্য। উদ্ধার করে তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। পরে তার মৃত্যু হয়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পুলিশ সদস্য ছাড়াও হাসপাতালে ভর্তি আরও একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
বেশ কিছুদিন ধরেই অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে উত্তাল শ্রীলঙ্কা; চলছে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ও প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন।
এক বৈঠকে গোতাবায়া সংকট সমাধানে বড় ভাই মাহিন্দাকে পদত্যাগ করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন গত শুক্রবার। এর পরই সোমবার পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। তবে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া পদ ছাড়ছেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
ডেইলি মিরর বলছে, পার্লামেন্টে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে একটি সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য আমন্ত্রণ জানাবেন প্রেসিডেন্ট। অবশ্য বিরোধী এসজেবি পার্টির নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা সম্ভাব্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করবেন না বলে জানিয়েছে তার দল।
শ্রীলঙ্কায় টানা কয়েক দিন ধরে চলা সরকারবিরোধী আন্দোলন সোমবার আরও বড় রূপ ধারণ করে। এদিন সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে আন্দোলনে বসা বিক্ষুব্ধদের ওপর হামলা চালায় সরকার সমর্থকরা। এতে বেশ কিছু জায়গায় সংঘর্ষ হয়। দুই শতাধিক মানুষ আহত হয়ে ভর্তি হয় হাসপাতালে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ। প্রথমে কলম্বো এবং পরে পুরো দেশে জারি করা হয়েছে কারফিউ। এমন প্রেক্ষাপটেও নির্দেশনা অমান্য করেই মাঠে আছে আন্দোলনকারীরা।
এদিন রাজধানী কলম্বোর কাছে নিত্তামবুয়া এলাকায় নিহত হন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল শ্রীলঙ্কা পদুজেনা পেরামুনার (এসএলপিপি) এমপি অমরাকীর্থি আথুকোরালা। এ ছাড়া সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন।
উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশের কুরুনেগালা শহরে মাহিন্দা রাজাপাকসের পৈতৃক বাড়ি ‘মেদামুলানা ওয়ালাওয়াতে’ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। অন্য বেশ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রীর গাড়িতেও আগুন দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরের বিষ্ণুপুর জেলায় হামলায় সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) দুই সদস্য নিহত ও দুজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সময় শুক্রবার গভীর রাতে এ হামলা চালানো হয়, যেটি জঙ্গিরা করেছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর বরাত দিয়ে এনডিটিভির খবরে বলা হয়, সন্দেহভাজন কুকি জঙ্গিদের একটি দল নারানসেইনা গ্রামের পাহাড়ি অংশ থেকে উপত্যকা অঞ্চলের দিকে সিআরপিএফের চৌকি লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এর জবাবে সিআরপিএফ সদস্যরাও পাল্টা গুলি চালায়। এরই মধ্যে চৌকিতে বোমা বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হন বাহিনীর চার সদস্য।
এ চারজনকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হলেও দুজনের মৃত্যু হয়। অপর দুজনকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের সূত্রগুলো জানায়, মণিপুরে সংকট শুরুর প্রথম বার্ষিকীর ছয় দিন আগে এ হামলা হলো। পাহাড়ে লুকিয়ে থাকা জঙ্গিদের হামলা আগামী দিনগুলোতে বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রাণ হারানো দুই সিআরপিএফ সদস্য ১২৮ ব্যাটালিয়নের হয়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন, যাদের কর্মস্থল ছিল নারানসেইনা এলাকায়। এ দুজন হলেন উপপরিদর্শক এন সরকার ও প্রধান কনস্টেবল অরূপ সাইনি।
আহত দুজন হলেন পরিদর্শক যাদব দাস ও কনস্টেবল আফতাব দাস।
হামলাকারীরা শুক্রবার মধ্যরাতে হামলা শুরু করে বলে খবর পাওয়া যায়, যেটি চলে রাত সোয়া দুইটা পর্যন্ত।
আরও পড়ুন:ভারতের ১৩ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৮৮টি আসনে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ।
স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
এর আগে ভারতের ২১ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ১০২টি আসনে লোকসভা নির্বাচনের প্রথম ধাপে ভোট শুরু হয় ১৯ এপ্রিল।
দ্বিতীয় দফার ভোটে সবচেয়ে বেশি ও সবচেয়ে কম সম্পদ নিয়ে যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের তথ্য দিয়ে শুক্রবার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে সবচেয়ে ধনী প্রার্থী হলেন কর্নাটকের কংগ্রেস প্রার্থী ভেঙ্কটরমন গৌড়া। জাতীয় নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামা অনুযায়ী, ৬২২ কোটি রুপি সমমূল্যের সম্পদ রয়েছে তার। তিনি এ নির্বাচনে এইচডি কুমারস্বামীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন।
দ্বিতীয় ধনী প্রার্থী হলেন কংগ্রেসের ডিকে সুরেশ। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ৫৯৩ কোটি রুপি। ডিকে সুরেশ বেঙ্গালুরু গ্রামীণ আসন থেকে তৃতীয়বারের মতো প্রার্থী হয়েছেন।
তৃতীয় ধনী প্রার্থী হলেন বিজেপি নেত্রী এবং অভিনেত্রী হেমা মালিনী। তিনি মথুরা লোকসভা আসন থেকে লড়ছেন। তার সম্পদের পরিমাণ ২৭৮ কোটি রুপি। মধ্য প্রদেশের কংগ্রেস নেতা সঞ্জয় শর্মা চতুর্থ ধনী প্রার্থী, তার সম্পদের পরিমাণ ২৩২ কোটি রুপি।
সম্পদের পরিমাণ সবচেয়ে কম যাদের
লোকসভা নির্বাচনে সবচেয়ে কম সম্পদ নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন নাগোরাও পাটিল। মহারাষ্ট্রের নান্দেদ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে দাঁড়িয়েছেন তিনি। তার সম্পদ রয়েছে ৫০০ রুপি এবং তার কোনো স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি নেই।
এরপরেই আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজেশ্বরী কেআর। তিনি কেরালার কাসারাগড় আসন থেকে লড়ছেন। তার সম্পদের পরিমাণ ১০০০ রুপি।
২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে লোকসভায় ৩৫৩টি আসন পায় এনডিএ, যেখানে বিজেপির একক আসনের সংখ্যা ৩০৩টি।
ভারতে এবার ১৮তম লোকসভা নির্বাচন হচ্ছে, যার ব্যাপ্তিকাল ৪৪ দিন। দেশটিতে মোট সাত দফায় এ ভোট হবে। লোকসভা নির্বাচনের শেষ ধাপের ভোট ১ জুন।
আরও পড়ুন:পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বাংলাদেশের উন্নতির ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নতি দেখে আমাদের লজ্জা হয়।
দেশটির ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বুধবার মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন বলে জানিয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস।
তিনি বলেছেন, “যে সময় বাংলাদেশ পাকিস্তানের অংশ ছিল তখন তাদের বলা হতো, এই অংশটি ‘পাকিস্তানের ওপর একটি বোঝা’। কিন্তু ওই ‘বোঝাই’ এখন অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ব্যাপক উন্নতি করেছে। ফলে এখন বাংলাদেশের দিকে তাকালে আমি লজ্জিত হই। কারণ বাংলাদেশ এগিয়ে গেলেও পাকিস্তান এখনও অনেক পিছিয়ে আছে।”
সময়ের পরিক্রমায় সেই ‘বোঝা’র জনপদ এখন উন্নতির নানান সূচকে ছাড়িয়ে গেছে পাকিস্তানকে।
১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ ভাগ হওয়ার পর বাঙালিদের এ ভূখণ্ড পাকিস্তানের একটি অংশ হয়ে শাসিত হতে থাকে, কিন্তু সবকিছুতে এ জনপদের মানুষের ওপর ছিল বৈষম্য। পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে একসময় মুক্তির সংগ্রাম শুরু হয়, যার ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে হয় স্বাধীনতার যুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ শেষে বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। স্বাধীনতার ৫৩ বছরে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে পাকিস্তানের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ।
পাকিস্তানের ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে গত বুধবার সিন্ধ সিএম হাউসে একটি মতবিনিময় সভা করেন শাহবাজ শরিফ।
সে সভায় মুক্তিযুদ্ধের আগের সময়ের প্রসঙ্গ টেনে শাহবাজ শরিফ বলেন, “আমি তখন অনেক তরুণ ছিলাম...তখন আমাদের বলা হতো ওই অঞ্চল (বাংলাদেশ) আমাদের জন্য বোঝা। আজ আপনারা জানেন, সেই ‘বোঝা’ কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। তাদের দিকে তাকালে আমি এখন লজ্জিত হই।”
এদিকে শাহবাজ শরিফের সঙ্গে আলোচনায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন ব্যবসায়ীরা। তারা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের সঙ্গেও ব্যবসাবিষয়ক আলোচনা শুরুর তাগিদ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদের নির্বাচন হয়। এই নির্বাচনের মাধ্যমে দ্বিতীয়বারের মতো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন শাহবাজ শরিফ। বেশ কিছু বছর ধরে পাকিস্তানের অর্থনীতি ধুঁকছে। মূল্যস্ফীতি, দারিদ্র্য বৃদ্ধি, দুর্নীতিসহ নানা সঙ্কটের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি।
গত কয়েক বছর ধরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নাজুক অবস্থায় রয়েছে। অনুষ্ঠানে শাহবাজ শরিফ পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য দেশটির ব্যবসায়ীদের রপ্তানি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেন।
এ ছাড়া দেশে ‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার’ জন্য পিটিআই প্রধান ইমরান খানের প্রতি তার নমনীয় দৃষ্টিভঙ্গিও প্রকাশ করেন শাহবাজ।
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। শুক্রবার দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ হবে। দেশের নাগরিকদের ভোটদানে উৎসাহ দিতে চেষ্টার ত্রুটি রাখছে না দেশটির রাজনৈতিক দলগুলো। তাদের সঙ্গে এবার যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন কোম্পানি।
দক্ষিণ ভারতের বেঙ্গালুরুতে নাগরিকদের ভোটদানে উদ্বুদ্ধ করতে অনেক কোম্পানি বিনামূল্যে খাবার থেকে শুরু করে ফ্রিতে ট্যাক্সি পর্যন্ত অফার করেছে।
প্রতিবারই কম ভোটার উপস্থিতির জন্য খবরের শিরোনাম হয় কর্ণাটক রাজ্যের শহর বেঙ্গালুরু। তাই ভোটারদের ভোটের মাঠে আকৃষ্ট করতে এবার রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি কোমর বেঁধে নেমেছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও। ভোট দেয়ার পুরস্কার হিসেবে সেখানে হোটেল, ট্যাক্সি পরিষেবা এমনকি কিছু প্রতিষ্ঠান কর্মীদের প্রণোদনা দেয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এসব সুবিধার মধ্যে ফ্রি বিয়ার, বিনামূল্যে ট্যাক্সি রাইড এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার মতো সুবিধাকে উল্লেখযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করছে বিবিসি।
এছাড়া আঙুলে ভোটের কালি দেখাতে পারলে অনেক হোটেল ক্রেতাদের বিনামূল্যে খাবার খাওয়াবে বলেও ঘোষণা দিয়েছে।
বুধবার নির্বাচনি আইন লঙ্ঘন না করার শর্তে স্থানীয় হোটেল মালিক সমিতিকে ফ্রিতে বা বিশেষ ছাড়ে খাবার বিক্রির অনুমতি দিয়েছে রাজ্যের উচ্চ আদালত।
এ বিষয়ে ব্যাঙ্গালুরুর হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি পিসি রাও ডেইলি মিররকে বলেন, ‘ভোটারদের ভোটদানে উৎসাহ দিতে হোটেলগুলো বিভিন্ন পরিকল্পনা করেছে। কেউ কেউ বিনামূল্যে কফি, ডোসা দেবে। আবার কেউ কেউ গরমে ভোটারদের জুস খাওয়াবে। কিছু হোটেল তো খাবারের ওপর বিশেষ ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে।’
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কর্ণাটক রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে কম ভোট পড়ে দক্ষিণ ব্যাঙ্গালুরুতে। সেবার ওই নির্বাচনি এলাকার মোট ভোটারদের ৫৩.৭ শতাংশ নাগরিক ভোট দিয়েছিলেন।
ব্যাঙ্গালুরুর জনপ্রিয় পার্ক ‘ওয়ান্ডারলা’ ভোটারদের জন্য টিকিটে বিশেষ মূল্যছাড় দিয়েছে। অন্যদিকে ভোট দিয়ে আসা প্রথম পঞ্চাশ জন ক্রেতাকে বিনামূল্যে বিয়ার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ‘ডেক অফ ব্রুস’ নামের একটি পানশালা।
স্থানীয় রাইড শেয়ার অ্যাপ ‘ব্লু-স্মার্ট’ ভোটকেন্দ্রের ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে ভোটারদের রাইডে ৫০ শতাংশ ছাড় দিয়েছে। এছাড়া ‘র্যাপিডো’ নামের ট্যাক্সি শেয়ারিং কোম্পানি ভোটারদের বিনামূল্যে রাইড দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
মিস্টার ফিলি’স নামের একটি ফাস্টফুড রেস্তোরাঁ প্রথম ১০০ জন ভোটারকে বার্গার ও মিল্কশেকের ওপর ৩০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, ‘এটি আসলে নাগরিকদের ভোটের গুরুত্ব বোঝানো এবং আমাদের গণতন্ত্র উদযাপনের উপায়।’
তিনি বলেন, ‘আশা করছি, এই উদ্যোগটি ব্যাঙ্গালুরুর নাগরিকদের মধ্যে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ ও পরিবর্তন আনতে উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে।’
উল্লেখ্য, ভারতের লোকসভা নির্বাচনের প্রথম ধাপে ২১টি রাজ্যের ১০২টি আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। দেশটির নির্বাচন কমিশনের মতে, প্রথম দফা নির্বাচনে সব রাজ্যে গড়ে প্রায় ৬০-৬৫ শতাংশের বেশি ভোটারের উপস্থিতি রেকর্ড করা হয়েছে।
দ্বিতীয় দফায় দেশটির ১৩ রাজ্যের ৮৯টি লোকসভা আসনে ভোটগ্রহণ হবে। ছত্তিশগড়, কর্ণাটক, কেরালা, আসাম, বিহার, মণিপুর, রাজস্থান, ত্রিপুরা, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ এবং জম্মু-কাশ্মীরে শুক্রবার ভোটগ্রহণ হবে।
এবার ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে সাত ধাপে, চলবে প্রায় দুই মাস ধরে। ভোটগ্রহণ পর্ব শেষ হবে আগামী ১ জুন এবং ৪ জুন ভোটের ফল ঘোষণা হবে।
মিয়ানমারের কারাগারে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ শেষে ১৭৩ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। গভীর সাগরে অবস্থানরত মিয়ানমার প্রতিরক্ষা বাহিনীর জাহাজ ‘চিন ডুইন’ থেকে তাদের নিয়ে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর একটি জাহাজ বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ার ছড়া ঘাটে এসে পৌঁছায়।
এর আগে বুধবার বেলা ১১টার দিকে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজার এসে পৌঁছায়।
প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজার পৌঁছানোর পরপরই ঘাট থেকে গাড়িযোগে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার উদ্দেশে রওনা হয়, যেখানে বিজিবির অধীনে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ২৮৫ সদস্য রয়েছেন। তাদের নিয়ে বৃহস্পতিবার মিয়ানমার ফেরত যাবে প্রতিনিধি দলটি।
এদিন বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও কক্সবাজার ৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল।
তিনি বলেন, ‘দুপুর ১টার দিকে ১৭৩ বাংলাদেশি ঘাটে এসে পৌঁছাতে পারেন। তারা মিয়ানমারের কারাগারে ভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ করে সরকারের প্রচেষ্টায় ফিরছেন।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ১৭৩ জনের মধ্যে ১২৯ জন কক্সবাজার জেলার, ৩০ জন বান্দরবান জেলার, সাতজন রাঙ্গামাটি জেলার এবং একজন করে রয়েছেন খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজবাড়ী, নরসিংদী ও নীলফামারী জেলার। ইতোমধ্যে ফেরত আসাদের অপেক্ষায় ঘাটে ভীড় করছেন তাদের স্বজনরা।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম জানিয়েছেন, দেশে ফেরত আসাদের গ্রহণ করে পুলিশে হস্তান্তর করবে বিজিবি। তারপর যাচাই-বাছাই শেষে স্ব স্ব থানার পুলিশের মাধ্যমে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
এদিকে ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানিয়েছে, রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের কারণে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হওয়া মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ সফররত মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বাহিনীর ‘চিন ডুইন’ জাহাজটি ১৭৩ বাংলাদেশিকে বহন করে মঙ্গলবার যাত্রা শুরু করে। এর মধ্যে ১৪৪ জন কারাগারে পূর্ণ মেয়াদে সাজা ভোগ করেছেন। অপর ২৯ জন মিশনের প্রচেষ্টায় ক্ষমা পেয়ে বাংলাদেশে ফিরছেন।
মূলত বাংলাদেশিদের নিয়ে আসা মিয়ানমারের জাহাজটিই বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বিজিপির ২৮৫ সদস্যকে নিয়ে ফেরত যাবে।
মিয়ানমারের ২৮৫ সদস্যকে ফেরত নেয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেই মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি নাইক্ষ্যংছড়ি গেছে।
মিয়ানমারে ফেরত যাওয়াদের মধ্যে গত ১৯ এপ্রিল একদিনে নতুন ২৪ জন, ১৬ এপ্রিল ৬৪ জন, ১৪ এপ্রিল ১৪ জন, ৩০ মার্চ ৩ জন ও ১ মার্চ ১৭৭ জন বিজিপি ও সেনা সদস্য পালিয়ে আশ্রয় নেন। এরও আগে ফেব্রুয়ারির শুরুতে কয়েক দফায় বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন আরও ৩৩০ জন, যাদের গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
প্রথম দফায় ফেরতের সময় ঘটনাস্থলে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ ও সংশ্লিষ্টরা কথা বললেও এবার তা হচ্ছে না। ফেরত আসা বাংলাদেশিদের গ্রহণ এবং ২৮৫ জনকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শেষ করে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে প্রেস ব্রিফিং করে বিস্তারিত জানানো হবে। সেখানেও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ সংরক্ষিত হতে পারে।
আরও পড়ুন:ভারতে চলমান লোকসভা নির্বাচনের পর ক্ষমতায় আসা সরকারের জন্য বেকারত্ব সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
বার্তা সংস্থাটি অর্থনীতিবিদদের ওপর চালানো জরিপের ফল বুধবার এক প্রতিবেদনে তুলে ধরে।
জরিপে অংশ নেয়া অর্থনীতিবিদদের আশা, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে ছয় দশমিক পাঁচ শতাংশ।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, বড় অর্থনীতিগুলোর তুলনায় দ্রুততম গতিতে ভারতের প্রবৃদ্ধি হলেও বিপুল ও ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছে দেশটি।
গত ১৬ থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত ২৬ জন অর্থনীতিবিদের ওপর জরিপ চালায় রয়টার্স, যাদের মধ্যে ১৫ জনই বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের পর সরকারের জন্য বৃহত্তম চ্যালেঞ্জ হবে বেকারত্ব।
অন্যদিকে আট অর্থনীতিবিদ দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম দেশটির গ্রামাঞ্চলে ভোগকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখেন। অন্যদিকে দুজন অর্থনীতিবদ মূল্যস্ফীতি এবং একজন দারিদ্র্যকে বৃহত্তম চ্যালেঞ্জ হিসেবে তুলে ধরেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন দল বিজেপি ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে কর্মসংস্থান বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছিল। চলতি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে পারে দলটি।
বিজেপির প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেকারত্বের হার পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টির ইঙ্গিত দিচ্ছে না।
আরও পড়ুন:ভারতের লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফা শেষ হতে না হতেই প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসকে কটাক্ষ করতে দেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর তোপ দাগলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রথম দফায় ভোটের হার আশানুরূপ না হওয়ায় তিনি সরাসরি ধর্মীয় মেরুকরণের পথে হাঁটছেন বলে মত বিরোধীদের।
বিজেপিবিরোধী রাজনৈতিক জোট ‘ইন্ডিয়া’ভুক্ত দলগুলো বলছে, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোট টানতে ইচ্ছাকৃতভাবে সাম্প্রদায়িকতা উস্কে দিচ্ছেন মোদি।
বিজেপির পক্ষ থেকে অবশ্য এখন পর্যন্ত এ অভিযোগের কোনো প্রতিবাদ জানানো হয়নি।
রোববার রাজস্থানের একটি জনসভায় গিয়ে মোদি বলেন, ‘সরকারে থাকাকালীন কংগ্রেস বলেছিল, দেশের সম্পদের ওপর মুসলিমদের অধিকার সবার আগে। অর্থাৎ দেশের সম্পদ বণ্টন করা হবে তাদের মধ্যে, যাদের পরিবারে বেশি সন্তান রয়েছে। অনুপ্রবেশকারীদের হাতে তুলে দেয়া হবে দেশের সম্পদ।’
তিনি বলেন, ‘কংগ্রেসের ইশতেহারেই বলা হয়েছে, মা-বোনদের সোনার গহনার হিসাব করে সেই সম্পদ বিতরণ করা হবে। মনমোহন সিংয়ের সরকার তো বলেই দিয়েছে, দেশের সম্পদে অধিকার মুসলিমদেরই। আপনাদের মঙ্গলসূত্রটাও বাদ দেবে না।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই সমালোচনার ঝড় বইছে ভারতজুড়ে।
নিজের এক্স হ্যান্ডেলে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী লিখেছেন, ‘প্রথম দফার ভোট শেষ হতেই হতাশ হয়ে পড়েছেন মোদি। তার মিথ্যাচারের মাত্রা এতটাই নিচে নেমেছে যে এখন মানুষের নজর ঘোরাতে চাইছেন।’
রাহুল লিখেছেন, ‘কংগ্রেসের এবারের ইশতেহার বৈপ্লবিক। এ বিপ্লবের প্রতি বিপুল জনসমর্থন উঠতে শুরু করেছে। এবার মানুষ তার পরিবার, কর্মসংস্থান, ভবিষ্যতের কথা ভেবে ভোট দেবে। অন্য ভাবনায় বিচ্যুত হবে না ভারতের জনগণ।’
আরেকটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘স্বৈরশাসকের আসল চেহারা আবারও উন্মোচিত হয়েছে। এটি জনগণের নেতৃত্ব নির্বাচনের অধিকার কেড়ে নেয়া বাবা সাহেব আম্বেদকারের সংবিধানকে ধ্বংস করার আরেকটি পদক্ষেপ। আমি আবারও বলছি- এটা শুধু সরকার গঠনের নির্বাচন নয়, এটা দেশ বাঁচানোর নির্বাচন, সংবিধান রক্ষার নির্বাচন।’
মোদিকে তোপ দেগেছেন এআইএমআইএম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসিও।
তার কথায়, ‘প্রধানমন্ত্রী সরাসরি মুসলিমদের অনুপ্রবেশকারী বলেছেন। আসলে ২০০২ সাল থেকে মুসলিমদের নির্যাতন করেই ভোট পেয়ে আসছেন মোদি। আমরা যদি দেশের সম্পদের কথা বলি, তাহলে মোদি সরকারের আমলে দেশের সম্পদের ওপর প্রথম অধিকার তার ধনকুবের বন্ধুদের।
‘ভারতের এক শতাংশ মানুষ আজ দেশের সম্পদের ৪০ শতাংশ খেয়ে ফেলছে। সাধারণ হিন্দুদের মুসলমানদের ভয় দেখানো হচ্ছে, অথচ সত্য এই যে, আপনার টাকায় অন্য কেউ ধনী হচ্ছে।’
এদিকে বিরোধীদের সমালোচনার জবাব দিতে ২০০৬ সালে মনমোহন সিংয়ের বক্তব্যের একটি ভিডিওর ২২ সেকেন্ডের একটি ক্লিপ ছড়িয়ে দেয় বিজেপি। এর জবাবে পরে ওই ভাষণের ১ মিনিট ১২ সেকেন্ডের একটি ক্লিপ প্রচার করে কংগ্রেস।
কংগ্রেসের প্রকাশিত ওই ভিডিওতে দেখা যায়, মনমোহন বলেছিলেন ক্ষমতায়নের কথা, অথচ মোদি বলেছেন মানুষের সম্পদ কেড়ে নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে বাঁটোয়ারা করে দেয়ার কথা।
মন্তব্য