‘আওয়ামী লীগ শুধু একটা রাজনৈতিক দল নয়, একটা অনুভূতি’- দলের ২০তম কাউন্সিলে এভাবেই নিজেকে মেলে ধরেছিলেন সেদিনের বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
নিজের দলকে ‘অনুভূতি’ মেনে আসা মানুষটিকে মৃত্যুর দুই বছরের মধ্যেই যেন ভুলে গেছে সতীর্থরা।
রাজধানীর বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত ‘প্রিয় আশরাফ ভাই’ আওয়ামী লীগ নেতাদের মুখে মুখে। অথচ নিজের মৃত্যুবার্ষিকীর দিনটিতেও নিভৃতে থেকে গেলেন তিনি।
এদিন তার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন আর আত্মার শান্তি কামনার সময় হলো না আওয়ামী লীগের কোনো নেতার। কাণ্ডারী হয়ে দলকে উদ্ধার করা সৈয়দ আশরাফকে যেন ভুলেই গেল তার অনুভূতির সমার্থক আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকেও ছিল না কোনো আয়োজন।
এদিন তার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। তিনি আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে নন, মন্ত্রী হিসেবে গিয়েছিলেন সেখানে। তাজুল ইসলাম সৈয়দ আশরাফের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তার আত্মার মাগফেরাত কামনায় মোনাজাত করেন।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় দলের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ার সঙ্গে। তিনি জানালেন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের জন্য দলের কোনো কর্মসূচি ছিল না।
তিনি বলেন, ‘প্রয়াত নেতাদের মৃত্যু দিবসে পরিবারের অনুষ্ঠানে আমরা শরিক হই। দলের পক্ষে আলাদা কোনো আয়োজন থাকে না।’
২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি। দেশের নির্বাচনি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয় নিয়ে সংসদ ভবনে শপথ নিচ্ছিলেন আওয়ামী লীগের টিকিট নিয়ে বিজয়ী সংসদ সদস্যরা। তখনও দূর দেশের হাসপাতালে ক্যান্সারের সঙ্গে প্রাণপন লড়াই করছিলেন সৈয়দ আশরাফ।
ওই নির্বাচনে সৈয়দ আশরাফও জয় পেয়েছিলেন। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে থেমে যায় তার হৃদস্পন্দন। বরণ করে নিতে হয় মৃত্যুর শীতল স্পর্শকে।
দুই বছর পর এই দিনটিতে রোববার সকাল ১১টার দিকে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সমসাময়িক ইস্যুতে কথা বলতে সাংবাদিকদের সামনে আসেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বক্তব্য শুরু করেন দলের প্রয়াত নেতা সৈয়দ আশরাফের প্রতি সম্মান জানিয়ে।
‘আমি প্রথমেই আমার পূর্বসূরি আওয়ামী লীগের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।’
সৈয়দ আশরাফকে নির্মোহ রাজনীতিবিদ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের লড়াকু সৈনিক হিসেবে অভিহিত করে কাদের আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনার প্রতি তার আস্থা ছিল অবিচল।
‘সারাজীবন জনগণের জন্য রাজনীতি করে গেছেন। রাজনীতিতে তিনি বিনয় ভদ্রতা সৌজন্যবোধের এক উজ্জ্বল উদাহরণ স্থাপন করে গেছেন। আমি আজ তাকে স্মরণ করছি পরম শ্রদ্ধায়। আমি তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।’
ভূমিকা শেষ করতেই প্রশ্ন ছোড়া হয় মন্ত্রীর কাছে। জানতে চাওয়া হয়, শ্রদ্ধা জানাতে আপনি তো সৈয়দ আশরাফের কবরস্থানে যাননি? অন্য কেউ গিয়েছে কি?
সৈয়দ আশরাফের উত্তরসূরী ওবায়দুল কাদের বললেন, ‘গেছি, যায় আমাদের। গতবার আমি আমি গেছি। কিন্তু আমাদের পার্টিতে জেনারেল সেক্রেটারি এ পর্যন্ত… কারও মৃত্যুদিবসটা আমাদের পার্টির দিবস পালনের মধ্যে এটা থাকে না, নেই।
‘আব্দুস সামাদ আজাদেরটাও দিবস পালনের মধ্যেই… আব্দুল মালেক উকিল, এরিমধ্যে যারা আছেন জিল্লুর রহমান, আমাদের জলিল ভাই, কাজেই এখন নতুন করে আমি মরে গেলে আমারটাও অন্তর্ভুক্ত হবে। এরকম করতে করতে যদি দিবস পালন করি…
‘আমরা এমনে স্মরণ করি, আমাদের মধ্যে মিটিং টিটিং হয়, আলোচনা সভা হয়। সেগুলোতে আমরা অংশ নিই। যেমন আমি আজকে মৃত্যুদিবসে স্মরণ করলাম তাকে, আনুষ্ঠানিকভাবে। এগুলো ঠিক আছে…’
সৈয়দ আশরাফের রাজনৈতিক চর্চা কি এখন দলে আছে?- ফের প্রশ্ন রাখা হয় কাদেরের কাছে। এবার তিনি বললেন, ‘তিনি ভদ্র লোক, নির্মোহ রাজনীতিবিদ এবং সৌজন্যবোধ, মূল্যবোধ এগুলো তার মধ্যে ছিল যথেষ্ট। সেটাই তো আমরা স্মরণ করছি এ কথাগুলো বলে, যাতে উত্তরসূরিরা এটা তাদের জীবনে চর্চা করে। সে জন্যই বলা হচ্ছে।’
রাজনীতিতে সবাইকে ঢালাওভাবে খারাপ বলতে নারাজ কাদের। তিনি বলেন, ‘ভালো মানুষ আছে যেমন, খারাপও আছে। ভালো-মন্দ মিলিয়েই আমরা রাজনীতি করি। সবার মধ্যে সব গুণ থাকে না। যারা ভালো গুণের অধিকারী, তাদের সে ভালো গুণ মৃত্যুর পরেও থেকে যায়। আশরাফের যেগুলো ভালো গুণ, সেটা আমরা এখনও স্মরণ করি।’
সংকটে সামনে আসেন আশরাফ
২০০৭ সাল। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার তখন রাষ্ট্রক্ষমতায়। দেশের রাজনীতি ভয়াবহ সংকটের মুখে। জাতির পিতার কন্যা, সে সময়কার বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা তখন কারাগারে। ওই ‘রং বদলের’ কালে আওয়ামী লীগের কাণ্ডারী হয়েছিলেন সৈয়দ আশরাফ।
২০১৩ সালে মৌলবাদের বিরুদ্ধে হুঙ্কার ছেড়েছিলেন তিনি। হেফাজত ইসলাম সমাবেশের নামে ঢাকা দখলের ঘোষণা দিলে, তিনি বলেছিলেন, ‘আমি আহ্বান করব, আজকে সন্ধ্যার আগেই আপনারা ঢাকা শহর ত্যাগ করুন। যদি না ত্যাগ করেন, সরকার তার ব্যবস্থা করবে।’
আশরাফের সে সময়ের ভূমিকা আর বক্তব্য নতুন করে ভাইরাল হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। বহু মানুষ স্মৃতিচারণ করছেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘নিপাট ভদ্রলোক’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া মানুষটিকে।
দেশজুড়ে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে জানিয়ে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে বিরাজ করতে পারে অস্বস্তি।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি বুধবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমন বার্তা দিয়েছে।
পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
বৃষ্টিপাতের বিষয়ে বলা হয়, সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য জায়গায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ নিয়ে বলা হয়, রাজশাহী, পাবনা, খুলনা, বাগেরহাট, যশোর ও পটুয়াখালী জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, বান্দরবান জেলাসহ ঢাকা, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগ এবং রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা বিস্তার লাভ করতে পারে।
তাপমাত্রার বিষয়ে বলা হয়, সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বিরাজ করতে পারে।
আরও পড়ুন:বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কের মাদারীপুরের শিবচরে একটি যাত্রীবাহী বাস উল্টে এক যাত্রী নিহত হয়েছেন। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০ জন।
এক্সপ্রেসওয়ের বন্দরখোলা নামক স্থানে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৪টার দিকে কুয়াকাটাগামী ইউনিক পরিবহনের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। বাসটি চট্টগ্রাম থেকে কুয়াকাটা যাচ্ছিল।
প্রাণ হারানো গোলাম রহমান (৫৫) রবিশালের বাখেরগঞ্জ উপজেলার কোলোসকাঠি গ্রামের বাসিন্দা।
শিবচর হাইওয়ে থানার এসআই তমাল সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ভোর রাতে পরিবহনটি কুয়াকাটার দিকে যাচ্ছিল। এ সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি উল্টে যায়। ফলে ঘটনাস্থলেই একজন মারা যান। এ সময় আরও ১০ জন আহত হন। তাদের শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
এসআই তমাল বলেন, ‘ঘটনার পরে ভেঙে যাওয়া বাসটি উদ্ধার করা হয়েছে। আহতদের চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
ভারতের দার্জিলিংয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া লোকসভার সাধারণ নির্বাচনের কারণে বুধবার থেকে টানা তিন দিন পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ইমিগ্রেশনসহ সব ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
ভারতের দার্জিলিং জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা কালেক্টর এবং নির্বাচন অফিসার প্রীতি গোয়েলের স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বুধবার থেকে শুক্রবার (২৪ থেকে ২৬ এপ্রিল) পর্যন্ত টানা তিন দিন ইমিগ্রেশনসহ সব ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। এর মাঝে ভারতীয় ফুলবাড়ী ইমিগ্রেশন দিয়ে বাংলাদেশ থেকে শুধু ভারতীয় সকল যাত্রী এবং বাংলাদেশের জরুরি মেডিক্যাল যাত্রী ভারতে প্রবেশ করতে পারবেন। একই সঙ্গে ভারত থেকে সব বাংলাদেশি যাত্রী বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবেন, তবে কোনো টুরিস্ট যাত্রী এ সময়ে ভারতে প্রবেশ করতে পারবেন না।
বন্ধের পর আগামী ২৭ এপ্রিল থেকে আবারও স্বাভাবিক হবে বন্দরের কার্যক্রম।
পঞ্চগড় পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা ও বাংলাবান্ধা ল্যান্ডপোর্ট লিমিটেডের ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ মঙ্গলবার বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তারা জানান, ভারতের লোকসভা নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এর আগে ভারতে লোকসভা নির্বাচনের কারণে ১৭, ১৮ ও ১৯ এপ্রিল পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে পাথরসহ সকল প্রকার আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ ঘোষণা করে ভারত। পাশাপাশি এ সময় ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপারও বন্ধ ছিল।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শামা পারভীন স্বাক্ষরিত চিঠিতে ওই সময় এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
আরও পড়ুন:ময়মনসিংহে ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশার দুই যাত্রী নিহত হয়েছেন।
শহরের পঁচাপুকুরপাড় এলাকায় মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতের মধ্যে একজন পুরুষ ও একজন নারী। তাদের পরিচয় বিস্তারিত জানা যায়নি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রেলওয়ে থানার ওসি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ময়মনসিংহ থেকে জামালপুরের দিকে যাচ্ছিল যাত্রীবাহী ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস ট্রেনটি। রাত সাড়ে ১০টার দিকে ময়মনসিংহ শহরের পঁচাপুকুরপাড় এলাকা পর্যন্ত আসতেই যাত্রীবাহী একটি অটোরিকশা রেলক্রসিংয়ের ওপর উঠে পড়ে। এ সময় অটোরিকশাটিকে ট্রেন ধাক্কা দিলে সেটি দুমড়েমুচড়ে গিয়ে দুই যাত্রী ঘটনাস্থলেই নিহত হয়।’
তিনি জানান, নিহতদের পরিচয় শনাক্তসহ রেলক্রসিংয়ে গেট ব্যারিয়ার না ফেলার কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটছে কি না তাও জানতে চেষ্টা চলছে।
কদিন ধরেই দাবদাহে পুড়ছে দেশ। দিনভর তীব্র তাপপ্রবাহ। অসহনীয় গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। এ অবস্থায় জামালপুর, নাটোর ও কুমিল্লায় হিট স্ট্রোকে তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
জামালপুরে ব্যবসায়ীর মৃত্যু
জামালপুরের ইসলামপুরে চলমান তীব্র তাপদাহে হিট স্ট্রোক করে গোলাম রাব্বানী নামের এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে ওই ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়।
৪৮ বছর বয়সী রব্বানী উপজেলার চিনাডুলি ইউনিয়নের পশ্চিম গিলাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা। তিনি গুঠাইল বাজারে কাঁচামালের ব্যবসা করতেন।
নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, কয়েক দিনের চলমান তীব্র তাপদাহের কারণে এদিন সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বাড়িতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন গোলাম রাব্বানী। পরে তাকে পরিবারের সদস্যরা দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যান। হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে ইসলামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এএএম আবু তাহের বলেন, ‘গোলাম রাব্বানীকে হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়। অতিরিক্ত গরমে হিট স্ট্রোকেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে আমার ধারণা।’
বড়াইগ্রামে কৃষকের মৃত্যু
নাটোরের বড়াইগ্রামে কৃষিখেতে কাজ করার সময় হিট স্ট্রোক করে রকুল হোসেন নামের এক কৃষকের মুত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার চান্দাই ইউনিয়নের সাতইল বিলে এই ঘটনা ঘটে।
৩০ বছর বয়সী রকুল উপজেলার গাড়ফা উত্তরপাড়া গ্রামের হাজী আব্দুর রহিমের ছেলে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চান্দাই ইউপি চেয়ারম্যান শাহানাজ পারভীন বলেন, ‘সকাল থেকে জমিতে কাজ করছিল কৃষক রকুল হোসেন। এক পর্যায়ে তীব্র দাবদাহ সহ্য করতে না পেরে তিনি পাশের জলাশয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু সেখানে পোঁছানোর আগেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। পরে স্থানীয়রা বিষয়টি দেখতে পেয়ে তার মরদেহ উদ্ধার করে বাড়িতে পৌঁছে দেয়।’
বুড়িচংয়ে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু
তীব্র গরমে কাজ করতে গিয়ে কুমিল্লার বুড়িচংয়ে হিট স্ট্রোক করে মজিবুর রহমান নামের এক নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বুড়িচং উপজেলা সদরের ব্যবসায়ী মো. রুহুল আমিনের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
৪৫ বছর বয়সী মজিবুর রহমান উপজেলার জগতপুর গ্রামের আলফাজ উদ্দিনের ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, এদিন সকাল নয়টার দিকে রুহুল আমিনের বাড়িতে কাজ করতে যান মজিবুর। কিছুক্ষণ পর ভবনের বেইজ কাটার সময় হিটস্ট্রোক করেন তিনি। স্থানীয়রা তাকে সঙ্গে সঙ্গে বুড়িচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বুড়িচং থানার এসআই মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ‘মরদেহের গায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। ফলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি স্ট্রোক করে মারা গিয়েছেন। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসলে মৃত্যুর সঠিক কারণ বলা যাবে।’
গত ১১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া তাপপ্রবাহ সারা দেশে এখনও অব্যাহত রয়েছে। শনিবার থেকে টানা তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারির পর নতুন করে সোমবার (২২ এপ্রিল) আবারও তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। এসময় বন্ধ রাখা হয়েছে স্কুল, কলেজ, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও। আদালতেও আইনজীবীদের কালো পোশাক পরা শিথিল করা হয়েছে।
এই আবহাওয়া চলতি মাসজুড়ে অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ঈশ্বরদীতে ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন অর্থাৎ সোমবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল খুলনা, যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শনিবার মৌসুমের সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় যশোরে। সেদিন চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার তাপমাত্রাও ছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুসারে, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মাঝারি তাপপ্রবাহ, ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হলে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সিতোয়ে কারাগার থেকে ১৭৩ জন বাংলাদেশি নাগরিক দেশে ফিরছেন। মঙ্গলবার ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশ দূতাবাস এ তথ্য জানিয়েছে।
একই দিন সকালে এসব বাংলাদেশি নাগরিককে নিয়ে মিয়ানমারের নৌ-জাহাজ চিন ডুইন সিতোয়ে বন্দর ত্যাগ করেছে। জাহাজটি রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের কারণে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হওয়া মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে কক্সবাজারে আসছে।
বুধবার জাহাজটি বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় পৌঁছবে এবং পরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বাংলাদেশের নাগরিকদের হস্তান্তর করা হবে।
দূতাবাস জানায়, বাংলাদেশি ১৭৩ জনের মধ্যে ১২৯ জন কক্সবাজার, ৩০ জন বান্দরবান, সাতজন রাঙ্গামাটি এবং খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজবাড়ী, নরসিংদী ও নীলফামারী জেলার একজন করে বাসিন্দা রয়েছেন।
ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশ দূতাবাস মিয়ানমারের জাহাজটির বাংলাদেশ সফরে যাওয়ার তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং মিয়ানমারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি তুলে ধরে। সর্বোচ্চসংখ্যক যাচাই করে বাংলাদেশি নাগরিকদের দ্রুত ও সহজে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনায় দূতাবাস মিয়ানমারের বিভিন্ন কারাগারে অবস্থানরত ১৪৪ জন ‘যাচাই করা বাংলাদেশি নাগরিক, যাদের কারাভোগের মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে বা ক্ষমা পেয়েছেন’ তাদেরকে সিতোয়ে কারাগারে আনার উদ্যোগ নেয়।
পাশাপাশি আরও ২৯ জন যাচাই করা বাংলাদেশি নাগরিক, যারা এখনও কারাভোগ করছেন কিংবা বিচারাধীন, একইসঙ্গে তাদেরও মুক্তি দেয়ার বিষয়টি মিয়ানমারের কাছে তুলে ধরা হয়। এর ভিত্তিতে সাজা মওকুফ করে তাদেরকেও দেশে পাঠানো হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, সবশেষ গত বছরের ৩ অক্টোবর দুই দেশের সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে অনুষ্ঠিত পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে মিয়ানমারে কারাভোগ শেষ করা ২৯ জন বাংলাদেশি নাগরিককে দেশে পাঠানো হয়।
আরও পড়ুন:পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডে (পাউবো) বিপুল পরিমাণ টাকাসহ দুই উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীকে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়া পুলিশ আসার খবর পেয়ে আগেই পালিয়ে যান ঠিকাদার রাজীব ও কনকসহ কয়েকজন। এ সময় ওই দুই কর্মকর্তার কাছ থেকে ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।
মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে পাবনা পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে তাদের আটক করা হয়। দিনভর নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সন্ধ্যায় তাদের পাবনা সদর থানা পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়।
আটককৃতরা হলেন- দাপুনিয়া ইউনিয়নের টিকশাইল গ্রামের বাসিন্দা পাবনা পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) মাসুদ রানা এবং কুমিল্লার মেঘনা থানার শিবনগরের বাসিন্দা ও পাবনা পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) মোশাররফ হোসেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার সকালে ঠিকাদার ও কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে পাবনা পাউবোতে অনুসন্ধানে যান কয়েকজন সাংবাদিক। সেখানে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মাসুদ রানার কক্ষে গেলে ওই কক্ষ ভেতর থেকে বন্ধ পাওয়া যায়। কয়েকবার ধাক্কা দেয়ার পর মাসুদ রানা দরজা খোলেন। কক্ষে ঠিকাদার ও স্থানীয় কমিশনার আরিফুজ্জামান রাজিব ও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোশাররফসহ কয়েকজনকে দেখা যায়। এ সময় টেবিলে বিপুল অর্থও দেখতে পান সাংবাদিকরা। এরপরই আরেক ঠিকাদার কনক হাজির হন।
সরকারি অফিসে ঠিকাদারের সঙ্গে বন্ধ কক্ষে কীসের অর্থ লেনদেন হচ্ছে, তা জানতে চান সাংবাদিকরা, কিন্তু প্রশ্নের সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হন তারা। বিষয়টি সন্দেজনক মনে হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে খবর দেন ওই সাংবাদিকরা। পুলিশ এসে পৌঁছানোর আগেই দুই ঠিকাদার পালিয়ে যান। পরে পুলিশ এসে দুই প্রকৌশলীকে আটক করে এবং দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) খবর দেয়।
তাদের সেখানেই দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য সংগ্রহ করে দুদক ও পুলিশ। পরে সন্ধ্যার দিকে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
তানভীর আহমেদ দীপ নামের পাবনা পাউবোর এক ঠিকাদার বলেন, ‘আটক দুইজন হয়ত ষড়যন্ত্রের শিকার হতে পারে। কারণ তারা মাত্র কয়েকমাস এখানে এসেছেন। এত দ্রুত এসব টাকা লেনদেন করবে, এটা অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে। কোনো ঠিকাদার তাদের কাছ থেকে সুবিধামতো কাজ (প্রকল্প) না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের ষড়যন্ত্রমূলকভাবে হয়ত ফাঁসিয়েছে।’
আনিছুর রহমান মারুফ নামের আরেক ঠিকাদার বলেন, ‘প্রত্যেক অফিসের কাজে কর্মকর্তাদের বিশেষ কমিশন দিতে হয়। কাজের শুরু থেকে ধাপে ধাপে এসব টাকা দিতে হয়। না দেয়া হলে বিল আটকে দেয়া হয়।’
পাবনা পাউবোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুদক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি দেখছে। কোথাকার টাকা, কীভাবে লেনদেন হলো- সেসব বিষয়ে খোঁজ নিয়ে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
পাবনা সদর থানার ওসি রওশন আলী বলেন, ‘পাবনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আফরোজ ফোন করে জানান যে সেখানে ঘুষের টাকা লেনদেন হচ্ছে। খবর পেয়ে আমরা সেখানে গিয়ে ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকাসহ তাদের আটক করে থানায় নিয়ে এসেছি। তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সত্যতা পেলে দুই প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে দুদককে অবহিত করা হয়েছে। তারা বিষয়টি অনুসন্ধান করবে।’
এ বিষয়ে দুদক, পাবনা শাখার কর্মকর্তারা মন্তব্য করতে রাজি হননি।
মন্তব্য