চলমান করোনাভাইরাস মহামারিতে ব্যয় কমানোর জন্য সব মন্ত্রণালয়ের অর্থ ব্যয়ে লাগাম টানতে বলা হয়। কিন্তু স্বাস্থ্য খাতের খরচের হাত খুলে দেয় সরকার। তবে বরাবরের মতোই করোনার এসময় অর্থ ব্যয়ের সে সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে স্বাস্থ্য খাত।
দক্ষতা ও সক্ষমতার অভাবে প্রায় সোয়া ৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করা যায়নি এ খাতে। অথচ করোনাভাইরাসের সর্বোচ্চ সংক্রমণ ও মৃত্যুর সময় উন্নত সেবার জন্য সবচেয়ে বেশি কাজ ও অর্থ ব্যয়ের কথা ছিল স্বাস্থ্য খাতের।
টাকা পেয়েও সেটি খরচ করতে না পারায় এ খাতের অদক্ষতা, দুর্নীতিকে দায়ী করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে স্বাস্থ্য খাতের অক্ষমতার চিত্রই ফুটে উঠে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, ২০২০-২১ অর্থ বছরে স্বাস্থ্য খাতের দুটি বিভাগের মোট বরাদ্দ ছিল ১৩ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে মধ্যে স্বাস্থ্য সেবা ১১ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা পেলেও পুরো সময়ে (জুলাই-জুন) এই বিভাগ খরচ করতে পেরেছে ৬ হাজার ৯৩৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, ৫৮ শতাংশের কম।
অপর দিকে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ ১ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা পেয়ে খরচ করেছে ১ হাজার ৫৭৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।
এ দুটি বিভাগ সম্মিলিতভাবে খরচ করতে পেরেছে ৮ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা। বরাদ্দ বাস্তবায়নের হার ৬১ দশমিক ৪০ শতাংশ। ফেরত গেছে ৫ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা। অথচ দুই বিভাগ মিলে উন্নয়ন বাজেটের ৬ দশমিক ৬২ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ পেয়েছিল।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন অনুবিভাগ) মো. সাইদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত বছর আমাদের নানা সমস্যা ছিল, তাই এডিপি বাস্তবায়ন কম হয়েছে, খরচ কম হয়েছে। এ বছর আমরা চেষ্টা করছি শুরু থেকেই, জুলাই থেকেই কীভাবে বাস্তবায়ন ভালো করা যায়।’
টাকা অব্যয়িত থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে টাকা খরচ আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল, যেমন টিকা কেনার ক্ষেত্রে। আমরা এখন যেভাবে খরচ করতে পেরেছি, গত মাসে অবস্থা সে রকম ছিল না। যেসব জায়গায় আগে ব্যয় হয়নি, এখন সেসব জায়গায় কাজ করা হচ্ছে। যেন সব জায়গায় সঠিকভাবে ব্যয় করা যায়, সে চেষ্টা করা হচ্ছে। করোনার সরঞ্জাম ও টিকা কেনার প্রকল্পগুলোও মনিটরিং হচ্ছে।’
স্বাস্থ্য খাতের দুটি বিভাগের অধীনে ৬৮টি প্রকল্প চলছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার এখন পর্যন্ত দুটি বড় প্রকল্প অনুমোদন করেছে, যার একটিতে অর্থ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক, অন্যটিতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক।
গত বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা শনাক্তের পর তড়িঘড়ি করে দুটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। কিন্তু নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় গত অর্থ বছরে দুটি প্রকল্পে আশানুরূপ টাকা খরচ হয়নি।
অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনা মহামারিতে ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্য খাত। এই সময়ে চিকিৎসার অপ্রতুলতা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জামের অভাবে হাসপাতালগুলো ধুঁকছে। তখন বাজেটে স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কিনতে যে পরিমাণ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, সেটি খরচ করতে পারেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এটি মেনে নেয়া যায় না।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতের ব্যবস্থাপনার যে ঘাটতি, করোনা সবার চোখে সেটি আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। এ খাতে উন্নয়ন প্রকল্পে যা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে তার বেশিরভাগ তো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করে। এরা যদি বলে, যে কাজটা আগামী বছরের জন্য এডিপি এবং অপারেটিং বাজেটের মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে, সেটা আমরা করতে পারব না।
‘কিন্তু তারা না করবে না। তবুও তারা তা ঠিক মতো করতে পারছে কি না, তা তো টাকা ব্যবহারের মধ্যেই দেখাই যাচ্ছে। এমনকি যেটা ব্যবহার হচ্ছে সেখানেও তো দুর্নীতি অপচয় এগুলোর অভিযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘দশ টাকার জিনিস ৩০-৫০ টাকায় কেনা হচ্ছে। কেনা হলেও তা ঠিকমতো খালাস করা হচ্ছে না। পণ্য ঠিক মতো ব্যবহার হচ্ছে না। যেটা প্রয়োজন সেটা কেনা হচ্ছে কি না, যা কিনছে তা সত্যিই দরকার আছে কি না, যার দরকার আছে তাকে সময় মতো দেয়া হচ্ছে কি না, এমন অনেক প্রশ্নই রয়েছে।’
ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘এরকম একটা জাতীয় দুর্যোগের মধ্যে শুধুমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যেখানে পারছে না, তাদের ওপর একচেটিয়া নির্ভরশীলতা থেকে বের হওয়া ছাড়া কোনো উপায় দেখা যাচ্ছে না। সামাজিকভাবেই এসব সেবা গ্রাহকদের কাছে নিয়ে যেতে হবে। সেটি না করে ডিজিএইচএস এর ওপর শুধু নির্ভরশীল থাকলে হবে না। তাদের সক্ষমতার বাইরে তো পারবে না। তাদের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা রয়েছে, বিশেষ করে ব্যবস্থপনার ক্ষেত্রে। সোজা কথায় দুর্নীতির ক্ষেত্রে যদি দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন না আসে, তাহলে এ অবস্থার উন্নতি হবে না।’
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সবসময়ই হেলথ সেক্টরের ব্যয় তারা করতে পারতো না। আগে ব্যয়টা একটু কম ছিল, তাদের ওপর এতো চাপ ছিল না। কিন্তু এটা তো ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি। এই সিচুয়েশনে এটা হওয়া উচিত না, কিন্তু হচ্ছে। এখন ব্যয় করতে না পারা দুর্ভাগ্যজনক।
‘দুটি কারণে স্বাস্থ্য খাতের এ অবস্থা। একটি দুর্বলতা, অপরটি করাপশন। এ দুটি সমস্যা এক সঙ্গে আসে। প্রকল্পের দুর্ললতার কারণে প্রকল্পের টাকা ব্যয় করতে পারে না। এক দিকে টাকা খরচ করে পারে না, অপর দিকে আনফেয়ার ওয়েতে বিভিন্ন কন্ট্রাক্টগুলো যায়। যে কারণে প্রকিউরমেন্ট (কেনাকাটা) বন্ধ হয়ে যায়। এতে ডিসভার্সমেন্টও (অর্থ ছাড়) বন্ধ হয়ে যায়। এর সঙ্গে সক্ষমতার অভাব তো রয়েছেই।’
অর্থ প্রাপ্তিতে শীর্ষ পাঁচে, খরচে তলানির দশে স্বাস্থ্য
আইএমইডির প্রতিবেদন বলছে, গত অর্থ বছরের এডিপির বরাদ্দে শীর্ষ পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের একটি ছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু বছর শেষে কাজের দিক দিয়ে সরকারের ৫৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে স্বাস্থ্যের অবস্থান ৪৯তম বা তলানিতে থাকা ১০টির একটি।
বরাদ্দে স্বাস্থ্যের ওপরে থাকা মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগে ৮৯ দশমিক ৭১ শতাংশ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে ৮৮ শতাংশ, স্থানীয় সরকার বিভাগ ৮১ দশমিক ৪৪ শতাংশ অর্থ খরচ করেছে।
শীর্ষ বরাদ্দ পাওয়াদের মধ্যে স্বাস্থ্যের চেয়ে কম বরাদ্দ পেয়েও রেলপথ মন্ত্রণালয় ৮৫ শতাংশ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ১০১ দশমিক ২৯ শতাংশ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রায় ৮২ শতাংশ এবং ১০৪ দশমিক ২৭ খরচ করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। এমনকি কৃষি মন্ত্রণালয়ও ৯৭ দশমিক ৫২ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন দেখিয়েছে।
খরচের সামর্থ্য না থাকলেও নিয়েছে বাড়তি অর্থ
বছরের শুরু থেকেই ভালো অবস্থায় ছিল না স্বাস্থ্য খাত। গত অর্থ বছরের মূল এডিপিতে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে বরাদ্দ ছিল ৯ হাজার ৭৩৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভাগটি খরচ করতে পেরেছিল মাত্র ২ হাজার ৮১ কোটি টাকা যা বরাদ্দের ২১ শতাংশ।
এরপরও মার্চ মাসে এডিপি সংশোধনের সময় আরও ২ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা বাড়তি বরাদ্দ নেয় বিভাগটি। তবে বছর শেষে মূল বরাদ্দ থেকেই ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা কম খরচ করেছে তারা।
খরচের হাত খোলা ছিল স্বাস্থ্যের জন্য
করোনার সময় অর্থ ব্যয়ে লাগাম টানতে বিভিন্ন খাতের কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে খরচ কমানোর পাশাপাশি উন্নয়ন প্রকল্পের একটা অংশও সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছিল। গত ডিসেম্বরে করোনাভাইরাস মহামারিতে ব্যয় কমানো নীতিতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) সরকারি অংশ থেকে ২৫ শতাংশ অর্থ আটকে রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয় এর আওতাভুক্ত ছিল না।
এ বছরের মার্চে অর্থ বিভাগের অপর নির্দেশনায় বলা হয়, উন্নয়ন প্রকল্পের সরকারি অংশের ১৫ শতাংশ অব্যয়িত রেখে বাকি ৮৫ শতাংশ খরচ করা যাবে। এখানেও স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতকে আওতার বাইরে রাখা হয়। এর আগে উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন খাতে গাড়ি কেনা স্থগিত করা হয় আগামী জুন পর্যন্ত।
আরও পড়ুন:জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদের বলেছেন, ‘তিন বিদেশি বড় শক্তি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে কাজ করেছিল। আরও বেশ কয়েকটি বিদেশি শক্তি আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করার জন্য প্রস্তুত ছিল।’
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে শনিবার জাপার কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বর্ধিত সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
জিএম কাদের বলেন, ‘৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিদেশি বন্ধুদের সঙ্গে বৈঠক করে পরিষ্কার বুঝেছি, তিনটি বিদেশি বড় শক্তি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে এবং নির্বাচন সফল করতে কাজ করে যাচ্ছে। শুধু তারা নয়, আরও বেশ কয়েকটি বিদেশি শক্তি আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করতে প্রস্তুত ছিল।’
নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছিল জানিয়ে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচন বন্ধ করে কোনো দেশে সরকার পরিবর্তন সম্ভব নয়। তাই জাতীয় পার্টি নিয়মতান্ত্রিকভাবে রাজনীতি করছে।
‘নির্বাচনের আগে বর্ধিত সভায় নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে মতামত দেয়া হয়েছিল। ভোটে না গেলে ভবিষ্যতে জাতীয় পার্টিকে টিকিয়ে রাখা যাবে কী না সন্দেহ ছিল। তাই নির্বাচনে গিয়েছি।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। ভোটের আগ মুহূর্তে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তখন সুষ্ঠুভাবে পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করেছি। মনে হয়েছে, বিভিন্ন বিদেশি শক্তি বিভিন্নভাবে নানা দিকে নিচ্ছিল।
‘আর বিএনপির আন্দোলন নিয়ে পরিষ্কার ধারণা ছিল, তারা সফল হবে না। আন্দোলন চলাকালে তৃতীয় শক্তি এসে সরকার পরিবর্তন করে- এমন ইতিহাস বাংলাদেশে নেই। ফলে বিএনপি এক কিংবা ১০ লাখ বা এক কোটি লোক নিয়ে রাস্তায় নামলেও তাদের আন্দোলন সফল হবে না, তা বুঝতে পেরেছিলাম।’
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিএনপি ও জামায়াত আন্দোলনে পরাস্ত হয়ে জাতীয় পার্টিকে দোষ দিচ্ছে। তবে এটা ঠিক যে নির্বাচন ভালো হয়নি। সরকার জাতীয় পার্টিকে গৃহপালিত দল হিসেবে দেখতে চায়। তবে তা কখনও সম্ভব নয়। জাতীয় পার্টি কখনোই অনুগত বিরোধী দল ছিল না এবং আমরা গৃহপালিত বিরোধী দল হতে রাজি নই।’
তীব্র গরম থেকে বাঁচতে ও বৃষ্টির আসায় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় নেচে গেয়ে ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছেন স্থানীয়রা। লোকজন।
উপজেলার চন্দ্রখানা বালাটারি গ্রামে শনিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বিয়ের অনুষ্ঠান চলে।
ওই এলাকার বাসিন্দা সাহাপুর আলীর স্ত্রী মল্লিকা বেগমের আয়োজনে বিয়েতে অসংখ্য নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। নাচ গানের মধ্যে দিয়ে ব্যাঙের বিয়ে শেষে বরণ ডালায় ব্যাঙ দুটিকে নিয়ে পুরো গ্রাম ঘুরে বেড়ান তারা। এ সময় গ্রামবাসীদের কাছ থেকে চাল ডাল সংগ্রহ করে বিয়েতে অংশগ্রহণকারীদের খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়।
বিয়ের আয়োজনকারী মল্লিকা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কিছুদিন ধরে তীব্র গরম। তাপমাত্রা বেশি হওয়ার কারণে আমরা কষ্টে রয়েছি; গ্রামের মানুষজন অস্তিত্বতে আছে। কেউই কোনো কাজ কামাই করতে পারছেন না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আগের যুগের মানুষরা ব্যাঙের বিয়ে দিলে বৃষ্টি হতো। সেই বিশ্বাস থেকেই আজ ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছি।’
বিয়ে দেখতে আসা জাহিদ নামের একজন বলেন, “আমার জীবনে প্রথম ব্যাঙের বিয়ে দেখলাম। খুবই ভালো লেগেছে। ‘বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের বিয়ে’ বিষয়টি প্রথম জানলাম।”
বৃদ্ধ আজিজুল হক বলেন, ‘বৃষ্টি না হওয়ার কারণে আবাদের ক্ষতি হচ্ছে। তাই বৃষ্টির আশায় ব্যাঙের বিয়েতে অংশগ্রহণ করেছি।’
রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘কুড়িগ্রামে বেশ কিছুদিন ধরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। আজ (শনিবার) জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।’
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে এক বছরের শিশু হুমাইরা আক্তারের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকালে সদর উপজেলার মদিনা বাজার এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মদিনা বাজারের উত্তর পাশে খানকা শরীফের সামনের সড়কে দুটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে।
এ সময় রাস্তার পাশে এক বছরের শিশু সন্তান হুমাইরাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা হাবিবা বেগমের ধাক্কা খান অটোরিকশার সঙ্গে। এতে শিশু হুমাইরা মায়ের কোল থেকে রাস্তায় ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হয়। শিশুটিকে দ্রুত মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় অটোরিকশা দুটি আটক করা হয়েছে। পালিয়ে যাওয়া দুই চালককে আটকের চেষ্টা চলছে।
চলমান তাপপ্রবাহে সারা দেশের সঙ্গে পুড়ছে রাজধানী ঢাকাও। প্রচণ্ড গরমে দুর্বিষহ নগর জীবন। এ অবস্থায় রাজধানীর সড়ক-মহাসড়কে পানি ছিটাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ডিএনসিসির চিফ হিট অফিসারের পরামর্শে এমন উদ্যোগ নিয়েছে সিটি কর্তৃপক্ষ।
শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বায়ু দূষণ রোধ ও তীব্র দাবদাহে শহরকে ঠাণ্ডা রাখতে ডিএনসিসির ওয়াটার স্প্রে (পানি ছিটানো) কার্যক্রম পরিদর্শন করেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।
এ সময় তিনি বলেন, ‘দুটি স্প্রে ক্যানন প্রধান সড়কে পানি ছিটাবে। এগুলো বেশ বড় হওয়ায় গলির সড়কে প্রবেশ করতে পারবে না৷ গলির সড়কে পানি ছিটানোর জন্য দশটি ব্রাউজার কাজ করবে। এগুলোর মাধ্যমে সড়কগুলো ভিজিয়ে ঠাণ্ডা রাখা হবে।
‘এছাড়াও ডিএনসিসির পার্কগুলোতে স্প্রে ক্যাননের মতো কৃত্রিম বৃষ্টির ব্যবস্থার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছি। এক সপ্তাহের মধ্যে পার্কগুলোতে কৃত্রিম বৃষ্টির ব্যবস্থা করা হবে।’
এ সময় তিনি বলেন, ‘চিফ হিট অফিসার (সিএইচও) বুশরা আফরিনের পরামর্শে চলমান তীব্র দাবদাহে জনগণকে স্বস্তি দিতে সড়কে পানি ছিটানো এবং ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডে বিনামূল্যে খাবার পানি সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘প্রতিটি ওয়ার্ডে তিনটি বিশেষ ভ্যানগাড়ি (৫০০ লিটার পানির ট্যাংক সংবলিত) পথচারীদের পানি পান করানোর জন্য নামানো হয়েছে। ভ্যানগুলো বিশুদ্ধ খাবার পানি নিয়ে ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরবে। এই ভ্যানগুলো ছোট আকারে করা হয়েছে যেন শহরের অলিগলিতে প্রবেশ করতে পারে।’
চিফ হিট অফিসারের কার্যক্রম সম্পর্কে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘চিফ হিট অফিসার আমাদের পরামর্শ দিচ্ছেন। হিট অফিসার একজন একক ব্যক্তি। তিনি তো কাজগুলো বাস্তবায়ন করবেন না। তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু কাজগুলো আমাদের সবাইকে করতে হবে। তার পরামর্শেই জনগণকে স্বস্তি দিতে আমরা এই কাজগুলো করছি।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অনেকে বলছেন যে চিফ হিট অফিসার সিটি করপোরেশন থেকে বেতন পাচ্ছেন। বাস্তবে সিটি করপোরেশন থেকে তিনি একটি টাকাও পান না। এমনকি সিটি করপোরেশনে তার কোনো বসার ব্যবস্থাও নেই।
‘হিট অফিসার নিয়োগ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান অ্যাড্রিয়েন আরশট-রকফেলার ফাউন্ডেশন রেসিলিয়েন্স সেন্টার (আরশট-রক)। প্রতিষ্ঠানটি সারা বিশ্বে সাতজন চিফ হিট অফিসার নিয়োগ করেছে এবং তারা সবাই নারী।’
ওয়াটার স্প্রে পরিদর্শনকালে অন্যান্যের মধ্যে ডিএনসিসি'র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী ও প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ফিদা হাসান উপস্থিত ছিলেন।
মুন্সীগঞ্জে হিটস্ট্রোকে সাখাওয়াত হোসেন মুকুল নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির মাঠ পর্যায়ের বিপনন বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
২৭ বছর বয়সী মুকুলের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলায়।
প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির মুন্সীগঞ্জ শহরের সেলস রিপ্রেজেনটেটিভ মোহাম্মদ রোকন জানান, শনিবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জ শহরের অদূরে মুন্সীরহাট এলাকায় মাঠ পর্যায়ে কর্মরত অবস্থায় তীব্র গরমের কারণে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন মুকুল। সঙ্গে সঙ্গে তাকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালে নিয়ে এলে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস হাসান জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগে পথেই তার মৃত্যু হয়েছে। নিহতের হিটস্ট্রোকের লক্ষণ রয়েছে বলে জানান তিনি।
নিহতের মরদেহ তার নিজ জেলায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
আকস্মিক কালবৈশাখীর তাণ্ডবে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ও শমশেরনগর ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে আরও বেশ কিছু বাড়িঘর। ঝড়ের পর খোলা আকাশের নিচে দিনযাপন করছে অর্ধশতাধিক পরিবার।
এ ছাড়াও গাছপালা উপড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙেছে এবং তার ছিঁড়ে পড়ে। এতে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ওই অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
শুক্রবার রাত ৩টার দিকে এই ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হয়। প্রায় সাড়ে ১৫ ঘণ্টা পর শনিবার বিকেল ৪টার দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কালবৈশাখীর তাণ্ডবে উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের পতনঊষার, ধূপাটিলা, উসমানগড়, ব্রাহ্মণঊষারসহ ৮টি গ্রামের প্রায় শতাধিক ঘর এবং শমশেরনগর ইউনিয়নের কেছুলুটি, ভাদাইরদেউল গ্রামে আরও কয়েকটি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অসংখ্য গাছ-বাঁশ উপড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ও লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
পতনঊষার ইউনিয়নের নেছার মিয়া, ময়নুল মিয়া, খুশবা বেগম, লিপি বেগম, রহমান মিয়া, সুফিয়ান মিয়া, কালাম মিয়া, আনু মিয়া, ফখরুল মিয়াসহ অসংখ্য পরিবার দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন।
ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, গতরাতে কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে তীব্র শিলাবৃষ্টি হয়। মুহুর্তের মধ্যে তাদের ঘরবাড়ি উড়িয়ে নিয়ে যায়। আমরা এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি। সহোযোগিতা না পেলে আমাদের রাস্তায় থাকতে হবে।’
পতনঊষার ইউপি সদস্য তোয়াবুর রহমান জানান, আকস্মিক ঝড়ে পতনঊষার গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যাদের বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে সেসব দরিদ্র পরিবারের জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে।
পতনঊষার ইউপি চেয়ারম্যান অলি আহমদ খান বলেন, ‘কালবৈশাখী ঝড়ে আমার ইউনিয়নে প্রচুর পরিমাণ বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অনেক পরিবার খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। তাদের দ্রুত সহায়তার প্রয়োজন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাহেবকে অবহিত করা হয়েছে।’
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক গোলাম ফারুক মীর বলেন, ‘ঝড়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েকটি খুঁটি ভেঙে পড়েছে। অনেক স্থানে তার ছিঁড়ে গেছে। এসব জায়গায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার জন্য কাজ চলছে।’
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ ইউএনও জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘পতনঊষার ইউপি চেয়ারম্যান বাড়িঘর বিধ্বস্তের কথা বলেছেন। তবে পরিপূর্ণ হিসাব জানা যায়নি। চেয়ারম্যানদেরকে বলা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে দেয়ার জন্য। দ্রুত তাদের সহোযোগিতা করা হবে।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর বনানীতে মাঝ সড়কে চলন্ত অবস্থায় যাত্রীবাহী বাসে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নির্বাপনে কাজ করে।
জানা গেছে, শনিবার বিকেলে জে কে এন্টারপ্রাইজ পরিবহনের একটি বাস বনানী আর্মি স্টেডিয়ামের সামনে একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিলে মোটরসাইকেলের ট্যাঙ্কি বিস্ফোরিত হয়ে বাসটিতে আগুন ধরে যায়।
ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বরত কর্মকর্তা খালেদা ইয়াসমিন জানান, বিকেল ৪টা ২ মিনিটে যাত্রীবাহী একটি বাসে আগুন লাগার খবর আসে। পরে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নির্বাপন করে। প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা-শেরপুর রুটে চলাচল করা জে কে এন্টারপ্রাইজ পরিবহনের বাসটি বনানী আর্মি স্টেডিয়ামের সামনে একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। পরে মোটরসাইকেলটিকে টেনে-হিঁচড়ে বাসটি অনেক দূর নিয়ে আসে। এতে মোটরসাইকেলের তেলের ট্যাঙ্ক বিস্ফোরিত হয়ে বাসটিতেও আগুন লেগে যায়। এ ঘটনায় মোটরসাইকেলের চালক গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
মন্তব্য