করোনাভাইরাস প্রতিরোধী ফাইজার ও বায়োএনটেকের টিকার ১ লাখ ৬২০ ডোজের প্রথম চালান রোববার আসছে না বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিনে যে তথ্য জানানো হয়েছিল, তা ভুল। ভুল স্বীকার করে অধিদপ্তরের মুখপাত্র রোবেন আমিন জানিয়েছেন, রোববার রাতেই আসছে টিকা।
রাত সোয়া ১১টার দিকে এই টিকা ঢাকায় পৌঁছানোর কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিনে ফাইজারের টিকা প্রসঙ্গে রোবেদ আমিন জানিয়েছিলেন, ফ্লাইট জটিলতার কারণে পূর্বনির্ধারিত সময়ের মধ্যে টিকা পৌঁছাচ্ছে না। এই টিকা আসতে আরও ১০ থেকে ১২ দিন সময় লাগবে।
এ তথ্য ভুল ছিল স্বীকার করে বিকেল চারটার দিকে রোবেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার জানা ভুল ছিল, বিষয়টি পরে জানতে পেরেছি। আজ (রোববার) রাতেই আসছে এই টিকা।’
সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্যসচিব ডা. শামসুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোভ্যাক্সের পক্ষ থেকে ফাইজারের ১ লাখ ৬২০ ডোজ টিকা রাত ১১টা ২০ মিনিটে কাতার এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে দেশে পৌঁছাবে বলে আমাদের জানানো হয়েছে।’
ন্যায্যতার ভিত্তিতে বিশ্বের সব দেশে করোনার টিকা নিশ্চিতের প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্সের মাধ্যমে এ টিকা দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশকে।
কোভ্যাক্স প্ল্যাটফর্মটি গড়ে তোলা হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস (গ্যাভি) এবং কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনসের (সিইপিআই) উদ্যোগে।
এই জোটের মাধ্যমে প্রতিটি দেশের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশের জন্য বিনা মূল্যে টিকার ব্যবস্থা করার কথা। কোভ্যাক্স থেকে প্রথম পর্যায়ে ১ কোটি ২৭ লাখ ডোজ টিকা পাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু বিশ্বজুড়ে টিকার সংকট দেখা দেয়ায় তা সম্ভব হচ্ছে না।
বিশেষ ব্যবস্থাপনায় নগরবাসীর মধ্যে এই টিকা দেয়া হবে বলে প্রাথমিক পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এই টিকা কাদের আগে দেয়া হবে এবং কীভাবে কোন কোন কেন্দ্রে দেয়া হবে, তা এখনও নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।
অধিদপ্তরের মুখপাত্র ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন নিউজবাংলাকে বলেন, কারা এই টিকা পাবে, এখনও সে তালিকা তৈরি করা হয়নি। টিকা দেশে আসার পরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, ফাইজারের ডোজগুলো সংরক্ষণ করতে মাইনাস ৬০ ডিগ্রি থেকে মাইনাস ৯০ ডিগ্রি তাপমাত্রার রেফ্রিজারেটর দরকার। ২ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখা যাবে পাঁচ দিন। আর রেফ্রিজারেটরের বাইরে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখা যাবে দুই ঘণ্টা।
উৎপাদক প্রতিষ্ঠান দাবি করছে, কার্যকারিতার দিক থেকে ফাইজারের টিকা করোনা প্রতিরোধে ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর। তবে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড, সিনোফার্মের টিকা বিবিআইবিপি-করভি, রাশিয়ার স্পুৎনিক-ভির মতোই ফাইজারের টিকাও নিতে হয় দুই ডোজ করে।
প্রথম ডোজ দেয়ার তিন থেকে চার সপ্তাহ পর দিতে হবে দ্বিতীয় ডোজ। ১২ বছরের বেশি যেকোনো ব্যক্তি এ টিকা নিতে পারবে।
ফাইজারের টিকা সংরক্ষণের জন্য যে মাত্রার শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের দরকার হয়, তা দেশে কমই আছে। ফলে অন্যান্য জেলায় এই টিকা প্রয়োগ অনেকটাই অসম্ভব।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলম নিউজবাংলাকে বলেন, আপাতত এই টিকা রাজধানীতে প্রয়োগ করা হবে। তাপমাত্রা জটিলতায় রাজধানীর সব কেন্দ্রে এই টিকা দেয়া যাবে না। তবে কোন কোন সেন্টারে এই টিকা দেয়া হবে এবং কারা ফাইজারের টিকা পাবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। ঢাকার মধ্যে এই টিকা প্রয়োগ এখনও প্ল্যানিং পর্যায়ে আছে।
তিনি জানান, ফাইজারের টিকা সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি), রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর), জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম), কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএসডি), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) কোল্ড চেইন রয়েছে।
এসব কোল্ড চেইনে মাইনাস ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার টিকা সংরক্ষণ করা যায়। তবে এর বেশির ভাগই গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হয়। এসব কোল্ড চেইনে টিকা রাখার প্রাথমিক পরিকল্পনা রয়েছে। ফাইজারের টিকার দুই লাখ ডোজ সংরক্ষণের সক্ষমতা তাদের আছে। সক্ষমতা বাড়ালে ১০ লাখ ডোজ টিকাও সংরক্ষণ করা যাবে।
গত ৮ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছিল, চলতি মাসের শেষের দিকেই দেশে পৌঁছাতে পারে ফাইজারের ১ লাখ ৬২০ ডোজ টিকা।
এ টিকা দিয়ে আবার প্রথম ডোজ প্রয়োগের কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
তিনি বলেছিলেন, ‘সেই টিকা দিয়েই আমরা প্রথম ডোজ শুরু করব। এই টিকা থেকে অর্ধেক টিকা দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার জন্য রেখে দেয়া হবে।’
করোনা প্রতিরোধী টিকা কার্যক্রমের শুরু থেকেই ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত কোভিশিল্ড টিকার ওপর নির্ভর করে আসছিল বাংলাদেশ।
ভারতের প্রতিষ্ঠানটি থেকে ৩ কোটি ডোজ টিকা আনতে গত বছরের ৫ নভেম্বর ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করে ঢাকা। চুক্তি অনুষ্ঠানে ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামীও।
চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে ছয় ধাপে দেশে ৩ কোটি ডোজ টিকা পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু ভারতে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় টিকার চালান দিতে পারছে না সিরাম।
দুই ধাপে ৭০ লাখ ডোজ টিকা দিতে পেরেছে প্রতিষ্ঠানটি। বাকি টিকা পাওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে বড় অনিশ্চয়তা।
সিরাম থেকে ৫০ লাখ ডোজের প্রথম চালানটি আসে গত জানুয়ারিতে। ফেব্রুয়ারিতে দ্বিতীয় চালানে টিকা আসে ২০ লাখ ডোজ। তবে কেনা টিকার বাইরে ভারত সরকার তিন ধাপে বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে দিয়েছে ৩৩ লাখ ডোজ টিকা। সব মিলিয়ে দেশে টিকার মজুত দাঁড়ায় ১ কোটি ৩ লাখ ডোজ।
এর মধ্যে ৭০ লাখ ডোজ টিকা মজুত নিয়ে চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় করোনা প্রতিরোধী গণটিকাদান কার্যক্রম।
গণটিকাদান শুরুর ৭৮ দিনের মাথায় ২৫ এপ্রিল প্রথম ডোজ বন্ধ করে দেয়া হয়। তত দিনে প্রথম ডোজ প্রয়োগ করা হয় ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৬৪৬ জনকে। এদের সবার দ্বিতীয় ডোজ লাগবেই।
প্রথম ডোজে যাদের সিরামের টিকা দেয়া হয়েছে, তাদের সবার টিকা নিশ্চিত করতে হলে আরও অন্তত ১৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৯২ ডোজ লাগবে। সরকারের মজুতে সে পরিমাণ টিকা নেই।
ভারত টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ায় টিকার সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ। সংকট নিরসনে সরকার বিকল্প উৎস থেকে টিকা পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এর অংশ হিসেবে গত ২৭ এপ্রিল রাশিয়ার মস্কোর গামালিয়া ইনস্টিটিউটের তৈরি স্পুৎনিক-ভি ও ২৯ এপ্রিল চীনের সিনোফার্মের টিকাকে জরুরি প্রয়োগের অনুমোদন দেয়া হয়। এই দুটি দেশ থেকে টিকা কেনার পাশাপাশি তাদের টিকা দেশে উৎপাদনের প্রযুক্তি নিতে চায়।
চীন উপহার হিসেবে বাংলাদেশকে এরই মধ্যে সিনোফার্ম উৎপাদিত বিবিআইবিপি-করভির টিকার ৫ লাখ ডোজ পাঠিয়েছে। মোটা দাগে এই টিকা কেনার চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে ঢাকা।
আরও পড়ুন:দেশে আরও ২৪ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।
শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টার এই হিসাব দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।
এতে জানানো হয়, নতুন করে ১৪ জনের শরীরে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৪৯ হাজার ৯৪৫ জনে।
তবে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনায় কারো মৃত্যু হয়নি। এখন পর্যন্ত ভাইরাসটিতে মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৪৯৪ জনের।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩০২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। একই সময় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ। মোট পরীক্ষায় এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৭ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মোট মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৯ জন। এ নিয়ে দেশে মোট সুস্থ ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ১৭ হাজার ৩৭৪ জনে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন তীব্র দাবদাহের কারণে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সারা দেশের হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
রোববার সচিবালয়ে সারাদেশের হাসপাতালের পরিচালক এবং সিভিল সার্জনদের সঙ্গে অনলাইনে আয়োজিত এক সভা থেকে তিনি এই নির্দেশনা দেন। সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের এই নির্দেশনার কথা জানান। খবর বাসসের
তিনি বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গরম চরম আকার ধারণ করেছে। তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলায় সারা দেশের হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখা এবং একই সঙ্গে হাসপাতালগুলোতে জরুরি রোগী ছাড়া ভর্তি না করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
বয়স্ক ও শিশুরা যেন প্রয়োজন ছাড়া বাসার বাইরে না যায়, সে বিষয়েও পরামর্শ দেয়া হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই গরমে সবচেয়ে বেশি ভালনারেবল বয়স্ক এবং বাচ্চারা। এবার এমন একটা জলবায়ু পরিবর্তন হলো যে আমরা জীবনে কখনো শুনিনি যে দুবাই বিমানবন্দর পানিতে ডুবে গেছে। যাহোক এটা প্রকৃতির নিয়ম। আমাদের এগুলোফেস করতে হবে।’
তীব্র দাবদাহে বাচ্চাদের ঝুঁকি এড়াতে পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমার কাছে যখন মেসেজ আসলো (হিট অ্যালার্ট), আমি শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সান্নিধ্যে গিয়ে স্কুলটা বন্ধ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। কারণ, সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে বাচ্চা এবং বয়স্করা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের ওরাল স্যালাইনের কোথাও কোনো ঘাটতি হলে যেন আমাকে সঙ্গে সঙ্গে জানানো হয়। এখন পর্যন্ত আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। প্রকৃতির ওপর তো আমাদের কারও হাত নেই। এটা আমাদের রেডি রাখতে হবে।
শিশুদের জন্য হাসপাতালগুলোতে পর্যপ্ত ব্যবস্থা আছে কি না- জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমি শনিবার শিশু হাসপাতালে গিয়েছিলাম। শিশু হাসপাতালগুলোকে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখার জন্যই সারাদেশের হাসপাতালগুলোকে নির্দেশ দিয়েছি। কোল্ডকেসগুলোকে এখন হাসপাতালে ভর্তি না করতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাচ্চাদের ব্যাপারে আজকে থেকে একটা অনলাইন ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করছি সারা দেশের চিকিৎসকদের নিয়ে।
সভায় জানানো হয়, মহাখালীতে করোনা চিকিৎসার জন্য ডিএনসিসি হাসপাতালে শিশু ও বয়স্কদের জন্য আলাদাভাবে বেড রাখতে বলা হয়েছে।
এ সময় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রোববার ও সোমবার দুই ঘণ্টা কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখা। বলা হয়েছে, এই দুদিন চিকিৎসকরা প্রাইভেট প্র্যাকটিসও করবেন না।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সামনে চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠনের অংশগ্রহণে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়। সূত্র: ইউএনবি
বিএমএ চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি অধ্যাপক ডা. মুজিবুল হক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন, স্বাধীনতা প্রকাশ পরিষদ, চট্টগ্রাম প্রকাশ সমিতিসহ ৯টি সংগঠন অংশ নেয়।
বিএমএ নেতারা বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে চিকিৎসকরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। বিচার না হওয়ায় চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনা বাড়ছে। চিকিৎসকরা তাদের কর্মস্থলে খুবই অনিরাপদ।
চিকিৎসকদের ওপর হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনারও দাবি জানান তারা।
মুজিবুল হক বলেন, ‘হামলার বিচার পাওয়ার জন্য আমরা পাঁচদিন অপেক্ষা করেছি। কিন্তু কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি।’
প্রসঙ্গত, ১০ এপ্রিল হৃদরোগে আক্রান্ত এক রোগীর চিকিৎসা দিতে দেরি হওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের হামলায় গুরুতর আহত হন চট্টগ্রামের পটিয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক রক্তিম দাস।
পরে ১৪ এপ্রিল ভুল চিকিৎসায় এক বছরের শিশুর মৃত্যুর অভিযোগে রোগীর স্বজনদের হামলায় রিয়াজ উদ্দিন শিবলু নামে আরেক চিকিৎসক আহত হন।
আরও পড়ুন:স্বাস্থ্যসেবায় চিকিৎসকদের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেছেন, ‘কোনো চিকিৎসকের ওপর হামলা যেমন মেনে নেব না, তেমনই চিকিৎসায় কোন ধরনের অবহেলা হলে সেটাও মেনে নিতে পারব না।’
বুধবার বিকেলে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন শেষে চিকিৎসদের নিয়ে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) চট্টগ্রামের পটিয়ায় চিকিৎসদের ওপর হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে চিকিৎসা কাজে চিকিৎসকদের আরও বেশি মনোযোগী ও আন্তরিক হওয়ার পরামর্শ দেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকদের যেমন সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্ব আমার, রোগীদের সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্বও আমার। কোনো চিকিৎসকের বিরুদ্ধে পেশাগত দায়িত্ব পালনে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবা বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের তুলনায় এগিয়ে আছে। বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবা নিয়ে সম্প্রতি ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক ভূয়সী প্রশংসা করেন। ভুটান রাজার আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সরকার ভুটানে বার্ন হাসপাতাল করার চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত করোনার টিকা নেয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে চর্ম রোগ দেখা দেয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যে কোনো ড্রাগেই এলার্জি প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। তবে এ বিষয়টি আমি এখনও শুনিনি।’
এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত এমপি বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার করোনার প্রধান মুখপাত্র প্রফেসর ফলস-এর গবেষণায় এখনও এমন কোনো তথ্য উঠে আসেনি। তবে এমনও হতে পারে যে করোনার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো এখন দেখা দিচ্ছে।’
এর আগে চান্দিনার মাধাইয়া ইউনিয়নের সোনাপুর কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর একান্ত সচিব কমল কুমার ঘোষ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সারওয়ার হোসেন, কুমিল্লার জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান, জেলা সিভিল সার্জন ডা. নাছিমা আক্তার, চান্দিনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা তপন বক্সী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাবের মো. সোয়াইব, পৌর মেয়র শওকত হোসেন ভূইয়া, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আরিফুর রহমান প্রমুখ।
আরও পড়ুন:পাবনায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় দুই প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। প্রাথমিক তদন্ত করে হাসপাতালটি সিলগালা করে দিয়েছেন সিভিল সার্জন। একইসঙ্গে অভিযোগ তদন্তে ডেপুটি সিভিল সার্জনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে ঘটনার পর থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গা-ঢাকা দিয়েছে।
সোমবার ঘটনাটি জানাজানি হলে জেলা সিভিল সার্জন সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টির প্রাথমিক তদন্ত করে হাসপাতালটি সিলগালা করে দেন।
পাবনা সদর পৌর এলাকার শালগাড়িয়া হাসপাতাল সড়কে অবস্থিত বেসরকারি আইডিয়াল হাসপাতালে রোববার (১৪ এপ্রিল) রাত ৩টার দিকে পৃথক চিকিৎসক দ্বারা সিজারিয়ান অপারেশনের সময় এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়। এর আগে দুপুরে রোগীদের সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য হাসপাতালটিতে ভর্তি করা হয়।
অভিযোগে জানা যায়, কুষ্টিয়ার শিলাইদহ এলাকার মাহবুব বিশ্বাসের স্ত্রী ইনসানা খাতুনের প্রসব বেদনা উঠলে রোববার দুপুরে তাকে পাবনা আইডিয়াল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় জাহিদা জহুরা লীজা নামক এক চিকিৎসক অপারেশন করতে গেলে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হয়।
অপর ঘটনায় একই সময়ে পাবনার আটঘরিয়ার স্বপ্না খাতুন নামক এক রোগী কাজী নাহিদা আক্তার লিপির কাছে সিজারিয়ান অপারেশন করতে আসেন। ভুল চিকিৎসায় তারও মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
ঘটনা ধামাচাপা দিতে কর্তৃপক্ষ রাতেই রোগীসহ স্বজনদের হাসপাতাল থেকে বের করে দিয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে। পরে রোগী মারা যাওয়ার ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়লে তা ধামাচাপা দিতে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে মরদেহসহ স্বজনদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
এ ঘটনায় সঠিক তদন্ত শেষে হাসপাতাল-সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন সিভিল সার্জন। সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে সিজারিয়ান অপারেশন করার সময়ে যেসব উপকরণ ও মেডিসিন ব্যবহার হয়েছে সেগুলোর নমুনা সংগ্রহ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
সিভিল সার্জন ডা. শহীদুল্লা দেওয়ান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ স্যালাইন বা ওষুধ সেবনের ফলে তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় চিকিৎসকসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যারা জড়িত রয়েছে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বেসরকারি ক্লিনিকটি যেহেতু স্বাস্থ্য বিভাগের রেজিস্ট্রেশনভুক্ত, তাই নিয়ম মেনে সব কার্যক্রম চলছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।’
পাবনা সদর থানার ওসি রওশন আলী বলেন, ‘ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় এখনও কোনো পরিবার থানা পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়নি।’
আরও পড়ুন:দেশে প্রথমবারের মতো ক্যাডাভেরিক কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট (ব্রেন ডেথ রোগীর অঙ্গ প্রতিস্থাপন) করা হয়। গত বছরের জানুয়ারি মাসে সারাহ ইসলাম নামে একজনের অঙ্গদানের মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্য সেবা খাতে এমন রেকর্ড সৃষ্টি হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) শামীমা আক্তার ও হাসিনা নামে দুই রোগীর শরীরে ওই কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। বিষয়টি নিয়ে সে সময় নিউজবাংলায় প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়।
সারাহ ইসলামের কিডনি প্রতিস্থাপন করা রোগীদের একজন শামীমা আক্তার মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে বিএসএমএমইউ’র আইসিইউতে মারা গেছেন। কিডনি গ্রহীতা অপরজন হাসিনা হাসিনা এর আগে গত বছরের অক্টোবরে মারা যান। এর ফলে সারাহর কিডনি পাওয়া দুই নারীরই মৃত্যু হলো।
বিএসএমএমইউ’র ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল মঙ্গলবার রাতে শামীমা আক্তারের মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘কিডনি গ্রহীতা প্রথম জন (হাসিনা) ফুসফুসের সংক্রমণে মারা গিয়েছিলেন। অপরজন শামীমাও চলে গেলেন। এটি খুবই কষ্টের। শামীমা শেষ ছয় মাস আমাদের আওতার বাইরে ছিলেন।’
তিনি বলেন, সম্প্রতি শামীমার ভাই জানায় যে শামীমার ক্রিয়েটিনিন বেড়ে গেছে, একেবারে শুকিয়ে গেছে। তিন সপ্তাহ আগে আবারও তাকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়। শুরুর দিকে কিছুটা উন্নতি হলেও শামীমার শুকিয়ে যাওয়ার কারণটা ধরতে পারছিলেন না চিকিৎসকরা।
‘ক্রিয়েটিনিন পুনরায় বাড়ায় ওয়ার্ড থেকে তাকে কেবিনে আনা হয়। তারপরও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় চার দিন আগে আইসিইউতে নেয়া হয়।’
ডা. হাবিবুর রহমান জানান, শামীমার শরীরে হেপাটাইটিস-সি ধরা পড়ে। কারও হেপাটাইটিস-সি পজিটিভ হলে রক্ত কাজ করে না। এজন্য বিশেষ রক্ত লাগে। সেটি দেয়ার পরও কিন্তু শেষ মুহূর্তে রেসপন্স করেনি। আর বাড়িতে থাকার সময় অবস্থা খারাপ হলেও সময়মতো আমাদের জানানো হয়নি।’
আরও পড়ুন:জাতিসংঘের শিশু তহবিল থেকে দেশের শিশুদের শতভাগ ভ্যাকসিন নিশ্চিত করা ও নিরাপদ মাতৃত্বসহ স্বাস্থ্যখাতের অন্যান্য দিক নিয়ে ইউনিসেফ দেশে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
সচিবালয়ে রোববার সকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দপ্তরে ইউনিসেফের জাতিসংঘ শিশু তহবিলের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট এবং জাতিসংঘ শিশু তহবিলের হেলথ সেকশনের চিফ মায়া ভ্যানডেন্টের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে এ কথা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘ইউনিসেফ করোনার সময় গোটা বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশেও নানাভাবে সহযোগিতা করেছে। এখন জাতিসংঘের শিশু তহবিল থেকে দেশের শিশুদের শতভাগ ভ্যাকসিন পাওয়া নিশ্চিত করা, নিরাপদ মাতৃত্বসহ স্বাস্থ্যখাতের অন্যান্য দিক নিয়েও জাতিসংঘের এই বিশেষ সংস্থাটি দেশে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নিরাপদ মাতৃত্ব, ভ্যাকসিন কার্যক্রমকে ফলপ্রসূ করা, দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদনে সহায়তা করা, তৃণমূল পর্যায়ে শিশুদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অবকাঠামো নির্মাণ করাসহ অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজেও ইউনিসেফ ভূমিকা রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
‘এগুলোর সঙ্গে, শিশুদের জন্য তৃণপর্যায়ে স্বাস্থ্য অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ইউনিসেফ প্রতিনিধিদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানালে তারা সেটিতে আগ্রহ দেখিয়েছেন।’
বৈঠকে জাতিসংঘের শিশু তহবিলের প্রতিনিধি দল করোনাকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নানারকম ফলপ্রসূ উদ্যোগের প্রশংসা করেন। দেশের স্বাস্থ্যখাত আগের থেকে আরও উন্নত হচ্ছে বলেও জানান তারা। টিকাদানে বাংলাদেশকে বিশ্বের একটি উদাহরণ হিসেবেও উল্লেখ করেন প্রতিনিধিরা।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য