বরিশাল বিভাগের ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েই চলছে। পর্যাপ্ত শয্যার অভাবে গুরুতর অসুস্থদের হাসপাতালেও ঠাঁই হচ্ছে না।
একটি জেলার চিকিৎসা কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, সেখানে রোটা ভাইরাসের প্রকোপ দেখা গিয়েছে। একটি জেলায় গবেষণা করে দেখা গেছে, নদী ও পুকুরের পানি না ফুটিয়ে পান করার কারণে বেড়েছে প্রকোপ। আর একটি জেলায় গরম বাড়ার কারণে রোগের প্রকোপ হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভোলায় রোগী সামলাতে হিমশিম
ভোলায় গত দুই মাস ধরে ক্রমেই বাড়ছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। সদর হাসপাতালে প্রতিদিন আসছেন গড়ে প্রায় দেড় শতাধিক রোগী। একসঙ্গে এত রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে নার্স ও ডাক্তারদের।
হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ১০টি শয্যার বিপরীতে এত রোগী ভর্তি হওয়ায় হাসপাতালের বারান্দার মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন বেশিরভাগ রোগী।
সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় পুরো হাসপাতালের বারান্দার দুই পাশে শুয়ে আছেন শতাধিক রোগী। এদের একটি বড় অংশ শিশু।
ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সামনে থেকে শুরু করে পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ড ও পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডের বারান্দার মেঝেতে দুই সারিতে শুয়ে আছেন রোগী। কেউ আবার মেঝেতে জায়গা না পেয়ে শুয়ে আছেন ট্রলিতে।
মাত্র দুই জন নার্স এত রোগীর সেবা দিচ্ছেন। কাজের চাপে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন তারা।
ওয়ার্ড বয় ও ঝাড়ুদাররাও দিনভর পরিশ্রম করছে। ডাক্তার ও নার্সদের পাশাপাশি তারাও রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের মো. ইউছুফ তার স্ত্রী নাজমা বিবি ও ১০ বছর বয়সী ছেলে নুরনবীকে নিয়ে এসেছেন। অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শয্যা না পেয়ে মা-ছেলেকে হাসপাতালের বারান্দার মেঝেতে রেখেই স্যালাইন দিচ্ছিলেন ইউছুফ।
বোরহানউদ্দিন উপজেলার বাসিন্দা মো. শাহিন জানান, তার স্ত্রী আমেনা বেগম ও তিন বছর বয়সী ছেলে নাফিজ গত ছয় দিন ধরে বমি ও ডায়রিয়া আক্রান্ত। প্রথমে তাদেরকে বোরহানউদ্দিন হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে জায়গা না পেয়ে ভোলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এখানেও সিট না পেয়ে হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা।
সিনিয়র স্টাফ নার্স জাকিনুর জানান, রোববার সকাল আটটা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ১৬৯ জন রোগী ভর্তি হয়। একই সময়ে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে যান ১৮৯ জন।
দুই মাস ধরেই ডায়রিয়ার এই প্রকোপ দেখা গেলেও এক সপ্তাহ ধরে দিনে দেড় শতাধিক রোগী ভর্তি হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এদের মধ্যে নারী রোগীর সংখ্যা বেশী।
ভোলার সিভিল সার্জন সৈয়দ রেজাউল ইসলাম আশঙ্কা করছেন, রোগী যেভাবে বাড়ছে তাতে স্যালাইন স্বল্পতা দেখা দিতে পারে।
তার ধারণা, গরমের কারণে ডায়রিয়া বেড়েছে।
পটুয়াখালীতে করোনার চেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে ডায়রিয়া রোগী
পটুয়াখালী জেলার সিভিল সার্জন অফিস থেকে জানা গেছে, ১ জানুয়ারি থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ৭ হাজার ৩৪১ জন মানুষ। এর মধ্যে সদরেই ২ হাজার ২২৩ জন।
গত এক মাসে আক্রান্ত ৩ হাজার ৮৬৭ জন এবং গত সাত দিনের আক্রান্ত সংখ্যা ১ হাজার ৮৬৩ জন।
তবে বেসরকারি হিসাবে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ।
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, আশঙ্কাজনক হারে রোগী বাড়তে থাকায় হাসপাতালের মেঝে পর্যন্ত ফাঁকা নেই। হাসপাতাল ভর্তি ডায়রিয়া রোগীতে। তার ওপর তৈরি হয়েছে স্যালাইন ও ওষুধ সংকট।
সদর উপজেলার চান্দখালী গ্রামের নয়ন নামের ১০ বছরের এক শিশুকে এই হাসপাতালে ভর্তি করেছে তার বাবা বাদল মিয়া। গত তিনদিন ধরে বাইরে থেকে স্যালাইন এনে দেয়া হচ্ছে।
সদর উপজেলার নন্দিপাড়া গ্রামের জব্বার খলিফা জানান, মঙ্গলবার সকালে তার দুই বছর বয়সী নাতি মো. জুনায়েদ ও আট বছরের নাতনি আফরোজাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু হাসপাতাল থেকে কোনো স্যালাইন দেয়া হচ্ছেনা। অতিরিক্ত দামে বাইরের দোকান থেকে স্যালাইন কিনে আনতে হচ্ছে।
তার অভিযোগ, প্রতিটি স্যালাইনের স্বাভাবিক মূল্য ৯০ থেকে ৯২ টাকা হলেও বাইরের দোকানে সেগুলো নেয়া হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।
অন্য উপজেলার চিত্রও এক।
মির্জাগঞ্জ উপজেলার উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দেখা গেছে, হাসপাতালের সামনে শামিয়ানা টাঙিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ওয়াহিদুজ্জামান শামিম নিউজবাংলাকে জানান, নারী, শিশু ও বয়স্কদের পাশাপাশি গর্ভবতী মায়েরাও এ বছর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেনযা খুবই চিন্তার বিষয়।
এর জন্য তীব্র গরম ও বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার না করাকেই দায়ী করেন এই শিশু বিশেষজ্ঞ। গরমে পানির পাশাপাশি খাবার স্যালাইন খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
এই হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ আবদুল মতিন জানান, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মাঝে ডায়রিয়া সংক্রমণ মারাত্মক আকারে বেড়ে যাওয়ায় ডায়রিয়াকেই এখন বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম শিপন জানান, জেলার সব কয়টি উপজেলায় ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে ৮৪টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। তবে স্যালাইন সংকটের কথা উড়িয়ে দিয়ে সিভিল সার্জন জানান আগামী এক সপ্তাহ পর্যন্ত মজুত রয়েছে স্যালাইন।
বরগুনায় কারণ নদী-পুকুরের পানি ব্যবহার
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তথ্য বলছে, জানুয়ারি মাসে ১৭১ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে হয় ২০৩ জন, মার্চে তা আরও বেড়ে হয় ৯০৩ জন।
এপ্রিলের ১২ তারিখ পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়েছেন ৫৪০ জন। জেলার ছয়টি উপজেলা হাসপাতালে আরও অন্তত এক হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। ভর্তি আছেন দুই শতাধিক।
এর মধ্যে শনিবার বেতাগী উপজেলার নুরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির মৃত্যুও হয়েছে।
আক্রান্তদের বেশিরভাগ নদী তীর এলাকার বাসিন্দা। তাদের বেশিরভাগই শিশু ও বৃদ্ধ। এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। যে কারণে তারা দ্রুত আক্রান্ত হন।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সোহরাব উদ্দীন বলেন, উপকূলীয় এলাকার মানুষ এখনও নদী ও পুকুরের পানি পান করে। এসব পানি শতভাগ জীবাণুমুক্ত করা হয় না।
ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক উদারময় গবেষণা কেন্দ্র বা আইসিডিডিআর’বির সাত সদস্যের একটি গবেষক দল মার্চ মাসের শুরুর দিকে বরগুনায় আসে। তারা সদরের বুড়িরচর, ঢলুয়া, গৌরীচন্না ও ফুলঝুড়িসহ বরগুনা পৌরশহরের বেশ কিছু এলাকায় গবেষণা করেন।
গবেষক দলের দলনেতা বলেন, ‘আমরা হাসপাতালে কয়েকজন রোগীর পেটে কলেরা জীবাণুর উপস্থিতি পাই। ওই রোগীর বাড়িতে গিয়ে খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারি, ওই পরিবারসহ এলাকার বাসিন্দারা গভীর নলকুপের পানি পান করলেও দৈনন্দিন কাজে সরাসরি পুকুরের পানি ব্যবহার করে থাকেন।
‘বিশেষ করে এ অঞ্চলে দুপুরের রান্না করা ভাত রাতে খাওয়ার পর পুকুরের পানি দিয়ে রাখা হয়। ওই ভাত (পান্তাভাত) সকালে তার খেয়ে নেন। পানি বিশুদ্ধ না করে সরাসরি ব্যবহার করার ফলে জীবাণু পাকস্থলিতে গিয়ে সংক্রমণ ঘটায়।’
পৌরশহরের উকিলপট্টি এলাকায় কয়েকটি বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সরাসরি খালের সঙ্গে টয়লেটের পাইপ দিয়ে দেয়া হয়ছে। আবার সেই খালের পানিই দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, একটি পুকুরের পানি ব্যবহার করে ২০ থেকে ২৫টি পরিবার। শুষ্ক মৌসুমে পুকুরের পানি শুকিয়ে যায়, ফলে জীবাণুর ঘনত্ব বেড়ে যায়। এসব পানি না ফুটিয়েই ব্যবহার করা হয়। আর ওই পানি দূষিত অবস্থায় পাকস্থলিতে গিয়ে সংক্রমণ ঘটায়।
জোয়ারের পানিতে লবণাক্তও ডায়েরিয়ার প্রকোপ বাড়ার একটি কারণ বলে মনে করছে আইসিডিডিআর’বি। এই লবণ পানি কোনোভাবে পেটে গেলেই হজমশক্তি নষ্ট হয়।
বরগুনার সিভিল সার্জন মারিয়া হাসান বলেন, ‘আইসিডিডিআর’বির গবেষণালব্ধ পরামর্শ আমরা পেয়েছি। এ ব্যাপারে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের সঙ্গেও আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করি সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব।’
বরিশাল বিভাগে কয়েকদিন ধরেই বাড়ছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। এতে খোদ স্বাস্থ্য বিভাগ উদ্বিগ্ন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, বরিশালে এর আগে এমন ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা যায়নি।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক বাসুদেব কুমার দাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হঠাৎ করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করেছি আমরা। শহরের মানুষ তেমন আক্রান্ত না হলেও, বেশি আক্রান্ত হচ্ছে উপকূল ও গ্রামাঞ্চলের মানুষ।’
তিনি জানান, অতিরিক্ত গরমে স্বস্তি পেতে মানুষ পান্তা কিংবা শরবত খাচ্ছে বেশি। এসব তৈরিতে দূষিত পানি ব্যবহারের কারণেই ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ছে বলে তার মত।
বাসুদেব কুমার জানান, বরিশাল বিভাগে এ বছর জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের ২০ তারিখ পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩২ হাজার ছাড়িয়েছে।
আরও পড়ুন:লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্তের ওপারে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে আবুল কালাম ডাকু (২২) নামের বাংলাদেশি রাখাল নিহত হয়েছেন।
উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের ঝালাংগী বিজিবি ক্যাম্পের ৮৪৮ নম্বর মেইন পিলারের ৯ নম্বর সাব পিলার এলাকায় শুক্রবার ভোররাতে এ ঘটনা ঘটে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও যুবকের পরিবারের কাছ থেকে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে কয়েকজন রাখালসহ শ্রীরামপুর ইউনিয়ন সীমান্তের ৮৪৮ নম্বর মেইন পিলারের ৯ নম্বর সাব পিলারের ওপারে ভারতীয় গরু ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় গরু আনতে যান আবুল কালাম ডাকু। গরু নিয়ে ফেরার পথে শুক্রবার ভোররাতে বিএসএফের ডোরাডাবরী ক্যাম্পের টহল দলের সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। ওই সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ডাকু গুরুতর আহত হলে সঙ্গীরা তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে বাংলাদেশ সীমান্তে। পরে পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।
এ বিষয়ে পাটগ্রাম ৬১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের ঝালাংগী ক্যাম্পের ইনচার্জ নায়েক সুবেদার নুরুল আমিন বলেন, ‘বিএসএফের গুলিতে আবুল কালাম ডাকু নামে একজন যুবক নিহত হয়েছেন। পাটগ্রাম থানা পুলিশ পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে নিহতের মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় বিজিবির পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদপত্র পাঠিয়ে বিএসএফকে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানানো হয়েছে।’
নিহত যুবকের মা মমতা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলের বিয়ে ঠিক হয়েছে। কী অপরাধের জন্য বিএসএফ তাকে গুলি করে হত্যা করল জানি না। আমি এই হত্যার বিচার চাই।’
পাটগ্রাম থানার ওসি আবু সাইদ বলেন, ‘বিএসএফের গুলিতে আহত যুবক আবুল কালাম ডাকুকে পরিবারের সদস্যরা পাটগ্রাম হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মারা যান। সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। এ ঘটনায় একটি ইউডি (অপমৃত্যুর) মামলা করা হবে।’
আরও পড়ুন:মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় তিন চাকার ভ্যানের সঙ্গে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় দুই সবজি ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন।
উপজেলার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গোলড়া বাসস্ট্যান্ডে শুক্রবার সকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো আবদুস সালাম (৫০) ও ছানোয়ার হোসেন (৪৫) মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার কাটিগ্রাম এলাকার বাসিন্দা। তারা স্থানীয় কাটিগ্রাম বাজারে সবজির ব্যবসা করতেন।
গোলড়া হাইওয়ে থানার ওসি সুখেন্দু বসু বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সকালে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার জাগীর বন্দর আড়ত থেকে চাষীদের কাছ থেকে সবজি কিনে তিন চাকার ভ্যানের মাধ্যমে কাটিগ্রাম যাচ্ছিলেন ব্যবসায়ী আবদুস সালাম ও ছানোয়ার হোসেন, কিন্তু ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গোলড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৌঁছালে পাটুরিয়াগামী একটি কাভার্ড ভ্যান ওভারটেক করতে গিয়ে ওই তিন চাকার ভ্যানকে ধাক্কা দেয়।
এতে ঘটনাস্থলেই আবদুস সালাম নিহত হন এবং গুরুত্ব অবস্থায় ছানোয়ার হোসেনকে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওসি জানান, নিহতদের একজনের মরদেহ সদর হাসপাতালে এবং অপরজনের মরদেহ গোলড়া থানায় রাখা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর কাভার্ড ভ্যানের চালক ও হেলপার পালিয়ে গেলেও কাভার্ড ভ্যানটি জব্দ করা হয়।
এ ঘটনায় গোলড়া থানায় আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:উৎসবমুখর পরিবেশে বৃহস্পতিবার উদযাপন করা হয়েছে ১৩৭তম বন্দর দিবস।
এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতে বন্দর ভবন চত্বরে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য ও বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা উত্তোলন করেন বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল।
ওই সময় বোর্ড সদস্য (প্রকৌশল) কমোডর মোহাম্মদ মাহবুবুবর রহমানসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পতাকা উত্তোলনকালে চট্টগ্রাম বন্দরে অবস্থানরত সব জলযান ও জাহাজ থেকে একনাগাড়ে এক মিনিট হুইসেল বাজানো হয়। এরপর বন্দর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোহায়েল উপস্থিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে বন্দর দিবসের কেক কাটেন ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
ওই সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দর অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্মচারী পরিষদ, বন্দরের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার ও অন্যান্য সংগঠনের নেতারা।
কর্ণফুলীর মোহনায় ১৩৬ বছর আগে ২৫ এপ্রিল প্রতিষ্ঠা হয়েছিল দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর। ইংরেজ শাসনামলের প্রথম দিকে ইংরেজ ও দেশীয় ব্যবসায়ীরা বার্ষিক এক টাকা সালামির বিনিময়ে নিজ ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীতে জেটি নির্মাণ করেন। পরে ১৮৬০ সালে প্রথম দুটি অস্থায়ী জেটি নির্মাণ করা হয়। ১৮৭৭ সালে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার গঠিত হয়।
১৮৮৮ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে দুটি মুরিং নির্মাণ হয়। একই বছরের ২৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার কার্যকর হয়। এরপর ১৮৯৯ থেকে ১৯১০ সময়ের মধ্যে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার এবং আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে যুক্তভাবে চারটি স্থায়ী জেটি নির্মাণ করে। ১৯১০ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে রেলওয়ের সংযোগ সাধন হয়।
১৯২৬ সালে চট্টগ্রাম বন্দরকে মেজর পোর্ট ঘোষণা করা হয়। সেই থেকেই চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রেখে আসছে।
আরও পড়ুন:শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে বন্য হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বাতকুচি গ্রামে বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো ৬০ বছর বয়সী হাজী উমর আলী একই গ্রামের বাসিন্দা।
নালিতাবাড়ী থানার ওসি মনিরুল আলম ভুইয়া জানান, প্রায় তিন-চার দিন ধরে নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বাতকুচি গ্রামের পাহাড়ি ঢালে বোরো ধান ক্ষেতে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫টি বন্য হাতি নেমে আসে। বৃহস্পতিবার রাতে হাতির পালটি বাতকুচি গ্রামের ধান ক্ষেতে যায়। এ সময় উমর আলি ও গ্রামবাসীরা তাদের ফসল বাঁচানোর জন্য মশাল জ্বালিয়ে ডাক ও চিৎকার শুরু করেন।
একপর্যায়ে বন্যহাতির পালটি একটু পিছিয়ে যায়। পরে বাড়িতে যাওয়া সময় পাহাড়ে লুকিয়ে থাকা হাতির পালটি উমর আলিকে ঘিরে ফেলে ও পা দিয়ে পিষ্ট করে।
বন বিভাগের ময়মনসিংহ মধুটিলা ফরেস্টের রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে নিহত উমর আলির পরিবারকে বন বিভাগের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে তিন লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
থানার ওসি মনিরুল আলম ভুইয়া বলেন, ‘ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। একই সঙ্গে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
আরও পড়ুন:সিলেটে মধ্যরাতে খোলা মাঠ থেকে একটি স্থানীয় দৈনিক পত্রিকার কম্পিউটার ইনচার্জের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
নগরের হাজারিবাগ এলাকার পেছনের মাঠ থেকে বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
প্রাণ হারানো অমিত দাস শিবু স্থানীয় দৈনিক উত্তরপূর্বর কম্পিউটার ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। শিবুর গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জে। তিনি নগরের বাগবাড়ি নরসিংটিলা এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন।
সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) এয়ারপোর্ট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দেবাংশু কুমার দে এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘রাতে কাজ শেষে অফিস থেকে বাসায় ফিরছিলেন অমিত। তার মৃত্যু রহস্যজনক মনে হচ্ছে। পাশেই তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেল রাখা ছিল।’
তিনি জানান, রাত ২টার দিকে স্থানীয় লোকজন মরদেহ দেখে থানা পুলিশকে ঘটনাটি জানায়।
এসএমপির উপপুলিশ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসি। তার মরদেহের পাশে মোটরসাইকেলটি চাবি লাগানো অবস্থায় রাখা ছিল, তবে মোবাইল ফোন পাওয়া যায়নি। কিন্তু তার মোবাইলের শেষ লোকেশন ঘটনাস্থলেই দেখাচ্ছে।’
আজবাহার বলেন, ‘অমিতের দেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। এরপরও ঘটনাটিকে রহস্যজনক ধরে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ওসমানী হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:গাজীপুরের শ্রীপুরে বহুতল ভবনের ফ্ল্যাট থেকে এক দম্পতির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় টেবিলের ওপরে একটি চিরকুট পাওয়া যায়।
উপজেলার মুলাইদ গ্রামের ফারুক খানের বহুতল ভবনের নিচ তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে শুক্রবার সকালে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
প্রাণ হারানো ইসরাফিল (১৭) শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতি থানান হলদি গ্রামের বাসিন্দা ও তার স্ত্রী রোকেয়া খাতুনের (১৫) বাবার বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ থানার পস্তারি গ্রাম।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে গত সাত থেকে আট মাস আগে তারা পরিবারের অমতে বিয়ে করেন। তারা দুজনই শ্রীপুরের মুলাইদ গ্রামের ফারুক হোসেনের বহুতল ভবনে ভাড়া থাকতেন। ইসরাফিল স্থানীয় একটি ওয়ার্কসপে ও রোকেয়া স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ করতেন।
রোকেয়ার ভাই বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘সাত থেকে আট মাস আগে পরিবারের অমতে তারা বিয়ের সম্পর্কে জড়িয়েছিল। বিয়ের পর তাদের সম্পর্ক ভালোই চলছি। সম্প্রতি ইসরাফিল তার বাবা-মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিল। পরে বৃহস্পতিবার তাদের বুঝিয়ে বাসায় আনা হয়। সকালে তাদের মৃত্যুর খবর পাই।’
ইসরাফিলের বাবা মফিজুল হক জানান, পাশাপাশি ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন তারা। পরিবারের রান্নার কাজ তারা ইসরাফিলের ফ্ল্যাটে করতেন। শুক্রবার সকালে তাদের ফ্ল্যাটের দরজা খোলা দেখতে পেয়ে ভেতরে যান এবং ইসরাফিলকে ওড়নায় পেঁচানো ঝুলন্ত অবস্থায় এবং রোকেয়ার মরদেহ খাটের ওপর বিছানায় দেখতে পান।
শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাখাওয়াত হোসেন জানান, ‘খবর পেয়ে একটি ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, প্রথমে স্ত্রী আত্মহত্যা করে। স্ত্রীর আত্মহত্যার বিষয়টি স্বামী সইতে না পেরে তিনিও আত্মহত্যা করেন।’
এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর মোহনায় জেলের জালে এবার ধরা পড়েছে ২৬ কেজি ২৫০ গ্রাম ওজনের একটি কোরাল মাছ।
পরে সেই মাছটি কুয়াকাটা পৌর মাছ বাজারে বিক্রি করা হয়েছে ৩২ হাজার ৭৫০ টাকায়।
কুয়াকাটা পৌর মাছ বাজারের ‘কুয়াকাটা ফিস পয়েন্টের’ পরিচালক নাসির উদ্দিন বৃহস্পতিবার দুপুরে মাছটি কেনেন।
তিনি বলেন, ‘সাগর মোহনায় সচরাচর এত বড় মাছ পাওয়া যায় না। আজ দুপুরে মাছটি মার্কেটে আসার পর এক হাজার ২৫০ টাকা কেজি দরে কিনে নেই।’
স্থানীয় জেলেরা জানান, গত মঙ্গলবার কুয়াকাটার বাবলাতলা এলাকার জেলে রাসেল ‘মায়ের দোয়া’ নামের তার ট্রলারটি নিয়ে গভীর সমুদ্রে ইলিশ মাছ ধরতে রওনা হন। পরবর্তীতে বলেশ্বর নদীর সাগর মোহনায় রাত ২টার দিকে রাসেলের জালে এ বিশাল কোরাল মাছটি ধরা পড়ে।
রাসেল বলেন, ‘তীব্র তাপদাহ শুরুর পর থেকে সাগরে মাছ পড়ে না। ভাগ্য সহায় বলে এত বড় মাছ আল্লাহ দিয়েছেন। মাছটি তীরে নিয়ে আসলে স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ীরা মাছটি ক্রয় করতে চেয়েছেন। পরে কুয়াকাটা মাছ বাজারে এক হাজার ২৫০ টাকা কেজি দরে মাছটি বিক্রি করেছি।’
জানতে চাইলে কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, নদ-নদী এবং সাগরে বিভিন্ন মাছ পাওয়া যায়। সব সময় বড় মাছ ধরা পড়ছে না। সামুদ্রিক কোরাল এর চেয়েও অনেক বড় হয়।
সরকারের দেয়া ৬৫ দিন সাগরে সব ধরনের মাছ ধরার সফল কার্যক্রমের কারণেই এ ধরনের মাছ জেলেদের জালে ধরা পড়ছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য