বরিশাল বিভাগের ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েই চলছে। পর্যাপ্ত শয্যার অভাবে গুরুতর অসুস্থদের হাসপাতালেও ঠাঁই হচ্ছে না।
একটি জেলার চিকিৎসা কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, সেখানে রোটা ভাইরাসের প্রকোপ দেখা গিয়েছে। একটি জেলায় গবেষণা করে দেখা গেছে, নদী ও পুকুরের পানি না ফুটিয়ে পান করার কারণে বেড়েছে প্রকোপ। আর একটি জেলায় গরম বাড়ার কারণে রোগের প্রকোপ হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভোলায় রোগী সামলাতে হিমশিম
ভোলায় গত দুই মাস ধরে ক্রমেই বাড়ছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। সদর হাসপাতালে প্রতিদিন আসছেন গড়ে প্রায় দেড় শতাধিক রোগী। একসঙ্গে এত রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে নার্স ও ডাক্তারদের।
হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ১০টি শয্যার বিপরীতে এত রোগী ভর্তি হওয়ায় হাসপাতালের বারান্দার মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন বেশিরভাগ রোগী।
সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় পুরো হাসপাতালের বারান্দার দুই পাশে শুয়ে আছেন শতাধিক রোগী। এদের একটি বড় অংশ শিশু।
ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সামনে থেকে শুরু করে পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ড ও পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডের বারান্দার মেঝেতে দুই সারিতে শুয়ে আছেন রোগী। কেউ আবার মেঝেতে জায়গা না পেয়ে শুয়ে আছেন ট্রলিতে।
মাত্র দুই জন নার্স এত রোগীর সেবা দিচ্ছেন। কাজের চাপে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন তারা।
ওয়ার্ড বয় ও ঝাড়ুদাররাও দিনভর পরিশ্রম করছে। ডাক্তার ও নার্সদের পাশাপাশি তারাও রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের মো. ইউছুফ তার স্ত্রী নাজমা বিবি ও ১০ বছর বয়সী ছেলে নুরনবীকে নিয়ে এসেছেন। অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শয্যা না পেয়ে মা-ছেলেকে হাসপাতালের বারান্দার মেঝেতে রেখেই স্যালাইন দিচ্ছিলেন ইউছুফ।
বোরহানউদ্দিন উপজেলার বাসিন্দা মো. শাহিন জানান, তার স্ত্রী আমেনা বেগম ও তিন বছর বয়সী ছেলে নাফিজ গত ছয় দিন ধরে বমি ও ডায়রিয়া আক্রান্ত। প্রথমে তাদেরকে বোরহানউদ্দিন হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে জায়গা না পেয়ে ভোলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এখানেও সিট না পেয়ে হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা।
সিনিয়র স্টাফ নার্স জাকিনুর জানান, রোববার সকাল আটটা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ১৬৯ জন রোগী ভর্তি হয়। একই সময়ে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে যান ১৮৯ জন।
দুই মাস ধরেই ডায়রিয়ার এই প্রকোপ দেখা গেলেও এক সপ্তাহ ধরে দিনে দেড় শতাধিক রোগী ভর্তি হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এদের মধ্যে নারী রোগীর সংখ্যা বেশী।
ভোলার সিভিল সার্জন সৈয়দ রেজাউল ইসলাম আশঙ্কা করছেন, রোগী যেভাবে বাড়ছে তাতে স্যালাইন স্বল্পতা দেখা দিতে পারে।
তার ধারণা, গরমের কারণে ডায়রিয়া বেড়েছে।
পটুয়াখালীতে করোনার চেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে ডায়রিয়া রোগী
পটুয়াখালী জেলার সিভিল সার্জন অফিস থেকে জানা গেছে, ১ জানুয়ারি থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ৭ হাজার ৩৪১ জন মানুষ। এর মধ্যে সদরেই ২ হাজার ২২৩ জন।
গত এক মাসে আক্রান্ত ৩ হাজার ৮৬৭ জন এবং গত সাত দিনের আক্রান্ত সংখ্যা ১ হাজার ৮৬৩ জন।
তবে বেসরকারি হিসাবে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ।
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, আশঙ্কাজনক হারে রোগী বাড়তে থাকায় হাসপাতালের মেঝে পর্যন্ত ফাঁকা নেই। হাসপাতাল ভর্তি ডায়রিয়া রোগীতে। তার ওপর তৈরি হয়েছে স্যালাইন ও ওষুধ সংকট।
সদর উপজেলার চান্দখালী গ্রামের নয়ন নামের ১০ বছরের এক শিশুকে এই হাসপাতালে ভর্তি করেছে তার বাবা বাদল মিয়া। গত তিনদিন ধরে বাইরে থেকে স্যালাইন এনে দেয়া হচ্ছে।
সদর উপজেলার নন্দিপাড়া গ্রামের জব্বার খলিফা জানান, মঙ্গলবার সকালে তার দুই বছর বয়সী নাতি মো. জুনায়েদ ও আট বছরের নাতনি আফরোজাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু হাসপাতাল থেকে কোনো স্যালাইন দেয়া হচ্ছেনা। অতিরিক্ত দামে বাইরের দোকান থেকে স্যালাইন কিনে আনতে হচ্ছে।
তার অভিযোগ, প্রতিটি স্যালাইনের স্বাভাবিক মূল্য ৯০ থেকে ৯২ টাকা হলেও বাইরের দোকানে সেগুলো নেয়া হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।
অন্য উপজেলার চিত্রও এক।
মির্জাগঞ্জ উপজেলার উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দেখা গেছে, হাসপাতালের সামনে শামিয়ানা টাঙিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ওয়াহিদুজ্জামান শামিম নিউজবাংলাকে জানান, নারী, শিশু ও বয়স্কদের পাশাপাশি গর্ভবতী মায়েরাও এ বছর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেনযা খুবই চিন্তার বিষয়।
এর জন্য তীব্র গরম ও বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার না করাকেই দায়ী করেন এই শিশু বিশেষজ্ঞ। গরমে পানির পাশাপাশি খাবার স্যালাইন খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
এই হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ আবদুল মতিন জানান, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মাঝে ডায়রিয়া সংক্রমণ মারাত্মক আকারে বেড়ে যাওয়ায় ডায়রিয়াকেই এখন বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম শিপন জানান, জেলার সব কয়টি উপজেলায় ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে ৮৪টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। তবে স্যালাইন সংকটের কথা উড়িয়ে দিয়ে সিভিল সার্জন জানান আগামী এক সপ্তাহ পর্যন্ত মজুত রয়েছে স্যালাইন।
বরগুনায় কারণ নদী-পুকুরের পানি ব্যবহার
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তথ্য বলছে, জানুয়ারি মাসে ১৭১ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে হয় ২০৩ জন, মার্চে তা আরও বেড়ে হয় ৯০৩ জন।
এপ্রিলের ১২ তারিখ পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়েছেন ৫৪০ জন। জেলার ছয়টি উপজেলা হাসপাতালে আরও অন্তত এক হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। ভর্তি আছেন দুই শতাধিক।
এর মধ্যে শনিবার বেতাগী উপজেলার নুরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির মৃত্যুও হয়েছে।
আক্রান্তদের বেশিরভাগ নদী তীর এলাকার বাসিন্দা। তাদের বেশিরভাগই শিশু ও বৃদ্ধ। এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। যে কারণে তারা দ্রুত আক্রান্ত হন।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সোহরাব উদ্দীন বলেন, উপকূলীয় এলাকার মানুষ এখনও নদী ও পুকুরের পানি পান করে। এসব পানি শতভাগ জীবাণুমুক্ত করা হয় না।
ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক উদারময় গবেষণা কেন্দ্র বা আইসিডিডিআর’বির সাত সদস্যের একটি গবেষক দল মার্চ মাসের শুরুর দিকে বরগুনায় আসে। তারা সদরের বুড়িরচর, ঢলুয়া, গৌরীচন্না ও ফুলঝুড়িসহ বরগুনা পৌরশহরের বেশ কিছু এলাকায় গবেষণা করেন।
গবেষক দলের দলনেতা বলেন, ‘আমরা হাসপাতালে কয়েকজন রোগীর পেটে কলেরা জীবাণুর উপস্থিতি পাই। ওই রোগীর বাড়িতে গিয়ে খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারি, ওই পরিবারসহ এলাকার বাসিন্দারা গভীর নলকুপের পানি পান করলেও দৈনন্দিন কাজে সরাসরি পুকুরের পানি ব্যবহার করে থাকেন।
‘বিশেষ করে এ অঞ্চলে দুপুরের রান্না করা ভাত রাতে খাওয়ার পর পুকুরের পানি দিয়ে রাখা হয়। ওই ভাত (পান্তাভাত) সকালে তার খেয়ে নেন। পানি বিশুদ্ধ না করে সরাসরি ব্যবহার করার ফলে জীবাণু পাকস্থলিতে গিয়ে সংক্রমণ ঘটায়।’
পৌরশহরের উকিলপট্টি এলাকায় কয়েকটি বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সরাসরি খালের সঙ্গে টয়লেটের পাইপ দিয়ে দেয়া হয়ছে। আবার সেই খালের পানিই দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, একটি পুকুরের পানি ব্যবহার করে ২০ থেকে ২৫টি পরিবার। শুষ্ক মৌসুমে পুকুরের পানি শুকিয়ে যায়, ফলে জীবাণুর ঘনত্ব বেড়ে যায়। এসব পানি না ফুটিয়েই ব্যবহার করা হয়। আর ওই পানি দূষিত অবস্থায় পাকস্থলিতে গিয়ে সংক্রমণ ঘটায়।
জোয়ারের পানিতে লবণাক্তও ডায়েরিয়ার প্রকোপ বাড়ার একটি কারণ বলে মনে করছে আইসিডিডিআর’বি। এই লবণ পানি কোনোভাবে পেটে গেলেই হজমশক্তি নষ্ট হয়।
বরগুনার সিভিল সার্জন মারিয়া হাসান বলেন, ‘আইসিডিডিআর’বির গবেষণালব্ধ পরামর্শ আমরা পেয়েছি। এ ব্যাপারে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের সঙ্গেও আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করি সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব।’
বরিশাল বিভাগে কয়েকদিন ধরেই বাড়ছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। এতে খোদ স্বাস্থ্য বিভাগ উদ্বিগ্ন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, বরিশালে এর আগে এমন ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা যায়নি।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক বাসুদেব কুমার দাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হঠাৎ করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করেছি আমরা। শহরের মানুষ তেমন আক্রান্ত না হলেও, বেশি আক্রান্ত হচ্ছে উপকূল ও গ্রামাঞ্চলের মানুষ।’
তিনি জানান, অতিরিক্ত গরমে স্বস্তি পেতে মানুষ পান্তা কিংবা শরবত খাচ্ছে বেশি। এসব তৈরিতে দূষিত পানি ব্যবহারের কারণেই ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ছে বলে তার মত।
বাসুদেব কুমার জানান, বরিশাল বিভাগে এ বছর জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের ২০ তারিখ পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩২ হাজার ছাড়িয়েছে।
আরও পড়ুন:জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকলে হাত, দাঁত ও চাপার হাড্ডি ভেঙে যমুনা নদীতে নিক্ষেপের হুমকিদাতা আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। একইসঙ্গে চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলামকে (আনারস) শো-কজ করেছেন জেলা রিটার্ননিং কর্মকর্তা।
শনিবার জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ শানিয়াজ্জামান তালুকদার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। জেলা প্রশাসক মো. শফিউর রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আটককৃতরা হলেন সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক ও সুজাত আলী কলেজের অধ্যক্ষ সাইদুল হাসান সাইদ এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার মোতাহার হোসেন জয়।
লিখিত বক্তব্যে শানিয়াজ্জামান তালুকদার জানান, চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে তার দুই কর্মী যে বক্তব্য দিয়েছেন তা উস্কানিমূলক ও হুমকিস্বরূপ। বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলামকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। একইসঙ্গে হুমকিদাতা দু’জনের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন সরিষাবাড়ী থানায় মামলা করেন।
মামলা হওয়ার পর শনিবার দুপুরে গোয়েন্দা পুলিশ সাইদুল হাসান সাইদ ও খন্দকার মোতাহার হোসেন জয়কে গ্রেপ্তার করে। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে বলেও জানানো হয়।
জানা গেছে, মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) রাতে চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলামের নির্বাচনী পথসভায় অধ্যক্ষ সাইদুল হাসান বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে যারা কথা বলে তাদের জবান আমরা বন্ধ করে দেব। আমরা আগামী ৮ মে'র নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ থাকবো। আমরা অন্য কোনো মার্কার কোনো এজেন্ট দিতে দেবো না। রফিক সাহেবকে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে আজকেই ঘোষণা দিলাম।’
প্রতিপক্ষের লোকদের হুশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘সাবধান হয়ে যান, আমাদের মাঝে অসন্তোষ ও হানাহানির চেষ্টা করবেন না। আপনাদের দাঁত ভেঙে দেয়া হবে। যাদের দাঁত নেই, তাদের চাপার হাড্ডি ভেঙে দেয়া হবে।’
এরপর পিংনা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খন্দকার মোতাহার হোসেন জয় একই সভায় বলেন, ‘অন্য কোনো মার্কার এজেন্ট কোনো কেন্দ্রে দিতে দেব না। এজেন্ট দিলে তার হাত বাড়ি দিয়ে ভেঙে আমরা যমুনা নদীতে নিক্ষেপ করবো।’
এ সময় সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলামকে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
আগামী ৮ মে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে রফিকুল ইসলাম (আনারস) ও তালেব উদ্দিন (দোয়াত-কলম) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুরে অগ্রণী ব্যাংকের শাখা থেকে ১০ কোটি ১৩ লাখ টাকা লোপাটের অভিযোগে শাখা ম্যানেজারসহ তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার তাদের বরখাস্ত করা হয় বলে শনিবার দুপুরে জানান অগ্রণী ব্যাংকের রাজশাহী সার্কেলের জেনারেল ম্যানেজার আফজাল হোসেন।
বরখাস্ত হওয়া ব্যাংক কর্মকর্তারা হলেন- কাশিনাথপুর শাখার ব্যবস্থাপক (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) হারুন বিন সালাম, সিনিয়র অফিসার আবু জাফর ও ক্যাশ অফিসার সুব্রত চক্রবর্তী।
আফজাল হোসেন বলেন, ‘ব্যাংক পরিদর্শনে গিয়ে ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকা খোয়া যাওয়ার সত্যতা পাওয়া যায়। পরে পুলিশে অভিযোগ দিলে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে একটি তদন্ত দল পুরো বিষয়টির তদন্ত করছে। দলটির প্রধান হলেন সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার আনোয়ার হোসেন। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর অভিযুক্ত ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের শুক্রবার বিকেলে পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হয়। বিচারক আনোয়ার হোসেন সাগর গ্রেপ্তারকৃতদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুন:তীব্র গরম থেকে বাঁচতে ও বৃষ্টির আসায় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় নেচে গেয়ে ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছেন স্থানীয়রা। লোকজন।
উপজেলার চন্দ্রখানা বালাটারি গ্রামে শনিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বিয়ের অনুষ্ঠান চলে।
ওই এলাকার বাসিন্দা সাহাপুর আলীর স্ত্রী মল্লিকা বেগমের আয়োজনে বিয়েতে অসংখ্য নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। নাচ গানের মধ্যে দিয়ে ব্যাঙের বিয়ে শেষে বরণ ডালায় ব্যাঙ দুটিকে নিয়ে পুরো গ্রাম ঘুরে বেড়ান তারা। এ সময় গ্রামবাসীদের কাছ থেকে চাল ডাল সংগ্রহ করে বিয়েতে অংশগ্রহণকারীদের খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়।
বিয়ের আয়োজনকারী মল্লিকা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কিছুদিন ধরে তীব্র গরম। তাপমাত্রা বেশি হওয়ার কারণে আমরা কষ্টে রয়েছি; গ্রামের মানুষজন অস্তিত্বতে আছে। কেউই কোনো কাজ কামাই করতে পারছেন না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আগের যুগের মানুষরা ব্যাঙের বিয়ে দিলে বৃষ্টি হতো। সেই বিশ্বাস থেকেই আজ ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছি।’
বিয়ে দেখতে আসা জাহিদ নামের একজন বলেন, “আমার জীবনে প্রথম ব্যাঙের বিয়ে দেখলাম। খুবই ভালো লেগেছে। ‘বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের বিয়ে’ বিষয়টি প্রথম জানলাম।”
বৃদ্ধ আজিজুল হক বলেন, ‘বৃষ্টি না হওয়ার কারণে আবাদের ক্ষতি হচ্ছে। তাই বৃষ্টির আশায় ব্যাঙের বিয়েতে অংশগ্রহণ করেছি।’
রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘কুড়িগ্রামে বেশ কিছুদিন ধরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। আজ (শনিবার) জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।’
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে এক বছরের শিশু হুমাইরা আক্তারের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকালে সদর উপজেলার মদিনা বাজার এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মদিনা বাজারের উত্তর পাশে খানকা শরীফের সামনের সড়কে দুটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে।
এ সময় রাস্তার পাশে এক বছরের শিশু সন্তান হুমাইরাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা হাবিবা বেগমের ধাক্কা খান অটোরিকশার সঙ্গে। এতে শিশু হুমাইরা মায়ের কোল থেকে রাস্তায় ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হয়। শিশুটিকে দ্রুত মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় অটোরিকশা দুটি আটক করা হয়েছে। পালিয়ে যাওয়া দুই চালককে আটকের চেষ্টা চলছে।
মুন্সীগঞ্জে হিটস্ট্রোকে সাখাওয়াত হোসেন মুকুল নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির মাঠ পর্যায়ের বিপনন বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
২৭ বছর বয়সী মুকুলের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলায়।
প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির মুন্সীগঞ্জ শহরের সেলস রিপ্রেজেনটেটিভ মোহাম্মদ রোকন জানান, শনিবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জ শহরের অদূরে মুন্সীরহাট এলাকায় মাঠ পর্যায়ে কর্মরত অবস্থায় তীব্র গরমের কারণে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন মুকুল। সঙ্গে সঙ্গে তাকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালে নিয়ে এলে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস হাসান জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগে পথেই তার মৃত্যু হয়েছে। নিহতের হিটস্ট্রোকের লক্ষণ রয়েছে বলে জানান তিনি।
নিহতের মরদেহ তার নিজ জেলায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
আকস্মিক কালবৈশাখীর তাণ্ডবে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ও শমশেরনগর ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে আরও বেশ কিছু বাড়িঘর। ঝড়ের পর খোলা আকাশের নিচে দিনযাপন করছে অর্ধশতাধিক পরিবার।
এ ছাড়াও গাছপালা উপড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙেছে এবং তার ছিঁড়ে পড়ে। এতে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ওই অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
শুক্রবার রাত ৩টার দিকে এই ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হয়। প্রায় সাড়ে ১৫ ঘণ্টা পর শনিবার বিকেল ৪টার দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কালবৈশাখীর তাণ্ডবে উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের পতনঊষার, ধূপাটিলা, উসমানগড়, ব্রাহ্মণঊষারসহ ৮টি গ্রামের প্রায় শতাধিক ঘর এবং শমশেরনগর ইউনিয়নের কেছুলুটি, ভাদাইরদেউল গ্রামে আরও কয়েকটি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অসংখ্য গাছ-বাঁশ উপড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ও লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
পতনঊষার ইউনিয়নের নেছার মিয়া, ময়নুল মিয়া, খুশবা বেগম, লিপি বেগম, রহমান মিয়া, সুফিয়ান মিয়া, কালাম মিয়া, আনু মিয়া, ফখরুল মিয়াসহ অসংখ্য পরিবার দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন।
ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, গতরাতে কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে তীব্র শিলাবৃষ্টি হয়। মুহুর্তের মধ্যে তাদের ঘরবাড়ি উড়িয়ে নিয়ে যায়। আমরা এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি। সহোযোগিতা না পেলে আমাদের রাস্তায় থাকতে হবে।’
পতনঊষার ইউপি সদস্য তোয়াবুর রহমান জানান, আকস্মিক ঝড়ে পতনঊষার গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যাদের বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে সেসব দরিদ্র পরিবারের জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে।
পতনঊষার ইউপি চেয়ারম্যান অলি আহমদ খান বলেন, ‘কালবৈশাখী ঝড়ে আমার ইউনিয়নে প্রচুর পরিমাণ বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অনেক পরিবার খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। তাদের দ্রুত সহায়তার প্রয়োজন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাহেবকে অবহিত করা হয়েছে।’
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক গোলাম ফারুক মীর বলেন, ‘ঝড়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েকটি খুঁটি ভেঙে পড়েছে। অনেক স্থানে তার ছিঁড়ে গেছে। এসব জায়গায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার জন্য কাজ চলছে।’
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ ইউএনও জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘পতনঊষার ইউপি চেয়ারম্যান বাড়িঘর বিধ্বস্তের কথা বলেছেন। তবে পরিপূর্ণ হিসাব জানা যায়নি। চেয়ারম্যানদেরকে বলা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে দেয়ার জন্য। দ্রুত তাদের সহোযোগিতা করা হবে।’
আরও পড়ুন:চুয়াডাঙ্গায় অব্যাহত অতি তীব্র তাপপ্রবাহে ওষ্ঠাগত হয়ে পড়েছে জনজীবন। ভ্যাপসা গরমে অস্বস্তি বেড়েছে কয়েকগুণ।
শনিবার বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গা জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তীব্র থেকে অতি তীব্র আকার ধারণ করছে জেলার তাপপ্রবাহ। গরমে একটু স্বস্তি পেতে গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছে মানুষ। তবে, ভ্যাপসা গরমে স্বস্তি নেই কোথাও। আবহাওয়ার এমন বিরূপ আচরণের সঙ্গে কোনোভাবেই খাপ খাওয়াতে পারছে না জেলাবাসী। কেউ আবার পান করছেন ফুটপাতের অস্বাস্থ্যকর পানীয়। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছে প্রাণিকূল। হাসপাতালে বাড়ছে গরমজনিত রোগীর সংখ্যা।
দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ডের ইজিবাইক চালক হারেজ আলী বলেন, ‘কঠিন তাপ পড়চি। সূর্য মনে হচ্চি মাতার উপর চলি এসিচে। আমরা গরীব মানুষ, পেটের দায়ে বাইরি বের হয়িচি। মাজে মাজে রাস্তার পাশের দুকান থেকি শরবত খেয়ি ঠান্ডা হচ্চি।’
চলমান দাবদাহে ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে সেচ কার্যক্রম; নষ্ট হচ্ছে ধান, আম, লিচু ও কলাসহ মাঠের অন্যান্য ফসল।
মৌসুমের প্রায় সময়জুড়েই উত্তপ্ত থাকে চুয়াডাঙ্গা। এবারও চৈত্রের মধ্যভাগ থেকে শুরু হওয়া তাপমাত্রার এমন দাপট বৈশাখের আবহাওয়াকে জটিল করে তুলছে। এ যেন মরুর উষ্ণতা অনুভব করছে মানুষ।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘এ মাসের শেষের কয়েকদিন তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য