বরিশাল বিভাগের ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েই চলছে। পর্যাপ্ত শয্যার অভাবে গুরুতর অসুস্থদের হাসপাতালেও ঠাঁই হচ্ছে না।
একটি জেলার চিকিৎসা কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, সেখানে রোটা ভাইরাসের প্রকোপ দেখা গিয়েছে। একটি জেলায় গবেষণা করে দেখা গেছে, নদী ও পুকুরের পানি না ফুটিয়ে পান করার কারণে বেড়েছে প্রকোপ। আর একটি জেলায় গরম বাড়ার কারণে রোগের প্রকোপ হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভোলায় রোগী সামলাতে হিমশিম
ভোলায় গত দুই মাস ধরে ক্রমেই বাড়ছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। সদর হাসপাতালে প্রতিদিন আসছেন গড়ে প্রায় দেড় শতাধিক রোগী। একসঙ্গে এত রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে নার্স ও ডাক্তারদের।
হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ১০টি শয্যার বিপরীতে এত রোগী ভর্তি হওয়ায় হাসপাতালের বারান্দার মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন বেশিরভাগ রোগী।
সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় পুরো হাসপাতালের বারান্দার দুই পাশে শুয়ে আছেন শতাধিক রোগী। এদের একটি বড় অংশ শিশু।
ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সামনে থেকে শুরু করে পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ড ও পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডের বারান্দার মেঝেতে দুই সারিতে শুয়ে আছেন রোগী। কেউ আবার মেঝেতে জায়গা না পেয়ে শুয়ে আছেন ট্রলিতে।
মাত্র দুই জন নার্স এত রোগীর সেবা দিচ্ছেন। কাজের চাপে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন তারা।
ওয়ার্ড বয় ও ঝাড়ুদাররাও দিনভর পরিশ্রম করছে। ডাক্তার ও নার্সদের পাশাপাশি তারাও রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের মো. ইউছুফ তার স্ত্রী নাজমা বিবি ও ১০ বছর বয়সী ছেলে নুরনবীকে নিয়ে এসেছেন। অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শয্যা না পেয়ে মা-ছেলেকে হাসপাতালের বারান্দার মেঝেতে রেখেই স্যালাইন দিচ্ছিলেন ইউছুফ।
বোরহানউদ্দিন উপজেলার বাসিন্দা মো. শাহিন জানান, তার স্ত্রী আমেনা বেগম ও তিন বছর বয়সী ছেলে নাফিজ গত ছয় দিন ধরে বমি ও ডায়রিয়া আক্রান্ত। প্রথমে তাদেরকে বোরহানউদ্দিন হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে জায়গা না পেয়ে ভোলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এখানেও সিট না পেয়ে হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা।
সিনিয়র স্টাফ নার্স জাকিনুর জানান, রোববার সকাল আটটা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ১৬৯ জন রোগী ভর্তি হয়। একই সময়ে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে যান ১৮৯ জন।
দুই মাস ধরেই ডায়রিয়ার এই প্রকোপ দেখা গেলেও এক সপ্তাহ ধরে দিনে দেড় শতাধিক রোগী ভর্তি হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এদের মধ্যে নারী রোগীর সংখ্যা বেশী।
ভোলার সিভিল সার্জন সৈয়দ রেজাউল ইসলাম আশঙ্কা করছেন, রোগী যেভাবে বাড়ছে তাতে স্যালাইন স্বল্পতা দেখা দিতে পারে।
তার ধারণা, গরমের কারণে ডায়রিয়া বেড়েছে।
পটুয়াখালীতে করোনার চেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে ডায়রিয়া রোগী
পটুয়াখালী জেলার সিভিল সার্জন অফিস থেকে জানা গেছে, ১ জানুয়ারি থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ৭ হাজার ৩৪১ জন মানুষ। এর মধ্যে সদরেই ২ হাজার ২২৩ জন।
গত এক মাসে আক্রান্ত ৩ হাজার ৮৬৭ জন এবং গত সাত দিনের আক্রান্ত সংখ্যা ১ হাজার ৮৬৩ জন।
তবে বেসরকারি হিসাবে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ।
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, আশঙ্কাজনক হারে রোগী বাড়তে থাকায় হাসপাতালের মেঝে পর্যন্ত ফাঁকা নেই। হাসপাতাল ভর্তি ডায়রিয়া রোগীতে। তার ওপর তৈরি হয়েছে স্যালাইন ও ওষুধ সংকট।
সদর উপজেলার চান্দখালী গ্রামের নয়ন নামের ১০ বছরের এক শিশুকে এই হাসপাতালে ভর্তি করেছে তার বাবা বাদল মিয়া। গত তিনদিন ধরে বাইরে থেকে স্যালাইন এনে দেয়া হচ্ছে।
সদর উপজেলার নন্দিপাড়া গ্রামের জব্বার খলিফা জানান, মঙ্গলবার সকালে তার দুই বছর বয়সী নাতি মো. জুনায়েদ ও আট বছরের নাতনি আফরোজাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু হাসপাতাল থেকে কোনো স্যালাইন দেয়া হচ্ছেনা। অতিরিক্ত দামে বাইরের দোকান থেকে স্যালাইন কিনে আনতে হচ্ছে।
তার অভিযোগ, প্রতিটি স্যালাইনের স্বাভাবিক মূল্য ৯০ থেকে ৯২ টাকা হলেও বাইরের দোকানে সেগুলো নেয়া হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।
অন্য উপজেলার চিত্রও এক।
মির্জাগঞ্জ উপজেলার উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দেখা গেছে, হাসপাতালের সামনে শামিয়ানা টাঙিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ওয়াহিদুজ্জামান শামিম নিউজবাংলাকে জানান, নারী, শিশু ও বয়স্কদের পাশাপাশি গর্ভবতী মায়েরাও এ বছর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেনযা খুবই চিন্তার বিষয়।
এর জন্য তীব্র গরম ও বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার না করাকেই দায়ী করেন এই শিশু বিশেষজ্ঞ। গরমে পানির পাশাপাশি খাবার স্যালাইন খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
এই হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ আবদুল মতিন জানান, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মাঝে ডায়রিয়া সংক্রমণ মারাত্মক আকারে বেড়ে যাওয়ায় ডায়রিয়াকেই এখন বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম শিপন জানান, জেলার সব কয়টি উপজেলায় ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে ৮৪টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। তবে স্যালাইন সংকটের কথা উড়িয়ে দিয়ে সিভিল সার্জন জানান আগামী এক সপ্তাহ পর্যন্ত মজুত রয়েছে স্যালাইন।
বরগুনায় কারণ নদী-পুকুরের পানি ব্যবহার
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তথ্য বলছে, জানুয়ারি মাসে ১৭১ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে হয় ২০৩ জন, মার্চে তা আরও বেড়ে হয় ৯০৩ জন।
এপ্রিলের ১২ তারিখ পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়েছেন ৫৪০ জন। জেলার ছয়টি উপজেলা হাসপাতালে আরও অন্তত এক হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। ভর্তি আছেন দুই শতাধিক।
এর মধ্যে শনিবার বেতাগী উপজেলার নুরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির মৃত্যুও হয়েছে।
আক্রান্তদের বেশিরভাগ নদী তীর এলাকার বাসিন্দা। তাদের বেশিরভাগই শিশু ও বৃদ্ধ। এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। যে কারণে তারা দ্রুত আক্রান্ত হন।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সোহরাব উদ্দীন বলেন, উপকূলীয় এলাকার মানুষ এখনও নদী ও পুকুরের পানি পান করে। এসব পানি শতভাগ জীবাণুমুক্ত করা হয় না।
ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক উদারময় গবেষণা কেন্দ্র বা আইসিডিডিআর’বির সাত সদস্যের একটি গবেষক দল মার্চ মাসের শুরুর দিকে বরগুনায় আসে। তারা সদরের বুড়িরচর, ঢলুয়া, গৌরীচন্না ও ফুলঝুড়িসহ বরগুনা পৌরশহরের বেশ কিছু এলাকায় গবেষণা করেন।
গবেষক দলের দলনেতা বলেন, ‘আমরা হাসপাতালে কয়েকজন রোগীর পেটে কলেরা জীবাণুর উপস্থিতি পাই। ওই রোগীর বাড়িতে গিয়ে খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারি, ওই পরিবারসহ এলাকার বাসিন্দারা গভীর নলকুপের পানি পান করলেও দৈনন্দিন কাজে সরাসরি পুকুরের পানি ব্যবহার করে থাকেন।
‘বিশেষ করে এ অঞ্চলে দুপুরের রান্না করা ভাত রাতে খাওয়ার পর পুকুরের পানি দিয়ে রাখা হয়। ওই ভাত (পান্তাভাত) সকালে তার খেয়ে নেন। পানি বিশুদ্ধ না করে সরাসরি ব্যবহার করার ফলে জীবাণু পাকস্থলিতে গিয়ে সংক্রমণ ঘটায়।’
পৌরশহরের উকিলপট্টি এলাকায় কয়েকটি বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সরাসরি খালের সঙ্গে টয়লেটের পাইপ দিয়ে দেয়া হয়ছে। আবার সেই খালের পানিই দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, একটি পুকুরের পানি ব্যবহার করে ২০ থেকে ২৫টি পরিবার। শুষ্ক মৌসুমে পুকুরের পানি শুকিয়ে যায়, ফলে জীবাণুর ঘনত্ব বেড়ে যায়। এসব পানি না ফুটিয়েই ব্যবহার করা হয়। আর ওই পানি দূষিত অবস্থায় পাকস্থলিতে গিয়ে সংক্রমণ ঘটায়।
জোয়ারের পানিতে লবণাক্তও ডায়েরিয়ার প্রকোপ বাড়ার একটি কারণ বলে মনে করছে আইসিডিডিআর’বি। এই লবণ পানি কোনোভাবে পেটে গেলেই হজমশক্তি নষ্ট হয়।
বরগুনার সিভিল সার্জন মারিয়া হাসান বলেন, ‘আইসিডিডিআর’বির গবেষণালব্ধ পরামর্শ আমরা পেয়েছি। এ ব্যাপারে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের সঙ্গেও আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করি সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব।’
বরিশাল বিভাগে কয়েকদিন ধরেই বাড়ছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। এতে খোদ স্বাস্থ্য বিভাগ উদ্বিগ্ন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, বরিশালে এর আগে এমন ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা যায়নি।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক বাসুদেব কুমার দাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হঠাৎ করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করেছি আমরা। শহরের মানুষ তেমন আক্রান্ত না হলেও, বেশি আক্রান্ত হচ্ছে উপকূল ও গ্রামাঞ্চলের মানুষ।’
তিনি জানান, অতিরিক্ত গরমে স্বস্তি পেতে মানুষ পান্তা কিংবা শরবত খাচ্ছে বেশি। এসব তৈরিতে দূষিত পানি ব্যবহারের কারণেই ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ছে বলে তার মত।
বাসুদেব কুমার জানান, বরিশাল বিভাগে এ বছর জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের ২০ তারিখ পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩২ হাজার ছাড়িয়েছে।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে ফিশিং বোটের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে চারজন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে পতেঙ্গা থানাধীন ১৫ নম্বর ঘাটে নোঙর করা একটি ফিশিং বোটে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
দগ্ধরা হলেন- ৫৫ বছর বয়সী জামাল উদ্দিন, ৪৫ বছর বয়সী মাহমুদুল করিম ও মফিজুর রহমান এবং ২৮ বছর বয়সী এমরান। এদের মধ্যে প্রথম তিনজনের শরীরের ৮০-৮৫ শতাংশ পর্যন্ত পুড়ে গিয়েছে। অন্যজনের শরীর পুড়েছে অন্তত ২০ শতাংশ।
চমেক হাসপাতালে বার্ন ও ক্যাজুয়ালটি ইউনিটের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আহত চারজনের মধ্যে তিনজনের বড় ধরনের বার্ন হয়েছে। এই ধরনের রোগীদের অবস্থা ভালো থাকে না।’
চট্টগ্রাম সদরঘাট নৌ-থানার ওসি একরাম উল্লাহ বলেন, ‘মাছ ধরার ট্রলারে ইঞ্জিন থেকে সৃষ্ট আগুনে ৪ জন দগ্ধ হয়েছে। তাদেরকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
মোটা অংকের বেতনের প্রলোভনে লিবিয়ায় নিয়ে চট্টগ্রামের চার তরুণকে জিম্মি করেছে একটি চক্র। সেখানে তাদের ওপর চালানো হচ্ছে নির্যাতন। আর সেই নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে পরিবারের কাছে চাওয়া হয়েছে মুক্তিপণ। এ নিয়ে দেশে স্বজনরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
জিম্মিদের অভিভাবকরা এ ঘটনা বুধবার (২৭ মার্চ) বিকেলে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং থানার ওসিকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন।
লিবিয়ায় মানব পাচার চক্রের হাতে জিম্মি চার তরুণ হলেন- আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের মধ্যম গহিরা বাচা মিয়া মাঝির ঘাট এলাকার নুরুল আলমের ছেলে ওয়াসিম, একই এলাকার মৃত মোজাহের মিয়ার ছেলে বোরহান উদ্দিন, আবদুর রহিমের ছেলে জাবেদুর রহিম ও জেবল হোসেনের ছেলে নাঈম উদ্দিন। এদের বয়স ১৯ থেকে ২২ বছরের মধ্যে।
অপহৃতদের স্বজনরা জানান, রায়পুর ইউনিয়নের গহিরা এলাকার মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে জহিরুল ইসলাম লিবিয়ায় নিয়ে চাকরি দেয়ার কথা বলে ফেব্রুয়ারিতে জনপ্রতি ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা নেন। ওই তরুণরা ১৬ ফেব্রুয়ারি লিবিয়ায় পৌঁছেন। লিবিয়ায় তাদের সংঘবদ্ধ একটি চক্রের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর জনপ্রতি ১০ লাখ টাকা দাবি করে তাদের নির্যাতন করা শুরু হয়। মানব পাচার চক্র এরপর নির্যাতনের ভিডিও পাঠানো শুরু করে পরিবারের সদস্যদের কাছে।
স্বজনরা জানান, চট্টগ্রামের জহিরুল ভুক্তভোগীদের টুরিস্ট ভিসায় প্রথমে দুবাই নিয়ে যায়। সেখানে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর থানার বাসিন্দা মো. মিজান নামে এক লোকের হাতে ওদেরকে তুলে দেয়া হয়। মিজান তিনদিন পর তাদের সবার পাসপোর্ট নিজের কাছে নিয়ে নেয়। সাতদিন পর দুবাই থেকে মিসর হয়ে লিবিয়ায় নিয়ে মিজান ওই চার তরুণকে অন্য দালালের হাতে তুলে দেয়।
এদিকে মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) স্বজনদের কাছে কয়েকটি নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ ও অডিও বার্তা পাঠায় দালাল চক্রের সদস্যরা। ভিডিও বার্তায় জনপ্রতি ১০ লাখ টাকা করে মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে। আর ওই টাকা দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংকের চকরিয়া শাখার একটি হিসাব নম্বরও দেয় তারা।
হুমকি দেয়া হয়, মুক্তিপণ দিতে ব্যর্থ হলে জীবন দিতে হবে চার জিম্মিকে। এজন্য বেঁধে দেয়া হয় সময়ও। বুধবার বিকেল ৩টার মধ্যে যতটা পারে তত টাকা দিতেও বলা হয়। টাকা না দিলে এক এক করে লাশ পাঠাবে বলে স্বজনদের জানিয়েছে দালালরা।
অপহৃত ওয়াসিমের মামা নাছির উদ্দিন বলেন, ‘বুধবার বিকেল ৩টার মধ্যে চারজনের জন্য চার লাখ টাকা পাঠাতে বলেছে। বিকেল থেকে মোবাইল ফোনে ইমু ও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে একাধিকবার ফোন করেছে টাকার জন্য। তাদের নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজও পাঠাচ্ছে। আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।’
জাবেদুর রহিমের বাবা আবদুর রহিম বলেন, ‘টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার যা ছিল সব বিক্রি করে ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছি। সেখানে ছেলে প্রতারণার শিকার হয়েছে। এখন ১০ লাখ টাকা দিলে ছেলেকে ফেরত দেবে বলে জানিয়েছে অপরণকারীরা। এই মুহূর্তে এত টাকা কই পাব আমি?’
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইশতিয়াক ইমন জানান, অপহৃতদের স্বজনদের কাছ থেকে তারা লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন:স্বাধীনতা দিবসের এক অনুষ্ঠানে নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ প্রকাশ্যে দুর্নীতি করার ঘোষণা দিয়েছেন।
মঙ্গলবার সকালে লালপুর উপজেলা পরিষদের অডিটোরিয়ামে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যের এক পর্যায়ে দুর্নীতি করার ঘোষণা দেন এ সংসদ সদস্য।
তার বক্তব্যের অংশবিশেষের একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায়।
প্রকাশিত ওই ভিডিওতে আবুল কালাম আজাদকে বলতে শোনা যায়, ‘পাঁচটা বছর (২০১৪-২০১৮) বেতন ভাতার টাকা ছাড়া আমার কোনো সম্পদ ছিল না; আগামীতেও থাকবে না। এবার (দ্বাদশ জাতীয় সংসদ) নির্বাচনে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সেই টাকা আমি তুলব। যেভাবেই হোক তুলবই। এতটুক অনিয়ম আমি করবই। এটুকু অন্যায় করব, আর করব না।’
প্রকাশ্যে সংসদ সদস্যের এমন বক্তব্য বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জেলাজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শারমিন আখতার। নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। উনার বক্তব্য উনি বলেছেন, এখানে আমার কোনো কথা নেই।’
বক্তব্যর বিষয়ে সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমার বক্তব্যে এটা বোঝাতে চেয়েছি যে, অনেকেই এরকম করে। আমার বক্তব্য বিকৃত করে প্রচার করা হচ্ছে।’
এ বিষয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি জেলা শাখার সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সরকারি অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে একজন সংসদ সদস্যের এমন বক্তব্য খুব দুর্ভাগ্যজনক। সংসদ সদস্যের এমন বক্তব্যে তার সহকারী এবং দলীয় নেতা-কর্মীরা দুর্নীতিতে উৎসাহিত হবেন। এটা একদিকে যেমন পরিষ্কারভাবে শপথের লংঘন, অন্যদিকে নির্বাচনি বিধিরও লংঘন।
‘নির্বাচনি আচরণবিধি অনুযায়ী, নির্বাচনি প্রচারকাজে একজন সংসদ সদস্য ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারেন না।’
সংসদ সদস্যের কাছে গঠনমূলক বক্তব্যেরও প্রত্যাশার কথা জানান তিনি।
মানিকগঞ্জ শহরের প্রবেশপথে যানজট নিরসনে ও পথচারীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়েছে।
পৌরসভা কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড ও পৌর সুপার মার্কেটের সামনের সড়ক ও ফুটপাত থেকে শতাধিক হকার ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান করা হয়।
প্যানেল মেয়র তসলিম মিয়া জানান, দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অস্থায়ী কিছু ব্যবসায়ীরা ফুটপাত ও সড়কের একাংশ দখল করে ব্যবসা করে আসছেন। এতে করে শহরে যানজটের সৃষ্টি হয় এবং পথচারীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। পথচারীদের সুবিধার্থে যানজট দূর করতেই এই উচ্ছেদ অভিযান।
উচ্ছেদ অভিযানে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জহিরুল আলম, পৌরসভার প্যানেল মেয়র-২ মো. তসলিম মিয়া ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর রাজিয়া সুলতানাসহ থানা পুলিশ ও পৌরসভার কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
ঝালকাঠির রাজাপুরে নদীর তীর থেকে এক ভ্যানচালকের মরদেহ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ।
স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
প্রাণ হারানো যুবকের মামুন হোসেন, যার বয়স ২৫ বছর। তিনি রাজাপুরের পশ্চিম সাতুরিয়া গ্রামের মোকসেদ আলীর ছেলে।
ভ্যানচালক মামুন দুই দিন আগে নিখোঁজ হয়েছিলেন জানিয়ে রাজাপুর থানার ওসি আতাউর রহমান বলেন, ‘স্থানীয়দের কাছ থেকে সংবাদ পেয়ে সাতুরিয়া গ্রামের ইদুরবাড়ি এলাকায় কচা নদীর তীর থেকে মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নেয়া হয়। লাশের ময়নাতদন্তসহ পরবর্তী সময়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে, তবে এটি হত্যা নাকি দুর্ঘটনা, সেটি তদন্তে বের হবে।’
এ পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, যুবকের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কেউ অভিযোগ করেনি। সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের পূর্ব পূয়ালী গ্রামের আব্দুর রহিম হাওলাদারের একমাত্র ছেলে রাব্বি হাওলাদার।
২৫ বছর বয়সী রাব্বির দুটি কিডনিই নষ্ট। ডাক্তারের পরামর্শ তার কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে হবে। বর্তমানে তার চিকিৎসার জন্য প্রায় ১০ লাখ টাকার প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
রাব্বির কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য এতো টাকা লাগবে শোনার পর থেকেই তার কৃষক বাবা সাহায্যের জন্য ছুটছেন চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ স্থানীয় বিত্তবানদের কাছে। কেন না তার সবকিছুই বিক্রি করে দিলেও এক থেকে দেড় লাখ টাকার বেশি জোগাড় করার সামর্থ্য হচ্ছে না।
রাব্বি বর্তমানে ঢাকার মিরপুর কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এমন অবস্থায় কৃষক বাবা তার সন্তানকে বাঁচাতে দেশবাসীর কাছে সাহায্যের আবেদন করেছেন। দেশের বিত্তবানরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেই হয়ত বেঁচে যাবে তার সন্তান।
রাব্বির পরিবার সূত্রে জানা যায়, রাব্বি হাওলাদার কয়েক মাস আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (সেবাচিম) হাসপাতালে নিয়ে যান তার পরিবার। সেখানে চিকিৎসক তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেন রাব্বির দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। পরে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত চিকিৎসা চলছিল রাব্বির, কিন্তু কিছুদিন আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে মিরপুর কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এরই মধ্যে প্রায় আড়াই লাখ টাকার ওপরে শুধু হাসপাতাল ও ওষুধের বিল দিতে হয়েছে। দরিদ্র এই পরিবারটি আত্মীয়স্বজনসহ সবার সহায়তায় ওই বিল দেয়া সম্ভব হয়।
রাব্বির মা রেভা বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘এভাবে আর কয়দিন চিকিৎসা করাতে পারব জানি না। কারণ আমাদের সামর্থ্য শেষ হয়ে এসেছে। শুধু টাকার অভাবে তাকে ভালো কোনো হাসপাতালেও নিতে পারছি না, কিন্তু কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য অপারেশনের ধকল সহ্য করার মতো সুস্থ অবস্থায় আনা খুব জরুরি।’
রাব্বির বাবা আব্দুর রহিম বলেন, ‘আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে সবার কাছে অনুরোধ করা হচ্ছে আপনাদের ভালোবাসা ও সাহায্য আমাদের খুব প্রয়োজন। কারণ শুধু টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় আমার একমাত্র ছেলে অকালে ঝরে যাবে তা আমার জীবন থাকতে মানতে পারছি না।’
তাকে কেউ সাহায্য করতে চাইলে ০১৯৯৭-২২৮৯৭৫ ও ০১৯৮৭-৩৬৬৫৬৮ (বিকাশ-পার্সোনাল) নাম্বারে পাঠাতে পারেন ও যোগাযোগ করতে পারেন।
আরও পড়ুন:ময়মনসিংহের ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার তিন যাত্রী নিহত হয়েছেন।
এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও চারজন।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে উপজেলার উজানপাড়া এলাকায় বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ত্রিশাল থানার ওসি কামাল হোসেন জানান, বেলা ১১টার দিকে মাদানী সিএনজি পাম্প সংলগ্ন উজানপাড়ায় একটি বাস ইউটার্ন নেয়ার সময় অটোরিকশাকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুই বছর বয়সী এক মেয়ের মৃত্যু হয়। ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে ৩৩ বছর বয়সী অটোরিকশার চালক শরিফুল ইসলাম ও অন্য একজনের মৃত্যু হয়।
তিনি জানান, এ দুর্ঘটনায় আহত চারজনের মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে, যারা হলেন ত্রিশালের রুদ্র গ্রামের জালাল উদ্দিনের ৪৫ বছর বয়সী স্ত্রী মনি আক্তার ও একই গ্রামের শামীম আহমেদের ৪৫ বছর বয়সী স্ত্রী সাহিদা আক্তার।
মন্তব্য