করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এরই মধ্যে তিনটি টিকা কিনতে হুড়োহুড়ি করছে বেশির ভাগ দেশ। বাজারে এখন মোট চারটি টিকা। কিন্তু যেসব টিকা এখনও আসেনি বা এখনও গবেষণার মধ্যে আছে, সেগুলোর ভাগ্যে কী হবে? বেশ কিছু টিকার গবেষণা প্রায় শেষ পর্যায়ে। টিকার দৌড়ে এসব টিকা কি হেরে গেছে?
ফাইজার ও বায়ো-এনটেক উদ্ভাবিত টিকার দিকেই সবচেয়ে বেশি ঝোঁক সবার। এরপরই উচ্চারিত হচ্ছে মডার্নার টিকা। অক্সফোর্ডের টিকা শুরুতে সবচেয়ে এগিয়ে থাকলেও এখন কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন: ফাইজার, নাকি মডার্না: কোন টিকা ভালো?
গত বছরের শেষ দিকে চীনের উহান থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই এই ভাইরাস প্রতিরোধে টিকা উদ্ভাবনে উঠেপড়ে লাগে দেশগুলো। সাফল্য আসতে দেরি হয়নি।
সবার আগে আগস্টে করোনা প্রতিরোধী টিকা উদ্ভাবনের ঘোষণা দেয় রাশিয়া। কিন্তু ‘স্পুতনিক ভি’ নামের টিকাটি নজর কাড়তে পারেনি।
এই টিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে পশ্চিমা বিশ্ব। তাদের দাবি পর্যাপ্ত পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই ছাড়া হয়েছে টিকাটি। একই অবস্থা চীন উদ্ভাবিত সিনোভ্যাক টিকার ক্ষেত্রেও।
করোনার টিকা ইস্যুটি গরম হয়ে ওঠে নভেম্বরের মাঝামাঝিতে। সপ্তাহের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দুটি প্রতিষ্ঠান করোনারোধে কার্যকর দুটি টিকার ঘোষণা দেয়।
এর মধ্যে প্রথম টিকাটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফাইজার ও জার্মানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বায়ো-এনটেকের যৌথ প্রচেষ্টায় উদ্ভাবিত। অপরটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওষুধ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান মডার্নার একক প্রচেষ্টায় উদ্ভাবিত।
টিকা দুটির ডামাডোলের মধ্যে যেন হারিয়ে যেতে বসেছে পাইপলাইনে থাকা বাকি টিকাগুলোর খবর।
যুক্তরাষ্ট্রের টিকা প্রয়োগের পর্যায়ে আসতেও দেরি হয়নি। শুরুটা করে যুক্তরাজ্য। জনগণের মাঝে সবার আগে ফাইজারের টিকা প্রয়োগ শুরু করে ইউরোপের দেশটি। একই টিকা প্রয়োগ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, মেক্সিকো, চিলি, সৌদি আরব, কুয়েতসহ অনেক দেশ। মডার্নার টিকা নিতেও আগ্রহ প্রকাশ করেছে অনেকে।
আর্জেন্টিনা নিয়েছে কেবল রাশিয়ার স্পুতনিক ভি টিকা। আর যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজারের টিকার পাশাপাশি চীন উদ্ভাবিত সিনোভ্যাক নিচ্ছে তুরস্ক।
তাহলে অন্যান্য টিকার চাহিদা কী শেষ হয়ে গেল?
আরও পড়ুন: করোনার টিকা নিলেন যুবরাজ সালমান
না, শেষ হয়ে যায়নি। বাকি টিকাগুলোও বাজারে আসার জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজারে সব ধরনের টিকাই প্রয়োজন হবে। কারণ একেক টিকার কার্যকারিতা একেক রকম।
বাকি টিকাগুলোর মধ্যে ব্যবহার পর্যায়ের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড উদ্ভাবিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা। এটি করোনা ঠেকাতে ৯০ শতাংশ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। এবার বিভিন্ন দেশে প্রয়োগের জন্য অনুমোদনের অপেক্ষায়।
এই টিকা পেতে অপেক্ষায় আছে অনেক দেশ। এই তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশও। ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে অক্সফোর্ডের টিকার তিন কোটি ডোজ আনতে চুক্তি করেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মা। নতুন বছরের শুরুতেই ব্যবহারের পর্যায়ে পাওয়া যেতে পারে এই টিকা।
বাজারে টিকা ছাড়ায় জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ উৎপাদনকারী জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান জনসন অ্যান্ড জনসন। এ জন্য ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পরিধি কমিয়ে আনা হয়েছে।
আরও পড়ুন: সরকারের চিন্তায় মডার্না ও ফাইজার নেই
ট্রায়ালের চূড়ান্ত তথা তৃতীয় ধাপে ৬০ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর ওপর টিকাটির পরীক্ষা চালানোর কথা ছিল। সেটা কমিয়ে আনা হয়েছে ৪০ হাজারে। সবকিছু ঠিক থাকলে ফেব্রুয়ারি দিকে টিকাটি ব্যবহারে অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হতে পারে।
কার্যকর টিকা ছাড়ার দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ উৎপাদনকারী আরেক প্রতিষ্ঠান নোভাভ্যাক্স। যুক্তরাজ্যে এ টিকার শেষ ধাপের একটি ট্রায়াল হয়েছে। এই ট্রায়ালের তথ্য-উপাত্ত হাতে চলে আসতে পারে নতুন বছরের শুরুর দিকে। এ ছাড়া চলতি মাসেই বড় পরিসরের ট্রায়ালে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।
চীনের রাষ্ট্রীয় ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিনোফার্ম তাদের টিকার তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল শেষ করেছে। নিজেদের দেশে ট্রায়ালের পর টিকাটি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইনও। মধ্য প্রাচ্যের দেশ দুটি জানিয়েছে, টিকাটি কোরোনা রোধে কার্যকর ৮৬ শতাংশ।
এই টিকা সীমিত পরিসরে ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হয়েছে চীনে। যদিও সিনোফার্ম তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালের ফল এখনও ঘোষণা করেনি।
ভারতেও একাধিক টিকার ট্রায়াল চলছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের ছয়টি টিকা বিভিন্ন পর্যায়ের ট্রায়ালে আছে। এর মধ্যে দৌড়ে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন নামক টিকা।
নভেম্বরে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চালু হয়েছে কোভ্যাক্সিনের। জরুরি প্রয়োজনে টিকাটি ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে ভারতের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়ায় আবেদন করা হয়েছে।
এখন পর্যন্ত কোভ্যাক্সিনের কোনো ট্রায়ালের ফল প্রকাশ করা হয়নি। তবে ভারত বায়োটেক থেকে দাবি করা হচ্ছে টিকাটি করোনা রোধে ৬০ শতাংশ কার্যকর।
করোনাভাইরাসের সহজলভ্য টিকা উদ্ভাবনের চেষ্টায় আছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনোভায়ো ফার্মাসিউটিক্যালস। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান আরএনএ জিনকাঠামোর টিকা উদ্ভাবন করলেও তারা করছে ডিএনএ জিনকাঠামোর টিকা। এই টিকা সাধারণ তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যাবে এক বছরের বেশি সময়। কিন্তু টিকাটি মাত্র ট্রায়ালের দ্বিতীয় ধাপে আছে।
আরও পড়ুন: অ্যালার্জি থাকলে ফাইজারের টিকায় মানা
করোনার টিকার ট্রায়ালে দুঃসংবাদেরও ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে আছে ফ্রান্সের সানোফি ও ব্রিটেনের গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন। চলতি মাসের শুরুর দিকে তারা জানায়, টিকা উৎপাদনে একাধিকবার ট্রায়াল চালিয়েও সাফল্য আসেনি। ট্রায়ালে দেখা যায়, তাদের টিকা পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সাধারণত কোনো টিকার অন্তত ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকারিতা দেখতে চায়। আর যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান এফডিএ এই মাত্রা ঠিক করেছে ৫০ শতাংশ।
আরও পড়ুন:দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মন্তব্য