করোনার দ্বিতীয় ধাক্কার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ছয় দিনের ব্যবধানে অনুমোদন পেয়েছে ফাইজার ও মডার্নার টিকা। এর মধ্যে ১১ ডিসেম্বর অনুমোদন পাওয়া ফাইজারের টিকা দেয়া শুরু হয়েছে দেশটির স্বাস্থ্যকর্মী ও নার্সিং হোমের বাসিন্দাদের।
কার্যকর প্রথম টিকা হিসেবে ফাইজারের টিকা যখন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের বাজারও দখল করে ফেলছে, ঠিক তখনই এর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে মডার্নার টিকা।
প্রশ্ন হচ্ছে- এই দুই টিকার কোনটি কেমন, শেষপর্যন্ত কোনটি পাবে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্যতা?
ফাইজার ও মডার্নার টিকার বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করা হয়েছে সায়েন্সনিউজের একটি প্রতিবেদনে। নিউজবাংলার পাঠকের জন্য সেটি কিছুটা সংক্ষিপ্ত আকারে বাংলায় অনুবাদ করেছেন মেহরিন জাহান।
যুক্তরাষ্ট্রে এবার দ্বিতীয় করোনাভাইরাস টিকা (মডার্নার টিকা) কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্ত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) গত ১৮ ডিসেম্বর ১৮ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সের ব্যক্তিদের দেহে জরুরি পরিস্থিতিতে মডার্নার টিকা প্রয়োগের অনুমোদন দেয়। এই সিদ্ধান্তটি আসে এই টিকার চলমান ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তথ্য পর্যালোচনা শেষে বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সম্মতির প্রেক্ষাপটে।
এই টিকাটি এরই মধ্যে বাজারে থাকা ফাইজার ও তাদের জার্মান অংশীদার বায়োএনটেকের টিকার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে, যেটি যুক্তরাষ্ট্রে ১১ ডিসেম্বর অনুমোদন পায়। ফাইজারের টিকা এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে স্বাস্থ্যসেবা কর্মী ও নার্সিংহোমে বসবাসকারীসহ উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মাঝে প্রয়োগ শুরু হয়েছে।
এবার দেখা যাক দুটি টিকা কীভাবে একে অপরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।
দুটি টিকাই ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের সুরক্ষা দেবে
মডার্না ও ফাইজার- দুটি প্রতিষ্ঠানের টিকাই ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে।
পর্যালোচনার জন্য এফডিএকে সরবরাহ করা নথিতে মর্ডানা জানায়, তাদের তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলেছে ৩০ হাজারের বেশি মানুষের ওপর, যেখানে টিকার ৯৪.১ শতাংশ কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে। এর আগে গত ৩০ নভেম্বর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জৈবপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি দুই সপ্তাহের ব্যবধানে টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেয়া স্বেচ্ছাসেবীদের অবস্থা সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করে। একইভাবে দেখা গেছে, ফাইজারের টিকা ৯৫ শতাংশ কার্যকারিতা নিয়ে কোভিডের লক্ষণগুলো প্রতিরোধে সক্ষম।
এর কারণ ব্যাখ্যা করে ডিউক ইউনিভার্সটির সুজানা নাগি বলছেন, ‘দুটি টিকার তুলনামূলক ফলাফল একই রকম হওয়ার কারণ সম্ভবত এটাই যে, এগুলোর মধ্যে পার্থক্যের চেয়ে মিলই বেশি। আমি মনে করি, এজন্যই আমরা প্রথম দিকের কার্যকারিতার ক্ষেত্রে একই ধরনের ফল দেখতে পাচ্ছি।’
১৬ বছর থেকে ৮৯ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে ফাইজারের টিকা বেশ কার্যকর। আর মডার্নার টিকা ১৮ থেকে ৬৪ বছর পর্যন্ত বয়সীদের ক্ষেত্রে ৯৫.৬ শতাংশ কার্যকর, তবে ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে এর কার্যকারিতা ৮৬.৪ শতাংশে নেমে আসে।
মডার্নার সংক্রামক রোগ বিভাগের প্রধান জ্যাকুলিন মিলার গত ১৭ ডিসেম্বর এফডিএর উপদেষ্টা কমিটির শুনানিতে অবশ্য দাবি করেন, এই পার্থক্যটি অল্পসংখ্যক বয়স্ক ব্যক্তির ওপর প্রয়োগের (ভ্যাকসিন গ্রুপ থেকে চার জন এবং প্লাসেবো গ্রুপ থেকে ২৯ জন) ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়েছে, কাজেই এটি পরিসংখ্যানগত দিক থেকে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়।
তিনি বলেন, ‘বয়স্কদের মধ্যে মডার্নার টিকার কার্যকারিতা সামগ্রিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে এর কার্যকারিতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’
'প্লাসেবো গ্রুপ' হলো, যাদের কোনো ধরনের অবহিত না করে টিকাসদৃশ ওষুধ দেয়া হয়, কিন্তু সেটিতে টিকা থাকে না। অর্থাৎ এই গ্রুপটি বাস্তবে টিকার অধীনে না এলেও মানসিকভাবে ভাবতে থাকে তারা টিকা পেয়েছে।
প্রথম ডোজের পর মডার্নার টিকা বেশি সুরক্ষা দিতে পারে
দুটি টিকার ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ সুরক্ষার জন্য গ্রহিতাদের দুটি ডোজ নেয়ার প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে প্রাথমিক প্রমাণগুলি ইঙ্গিত দিচ্ছে, প্রথম ডোজের দুই সপ্তাহের মধ্যেই মডার্নার টিকা কোভিডের লক্ষণগুলো প্রতিরোধে ফাইজারেরটির চেয়ে ভালো কাজ করে। ফাইজারের ট্রায়ালে প্রথম ডোজ দেয়ার পরে গ্রহিতাদের মধ্যে ভ্যাকসিন গ্রুপের ৩৯ জনের এবং প্লাসেবোতে ৮২ জনের কোভিড ধরা পড়ে, যা টিকার প্রথম ডোজের ৫২.৪ শতাংশ কার্যকারিতার প্রমাণ দেয়। অন্যদিকে মডার্নার প্রথম ডোজের কার্যকারিতা ছিল ৮০.২ শতাংশ।
তবে মডার্নার টিকার ডোজের এই কার্যকারিতা অপেক্ষাকৃত কম সংখ্যক গ্রহিতার ওপর প্রয়োগ করে পাওয়া গেছে। এছাড়া, প্রায় সব গ্রহিতা প্রথম টিকার পর দ্বিতীয় ডোজও গ্রহণ করেছিলেন, ফলে প্রথম ডোজের কারণেই তারা সুরক্ষা পেয়েছেন কিনা- সেটা বলা বেশ কঠিন।
মডার্নার টিকার প্রাথমিক ফল ইঙ্গিত দিচ্ছে, এটি লক্ষণযুক্ত কোভিডের পাশাপাশি লক্ষণবিহীন সংক্রমণ ঠেকাতেও সক্ষম
কিছু প্রাথমিক তথ্য দেখাচ্ছে, মডার্নার টিকা লক্ষণযুক্ত কোভিড সংক্রমণের পাশাপাশি লক্ষণবিহীন উপসর্গও নিরাময় করতে পারে। করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধ এবং কমিউনিটিতে ইমিউনিটি তৈরির জন্য জনগোষ্ঠীর মধ্যে লক্ষণবিহীন সংক্রমণ প্রতিরোধ খুবই জরুরি।
মডার্নার ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় প্লাসেবো পাওয়া ১৪ হাজারের বেশি মানুষের মধ্যে ৩৮ জন প্রথম ও দ্বিতীয় ইঞ্জেকশনের মধ্যবর্তী সময়ে লক্ষণবিহীন কোভিড পজেটিভ হিসেবে শনাক্ত হন। অন্যদিকে, টিকা পাওয়া বাকিদের ক্ষেত্রে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের মধ্যবর্তী সময়ে লক্ষণবিহীন আক্রান্ত শনাক্ত হন মাত্র ১৪ জন। এতে প্রমাণিত হয় টিকার মাধ্যমে লক্ষণবিহীন সংক্রমণ কিছুটা হলেও ঠেকানো গেছে।
অন্যদিকে, ফাইজার এখনও এমন কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি, যার মাধ্যমে বোঝা সম্ভব তাদের টিকাও লক্ষণবিহীন সংক্রমণ ঠেকাতে সক্ষম। তবে নাগি মনে করছেন, ‘দুটি টিকার ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো পার্থক্য দেখা যাবে বলে বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই।’
দুটি টিকার ক্ষেত্রেই এমআরএনএ জিন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যেটি মানব কোষকে করোনাভাইরাস স্পাইক প্রোটিন তৈরিতে সাহায্য করে, যে প্রোটিনকে অপসারণ করেই ভাইরাস কোষের ভেতরে আস্তানা গাড়ে। টিকা পাওয়ার পর দেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা ভাইরাসের স্পাইক সম্পর্কে সচেতন হয়ে সংক্রমণ প্রতিরোধের সক্ষমতা অর্জন করে।
দুটি টিকারই একই ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, যদিও গুরুতর অ্যালার্জি সম্পর্কে প্রশ্ন থেকেই যায়
প্রতিটি টিকার ক্ষেত্রে ইনজেকশনের পরে শরীরে একই ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির ভাইরাল সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ আন্দ্রিয়া কক্স বলেন, ‘দুটি টিকার সাধারণ প্রতিক্রিয়া হলো বাহুতে ব্যথা। এছাড়া, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বিশেষ করে দ্বিতীয় ডোজের পর ক্লান্তি, ঠান্ডা লাগা, শরীর ব্যথা বা মাথা ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা গেছে।’
কক্স বলছেন, ‘ফাইজারের চেয়ে মডার্নার টিকায় দেহে ফোলাভাবসহ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মাত্রা খানিকটা বেশি। এর কারণ হতে পারে দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দ্রুত বাড়িয়ে তোলার জন্য মডার্না তাদের টিকার প্রতিটি ডোজে বেশি পরিমাণে এমআরএনএ যোগ করেছে।’
অন্যদিকে নাগির মত হলো, ‘টিকার ক্ষেত্রে এ ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অস্বাভাবিক নয়। বাস্তবতা হলো- টিকা আপনার শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে নতুন ধরনের শক্তি দেয়, আর সেটাই সবার কাম্য।’
দুটি টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালেই গ্রহিতার মধ্যে অস্থায়ী দুর্বলতা বা মুখের পেশী বিবশ হওয়ার মতো বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। এগুলো খানিকটা উদ্বেগের জন্মও দিয়েছে। তবে কক্স বলেছেন, এখনও দুটি টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা বিচারে এই ঘটনাগুলো বিরল।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে ফাইজারের টিকা উন্মুক্ত হওয়ার পর এর গ্রহিতা কিছু স্বাস্থ্যসেবা কর্মী আরও তীব্র পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হয়েছেন, যেগুলো ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সময়ে দেখা যায়নি। আলাস্কার তিন জনের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যে দুজন অ্যালার্জির সমস্যায় ভুগেছেন। এমন প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) অ্যালার্জির সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতার পরামর্শ দিয়েছে।
মডার্নার টিকা গ্রহণকারীরাও একই ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হবেন কিনা- সেটি এখনও পরিষ্কার নয়। গত ১৭ ডিসেম্বর এফডিএ-এর শুনানিতে মডার্নার প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তাল জ্যাকস বলেছিলেন, দুটি টিকার ন্যানো পার্টিকেল আলাদা, এটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে ব্যবধান তৈরি করতে পারে। আর সত্যিই সেটি হলে মডার্নার টিকা ফাইজারের টিকার মতো অ্যালার্জির জটিলতা তৈরি নাও করতে পারে। তবে কিছু বিশেষজ্ঞের সন্দেহ, অ্যালার্জির কারণ হলো পলিথিলিন গ্লাইকল নামের ন্যানো পার্টিকেল, যা দুটি টিকাতেই রয়েছে।
মডার্নার টিকা সংরক্ষণে খুব বেশি ঠান্ডার প্রয়োজন নেই, তাই বিতরণ সহজ
দুটি টিকার একটি বড় পার্থক্য রয়েছে সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায়। ফাইজারের টিকা অবশ্যই অতি শীতল ফ্রিজারে রাখতে হবে, যেখানে তাপমাত্রা হবে অন্তত মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্যদিকে মডার্নার স্ট্যান্ডার্ড ফ্রিজারের তাপমাত্রা মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া মডার্নার টিকা একটি ফ্রিজে এক মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা সম্ভব। ফলে এই টিকা বিতরণ ফাইজারের চেয়ে অনেক সুবিধাজনক।
নাগি বলছেন, ‘এ ধরনের সুবিধা আমাদের সবার জন্য বেশ সুবিধাজনক।’
কিছু কিছু হাসপাতাল দীর্ঘ সময়ের জন্য অতি শীতল পরিবেশে ফাইজারের টিকা সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে। তবে যাদের সে সুবিধা নেই, সেই ক্লিনিকগুলো মডার্নার শটের দিকে ঝুঁকতে পারে। অন্যদিকে ভবিষ্যতে সম্ভবত অন্য আরও সংস্থা- যেমন অ্যাস্ট্রাজেনেকা বা জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকাও আসবে, যেগুলো আরও বেশি দিন ফ্রিজে সংরক্ষণ করা যাবে।
আরও পড়ুন:দেশে গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত একদিনে আরও ১০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। ১৯৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে এই রোগী শনাক্ত হয়। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ৭৩ জনে। এ সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন করে করোনা আক্রান্ত ১০ জনসহ চলতি বছর এখন পর্যন্ত মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫২৮ জনে। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় একজনের মৃত্যু হওয়ায় ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৯ হাজার ৫১৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশে করোনাভাইরাস মহামারির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ। আর গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ২ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ওই বছরের ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। ২০২১ সালের ৫ ও ১০ আগস্ট দুদিন করোনায় সর্বাধিক ২৬৪ জন করে মারা যান।
গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায় দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতো ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গত ৩ দিনে ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হয়েছে ১০ জন। গত ২২ থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত এই ৩ দিনে ১০ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়।
কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. হাবিবুর রহমান জানান, গত রোববার থেকে আমরা সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুরোগীর তথ্য সংগ্রহ করে জেলা সিভিল সার্জন অফিসে প্রেরণ করেছি। তিনি জানান, আমাদের কাছে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী গত রোববার কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১ জন, হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড ডায়াবেটিক সেন্টারে ২ জন, রেডিয়াম ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ২ জন, হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ২ জন ডেঙ্গুরোগী পাওয়া গেছে।
কাপাসিয়া উপজেলার সরকারি - বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই রক্ত পরীক্ষা করেছেন। রক্ত পরীক্ষার পর এক দিনে ৫ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। ২৩ জুন, সোমবার কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১ জন, রেডিয়াম ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ১ জন, ইরাম ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ১জনসহ মোট ৩ জন ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হয়েছে। তাছাড়া গত মঙ্গলবার হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড ডায়াবেটিক সেন্টারে ২ জন মহিলার রক্ত পরীক্ষার পর ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে নতুন করে কারো মৃত্যু হয়নি। বুধবার (২৫ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১৯ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪১২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ।
দেশে এখন পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ৬৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১৯ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট ২৯ হাজার ৫১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এডিশ মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মুত্যৃর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। চলতি বছরে ডেঙ্গু যেনো ভয়বহ রূপ ধারণ করতে যাচ্ছে।
এদিকে গত মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩২৬ জন। সবচেয়ে বেশি ১১৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন বরিশাল বিভাগে। এই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বরিশাল বিভাগে ১১৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৩ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৩ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৪৫ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ২৬ জন, খুলনা বিভাগে ১৬ জন, রাজশাহী বিভাগে ২৯ জন, ময়মনসিংহে ৫ জন ও সিলেট বিভাগে একজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১৯ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৭ হাজার ৭৪৯ জন। চলতি বছরের ২৫ জুন পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৮৭০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৩৬ জনের।
২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন মোট এক লাখ এক হাজার ২১৪ জন এবং মৃত্যুবরণ করেন ৫৭৫ জন। এর আগের বছর ২০২৩ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট এক হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়। ওই বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন মোট তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন।
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের হার বেড়েই চলেছে। সোমবার (২৩ জুন) সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় কারো মৃত্যু হয়নি। আর এই সময়ের মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৯৪ জন। আর চলতি সপ্তাহের এই কয়েকদিনে রোগটিতে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের।
সোমবার (২৩ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের ঘটনা ঘটে। এ সময়ের মধ্যে বিভাগটিতে আক্রান্ত হয় সর্বোচ্চ ১৫৭ জন।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ভর্তি হয়েছেন ৩৯৪ জন। নতুন আক্রান্তের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৯২ জন। আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩০২ জন।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, চলতি বছর আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৫০ শতাংশ পুরুষ এবং ৫০ শতাংশ নারী।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৮ হাজার ৫৪৪ জন। এর মধ্যে ৫৫ দশমিক ৬ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ নারী।
বরিশাল বিভাগের বরগুনায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বৃদ্ধা রাবেয়া (১০০) মারা গেছেন। গতকাল সোমবার ভোরে তিনি বরগুনা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। সরকারি হিসাব অনুযায়ী এ নিয়ে বিভাগে ডেঙ্গুতে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে বরগুনার বাসিন্দাই রয়েছে ৬ জন। এদিকে গত রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ১২৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। একই সময়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ১২৯ জন।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, সোমবার ভোরে মৃত্যু হওয়া শতবর্ষী রাবেয়া বেগম বরগুনা সদরের বাসিন্দা। তাকে গত রোববার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
স্বাস্থ্য বিভাগে তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে ১৩ জন ভর্তি হয়েছে। এছাড়া বরিশাল জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে ৮ জন।
পটুয়াখালী জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ৭ জন, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪ জন, ভোলা সদর হাসপাতালে ৫ জন ভর্তি হয়েছে। পিরোজপুরে ১৬ জন ও বরগুনায় ৭৩। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় ঝালকাঠিতে কেউ আক্রান্ত হয়নি।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশংকাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরুতে হবে। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশে-পাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে ঊর্ধ্বগতির আক্রান্তের হারের মধ্যে দেশে আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার (২২ জুন) সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এই মৃত্যু হয়। আর এই সময়ের মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৯২ জন।
সোমবার (২৩ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা সিটি করপোরেশন ও বরিশাল বিভাগে এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। আর আক্রান্তের হারে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে বরিশাল বিভাগ। এই সময়ের মধ্যে বিভাগটিতে নতুন করে মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১২৬ জন।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ভর্তি হয়েছেন ৩৯২ জন। নতুন আক্রান্তের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৮৬ জন। আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩০৬ জন।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, চলতি বছর আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৫০ শতাংশ পুরুষ এবং ৫০ শতাংশ নারী।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৮ হাজার ১৫০ জন। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশ পুরুষ এবং ৪১ শতাংশ নারী।
মন্তব্য