হাতে বুম নিয়ে মুদি দোকানের দিকে এগিয়ে এলেন একজন। পরনে সালোয়ার কামিজ। তার পেছনে মোবাইল ক্যামেরা হাতে আছেন আরেকজন। লাইভ ভিডিও করছেন।
আগে এ ধরনের কাউকে এগিয়ে আসতে দেখলে দোকানদার বিরক্ত হতেন। তাড়িয়ে দিতে চাইতেন। বেশির ভাগ সময়ই তারা আসতেন টাকার দাবিতে। তবে এবার তারা এসেছেন ভিন্ন রূপে। তাদের এই রূপে দেখে দোকানদারও বিস্মিত।
ক্যামেরা-বুম হাতে আসা দুজনই ট্রান্সজেন্ডার। সমাজে যাদের পরিচয় ‘হিজড়া’ হিসেবে। তারা নিজেরা একটা ফেসবুক পেজ খুলেছেন। নাম দিয়েছেন ‘সিলেট হিজড়া টিভি’। এই ‘টিভি’র হয়েই শাটডাউনে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দুঃখ-কষ্টের কথা জানতে ক্যামেরা-বুম নিয়ে বের হয়েছেন তারা।
‘সিলেট হিজড়া টিভি’র স্লোগান- ‘আমরা আমাদের কথা বলব’। নিজেদের কথা তুলে ধরতেই এই ফেসবুক পেজ খুলেছেন সিলেটের ট্রান্সজেন্ডার কয়েকজন নাগরিক। বুধবার বিকেলে সিলেটের সুরমা নদীর তীরের চাঁদনীঘাটে নিজেরাই তাদের এই ‘টিভির’ উদ্বোধন করেন।
বুম হাতে দোকানে গিয়েছিলেন যিনি তার নাম কারিশমা। নিজেকে পরিচয় দেন ‘কারিশমা হিজড়া’ হিসেবে। বৃহস্পতিবার ‘সিলেট হিজড়া টিভি’ পেজে গিয়ে দেখা যায়- একাধিক লাইভ ভিডিও দেয়া রয়েছে পেজে। বুধবার বিকেল থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে এবং বিভিন্ন বিষয়ে এসব লাইভ করা হয়েছে। সবগুলোতেই ক্যামেরার সামনে রয়েছেন কারিশমা।
নিজেরা একটি ‘টিভি’ খোলা প্রসঙ্গে কারিশমা বলেন, ‘আমাদের কথা কেউ বলে না। আমরা মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত। সাংবাদিকরা অনেক বিষয়ে লেখালেখি করে কিন্তু আমাদের বিষয় সেইভাবে তুলে ধরে না। তাই আমরা নিজেরাই একটি টিভি চালু করেছি। যেখানে আমরা আমাদের বিষষয়গুলো তুলে ধরব। আমাদের অধিকারের কথা বলব। আমাদের সম্পর্কে মানুষের মনে অনেক ভুল ধারণা আছে, এগুলো ভাঙার চেষ্টা করব। তবে কেবল আমাদের বিষয় না, আশপাশের সব বিষয় আমরা আমাদের টিভির মাধ্যমে তুলে ধরব।
কারিশমা বলেন, ‘আমরা সাংবাদিক না তবে সাংবাদিক হওয়ার চেষ্টা করব। আমরা লেখপড়া করে সাংবাদিক হইনি। আমাদের ভুলত্রুটি থাকবে। আপনারা ক্ষমা করবেন। সিলেটের যে হিজড়া আছে, আমরা তাদের জীবনমান তুলে ধরব।’
এই ফেসবুক পেজ, যাকে তারা টিভি বলছেন, এটির চেয়ারম্যান ‘রানী মুখার্জি হিজড়া’। নিজের শিষ্যদের নিয়ে সিলেট নগরের আম্বরখানা এলাকায় থাকেন রানী। ‘সিলেট হিজড়া বাউল সংগঠন’ নামে একটি সংগঠনেরও চেয়ারম্যান তিনি।
মাস দুয়েক ধরেই এই ‘টিভি’ চালুর পরিকল্পনা করছেন বলে জানান রানী। সিলেটে প্রায় ৫০০ ট্রান্সজেন্ডার রয়েছেন। এর মধ্যে ২০ জনের মতো এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত আছেন জানিয়ে রানী বলেন, ‘‘ট্রান্সজেন্ডারদের মধ্যে যারা শিক্ষিত তাদের এই ‘টিভির সাংবাদিক’ হিসেবে যুক্ত করা হবে।‘’
হঠাৎ টিভি চালুর পরিকল্পনা এলো কী করে, জানতে চাইলে রানী বলেন, ‘আমরা খুব কষ্টে আছি। আমাদের কথা কেউ বলে না। আমরা আমাদের কথা তুলে ধরতে চাই। এ কারণে এই চ্যানেল করেছি।
‘আমাদের কিছু সদস্য চাকরি, কয়েকজন ব্যবসা আর বেশির ভাগ সদস্যই ‘হিজড়া সংস্কৃতি’ পালন করে জীবিকা নির্বাহ করে। হিজড়া সংস্কৃতি হলো দোকানে দোকানে ঘুরে টাকা সংগ্রহ করা। কিন্তু শাটডাউনে দোকানপাট বন্ধ থাকায় তাদের আয়-রোজগার একেবারে বন্ধ। ফলে খেয়ে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। বিকল্প আয়ের চিন্তা থেকেও এই টিভি করা হয়েছে।’
নিজেদের কথা, সমাজের কথা তুলে ধরা হলো, আবার কিছু আয়ও হলো- যুক্ত করেন রানী।
রানী বলেন, ‘এই টিভির মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রতিভার কথা তুলে ধরব। আমাদের ভয়েস রেইজ করতে হবে। না হলে হবে না।’
দর্শকদের তিনি বলেন, ‘সবাই আমাদের সহযোগিতা করবেন। আমরাও আপনাদের মতো মানুষ। আমাদের অবহেলা করবেন না।’
‘সিলেট হিজড়া টিভি’র বুধবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ফেসবুকে নিজেদের পেজ থেকে লাইভ সম্প্রচার করা হয়। এতে এর সাথে যুক্ত কয়েকজন কথা বলেন।
এতে ‘সূচনা হিজড়া’ পরিচয় দেয়া একজন বলেন, ‘দোকানপাট বন্ধ। আমরা এখন কী খাব? কোনো কালেকশন নাই। তাই আমরা টিভি খুলেছি। সাংবাদিক হয়েছি। আমরা ছোট ছোট সংবাদ তৈরি করব।’
ফেসবুকে সম্প্রচারিত ওই লাইভ ভিডিওতে অনেকেই তাদের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে উৎসাহমূলক মন্তব্য করেছেন।
লিয়াকত হোসেন নামে একজন লিখেছেন- ‘নিজেদের অধিকার আদায়ের পাশাপাশি মহৎ কাজে এগিয়ে চলো, শুভকামনা রইল আগামী দিনের পথ চলার।’
হাফিজ বাসিত নামে আরেকজন লিখেছেন- ‘সমাজ আপনাদের অনেক অবহেলা করে। আমি চাই আপনারা নিজে থেকে কোনো একটা কিছু করেন। যাতে সমাজের বোঝা না হয়ে সমাজের মানুষের গৌরব হতে পারেন। অনেক বাধাবিপত্তি আসবে কিন্তু থেমে থাকবেন না। সত্যি তোমাদের জন্য অনেক মায়া হয়। তোমাদের জীবন যাপন নিয়ে ভাবি। আল্লাহ চাইলে কি করতে পারেন। তোমাদের জীবন যাত্রার মান আরও উন্নত হোক এই দোয়াই করি। শুভ কামনা রইল।’
ওই ভিডিওর কমেন্টে আমিনুর রহমান নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন- ‘সবাই এখানে লাইক কমেন্ট এবং শেয়ার করেন। ওদের আয়- রোজগার বাড়লে সমাজের উপকার হবে।’
সিলেটে সম্প্রতি ফেসবুক পেজ খুলে তাকে টিভি চ্যানেল নাম দিয়ে নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে দাবি করার প্রবণতা বেড়েছে। এ নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া রয়েছে পেশাদার সাংবাদিকদের মধ্যে। ‘ফেসবুক টিভি’র কারণে পেশাগত দায়িত্ব পালনে গিয়ে নিজেরা বিপাকে পড়ার কথাও জানিয়েছেন অনেকে।
সম্প্রতি কাগজপত্রবিহীন মোটরসাইকেল আটকের পর ফেসবুকে লাইভ করে ব্যাপক সমালোচিত হন ‘পিকে টিভি’ নামে একটি ফেসবুক পেজের ‘সম্পাদক’ ফয়ছল কাদির। দুদিন পর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনার পর থেকে সিলেটে ‘ফেসবুক টিভি’ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। এর মধ্যেই চালু হলো- ‘সিলেট হিজড়া টিভি’।
ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন সিলেটের সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান রিপন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন দেখা যাচ্ছে ফেসবুকে পেজ খুলেই অনেকে টিভি নাম দিয়ে দিচ্ছেন। কথা বলতে পারেন না, সাংবাদিকতার নীতিনৈতিকতা জানেন না- তারাও ফেসবুকের কল্যাণে টিভির মালিক-সম্পাদক হয়ে যাচ্ছেন। যা মূলধারার গণমাধ্যমের জন্যও বড় হুমকি। তারা অনেক সময় ভুল তথ্য প্রচার করছেন। যা রাষ্ট্র এবং সাংবাদিকতার জন্যও ক্ষতিকর।
‘আমি মনে করি, সরকারের এই বিষয়ে একটি নীতিমালা করা প্রয়োজন। যাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে কেউ গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে নিজেকে জাহির করতে না পারে।’
‘সিলেট হিজড়া টিভি’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ট্রান্সজেন্ডার মানুষের প্রতি আমাদের যথেষ্ট সহানুভূতি আছে। আমরা চাই তারা সমাজের মূল স্রোতে আসবেন। মূল ধারার গণমাধ্যমের সঙ্গে তারা যুক্ত হবেন। সেখানে আরও বেশি বেশি নিজেদের অধিকার ও বঞ্চনার কথা বলবেন।’
তীব্র গরম থেকে বাঁচতে ও বৃষ্টির আসায় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় নেচে গেয়ে ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছেন স্থানীয়রা। লোকজন।
উপজেলার চন্দ্রখানা বালাটারি গ্রামে শনিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বিয়ের অনুষ্ঠান চলে।
ওই এলাকার বাসিন্দা সাহাপুর আলীর স্ত্রী মল্লিকা বেগমের আয়োজনে বিয়েতে অসংখ্য নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। নাচ গানের মধ্যে দিয়ে ব্যাঙের বিয়ে শেষে বরণ ডালায় ব্যাঙ দুটিকে নিয়ে পুরো গ্রাম ঘুরে বেড়ান তারা। এ সময় গ্রামবাসীদের কাছ থেকে চাল ডাল সংগ্রহ করে বিয়েতে অংশগ্রহণকারীদের খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়।
বিয়ের আয়োজনকারী মল্লিকা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কিছুদিন ধরে তীব্র গরম। তাপমাত্রা বেশি হওয়ার কারণে আমরা কষ্টে রয়েছি; গ্রামের মানুষজন অস্তিত্বতে আছে। কেউই কোনো কাজ কামাই করতে পারছেন না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আগের যুগের মানুষরা ব্যাঙের বিয়ে দিলে বৃষ্টি হতো। সেই বিশ্বাস থেকেই আজ ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছি।’
বিয়ে দেখতে আসা জাহিদ নামের একজন বলেন, “আমার জীবনে প্রথম ব্যাঙের বিয়ে দেখলাম। খুবই ভালো লেগেছে। ‘বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের বিয়ে’ বিষয়টি প্রথম জানলাম।”
বৃদ্ধ আজিজুল হক বলেন, ‘বৃষ্টি না হওয়ার কারণে আবাদের ক্ষতি হচ্ছে। তাই বৃষ্টির আশায় ব্যাঙের বিয়েতে অংশগ্রহণ করেছি।’
রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘কুড়িগ্রামে বেশ কিছুদিন ধরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। আজ (শনিবার) জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।’
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে এক বছরের শিশু হুমাইরা আক্তারের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকালে সদর উপজেলার মদিনা বাজার এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মদিনা বাজারের উত্তর পাশে খানকা শরীফের সামনের সড়কে দুটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে।
এ সময় রাস্তার পাশে এক বছরের শিশু সন্তান হুমাইরাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা হাবিবা বেগমের ধাক্কা খান অটোরিকশার সঙ্গে। এতে শিশু হুমাইরা মায়ের কোল থেকে রাস্তায় ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হয়। শিশুটিকে দ্রুত মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় অটোরিকশা দুটি আটক করা হয়েছে। পালিয়ে যাওয়া দুই চালককে আটকের চেষ্টা চলছে।
মুন্সীগঞ্জে হিটস্ট্রোকে সাখাওয়াত হোসেন মুকুল নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির মাঠ পর্যায়ের বিপনন বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
২৭ বছর বয়সী মুকুলের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলায়।
প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির মুন্সীগঞ্জ শহরের সেলস রিপ্রেজেনটেটিভ মোহাম্মদ রোকন জানান, শনিবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জ শহরের অদূরে মুন্সীরহাট এলাকায় মাঠ পর্যায়ে কর্মরত অবস্থায় তীব্র গরমের কারণে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন মুকুল। সঙ্গে সঙ্গে তাকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালে নিয়ে এলে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস হাসান জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগে পথেই তার মৃত্যু হয়েছে। নিহতের হিটস্ট্রোকের লক্ষণ রয়েছে বলে জানান তিনি।
নিহতের মরদেহ তার নিজ জেলায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
আকস্মিক কালবৈশাখীর তাণ্ডবে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ও শমশেরনগর ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে আরও বেশ কিছু বাড়িঘর। ঝড়ের পর খোলা আকাশের নিচে দিনযাপন করছে অর্ধশতাধিক পরিবার।
এ ছাড়াও গাছপালা উপড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙেছে এবং তার ছিঁড়ে পড়ে। এতে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ওই অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
শুক্রবার রাত ৩টার দিকে এই ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হয়। প্রায় সাড়ে ১৫ ঘণ্টা পর শনিবার বিকেল ৪টার দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কালবৈশাখীর তাণ্ডবে উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের পতনঊষার, ধূপাটিলা, উসমানগড়, ব্রাহ্মণঊষারসহ ৮টি গ্রামের প্রায় শতাধিক ঘর এবং শমশেরনগর ইউনিয়নের কেছুলুটি, ভাদাইরদেউল গ্রামে আরও কয়েকটি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অসংখ্য গাছ-বাঁশ উপড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ও লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
পতনঊষার ইউনিয়নের নেছার মিয়া, ময়নুল মিয়া, খুশবা বেগম, লিপি বেগম, রহমান মিয়া, সুফিয়ান মিয়া, কালাম মিয়া, আনু মিয়া, ফখরুল মিয়াসহ অসংখ্য পরিবার দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন।
ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, গতরাতে কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে তীব্র শিলাবৃষ্টি হয়। মুহুর্তের মধ্যে তাদের ঘরবাড়ি উড়িয়ে নিয়ে যায়। আমরা এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি। সহোযোগিতা না পেলে আমাদের রাস্তায় থাকতে হবে।’
পতনঊষার ইউপি সদস্য তোয়াবুর রহমান জানান, আকস্মিক ঝড়ে পতনঊষার গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যাদের বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে সেসব দরিদ্র পরিবারের জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে।
পতনঊষার ইউপি চেয়ারম্যান অলি আহমদ খান বলেন, ‘কালবৈশাখী ঝড়ে আমার ইউনিয়নে প্রচুর পরিমাণ বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অনেক পরিবার খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। তাদের দ্রুত সহায়তার প্রয়োজন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাহেবকে অবহিত করা হয়েছে।’
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক গোলাম ফারুক মীর বলেন, ‘ঝড়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েকটি খুঁটি ভেঙে পড়েছে। অনেক স্থানে তার ছিঁড়ে গেছে। এসব জায়গায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার জন্য কাজ চলছে।’
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ ইউএনও জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘পতনঊষার ইউপি চেয়ারম্যান বাড়িঘর বিধ্বস্তের কথা বলেছেন। তবে পরিপূর্ণ হিসাব জানা যায়নি। চেয়ারম্যানদেরকে বলা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে দেয়ার জন্য। দ্রুত তাদের সহোযোগিতা করা হবে।’
আরও পড়ুন:চুয়াডাঙ্গায় অব্যাহত অতি তীব্র তাপপ্রবাহে ওষ্ঠাগত হয়ে পড়েছে জনজীবন। ভ্যাপসা গরমে অস্বস্তি বেড়েছে কয়েকগুণ।
শনিবার বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গা জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তীব্র থেকে অতি তীব্র আকার ধারণ করছে জেলার তাপপ্রবাহ। গরমে একটু স্বস্তি পেতে গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছে মানুষ। তবে, ভ্যাপসা গরমে স্বস্তি নেই কোথাও। আবহাওয়ার এমন বিরূপ আচরণের সঙ্গে কোনোভাবেই খাপ খাওয়াতে পারছে না জেলাবাসী। কেউ আবার পান করছেন ফুটপাতের অস্বাস্থ্যকর পানীয়। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছে প্রাণিকূল। হাসপাতালে বাড়ছে গরমজনিত রোগীর সংখ্যা।
দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ডের ইজিবাইক চালক হারেজ আলী বলেন, ‘কঠিন তাপ পড়চি। সূর্য মনে হচ্চি মাতার উপর চলি এসিচে। আমরা গরীব মানুষ, পেটের দায়ে বাইরি বের হয়িচি। মাজে মাজে রাস্তার পাশের দুকান থেকি শরবত খেয়ি ঠান্ডা হচ্চি।’
চলমান দাবদাহে ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে সেচ কার্যক্রম; নষ্ট হচ্ছে ধান, আম, লিচু ও কলাসহ মাঠের অন্যান্য ফসল।
মৌসুমের প্রায় সময়জুড়েই উত্তপ্ত থাকে চুয়াডাঙ্গা। এবারও চৈত্রের মধ্যভাগ থেকে শুরু হওয়া তাপমাত্রার এমন দাপট বৈশাখের আবহাওয়াকে জটিল করে তুলছে। এ যেন মরুর উষ্ণতা অনুভব করছে মানুষ।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘এ মাসের শেষের কয়েকদিন তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।’
আরও পড়ুন:মাদারীপুরে ইজিবাইকের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়াতে সেটিকে পাশ দিতে গিয়ে যাত্রীবাহী একটি বাস খাড়ে পড়ে যায়। এতে অল্পের জন্যে জীবন রক্ষা পেয়েছে বাসের অন্তত ৬৫ যাত্রীর। তবে এ ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত ৩০ জন।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুর জেলার ঘটকচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ এসে বাস ও আহতদের উদ্ধার করে।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, হাওলাদার পরিবহনের একটি বাস প্রায় ৬৫ জন যাত্রী নিয়ে বরিশাল থেকে সাতক্ষীরার উদ্দেশে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে ঘটকচর এলাকায় আসলে একটি ইজিবাইক রাস্তার মাঝে চলে আসে। দুর্ঘটনা এড়াতে ইজিবাইকটিকে পাশ দিতে বাসচালক দ্রুত মোড় নেয়ায় বাসটি রাস্তার পাশের খাদে চলে যায়। তবে খাদটি বেশি গভীর না হওয়ায় প্রাণে রক্ষা পেয়েছে বাসের যাত্রীরা। তবে আঘাত পেয়ে বাসের ভিতরে থাকা যাত্রীদের হাত-পায়ে একাধিক স্থানে কেটে গেছে। এ ঘটনায় ছোট-বড় মিলে প্রায় ৩০ জন যাত্রী আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে মোস্তফাপুর হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয়দের সহযোগিতায় যাত্রীদের উদ্ধার করে।
দুর্ঘটনাকবলিত বাসটির যাত্রী সজীব হোসেন বলেন, ‘আমি অফিশিয়াল কাজে সাতক্ষীরা যাচ্ছিলাম। ঘটকচর স্ট্যান্ডের কিছুটা দূরে আসার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ একটা ধাক্কা খেয়ে দুমড়ে মুচড়ে গেলাম। পরে দেখি বাসটি খাদে পড়ে গেছে। আমার নাকে কিছুটা আঘাত পেয়েছি। অন্য যাত্রীদেরও বেশ আঘাত লেগেছে।’
তিনি বলেন, ‘ইজিবাইক পাশ দিতে গিয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কে ইজিবাইক নছিমন বন্ধ করা উচিত।’
এ ব্যাপারে মোস্তফাপুর হাইওয়ে থানার ওসি মোহাম্মদ মারুফ রহমান বলেন, ‘বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে অন্তত ৬৫ জন যাত্রী। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে দুর্ঘটনাকবলিতদের উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ইজিবাইকটি আটক করা যায়নি।’
আরও পড়ুন:বৃহত্তর চট্টগ্রামে রোববার থেকে ৪৮ ঘণ্টা পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বৃহত্তর গণপরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্যপরিষদ।
বাসের ধাক্কায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থী নিহত ও অপর একজন আহত হওয়ার ঘটনার জের ধরে গাড়ি পোড়ানোর প্রতিবাদে এই ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্যপরিষদের আহ্বায়ক ও হাটহাজারী পৌরসভার প্রশাসক মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী মঞ্জু শনিবার বলেন, ‘কয়েক দিনে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে আমাদের তিনটি বাস পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। গাড়ি পোড়ানো ও সড়কে নৈরাজ্যের প্রতিবাদসহ চার দফা দাবি আদায়ে আগামীকাল (রোববার) সকাল ৬টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা, তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান এবং কক্সবাজার জেলায় এই ধর্মঘট পালিত হবে।’
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে সোমবার বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই চুয়েট শিক্ষার্থী নিহত হন। এর প্রতিবাদে ওইদিন থেকেই ১০ দফা দাবিতে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় বাসে আগুন দেয়া হয়।
বুধবার ওই বাসের চালককে পুলিশ গ্রেপ্তার করলে শিক্ষার্থীরা কিছুটা শান্ত হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ২০ জনের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে তিন ঘণ্টা বৈঠক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেখানে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসের মূল ফটকের সামনের সড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ১১ মে পর্যন্ত চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার বিকেলে চুয়েট সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই সময়ে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করতে পারবেন। যদিও জরুরি সিন্ডিকেট সভায় নেয়া সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সে সঙ্গে দাবি আদায়ে আবারও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
মন্তব্য