প্রবাসীবহুল অঞ্চল হিসেবে পরিচিত সিলেট। প্রবাসীবহুলতার পাশাপাশি এই অঞ্চলের মানুষের বিনিয়োগের অনাগ্রহও দীর্ঘদিনের। বিনিয়োগহীনভাবে ব্যাংকে টাকা ফেলে রাখার প্রবণতা রয়েছে এখানে।
তবে গত এক থেকে দেড় দশকে এই অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন এনেছে পর্যটন খাত। এ খাতে বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছেন বেসরকারি উদ্যোক্তারা। গড়ে উঠেছে অসংখ্য হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট। গত এক দশকে পর্যটক সমাগমও বেড়েছে। ছুটির দিনগুলোতে কোনো হোটেল-মোটেলে কক্ষ খালি পাওয়া যেত না।
পর্যটন খাতকেই সিলেট অঞ্চলের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ও বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ খাত হিসেবে আখ্যায়িত করে আসছিলেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সেটিই এখন সবচেয়ে বড় সংকটে।
পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত বছরের সাধারণ ছুটির ক্ষতিই এখন পর্যন্ত কাটিয়ে উঠতে পারেননি তারা। তার ওপর এখন আবার লকডাউন, পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ রকম চলতে থাকলে অনেক প্রতিষ্ঠানই বন্ধ হয়ে যাবে বলে শঙ্কা তাদের।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েবের হোটেল ব্যবসা রয়েছে নগরীতে। শোয়েব বলেন, সিলেটে তেমন ভারী শিল্পকারখানা নেই। ট্রেডিং, পর্যটন আর আমদানি-রপ্তানিই এখানকার প্রধান ব্যবসা। এর মধ্যে পর্যটনকেই সবচেয়ে সম্ভাবনাময় মনে করা হয়েছিল। করোনার কারণে এই খাতের ব্যবসায়ীরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
বছর তিনেক আগে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের রাধানগর এলাকায় একটি দ্বিতল বাসা ভাড়া নিয়ে ‘হিমাচল’ নামে একটি ছোট্ট রিসোর্ট চালু করেছিলেন ঢাকার আজিজুর রহমান সাজু। ভালোই চলছিল রিসোর্ট। তবে সব ওলট-পালট করে দেয় করোনাভাইরাস।
গত বছর প্রায় ছয় মাস বন্ধ ছিল রিসোর্ট। এরপর চালু হলেও ব্যবসা আগের জায়গায় ফেরার আগেই আবার বাড়তে শুরু করে করোনার সংক্রমণ; দেয়া হয়েছে লকডাউন।
সাজু বলেন, ‘গত বছর বন্ধ থাকাকালীন মাসে আমার প্রায় এক লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। আমরা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। গত বছরের লোকসানের ধকলই কাটিয়ে উঠতে পারিনি। অনেকের কাছ থেকে ঋণ করতে হয়েছে। এখন আবার লকডাউন এসেছে। পর্যটক সমাগমে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এই পরিস্থিতি যদি দীর্ঘায়িত হয় তবে রিসোর্টটি বন্ধ করে দেয়া ছাড়া আমার আর কোনো উপায় থাকবে না।’
সিলেটের হোটেল-রিসোর্ট মালিকরা বলছেন, গত বছর সাধারণ ছুটি চলাকালে সিলেটের হোটেল-রিসোর্ট খাতে প্রতিদিন প্রায় তিন কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। মাসে ক্ষতি হয়েছে প্রায় এক শ কোটি টাকা। এবার আবার লকডাউনের কারণে দীর্ঘমেয়াদি লোকসানের মুখে পড়তে হবে।
জাফলং, বিছনাকান্দি, পাংথুমাই, রাতারগুলসহ সিলেটের বেশির ভাগ দর্শনীয় স্থানের অবস্থান গোয়াইনঘাট উপজেলায়। এই উপজেলার প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, করোনায় গত বছরের মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত পর্যটন বন্ধ থাকার পর নভেম্বর থেকে পর্যটক সমাগম বাড়তে শুরু করে। নতুন বছরে সবগুলো পর্যটন স্পটে প্রচুর পর্যটক আসছিলেন।
তবে তাতেও ব্যবসা বাড়েনি বলে জানালেন সিলেট হোটেল মোটেল রেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুমাত নুরী জুয়েল। তিনি বলেন, ‘করোনার বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পর গত তিন থেকে চার মাস সিলেটে অনেক পর্যটক এসেছেন। কিন্তু যারা বেড়াতে এসেছিলেন, তাদের প্রায় সবাই তরুণ। আগে যেভাবে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানুষ বেড়াতে আসতেন এবার তারা সেভাবে আসেননি।
‘যে তরুণরা এসেছেন তারা ঘুরেফিরে চলে গেছেন। হোটেলে থাকেননি। থাকলেও অপেক্ষাকৃত কম ভাড়ার হোটেলে থাকছেন। ফলে তিন ও চার তারকা মানের হোটেল ও রিসোর্টগুলো সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ে। এর মধ্যে এখন আবার সবকিছু বন্ধ হয়ে গেল।
সিলেটের পর্যটন খাতের উন্নয়নে পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন হাসান মোরশেদ। তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও পর্যটন সেক্টরের সংকট কাটবে না। কারণ, মানুষের আয় কমবে; ফলে খরচ কমাবে। আগের মতো পর্যটকরা আসবে না। এতে একেবারে শূন্য থেকে শুরু করতে হবে পর্যটন খাতের উদ্যোক্তাদের। এ কারণে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই ব্যাপক কর্মী ছাঁটাই করবে। ছোট অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে।’
সিলেট হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, এই সংগঠনের সদস্যভুক্ত হোটেল-রিসোর্ট রয়েছে ৩৪টি। তবে সিলেটে ছোট-বড় মিলিয়ে হোটেল-রিসোর্ট রয়েছে দুই শতাধিক। সিলেট বিভাগে এই সংখ্যা পাঁচ শতাধিক।
সিলেট বিভাগের পর্যটকদের সবচেয়ে পছন্দের জায়গা মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল। বছরজুড়েই এই উপজেলা শহরে পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। গত অর্ধযুগে কেবল শ্রীমঙ্গল শহরেই গড়ে উঠেছে শতাধিক রিসোর্ট।
পর্যটন বদলে দিয়েছিল চায়ের জন্য বিখ্যাত এই শহরটির অর্থনীতি। তবে করোনায় কাহিল শ্রীমঙ্গলের পর্যটন খাতের উদ্যোক্তারা।
শ্রীমঙ্গলের ‘এসকেডি আমার বাড়ি’ রিসোর্টের পরিচালক সজল দাশ বলেন, ‘আমার ব্যাংক লোন আছে দুই কোটি টাকা। গত বছরের প্রায় ছয় মাস রিসোর্ট বন্ধ ছিল। দুই-তিন মাস কিছুটা ব্যবসা করেছি। এখন আবার বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। আয় না হলেও কর্মচারীদের বেতন, গ্যাস-বিদ্যুৎ বিল ঠিকই দিতে হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে আমরা ঋণের জালে আটকে যাচ্ছি। পুঁজি হারানোর ভয়ে আছি।’
একই এলাকার ‘হোটেল মেরিনা’র পরিচালক নাজমুল হাসান মিরাজ বলেন, ‘আমার হোটেলটি ভাড়া নিয়ে করেছি। মাসিক ভাড়া ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। কর্মচারীদের বেতনসহ মাসিক খরচ আড়াই লাখ টাকা। বর্তমান অবস্থায় ঋণে জড়িয়ে পড়েছি। সরকারের সাহায্য ছাড়া এই অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়াতে পারব না।’
ঈদ, পূজাসহ যেকোনো উৎসব বা সরকারি ছুটির দিনে অতিথিতে পূর্ণ থাকে এসব হোটেল-রিসোর্ট। তবে গত ঈদুল ফিতরের মতো বড় উৎসবেও পুরোপুরি ফাঁকা ছিল হোটেলগুলো। এবারও ঈদুল ফিতর আসন্ন। লকডাউনের কারণে ঈদ মৌসুমের ব্যবসা নিয়েও শঙ্কিত ব্যবসায়ীরা।
শ্রীমঙ্গল শহরের ‘গ্রিনলিফ’ রিসোর্টের পরিচালক এস কে দাস সুমন বলেন, ‘২০১৯ সালে ঈদের এক মাস আগেই আমার রিসোর্টের সব কক্ষ বুক হয়ে যায়। এখানে বেশির ভাগ বিদেশি অতিথিরা আসেন। কিন্তু গত ঈদে পুরো ফাঁকা ছিল রিসোর্ট। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে আগামী ঈদেও রিসোর্ট বন্ধ রাখতে হবে।’
উদ্যোক্তাদের মতো বিপাকে পড়েছেন পর্যটন খাতের কর্মীরাও। গত বছরের সাধারণ ছুটিতেই অনেকের চাকরি চলে গেছে। কম বেতনেও কাজ করছেন অনেকে। এ অবস্থায় আবার লকডাউন সংকট আরও বাড়াবে বলে আশঙ্কা তাদের।
পর্যটককে কেন্দ্র করে গত এক দশকে সিলেটে ব্যাপকভাবে প্রসার ঘটেছে রেস্টুরেন্ট ব্যবসারও। প্রায় ৫০০ ছোটবড় রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে শহরে। গত বছরের সাধারণ ছুটির ক্ষতি সামলাতে না পেরে অনেক রেস্টুরেন্টই বিক্রি হয়ে গেছে। বন্ধও হয়ে গেছে কয়েকটি।
নগরীর জিন্দাবাজার এলাকার জনপ্রিয় ‘পানসী’ রেস্টুরেন্টের ব্যবসায়িক অংশীদার নুরুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, ‘গত বছর বিরাট লোকসান গুনতে হয়েছে। এরপর মাস ছয়েক খোলা থাকলেও ব্যবসা আগের জায়গায় যায়নি। এভাবে চলতে থাকলে অনেক রেস্টুরেন্টই বন্ধ করতে হবে।’
গোয়াইনঘাটের হাদারপাড় এলাকার ইঞ্জিন নৌকা চালক সমুজ মিয়া। হাদারপাড় থেকে পর্যটনকেন্দ্র বিছনাকান্দিতে নৌকা চালান তিনি। পর্যটকসমাগম নিষিদ্ধ করায় শঙ্কিত তিনিও।
সমুজ মিয়া বলেন, ‘গত বছরের এই সময়ের কথা মনে হলে এখনও আতঙ্কে ভুগি। জীবনে কখনও এ রকম বেকার হইনি। বিছনাকান্দিতে পর্যটকদের আনাগোনা সব সময় লেগে থাকে। আয় ভালোই হচ্ছিল। কিন্তু গত চার থেকে পাঁচ মাস এখানে কোনো পর্যটক আসেননি। ফলে মানুষের সাহায্য-সহায়তা নিয়ে চলতে হয়েছে। এবারও এমন পরিস্থিতি হলে তো আর রক্ষা নেই।’
সিলেটের জেলা প্রশাসক এম. কাজী এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘সবার আগে জীবন। আমাদের জীবনরক্ষায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। ব্যবসায়ীরাও নিশ্চিয়ই এটি উপলব্ধি করতে পারবেন। তাই আর্থিক ক্ষতি মেনে নিয়েও তারা এই মহামরি প্রতিরোধে আমাদের সহযোগিতা করছেন।
‘লকডাউন ঘোষণার আগেই ২ এপ্রিল থেকে সিলেটে বাইরের জেলা থেকে পর্যটকদের আগমন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে।’
আরও পড়ুন:পার্বত্য জেলা বান্দরবানে প্রতি বছর ঈদ, পহেলা বৈশাখ ও সাংগ্রাই উৎসব ঘিরে ব্যাপক পর্যটকের সমাগম হয়। বছর ঘুরে এসব উৎসব এলেও এবারের পরিস্থিতি পুরোপুরি ভিন্ন। বিশেষত জেলার রুমা ও থানচিতে পর্যটন শিল্পে ধস নেমেছে। হোটেল-রিসোট পড়ে থাকছে ফাঁকা। দেখা মিলছে না দেশি-বিদেশি পর্যটকের।
সম্প্রতি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ব্যাংকে হামলা ও অস্ত্র লুটের ঘটনার পর পর্যটন খাতে কালো ছায়া পড়েছে। ভয়ে ও আতঙ্কে পর্যটকরা আগে থেকে করে রাখা বুকিং বাতিল করছেন। ফলে ভরা মৌসুমেও লোকসানের মুখে পড়েছেন পর্যটন ব্যবসা-সংশ্লিষ্টরা।
পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষে অবস্থানকারী জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম বান্দরবান। জেলার রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচির অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য পর্যটকদের কাছে বড় আকর্ষণ। ইতোমধ্যে এসব স্পটের খ্যাতি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে।
বান্দরবান জেলা সদর থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে থানচির অবস্থান। আর রোয়াংছড়ি ২০ কিলোমিটার ও রুমার দূরত্ব ৬৯ কিলোমিটার।
বান্দরবান-থানচি সড়কের মাঝামাঝি জীবননগর নামক স্থানে রয়েছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট নীলগিরি। নীল দিগন্ত বিস্তৃত এলাকাটি ম্রো অধ্যুষিত।
থানচি-আলিকদম সংযোগ সড়কে থানচি সদর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে ক্রাউডং (মারমা) ডিম পাহাড় (বাংলা)। নৌপথে সাংগু নদী বেয়ে তিন্দু ইউনিয়নে রয়েছে রাজা পাথর (বাংলা)।
এরপর রয়েছে রেমাক্রী খাল। জেলা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের রোয়াংছড়ি উপজেলার শীলবাঁধা পাড়ায় দেবতাখুমের অবস্থান। এছাড়াও রয়েছে অনেক পর্যটন স্পট।
বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত প্রাকৃতিক হ্রদ হলো বগা লেক। রুমা উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে তিন হাজার সাতশ’ ফুট উচুঁতে এর অবস্থান। লেকটি পাহাড় চূড়ায় ১৫ হাজার একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত।
বগা লেক নিয়ে নানা কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ হল বিজয় (তাজিং ডং)। সমতল থেকে এর উচ্চতা প্রায় ৪ হাজার ৫শ’ ফুট। রুমা উপজেলার রেমাক্রী পাংশা ইউনিয়নে এর অবস্থান।
রুমা উপজেলা সদর থেকে এর দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। শীত মৌসুমে এই পর্বত দেখতে হাজার হাজার মানুষের আগমন ঘটে।
এছাড়াও রয়েছে কেওকারাডং, জলপ্রপাতের পানি ঝিরসহ অনেক পর্যটন স্পট। আবার জেলার থানচিতে পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষে থাকা তালিকায় স্থান করে নিয়েছে নাফাখুম ঝরনা, আমিয়াখুং ঝরনা, ভেলাখুং ঝরনা, সাত ভাই খুং ঝরনা, লাংলুক ঝরনা, লৈক্ষ্যং ঝরনা, চিংড়িৎ ঝরনা।
প্রকৃতি এতোসব সম্ভার সাজিয়ে বসে আছে। কিন্তু তা দেখার জন্য পর্যটকের আগমন ঘটছে না। সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে ভয় আর আতঙ্কে তারা পার্বত্য এসব পর্যটন স্পট এড়িয়ে চলছেন।
পর্যটন-সংশ্লিষ্টরা জানান, বান্দরবান জেলায় পর্যটকদের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থানগুলো হচ্ছে রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি উপজেলায়। বিরাজমান পরিস্থিতিতে এই তিন উপজেলায় বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন কেএনএফ-এর বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে যৌথ বাহিনী। ফলে এসব দর্শনীয় স্থানে যাতায়াত করাটা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন পর্যটকরা। অধিকাংশ এলাকায় দোকানপাট বন্ধ। যানবাহন চলাচলও সীমিত। সন্ধ্যার আগেই লোকজন ঘরবন্দি হয়ে পড়ছে।
রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচির হোটেল-রিসোর্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদ ও পহেলা বৈশাখ চলে গেল। এসব উৎসবের ছুটিতে এখানে হোটেল-মোটেলের শতভাগ রুম বুকিং হওয়ার কথা। কিন্তু এবার সেসবের কিছুই হয়নি।
হঠাৎ করে ২ এপ্রিল রাতে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা রুমা উপজেলা সদরে সোনালী ব্যাংকে ডাকাতি, অস্ত্র লুট, ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণ করে। পরদিন দুপুরে থানচি সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে অস্থির হয়ে পড়েছে বান্দরবান।
কেএনএফ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে শুরু হয় যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান। আর এই খবর দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়লে ভয়-আতঙ্কে মুখ ফিরিয়ে নেয় পর্যটকরা। অথচ এই সময়টাতে থানচি রেমাক্রীতে হাজার হাজার পর্যটকের সমাগম হওয়ার কথা ছিল।
পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, পর্যটক না আসার কারণে এই ঈদ মৌসুমে তাদেরকে লাখ লাখ টাকার লোকসান গুনতে হবে।
নৌকার এক মাঝি জানান, থানচিতে পর্যটকের ছুটে চলার একমাত্র মাধ্যম হলো নৌকা। এখানে নৌকার সংখ্যা রয়েছে পাঁচ শতাধিক। আর এসব নৌকা চালানোর জন্য সমসংখ্যক মাঝি রয়েছেন। তাদের প্রধান আয়ের উৎস পর্যটক। নৌকা চালাতে পারলে সংসারের চাকা ঘুরবে, অন্যথায় উপোস থাকতে হবে। সৃষ্ট পরিস্থিতিতে তারা দিনশেষে খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন।
থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মামুন বলেন, ‘সরকারিভাবে পর্যটকদের এই এলাকা ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হয়নি। তবে এমন পরিস্থিতি শোনার পর আর কেউ এখানে ঘুরতে আসবে বলে মনেও হয় না। সৃষ্ট পরিস্থিতিতে পর্যটনের সঙ্গে সংশ্লিটরা অনেক কষ্ট ও লোকসানে পড়বে বোঝা যাচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, পাহাড়ের সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ কেএনএফ-এর শতাধিক অস্ত্রধারী ২ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে রুমা উপজেলার ইউএনও অফিস সংলগ্ন মসজিদ ও ব্যাংক ঘেরাও করে। তারা সোনালী ব্যাংকের টাকাসহ ডিউটিরত পুলিশ ও আনসার সদস্যদের ১৪টি অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তারা যাওয়ার সময় রুমা সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার নিজাম উদ্দিনকেও অপহরণ করে। পরদিন থানচি উপজেলা শহরের সোনালী ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের শাখায় ডাকাতি হয়।
যৌথ অভিযান চালিয়ে সোনালী ব্যাংকের অপহৃত ম্যানেজার নেজাম উদ্দীনকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে র্যাব ও সেনাবাহিনী। এরপর কেএনএফের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানের ঘোষণা দেয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
এসব ঘটনায় আটটি মামলা করে পুলিশ। ঘটনার পরপরই জড়িতদের ধরতে এবং সন্ত্রাসীদের নির্মূলে ৬ এপ্রিল যৌথ বাহিনী সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে। দুদিনের অভিযানে ১৮ নারীসহ ৫৬ জনকে আটক করে যৌথ বাহিনী। বাকি সন্ত্রাসীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
আরও পড়ুন:কিছুদিন মন্দাবস্থার পর ঈদ উপলক্ষে চাঙা হয়ে উঠেছে সিলেটের পর্যটন খাত। ঈদের ছুটিতে ব্যাপকসংখ্যক পর্যটক এসেছেন সিলেটে। এতে খুশি পর্যটন খাতের উদ্যোক্তারা।
আগামী কয়েক দিন এই চাঙাভাব অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন তারা।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেটে পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় দুটি গন্তব্য গোয়াইনঘাটের জাফলং ও কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথর। এ দুই জায়গাতেই ঈদের দিন থেকে পর্যটকদের ঢল নেমেছে, তবে ঈদের দিনের চেয়ে তার পরের দিন পর্যটক সমাগম আরও বাড়ে।
জাফলংয়ের পর্যটন খাতের উদ্যেক্তারা জানান, ঈদ মৌসুমে জাফলংয়ে আট থেকে ১০ লাখ পর্যটকের সমাগম হবে বলে আশা করছেন তারা।
জাফলং, সাদাপাথর ছাড়াও বিছনাকান্দি, রাতারগুল সোয়াম ফরেস্ট, পানতুমাই ঝরনা, লালাখাল ও সিলেটের বিভিন্ন চা বাগানে বৃহস্পতিবার থেকেই পর্যটকদের ঢল নামে। সিলেটের বেশির ভাগ হোটেল-রিসোর্ট এখন অতিথিতে পূর্ণ।
সিলেট শহর থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে সাদাপাথর। সাদা পাথুরে নদীর শীতল জল আর পাশেই দিগন্ত বিস্তৃত মেঘালয় পাহাড়। প্রকৃতির এ অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে সারা বছরই পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। ঈদ মৌসুমে পর্যটক সমাগম আরও বাড়ে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
ঈদুল ফিতরের পরের দিন শুক্রবার সাদাপাথরে গিয়ে দেখা যায়, পর্যটকদের কারণে নদীতে পা ফেলার অবস্থা নেই। ভিড়ের কারণে অনেকে নদীর তীরে দাঁড়িয়ে ছিলেন; নামতে পারছিলেন না পানিতে।
সাদাপাথর ঘুরতে আসা কুমিল্লার শিউলি বেগম বলেন, ‘এই পরিবেশ অপরূপ। যে কেউ আসলে মন ভালো হয়ে যাবে।’
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর থেকে আসা রাজেল মিয়া বলেন,‘দুপুরে সাদাপাথরে এসেছি। সাদাপাথরের ধলাই নদীর শীতল স্পর্শ মনকে চাঙা করে দিয়েছে।
‘সত্যিই অসাধারণ জায়গা। অবসর পেলেই চলে আসি।’
পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ সিলেট রিজিয়নের পরিদর্শক আখতার হোসেন বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। সাদাপাথরে এই ঈদে প্রতিদিন কয়েক হাজার লোক ঘুরতে আসছেন।
‘আমাদের কয়েকটি টিম সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছে। পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দ্যে ঘোরাফেরা করছেন।’
সিলেটের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্য জাফলং। শনিবার জাফলংয়ে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে মেঘ-পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন দর্শনার্থীরা।
জাফলংয়ে সকাল থেকেই দলবেঁধে পর্যটকেরা ঘুরতে আসেন। নদীতে নেমে কেউ কেউ গোসল করতে ব্যস্ত। আর নৌকা পার হয়ে অনেকের গন্তব্য মায়াবী ঝরনা, খাসিয়া পল্লি ও চা বাগানে। বেলা বাড়ার সঙ্গে দর্শনার্থীদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে।
পর্যটক সুজন আহমেদ বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে পরিবারের সদস্যরা মিলে ঘুরতে এসেছি। জাফলং ভীষণ ভালো লেগেছে।
‘পাহাড় আর পাথরের সৌন্দর্য আমাদের মুগ্ধ করেছে, তবে বৃষ্টিতে একটু ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।’
এদিকে পর্যটকদের চাপে সিলেটের হোটেল-মোটেলগুলোতে কক্ষ খালি ছিল না। ব্যস্ততা দেখা গেছে রেস্তোরাঁগুলোতেও। পর্যটকের সমাগমে খুশি এখানকার পর্যটন ব্যবসায়ীরাও।
জাফলং পর্যটনকেন্দ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হোসেন মিয়া বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে জাফলংয়ে অনেক পর্যটক বেড়াতে এসেছেন। ব্যবসায়ীদের বেচাকেনাও ভালো হয়েছে।
‘এখানকার কোনো হোটেল-রিসোর্টেই এখন কক্ষ খালি নেই। আগামী কয়েক দিন পর্যটক সমাগম বেশি থাকবে বলে আশা করছি।’
পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে টুরিস্ট পুলিশ, থানা-পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে জাফলং ট্যুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ রতন শেখ বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে সকাল থেকেই পর্যটকে মুখরিত ছিল জাফলং। আগত পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা কাজ করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ছাড়াও পর্যটকরা বেড়াতে এসে যাতে কোনোভাবেই ভোগান্তিতে না পড়েন, সেদিকে আমাদের নজর রয়েছে।’
আরও পড়ুন:দিনভর রোজা রেখে ইফতারে দরকার হয় পুষ্টিকর কিছু। পিনাট বাটার স্মুদিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন। তাই ইফতারে রাখতে পারেন পিনাট বাটারের মজাদার স্মুদি। এনডিটিভি ফুডের পিনাট বাটার স্মুদির রেসিপি তুলে ধরা হলো নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য।
উপকরণ (এক কাপ পরিমাণ)
১. ১টি কলা
২. ১ কাপ দুধ
৩. ২থেকে ৩ টেবিল চামচ পিনাট বাটার
পিনাট বাটার যদি চিনি ছাড়া হয়,সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত চিনি বা মধু দিতে হবে স্বাদমতো।
প্রস্তুত প্রণালি
টুকরো করে রাখা কলা, দুধ, পিনাট বাটার একটি ব্লেন্ডারে দিয়ে মসৃণ না হওয়া পর্যন্ত ব্লেন্ড করুন। তারপর গ্লাসে স্মুদি ঢেলে বরফ কুচি দিয়ে মনমতো সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
চাইলে বাড়িতেও পিনাট বাটার বানিয়ে নিতে পারেন। এর জন্য প্রয়োজন হবে তিন থেকে চারটি উপকরণ। চিনা বাদাম, বাটার অথবা অভিল অয়েল ও মধু ও সামান্য লবণ।
পিনাট বাটার যেভাবে বানাবেন
বাদাম দুই থেকে তিন মিনিট ওভেনে বেক করে নিন অথবা চুলায় হালকা ভেজে নিন। এরপর ব্লেন্ডারে সব উপকরণ দিয়ে ভালোভাবে ব্লেন্ড করুন।
আরও পড়ুন:অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থায় ত্রুটি এবং ভোক্তা অধিকার আইন অমান্য করার দায়ে কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোনে অভিযান চালিয়ে সাতটি প্রতিষ্ঠানকে দুই লাখ ৮১ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
দণ্ডিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে হোটেল লং-বিচ ও হোটেল সী-প্যালেসের মতো অভিজাত হোটেলও রয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোনে এসব অভিযান চালানো হয় বলে জানান কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. ইয়ামিন হোসেন।
তিনি জানান, পর্যটন শহর কক্সবাজারকে অগ্নি-দুর্ঘটনা থেকে এবং পর্যটকদের নিরাপদ রাখতে জেলা প্রশাসনের দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে দুটি দল মঙ্গলবার দুপুর থেকে হোটেল-মোটেল জোনে অভিযান চালায়। এ সময় আবাসিক হোটেলগুলোতে অগ্নি-নির্বাপন ব্যবস্থা যথাযথভাবে অনুসরণ না করা এবং রেস্তোরাঁয় মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করাসহ নিরাপদ খাদ্য পরিবেশনে ব্যত্যয়ের দায়ে সাতটি প্রতিষ্ঠানকে ২ লাখ ৮১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এডিএম বলেন, ‘জরিমানা আদায় করা এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অগ্নি-প্রতিরোধক দরজার বিপরীতে কাঠের দরজা, অকেজো স্মোক ডিটেক্টর, অপর্যাপ্ত ফায়ার এক্সটিংগুইশার, হোটেলের আয়তন অনুপাতে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকা, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স চূড়ান্ত সনদ না থাকা এবং রেস্তোরাঁগুলোতে খাবারের মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করার পাশাপাশি নিরাপদ খাদ্য পরিবেশনে ত্রুটির প্রমাণ মিলেছে।
‘এসব কারণে অভিজাত হোটেল লং বিচকে এক লাখ টাকা, হোটেল সী প্যালেসকে ৫০ হাজার, হোটেল কল্লোলকে ৫০ হাজার, হোটেল মিডিয়াকে ১০ হাজার, কাচ্চি ডাইন রেস্তোরাঁকে ২০ হাজার এবং হোটেল মিডিয়ার রেস্তোরাঁকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া হোটেল মিডিয়ার পাশে অনুমোদনহীন একটি ক্ষুদ্র দোকানকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
ইয়ামিন হোসেন আরও জানান, দণ্ডিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ত্রুটিগুলো দ্রুত কাটিয়ে উঠতে নির্দেশনা দেয়ার পাশাপাশি সতর্কও করা হয়েছে। প্রশাসনের এই অভিযান আরও কয়েকদিন চলবে।
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের রামুর ঐতিহাসিক রাংকুট বৌদ্ধ বিহার পরিদর্শন করেছেন কক্সবাজার সফরে আসা ৩৪ কূটনীতিক।
বুধবার সকালে রাংকুট বৌদ্ধ বিহারে এসে পৌঁছালে কূটনীতিকদের স্বাগত জানান বিহারাধক্ষ্য জ্যোতিসেন মহাথেরো।
তিনি জানান, এ সময় দুই হাজার ৩০০ বছরের পুরোনো মহামতি বুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এই স্থান দেখে মুগ্ধ হন অতিথিরা। সেইসঙ্গে সম্রাট অশোক, চীনা পর্যটক হিউয়েন সাংয়ের আবক্ষ মূর্তিসহ বৌদ্ধ পুরাকীর্তি দেখে অভিভূত হন। অতিথিরা বিহারের বিভিন্ন দিক ঘুরে দেখেন।
পরিদর্শনকালে কক্সবাজার অঞ্চলের বৌদ্ধ ইতিহাস, স্থাপনা এবং সমুদ্র সৈকত- সব মিলিয়ে অপার পর্যটন সম্ভাবনাকে তোলে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার আশ্বাস দেন কূটনীতিকরা।
কূটনীতিকদের আগমনে বিহারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় এবং ঐতিহ্যবাহী পিঠাপুলি দিয়ে তাদের আপ্যায়ন করা হয়।
পরে তারা সমুদ্র সৈকতের লাবনীর ট্যুরিস্ট মার্কেটে যান। সেখানে ঝিনুকের দোকানসহ অন্যান্য হস্তশিল্প পণ্যের দোকান পরিদর্শন করেন।
এ সময় জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের নেতৃত্বে ২৪ দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার মিশন প্রধানসহ ৩৪ জন কূটনীতিক রেলে চড়ে কক্সবাজার যান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘অ্যাম্বাসেডরস আউট রিচ’ প্রোগ্রামের আওতায় যেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া, চীন, কোরিয়া, ইতালি, ডেনমার্ক, কসোভো, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, নেপাল, শ্রীলংকা, ভিয়েতনাম, ভ্যাটিকান, ভুটান, স্পেন, আর্জেন্টিনা, লিবিয়া, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, মিশর, ফ্রান্সের মিশন প্রধানসহ এফএও, আইইউটি ও একেডিএন-এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার কূটনীতিকরা দুদিনের সফরে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার যান।
বাংলাদেশের মহান স্থপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টকে ‘বঙ্গবন্ধু বীচ’ এবং সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টের মাঝখানের খালি জায়গাটি ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা বীচ’ নামকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সোমবার বিকেলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব মো. সাহেব উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘মুক্তিযুদ্ধা সংসদ কমান্ডের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান মো. সোলায়মান মিয়ার আবেদনের প্রেক্ষিতে একাদশ জাতীয় সংসদের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ১৩তম বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা বীচকে ‘বঙ্গবন্ধু বীচ’ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে সুগন্ধা বীচ ও কলাতলী বিচের মাঝখানের খালি জায়গা ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা বীচ’ নামকরণ করা হলো। একইসঙ্গে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশনা দেয়া হলো।’
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। এখানে জেলা প্রশাসন ও ট্যুরিস্ট পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের এটি বাস্তবায়নে আদেশ দেয়া হয়েছে।’
মিয়ানমার সীমান্তে চলমান উত্তেজনার কারণে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে নৌ-রুটে ভ্রমণ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। আগামী শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) থেকে কক্সবাজার ও টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে ভ্রমণ করা যাবে না।
বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) ইয়ামিন হোসেন।
তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তার স্বার্থে ১০ ফেব্রুয়ারি শনিবার থেকে সেন্টমার্টিনে নৌ-রুটে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন।’
এর আগে সকালে বিজিবির কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের (৩৪ বিজিবি) দায়িত্বপূর্ণ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু ও ঘুমধুম সীমান্ত এবং তৎসংলগ্ন বিওপি পরিদর্শনকালে বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুল জামান সিদ্দিকী ওই রুটে ভ্রমণ বন্ধ রাখার পরামর্শ দেন।
মন্তব্য