‘হায়রে হায়রে হায়, ও মুজা খালি গান গাইতে থাকো, সারা সিলেটোর লাগি একটা গান গাও না কেনে বা?’ সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় এই কথাগুলোর পরই শোনা যায় একটি নারীকণ্ঠ গেয়ে ওঠে, ‘আইলারে নয়া দামান আসমানেরও তেরা/ বিছানা বিছাইয়া দেও শাইল ধানের নেড়া/ দামান বও দামান বও।’
‘সারা সিলেটোর লাগি’ গাওয়ার কথা বলা হলেও এই গান আর শুধু ‘সারা সিলেটোর লাগি’ থাকেনি। বরং প্রবাসী মিউজিশিয়ান মুজার সংগীতায়োজনে এই গানটি এখন ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে সিলেট অঞ্চলে গীত হয়ে আসা ‘নয়া দামান’ গানে এখন মজেছে সবাই।
‘নয়া দামানের’ এই পুনর্জাগরণের নেপথ্যে রয়েছেন সিলেটেরই এক তরুণী। তার কণ্ঠে ভর করেই সিলেট অঞ্চলের এই বিয়ের গানটি এখন ভাইরাল। গানের সঙ্গে সেই তরুণীও এখন সবার পরিচিত। তার নামও আর কারও অজানা নয়। তিনি তোশিবা বেগম।
সিলেটি তরুণী তোশিবা সদ্য এইচএসসি পাস করেছেন। গান গাইতে ভালো লাগলেও শেখা হয়নি কখনো। তবে দরদ দিয়ে গাওয়ায় গানগুলো হৃদয় কাড়ছে সবার। তার গায়কীতে মুগ্ধ শ্রোতারা।
নিউজবাংলার প্রতিবেদকের কথা হয় তোশিবার সঙ্গে। জানতে চাওয়া হয় তার গানের জনপ্রিয়তার পেছনের গল্প।
তোশিবা জানান, গান না শিখলেও ছোটবেলা থেকেই নিজের মতো করে গান করেন। মূলত সিলেট অঞ্চলের লোকগানই করে থাকেন। বছর দুয়েক ধরে ফেসবুকে খালি গলায় গাওয়া নিজের কিছু কিছু গান আপলোড করা শুরু করেন। অনেকে তা পছন্দ করে।
ধীরে ধীরে তার গাওয়া গান ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। এরপর ৭-৮ মাস আগে থেকে টিকটক ব্যবহার শুরু করেন। টিকটকে পছন্দের কিছু গানের ২ থেকে ৩ লাইন গাইতেন। দ্রুতই টিকটকে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের তিন চিকিৎসকের নাচের সেই ভাইরাল ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে তোশিবার গাওয়া গানটি। মুজার সংগীতায়োজনে এই গানে বাঁশি বাজিয়েছেন মীম।
তোশিবা বলেন, ‘প্রায় দুই মাস আগে ‘আইলারে নয়া দামান’ গানের দুই লাইন গেয়ে টিকটকে দিয়েছিলাম। অনেক মানুষ এটা পছন্দ করে। এটি দেখে মুজা ভাই (প্রবাসী মিউজিশিয়ান মুজা) যোগাযোগ করেন। তিনি তার সঙ্গে এই গানটি করার প্রস্তাব দেন। আমি এতে সম্মত হই।’
মাসখানেক আগে নয়া দামান গানের ‘মুজা ফিচারিং তোশিবা’ ভার্সন নিজের ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করেন মুজা।
এরপরের গল্প তো সবার জানা। নেটিজেনদের মাঝে রীতিমতো হইচই পড়ে যায়।
শনিবার পর্যন্ত মুজার ইউটিউব চ্যানেলে এই গান শুনেছেন অর্ধকোটি শ্রোতা। এই গানের সঙ্গে খুলনার এক কনের নাচের ভিডিও ধারণ করে ইউটিউবে আপলোড করে ছায়াছবি নামের একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান। সেই ভিডিও দেখেছেন কোটি খানেক দর্শক।
আর করোনা রোগীদের সেবায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের উৎসাহ দিতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের তিন চিকিৎসকের নাচের ভিডিও তো সবার মোবাইলে মোবাইলে।
আগেকার দিনে শিল্পীদের তারকা হওয়ার মাধ্যম ছিল শুধু রেডিও-টেলিভিশন। জনপ্রিয় শিল্পীদের অনেকগুলো অ্যালবাম বের হতো। বছরজুড়ে তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে গান গাইতেন।
কয় বছর আগেও এটিই ছিল বাস্তবতা। কিন্তু এখন সেই চিত্র বদলে গেছে। এখন আর শিল্পী হওয়ার জন্য রেডিও-টেলিভিশনের আশায় বসে থাকতে হয় না, প্রযোজকদের দ্বারে-দ্বারে ঘুরতে হয় না।
প্রতিভা ও ইচ্ছা থাকলে সহজেই নিজের গান পৌঁছে দিতে পারেন মানুষের কাছে। পেয়ে যেতে পারেন তারকাখ্যাতি।
যেমন, তোশিবার কথাই ধরা যাক। রেডিও-টেলিভিশন তো দূরে থাক, জীবনে কোনো দিন কোনো অনুষ্ঠানেও গান করেননি। বের হয়নি কোনো অ্যালবাম। শুধু সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেই তার সামনে সম্ভাবনার দুয়ার খুলে গেছে।
তোশিবার নিজের একটি ইউটিউব চ্যানেল আছে। ‘তোশিবা বেগম’ নামের ওই ইউটিউব চ্যানেলে তিনি নিজের গাওয়া গান আপলোড করেন।
এ ছাড়া জনপ্রিয় ইউটিউবার ইমরানের চ্যানেল ‘মেড ইন বাংলাদেশের’ জন্য ৪-৫টা গান গেয়েছেন। এগুলোর মধ্যে ‘দুই আনার পিরীত’ গানটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
তোশিবাদের মূল বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতকে। এখন থাকেন সিলেটের খাদিমপাড়ায়। তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে মেজো তোশিবার লক্ষ্য সিলেটের গান সারা বিশ্বে তুলে ধরা।
তোশিবা বলেন, ‘আমি সিলেটের পুরোনো গানগুলি গাইতে চাই। সারা বিশ্বের মানুষের কাছে সিলেটের গানের বিপুল ভান্ডার তুলে ধরতে চাই। তবে ঠিক রাখতে চাই মূল সুর ও কথা, যাতে এগুলো বিকৃত হতে হতে হারিয়ে না যায়।
তবে কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, তোশিবার গাওয়া এই রিমিক্সে তিনি গানের মূল সুর নষ্ট করেছেন।
এই অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমি মূল সুর নষ্ট করিনি। রিমিক্স করা হয়েছে কিন্তু গানের সুর ঠিক রাখা হয়েছে।’
হঠাৎ করে পাওয়া এই তারকাখ্যাতি কেমন লাগে জানতে চাইলে তোশিবা বলেন, ‘সবাই নাম জানছে, গান শুনছে, প্রশংসা করছে। এটা ভালো লাগে। তবে আগামীতে আরও ভালো করতে চাই।’
তবে এই গান নিয়ে আক্ষেপও আছে তোশিবার। গানটি তার কণ্ঠে জনপ্রিয়তা পেলেও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে তার নাম তেমন আসছে না।
তোশিবার অভিযোগ, ‘টেলিভিশনে নিউজ হয়েছে কিন্তু আমার নাম সেভাবে বলা হয়নি। বলা হয়েছে, ছায়াছবি নাকি বিখ্যাত করেছে। অথচ ছায়াছবি আমার গান ব্যবহার করেছে।
‘ছায়াছবির অনেক আগে আমি টিকটকে গানের মাত্র দুই লাইন দিয়েছিলাম। সেটায় দুই লাখ ভিউ হয়েছে। মুজার চ্যানেলেও প্রচুর ভিউ হয়েছে। তোশিবা-মুজার মাধ্যমেই এই গান জনপ্রিয় হয়েছে।’
পুনশ্চ: ‘নয়া দামানের’ উৎসের সন্ধানে
গত ৩০ এপ্রিল ‘নয়া দামানের’ উৎসের সন্ধানে শিরোনামে নিউজবাংলায় সংবাদ প্রকাশ করা হয়। সেখানে নয়া দামান গানের উৎস, গীতিকার, সুরকার, শিল্পী, সময়কাল এই তথ্যগুলো খোঁজার চেষ্টা করা হয়।
প্রতিবেদনে লোকসংস্কৃতি গবেষক সুমনকুমার দাশ ‘গীতিকারের নাম না থাকায় এটি লোকগান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে’ উল্লেখ করে বলেন, ‘তবে ২০১৩ সালে আমাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সংগীতজ্ঞ রামকানাই দাশ গানটি তার মা দিব্যময়ী দাশের রচনা বলে জানিয়েছিলেন। অবশ্য সে গানের কথায় দামান শব্দের বদলে জামাই শব্দ রয়েছে।’
পণ্ডিত রামকানাই দাশের মেয়ে কাবেরী দাশও এমন তথ্য জানিয়েছেন, যা ওই প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে রামকানাই দাশের বড় বোন শিল্পী সুষমা দাশ বলেছেন, এই গান কার লেখা তা তিনি জানেন না।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর বেশ আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
প্রতিবেদনটি পড়ে শুক্রবার রাতে প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন রামকানাই দাশের কানাডাপ্রবাসী ছেলে পিনুসেন দাশ।
তিনি বলেন, ‘এই গানটি আমার ঠাকুরমা দিব্যময়ী দাশের। আমি ছোটবেলা থেকেই এটা শুনে আসছি। আমার বাবা রামকানাই দাশ বিভিন্ন বই ও সাক্ষাৎকারে তা বলে গেছেন। বাবা গীতিকার হিসেবে দিব্যময়ী দাশের নাম উল্লেখ করে বিভিন্ন জায়গায় এই গান গেয়েছেনও। ফলে এ নিয়ে বিতর্ক বা কোনো প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই।’
দিব্যময়ী দাশের মেয়ে সুষমা দাশের না জানা প্রসঙ্গে পিনুসেন বলেন, ‘তার (সুষমা দাশ) অনেক ছোটবেলায় বিয়ে হয়ে যায়। এরপর তিনি স্বামীর বাড়ি চলে যান। ফলে ঠাকুরমার সব গান সম্পর্কে তিনি না-ও জানতে পারেন। এ ছাড়া ঠাকুরমার গানগুলো আমার বাবাই খুঁজে খুঁজে বের করেছেন।’
নিজের বড় বোনের বরাত দিয়ে পিনুসেন বলেন, ‘আমি তখন খুব ছোট ছিলাম। তবে আমার বড় বোনের কাছে শুনেছি, আমার বাবার ছাত্রী এয়ারুন্নেছা খানম আমাদের বাড়ি থেকে গানটি নিয়ে এসে রেডিওতে গেয়েছিলেন।’
সুমনকুমার দাশকে দেয়া সাক্ষাৎকারে রামকানাই দাশ বলেছেন, দিব্যময়ী দাশের লেখা গানের প্রথম লাইন ছিল ‘আইলারে নয়া জামাই’। এয়ারুন্নেছা গেয়েছেন ‘আইলারে নয়া দামান’। বর্তমানে দামান শব্দটিই গানে বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে।
শব্দ বদলে ফেলা হলেও তখন কেন কোনো প্রতিবাদ করা হলো না, এমন প্রশ্নের জবাবে পিনুসেন বলেন, ‘তখন বাবা আপত্তি করেছিলেন। তবে আরও জোরালো প্রতিবাদ করা দরকার ছিল।’
রেডিওর আর্কাইভে এই গানের গীতিকারের জায়গায় সংগৃহীত লেখা থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রেডিওর তালিকাভুক্ত না হলে গীতিকারের নাম লেখা থাকে না।’
তোশিবাও বলেন, ‘এই গানটি দিব্যময়ীর বলে আমি শুনেছি। গান গাওয়ার সময় তার নাম উল্লেখ করা উচিত।’
তবে তোশিবাও জামাইয়ের পরিবর্তে দামান শব্দ ব্যবহার করেই গান গেয়েছেন।
আরও পড়ুন:ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সাথে শ্রম খাতের পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার, শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আজ বাংলাদেশ সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত এইস ই মাইকেল মিলারের মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে শ্রম আইন যুগোপযোগীকরণ, ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজেশন, শ্রমিকদের বিরুদ্ধে থাকা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি, শিশুশ্রম ও জবরদস্তিমূলক শ্রম নিরসন, সামাজিক সংলাপ জোরদার, ফ্যাক্টরি পরিদর্শন কার্যক্রম বৃদ্ধি এবং সামগ্রিকভাবে শ্রম খাতের সংস্কার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
শ্রম সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বৈঠকে বলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বরে ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ (টিসিসি) কর্তৃক স্বাক্ষরিত ১৮ দফা দাবি বাস্তবায়ন এবং শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ পর্যালোচনা করা হচ্ছে । মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা অনুযায়ী শ্রম উপদেষ্টার নেতৃত্বে শ্রম আইন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সংশোধন করা হবে। আগামী ২৬ আগস্ট ত্রিপক্ষীয় পরামর্শক পরিষদ (TCC) এর সভায় সংশোধনী প্রস্তাব উপস্থাপন করে সকল অংশীজনের মতামত গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরও জানান, শ্রমিক বা শ্রমিক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বা হয়রানিমুলক ৪৫ টি মামলার মধ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ইতোমধ্যে ৪৪ টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এর কনভেনশন সি ১৫৫ এবং সি ১৮৭ অনুস্বাক্ষর এবং কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি সহিংসতা ও হয়রানি বন্ধে কনভেনশন সি ১৯০ অনুস্বাক্ষরের প্রক্রিয়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। এছাড়া, ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ ও দ্রুততর করতে শ্রম অধিদপ্তর একে ডিজিটালাইজড করার কাজ করছে।
ইইউ রাষ্ট্রদূত এইস ই মাইকেল মিলার ট্রেড ইউনিয়ন গঠন ও তাদের কার্যক্রম পরিচালনায় নিয়োগকর্তা বা কোনো পক্ষের হস্তক্ষেপ না থাকতে দেওয়া, বাংলাদেশ শ্রম আইন (বিএলএ) এবং রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) শ্রম আইনের মধ্যে সামঞ্জস্য আনা, শ্রমিকদের বিরুদ্ধে চলমান সকল পুরনো ও বিচারাধীন মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি, নিয়মিত সামাজিক সংলাপের আয়োজন, শ্রমঘন এলাকায় ফ্যাক্টরি পরিদর্শন বাড়ানো এবং অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদেরও শ্রম আইনের আওতায় আনার গুরুত্বের উপর আলোকপাত করেন।
এছাড়াও বাংলাদেশের চলমান শ্রম সংস্কার কার্যক্রমের মধ্যে আন্তর্জাতিক শ্রম মানদণ্ডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কম্প্রিহেনসীভ শ্রম আইনের সংশোধনীর উপর তিনি গুরুতারোপ করেন। কেননা ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রাপ্ত 'এভরিথিং বাট আর্মস' (ইবিএ) সুবিধার ধারাবাহিকতায় স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পরে জিএসপি প্লাস বাজার সুবিধাসহ সেইফ গার্ড ক্লজের ক্ষেত্রে ইতিবাচক পদক্ষেপ বিবেচনার লক্ষ্যে শ্রম আইনের প্রত্যাশিত সংশোধনী ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান রাষ্ট্রদূত এইস ই মাইকেল মিলার।
বৈঠকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, “প্রাকৃতিকভাবে মাছ পাওয়ার স্থান ধ্বংস হলে মৎস্যজীবীরা মাছ পাবে না। বর্তমানে যেখানে যে পরিমাণ মাছ পাওয়ার কথা, তা পাওয়া যাচ্ছে না। এতে প্রকৃত মৎস্যজীবীরা বঞ্চিত হচ্ছে। তাই সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অমৎস্যজীবীদের কাছে আর জলাশয় ইজারা দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বাওড় ইজারা সমস্যার সমাধানে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেওয়া হয়েছে।
আজ বিকেলে রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫-এর মূল্যায়ন, সমাপনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মৎস্য অধিদপ্তর।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, মৎস্য সপ্তাহ শেষ হলেও, আজ থেকেই শুরু হলো সারা বছরের মৎস্য সপ্তাহ। নতুন উদ্যোমে কাজ শুরু করতে হবে। এ সপ্তাহে যেভাবে মানুষের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে, তা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। তিনি এ বছরের মৎস্য পদক প্রসঙ্গে বলেন, পদকপ্রাপ্তি বিষয়ে কোনো প্রকার তদবির হয়নি। একাধিক ধাপ অতিক্রম করেই যোগ্যদের পদক প্রদান করা হয়েছে।
বিএফআরআইয়ের তরুণ বিজ্ঞানীদের প্রশংসা করে উপদেষ্টা বলেন, অভয়াশ্রম নিয়ে আপনাদের নিবিড় গবেষণা আমাদের অনুপ্রাণিত করছে। গবেষণাকে কেবল কাগজে সীমাবদ্ধ না রেখে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োগ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় শুধু খাদ্য উৎপাদন নয়, এটি একটি বৌদ্ধিক কেন্দ্র (ইন্টেলেকচুয়াল স্পেস)। দেশের মানুষের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে ইলিশ সরবরাহ করতে হবে, আর আমরা তা করতে সক্ষম হবো।
অনুষ্ঠানে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ বলেন, ইলিশ উৎপাদন প্রকৃতি নির্ভর। অনেক জায়গায় বাধার কারণে ইলিশ সাগর থেকে নদীতে আসতে পারে না। ফলে ইলিশ আহরণ কম হয়, আর দাম বেড়ে যায়। তিনি আরও বলেন, চিংড়ি চাষ বৃদ্ধির জন্য নির্দিষ্ট জোন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হবে।
মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের। সম্মানিত অতিথি ছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. অনুরাধা ভদ্রা এবং মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের পরিচালক মোহাম্মদ বদরুল হক। অনুষ্ঠানে মৎস্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, মৎস্যজীবী ও সুধীজন অংশ নেন।
সিরাজগঞ্জে দুদকের ১৮১তম গণশুনানিতে ১৩৪টি অভিযোগের মধ্যে উত্থাপিত ৯৫ টি অভিযোগের মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে ৩৪টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়,৩২টি অভিযোগ দুদুক কর্তৃক অনুসন্ধান হবে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ২৬ টি অভিযোগের এবং আদালতে মামলা থাকায় ৩ টি অভিযোগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং দুর্নীতি প্রতিরোধের লক্ষ্যে রবিবার সকাল ৯টায় সিরাজগঞ্জ জেলার জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে দুদকের ১৮১ তম গণশুনানি উদ্বোধন করে প্রধান অতিথি দুদকের কমিশনার ( তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী বলেন, সুনীতি নয় তাই দুর্নীতি। সেবাদাতা ও সেবাগ্রহীতার মধ্যে দ্বন্দ্ব ও অনৈতিক কর্মকান্ডের কারণে দুর্নীতির প্রসার ঘটে। ছোট ছোট অসংগতি দিনে দিনে কিভাবে ক্ষোভের বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে তা বিগত গণহত্যাকারী পতিত সরকার হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে,এর চেয়ে আর ভাল উদাহরণ হতে পারে না।
বর্তমান দুর্নীতি দমন কমিশন ( মোমেন কমিশন) জিরো টলারেন্স নীতিতে চলছে,চলবে। আর দুর্নীতি নয়,দুর্নীতি নির্মূল করে সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলাই গণশুনানির উদ্দেশ্য।
দুদকের পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয় আয়োজিত ও সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় দুদকের ১৮১তম গণশুনানিতে সভাপতিত্ব করেন সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম।
গণশুনানিতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দুর্নীতি দমন কমিশনের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মোঃ ফজলুল হক। অতিথিবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দুদকের মহাপরিচালক ( প্রতিরোধ) মোঃ আখতার হোসেন, মহাপরিচালক ( তদন্ত ১) মুহাম্মদ রেজাউল করিম ও পুলিশ সুপার মোঃ ফারুক হোসেন।
কানায় কানায় পূর্ণ অডিটোরিয়ামে জেলার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ,ছাত্র জনতাসহ সহকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারী গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে দাখিলকৃত ১৩৪ অভিযোগের মধ্যে ৯৫টি উত্থাপিত হয়। সকাল ৯টা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকেলে ৫টা পর্যন্ত গণ শুনানির মডারেট করেন জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম।
দুদকের উপপরিচালক ( জনসংযোগ) মোঃ আকতারুল ইসলাম জানান গণশুনানিতে বিভিন্ন সরকারি অফিসে সেবা প্রাপ্তিতে হয়রানীর শিকার বা সেবা বঞ্চিত সংক্ষুব্ধ জনসাধারণ তাদের অভিযোগসমূহ সিরাজগঞ্জ জেলার সকল সরকারি দপ্তর প্রধানদের উপস্থিতিতে কমিশনের সামনে তুলে ধরেন। একই সাথে সেবা বঞ্চিত জনসাধরণের উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে দুদক কর্তৃক তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। সরকারি পরিষেবা প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ এবং সরকারি কর্মকর্তাদের মাঝে সততা, নিষ্ঠা, জবাবদিহিতা ও মূল্যাবোধ বৃদ্ধি করার মাধ্যমে দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করাই ছিল এই গণশুনানির মূল অভিপ্রায়।
ডাকসুর সাবেক ভিপি ও মন্ত্রী আমান উল্লাহ আমান বলেছেন, শেখ হাসিনা দেশে কোন উন্নয়ন করেনি, শুধু নাম পরিবর্তন করেছে, আর আল্লাহ তাকেই পরিবর্তন করে দিয়েছেন।
রবিবার (২৪ আগস্ট) বিকেলে কেরানীগঞ্জের হিজলা আইডিয়াল হাইস্কুল মাঠে নতুন ভাবন নির্মাণ কাজের উদ্বোধন পরবর্তী এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন পর আল্লাহ জনগণকে ভোট দেওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। দল হিসেবে আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধ করেছে বর্তমান সরকার, তাদের নেতারা হত্যা-গুমের অপরাধে পালিয়ে বেড়াচ্ছে, হাসিনাসহ তাদের নেতাদের ফাঁসি হবে, আর সে ফাঁসির ভয়ে হলেও তারা আর ফিরে আসবেনা।
যে যাই বলুক দেশে আওয়ামী লীগের আর রাজনীতি করার সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ইরফান ইবনে আমান অমি বলেন, আগামী নির্বাচনেরর রোডম্যাপ অনুযায়ী ফেব্রুয়ারিতে যে নির্বাচন, সে নির্বাচনে সরকার গঠন করবে বিএনপি।
স্কুল কমিটির সভাপতি হাজী তাজ উদ্দিন আহমেদ এর সভাপতিত্বে এসময় উপস্থিত ছিলেন কেরানীগঞ্জ মডেল উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শামিম হাসান, সাধারণ সম্পাদক হাসমত উল্লাহ নবী, সাবেক যুবদলের আহবায়ক মাসুদ রানা, সেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ওয়ালিউল্লাহ সেলিম, ছাত্রদল নেতা হাজী সাইফুলসহ দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে তাঁর বাসভবনে গেছেন বাংলাদেশ সফররত পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার।
দলটির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানিয়েছেন, পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধি দল আজ সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবনে সাক্ষাৎ করেন। তারা এই সময় খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেন।
সাক্ষাৎকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ. জেড. এম. জাহিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার আজ রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বাসস’কে এ তথ্য জানান।
ইসহাক দার দুই দিনের বাংলাদেশ সফরে গতকাল ঢাকায় পৌঁছান।
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার কুসুম্বা ইউনিয়নের হাকিমপুর কৈজুরি বেগম নুরজাহান রিয়াজ (বিএনআর) উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কৃষি) গোলাম রসুল দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকেও ইএফটি’র মাধ্যমে নিয়মিত সরকারী প্রদত্ত বেতন ভাতা উত্তোলন করছেন।
অথচ গোলাম রসুল একটি হত্যা মামলার আসামি থাকায় গত ৮ মাস ধরে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। বিনা ছুটিতে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকায় কর্তৃপক্ষ এই শিক্ষককে বার বার নোটিশ দিলেও কোন সাড়া মেলেনি তার। একারণে তার অনুপস্থিতিতে বিদ্যালয়ের কৃষি শিক্ষা বিষয়ে পাঠদানে ব্যাহত হচ্ছে।
দ্রুত সময়ের মধ্যে সহকারী শিক্ষক গোলাম রসুলের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে গোলাম রসুলের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রুবাইয়াত আফরিন বলে, কৃষি শিক্ষক ৮ মাস থেকে বিদ্যালয়ে আসে না। মাঝে মধ্যে প্রধান শিক্ষক ক্লাস নিলেও অনেক ক্লাশ হয় না। এ কারণে আমাদের কৃষি শিক্ষা বিষয়ে পড়াশুনার ক্ষতি হচ্ছে।
হাকিমপুর কৈজুরি বেগম নুরজাহান রিয়াজ (বিএনআর) উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইদুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কৃষি) গোলাম রসুল দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার কারণে আমরা বিভিন্ন ভাবে তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাইনি। সে কারণে বিধি মোতাবেক তাকে কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করা হয়। সেখানে জবাব না পাওয়াই আমি বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিত ভাবে অবহিত করলে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। তদন্ত কমিটি তদন্ত পূর্বক তাহার বেতন ভাতা বন্ধের সুপারিশ করেন। পরবর্তীতে তদন্তের আলোকে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত করলে বিদ্যালয়ে পরিদর্শন করে তিনিও তার বেতন বন্ধের সুপারিশ করেন। বর্তমানে ইএফটি'র মাধ্যমে তাকে প্রদত্ত বেতন ভাতা বন্ধের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে আবেদন পাঠানো হয়েছে।
মন্তব্য