‘হায়রে হায়রে হায়, ও মুজা খালি গান গাইতে থাকো, সারা সিলেটোর লাগি একটা গান গাও না কেনে বা?’ সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় এই কথাগুলোর পরই শোনা যায় একটি নারীকণ্ঠ গেয়ে ওঠে, ‘আইলারে নয়া দামান আসমানেরও তেরা/ বিছানা বিছাইয়া দেও শাইল ধানের নেড়া/ দামান বও দামান বও।’
‘সারা সিলেটোর লাগি’ গাওয়ার কথা বলা হলেও এই গান আর শুধু ‘সারা সিলেটোর লাগি’ থাকেনি। বরং প্রবাসী মিউজিশিয়ান মুজার সংগীতায়োজনে এই গানটি এখন ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে সিলেট অঞ্চলে গীত হয়ে আসা ‘নয়া দামান’ গানে এখন মজেছে সবাই।
‘নয়া দামানের’ এই পুনর্জাগরণের নেপথ্যে রয়েছেন সিলেটেরই এক তরুণী। তার কণ্ঠে ভর করেই সিলেট অঞ্চলের এই বিয়ের গানটি এখন ভাইরাল। গানের সঙ্গে সেই তরুণীও এখন সবার পরিচিত। তার নামও আর কারও অজানা নয়। তিনি তোশিবা বেগম।
সিলেটি তরুণী তোশিবা সদ্য এইচএসসি পাস করেছেন। গান গাইতে ভালো লাগলেও শেখা হয়নি কখনো। তবে দরদ দিয়ে গাওয়ায় গানগুলো হৃদয় কাড়ছে সবার। তার গায়কীতে মুগ্ধ শ্রোতারা।
নিউজবাংলার প্রতিবেদকের কথা হয় তোশিবার সঙ্গে। জানতে চাওয়া হয় তার গানের জনপ্রিয়তার পেছনের গল্প।
তোশিবা জানান, গান না শিখলেও ছোটবেলা থেকেই নিজের মতো করে গান করেন। মূলত সিলেট অঞ্চলের লোকগানই করে থাকেন। বছর দুয়েক ধরে ফেসবুকে খালি গলায় গাওয়া নিজের কিছু কিছু গান আপলোড করা শুরু করেন। অনেকে তা পছন্দ করে।
ধীরে ধীরে তার গাওয়া গান ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। এরপর ৭-৮ মাস আগে থেকে টিকটক ব্যবহার শুরু করেন। টিকটকে পছন্দের কিছু গানের ২ থেকে ৩ লাইন গাইতেন। দ্রুতই টিকটকে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের তিন চিকিৎসকের নাচের সেই ভাইরাল ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে তোশিবার গাওয়া গানটি। মুজার সংগীতায়োজনে এই গানে বাঁশি বাজিয়েছেন মীম।
তোশিবা বলেন, ‘প্রায় দুই মাস আগে ‘আইলারে নয়া দামান’ গানের দুই লাইন গেয়ে টিকটকে দিয়েছিলাম। অনেক মানুষ এটা পছন্দ করে। এটি দেখে মুজা ভাই (প্রবাসী মিউজিশিয়ান মুজা) যোগাযোগ করেন। তিনি তার সঙ্গে এই গানটি করার প্রস্তাব দেন। আমি এতে সম্মত হই।’
মাসখানেক আগে নয়া দামান গানের ‘মুজা ফিচারিং তোশিবা’ ভার্সন নিজের ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করেন মুজা।
এরপরের গল্প তো সবার জানা। নেটিজেনদের মাঝে রীতিমতো হইচই পড়ে যায়।
শনিবার পর্যন্ত মুজার ইউটিউব চ্যানেলে এই গান শুনেছেন অর্ধকোটি শ্রোতা। এই গানের সঙ্গে খুলনার এক কনের নাচের ভিডিও ধারণ করে ইউটিউবে আপলোড করে ছায়াছবি নামের একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান। সেই ভিডিও দেখেছেন কোটি খানেক দর্শক।
আর করোনা রোগীদের সেবায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের উৎসাহ দিতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের তিন চিকিৎসকের নাচের ভিডিও তো সবার মোবাইলে মোবাইলে।
আগেকার দিনে শিল্পীদের তারকা হওয়ার মাধ্যম ছিল শুধু রেডিও-টেলিভিশন। জনপ্রিয় শিল্পীদের অনেকগুলো অ্যালবাম বের হতো। বছরজুড়ে তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে গান গাইতেন।
কয় বছর আগেও এটিই ছিল বাস্তবতা। কিন্তু এখন সেই চিত্র বদলে গেছে। এখন আর শিল্পী হওয়ার জন্য রেডিও-টেলিভিশনের আশায় বসে থাকতে হয় না, প্রযোজকদের দ্বারে-দ্বারে ঘুরতে হয় না।
প্রতিভা ও ইচ্ছা থাকলে সহজেই নিজের গান পৌঁছে দিতে পারেন মানুষের কাছে। পেয়ে যেতে পারেন তারকাখ্যাতি।
যেমন, তোশিবার কথাই ধরা যাক। রেডিও-টেলিভিশন তো দূরে থাক, জীবনে কোনো দিন কোনো অনুষ্ঠানেও গান করেননি। বের হয়নি কোনো অ্যালবাম। শুধু সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেই তার সামনে সম্ভাবনার দুয়ার খুলে গেছে।
তোশিবার নিজের একটি ইউটিউব চ্যানেল আছে। ‘তোশিবা বেগম’ নামের ওই ইউটিউব চ্যানেলে তিনি নিজের গাওয়া গান আপলোড করেন।
এ ছাড়া জনপ্রিয় ইউটিউবার ইমরানের চ্যানেল ‘মেড ইন বাংলাদেশের’ জন্য ৪-৫টা গান গেয়েছেন। এগুলোর মধ্যে ‘দুই আনার পিরীত’ গানটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
তোশিবাদের মূল বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতকে। এখন থাকেন সিলেটের খাদিমপাড়ায়। তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে মেজো তোশিবার লক্ষ্য সিলেটের গান সারা বিশ্বে তুলে ধরা।
তোশিবা বলেন, ‘আমি সিলেটের পুরোনো গানগুলি গাইতে চাই। সারা বিশ্বের মানুষের কাছে সিলেটের গানের বিপুল ভান্ডার তুলে ধরতে চাই। তবে ঠিক রাখতে চাই মূল সুর ও কথা, যাতে এগুলো বিকৃত হতে হতে হারিয়ে না যায়।
তবে কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, তোশিবার গাওয়া এই রিমিক্সে তিনি গানের মূল সুর নষ্ট করেছেন।
এই অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমি মূল সুর নষ্ট করিনি। রিমিক্স করা হয়েছে কিন্তু গানের সুর ঠিক রাখা হয়েছে।’
হঠাৎ করে পাওয়া এই তারকাখ্যাতি কেমন লাগে জানতে চাইলে তোশিবা বলেন, ‘সবাই নাম জানছে, গান শুনছে, প্রশংসা করছে। এটা ভালো লাগে। তবে আগামীতে আরও ভালো করতে চাই।’
তবে এই গান নিয়ে আক্ষেপও আছে তোশিবার। গানটি তার কণ্ঠে জনপ্রিয়তা পেলেও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে তার নাম তেমন আসছে না।
তোশিবার অভিযোগ, ‘টেলিভিশনে নিউজ হয়েছে কিন্তু আমার নাম সেভাবে বলা হয়নি। বলা হয়েছে, ছায়াছবি নাকি বিখ্যাত করেছে। অথচ ছায়াছবি আমার গান ব্যবহার করেছে।
‘ছায়াছবির অনেক আগে আমি টিকটকে গানের মাত্র দুই লাইন দিয়েছিলাম। সেটায় দুই লাখ ভিউ হয়েছে। মুজার চ্যানেলেও প্রচুর ভিউ হয়েছে। তোশিবা-মুজার মাধ্যমেই এই গান জনপ্রিয় হয়েছে।’
পুনশ্চ: ‘নয়া দামানের’ উৎসের সন্ধানে
গত ৩০ এপ্রিল ‘নয়া দামানের’ উৎসের সন্ধানে শিরোনামে নিউজবাংলায় সংবাদ প্রকাশ করা হয়। সেখানে নয়া দামান গানের উৎস, গীতিকার, সুরকার, শিল্পী, সময়কাল এই তথ্যগুলো খোঁজার চেষ্টা করা হয়।
প্রতিবেদনে লোকসংস্কৃতি গবেষক সুমনকুমার দাশ ‘গীতিকারের নাম না থাকায় এটি লোকগান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে’ উল্লেখ করে বলেন, ‘তবে ২০১৩ সালে আমাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সংগীতজ্ঞ রামকানাই দাশ গানটি তার মা দিব্যময়ী দাশের রচনা বলে জানিয়েছিলেন। অবশ্য সে গানের কথায় দামান শব্দের বদলে জামাই শব্দ রয়েছে।’
পণ্ডিত রামকানাই দাশের মেয়ে কাবেরী দাশও এমন তথ্য জানিয়েছেন, যা ওই প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে রামকানাই দাশের বড় বোন শিল্পী সুষমা দাশ বলেছেন, এই গান কার লেখা তা তিনি জানেন না।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর বেশ আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
প্রতিবেদনটি পড়ে শুক্রবার রাতে প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন রামকানাই দাশের কানাডাপ্রবাসী ছেলে পিনুসেন দাশ।
তিনি বলেন, ‘এই গানটি আমার ঠাকুরমা দিব্যময়ী দাশের। আমি ছোটবেলা থেকেই এটা শুনে আসছি। আমার বাবা রামকানাই দাশ বিভিন্ন বই ও সাক্ষাৎকারে তা বলে গেছেন। বাবা গীতিকার হিসেবে দিব্যময়ী দাশের নাম উল্লেখ করে বিভিন্ন জায়গায় এই গান গেয়েছেনও। ফলে এ নিয়ে বিতর্ক বা কোনো প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই।’
দিব্যময়ী দাশের মেয়ে সুষমা দাশের না জানা প্রসঙ্গে পিনুসেন বলেন, ‘তার (সুষমা দাশ) অনেক ছোটবেলায় বিয়ে হয়ে যায়। এরপর তিনি স্বামীর বাড়ি চলে যান। ফলে ঠাকুরমার সব গান সম্পর্কে তিনি না-ও জানতে পারেন। এ ছাড়া ঠাকুরমার গানগুলো আমার বাবাই খুঁজে খুঁজে বের করেছেন।’
নিজের বড় বোনের বরাত দিয়ে পিনুসেন বলেন, ‘আমি তখন খুব ছোট ছিলাম। তবে আমার বড় বোনের কাছে শুনেছি, আমার বাবার ছাত্রী এয়ারুন্নেছা খানম আমাদের বাড়ি থেকে গানটি নিয়ে এসে রেডিওতে গেয়েছিলেন।’
সুমনকুমার দাশকে দেয়া সাক্ষাৎকারে রামকানাই দাশ বলেছেন, দিব্যময়ী দাশের লেখা গানের প্রথম লাইন ছিল ‘আইলারে নয়া জামাই’। এয়ারুন্নেছা গেয়েছেন ‘আইলারে নয়া দামান’। বর্তমানে দামান শব্দটিই গানে বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে।
শব্দ বদলে ফেলা হলেও তখন কেন কোনো প্রতিবাদ করা হলো না, এমন প্রশ্নের জবাবে পিনুসেন বলেন, ‘তখন বাবা আপত্তি করেছিলেন। তবে আরও জোরালো প্রতিবাদ করা দরকার ছিল।’
রেডিওর আর্কাইভে এই গানের গীতিকারের জায়গায় সংগৃহীত লেখা থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রেডিওর তালিকাভুক্ত না হলে গীতিকারের নাম লেখা থাকে না।’
তোশিবাও বলেন, ‘এই গানটি দিব্যময়ীর বলে আমি শুনেছি। গান গাওয়ার সময় তার নাম উল্লেখ করা উচিত।’
তবে তোশিবাও জামাইয়ের পরিবর্তে দামান শব্দ ব্যবহার করেই গান গেয়েছেন।
আরও পড়ুন:প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এ কথা জানিয়েছে।
আবু সাঈদ হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ও অভিযোগ পত্র প্রত্যাখান করে সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থীরা।
২৬ জুন সন্ধ্যায় তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে সংবাদ সম্মেলন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন, যারা জড়িত নয় তদন্ত প্রতিবেদনে তাদেরও জড়ানো হয়েছে। এছাড়া প্রকৃত দুই তিনজন আসামিকে আড়ালের চেষ্টা করা হয়েছে।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্তু আবু সাঈদ হত্যার সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
এ সময় শিক্ষার্থীরা সাবেক প্রক্টরকে নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন। এবং এর পুনরায় তদন্ত দাবি করেন। একই সময় তারা আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচারের দাবিও করেন।
এ সময় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা তাদের (ট্রাইব্যুনাল) সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে বসতে চেয়েছি কিন্তু তারা আসেনি। তারা বলছে হামলা নাকি ক্যাম্পাসের ভেতর থেকে হয়েছে। এটা মিথ্যাচার। বাংলাদেশের বিচারহীনতার বড় প্রমাণ আজ এই অফিযোগপত্র দেওয়ার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষকের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুমন আহমেদ বলেন, আবু সাঈদ হত্যা মামলায় অভিযোগ পত্র প্রকাশের আগে তদন্ত কমিটির রংপুর এসে আবু সাঈদ হত্যার সাক্ষী ও সহযোদ্ধাদের সঙ্গে বসে অভিযোগ পত্র প্রকাশ করার কথা ছিলো। কিন্তু তারা কারো সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না করে মনগড়া তদন্ত করে অভিযোগপত্র প্রকাশ করেছে। যা এক ধরনের প্রহসন। তাই এই মিথ্যা প্রহসন ও মিথ্যা তদন্তকে বেরোবি শিক্ষার্থীরা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং তারই ধারাবাহিকতায় আমরা প্রশাসনিক ভবনে সকল ডিপার্টমেন্টর শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি।
যতক্ষণ পর্যন্ত আবু সাঈদ হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, শহীদ আবু সাঈদকে নিয়ে কোনো প্রহসন সহ্য করা হবে না। প্রকৃত আসামিদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী বলেন, এটাতো আইনের বিষয়ে তারা কি করছে এখনতো আমরা জানি না। সাবেক প্রক্টর শরিফুলের এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল কি ছিলো না তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করলে জানা যাবে। তারা কি তদন্ত রিপোর্ট দিবে তা তো শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে দেবে না।
উল্লেখ্য, এ মামলায় চার আসামি কারাগারে রয়েছেন। তারা হলেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক আমির হোসেন, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় ও ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী আকাশ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চলমান আন্দোলনে রাজস্ব আদায় কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান।
এনবিআর চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘আপনারা আমরা সবাই দেশের জন্য কাজ করব। আমাদের সবার আগে দেশের স্বার্থ নিয়ে চিন্তা করা উচিত। যেকোনো ধরনের সংস্কার করি, আইন করি বা আন্দোলন ও সংগ্রাম করি, সবই যেন আমাদের নিজেদের জন্য না হয়ে দেশের জন্য হয়।’
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) কার্যালয়ে ইয়ুথ পলিসি নেটওয়ার্ক আয়োজিত ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা ও ভ্যাট’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন এনবিআর চেয়ারম্যান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
সেমিনারে ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা। এ সময় ইয়ুথ পলিসি নেটওয়ার্কের গবেষণাপ্রধান ইমরুল হাসান তার উপস্থাপনায় বলেন, ‘আমরা দেশের ১৫টি স্থানে ১ হাজার ২২ জন নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর গবেষণা পরিচালনা করেছি। গবেষণায় আমরা দেখতে পেয়েছি, তাদের মধ্য ৮৮ শতাংশ নিম্ন আয়ের মানুষ এক বেলা বিস্কুট ও পাউরুটি খান। তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশেরই প্রত্যাশ্য ছিল, এই বাজেটে এসব পণ্যর ওপর ট্যাক্স নিয়ে দৃশ্যমান পদক্ষেপ আসবে। তবে এ নিয়ে তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।’
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এনবিআরের চেয়ারম্যান আরও বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম বাজেটের আকার কমেছে। লক্ষ্য ছিল, মানুষের ওপর যেন চাপ না পড়ে। বাজেটের আকার যতটা ছোট হয়েছে—ধরে নিতে হবে, রাষ্ট্র ততটা সঞ্চয় করেছে, ততটা ঋণের চাপ কমেছে।
চেয়ারম্যান আরও জানান, চলতি অর্থবছরে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমার সংখ্যা ১৭ লাখ ছাড়িয়েছে। যেখানে গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৫ লাখ। গতবার অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া সেপ্টেম্বরে শুরু হলেও এবার জুলাই থেকেই অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়া যাবে। এছাড়া ব্যবসায়ীদের লাইসেন্সসহ অন্যান্য সুবিধার জন্য চালু হচ্ছে ‘ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো’। এর ফলে ১৯টি সংস্থার ১১০ ধরনের লাইসেন্স, অনুমোদন ও সনদ অনলাইনে জমা ও গ্রহণ করা যাবে।
করনীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে অনেকগুলো বিষয় একসঙ্গে বিবেচনা করতে হয়। একদিকে যেমন রাজস্ব আয়ের নির্ধারিত লক্ষ্যে থাকে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার শর্ত পূরণের চাহিদাও মাথায় রাখতে হয়। আগামী বছর উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় যুক্ত হওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে দেশের বেশ কিছু কাঠামোগত সংস্কার করতে হবে। এর মধ্যে শুল্ক হার কমিয়ে আনা অন্যতম। বর্তমানে দেশের কিছু পণ্যে সর্বোচ্চ ৮০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দিতে হয়। এই শুল্ক কমাতে হবে ধাপে ধাপে। তা না হলে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের ধাক্কা সামলানো কঠিন হবে।
আবদুর রহমান খান আরও বলেন, পাউরুটি ও বিস্কুটে ভ্যাট বাড়ানো হলেও এই বাড়তি ভ্যাট ব্যবসায়ীরা নিজেরা বহন না করে পুরো বোঝা ভোক্তার ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন কি না, সে বিষয়েও আমাদেরে খেয়াল রাখতে হবে। সরকারের কর যেখান থেকে নেওয়ার কথা, সেখান থেকে নিতে পারলে সহজেই করছাড় দেওয়া যেত। অনেক সময় আবার কর বাড়ানোর যে সুবিধার কথা বলা হয়, তা ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছায় না। এর ফলে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় সরকারের ঋণ নেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।
বয়স ষাট পেরিয়েছে। সংসার উন্নতির আশায় রাস্তার পাশে ছোট্ট একটি দোকানে ডিম, সিঙ্গাড়া, পাপড় ও পরোটা বিক্রি করে জীবনের প্রায় অর্ধেক সময় পার করেছেন। পরিশ্রম করলেও ভাগ্য তার এখনো সহায় হয়নি। অভাব ঘোচানোর আশায় যে সংগ্রাম শুরু করেছিলেন তা এখন রূপ নিয়েছে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে।
প্রায় বছর ৩৫ আগে শ্রবণ প্রতিবন্ধী ঝর্ণার বিয়ে হয় একই এলাকার হরিচাঁদ বিশ্বাসের সঙ্গে। বিয়ের পর সহায়সম্বলহীন স্বামীর সঙ্গে থাকতেন সদর উপজেলার শেখহাপি ইউনিয়নের মালিয়াট বাজারের একটি ঝুপড়ি ঘরে। সে সময় স্বামীর অভাবের সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে ঘরের সামনে ছোট একটি দোকান দেন ঝর্ণা। সেখানে ডিম, সিঙ্গাড়া, পাপড়, পরোটা বিক্রি শুরু করেন। স্বামীও খেত-খামারে কাজ করে আয়-রোজগার করতেন তখন। তবে বিয়ের দীর্ঘদিন পার হলেও তাদের কোনো সন্তানাদি না হওয়ায় ঝর্ণার সম্মতিতে স্বামী হরিচান দ্বিতীয় বিয়ে করেন।
সেই ঘরে এক সন্তানের জন্ম হয়। দুজনের সংসার হয় চারজনের। ঝুপড়ি ঘরে জায়গা না হওয়ায় পাশে সরকারি জমিতে একটি দোচালা ঘর উঠিয়ে সেখানে বসবাস শুরু করেন ৷ গাদাগাদি করে এখনো সেখানেই বসবাস করছেন তারা। একই সঙ্গে ৩০ বছর ধরে রাস্তার পাশে ডিম-সিঙাড়া বিক্রি করে যাচ্ছেন ঝর্ণা ৷ তবে এসব বিক্রি করে এখন আর তেমন আয় নেই। স্বামীর রোজগারও ভাল না। কোনোমতে চলছে তাদের সংসার। সচ্ছলতা ফেরানোর সংগ্রামে জয়ী না হতে পেরে এখন কেবল বেঁচে থাকার লড়াই চালাচ্ছেন ঝর্ণা ও তার পরিবার।
মালিয়াট এলাকার বাসিন্দা শংকর বিশ্বাস ও নিউটন গোস্বামী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ঝর্ণা বিশ্বাস এখানে দোকানদারি করছেন। এই দোকান থেকে যে আয় হয় তাতে তাদের সংসার চলে না। তাদের কোন জায়গা-জমি নেই, সরকারি জমিতে থাকে। তারা যদি একটু সরকারি সাহায্য পায় তাহলে ভাল লাগবে।’
ঝর্ণার স্বামী হরিচাণ বিশ্বাস বলেন, ‘দোকান চালাতে ঝর্ণাকে সবসময় সহযোগিতা করি। তবে এখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে আর বাঁচা যাচ্ছে না। কোন রকমে চলছে সংসার। খুব কষ্টে দিন যায়। ঝর্ণা বিশ্বাস বলেন, এই দোকান ঘরেই এক সময় স্বামীর সঙ্গে বসবাস করতাম। এখন পাশের একটা সরকারি জায়গায় কোনোমতে থাকি। প্রায় ২৫-৩০ বছর ধরে এই দোকানদারি করছি। এই ব্যবসায় এখন আর সংসার চলে না। তারপরও বাঁচতে তো হবে। তাই দুচার টাকা আয়ের আশায় দোকানদারি করি। সরকারি একটু সাহায্য-সহযোগিতা পেলে একটু ভালোভাবে বসবাস করতে পারতাম।
শেখহাটি ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সুরঞ্জন গুপ্ত বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মালিয়াট বাজারে সিঙ্গারা, ঝালমুড়ি বিক্রি করে সংসার চালায়। সে একজন অসহায় প্রতিবন্ধী। ইতোমধ্যে তাকে একটি প্রতিবন্ধী কার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগামীতে ঝর্ণাকে সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করবেন বলে জানান। সরকারের সহযোগিতা পেলে তাদের উপকার হবে।
শেখহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অশোক বিশ্বাস বলেন, সরকারি সহায়তা বরাদ্দ পেলে অসহায় দরিদ্র শ্রেণির মানুষকে ভাল রাখার চেষ্টা করি। ঝর্ণা রানীকে সাধ্যমত সহায়তা করা হয়েছে। আগামিতেও করা হবে।
উজান থেকে নেমে আশা পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীতে হু-হু করে বাড়ছে পানি। এতে জেলার অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়তে শুরু করেছে।
ফলে জেলা সদর, কাজীপুর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার চরাঞ্চলের অনেক গ্রামের ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। ইতোমধ্যে নিম্নাঞ্চলের বিস্তীর্ণ অংশে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ৬ দিনে যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ হার্ড পয়েন্ট এলাকায় ১০৭ ও কাজিপুর মেঘাইঘাট পয়েন্টে ১১২ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্রুত পানি বৃদ্ধির কারণে নদী তীরবর্তী অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে চরের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ায় ফসলি জমিতে পানি ওঠায় ফসলের ক্ষেত নষ্ট হচ্ছে।
সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়নের বর্ণি গ্রামের কৃষক মতিন মোল্লা জানান, গত কয়েকদিন ধরে যমুনা নদীতে দ্রুতগতিতে পানি বাড়ছে। এতে চরাঞ্চলের বিভিন্ন ফসলের ক্ষেতে প্লাবিত হচ্ছে। এতে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
বাড়াবাড়ি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল জানান, উজানে বৃষ্টিপাত বেড়েছে এবং মেঘের অবস্থান দেশের উত্তরের দিকে রয়েছে, ফলে পানি বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকবে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টির কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে যমুনায় পানি বাড়ছে। গত ২৪ ঘন্টায় শহর রক্ষা বাঁধ হার্ড পয়েন্টে ৪৪ সেন্টিমিটার ও কাজিপুর মেঘাই ঘাট পয়েন্টে ৪৮ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে পানি বাড়লেও সিরাজগঞ্জে বিপৎসীমার ১৯৯ সেন্টিমিটার ও কাজীপুরে ২১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বাড়লেও বন্যার কোন আশঙ্কা নেই।
নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ এলাকার দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থী দীর্ঘদিন ধরে ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্য দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। জরাজীর্ণ ও ভাঙা ভবনের কারণে শিক্ষার্থীরা যখন তখন প্রাণ হারানোর আশঙ্কা নিয়ে স্কুলে আসে। শ্রেণিকক্ষ সংকট চরমে পৌঁছানোয় পাশের একটি মন্দিরে চলছে পাঠদান। এতে করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি মানসিকভাবে তারাও রয়েছে আতঙ্কে।
দুটি ঝুঁকিপূর্ণ স্কুল হলো ২৬নং লক্ষীনারায়ণ বালক ও ২৭ নং লক্ষীনারায়ণ বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯৩৭ সালে স্থাপিত এই দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে একটি পুরোনো দুতলা ভবনে চলছিল। ভবনটিতে ৭টি শ্রেণিকক্ষ থাকলেও বর্তমানে ৪টি কক্ষ ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে দুই শিফটে ১৪ জন শিক্ষক প্রায় ৭০০ শিক্ষার্থীকে পাঠদান করে যাচ্ছেন। দুই দফা ভূমিকম্পে ফাটল ও পলেস্তারা খসে পড়ার ভয়াবহতা- ২০১৫ সালে এক ভূমিকম্পে ভবনের দ্বিতীয় তলায় ফাটল ধরে ও পলেস্তারা খসে পড়ে। এরপর ২০১৮ সালের আরেক ভূমিকম্পে ভবনের আরও দুটি কক্ষে ফাটল দেখা দেয়। ভবনের ছাদ, দেওয়াল ও সিঁড়ির অবস্থা এতটাই নাজুক হয়ে পড়ে যে ছাদ ধসে পড়ার আশঙ্কায় বাঁশ দিয়ে ঠেস দিয়ে রাখা হয়েছে। শ্রেণিকক্ষ সংকটে মন্দিরে ক্লাস- বর্তমানে স্কুলের দ্বিতীয় তলার পাঠদান কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ। বাধ্য হয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ ২০২৩ সাল থেকে পার্শ্ববর্তী লক্ষীনারায়ণ জিউর মন্দিরের দুটি কক্ষে আংশিক পাঠদান কার্যক্রম চালাচ্ছে। পাশাপাশি নিচতলার মাত্র দুটি কক্ষে চলছে ক্লাস। সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টা এবং দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দুই শিফটে চলছে এই ‘জীবনের ঝুঁকি’ মিশ্রিত শিক্ষা। শিক্ষার্থীদের ভাষায়- ক্লাস নয়, আতঙ্কে কাটে দিন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী উর্মি দাস বলে, ‘স্কুলে এসে সব সময় ভয় লাগে। খেলতে পারি না, মনোযোগ দিতে পারি না। কখন যে ভবন ভেঙে পড়ে এই চিন্তায় থাকি।’ চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী নিলয় চক্রবর্তী জানায়, ‘আমাদের স্কুলের ছাদ ফেটে গেছে, অনেক জায়গায় বাঁশ দিয়ে ঠেস দিয়ে রাখা হয়েছে। ক্লাস করতে ভয় হয়।’ অভিভাবকদের উৎকণ্ঠা- অভিভাবক উদিতা রাণী বলেন, ‘স্কুল ভবন এতটা ভাঙা যে বাচ্চারা কখন দুর্ঘটনার শিকার হবে বলা যায় না। বাধ্য হয়ে মন্দিরে ক্লাস করতে হচ্ছে।’ রাকিব সাহা নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘সন্তানকে পাঠিয়ে সারাদিন দুশ্চিন্তায় থাকি। যদি কিছু ঘটে যায়, তার দায় কে নেবে?’
শিক্ষক-পুরোহিত সবাই চিন্তিত- শিক্ষক সুবর্ণা আক্তার বলেন, ‘ভবনের ছাদের আস্তর পড়ে যায়, বৃষ্টির সময় ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। ফলে পাঠদান ঠিকভাবে সম্ভব হচ্ছে না। আবার মন্দিরে পাঠ দিতে গিয়ে সময় ও নিরাপত্তা- দুটোই বিঘ্নিত হচ্ছে।’ লক্ষীনারায়ণ জিউর মন্দিরের পুরোহিত দীপঙ্কর চক্রবর্তী জানান, ‘স্থানীয়দের অনুরোধে মন্দিরের দুটি কক্ষ দেওয়া হয়েছে। তবে ২ বছর পার হলেও স্কুলের সংস্কার হয়নি। পূজার সময় পাঠদান চালানো কঠিন হয়ে পড়ে।’
প্রধান শিক্ষকদের আশঙ্কা ও আবেদন- ২৭নং বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুন্নাহার বলেন, ‘জেলা শিক্ষা অফিস, ডিসি, মেয়র সবাইকে জানানো হয়েছে। ৭০০ শিক্ষার্থীর জন্য এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান অসম্ভব হয়ে পড়েছে।’
২৬নং বালক উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাপসী সাহা বলেন, ‘ভবনের কারণে আমাদের ছাত্র সংখ্যা কমছে। অভিভাবকরা অন্য স্কুলে নিয়ে যাচ্ছেন।’
প্রশাসনের বক্তব্য ও আশ্বাস- জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফেরদৌসী বেগম বলেন, ‘ভবনটি নিয়ে একটি মামলা ছিল, যা নিষ্পত্তি হয়েছে। এখন নতুন ভবনের জন্য আবেদন প্রক্রিয়াধীন।’ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা জানান, ‘স্কুলটির ঝুঁকি পর্যালোচনার জন্য এক্সপার্ট মতামত নেওয়া হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
দৈনিক বাংলায় গত ২৭ মে ‘চরম বিপাকে ব্যবসায়ী, ক্রেতা ও সাধারণ মানুষ, সরিষাবাড়ীতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে বাজারে জলাবদ্ধতা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর নড়েচরে বসে উপজেলা এলজিইডির। অবশেষে জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনের নিমার্ণকাজ গতকাল বৃহস্পতিবার শুরু করেছে এলজিইডি। উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের বয়ড়া বাজারের পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনের নিমার্ণ কাজের উদ্বোধন করা হয়।
বাজারের ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সমস্যার কথাটি বিবেচনা করে বাজারের জলাবদ্ধতা দূর করতে উপজেলা এলজিইডির নিবার্হী প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে ২ লাখ টাকা ব্যায়ে একটি ড্রেনের নির্মাণ কাজের উদ্ভোধন করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, পোগলদিঘা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মামুন অর রশীদ ফকির, সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম রঞ্জু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসেন বিপ্লব, সাংগঠনিক সম্পাদক আহাম্মদ আলী সরকার, উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ, শ্রমিক দলের সভাপতি মনিরুজ্জামান আদম, পোগলদিঘা ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি সাকিবুল হাসান সুমন ফকির, সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান ফরহাদ, ঠিকাদার রুকনুজ্জামান তালুকদার, যুবদল নেতা সোহেল রানা প্রমুখ।
এ বিষয়ে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমের মাধ্যমে বিষয়টি আমরা জানতে পারি। পরে এই বাজারের ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের অসুবিধার কথা বিবেচনা করে উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে এডিপির অর্থায়নে একটি ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আশা করি এতে ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের অসুবিধা দূর হবে।
মন্তব্য