জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের গেরুয়া গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে শুক্রবার রাতে শিক্ষার্থীদের সংঘাতের পর এখনও উত্তপ্ত ক্যাম্পাস। সেই রাতে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫০ জন। অভিযোগ উঠেছে, গ্রামের মসজিদের মাইক ব্যবহার করে গুজব ছড়িয়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করা হয়।
শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীর মুখোমুখি অবস্থানের কারণ হিসেবে সামনে এসেছে কয়েক দিন আগে আয়োজিত একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। বলা হচ্ছে, ওই টুর্নামেন্টের একটি ম্যাচকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের বিরোধের শুরু, যা শেষ পর্যন্ত রূপ নেয় রক্তক্ষয়ী সহিংসতায়।
তবে নিউজবাংলার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসের আশপাশে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একটি অংশের আধিপত্য স্থাপনের চেষ্টা পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে ইন্ধন দিয়েছে। ঘটনার দিন ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজকদের এক জনকে জিম্মি করে চাঁদা দাবির অভিযোগও উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করছেন সংশ্লিষ্ট নেতারা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও পাশের গেরুয়া গ্রামে টানা দুই দিন অনুসন্ধান চালিয়ে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা। গ্রামবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির দাবি, সংঘর্ষের দুই দিন আগে ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে বিরোধের বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমানকে জানানো হয়েছিল। পুলিশও জানত বিষয়টি। দুই পক্ষের সমঝোতার জন্য কিছু উদ্যোগ নেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা ভেস্তে যায়।
ঘটনা নিয়ে যা বলছেন গ্রামবাসী
গেরুয়া বাজারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক এলাকায় এখনও রয়েছে পুলিশের কড়া পাহারা, থমথমে পুরো এলাকা।
গ্রামবাসী জানান, কিছুদিন আগে স্থানীয় বাতিঘর ক্লাব আয়োজন করে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। সেখানে আশপাশের গ্রামের তরুণেরা আলাদা আলাদা টিম করে অংশ নেন। গেরুয়া গ্রামে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৫০০ শিক্ষার্থী মেস ভাড়া নিয়ে থাকেন, ওই টুর্নামেন্টে গেরুয়া গ্রামের জাবি শিক্ষার্থীদেরও দুটি টিম ছিল।
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে জানা যায়, ১১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ক্রিকেট টুর্নামেন্টে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা অ্যালেক্সের (পিয়াস ইজারাদার) দলের প্রতিপক্ষ ছিল পাশের জামসিং গ্রামের একটি দল। ৪৪তম আবর্তনের শিক্ষার্থী অ্যালেক্স বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য।
ক্রিকেট খেলার সময় স্লেজিং করাকে কেন্দ্র করে বাগ্বিতণ্ডা হয় দুই টিমের খেলোয়াড়দের। একপর্যায়ে জামসিং দলের খেলোয়াড়দের হাতে মার খান অ্যালেক্স ও আরেক ছাত্র।
এ ঘটনার পর অ্যালেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে জাবি ছাত্রলীগের (মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি) সাংগঠনিক সম্পাদক অভিষেক মণ্ডলের (৪১তম আবর্তন) নেতৃত্বে অন্তত ৪০ জন ছাত্রকে নিয়ে ফিরে আসেন গেরুয়া গ্রামে। টুর্নামেন্টের আয়োজক কমিটি জামসিং গ্রামের তরুণদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে, এমন অভিযোগ তুলে বাতিঘর ক্লাবে ভাঙচুর চালান তারা। এছাড়া পুরো বাজারের সব দোকান বন্ধ করে দেন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা।
ওই সময়ের বাজার এলাকার একটি দোকানের সিসিটিভি ফুটেজ পেয়েছে নিউজবাংলা। এতে দেখা যায় ১১ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টা ৩৩ মিনিটের দিকে বেশ কিছু যুবক মোটরসাইকেলে করে এসে ব্যবসায়ীদের কিছু বলার পর তারা সবাই দোকানের শাটার নামিয়ে দিচ্ছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এর আট দিন পর গত শুক্রবার বিকেলে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজক কমিটির এক সদস্য নজরুল ইসলাম কাজুকে তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে যান। গেরুয়া বাজারের যে বাসায় ছাত্রলীগ নেতা অভিষেক ও অ্যালেক্সরা থাকেন সেখানে নিয়ে যাওয়া হয় কাজুকে।
এরপর কাজুকে উদ্ধার করতে ওই বাসা ঘিরে ফেলেন গ্রামের বেশ কয়েকজন। অভিষেক ও আরও কয়েকজন এ সময় কৌশলে পালিয়ে গেলেও গ্রামবাসীর বেধড়ক পিটুনির শিকার হন অ্যালেক্স, জুবায়েরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১২ জন ছাত্র। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের চারটিসহ মোট পাঁচটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।
তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের নেতৃত্বে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময়েই এলাকার চারটি মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেয়া হয় ‘গ্রামে ডাকাত ঢুকেছে’। শুরু হয় গ্রামবাসী-ছাত্রদের সংঘর্ষ।
যাকে ‘তুলে আনা’র ঘটনাকে কেন্দ্র করে এত বড় সংঘর্ষ, ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজক কমিটির সেই সদস্য ও স্থানীয় ইন্টারনেট ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম কাজুর সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা।
কাজু বলেন, ‘১১ তারিখের ঝামেলার জন্য ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আমাকে দোষারোপ করেন। তারা বলেন আমার জন্য নাকি সেদিন জামসিংয়ের ছেলেরা পালিয়ে যেতে পেরেছেন। তারা (ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী) আমাদের ক্লাবের সদস্যদের চাপ দিতে থাকেন তাদের ধরে এনে দেবার জন্য। তারা মেরে প্রতিশোধ নেবেন।’
কাজু বলেন, ‘আমরা তো সেদিন মারামারি ঠেকাতে গিয়েছিলাম, সেখানে আমাদের কী দোষ? রাতে আমাদের বাসায় এসে মারার হুমকি দেয়। বিষয়টা এলাকার মুরব্বিদের জানালে তাদের পরামর্শে আমরা ক্লাবের ছয় জন সদস্য কয়েক দিন গ্রামের বাইরে ছিলাম। তখন তারা আমাদের বাসায় গিয়ে পরিবারের সদস্যদের হুমকি দিয়েছে। এরপর ঢাকা উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম ও অন্য মুরব্বিরা ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে বসে মীমাংসার চেষ্ট করেন, কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি।’
নজরুল ইসলাম কাজু অভিযোগ করেন, ১৭ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) তার বন্ধু মারুফকে ডেকে নিয়ে যান অ্যালেক্স। এরপর মারুফকে প্রস্তাব দেয়া হয়, দুই লাখ টাকা দিলে ঝামেলা মিটমাট করা হবে।
বিরোধ মীমাংসায় যুক্ত হন অনেকে
ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির অভিযোগ তুলে কাজু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মারুফের কাছ থেকে শোনার পর টাকা চাওয়ার বিষয়টা আমরা মনিরুল ইসলাম (ঢাকা উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক) ও স্থানীয় মেম্বার হাসান সরদারকে জানাই। তারা আমাদের সংসদ সদস্য ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমানের কাছে নিয়ে যান। টাকা চাওয়াসহ পুরো বিষয়টি আমরা মৌখিকভাবে প্রতিমন্ত্রীকে জানিয়েছি।’
আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক হারুন অর রশিদকেও বিষয়টি অবহিত করা হয় বলে দাবি করেন কাজু।
এর পরের ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে চারটি মোটরসাইকেলে করে ছাত্রলীগের আট জন আমার বাসায় এসে বলে আমার সাথে কথা আছে, তাদের সাথে যেতে হবে। তাদের মধ্যে রমিম, মুরাদ, রিফাত, শুভ আমার পূর্ব পরিচিত। আমি আমার মোটরসাইকেলে চড়ে তাদের সাথে যাই। তারা আমাকে অভিষেকের রুমে দিয়ে আসে।’
কাজু বলেন, ‘সেখানে অ্যালেক্স আর অভিষেক ছিল। অভিষেক একটি পিস্তল আর চাপাতি দেখিয়ে আমাকে বলে দুই লাখ টাকা দে, নইলে জানে মেরে ফেলব। এই বলেই আমাকে চড় থাপ্পর মারতে শুরু করে। কিছুক্ষণ পরেই গ্রামবাসী তাদের ঘিরে ফেলে মারধর করে।’
কাজুর বন্ধু মারুফের সঙ্গেও কথা বলেছে নিউজবাংলা। তিনি বলেন, ‘১৬ ফেব্রুয়ারি রাতে অ্যালেক্স আমাকে ফোন করে জরুরি ভিত্তিতে দেখা করতে বলে। পরদিন সকাল সাড়ে ১০টায় শহীদ রফিক-জব্বার হলের সামনে তার সাথে দেখা করি। সে আমাকে প্রস্তাব দেয় ৫০ হাজার টাকা দিলে শুধু আমার বিষয়টা মিউচ্যুয়াল করবে। তবে কমিটির সবার সাথে মিউচ্যুয়াল করতে হলে ওই দিন বিকেল ৫টার মধ্যে ২ লাখ টাকা দিতে হবে। তারপর আমি এসে গ্রামের সবাইকে বিষয়টা জানাই।’
চাঁদা দাবির অভিযোগের সত্যতা জানতে ঢাকা উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম, গেরুয়ার স্থানীয় মেম্বর হাসান সরদার ও আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক হারুন অর রশিদের সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা।
মনিরুল ও হাসান স্বীকার করেন, জাবি ছাত্রলীগ নেতাদের চাঁদা দাবির বিষয়টি মারুফ ও কাজু তাদের জানিয়েছিলেন। এরপর প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমানের পরামর্শে তারা থানায় গেলেও লিখিত কোনো অভিযোগ না করে চার জনের বিরুদ্ধে মৌখিক অভিযোগ করেন।
আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক হারুন অর রশিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তারা (মারুফ ও কাজু) ১৭ তারিখ এসে ক্রিকেট খেলা নিয়ে ঝামেলা আর জাহাঙ্গীরনগরের ছাত্রদের হুমকির বিষয়ে মৌখিক অভিযোগ জানিয়েছিলেন, তবে তখন চাঁদার বিষয়টি বলেননি। ১৯ তারিখ সন্ধ্যার আগে একজন ফোন করে আমাকে জানান তাকে আটকে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে, সেই নিয়ে গণ্ডগোল চলছে।’
প্রতিমন্ত্রীর দাবি, আগে কিছুই জানতেন না
গ্রামবাসীসহ বিভিন্ন পক্ষ গেরুয়ার বিরোধের বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানকে আগেই জানানোর দাবি করলেও প্রতিমন্ত্রী বলছেন, সংঘর্ষের পর বিষয়টি তিনি প্রথম জেনেছেন।
রোববার নিউজবাংলাকে টেলিফোনে তিনি বলেন, ‘শুক্রবার বিকেলে গণ্ডগোলের খবর পেয়ে আমি গ্রামের প্রতিনিধিদের কাছে ফোন করে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাই। তারা আমাকে জানান, ক্রিকেট খেলা নিয়ে ছাত্র আর গ্রামাবাসীর মধ্যে গণ্ডগোল বেধেছে। ছাত্ররা গ্রামের এক ছেলেকে তুলে এনে মেরেছে, তাই তারা পাল্টা হামলা করে ওই ছেলেকে উদ্ধার করে। এর আগে আমি কিছুই জানতাম না। কোনো অভিযোগ নিয়ে গ্রামবাসী বা তাদের পক্ষ থেকে কেউ আমার কাছে আসেনি।’
প্রতিমন্ত্রী আগে থেকে বিষয়টি জানার তথ্য অস্বীকার করায় রোববার বিকেলে ঢাকা উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম ও গেরুয়ার মেম্বর হাসান সরদারের সঙ্গে আবারও যোগাযোগ করে নিউজবাংলা।
এ সময় মনিরুল বলেন, ‘মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে আমি যাইনি, তবে হাসান মেম্বর ও গ্রামের লোকেরা গিয়েছিলেন।’
প্রতিমন্ত্রী বিষয়টি নাকচ করেছেন জানানোর পর মনিরুল বলেন, ‘মন্ত্রী সাহেব যদি বলে থাকেন যে কেউ যায় নাই, তাহলে সেইটাই সঠিক। আপনারা সেটাই লিখে দেন, তবে আমি যতদূর জানি তারা (গ্রামবাসী) মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে গত বুধবার দেখা করেছেন।’
অন্যদিকে মেম্বর হাসান সরদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেদিন মনিরও আমাদের সাথে গিয়েছিল। সে এখন অস্বীকার করে কীভাবে! আমরা তো তার মাধ্যমেই মন্ত্রী সাহেবের সাথে দেখা করার ব্যবস্থা করলাম।’
হাসান বলেন, ‘আমরা বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মন্ত্রীর সাভারের বাসায় যাই। তখন তিনি ঘুমাচ্ছিলেন। এর কিছুক্ষণ পর আরও চার-পাঁচ জনসহ মনির আসে। এরপর বিকেল ৩টায় মন্ত্রীর সাথে আমাদের কথা হয়। আমরা তাকে সব খুলে বলে এলাম। মন্ত্রী সাহেব কেন অস্বীকার করছেন জানি না।’
বিরোধের বিষয়ে জানত বিশ্ববিদ্যালয়ও
বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ফিরোজ উল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ক্রিকেট নিয়ে গণ্ডগোলের পরপরই আমি ঘটনাটা শুনেছিলাম। তখন আমি সাভার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রমজান আহমেদকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম, সে যেন মিজানুর রহমান মিজানকে (বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি) সাথে নিয়ে বিষয়টা সমাধান করে দেয়। পরে অবশ্য কোনো আপডেট পাইনি।
২ লাখ টাকা চাঁদা দাবির বিষয়টি জানা নেই বলে দাবি করেন প্রক্টর।
এ বিষয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলর রমজান আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রক্টর স্যারের ফোন পাওয়ার পর আমি কয়েকবার অভিষেক-অ্যালেক্সদের সাথে কথা বলেছি। তাদের দাবি ছিল, খেলার সময় জামসিং গ্রামের যে ছেলেরা মেরেছিল তাদের সামনে এনে দিতে হবে। ওই ছেলেদের আনতে পারি নাই, তাই সমাধানও হয় নাই।’
অন্যদিকে, বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগ নেতা মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা কয়েকবার অভিষেকদের কাছে অনুরোধ করেছি বিষয়টা মীমাংসা করার জন্য, কিন্তু তারা বলেছিল, বিষয়টা তারা পার্সোনালি নিয়েছে।’
একই ধরনের তথ্য দিয়ে গেরুয়ার মেম্বার হাসান সরদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি অ্যালেক্সকে ফোন দিয়ে মীমাংসা করতে বলায় সে আমাকে বলেছিল, আপনারা মুরব্বিরা এটা থেকে দূরে থাকেন। এটা আমরা বুঝব।’
অ্যালেক্স-অভিষেক যা বলছেন
মারুফের সঙ্গে দেখা হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন ছাত্রলীগ নেতা অ্যালেক্স। তবে তার দাবি, মারুফ তার এক বন্ধুর বন্ধু হওয়ায় মারুফের মাধ্যমে সমঝোতার প্রস্তাব দিতে ডাকা হয়েছিল।
অ্যালেক্স নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বারবার চেষ্টা করেও তাদের সাথে বসতে পারছিলাম না। সমঝোতার জন্য কোনো ধরনের টাকার কথা হয়নি।’
১১ ফেব্রুয়ারি গেরুয়ায় ক্লাব ঘরে ভাঙচুর ও বাজারের দোকান বন্ধ করে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যালেক্স বলেন, ‘ক্যাম্পাসের ছেলেরা মার খেয়েছে, সেই উত্তেজনা থেকে ভাঙচুর হয়েছে। সেই একই উত্তেজনা থেকে দোকানপাট বন্ধ করে দেয়া হলেও আধ ঘণ্টা পর সেগুলো আমরা খুলে দেই।
কাজুকে তুলে এনে অস্ত্র প্রদর্শনের অভিযোগ অস্বীকার করে অ্যালেক্স বলেন, ‘তাকে তো তুলে আনা হয়নি, সে ক্যাম্পাসের হলে ইন্টারনেট ব্যবসা করে। তার সাথে আমাদের ভালো সম্পর্ক। আমাদের সাথে মীমাংসার জন্য তার পরিচিত ক্যাম্পাসের ছাত্ররাই আমাদের কাছে নিয়ে এসেছিল। পরে আমরাই বরং অবাক হয়েছি কাজুকে আনার সাথে সাথেই অন্তত ৫০ জন লোক এসে আমাদের মারা শুরু করল। তুলে এনে জিম্মি করা হলে আমরা তাকে নিয়ে তাদের গ্রামে কেন রাখব, আমরা তো তাকে ক্যাম্পাসে নিয়ে যেতাম।’
একইভাবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগ নেতা অভিষেক। তিনি বলেন, ‘এমন কিছুই ঘটেনি। আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ করতেই অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’
কাজুকে উদ্ধারের সময় গ্রামবাসী সহিংস কেন
গ্রামের একাধিক বাসিন্দা নিউজবাংলাকে বলেছেন, তারা আন্দাজ করতে পারছিলেন ছাত্রলীগের ছেলেরা খেলার সময় মার খাওয়ার প্রতিশোধ নেবে। এর আগে ২০০৭ সালে বিরোধের জেরে কাশেম নামের এক যুবককে তুলে নিয়ে গিয়েছিল ছাত্ররা। বেদম পিটানোর পর তিনি মারা যান। সেই মামলার এখনও বিচার হয়নি।
কাজুরও একই পরিণতি হতে পারে, এমন শঙ্কা ছিল গ্রামবাসীর।
এছাড়া, কথায় কথায় বাজার বন্ধ করে দেয়া, গ্রামের যেকোনো বিষয়ে ক্ষমতা দেখানো, স্থানীয়দের মারধর করাসহ চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে ছাত্রলীগের একটি অংশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়েছে গ্রামবাসী।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মান্নান অভিযোগ করেন, তার তিনতলা বাড়ি নির্মাণের সময় গত বছর ক্যাম্পাস ছাত্রলীগ নেতারা ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন।
কারা চাঁদা নিচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনো ভবন মালিকই এদের নাম জানাতে চান না। আপনারা পারলে খুঁজে নেন।’
সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গ্রামবাসীর সম্পর্ক কেমন
ক্যাম্পাস ঘেঁষা গেরুয়া গ্রামে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী থাকছেন। গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, অনেক বাড়িতেই ভাড়াটিয়া হিসেবে আছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক সাবেক শিক্ষার্থীও আছেন এই গ্রামে।
সংঘর্ষের পরেও গেরুয়া গ্রামে আছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, গ্রামবাসীর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আন্তরিক।
গ্রাম ছাড়েননি এমন একাধিক ছাত্র নিউজবাংলাকে জানান, শুক্রবার সন্ধ্যার ঘটনার সময় তারা নিরাপত্তার জন্য নিজ থেকেই ঘরে অবরুদ্ধ ছিলেন। এমনকি কোনো কোনো বাড়ির মালিক সে সময় ছাত্রদের নিরাপত্তার বিষয়ে নজর রেখেছেন।
গ্রামবাসীও বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের কোনো ঝামেলা নেই। ছাত্রদের খুব সামান্য একটি অংশ প্রভাব বিস্তার করতে গ্রামে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করছে।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ক্যাম্পাস ও জেলা ছাত্রলীগের একাধিক নেতা নিউজবাংলাকে জানান, প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে জাবি ছাত্রলীগ ও ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের মধ্যে সব সময় স্নায়ুযুদ্ধ চলে। ক্যাম্পাস ঘেঁষা ও জাবি ছাত্রলীগের কারণে গেরুয়ার মতো গ্রামে জেলা ছাত্রলীগ প্রভাব রাখতে পারছে না।
ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীকে উসকে দিতে চেষ্টা করেন জেলা ছাত্রলীগ নেতারা, অন্যদিকে জেলার অনুসারীদের দমিয়ে রাখতে বাড়তি তৎপরতা দেখায় ক্যাম্পাস ছাত্রলীগ।
আরও পড়ুন: মসজিদে ঘোষণা দিয়ে জাবি ছাত্রদের ওপর হামলা
আরও পড়ুন:২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল আগামী রোববার শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসবে।
আসামি পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, আজ জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চে শুনানির জন্য আপিলটি ছিলো। কিন্তু এই মামলায় হাইকোর্টের অথর জাজ বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান আজ আপিল বিভাগের বেঞ্চে ছিলেন।
নিয়ম অনুযায়ী হাইকোর্টে রায় দানকারী বিচারপতি একই মামলা আপিল বেঞ্চে শুনানি গ্রহণ করতে পারেন না।
এজন্য আগামী রোববার পুনর্গঠিত বেঞ্চে আপিলটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসবে। আদালত বিষয়টিতে আজ নট টুডে আদেশ দিয়েছেন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হন। ওই গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়। ২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সিআইডি এই মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দিলে শুরু হয় বিচার।
তবে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই মামলায় অধিকতর তদন্তে আসামির তালিকায় যুক্ত করা হয় বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩০ জনকে।
দীর্ঘ বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন আলোচিত মামলার রায় দেন।
আলোচিত ওই রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন- আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজি’র সাবেক আমির ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, কাশ্মীরি জঙ্গি আব্দুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. উজ্জল, এনএসআই-এর সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম ও হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ।
বিচারিক আদালতের রায়ে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন ও ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। সে রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামীরা হলেন- খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপি’র সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হুজি সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম মাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল ওরফে খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল ওরফে ইকবাল হোসেন, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই ও রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু।
এছাড়া, বিচারিক আদালতের রায়ে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) মো. আশরাফুল হুদা ও শহিদুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, ডিজিএফআই-এর মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, ডিএমপি’র সাবেক উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, আরেক সাবেক উপ-কমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক খোদা বক্স চৌধুরী, সিআইডি’র সাবেক বিশেষ সুপার মো. রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ ও সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমানকে দুই বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এই মামলার আরেকটি ধারায় খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানকে তিন বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেন আদালত।
বিচারিক আদালতে এই রায়ের দেড় মাসের মাথায় ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্সসহ মামলার নথি হাইকোর্টে আসে। ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে ডেথ রেফারেন্স এবং আসামিদের আপিল ও জেল আপিল শুনানি শুরু হয়। বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি চলছিল।
তবে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর হাইকোর্ট বেঞ্চ পুনর্গঠন হলে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি হয়। শুনানি শেষে গত ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট এই মামলার সব আসামীকে খালাস দিয়ে রায় দেন। সে রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।
ভূমিকম্পটি শুক্রবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে অনুভূত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের ডেটা অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমারের সাগাইংয়ের ১৬ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে।
এ ভূমিকম্পে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত বৃহত্তম জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের সাহায্য কমে যাওয়ার ফলে সংকট আরও গভীর হওয়ার উদ্বেগের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, তারা জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ৭৩ মিলিয়ন (সাত কোটি ৩০ লাখ) ডলার নতুন আর্থিক সহায়তা দেবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক্সে একটি পোস্টে বলেন, ‘বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিওইএফ) মাধ্যমে এ খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা ১০ লাখেরও বেশি মানুষের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা প্রদান করবে।
‘এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদাররা এ ধরনের জীবন রক্ষাকারী সহায়তার মাধ্যমে বোঝা ভাগ করে নেওয়ার সঙ্গে যুক্ত।’
সিনহুয়া জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার প্রশাসন ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ এজেন্ডার অংশ হিসেবে বিদেশি সহায়তায় ব্যাপক কাটছাঁট এবং ফেডারেল ব্যয় ব্যাপকভাবে হ্রাস এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কিছু অংশ ভেঙে ফেলার বিস্তৃত প্রচেষ্টার মধ্যেই এ অনুদান দেওয়া হলো।
জাতিসংঘের দুটি সংস্থা সতর্ক করে দিয়েছিল যে, তহবিলের ঘাটতি গত আট বছর ধরে প্রতিবেশী মিয়ানমারে সহিংসতার কারণে পালিয়ে আসা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য রেশনের পরিমাণ কমিয়ে দেবে।
রোহিঙ্গারা আশঙ্কা করছেন, তহবিল হ্রাসের ফলে ক্ষুধা পরিস্থিতির অবনতি হবে। গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা এবং জ্বালানি হ্রাস পাবে।
পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সবচেয়ে বড় সহায়তা প্রদানকারী দেশ ছিল। প্রায় ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়ে আসছে দেশটি। কিন্তু জানুয়ারিতে ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর সাম্প্রতিক তহবিল স্থগিত করার ফলে কমপক্ষে পাঁচটি হাসপাতাল তাদের সেবা কমিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছে।
ট্রাম্প ও বিলিয়নেয়ার মিত্র ইলন মাস্ক প্রধান মার্কিন বৈদেশিক সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডি বন্ধ করে দিয়েছেন এবং এর অবশিষ্টাংশগুলোকে পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে একীভূত করেছেন। শত শত কর্মী এবং ঠিকাদারকে বরখাস্ত করেছেন এবং কোটি কোটি ডলারের পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছেন, যার ওপর বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ নির্ভরশীল।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফেব্রুয়ারিতে সমস্ত জীবন রক্ষাকারী সহায়তা এবং এ ধরনের সহায়তা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় যুক্তিসঙ্গত প্রশাসনিক খরচ মওকুফ করেছিলেন।
ওয়াশিংটন টাইমস জানায়, এ মাসের শুরুতে ইউএসএআইডি ভেঙে দেওয়ার তত্ত্বাবধানকারী ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তা রোহিঙ্গাদের জন্য পর্যায়ক্রমে সাহায্য বন্ধের প্রস্তাব করেছিলেন।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তা হ্রাস করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছে।
কক্সবাজার উপকূলের বিভিন্ন শিবিরের বাসিন্দারা এখন জনপ্রতি মাসিক ১২ ডলার করে খাদ্য বরাদ্দ পাবেন, যা আগের ১২ দশমিক ৫০ ডলার থেকে কম।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘ডব্লিউএফপি একটি চিঠিতে এই সিদ্ধান্তের কথা আমাদের জানিয়েছে, যা ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।’
তিনি আরও বলেন, ভাসানচরে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা জনপ্রতি ১৩ ডলার করে পাবে, যা কক্সবাজারের তুলনায় এক ডলার বেশি।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তা কমানোর পরিকল্পনা ডব্লিউএফপি পূর্বে জানানোর পর এ পরিবর্তন এসেছে।
গত ৫ মার্চ বাংলাদেশের শরণার্থী কমিশন ডব্লিউএফপি থেকে একটি চিঠি পায়, যেখানে বলা হয়, তহবিল সংকটের কারণে এপ্রিল থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য মাসিক খাদ্য বরাদ্দ জনপ্রতি ১২ দশমিক ৫০ ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলার করা হবে।
চিঠিতে শরণার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
গত ১৪ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন।
তার সফরের সময় তাকে ছয় ডলারে রোহিঙ্গারা কী খাবার পাবে তার বিস্তারিত বিবরণ উপস্থাপন করা হয়েছিল। সে সময় অপর্যাপ্ত পরিমাণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন:গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানার শ্রমিকদের পাওনা বেতন-ভাতাসহ যৌক্তিক দাবির ব্যাপারে সরকার আন্তরিক ও একমত বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানার শ্রমিকদের পাওনা বেতন-ভাতাদিসহ যৌক্তিক দাবির ব্যাপারে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক ও একমত। শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে এবং এ ব্যাপারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে মালিকপক্ষ ও বিজিএমইএকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে এবং তাদের কর্মকাণ্ড মনিটর করা হচ্ছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘অন্যায্য ও অযৌক্তিক দাবির নামে গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টি, অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ, নৈরাজ্য ও সহিংসতা কোনোভাবেই কাম্য নয় এবং তা কখনোই মেনে নেয়া হবে না।
‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় সরকার তা কঠোরভাবে প্রতিহত করবে। গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানায় সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখা এবং দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে সরকার এ বিষয়ে মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষ উভয়ের সহযোগিতা কামনা করছে।’
আরও পড়ুন:পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, আন্তসীমান্ত বায়ুদূষণ মোকাবিলায় কার্যকর আঞ্চলিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশের বায়ুদূষণের ৩০-৩৫ শতাংশ আসে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে। তাই এ সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক আলোচনার গণ্ডি পেরিয়ে বাস্তব পদক্ষেপ ও আঞ্চলিক সহযোগিতা জরুরি।
তিনি দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর কাঠমান্ডু রোডম্যাপ ও অন্যান্য সমঝোতার কথা উল্লেখ করে বলেন, এগুলো যথেষ্ট নয়, আরও জোরালো উদ্যোগ প্রয়োজন।
কলম্বিয়ার কার্টাগেনায় অনুষ্ঠিত ডব্লিউএইচওর দ্বিতীয় বৈশ্বিক সম্মেলনের বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া সাইড ইভেন্টে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে বৃহস্পতিবার ভোরে পরিবেশ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
ঢাকাস্থ বাসভবন থেকে সংযুক্ত হয়ে তিনি বাংলাদেশের বায়ুদূষণ সমস্যা, বিশেষ করে ঢাকার ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন।
উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশের বহুমাত্রিক বায়ুদূষণ সমস্যা মোকাবিলায় বায়ুমান নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা ডব্লিউএইচওর অন্তর্বর্তীকালীন লক্ষ্যমাত্রার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ আইনি বিধিমালায় দূষণকারী খাতগুলোর জন্য নির্দিষ্ট মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের কাঠামো তৈরি করা হয়েছে।
তিনি জানান, ২০২৪ সালে চূড়ান্ত হওয়া জাতীয় বায়ুমান ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার বাস্তবায়ন রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পিছিয়ে ছিল, তবে এখন তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। পরিকল্পনার লক্ষ্য হলো মানুষের দূষণজনিত ঝুঁকি কমানো ও পরিষ্কার বায়ুর দিন বৃদ্ধির মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
পরিবেশ উপদেষ্টা আরও জানান, বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রকল্প চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, যা সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে শিগগিরই বাস্তবায়ন শুরু হবে। এ প্রকল্প নিয়ন্ত্রক কাঠামো শক্তিশালী করা, আইন প্রয়োগ জোরদার করা, শিল্প কারখানায় দূষণ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ এবং গণপরিবহন খাত আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্ব দেবে।
তিনি ঢাকার আশেপাশের এলাকাগুলোকে ইটভাটামুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করার পরিকল্পনার কথা জানান, যেখানে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ থাকবে।
এ ছাড়া ২০২৫ সালের মে থেকে পুরনো বাস ধাপে ধাপে তুলে দেওয়া হবে, যা পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে।
তিনি বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ ধুলাবালি দূষণ রোধে ঢাকা শহরের খোলা সড়কগুলোতে সবুজায়নের উদ্যোগ এবং রাস্তা পরিস্কারে আরও শ্রমিক নিয়োগের পরিকল্পনার কথা জানান।
উপদেষ্টা জানান, অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযানের ফলে এরই মধ্যে বায়ুমানের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এ অগ্রগতি ধরে রাখতে কঠোর নজরদারি ও খাতগুলোর আধুনিকায়ন জরুরি।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ মানুষ বায়ুদূষণের কারণে মারা যায় এবং ঢাকার মতো দূষিত শহরগুলোতে মানুষের গড় আয়ু ৫-৭ বছর কমে যাচ্ছে। এই সংকট আমাদের সবার জন্য, আমাদের শিশু, বাবা-মা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হুমকি। নিষ্ক্রিয়তার মূল্য অনেক বেশি। আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি আশাবাদী। কারণ আমি বিশ্বাস করি, এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। প্রযুক্তি ও বিকল্প ব্যবস্থা আমাদের হাতে রয়েছে, শুধু প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবায়ন দরকার।
‘বায়ুদূষণ শুধুই পরিবেশগত ইস্যু নয়, এটি মানবিক সংকট।’
সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি, পরিবেশ ও জ্বালানি খাতের নীতিনির্ধারক, আন্তর্জাতিক ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, গবেষক, স্থানীয় প্রশাসন, পরিবহন ও শিল্প খাতের বিশেষজ্ঞ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
তারা দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ুদূষণ রোধে যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
আরও পড়ুন:পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর বৃহস্পতিবার। এর অর্থ ‘অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত’ বা ‘পবিত্র রজনী’।
আজ সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হবে কদরের রজনী।
যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে সারা দেশে রাতটি পালন করা হবে।
মহান আল্লাহ লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত উত্তম।
এ রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষণ করা হয়। নির্ধারণ করা হয় মানবজাতির ভাগ্য।
৬১০ সালে কদরের রাতেই মক্কার নূর পর্বতের হেরা গুহায় ধ্যানরত মহানবী হযরত মুহাম্মদের (সা.) কাছে সর্বপ্রথম সুরা আলাকের পাঁচ আয়াত নাজিল হয়। এরপর আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতা জিবরাইল (আ.)-এর বহনকৃত ওহির মাধ্যমে পরবর্তী ২৩ বছর ধরে মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তা এবং ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট আয়াত আকারে বিভিন্ন সুরা নাজিল করা হয়।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর কদরের রাত সম্বন্ধে তুমি কি জানো? কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফেরেশতারা ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে।
‘শান্তিই শান্তি, বিরাজ করে ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত। (সূরা আল- কদর, আয়াত ১-৫)।’
হাদিসে বর্ণিত আছে, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ ১০ রাতে লাইলাতুল কদর সন্ধান করো (বুখারি ও মুসলিম)।’
মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় পবিত্র রাতটি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটিয়ে দেন। কামনা করেন মহান রবের অসীম রহমত, নাজাত, বরকত ও মাগফিরাত।
এরই ধারাবাহিকতায় আজ রাত থেকে পরের দিন ভোররাত পর্যন্ত মসজিদসহ বাসা-বাড়িতে এবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। নফল নামাজ, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আসকার, দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও আখেরি মোনাজাত করবেন তারা।
এই উপলক্ষে শুক্রবার সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে রাতব্যাপী ওয়াজ মাহফিল, ধর্মীয় বয়ান ও আখেরি মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে।
এ ছাড়া দেশের সব মসজিদেই তারাবির নামাজের পর থেকে ওয়াজ মাহফিল, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন থাকবে।
পবিত্র লাইলাতুল কদর/শবে কদর উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি রেডিওগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে।
এ ছাড়া সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করা হবে।
এশীয় দেশগুলোকে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ও যৌথ সমৃদ্ধির জন্য সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
চীনের হাইনানে বৃহস্পতিবার বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘পরিবর্তনশীল এ বিশ্বে এশীয় দেশগুলোর ভাগ্য পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। আমাদের অবশ্যই একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে যা অভিন্ন ভবিষ্যৎ এবং যৌথ সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে।’
আর্থিক সহযোগিতা প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এশিয়াকে অবশ্যই একটি টেকসই অর্থায়ন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবি) ও অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোর এ প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এমন নির্ভরযোগ্য তহবিল দরকার যা আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করবে।’
বাণিজ্য সহযোগিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এশিয়া এখনও বিশ্বের অন্যতম কম সংযুক্ত অঞ্চল।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এ দুর্বল সংযুক্তি বিনিয়োগ ও বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করছে। আমাদের অবশ্যই বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য দ্রুত কাজ করতে হবে।’
খাদ্য ও কৃষি সহযোগিতা বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এশীয় দেশগুলোকে অবশ্যই সম্পদ-সাশ্রয়ী কৃষিকে উৎসাহিত এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হবে। টেকসই প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষি সমাধান ও জলবায়ুবান্ধব চাষাবাদের ক্ষেত্রে উদ্ভাবন বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এশিয়াকে অবশ্যই একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে হবে, যা পুনর্গঠনমূলক, সমবণ্টনমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে।
তিনি বলেন,‘আমাদের জ্ঞান, তথ্য ভাগ করে নিতে হবে এবং প্রযুক্তি ইনকিউবেশন ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করতে হবে। ডিজিটাল সমাধানে সহযোগিতা আমাদের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘পরিশেষে বলব আমাদের সম্মিলিত কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে মেধা সম্পদ ও যুবশক্তিকে রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই একটি নতুন সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করতে হবে—একটি আত্মরক্ষা ও আত্মস্থায়ী সমাজ। আমাদের শূন্য-বর্জ্যের জীবনধারার ওপর ভিত্তি করে একটি পাল্টা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। ভোগ সীমিত রাখতে হবে মৌলিক প্রয়োজনের মধ্যে।
‘আমাদের অর্থনীতিকে সামাজিক ব্যবসার ওপর ভিত্তি করে গড়ে তুলতে হবে, যা ভবিষ্যতের ব্যবসায়িক কাঠামো হিসেবে উদ্ভাসিত হবে, যেখানে উদ্ভাবন, লক্ষ্য ও দায়িত্ববোধ একীভূত থাকবে।’
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, বোয়াও ফোরাম ও অন্যান্য অনুরূপ উদ্যোগগুলোকে যুবসমাজ ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে হবে, যেন আগামী প্রজন্মের জন্য এশিয়াকে আরও উন্নত করা যায়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য