জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের গেরুয়া গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে শুক্রবার রাতে শিক্ষার্থীদের সংঘাতের পর এখনও উত্তপ্ত ক্যাম্পাস। সেই রাতে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫০ জন। অভিযোগ উঠেছে, গ্রামের মসজিদের মাইক ব্যবহার করে গুজব ছড়িয়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করা হয়।
শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীর মুখোমুখি অবস্থানের কারণ হিসেবে সামনে এসেছে কয়েক দিন আগে আয়োজিত একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। বলা হচ্ছে, ওই টুর্নামেন্টের একটি ম্যাচকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের বিরোধের শুরু, যা শেষ পর্যন্ত রূপ নেয় রক্তক্ষয়ী সহিংসতায়।
তবে নিউজবাংলার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসের আশপাশে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একটি অংশের আধিপত্য স্থাপনের চেষ্টা পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে ইন্ধন দিয়েছে। ঘটনার দিন ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজকদের এক জনকে জিম্মি করে চাঁদা দাবির অভিযোগও উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করছেন সংশ্লিষ্ট নেতারা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও পাশের গেরুয়া গ্রামে টানা দুই দিন অনুসন্ধান চালিয়ে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা। গ্রামবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির দাবি, সংঘর্ষের দুই দিন আগে ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে বিরোধের বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমানকে জানানো হয়েছিল। পুলিশও জানত বিষয়টি। দুই পক্ষের সমঝোতার জন্য কিছু উদ্যোগ নেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা ভেস্তে যায়।
ঘটনা নিয়ে যা বলছেন গ্রামবাসী
গেরুয়া বাজারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক এলাকায় এখনও রয়েছে পুলিশের কড়া পাহারা, থমথমে পুরো এলাকা।
গ্রামবাসী জানান, কিছুদিন আগে স্থানীয় বাতিঘর ক্লাব আয়োজন করে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। সেখানে আশপাশের গ্রামের তরুণেরা আলাদা আলাদা টিম করে অংশ নেন। গেরুয়া গ্রামে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৫০০ শিক্ষার্থী মেস ভাড়া নিয়ে থাকেন, ওই টুর্নামেন্টে গেরুয়া গ্রামের জাবি শিক্ষার্থীদেরও দুটি টিম ছিল।
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে জানা যায়, ১১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ক্রিকেট টুর্নামেন্টে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা অ্যালেক্সের (পিয়াস ইজারাদার) দলের প্রতিপক্ষ ছিল পাশের জামসিং গ্রামের একটি দল। ৪৪তম আবর্তনের শিক্ষার্থী অ্যালেক্স বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য।
ক্রিকেট খেলার সময় স্লেজিং করাকে কেন্দ্র করে বাগ্বিতণ্ডা হয় দুই টিমের খেলোয়াড়দের। একপর্যায়ে জামসিং দলের খেলোয়াড়দের হাতে মার খান অ্যালেক্স ও আরেক ছাত্র।
এ ঘটনার পর অ্যালেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে জাবি ছাত্রলীগের (মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি) সাংগঠনিক সম্পাদক অভিষেক মণ্ডলের (৪১তম আবর্তন) নেতৃত্বে অন্তত ৪০ জন ছাত্রকে নিয়ে ফিরে আসেন গেরুয়া গ্রামে। টুর্নামেন্টের আয়োজক কমিটি জামসিং গ্রামের তরুণদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে, এমন অভিযোগ তুলে বাতিঘর ক্লাবে ভাঙচুর চালান তারা। এছাড়া পুরো বাজারের সব দোকান বন্ধ করে দেন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা।
ওই সময়ের বাজার এলাকার একটি দোকানের সিসিটিভি ফুটেজ পেয়েছে নিউজবাংলা। এতে দেখা যায় ১১ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টা ৩৩ মিনিটের দিকে বেশ কিছু যুবক মোটরসাইকেলে করে এসে ব্যবসায়ীদের কিছু বলার পর তারা সবাই দোকানের শাটার নামিয়ে দিচ্ছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এর আট দিন পর গত শুক্রবার বিকেলে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজক কমিটির এক সদস্য নজরুল ইসলাম কাজুকে তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে যান। গেরুয়া বাজারের যে বাসায় ছাত্রলীগ নেতা অভিষেক ও অ্যালেক্সরা থাকেন সেখানে নিয়ে যাওয়া হয় কাজুকে।
এরপর কাজুকে উদ্ধার করতে ওই বাসা ঘিরে ফেলেন গ্রামের বেশ কয়েকজন। অভিষেক ও আরও কয়েকজন এ সময় কৌশলে পালিয়ে গেলেও গ্রামবাসীর বেধড়ক পিটুনির শিকার হন অ্যালেক্স, জুবায়েরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১২ জন ছাত্র। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের চারটিসহ মোট পাঁচটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।
তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের নেতৃত্বে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময়েই এলাকার চারটি মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেয়া হয় ‘গ্রামে ডাকাত ঢুকেছে’। শুরু হয় গ্রামবাসী-ছাত্রদের সংঘর্ষ।
যাকে ‘তুলে আনা’র ঘটনাকে কেন্দ্র করে এত বড় সংঘর্ষ, ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজক কমিটির সেই সদস্য ও স্থানীয় ইন্টারনেট ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম কাজুর সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা।
কাজু বলেন, ‘১১ তারিখের ঝামেলার জন্য ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আমাকে দোষারোপ করেন। তারা বলেন আমার জন্য নাকি সেদিন জামসিংয়ের ছেলেরা পালিয়ে যেতে পেরেছেন। তারা (ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী) আমাদের ক্লাবের সদস্যদের চাপ দিতে থাকেন তাদের ধরে এনে দেবার জন্য। তারা মেরে প্রতিশোধ নেবেন।’
কাজু বলেন, ‘আমরা তো সেদিন মারামারি ঠেকাতে গিয়েছিলাম, সেখানে আমাদের কী দোষ? রাতে আমাদের বাসায় এসে মারার হুমকি দেয়। বিষয়টা এলাকার মুরব্বিদের জানালে তাদের পরামর্শে আমরা ক্লাবের ছয় জন সদস্য কয়েক দিন গ্রামের বাইরে ছিলাম। তখন তারা আমাদের বাসায় গিয়ে পরিবারের সদস্যদের হুমকি দিয়েছে। এরপর ঢাকা উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম ও অন্য মুরব্বিরা ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে বসে মীমাংসার চেষ্ট করেন, কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি।’
নজরুল ইসলাম কাজু অভিযোগ করেন, ১৭ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) তার বন্ধু মারুফকে ডেকে নিয়ে যান অ্যালেক্স। এরপর মারুফকে প্রস্তাব দেয়া হয়, দুই লাখ টাকা দিলে ঝামেলা মিটমাট করা হবে।
বিরোধ মীমাংসায় যুক্ত হন অনেকে
ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির অভিযোগ তুলে কাজু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মারুফের কাছ থেকে শোনার পর টাকা চাওয়ার বিষয়টা আমরা মনিরুল ইসলাম (ঢাকা উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক) ও স্থানীয় মেম্বার হাসান সরদারকে জানাই। তারা আমাদের সংসদ সদস্য ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমানের কাছে নিয়ে যান। টাকা চাওয়াসহ পুরো বিষয়টি আমরা মৌখিকভাবে প্রতিমন্ত্রীকে জানিয়েছি।’
আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক হারুন অর রশিদকেও বিষয়টি অবহিত করা হয় বলে দাবি করেন কাজু।
এর পরের ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে চারটি মোটরসাইকেলে করে ছাত্রলীগের আট জন আমার বাসায় এসে বলে আমার সাথে কথা আছে, তাদের সাথে যেতে হবে। তাদের মধ্যে রমিম, মুরাদ, রিফাত, শুভ আমার পূর্ব পরিচিত। আমি আমার মোটরসাইকেলে চড়ে তাদের সাথে যাই। তারা আমাকে অভিষেকের রুমে দিয়ে আসে।’
কাজু বলেন, ‘সেখানে অ্যালেক্স আর অভিষেক ছিল। অভিষেক একটি পিস্তল আর চাপাতি দেখিয়ে আমাকে বলে দুই লাখ টাকা দে, নইলে জানে মেরে ফেলব। এই বলেই আমাকে চড় থাপ্পর মারতে শুরু করে। কিছুক্ষণ পরেই গ্রামবাসী তাদের ঘিরে ফেলে মারধর করে।’
কাজুর বন্ধু মারুফের সঙ্গেও কথা বলেছে নিউজবাংলা। তিনি বলেন, ‘১৬ ফেব্রুয়ারি রাতে অ্যালেক্স আমাকে ফোন করে জরুরি ভিত্তিতে দেখা করতে বলে। পরদিন সকাল সাড়ে ১০টায় শহীদ রফিক-জব্বার হলের সামনে তার সাথে দেখা করি। সে আমাকে প্রস্তাব দেয় ৫০ হাজার টাকা দিলে শুধু আমার বিষয়টা মিউচ্যুয়াল করবে। তবে কমিটির সবার সাথে মিউচ্যুয়াল করতে হলে ওই দিন বিকেল ৫টার মধ্যে ২ লাখ টাকা দিতে হবে। তারপর আমি এসে গ্রামের সবাইকে বিষয়টা জানাই।’
চাঁদা দাবির অভিযোগের সত্যতা জানতে ঢাকা উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম, গেরুয়ার স্থানীয় মেম্বর হাসান সরদার ও আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক হারুন অর রশিদের সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা।
মনিরুল ও হাসান স্বীকার করেন, জাবি ছাত্রলীগ নেতাদের চাঁদা দাবির বিষয়টি মারুফ ও কাজু তাদের জানিয়েছিলেন। এরপর প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমানের পরামর্শে তারা থানায় গেলেও লিখিত কোনো অভিযোগ না করে চার জনের বিরুদ্ধে মৌখিক অভিযোগ করেন।
আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক হারুন অর রশিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তারা (মারুফ ও কাজু) ১৭ তারিখ এসে ক্রিকেট খেলা নিয়ে ঝামেলা আর জাহাঙ্গীরনগরের ছাত্রদের হুমকির বিষয়ে মৌখিক অভিযোগ জানিয়েছিলেন, তবে তখন চাঁদার বিষয়টি বলেননি। ১৯ তারিখ সন্ধ্যার আগে একজন ফোন করে আমাকে জানান তাকে আটকে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে, সেই নিয়ে গণ্ডগোল চলছে।’
প্রতিমন্ত্রীর দাবি, আগে কিছুই জানতেন না
গ্রামবাসীসহ বিভিন্ন পক্ষ গেরুয়ার বিরোধের বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানকে আগেই জানানোর দাবি করলেও প্রতিমন্ত্রী বলছেন, সংঘর্ষের পর বিষয়টি তিনি প্রথম জেনেছেন।
রোববার নিউজবাংলাকে টেলিফোনে তিনি বলেন, ‘শুক্রবার বিকেলে গণ্ডগোলের খবর পেয়ে আমি গ্রামের প্রতিনিধিদের কাছে ফোন করে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাই। তারা আমাকে জানান, ক্রিকেট খেলা নিয়ে ছাত্র আর গ্রামাবাসীর মধ্যে গণ্ডগোল বেধেছে। ছাত্ররা গ্রামের এক ছেলেকে তুলে এনে মেরেছে, তাই তারা পাল্টা হামলা করে ওই ছেলেকে উদ্ধার করে। এর আগে আমি কিছুই জানতাম না। কোনো অভিযোগ নিয়ে গ্রামবাসী বা তাদের পক্ষ থেকে কেউ আমার কাছে আসেনি।’
প্রতিমন্ত্রী আগে থেকে বিষয়টি জানার তথ্য অস্বীকার করায় রোববার বিকেলে ঢাকা উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম ও গেরুয়ার মেম্বর হাসান সরদারের সঙ্গে আবারও যোগাযোগ করে নিউজবাংলা।
এ সময় মনিরুল বলেন, ‘মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে আমি যাইনি, তবে হাসান মেম্বর ও গ্রামের লোকেরা গিয়েছিলেন।’
প্রতিমন্ত্রী বিষয়টি নাকচ করেছেন জানানোর পর মনিরুল বলেন, ‘মন্ত্রী সাহেব যদি বলে থাকেন যে কেউ যায় নাই, তাহলে সেইটাই সঠিক। আপনারা সেটাই লিখে দেন, তবে আমি যতদূর জানি তারা (গ্রামবাসী) মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে গত বুধবার দেখা করেছেন।’
অন্যদিকে মেম্বর হাসান সরদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেদিন মনিরও আমাদের সাথে গিয়েছিল। সে এখন অস্বীকার করে কীভাবে! আমরা তো তার মাধ্যমেই মন্ত্রী সাহেবের সাথে দেখা করার ব্যবস্থা করলাম।’
হাসান বলেন, ‘আমরা বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মন্ত্রীর সাভারের বাসায় যাই। তখন তিনি ঘুমাচ্ছিলেন। এর কিছুক্ষণ পর আরও চার-পাঁচ জনসহ মনির আসে। এরপর বিকেল ৩টায় মন্ত্রীর সাথে আমাদের কথা হয়। আমরা তাকে সব খুলে বলে এলাম। মন্ত্রী সাহেব কেন অস্বীকার করছেন জানি না।’
বিরোধের বিষয়ে জানত বিশ্ববিদ্যালয়ও
বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ফিরোজ উল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ক্রিকেট নিয়ে গণ্ডগোলের পরপরই আমি ঘটনাটা শুনেছিলাম। তখন আমি সাভার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রমজান আহমেদকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম, সে যেন মিজানুর রহমান মিজানকে (বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি) সাথে নিয়ে বিষয়টা সমাধান করে দেয়। পরে অবশ্য কোনো আপডেট পাইনি।
২ লাখ টাকা চাঁদা দাবির বিষয়টি জানা নেই বলে দাবি করেন প্রক্টর।
এ বিষয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলর রমজান আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রক্টর স্যারের ফোন পাওয়ার পর আমি কয়েকবার অভিষেক-অ্যালেক্সদের সাথে কথা বলেছি। তাদের দাবি ছিল, খেলার সময় জামসিং গ্রামের যে ছেলেরা মেরেছিল তাদের সামনে এনে দিতে হবে। ওই ছেলেদের আনতে পারি নাই, তাই সমাধানও হয় নাই।’
অন্যদিকে, বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগ নেতা মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা কয়েকবার অভিষেকদের কাছে অনুরোধ করেছি বিষয়টা মীমাংসা করার জন্য, কিন্তু তারা বলেছিল, বিষয়টা তারা পার্সোনালি নিয়েছে।’
একই ধরনের তথ্য দিয়ে গেরুয়ার মেম্বার হাসান সরদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি অ্যালেক্সকে ফোন দিয়ে মীমাংসা করতে বলায় সে আমাকে বলেছিল, আপনারা মুরব্বিরা এটা থেকে দূরে থাকেন। এটা আমরা বুঝব।’
অ্যালেক্স-অভিষেক যা বলছেন
মারুফের সঙ্গে দেখা হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন ছাত্রলীগ নেতা অ্যালেক্স। তবে তার দাবি, মারুফ তার এক বন্ধুর বন্ধু হওয়ায় মারুফের মাধ্যমে সমঝোতার প্রস্তাব দিতে ডাকা হয়েছিল।
অ্যালেক্স নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বারবার চেষ্টা করেও তাদের সাথে বসতে পারছিলাম না। সমঝোতার জন্য কোনো ধরনের টাকার কথা হয়নি।’
১১ ফেব্রুয়ারি গেরুয়ায় ক্লাব ঘরে ভাঙচুর ও বাজারের দোকান বন্ধ করে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যালেক্স বলেন, ‘ক্যাম্পাসের ছেলেরা মার খেয়েছে, সেই উত্তেজনা থেকে ভাঙচুর হয়েছে। সেই একই উত্তেজনা থেকে দোকানপাট বন্ধ করে দেয়া হলেও আধ ঘণ্টা পর সেগুলো আমরা খুলে দেই।
কাজুকে তুলে এনে অস্ত্র প্রদর্শনের অভিযোগ অস্বীকার করে অ্যালেক্স বলেন, ‘তাকে তো তুলে আনা হয়নি, সে ক্যাম্পাসের হলে ইন্টারনেট ব্যবসা করে। তার সাথে আমাদের ভালো সম্পর্ক। আমাদের সাথে মীমাংসার জন্য তার পরিচিত ক্যাম্পাসের ছাত্ররাই আমাদের কাছে নিয়ে এসেছিল। পরে আমরাই বরং অবাক হয়েছি কাজুকে আনার সাথে সাথেই অন্তত ৫০ জন লোক এসে আমাদের মারা শুরু করল। তুলে এনে জিম্মি করা হলে আমরা তাকে নিয়ে তাদের গ্রামে কেন রাখব, আমরা তো তাকে ক্যাম্পাসে নিয়ে যেতাম।’
একইভাবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগ নেতা অভিষেক। তিনি বলেন, ‘এমন কিছুই ঘটেনি। আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ করতেই অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’
কাজুকে উদ্ধারের সময় গ্রামবাসী সহিংস কেন
গ্রামের একাধিক বাসিন্দা নিউজবাংলাকে বলেছেন, তারা আন্দাজ করতে পারছিলেন ছাত্রলীগের ছেলেরা খেলার সময় মার খাওয়ার প্রতিশোধ নেবে। এর আগে ২০০৭ সালে বিরোধের জেরে কাশেম নামের এক যুবককে তুলে নিয়ে গিয়েছিল ছাত্ররা। বেদম পিটানোর পর তিনি মারা যান। সেই মামলার এখনও বিচার হয়নি।
কাজুরও একই পরিণতি হতে পারে, এমন শঙ্কা ছিল গ্রামবাসীর।
এছাড়া, কথায় কথায় বাজার বন্ধ করে দেয়া, গ্রামের যেকোনো বিষয়ে ক্ষমতা দেখানো, স্থানীয়দের মারধর করাসহ চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে ছাত্রলীগের একটি অংশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়েছে গ্রামবাসী।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মান্নান অভিযোগ করেন, তার তিনতলা বাড়ি নির্মাণের সময় গত বছর ক্যাম্পাস ছাত্রলীগ নেতারা ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন।
কারা চাঁদা নিচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনো ভবন মালিকই এদের নাম জানাতে চান না। আপনারা পারলে খুঁজে নেন।’
সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গ্রামবাসীর সম্পর্ক কেমন
ক্যাম্পাস ঘেঁষা গেরুয়া গ্রামে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী থাকছেন। গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, অনেক বাড়িতেই ভাড়াটিয়া হিসেবে আছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক সাবেক শিক্ষার্থীও আছেন এই গ্রামে।
সংঘর্ষের পরেও গেরুয়া গ্রামে আছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, গ্রামবাসীর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আন্তরিক।
গ্রাম ছাড়েননি এমন একাধিক ছাত্র নিউজবাংলাকে জানান, শুক্রবার সন্ধ্যার ঘটনার সময় তারা নিরাপত্তার জন্য নিজ থেকেই ঘরে অবরুদ্ধ ছিলেন। এমনকি কোনো কোনো বাড়ির মালিক সে সময় ছাত্রদের নিরাপত্তার বিষয়ে নজর রেখেছেন।
গ্রামবাসীও বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের কোনো ঝামেলা নেই। ছাত্রদের খুব সামান্য একটি অংশ প্রভাব বিস্তার করতে গ্রামে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করছে।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ক্যাম্পাস ও জেলা ছাত্রলীগের একাধিক নেতা নিউজবাংলাকে জানান, প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে জাবি ছাত্রলীগ ও ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের মধ্যে সব সময় স্নায়ুযুদ্ধ চলে। ক্যাম্পাস ঘেঁষা ও জাবি ছাত্রলীগের কারণে গেরুয়ার মতো গ্রামে জেলা ছাত্রলীগ প্রভাব রাখতে পারছে না।
ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীকে উসকে দিতে চেষ্টা করেন জেলা ছাত্রলীগ নেতারা, অন্যদিকে জেলার অনুসারীদের দমিয়ে রাখতে বাড়তি তৎপরতা দেখায় ক্যাম্পাস ছাত্রলীগ।
আরও পড়ুন: মসজিদে ঘোষণা দিয়ে জাবি ছাত্রদের ওপর হামলা
আরও পড়ুন:দেশের চারটি বিভাগে বৃষ্টির আভাস দিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, অন্য অঞ্চলগুলোতে আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমন বার্তা দিয়েছে।
পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলা হয়, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
বৃষ্টিপাত নিয়ে বলা হয়, ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এ ছাড়া দেশের অন্যান্য জায়গায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
আজকের তাপমাত্রা নিয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।
আরও পড়ুন:স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে ২০২৬ সালে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও উত্তরণ-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে কৌশল প্রণয়ন করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সূত্র: বাসস
রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সভাপতিত্বকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিৎ কর্মকার সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
তিনি বলেন, ‘এলডিসি থেকে উত্তরণে সম্ভাবনার পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে সমন্বয়ের কোনো সমস্যা নেই। এটি কোনো নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নয়, বরং এটি একটি সার্বিক সমস্যা।’
ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) মো. আব্দুস সালাম ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার বক্তব্য দেন। এ সময় পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও সংশ্লিষ্ট সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, বৈঠকে মোট ৮ হাজার ৪২৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয়সাপেক্ষ মোট ১১টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মোট প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে ৭ হাজার ৯৩৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা সরকার দেবে এবং বাকি ৪৮৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা প্রকল্প সহায়তা হিসেবে আসবে।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কিছু নির্দেশনা প্রকাশ করে পরিকল্পনা সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী মিসরের কায়রোতে বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্স ও আবাসিক ভবন নির্মাণের জন্য ১৬৬ কোটি টাকার প্রকল্পের অনুমোদন দেয়ার সময় প্রয়োজনীয় বিশ্রাম কক্ষ রাখা এবং প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেন স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে পরিষেবা পান সেজন্য পর্যাপ্তসংখ্যক বুথ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের জেলাগুলোতে গ্রামীণ অবকাঠামোগত উন্নয়নে আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী কুড়িগ্রামে নদীভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং রাস্তা ও সেতু নির্মাণের সময় বন্যার বিষয়টি বিবেচনা করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সারা দেশে ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স (তৃতীয় পর্যায়) নির্মাণের জন্য ৩ হাজার ৫৯ কোটি টাকার প্রকল্প সম্পর্কে সত্যজিৎ বলেন, প্রধানমন্ত্রী সারা দেশে বাকি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সগুলোর নির্মাণ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে তিনি উপকূলীয় এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের পাশাপাশি সোলার সিস্টেম রাখার জন্য একটি ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেন।
পরিকল্পনা সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেসব প্রকল্প সমাপ্তির পথে সেগুলোর সবশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে সংশ্লিষ্ট উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসেছেন।
প্রধানমন্ত্রী পরিকল্পনা কমিশনকে এসব প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ নিশ্চিত করতে বলেন, যাতে করে এগুলো দ্রুত সম্পন্ন করা যায়।
মিরপুরে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠার জন্য ১১৫ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সেখানে নারীদের প্রশিক্ষণের বিষয়টি অগ্রাধিকার দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সরকার প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব করতে না চাইলেও মাঝে মাঝে জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতা ও ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে বিলম্ব হয়।
তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দেয়া হচ্ছে।
সভায় অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পগুলো হল- অতিরিক্ত ২৮৮ কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০টি মিটার গেজ ডিজেল ইলেক্ট্রিক লোকোমোটিভ এবং ১৫০টি মিটার গেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ সংগ্রহ (প্রথম সংশোধিত); ৪৮১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যয়ে কাশিনাথপুর-দাশুরিয়া-নাটোর-রাজশাহী-নবাবগঞ্জ-কানসাট-সোনামসজিদ-বালিয়াদিঘি সীমান্ত জাতীয় মহাসড়কের যথাযথ মান উন্নয়ন; ৩৭১ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে সরকারি মৎস্য খামারের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প (প্রথম পর্যায়); ২৩২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার জেলায় বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের ফিশ ল্যান্ডিং সেন্টারের উন্নয়ন; অতিরিক্ত ১৬৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে অবকাঠামো, উন্নত দক্ষতা ও তথ্যের প্রবেশাধিকারের মাধ্যমে দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্য টিকে থাকার সামর্থ বৃদ্ধি এবং অতিরিক্ত ১ হাজার ৪৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে আটটি বিভাগীয় শহরে পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার, হার্ট ও কিডনি রোগের চিকিৎসা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা (প্রথম সংশোধিত)।
আরও পড়ুন:কোনো ধরনের দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবেন না বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ।
তিনি বলেছেন, ‘আমি কোনো দুর্নীতি করব না। কোনো দুর্নীতি প্রশ্রয়ও দেব না। আমি মানুষ হিসেবে ভুল করতেই পারি, তবে ভুল হলে ধরিয়ে দেবেন। আমার কাজের গতি যেন ত্বরান্বিত হয়, সে ব্যাপারে সহযোগিতা করবেন।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে দুপুর ১২টার দিকে উপাচার্যের কার্যালয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন নতুন উপাচার্য।
দায়িত্ব নিয়েই সবার প্রতি সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘আমি আপনাদেরই লোক, আমি বঙ্গবন্ধুর লোক, আমি প্রধানমন্ত্রীর লোক। আমাকে সবাই সহযোগিতা করবেন, ভুল হয়ে ধরিয়ে দেবেন। তবে কেউ আমাকে পিছু টানবেন না।’
তিনি বলেন, ‘আমি কারও অন্যায় আবদার শুনব না। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে চাই। প্রশাসনিক ক্ষমতা দেখাতে নয়, আমি আপনাদের বন্ধু হয়ে কাজ করতে চাই। আমি আপনাদের পাশে থেকে সব সমস্যা সমাধান করব।’
চিকিৎসকদের উদ্দেশে নতুন উপাচার্য বলেন, ‘আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করলেই আমি সবচেয়ে খুশি হব। অন্যকিছু দিয়ে আমাকে খুশি করা যাবে না। কেউ দায়িত্ব পালন করতে না পারলে দায়িত্ব থেকে সরে যেতে হবে। যিনি চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে পারবেন, তিনিই দায়িত্ব নেবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ আমার বন্ধু। তিনি আমাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে বিদায় নিয়েছেন। আমি শারফুদ্দিন আহমেদকে শুভেচ্ছা জানাই।’
ডা. দীন মোহাম্মদ বলেন, ‘আমি সুনির্দিষ্ট কোনো গ্রুপের লোক নই। আমি কোনো ধরনের গ্রুপে যেতে চাই না। এ বয়সে আমার কোনো গ্রুপিংয়ের প্রয়োজন নেই। আমাকে যে আস্থা এবং বিশ্বাস নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখানে পাঠিয়েছেন, আমি সেটাকে মূল্যায়ন করতে চাই।’
উদ্বোধনের দীর্ঘদিন পরও সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালু না হওয়া প্রসঙ্গে নতুন উপাচার্য বলেন, ‘সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালু করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ।’ এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানান তিনি।
উপাচার্য বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমার দায়বদ্ধতা আছে। আমি বিদেশ থেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক-ট্রেইনারদের নিয়ে এসে আমাদের চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব। আশা করি, সেবায় প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের অন্যতম জায়গায় অবস্থান করবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়টিকে বিশ্বের অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা উপাচার্য হিসেবে তার একমাত্র অ্যাজেন্ডা বলে উল্লেখ করেন তিনি।
নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ইউনেস্কো ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কার প্রদান করেনি বলে শিক্ষামন্ত্রীর দাবির একদিন পর এ বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছে ইউনূস সেন্টার।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে ইউনূস সেন্টার জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ১৪-১৬ মার্চ প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে আজারবাইজানের বাকুতে অনুষ্ঠিত বাকু ফোরাম একাদশে বিশিষ্ট বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, নিজামি গানজাভি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার থেকে অধ্যাপক ইউনূসকে পাঠানো বাকু ফোরামের অফিশিয়াল অনুষ্ঠানসূচিতেও অধ্যাপক ইউনূস ইউনেস্কোর পুরস্কার গ্রহণ করবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। অধ্যাপক ইউনূসকে বাকু ফোরামের সমাপনী নৈশভোজে যোগদানের বিষয়টি বিশেষভাবে মনে করিয়ে দেওয়া হয়, যাতে তিনি ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কারটি গ্রহণের জন্য মঞ্চে সশরীর উপস্থিত থাকেন।
ইউনূস সেন্টার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইউনেস্কোর পুরস্কারের বিষয়টি উল্লেখ করে। অধ্যাপক ইউনূসকে প্রদত্ত ‘ট্রি অফ পিস’ ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত পদকের একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এর আগে ২০২৩ সালের জুনে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ইউনেস্কোর প্রধান কার্যালয় পরিদর্শনের সময় ইউনেস্কো এবং অধ্যাপক ইউনূস প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সংগঠন ইউনূস স্পোর্টস হাবের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল ইউনেস্কোর ফিট ফর লাইফ ফ্ল্যাগশিপের অধীন টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে উভয় প্রতিষ্ঠানের একসঙ্গে কাজ করে যাওয়া।
এর আগে বুধবার শিক্ষামন্ত্রী ও বাংলাদেশ ইউনেস্কো কমিশনের চেয়ারম্যান মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, “নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে ইউনেস্কো ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কার দেয়নি।”
তিনি বলেন, “আজারবাইজানের গঞ্জাভি ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে ড. ইউনূসকে ইসরাইলের একজন ভাস্কর ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কারে ভূষিত করেন।”
ইউনেস্কো থেকে পুরস্কার পেয়েছেন বলে ড. ইউনূস যে দাবি করেছেন তা অসত্য বলে দাবি করেন মন্ত্রী।
আরও পড়ুন:শান্তিতে নোবেলজয়ী হয়েও ড. ইউনূস ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার পক্ষ নিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, হত্যাযজ্ঞে নিশ্চুপ থেকে এবং একজন ইসরায়েলির দেয়া পুরস্কার নিয়ে ড. ইউনূস প্রকারান্তরে গণহত্যায় সমর্থন দিয়েছেন। আর ইউনূস সেন্টার এটিকে ইউনেস্কোর পুরস্কার উল্লেখ করে মিথ্যাচার করছে, যা খুবই দুঃখজনক।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৃহস্পতিবার মতবিনিময়কালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘ইউনূস সেন্টারের মিথ্যাচারে আমি বিষ্মিত, হতবাক। সম্প্রতি আজারবাইজানের বাকুতে একটি সম্মেলনে মিজ হেদভা সের নামে একজন ইসরায়েলি ভাস্বর ড. ইউনুসকে একটি পুরস্কার দিয়েছেন। এ সম্মেলনে ইউনেস্কো কোনোভাবে জড়িত ছিল না।
‘এই পুরস্কার ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে তো নয়ই, একজন ব্যক্তির পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে। আর ইউনূস সেন্টার সেটিকে ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে বলে মিথ্যাচার ও অপপ্রচার করেছে। তবে এটিই প্রথম নয়, এর আগেও এ ধরনের মিথ্যাচার ইউনূস সেন্টারের পক্ষ থেকে করা হয়েছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ড. ইউনূস শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। ওদিকে গাজায় আজ নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চলছে, নারী ও শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। এ নিয়ে তিনি একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি, প্রতিবাদ করেননি।
‘বরং এই সময়ে তিনি একজন ইসরায়েলির কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেছেন। এর অর্থ কি এটাই নয় যে ড. ইউনূস প্রকারান্তরে গণহত্যায় সমর্থন দিয়েছেন? এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।’
সীমান্ত হত্যায় বিজিবি’র মাধ্যমে প্রতিবাদ
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘২৫ মার্চ মধ্যরাতে লালমনিরহাট ও ২৬ মার্চ ভোরে নওগাঁ সীমান্তে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনায় বিজিবি’র মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানো এবং সীমান্তে পতাকা বৈঠকও হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা অনেকদিন ধরেই ভারতের সঙ্গে আলোচনা করে আসছি। সম্প্রতি ভারত সফরেও এ নিয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকগুলোতে গুরুত্বসহ আলোচনা করেছি। সেই প্রেক্ষিতে সীমান্তে এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নন-লেথাল বা প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। রাবার বুলেটে অনেকে আহত হন; কিন্তু প্রাণহানি কমে এসেছে। তবে আমাদের লক্ষ্য প্রাণহানিকে শূন্যের কোটায় নিয়ে আসা।’
নাবিক ও জাহাজ উদ্ধারে নানামুখী তৎপরতা চলছে
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সোমালি জলদস্যুদের কবল থেকে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর নাবিকদের নিরাপদে উদ্ধার ও জাহাজটিকে মুক্ত করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।’
তিনি বলেন, ‘জাহাজ সম্পর্কে শুধু এটুকু বলতে চাই, নাবিকদের মুক্ত করার জন্য আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগে আছি। আমরা নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছি। আমরা অনেকদূর এগিয়েছি।’
জাহাজে খাদ্য সংকট নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, জাহাজটিতে খাদ্য সংকট নেই। এর আগে তিন মাস ধরে জলদস্যুদের কবলে থাকা অন্য জাহাজেও খাদ্য সংকট ছিল না।
আরও পড়ুন:ঈদের পর সমাধান করা হবে- স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এমন আশ্বাসে এক মাসের জন্য আন্দোলন থামালেন বেতন-ভাতা বাড়ানো ও বকেয়া ভাতা পরিশোধসহ চার দফা দাবিতে কর্মবিরতি কর্মসূচি পালনকারী পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চিকিৎসকরা যে দাবিগুলো করেছেন সেগুলো যৌক্তিক। চিকিৎসকরা হাসপাতালকে বাঁচিয়ে রাখে। তাদের বেতন বাড়ানোর বিষয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, চিকিৎসকদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন হবে। তারা কাজে যোগদান করুক।’
বিষয়টি কতদিনে বাস্তবায়িত হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কিছুদিন তো লাগবেই। তবে ঈদের পর হয়তো বলতে পারব, কতদিনের মধ্যে বেতন বাড়বে।’
এর আগে গত শনিবার (২৩ মার্চ) চার দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন করেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
আগামী মাসে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির বাংলাদেশ সফরে কিছু বিষয়ে গুরুত্ব পাবে বলে ইউএনবিকে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র।
ওই সূত্র বার্তা সংস্থাটিকে জানায়, শেখ তামিমের সফরে জনশক্তি, জ্বালানি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বৃহত্তর সহযোগিতার মাধ্যমে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চায় উভয় দেশ।
কাতারের আমিরের সফরে দুই দেশের মধ্যে প্রায় ডজনখানেক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও চুক্তি চূড়ান্ত করার বিষয়ে আলোচনা চলছে জানিয়ে সূত্রটি বলেছে, সফরকালে এসব এমওইউ ও চুক্তি সই করা হবে।
ইউএনবির প্রতিবেদনে বলা হয়, কাতারের আমিরের দুই দিনের সফরটি হতে পারে আগামী ২১ থেকে ২২ এপ্রিল।
বার্তা সংস্থাটি জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমিরের বৈঠকের পর যেসব এমওইউ ও চুক্তি সই হবে, সেগুলো নিয়ে দুই পক্ষ এখন কাজ করছে। সফরের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে আন্তমন্ত্রণালয় সভা করেছে।
গত বছরের মার্চে কাতারের রাজধানী দোহায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বিষয়ে জাতিসংঘের সম্মেলন এলডিসি-৫-এর পার্শ্ববৈঠকে কাতারের আমির শেখ তামিমের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ওই বৈঠকে কাতারের কাছে বিশেষ করে এলএনজি সরবরাহে সহযোগিতার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনের পর একই বছরের ৪ মার্চ বাংলাদেশকে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় কাতার।
১৯৭৫ সালের ২৫ জুন দোহায় বাংলাদেশ তার কূটনৈতিক মিশন চালু করে। ১৯৮২ সালে ঢাকায় কূটনৈতিক মিশন খোলে কাতার।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য