চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) স্নাতক ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে মঙ্গলবার। ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পুরো ক্যাম্পাসে জোরদার করা হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা নজরদারি।
ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আগামী ১৬ থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত চারটি ইউনিট ও দুটি উপ-ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম দিন ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়া তথ্যানুসারে, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ৪ হাজার ৯২৬টি আসনের বিপরীতে পরীক্ষা দেবে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭২৭ জন। সে হিসাবে এবারে আসনপ্রতি লড়বে ২৯ জন।
স্বাস্থ্যবিধির বিষয় মাথায় রেখে ও ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় এবার তিনটি ইউনিটের পরীক্ষা দুটি শিফটে (সকাল-বিকেল) অনুষ্ঠিত হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া এক সংবাদ সম্মেলনে রোববার এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, প্রথম দিন ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবেন ৫৪ হাজার ১০৬ জন। এর মধ্যে সকালের শিফটে পরীক্ষা দেবেন ২৭ হাজার ৫৩ জন। বিকেলের শিফটের পরীক্ষাও একই সংখ্যক পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেবেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও হাটহাজারী কেন্দ্রে ‘এ’ ইউনিটের পরীক্ষার কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে ‘এ’ ইউনিটের সিট প্ল্যান প্রকাশ হয়েছে। শিক্ষার্থীরা স্ব স্ব আইডিতে লগইন করে সিট প্ল্যান দেখতে পারবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ও পেজে।
এভাবে প্রতি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ৪৮ ঘণ্টা আগে আসন বিন্যাসে জানিয়ে দেয়া হবে।
পরীক্ষার সময়সূচি-
সকালের শিফটে পরীক্ষার্থীরা ৯টা ৪৫ মিনিটে কেন্দ্রে প্রবেশ করবেন। ওএমআর ফরম বিতরণ করা হবে ১০টা ১৫ মিনিটে। প্রশ্নপত্র বিতরণ করা হবে বেলা ১১টায়। পরীক্ষা শেষ হবে দুপুর ১২টায়।
অন্যদিকে দুপুরের শিফটে ভর্তিচ্ছুরা ২টা ১৫ মিনিটে কেন্দ্রে প্রবেশ করবেন। ওএমআর ফরম বিতরণ করা হবে ২টা ৪৫ মিনিটে। প্রশ্নপত্র বিতরণ করা হবে বেলা সাড়ে ৩টায়। পরীক্ষা শেষ হবে বিকেল সাড়ে ৪টায়।
১৬ আগস্ট ‘এ’ ইউনিট, ১৯ আগস্ট ‘সি’ ইউনিট, ২০ আগস্ট ‘বি’ ইউনিট, ২২ আগস্ট ‘ডি’ ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া ২৪ আগস্ট সকালে উপ-ইউনিট ‘বি-১’ ও একই দিন বিকেলে ‘ডি-১’ ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
কোন ইউনিটে কত
আইসিটি সেল থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, ‘এ’ ইউনিটে আবেদন করেছেন ৫৪ হাজার ১০৬ জন, ‘বি’ ইউনিটে আবেদন করেছেন ৩৫ হাজার ৭৭৯ জন শিক্ষার্থী, ‘সি’ ইউনিটে আবেদন করেছেন ১১ হাজার ৬০ জন, ‘ডি’ ইউনিটে আবেদন করেছেন ৩৯ হাজার ৩৯২ জন, ‘বি১’ উপ-ইউনিটে আবেদন করেছেন ১ হাজার ৫৭৯ জন, ‘ডি১’ ইউনিটে আবেদন করেছেন ১ হাজার ৮১১ জন।
সে হিসাবে ‘এ’ ইউনিটে প্রতিটি আসনের জন্য লড়বেন ৪৫ জন, ‘বি’ ইউনিটে লড়বেন ২৯ জন, ‘সি’ ইউনিটে লড়বেন ২৫ জন, ‘ডি’ ইউনিটে ৩৪ জন, ‘বি১’ ইউনিটে ১৩ জন এবং ‘ডি১’ ইউনিটে ৬০ জন। এ ছাড়া মোট আবেদন অনুসারে প্রতি আসনের জন্য লড়বেন ২৯ জন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এস এম মনিরুল হাসান বলেন, ‘আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ থাকবে- একজন পরিক্ষার্থীর সঙ্গে একাধিক অভিভাবক না আসেন। আশা করছি সুন্দরভাবে ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হবে।
ক্যাম্পাসে বাড়তি নিরাপত্তা
ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ক্যাম্পাসে জোরদার করা হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। পরীক্ষা চলাকালীন প্রায় আট শতাধিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বেষ্টনী দ্বারা আবৃত থাকবে পুরো ক্যাম্পাস । পুলিশ, র্যাব, ডিবি, ডিএসবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে গোটা ক্যাম্পাস থাকবে গোয়েন্দা নজরদারির আওতায়। ছাত্র সংগঠনগুলোর ওপরও রাখা হচ্ছে বিশেষ নজরদারি। ট্রাফিক কন্ট্রোলে বিভিন্ন পয়েন্টে কাজ করবে ট্রাফিক পুলিশ। এ ছাড়া ভর্তি জালিয়াতি ঠেকাতে ডিজিএফআই, এনএসআই গোয়েন্দা সংস্থাও মাঠে থাকবে। সংঘর্ষ কিংবা র্যাগিংসহ অপ্রীতিকর যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোরিয়াল বডি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে পুরো ক্যাম্পাসকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। প্রায় আট শতাধিক আইনশৃঙ্খলা কর্মী ও গোয়েন্দা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে নিয়োজিত থাকবে।
‘ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় সিসি ক্যামেরার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আমরা সার্বক্ষণিক মনিটর করব। এ ছাড়া অপ্রত্যাশিত কোনো অপ্রীতিকর ঘটিনা এড়াতে আমাদের সহকারী প্রক্টরবৃন্দও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে থাকবেন। যেকোনো সমস্যায় আমাদের সহকারী প্রক্টরদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে হবে, তাদের নম্বর নোটিশ বোর্ডে দেয়া আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রীদের অভিভাবকদের বিশ্রামের জন্য আমরা হলগুলো খোলা রাখার নির্দেশনা দিয়েছি। খাবার দোকানে মূল্যতালিকা সাটানোর জন্য আমরা কথা বলেছি। পরীক্ষার দিনগুলোতে ৯ জোড়া শাটল চলবে। স্মরণ চত্বরে পরীক্ষার্থীদের সহায়তায় হেল্পডেস্ক থাকবে। এ ছাড়া প্রবেশপত্রসংক্রান্ত সমস্যায় আইটি সেল থেকেও হেল্প নিতে পারবে।’
পরীক্ষার্থীদের মানতে হবে ৮ নির্দেশনা
ভর্তি পরীক্ষার সময় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্য আটটি নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নির্দেশনাগুলো হলো-
১. মাস্ক ব্যতীত কোনো পরীক্ষার্থী পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে না। পরীক্ষার হলে সার্বক্ষণিক মাস্ক পরিধান করে থাকতে হবে।
২. পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে একের অধিক অভিভাবক চবি ক্যাম্পাসে আসতে পারবে না। পাশাপাশি নিরাপত্তার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট সকলকে জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা নিজস্ব পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে।
৩. পরীক্ষা শেষে ধাপে ধাপে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্র ত্যাগ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্র প্রধান/পরিদর্শকদের নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।
৫. প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর ডাউনলাড করা দুই কপি প্রবেশপত্র, পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি ও উচ্চ মাধ্যমিক/সমমান পরীক্ষার মূল রেজিস্ট্রেশন কার্ড অথবা A লেভেলের Statement of Entry-এর মূল কপি ভর্তি পরীক্ষার দিন অবশ্যই সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে।
৬. পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষার হলে fx-100 বা এর নিচে সাধারণ মানের (মেমোরি অপশন/সিম ব্যতীত) ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে পারবে। পরীক্ষার হলে প্রার্থীর মোবাইল ফোন, Calculator with Memory Option/সিম, Electronic Device সংবলিত ঘড়ি ও কলম বা যেকোনো ধরনের Device সঙ্গে রাখতে পারবে না।
৭. প্রশ্ন ফাঁস সংক্রান্ত বিষয়ে কারও কাছে কোনো অভিযোগে দৃষ্টিগোচর হলে তা প্রথম ও দ্বিতীয় শিফটে নির্ধারিত পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশ সময়ের ন্যূনতম ১ ঘণ্টা আগে প্রমাণসহ সংশ্লিষ্ট ইউনিট কো-অর্ডিনেটরের কাছে লিখিত অভিযোগ করা যাবে।
৮. ভর্তি পরীক্ষায় কারও বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে তাৎক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আইনি ব্যবস্থা নেবে।
শাটল ট্রেনের সূচি
ভর্তি পরীক্ষার দিনগুলোতে পরীক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিশেষ শাটল ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আগামী ১৬, ১৯, ২০, ২২ ও ২৪ আগস্ট এই বিশেষ শাটল সার্ভিস চলবে।
নগরীর বটতলী রেলস্টেশন থেকে যথাক্রমে সকাল ৬টা, সাড়ে ৬টা, ৮টা ১৫ মিনিট, ৮টা ৪৫ মিনিট, ১১টা ৪০ মিনিট, দুপুর ১২টা, বিকেল ৩টা, ৪টা ও রাত সাড়ে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন থেকে যথাক্রমে সকাল ৭টা ৫ মিনিট, সকাল ৭টা ৩৫ মিনিট, সকাল ৯টা ২০ মিনিট, সকাল ১০টা, দুপুর ১টা, বেলা দেড়টা, বিকেল ৫টা, বিকেল সাড়ে ৫টা ও রাত ৯টা ১০ মিনিটে নগরীর বটতলীর উদ্দেশে ছেড়ে যাবে।
তবে ২৪ আগস্ট শাটল নিয়মিত সময়সূচিতে চলবে।
সব ট্রেনই ঝাউতলা, ষোলশহর, ক্যান্টনমেন্ট, চৌধুরীহাট, ফতেয়াবাদ স্টেশনে কিছুক্ষণ থেমে বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে যাবে। প্রতিটি ট্রেন বটতলী রেলস্টেশন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে আসতে আনুমানিক ১ ঘণ্টা সময় লাগবে।
আরও পড়ুন:বৃহত্তর চট্টগ্রামে রোববার থেকে ৪৮ ঘণ্টা পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বৃহত্তর গণপরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্যপরিষদ।
বাসের ধাক্কায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থী নিহত ও অপর একজন আহত হওয়ার ঘটনার জের ধরে গাড়ি পোড়ানোর প্রতিবাদে এই ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্যপরিষদের আহ্বায়ক ও হাটহাজারী পৌরসভার প্রশাসক মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী মঞ্জু শনিবার বলেন, ‘কয়েক দিনে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে আমাদের তিনটি বাস পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। গাড়ি পোড়ানো ও সড়কে নৈরাজ্যের প্রতিবাদসহ চার দফা দাবি আদায়ে আগামীকাল (রোববার) সকাল ৬টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা, তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান এবং কক্সবাজার জেলায় এই ধর্মঘট পালিত হবে।’
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে সোমবার বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই চুয়েট শিক্ষার্থী নিহত হন। এর প্রতিবাদে ওইদিন থেকেই ১০ দফা দাবিতে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় বাসে আগুন দেয়া হয়।
বুধবার ওই বাসের চালককে পুলিশ গ্রেপ্তার করলে শিক্ষার্থীরা কিছুটা শান্ত হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ২০ জনের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে তিন ঘণ্টা বৈঠক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেখানে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসের মূল ফটকের সামনের সড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ১১ মে পর্যন্ত চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার বিকেলে চুয়েট সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই সময়ে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করতে পারবেন। যদিও জরুরি সিন্ডিকেট সভায় নেয়া সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সে সঙ্গে দাবি আদায়ে আবারও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
বৃহত্তর চট্টগ্রামে রোববার থেকে ৪৮ ঘণ্টা পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বৃহত্তর গণপরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্যপরিষদ।
বাসের ধাক্কায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থী নিহত ও অপর একজন আহত হওয়ার ঘটনার জের ধরে গাড়ি পোড়ানোর প্রতিবাদে এই ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্যপরিষদের আহ্বায়ক ও হাটহাজারী পৌরসভার প্রশাসক মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী মঞ্জু শনিবার বলেন, ‘কয়েক দিনে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে আমাদের তিনটি বাস পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। গাড়ি পোড়ানো ও সড়কে নৈরাজ্যের প্রতিবাদসহ চার দফা দাবি আদায়ে আগামীকাল (রোববার) সকাল ৬টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা, তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান এবং কক্সবাজার জেলায় এই ধর্মঘট পালিত হবে।’
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে সোমবার বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই চুয়েট শিক্ষার্থী নিহত হন। এর প্রতিবাদে ওইদিন থেকেই ১০ দফা দাবিতে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় বাসে আগুন দেয়া হয়।
বুধবার ওই বাসের চালককে পুলিশ গ্রেপ্তার করলে শিক্ষার্থীরা কিছুটা শান্ত হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ২০ জনের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে তিন ঘণ্টা বৈঠক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেখানে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসের মূল ফটকের সামনের সড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ১১ মে পর্যন্ত চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার বিকেলে চুয়েট সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই সময়ে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করতে পারবেন। যদিও জরুরি সিন্ডিকেট সভায় নেয়া সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সে সঙ্গে দাবি আদায়ে আবারও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
এক সপ্তাহ পর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রোববার থেকে ক্লাস শুরু হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
এ বিষয়ে কিছু নির্দেশনা দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মাহবুবুর রহমান তুহিন শনিবার নির্দেশনার বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
নির্দেশনাগুলো
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বলা হয়, চলমান দাবদাহের কারণে কোমলমতি শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর লার্নিং সেন্টারগুলোতে শ্রেণি কার্যক্রম চালুর বিষয়ে নিম্নোক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
১. রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণি কার্যক্রম চলবে।
২. এক শিফটে পরিচালিত বিদ্যালয়গুলো প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলবে।
৩. দুই শিফটে পরিচালিত বিদ্যালয়গুলো প্রথম শিফট সকাল ৮টা থেকে সকাল সাড়ে ৯টা এবং দ্বিতীয় শিফট সকাল পৌনে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চালাবে।
৪. প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
৫. দাবদাহ সহনীয় পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত অ্যাসেম্বলি বন্ধ থাকবে।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) আগামী ৯ মে পর্যন্ত সব ধরনের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল, সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শনিবার বিকেলে চুয়েট সিন্ডিকেটের জরুরি এক বৈঠক এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বৈঠক শেষে সিন্ডিকেট সদস্য ফিরোজ খাননুন ফরাজী বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এর আগে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার পর চলমান আন্দোলন স্থগিত করেন চুয়েট শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন স্থগিত করায় অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে নির্দেশনা জারি করেছিল তা পুনর্বিবেচনা করেছে চুয়েট প্রশাসন।
গত সোমবার চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই চুয়েট শিক্ষার্থী নিহত হন। এর জেরে ওইদিন থেকে শিক্ষার্থীরা ১০ দফা দাবিতে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে আসছিলেন। বুধবার ঘাতক বাসের চালককে পুলিশ গ্রেপ্তার করলে শিক্ষার্থীরা কিছুটা শান্ত হন।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ২০ জনের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ওই বৈঠক ফলপ্রসূ হওয়ায় শিক্ষার্থীরা চুয়েটের ফটকের সামনের সড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেন। তারপর চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে যান চলাচল শুরু হয়।
বৈঠক শেষে রাত সাড়ে ১১টায় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তারা জানান, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বাসচালককে গ্রেপ্তার করার দাবি ছিল, তা পূরণ হয়েছে। ক্ষতিপূরণের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তহবিল গঠন করবে, যেখানে বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী, সব শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সহযোগিতা করবেন।
তারা আরও জানান, চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক অপ্রশস্ত হওয়ায় বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনা ঘটছে। তাই সড়কটি প্রশস্ত করার কাজও দ্রুত শুরু করা হবে। এ বিষয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠকের আয়োজন করা হবে বলে আশ্বাস পেয়েছেন তারা। এসব দাবি পূরণ কিংবা আশ্বাসের ভিত্তিতে আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বৈঠক ফলপ্রসূ হওয়ায় পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে শুক্রবার বিকেল ৪টায় সিন্ডিকেট সদস্যদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয় ৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকলেও হল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
আরও পড়ুন:ভর্তি ফির ওপর শতভাগ ছাড়ে ভর্তি উৎসব শুরু হয়েছে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ ক্যাম্পাসে।
রাজধানীর প্রগতি সরণিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ভবনে গতকাল বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল শুরু হয়ে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে এ ভর্তি উৎসব।
এ উৎসবে প্রতি দিন ভর্তি হওয়া পাঁচজন শিক্ষার্থীকে লটারির মাধ্যমে এ সুবিধা দেয়া হবে। এ ছাড়া ভর্তি হওয়া প্রথম তিনজনও এ সুবিধা পাবেন। পাশাপাশি ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্যে রয়েছে সর্বোচ্চ শতভাগ পর্যন্ত স্কলারশিপের সুযোগ। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে এই বৃত্তি প্রদান করা হবে।
স্নাতক প্রোগ্রামে ভর্তির সুযোগ থাকছে শিপিং ও মেরিটাইম সায়েন্স, সিএসই, ইইই, বিবিএ, ইংলিশ, এলএলবি, মিডিয়া কমিউনিকেশন ও জার্নালিজম বিভাগে। স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামে ভর্তি চলছে এমবিএ, ইএমবিএ (রেগুলার ও এক্সিকিউটিভ) এবং মেরিটাইম ট্রান্সপোর্টেশন ও লজিস্টিকস বিভাগে।
ভর্তি উৎসবের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. গিয়াস ইউ আহসান।
অভিজ্ঞ শিক্ষক, আধুনিক ক্লাসরুম, ডিজিটালাইজড লাইব্রেরি ও মডার্ন ল্যাবের সুব্যবস্থা কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশকে ক্রমেই জনপ্রিয় করে তুলছে শিক্ষার্থীদের মাঝে।
বাংলাদেশে একমাত্র এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিপিং ও মেরিটাইম সায়েন্স এবং মাস্টার্স ইন মেরিটাইম ট্রান্সপোর্টেশন ও লজিস্টিকস বিষয়ে শিক্ষার সুবিধা রয়েছে, যেটা আর কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। মিডিয়া গ্র্যাজুয়েটদের রয়েছে শতভাগ চাকরির নিশ্চয়তা।
কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিতে থাকা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রেডিট ট্রান্সফার করার সুযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের। এ ছাড়া উচ্চতর পড়াশোনার জন্য সুযোগ থাকছে কানাডা, ইউকে, মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ভর্তি সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্যের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন- 01707070280, 01707070284 (হোয়াটসঅ্যাপ)।
অনলাইনে আবেদন করতে এখানে ক্লিক করুন।
আরও পড়ুন:বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে চতুর্থ দিনের মতো বৃহস্পতিবারও ক্যাম্পাসে নিহত শিক্ষার্থীদের সহপাঠীরা বিক্ষোভ কর্মসূচি ও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন।
এর মধ্যে কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করায় শিক্ষার্থীরা আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। এদিন দুপুরে ক্যাম্পাসের স্বাধীনতা চত্বর এলাকায় থাকা শাহ আমানত পরিবহনের একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা।
বৃহস্পতিবার উপাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের ১৫১তম জরুরি সভায় চুয়েটের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পরীক্ষাসহ সব অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সহ-উপাচার্য মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন আহমেদ, রেজিস্ট্রার শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক মো. রেজাউল করিম প্রমুখ।
চুয়েটের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২২ এপ্রিল সড়ক দুর্ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) উপাচার্যের সভাপতিত্বে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের ১৫১তম জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পরীক্ষাসহ সব অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
ছাত্রদের বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার মধ্যে এবং ছাত্রীদের শুক্রবার সকাল ৯টার মধ্যে হলত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এদিকে হল ছাড়ার নির্দেশনা পেয়ে বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীরা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ক্যাম্পাসের স্বাধীনতা চত্বর এলাকায় দুপুরের দিকে একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেন তারা। ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
বিকেল পৌনে ৫টায় ক্যাম্পাসের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষার্থীরা জানান, তারা ১০ দফা দাবি তুলে ধরেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসব দাবির বিষয়ে যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেসবের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা একমত হননি। তাই আন্দোলন চলবে। তারা হল ত্যাগ করবেন না।
রেজিস্ট্রার শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বার বার আলোচনা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা আশানুরূপভাবে সাড়া দেয়নি। তাই বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। হল না ছাড়লে কী হবে, সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।’
প্রসঙ্গত, সোমবার (২২ এপ্রিল) বিকেলে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে বাসচাপায় নিহত হন মোটরসাইকেল আরোহী চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শান্ত সাহা ও ২১তম ব্যাচের তৌফিক হোসেন। দুর্ঘটনায় আহত হন জাকারিয়া হিমু নামে আরেক শিক্ষার্থী। এ ঘটনার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে অবস্থান নেন চুয়েট শিক্ষার্থীরা।
ওইদিন সন্ধ্যায় প্রথম দফায় সড়ক অবরোধ করা হয়। পুড়িয়ে দেয়া হয় শাহ আমানত পরিবহনের একটি বাস। পাশাপাশি আরও দুটি বাস ভাঙচুর করা হয়। পরে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে রাত ১০টার দিকে অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা।
পরবর্তীতে সেদিন রাত তিনটায় নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি ঠিক করা হয়। এরপর বুধবার প্রায় ১৩ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। দফায় দফায় চলা আন্দোলনের রেশ বৃহস্পতিবারও ছিলো। শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি ঘোষণার মধ্যে এদিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়।
আরও পড়ুন:দেশে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে অনির্দিষ্টকালের জন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) সশরীরে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ সময় অনলাইনে ক্লাস চালু থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার তীব্র দাবদাহে করণীয় নির্ধারণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিমের সভাপতিত্বে তার সম্মেলন কক্ষে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম। এ ব্যাপারে একটি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশিত হয়েছে বলে জানান তিনি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘দেশে চলমান তাপদাহের কারণে স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সশরীরে সকল ক্লাস, পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।’
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘অনলাইনে ক্লাস ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কার্যক্রম যথারীতি চালু থাকবে।’
বিজ্ঞপ্তিতে তীব্র তাপদাহে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাফেরার জন্য সকলকে সতর্ক করা হয়েছে।
এর আগে গত ২১ এপ্রিল দুপুরে বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও বিভাগের চেয়ারম্যানদের নিয়ে উপাচার্যের ডাকা জরুরি সভায় প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে ২২ এপ্রিল থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে তাপমাত্রা না কমায় তা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে।
এদিকে সারা দেশে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে দেশের বিভিন্ন স্থানে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। দেশজুড়ে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে সারা দেশের সব স্কুল-কলেজে ৭ দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও সশরীরে ক্লাস স্থগিত করে অনলাইনে ক্লাস চলমান রয়েছে। একই সঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তাদের অধিভুক্ত সব কলেজে ক্লাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বৃহস্পতিবার নতুন করে আরও ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
মন্তব্য