দেশের অর্থনীতিতে বড় আতঙ্কের নাম এখন ডলার। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর এই মুদ্রাটির দাপটে বেসামাল হয়ে পড়েছে অর্থনীতি। চাহিদা অনুযায়ী ডলার মিলছে না। বেড়েই চলেছে দাম; কমছে টাকার মান।
গত এক বছরের ব্যবহানে ডলারের বিপরীতে টাকা ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ দর হারিয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই টাকাকে এভাবে দুর্বল হতে দেখা যায়নি।
তবে টাকার এই ‘নাজুক’ অবস্থার মধ্যে ‘ভালো’ দিকও দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নানা আতঙ্ক আর হতাশার মধ্যে আশার কথা শুনিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ডলারের বিপরীতে টাকার এই মান হারানোয় আগামী দিনগুলোতে বিদেশি মুদ্রা বা ডলারের অন্যতম প্রধান উৎস প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স বাড়বে।
কিন্তু রপ্তানি বাণিজ্য নিয়ে দুঃসংবাদ দিয়েছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, গত অর্থবছরে রপ্তানি আয়ে বড় উল্লম্ফন হলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নতুন অর্থবছরে তা কমে যেতে পারে।
দেশের অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর হালচাল নিয়ে তৈরি করা পাক্ষিক প্রতিবেদনে রেমিট্যান্স নিয়ে সুসংবাদের পাশাপাশি রপ্তানি নিয়ে হতাশার কথাও প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বুধবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরে রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমেছে ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ। অথচ আগের অর্থবছরে (২০২০-২১) অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেড়েছিল। ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় বাড়াতে সরকার ইতোমধ্যে রেমিট্যান্সে নগদ প্রণোদনা ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২ দশমিক ৫০ শতাংশ করেছে। করোনা মহামারি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় সব প্রবাসী তাদের কর্মস্থলে ফিরেছেন। টাকার বিপরীতে ডলার বেশ খানিকটা শক্তিশালী হয়েছে।
‘এই বিষয়গুলো আগামী মাসগুলোতে রেমিট্যান্স বাড়াতে সাহায্য করবে।’
গত ৩০ জুন বাংলাদেশ ব্যাংক ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের নতুন যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে, তাতে বলা হয়েছে, রেমিট্যান্স ঊর্ধ্বমুখী হবে এবং চলতি অর্থবছরে গত বছরের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি আসবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ও একই পূর্বাভাস দিয়েছে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত অর্থবছরজুড়ে (২০২১-২২) ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধিতে থাকা প্রবাসী আয় নতুন অর্থবছরে ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।
এই অর্থবছরে রেমিট্যান্স বাড়ার কারণ হিসেবে মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘করোনা-পরবর্তী সময়ে দেশ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ শ্রমিক নতুন করে বিদেশে যাওয়ায় তাদের কাছ থেকে বাড়তি এই পরিমাণ রেমিট্যান্স পাওয়া যাবে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২১ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ কম।
তার আগের অর্থবছরে (২০২০-২১) প্রায় ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার দেশে এসেছিল। প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ।
তবে নতুন অর্থবছরের শুরুটা ভালোই হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম জুলাইয়ের প্রথম ভাগে কোরবানির উদ উদযাপিত হয়েছে দেশে। সেই ঈদকে সামনে রেখে পশুসহ প্রয়োজনীয় অন্য কেনাকাটা করতে অন্যবারের মতো এবারও পরিবার-পরিজনের কাছে বেশি টাকা পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
জুলাই মাসের ১৪ দিনের রেমিট্যান্সের তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, চলতি মাসের এই ১৪ দিনে ( ১ থেকে ১৪ জুলাই) ১২৪ কোটি (১.২৪ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
১০ জুলাই দেশে ঈদ উদযাপিত হয়। ঈদের ছুটির আগে সাত দিনেই ৯০ কোটি ৯৩ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। ছুটির পর তিন দিনে (১২ থেকে ১৪ জুলাই) পাঠিয়েছেন ৩৩ কোটি ডলার।
ছুটির পরেও রেমিট্যান্সপ্রবাহ ভালো বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এই ধারা অব্যাহত থাকলে মাস শেষে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলার ছাড়িয়ে যাবে।’
গত বছরের জুলাই মাসে ১৮৭ কোটি ১৫ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
রপ্তানি কমবে
ডলারের দাম বাড়লে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। কিন্তু ডলার তেজি হওয়ায় রপ্তানিকারকরা লাভবান হলেও যুদ্ধের কারণে নানা শঙ্কার মধ্যে সার্বিক রপ্তানি আয় কমবে বলে মনে করছে অর্থমন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
রপ্তানি আয় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৫২ দশমিক শূন্য আট বিলিয়ন ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। যা আগের বছরের চেয়ে ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি।
২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৩৮ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ।
‘কিন্তু চলতি অর্থবছরে সেই ইতিবাচক ধারা থাকবে না বলে মনে হচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দভাব দেখা দিয়েছে। এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকের প্রধান বাজার ইউরোপ-আমেরিকায় রেকর্ড মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। সে অবস্থায় বাংলাদেশের রপ্তানিও কমে যেতে পারে।’
রপ্তানি বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতিতে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানিতে ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে।
তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধের কারণে চলতি অর্থবছরে রপ্তানি আয়ে ঋণাত্মক (-) প্রবৃদ্ধি হবে। ১০ থেকে ১৫ শতাংশের মতো কমবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বুধবার ১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ বৃদ্ধি ধরে ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৫৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত দেড় মাসের ব্যবধানে আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারের ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৫ শতাংশের বেশি। আর এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ।
গত বছরের ১৩ জুলাই প্রতি ডলারের জন্য ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা খরচ করতে হয়েছিল। দেড় মাস আগে ৩০ মে মাসে লেগেছিল ৮৯ টাকা।
বুধবার সেই ডলার কিনতে হাতে গুণে ৯৩ টাকা ৯৫ পয়সা দিতে হয়েছে। আমদানি, রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে দর ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
ব্যাংকগুলো নগদ ডলারও প্রায় ১০০ টাকা দরে বিক্রি করছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংক বুধবার ৯৮ টাকায় নগদ ডলার বিক্রি করেছে। বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংক বিক্রি করেছে ৯৯ টাকায়। প্রাইম ব্যাংক বিক্রি করেছে ৯৮ টাকা ৫০ পয়সায়।
নতুন অর্থবছরে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স কেমন অঅসবে- এ প্রশ্নের উত্তরে অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলারের যে রেমিটান্স এসেছিল, তার একটি ভিন্ন পেক্ষাপট ছিল। ওই বছরের পুরোটা সময় কোভিডের কারণে গোটা পৃথিবী বন্ধই ছিল বলা চলে। সে কারণে হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোও বন্ধ ছিল। প্রবাসীরা সব টাকা পাঠিয়েছিলেন ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে। সে কারণেই রেমিট্যান্স বেড়েছিল।’
‘আমার বিবেচনায় বাংলাদেশে রেমিট্যান্সের পরিমাণ আসলে ১৬ থেকে ১৮ বিলিয়ন ডলার। নতুন ৫/৬ লাখ লোক বিদেশে যাওয়ায় সেটা ২০ বিলিয়ন ডলার হতে পারে। গত অর্থবছরের আগের বছরে রেমিট্যান্সে যে উল্লম্ফন হয়েছি, সেটা আসলে হুন্ডি বন্ধ থাকার কারণেই এসেছিল। কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় এবং কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম বেশি থাকায় এখন আবার আগের মতো হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা।’
‘এর পরও গত অর্থবছরের ২১ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্সকে আমি খুবই ইতিবাচক মনে করছি। চলতি অর্থবছরেও যদি ২১ বিলিয়ন ডলার আসে আমি খুশি হবো।’
টাকার অবমূল্যায়ন রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স উভয় ক্ষেত্রেই ইতিবাচক প্রভাব ফেলে জানিয়ে আহসান মনসুর বলেন, ‘রপ্তানি আয়ের বিষয়টি এখন আসলে পুরোপুরি যুদ্ধ পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। নিশ্চিত করে কিছুই বলা যাচ্ছে না।’
রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘যুদ্ধের কারণে আমাদের পোশাকের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ওই দেশগুলোর মানুষ এখন পোশাক কেনা কমিয়ে দিচ্ছে। খাদ্য নিয়ে এখন তারা বেশি চিন্তিত। আমাদের অর্ডার কমে যাচ্ছে। জানি না, ভবিষ্যতে কী হবে? উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে আছি আমরা।’
আরও পড়ুন:
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির নোয়াখালী জোনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কুমিল্লার ম্যাজিক প্যারাডাইজ পার্কে শুক্রবার এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মাকসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর মুহাম্মদ কায়সার আলী, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মুহাম্মদ শাব্বির এবং সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট আবু ছাঈদ মো. ইদ্রিস।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন নোয়াখালী জোনপ্রধান এ. এফ. এম আনিছুর রহমান।
সম্মেলনে ব্যাংকের কুমিল্লা জোনপ্রধান মুনিরুল ইসলাম, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট খালেদ মাহমুদ রায়হান, এফসিসিএসহ প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী, নোয়াখালী জোনের অধীন শাখাগুলোর প্রধান, উপশাখা ইনচার্জ, সব পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:পাবনার সাঁথিয়ায় অগ্রণী ব্যাংকের কাশিনাথপুর শাখার ভল্ট থেকে ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় ওই ব্যাংকের প্রধান তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
অগ্রণী ব্যাংকের কাশিনাথপুর শাখা থেকে বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে তিনজনকে আটক করা হয়। দিনভর নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাতে তাদের সাঁথিয়া থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। তিনজনকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন অগ্রণী ব্যাংক কাশিনাথপুর শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার আবু জাফর, ব্যবস্থাপক হারুন বিন সালাম ও ক্যাশিয়ার সুব্রত চক্রবর্তী, যাদের বাড়ি পাবনার বিভিন্ন উপজেলায়।
পুলিশের ভাষ্য, টাকা আত্মসাতের কথা স্বীকার করেছেন ক্যাশিয়ার সুব্রত চক্রবর্তী।
সাঁথিয়া থানা ও অগ্রণী ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে অগ্রণী ব্যাংক রাজশাহী বিভাগীয় ও পাবনা আঞ্চলিক শাখা থেকে পাঁচ কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে আকস্মিক অডিটে আসেন অগ্রণী ব্যাংক কাশিনাথপুর শাখায়। অডিট শেষে সেখানে ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকার আর্থিক অনিয়ম দেখতে পান তারা। পরে অডিট কর্মকর্তা সাঁথিয়া থানাকে অবহিত করলে পুলিশ অভিযুক্ত তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় অগ্রণী ব্যাংক পাবনা আঞ্চলিক শাখার উপমহাব্যবস্থাপক রেজাউল শরীফ বাদী হয়ে সাঁথিয়া থানায় অভিযোগ করেন।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে বিভাগীয় অফিস থেকে পাঁচ সদস্যের অডিট টিম ব্যাংকে অডিট শুরু করে। ওই টিমের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরা দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করে তিনজনের কাছ থেকে নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন। পরে রাতে তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
সাঁথিয়া থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, আটককৃতদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার তাদের আদালতে পাঠানো হবে।
তিনি আরও বলেন, অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
আরও পড়ুন:ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২০২৩ সালে ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড সুপারিশ করেছে।
ব্যাংকের ৪১তম বার্ষিক সাধারণ সভার অনুমোদন সাপেক্ষে এ ডিভিডেন্ড প্রদান করা হবে।
ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসানুল আলমের সভাপতিত্বে বুধবার অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় ভাইস চেয়ারম্যান তানভীর আহমেদসহ অন্যান্য পরিচালক, ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা এবং অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও কোম্পানি সেক্রেটারি জে কিউ এম হাবিবুল্লাহ, এফসিএস উপস্থিত ছিলেন।
আগামী ২৫ জুন ব্যাংকের ৪১তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। লভ্যাংশ প্রাপ্তি এবং সাধারণ সভায় যোগদানের ক্ষেত্রে রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করা হয় ১৬ মে।
সভায় অন্যান্য আলোচ্যসূচির সঙ্গে ৩১ মার্চ শেষ হওয়া ২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী অনুমোদন করা হয়।
আরও পড়ুন:চলতি বছরের এপ্রিল মাসের প্রথম ১৯ দিনে বৈধপথে ব্যাংকিং চ্যানেলে ১২৮ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। দেশীয় মুদ্রায় প্রতি ডলার ১১০ টাকা ধরে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১৪ হাজার ৯৬ কোটি টাকা।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
তথ্যমতে, এপ্রিল মাসের প্রথম ১৯ দিনে বৈধপথে ১২৮ কোটি ১৫ লাখ ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১১ কোটি ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১০৮ কোটি ৮১ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৩৯ লাখ ৩০ হাজার ডলার এসেছে।
এর আগে মার্চ মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯৯ কোটি ৬৮ লাখ ডলার। বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে দেশে এসেছে ২১০ কোটি ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে আসে ২১৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি জানিয়েছিল যে আর কোনো ব্যাংককে একীভূতকরণের সুযোগ দেয়া হবে না। তবে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে বিদেশি ব্যাংক আলফালাহকে অধিগ্রহণের জন্য ব্যাংক এশিয়াকে অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
নতুন মাত্রার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক এশিয়া বিদেশি ব্যাংক আলফালাহকে অধিগ্রহণের পরিকল্পনা করছে। সূত্র: ইউএনবি
করাচিভিত্তিক ব্যাংক আলফালাহ বুধবার (১৭ এপ্রিল) পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জকে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, ব্যাংক আলফালাহ লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের বাংলাদেশ পরিচালনা, সম্পদ ও দায় অধিগ্রহণের জন্য প্রাপ্ত বাধ্যবাধকতামুক্ত ইঙ্গিতমূলক প্রস্তাবের ক্ষেত্রে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।
এতে বলা হয়, ব্যাংক আলফালাহ বাংলাদেশের ব্যাংক এশিয়ার জন্য যথাযথ কার্যক্রম শুরুর জন্য স্টেট ব্যাংক অফ পাকিস্তানের অনুমোদন চাইছে।
ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল আর কে হুসেইন বলেন, ‘এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং এটি একীভূতকরণ নিয়ে খুব বেশি আলোচনার অংশ নয়।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে দুই ব্যাংকের নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠকে অধিগ্রহণের বিষয়টি চূড়ান্ত রূপ পাবে বলে।
মেহেরপুরের মুজিবনগরে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকের কর্মচারীকে অজ্ঞান করে ব্যাংক থেকে টাকা লুটের অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার শিবপুরে সোমবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। ওই সময় কর্মচারী সাগর শেখকে অজ্ঞান করে টাকা লুটে নিয়ে পালিয়ে যায় অজ্ঞাত দুইজন।
ঘটনার বেশ কিছু সময় পরে স্থানীয়রা অসুস্থ অবস্থায় সাগর শেখকে মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের শিবপুর গলাকাটা বাজারে বিপ্লব হোসেন এজেন্ট হিসেবে ব্যাংক পরিচালনা করে আসছেন। সোমবার দুপুরে ব্যাংক কর্মচারী সাগর শেখ কাজ করছিলেন। এ সময় অজ্ঞাতরা ব্যাংকে প্রবেশ করে তাকে অজ্ঞান করে। আশপাশের লোকজন টের পাওয়ার আগেই তারা ব্যাংক থেকে টাকা লুটে নিয়ে পালিয়ে যায়।
স্থানীয়রা আরও জানায়, ঘটনার আগে তারা ব্যাংকে অজ্ঞাত দুজনকে প্রবেশ করতে দেখেছিলেন, তবে তারাই যে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ। তাদের প্রবেশের কিছুক্ষণ পরে সাগরকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখেন স্থানীয়রা।
ব্যাংক এজেন্ট বিপ্লব হোসেন জানান, তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন ব্যাংকের সিসিটিভি ক্যামেরা ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। অজ্ঞাতরা এ সংযোগগুলো বিচ্ছিন্ন করে ডাকাতি করেছে বলে ধারণা তার।
বিপ্লব হোসেন আরও জানান, প্রতিদিন ব্যাংকে অনেক টাকা লেনদেন হয়ে থাকে। এর সঙ্গে প্রতিদিনের লেনদেনের আরও টাকা থাকে। তাই কত টাকা লুটের ঘটনা ঘটেছে তা সঠিক হিসাব না করে বলা যাচ্ছে না।
মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ব্যাংক কর্মচারীর শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে। চোখ খুলে তাকাচ্ছে, কিন্তু তার চেতনা ফেরেনি। তাকে কিছু খাইয়ে অজ্ঞান করা হয়েছে না চোখে চেতনানাশক স্প্রে করা হয়েছে তা নিশ্চিত হতে সময় লাগবে।’
মুজিবনগর থানার ওসি উজ্জ্বল দত্ত জানান, খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। হাসপাতালে ভর্তি কর্মচারী সুস্থ হলে তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার আশা করা হচ্ছে, তবে পুলিশের তদন্ত শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন:প্রবাসীদের আয়ের একটি বড় অংশই আসে ঢাকায় অবস্থিত ব্যাংকের শাখাগুলোতে। অর্থাৎ প্রবাসীদের পরিবারের বেশিরভাগই ঢাকায় থাকেন বা তাদের অধিকাংশ অ্যাকাউন্ট ঢাকার ব্যাংক শাখায়।
ইউএনবি জানায়, রেমিট্যান্সের জেলাভিত্তিক চিত্র নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিশ্লেষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম। সিলেট তৃতীয় এবং কুমিল্লা চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে।
এরপরে রয়েছে উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, মৌলভীবাজার, চাঁদপুর ও নরসিংদীর অবস্থান।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জেলাভিত্তিক প্রবাসী আয় প্রতিবেদনে গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ মাসে প্রবাসীরা ১ হাজার ৫০৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে এসেছে ২১৬ কোটি ডলার। তার আগের মাস জানুয়ারিতে দেশে প্রবাসী আয় ছিল ২১০ কোটি ডলার।
জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়কালে ঢাকা জেলায় এসেছে ৫২৩ কোটি ডলার এবং চট্টগ্রাম জেলায় এসেছে ১৪২ কোটি ডলার।
এই সময়ে সিলেট জেলা ৮৭০ মিলিয়ন ডলার, কুমিল্লা ৮১০ মিলিয়ন ডলার এবং নোয়াখালী ৪৬০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩৮ কোটি, ফেনীতে ৩৭ কোটি, মৌলভীবাজারে ৩৬ কোটি, চাঁদপুরে ৩৫ কোটি ডলার এবং নরসিংদীতে ২৫০ মিলিয়ন ডলার এসেছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, প্রবাসী অধ্যুষিত জেলাগুলো থেকে বেশি প্রবাসী আয় আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু এমনটা হচ্ছে না। কারণ অনেক প্রবাসী বিদেশে স্থায়ী হয়েছেন। বরং তারা (প্রবাসীরা) দেশে থাকা সম্পদ বিক্রি করে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে অর্থ পাচার বাড়ছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য